১০০টি চমৎকার ঘটনা -পর্ব-৫২( কানের বদলে কান, আবার অতিরিক্ত মাথা )

কানের বদলে কান, আবার অতিরিক্ত মাথা-পর্ব-৫২

যখন সূরা "আর রহমান শরীফ" নাযিল হলো, তখন সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, 'হে আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম! আপনাদের মধ্যে কে আছেন, যে এই পবিত্র সূরা আর রহমান শরীফ পবিত্র কা'বা শরীফে গিয়ে তিলাওয়াত করে আসতে পারবেন?' হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, 'ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ, ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি যদি অনুমতি মুবারক দান করেন, তাহলে আমি তিলাওয়াত করতে পারবো।' তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, 'ঠিক আছে, যান।'

অনুমতি পেয়ে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিলাওয়াত করার জন্য পবিত্র কা'বা শরীফে গেলেন। যখন তিলাওয়াত করা শুরু করলেন, তখন আবু জাহেল কোথা থেকে এসে উনার কানের মধ্যে আঘাত করলো। এত জোরে সে আঘাত করলো যে, উনার কানটা নষ্ট হয়ে গেল। তিনি কাঁদতে কাঁদতে সরাসরি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হুজরা শরীফে এসে উপস্থিত হলেন। সেখানে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বসা ছিলেন। একদিক থেকে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কাঁদতে কাঁদতে প্রবেশ করলেন; আর ঠিক সাথে সাথে বিপরীত দিক থেকে হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম তিনি হাসতে হাসতে প্রবেশ করলেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, 'হে ভাই জিব্রাইল আলাইহিস সালাম! হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কাঁদছেন আর আপনি হাসছেন, তার কি কারণ? 'হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, 'ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কারণ আজকে বলবো না। বেয়াদবি মাফ করবেন, আমি অন্য একদিন বলবো।'

তারপর পবিত্র হিজরত মুবারক সংঘটিত হলো। হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে পবিত্র মদীনা শরীফ চলে গেলেন। প্রথম হিজরী পার হয়ে দ্বিতীয় হিজরীতে বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হলো। বদরের যুদ্ধে কাফিররা পরাস্ত হলো; সত্তর জন কাফির মারা গেল। কাফিরদের চৌদ্দজন নেতার মধ্যে এগারজন নেতা মারা গেল। যখন যুদ্ধ প্রায় শেষ, তখন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এসে বললেন, 'ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার একটা আরজু রয়েছে। আমি আজকের জিহাদে সরাসরি কোনো কাফিরকে হত্যা করতে পারিনি। আপনি যদি অনুমতি মুবারক দেন, তবে আমি জিহাদের ময়দানে একটু যেতে চাই। যদি কোনো কাফির অর্ধমৃত অবস্থায় পড়ে থাকে, তাহলে আমি তার গর্দানটা কেটে ফেলবো। এতে হয়তো মহান আল্লাহ পাক তিনি কাফির হত্যার সাওয়াবটা আমাকে দিয়ে দিবেন।' হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, 'বেশ, আপনি যান।'

অনুমতি পেয়ে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ঘুরতে লাগলেন জিহাদের ময়দানে। ঘুরতে ঘুরতে দেখেন, এক কোনায় আবু জাহেল পড়ে আছে, মৃত্যুর যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। আবু জাহেল কিন্তু সেই অবস্থায়ও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে চিনতে পারলো। সে বললো, 'হে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। আপনি কি আমার গর্দান কাটার জন্য এসেছেন?' হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, 'হ্যাঁ।' আবু জাহেল বললো, 'তাহলে আপনি আমার গর্দানটা একটু বড় করে কাটবেন; যেন মানুষ বুঝতে পারে যে, আপনাদের রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শত্রু আবু জাহেল খুব বড় পালোয়ান ছিল।' নাউযুবিল্লাহ! তখন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তার মাথাটা কেটে ফেললেন।

আবু জাহেল সত্যিই খুব বড় পালোয়ান, খুব শক্তিশালী ছিল। তার মাথাটা যেমন বড় ছিল, ঘাড়টাও তেমন মোটা ছিল। অন্যদিকে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু খুব হালকা পাতলা ছিলেন। আবু জাহেলের মাথাটার অনেক ওজন হওয়ার কারণে বহন করে নিতে কষ্ট হচ্ছিলো। তাই তিনি মাথাটার এক কান দিয়ে রশি ঢুকিয়ে, কাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে, অপর কানের ছিদ্র দিয়ে রশিটা বের করলেন। তারপর রশি ধরে মাথাটা ঝুলিয়ে নিয়ে চললেন; ঠিক যেভাবে মানুষ বাজার থেকে বড় মাছ আনার সময় কানকোর ভিতর রশি ঢুকিয়ে ঝুলিয়ে নিয়ে যায় সেভাবে। আবু জাহেলের মাথা ছেঁচড়াতে ছেঁচড়াতে নিয়ে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবার শরীফে উপস্থিত হলেন। তিনি বললেন, 'ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি তো কোনো কাফির হত্যা করতে পারিনি। তবে সবচেয়ে বড় যে কাফির, আবু জাহেল, তার গর্দান কেটে নিয়ে এসেছি।

ঠিক সেই সময় আবার বিপরীত দিক থেকে হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম হাসতে হাসতে এসে উপস্থিত হলেন। বললেন, 'হে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিশ্চয়ই আপনার স্মরণ আছে, সেই মক্কা শরীফের ঘটনা। একদিন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কাঁদতে কাঁদতে এসেছিলেন, আর আমি বিপরীত দিক থেকে হাসতে হাসতে এসে প্রবেশ করেছিলাম। আপনি আমাকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করেছিলেন। আমি বলেছিলাম যে, পরে জওয়াব দিব। আজকে জওয়াব দেয়ার জন্য এসেছি, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করার কারণে আবু জাহেল হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার একটা কান নষ্ট করে দিয়েছিল। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে কানের বদলে কান তো দিয়েছেনই, আবার অতিরিক্ত মাথাটাও দিয়ে দিয়েছেন।' সুবহানাল্লাহ!

কাফিররা মুসলমানদের উপর যত অত্যাচারই করুক না কেন, তাতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। মুসলমানগণ যদি দ্বীন ইসলাম উনার উপর দৃঢ় থাকে, তাহলে স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনিই মুসলমানদের পক্ষ থেকে কাফিরদের উপর প্রতিশোধ নিবেন।

0 Comments: