৬৩১ নং- সুওয়াল : আমাদের এলাকায় একজন পীর সাহেব আছেন, যিনি একই রুমে পুরুষ-মহিলাদের মাঝে যিকির শিক্ষা দেন। তবে পুরুষ-মহিলার মাঝে পাতলা কাপড়ের পর্দা দেয়া থাকে। ইহা কতটুকু শরীয়ত সম্মত? জানতে ইচ্ছুক।

সুওয়াল : আমাদের এলাকায় একজন পীর সাহেব আছেন, যিনি একই রুমে পুরুষ-মহিলাদের মাঝে যিকির শিক্ষা দেন। তবে পুরুষ-মহিলার মাঝে পাতলা কাপড়ের পর্দা দেয়া থাকে। ইহা কতটুকু শরীয়ত সম্মত? জানতে ইচ্ছুক।
জাওয়াব : কোন পীর সাহেব তার মহিলা মুরীদদেরকে ওয়াজ-নসীহত, তালীম-তালক্বীন করা ও যিকির-আযকার শিক্ষা দেয়ার জন্য আলাদা রুম বা কামড়ার মধ্যে করাটাই আফজল বা উত্তম। আর যদি মহিলাদের জন্য আলাদা রুমের ব্যবস্থা করা সম্ভব না হয়, এবং একই রুমে পুরুষ ও মহিলাদেরকে তালীম দিতে হয়, তবে অবশ্যই পুরুষ-মহিলাদের মাঝে শক্ত পার্টিশন বা পর্দা থাকতে হবে, যাতে মহিলাদের কোন আকার-আকৃতি দেখা, বুঝা বা অনুভব করা সম্ভব না হয়। আর এটাও লক্ষ্য রাখতে হবে যে, পর্দার এপাশ-ওপাশ থেকে পুরুষ ও মহিলা পরস্পর পরস্পরের শরীর স্পর্শ তো করবেই না বরং পর্দা থেকে এতটুকু দূরে সরে বসতে হবে, যাতে পুরুষ ও মহিলা পরস্পর পরস্পরের মাঝে স্পর্শের অনুভূতিও যেন মনে জাগ্রত না হয়। আরো লক্ষ্যনীয় যে, মহিলাদের যিকিরের আওয়াজ যেন পুরুষদের কানে গিয়ে না পৌঁছে।
আবা-৩৪
৬৩০ নং- সুওয়াল : আপনাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার ৩৩তম সংখ্যায় সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগে একটি সুওয়াল- অনেক লোককে দেখা যায়, প্রস্রাব করার সময় মিসওয়াক করে, ইহা কি? উনার প্রদত্ত জাওয়াব সংক্ষিপ্ত হওয়ার কারণে আমাদের বুঝে আসছেনা। দয়া করে বিস্তারিতভাবে জাওয়াব দিলে উপকৃত হতাম।

সুওয়াল : আপনাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার ৩৩তম সংখ্যায় সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগে একটি সুওয়াল- অনেক লোককে দেখা যায়, প্রস্রাব করার সময় মিসওয়াক করে, ইহা কি? উনার প্রদত্ত জাওয়াব সংক্ষিপ্ত হওয়ার কারণে আমাদের বুঝে আসছেনা। দয়া করে বিস্তারিতভাবে জাওয়াব দিলে উপকৃত হতাম।
জাওয়াব : উক্ত সুওয়ালের জাওয়াবে যে মাকরূহ তাহরীমী লেখা হয়েছে, তা হচ্ছে- প্রস্রাব-পায়খানা করার সময় মিসওয়াক করা মাকরূহ তাহরীমী। আর যে সুন্নত বলা হয়েছে, তা হচ্ছে- মিসওয়াক করার সময় উঁচু স্থানে বা যেকোন স্থানে বসে মিসওয়াক করা সুন্নত।
আরো উল্লেখ্য যে, অনেক লোককে দেখা যায়, তারা প্রস্রাব করতঃ একহাতে ঢিলাকুলুখ ব্যবহার করার সময় পায়চারী করে আর এ অবস্থাতেই অপর হাতে মিসওয়াক নিয়ে মিসওয়াক করতে থাকে এবং মাঝে মধ্যে কথাবার্তাও বলে থাকে, এটাও মাকরূহ তাহরীমীর অন্তর্ভুক্ত।
আবা-৩৪
৬২৯ নং- সুওয়াল : আশূরা উপলক্ষে কয়টি রোযা রাখা সুন্নত? জানতে বাসনা রাখি।
সুওয়াল : আশূরা উপলক্ষে কয়টি রোযা রাখা সুন্নতজানতে বাসনা রাখি।

জাওয়াব : পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছেমহান আল্লাহ পাক উনার রসূলনূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
صوموا يوم عاشورا وخالفوا فى اليهود. صوموا قبله اويوما بعده يوما.
অর্থ : তোমরা আশূরার রোযা রাখ এবং (এ ব্যাপারে) ইহুদীদের বিপরীত কর। তোমরা আশূরার আগের দিনে অথবা পরের দিনেও রোযা রেখো।
এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা প্রমাণিত হয় যেআশূরার উদ্দেশ্যে দুটি রোযা রাখা সুন্নত। পবিত্র মুহররমুল হারাম শরীফ উনার ৯ ও ১০ তারিখ অথবা ১০ ও ১১ তারিখ। তবে উত্তম হলো ৯ ও ১০ তারিখ রোযা রাখা। শুধু ১০ই মুহররমুল হারাম শরীফ আশূরার উদ্দেশ্যে ১টি রোযা রাখা মাকরূহ। কারণ ইহুদীরা সেদিনটিতে রোযা রেখে থাকে।
আবা-৩৪
৬২৮ নং- সুওয়াল : দাইয়ূস শব্দের অর্থ কি? শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে কাদেরকে দাইয়ূস বলা হয়েছে? দাইয়ূস কি বেহেস্তে প্রবেশ করতে পারবে না? সঠিক জবাবদানে বাধিত করবেন।

সুওয়াল : দাইয়ূস শব্দের অর্থ কি? শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে কাদেরকে দাইয়ূস বলা হয়েছেদাইয়ূস কি বেহেস্তে প্রবেশ করতে পারবে না? সঠিক জবাবদানে বাধিত করবেন।

জাওয়াব : দাইয়ূস শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে। যেমন- বেশরা, বেহায়া, নির্লজ্জ ইত্যাদি। এছাড়া ওই সকল পুরুষদেরকে বুঝানো হয়েছে, যারা তাদের অধিনস্থ মেয়েদের দ্বারা দেহ ব্যবসা করিয়ে থাকে। আর শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে দাইয়ূস বলতে ওই সকল পুরুষদেরকে বুঝানো হয়েছে, যারা তাদের অধীনস্থ মেয়েদেরকে শরয়ী পর্দা করায় না।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে- বেহেস্তের দরজায় লেখা রয়েছে,
الديوث لا يدخل الجنة.
অর্থ : দাইয়ূস বেহেস্তে প্রবেশ করতে পারবে না।

আবা-৩৪
৬২৭ নং- সুওয়াল : বর্তমানে হজ্ব করতে হলে ছবি তুলতে হয়। হজ্বের জন্য এ ছবি তোলা জায়েয আছে কি?

সুওয়াল : বর্তমানে হজ্ব করতে হলে ছবি তুলতে হয়। হজ্বের জন্য এ ছবি তোলা জায়েয আছে কি?
জাওয়াব : ছবি তোলা, আঁকা উভয়টিই হারাম। হজ্বের জন্যই হোক বা অন্য কোন প্রয়োজনে যেমন- ব্যবসা, চাকুরী ও নানা প্রকার লাইসেন্স, পারমিট, পাসপোর্ট ইত্যাদির জন্যই হোক না কেন, সর্বাবস্থায় শরীয়তে ছবি তোলা ও আঁকা হারাম।
বর্তমানে পৃথিবীর কোথাও ইসলামী খেলাফত কায়েম নেই, যার কারণে ইসলামী আইনও সম্পূর্ণভাবে জারীও নেই। ইসলামী আইন জারী না থাকার কারণে পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই প্রবেশ করতে হলে ছবিসহ পাসপোর্ট দেখিয়ে অনুমতি গ্রহণ করতে হয়। হজ্বের জন্যও ছবিসহ পাসপোর্টের নিয়ম করা হয়েছে। ছবিসহ পাসপোর্টের এ নিয়ম করাটা শরীয়তের খেলাফ হয়েছে।
শরীয়ত উনার উসূল হচ্ছে- পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস উনাদের দৃষ্টিতে যেসব কাজ ফরয ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত, তা পালন করার পূর্বশর্ত হিসেবে যদি কোন ব্যক্তিকে অনিচ্ছা সত্বেও শরীয়ত উনার খিলাফ কাজ করতে বাধ্য করা হয়, তখন সে শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে মাজুর বা অপারগ বলে গণ্য হয়। এ সম্পর্কে ফিক্বাহের কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে,
الديوث لا يدخل الجنة.
অর্থ : জরুরত হারামকে মুবাহ করে দেয়।
মূলতঃ ছবি তোলা, ছবি আঁকা সর্বাবস্থায়ই হারাম কিন্তু মাজুর হওয়ার কারণে হজ্ব ও অন্যান্য জরুরতে ছবি ব্যবহার করাকে মুবাহ করা হয়েছে।
[ছবি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম সংখ্যা পড়ুন]
আবা-৩৪

৫নং- ছবি ফতোয়া
৬২৬ নং- সুওয়াল : কোন পীর সাহেব কি তার মহিলা মুরীদদেরকে পর্দার আড়াল থেকে যিকির শিক্ষা দিতে পারবেন?

সুওয়াল : কোন পীর সাহেব কি তার মহিলা মুরীদদেরকে পর্দার আড়াল থেকে যিকির শিক্ষা দিতে পারবেন?
জাওয়াব : হ্যাঁ, অবশ্যই পারবেন। পুরুষদের জন্য যেরূপ জরুরত আন্দাজ ইলমে তাসাউফ শিক্ষা করা ফরয, সেরূপ মহিলাদের জন্যও ইলমে তাসাউফ শিক্ষা করা ফরয। আর এ ইলমে তাসাউফ শিক্ষা করতে হলে পীর সাহেবের নিকট বায়াত হতে হবে এবং তার সংশ্লিষ্ট যিকির-আযকারও শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
অতএব, পীর সাহেবগণ যেমন উনার পুরুষ মুরীদগণকে ওয়াজ-নসীহত, তালীম-তলক্বীন করেন ও যিকির- আযকার শিক্ষা দিয়ে থাকেন, তদ্রুপ মহিলাদেরকেও পর্দার আড়াল থেকে ওয়াজ-নসীহত, তালীম-তালক্বীন করা ও যিকির-আযকার শিক্ষা দেয়া ইত্যাদি সবকিছুই করতে পারবেন।
আবা-৩৪
৬২৫ নং- সুওয়াল : হযরত খাজা মুঈনুদ্দিন চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি নাকি ঢাক-তবলা বা গান-বাজনা করেছেন, একথা কতটুকু সত্য?

সুওয়াল : হযরত খাজা মুঈনুদ্দিন চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি নাকি ঢাক-তবলা বা গান-বাজনা করেছেন, একথা কতটুকু সত্য?
জাওয়াব : ইমামুল আইম্মা, হযরত খাজা মুঈনুদ্দিন চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার শানে এরূপ মিথ্যা অপবাদ দেয়া কুফরী। এটা সম্পূর্ণ বানোয়াট ও মিথ্যা কথা। (ফতওয়ায়ে আলমগিরী, আমিনিয়া, ফাওয়ায়েদুল ফুয়াদ)
আবা-৩৪
৬২৪ নং- সুওয়াল : স্ত্রীর নিকট স্বামী বাধ্য হয়ে বলেছে, “আমি আবার নেশা করলে তুমি তিন তালাক” এমতাবস্থায় কোন দিন, কোন কারণে ইচ্ছাকৃতভাবে স্বামী যদি নেশা করে, তাহলে স্ত্রী কি তালাক হয়ে যাবে? আর যদি স্বামী নিজেই শর্ত বাদ দিয়ে দেয়, অতঃপর সে নেশা করে, তাহলে কি তালাক পতিত হবে?

সুওয়াল : স্ত্রীর নিকট স্বামী বাধ্য হয়ে বলেছে, “আমি আবার নেশা করলে তুমি তিন তালাকএমতাবস্থায় কোন দিন, কোন কারণে ইচ্ছাকৃতভাবে স্বামী যদি নেশা করে, তাহলে স্ত্রী কি তালাক হয়ে যাবে? আর যদি স্বামী নিজেই শর্ত বাদ দিয়ে দেয়, অতঃপর সে নেশা করে, তাহলে কি তালাক পতিত হবে?
জাওয়াব : কোন স্বামী যদি তার স্ত্রীকে কোন শর্ত সাপেক্ষে তালাক দেয়, তাহলে সে শর্ত পূর্ণ হলে অবশ্যই স্ত্রীর উপর তালাক পতিত হবে। তা যে কয় তালাকই হোক না কেন।
স্বামী যদি কোন শর্ত দিয়ে সময় নির্দিষ্ট করে দেয়, তাহলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সে শর্ত পূরণ না করলে এবং সে সময় অতিবাহিত হয়ে গেলে তালাক পতিত হবে না। আর যদি স্বামী শর্ত দিয়ে পরে নিজেই শর্ত বাতিল বলে ঘোষণা করে, তাহলে শর্ত বাতিল করার পর সে কাজ করলে তালাক পতিত হবে না। (সমূহ ফিক্বাহর কিতাব)।
 আবা-৩৪
৬২৩ নং- সুওয়াল : ইসলামের জন্য সর্ব প্রথম কে শহীদ হয়েছেন?

সুওয়াল : ইসলামের জন্য সর্ব প্রথম কে শহীদ হয়েছেন?
জাওয়াব : বিশিষ্ট ছাহাবীয়া হযরত সুমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা। যিনি হযরত ইয়াসার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার স্ত্রী ও হযরত আম্মার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মাতা ছিলেন।
আবা-৩৪
৬২২ নং- সুওয়াল : খুৎবা শোনা কি? খুৎবার সময় কথা বলা কি?

সুওয়াল : খুৎবা শোনা কি? খুৎবার সময় কথা বলা কি?
জাওয়াব : খুৎবা শোনা ওয়াজিব। কথা বলা তো দূরের কথা বিনা জরুরতে উহ আহ শব্দ করাও জায়িয নেই। (শামী, আমিনিয়া)
আবা-৩৪
৬২১ নং- সুওয়াল : অনিচ্ছা সত্বে হাত থেকে পবিত্র কুরআন শরীফ পড়ে গেলে কি করণীয়? দেশে যে কুরআন শরীফ উনার সমপরিমাণ চাউল ও লবন দেয়ার প্রচলন রয়েছে, তা কিরূপ?

সুওয়াল : অনিচ্ছা সত্বে হাত থেকে পবিত্র কুরআন শরীফ পড়ে গেলে কি করণীয়? দেশে যে কুরআন শরীফ উনার সমপরিমাণ চাউল ও লবন দেয়ার প্রচলন রয়েছে, তা কিরূপ?
জাওয়াব : এরূপ ক্ষেত্রে চাউল-লবন খয়রাত দেয়ার যে প্রচলন রয়েছে, তা কোন কিতাবে দেখা যায় না কিন্তু তা উত্তম নিয়ম, এতে কোন দোষ নেই। কারণ দান-খয়রাত সর্বাবস্থায় উত্তম। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছ, “দানশীল মহান আল্লাহ পাক উনার বন্ধু এবং দান-খয়রাত বালা-মুসীবত দূর করে দেয়।
হাত হতে পবিত্র কুরআন শরীফ পড়ে যাওয়া অবশ্যই বড় ধরণের অপরাধ, কারণ পবিত্র কুরআন শরীফক উনাকে তাযীম- তাক্বরীম করা ফরয ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত।
অতএব, কোন ব্যক্তির হাত হতে যদি পবিত্র কুরআন শরীফ পড়েই যায়, তাহলে অবশ্যই তাকে বেশী বেশী ইস্তেগফার করতে হবে। এবং সেই সাথে দান-খয়রাত করাটাও উত্তম। কারণ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত হয়েছে, “দান-খয়রাত মানুষের গুণাহসমূহ দূর করে দেয়।তবে অবশ্যই এটা স্মরণ রাখতে হবে যে, পবিত্র কুরআন শরীফ উনাকে মেপে তার সমপরিমাণ দান খয়রাত করা শর্ত নয়, বরং মাপাটা আদবের খেলাফ। (এহছান ফী তালিমুল কুরআন, ফতওয়ায়ে আমিনিয়া)
 আবা-৩৪
৬২০ নং- সুওয়াল : আমরা জানি যে, হযরত মুসা আলাইহিস সালাম উনার সময় মানুষ সীমা লংঘন করেছিল। সে কারণে মানুষ বানরে পরিণত হয়েছিল। কাজেই আমরা জানতে চাই যে, বানরের তখন হতে উৎপত্তি, না তার পূর্বে বা পরে হতে?

সুওয়াল : আমরা জানি যে, হযরত মুসা আলাইহিস সালাম উনার সময় মানুষ সীমা লংঘন করেছিল। সে কারণে মানুষ বানরে পরিণত হয়েছিল। কাজেই আমরা জানতে চাই যে, বানরের তখন হতে উৎপত্তি, না তার পূর্বে বা পরে হতে?   
        
জাওয়াব : সুওয়ালে বর্ণিত ঘটনাটি হযরত মুসা আলাইহিস সালাম উনার যুগের নয়। আসলে সেটা হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম উনার যুগে হয়েছিল। যে প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ উনার ৬৫-৬৬নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে বলেন,
ولقد علمتم الذين اعتدوا منكم فى السبت فقلنا لهم كونوا قردة خاسئين- فجعلنها نكالا لما بين يديه وما خلفها ومو عظة للمتقين.
অর্থ : তোমরা অবশ্যই অবগত আছ যে, যারা তোমাদের মধ্যে শনিবারে সীমা লংঘন করেছিল, আমি তাদেরকে বলেছিলাম, তোমরা লাঞ্ছিত বানরে পরিণত হয়ে যাও। আমি এ  ঘটনাকে তাদের সমসাময়িক এবং তাদের পরবর্তীদের জন্য দৃষ্টান্ত স্বরূপ এবং মুত্তাক্বীনদের জন্য উপদেশ স্বরূপ স্থাপন করেছি।
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের ব্যাখ্যায় হযরত মুফাসসীরীনয়ে কিরাম উনারা বলেন যে, হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম উনার সময় বণী ইসরাইল সম্প্রদায় যখন মাছ শিকারের ব্যাপারে সীমা লংঘন করে অর্থাৎ তাদের জন্য শনিবার দিন ছিল পবিত্র, যা ইবাদতের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছিল এবং মাছ শিকারের জন্য নিষিদ্ধ দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। এ আদেশ অমান্য করার কারণে তাদের প্রতি গযব নাযিল হয় এবং তাদের আকৃতির বিকৃতি ঘটে অর্থাৎ তারা বানরে পরিণত হয়।
হযরত ক্বাতাদাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, সীমা লংঘনকারীদের মধ্যে যারা যুবক ছিল, তারা বানরে পরিণত হয়, এবং যারা বৃদ্ধ ছিল, তারা শুকরে পরিণত হয় আর তারা সকলেই তিনদিন পর মরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
মুসলিম শরীফ উনার মধ্যে হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, একদা কয়েকজন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করছিলেন যে, আমাদের যুগের বানর ও শুকর সেই রূপান্তরিত ইহুদী সম্প্রদায় কিনা বা তাদের বংশধর কিনা? জবাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন কোন সম্প্রদায়ের উপর আকৃতি বিকৃতির আযাব নাযিল করেন, তখন তারা জমিন থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়। বানর ও শুকর পৃথিবীতে পূর্বেও ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। এদের সাথে হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম উনার যুগে সীমা লংঘনের ফলে মানুষ থেকে রূপানন্তরিত বানর ও শুকরের কোনই সম্পর্ক নেই।
আবা-৩৪
৬১৯ নং- সুওয়াল : কোন মসজিদের নিকটবর্তী কোন স্থানে অন্য কোন মসজিদ, নামায ঘর, কিম্বা খানকা তৈরি করা এবং একই সাথে নামাযের জামায়াত আদায় করা জায়িয আছে কিনা জানাবেন।

সুওয়াল : কোন মসজিদের নিকটবর্তী কোন স্থানে অন্য কোন মসজিদ, নামায ঘর, কিম্বা খানকা তৈরি করা এবং একই সাথে নামাযের জামায়াত আদায় করা জায়িয আছে কিনা জানাবেন।
জাওয়াব : কোন স্থানে যদি কোন মসজিদ থাকে এবং সেখানে রীতিমত জামায়াত চালু থাকে, তবে সেই মসজিদকে বিরান করার অথবা সেই জামায়াতকে নষ্ট করার উদ্দেশ্যে যদি তার পাশে কোন মসজিদ তৈরি করা হয়, তাহলে সেটা মসজিদে জেরারের অন্তর্ভুক্ত হবে, যা সম্পূর্ণরূপে হারাম। আর যদি কেউ জরুরতে অর্থাৎ স্থান সংকুলানের অভাবে অথবা দূরত্বের কারণে অন্য কোন মসজিদ তৈরি করে, যাতে পুরানা মসজিদ বিরানও হবে না এবং জামায়াতেরও ক্ষতি হবেনা, তাহলে জায়িয রয়েছে। তদ্রুপ যদি মসজিদের নিকটবর্তী কোন অফিস কিম্বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি তৈরি হয়, তথায় চাকুরীরত ব্যক্তিগণ অথবা ব্যবসায়ীগণের প্রত্যেকের উচিত ছিল উক্ত মসজিদে জামায়াতে নামাজ আদায় করা। তবে তাদের ব্যস্ততার জন্য মসজিদে জামায়াত আদায় করার অক্ষমতার কারণে, তাদের অফিস কিম্বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে জামায়াতে নামায আদায় করার জন্য কোন নামাযের স্থানের ব্যবস্থা করা হয়, তবে তা জায়িয হবে।  অনুরূপ মসজিদের নিকটবর্তী কোন খানকা শরীফ নির্মাণ করা হলে সে খানকা শরীফ এর লোকদেরও উচিৎ ছিল মসজিদে জামায়াতের সাথে নামাজ আদায় করা। তবে যদি খানকার সমস্ত লোকের পক্ষে মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া সম্ভব না হয়, তাহলে যাদের পক্ষে মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায আদায় করা সম্ভব হবে না, তাদের জন্য জামায়াতে নামায আদায় করার লক্ষে উক্ত খানকাতে যদি আলাদা জামায়াতের ব্যবস্থা করা হয়, তবে তা জায়িয হবে। কারণ জামায়াতে নামায আদায় করা হচ্ছে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ বা ওয়াজিবের নিকটবর্তী। তবে অবশ্যই এটা প্রত্যেককেই খেয়াল রাখতে হবে যে, তাদের গাফলতির কারণে যেন অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, খানকাতে জামায়াতের ব্যবস্থা না করা হয়। একমাত্র সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ আদায় করার লক্ষেই যেন জামায়াতের ব্যবস্থা করা হয়।
লক্ষ্যণীয় যে, মসজিদের জামায়াতের নির্দিষ্ট সময়ে উপরোল্লিখিত কোন স্থানে জামায়াতের ব্যবস্থা করা উচিৎ হবে না। জরুরত অনুযায়ী আগে বা পরে করা যেতে পারে।
আবা-৩৪
৬১৮ নং- সুওয়াল : গরু-ছাগল ইত্যাদির সঙ্গম করিয়ে পয়সা লওয়া জায়েয আছে কি?

সুওয়াল : গরু-ছাগল ইত্যাদির সঙ্গম করিয়ে পয়সা লওয়া জায়েয আছে কি?
জাওয়াব : জায়েয নেই। (শামী, আমিনিয়া)
আবা-৩৪
৬১৭ নং- সুওয়াল : স্ত্রী স্বামীর মৃত দেহ ধৌত করতে পারে, কিন্তু স্বামী স্ত্রীর মৃত দেহকে ধৌত করতে পারেনা। এটার কারণ কি ?

সুওয়াল : স্ত্রী স্বামীর মৃত দেহ ধৌত করতে পারে, কিন্তু স্বামী স্ত্রীর মৃত দেহকে ধৌত করতে পারেনা। এটার কারণ কি ? 
জাওয়াব : এটাই শরীয়ত উনার হুকুম। শরীয়ত উনার কোন হুকুম-আহকাম সম্পর্কে কেন এবং কি প্রয়োজন, ইত্যাদি প্রশ্ন উত্থাপন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ তথা শরীয়ত উনার খেলাফ। শুধু এতটুকু জানার জন্য কোশেশ করতে পারবে, যতটুকু মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার রাসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বর্ণনা করেছেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে যে, “একজন মহিলা তাবেয়ী হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, মেয়েরা অসুস্থ (হায়েজ ও নেফাজ) অবস্থায় রোযা কাযা করে, কিন্তু নামায কাযা করেনা, এর কারণ কি? তার জাওয়াবে হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, “আমাদের কাছে এরূপই পৌঁছেছে এবং আমরা এ রকমই আদিষ্ট হয়েছি। তাই আমরা রোযা কাযা করার আদেশ দেই, আর নামায কাযা করার আদেশ দেইনা এবং আমরা কখনো এর কারণ তালাশ করিনি। মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই এ সম্পর্কে ভাল জানেন। (মুসলিম শরীফ, ফতওয়ায়ে আলমগীরী)
 আবা-৩৪
৬১৬ নং- সুওয়াল : খুৎবা পাঠকালে সুন্নত নামায পড়া জায়েয কি?


সুওয়াল : খুৎবা পাঠকালে সুন্নত নামায পড়া জায়েয কি? 
জাওয়াব : জায়েয নেই। (দুররুল মোখতার, শামী, নাছরোল মোজতাহেদীন)
আবা-৩৪
৬১৫ নং- সুওয়াল : মেহরাব শব্দের অর্থ কি? মেহরাবের প্রয়োজনীয়তা কি? ইমাম মেহরাবের ভিতর ঢুকে নামায পড়লে নামাজ হবে কি?

সুওয়াল : মেহরাব শব্দের অর্থ কি? মেহরাবের প্রয়োজনীয়তা কি? ইমাম মেহরাবের ভিতর ঢুকে নামায পড়লে নামাজ হবে কি?
জাওয়াব  : محراب (মেহরাব) শব্দটি ইসমে আলাহ উনার অন্তর্ভূক্ত। এর শাব্দিক অর্থ হলো- যুদ্ধের একটি বড় অস্ত্র। যেহেতু ইমাম সাহেব মেহরাবে দাঁড়িয়ে মুক্তাদীগণকে নিয়ে নামায আদায়ের মাধ্যমে শয়তানের বিরুদ্ধে জ্বিহাদ করে থাকেন, তাই এটাকে মেহরাব হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে। আর প্রচলিত অর্থে মসজিদের ক্বিবলার দিকে ইমাম সাহেবের দাঁড়ানোর স্থানকে মেহরাব বলা হয়।
উল্লেখ্য যে, বর্তমানে মসজিদের ক্বিবলার দিকে নির্মিত অতিরিক্ত স্থান, যাকে মেহরাব বলা হয়। এর প্রচলন শুরু হয়েছে- হযরত উমর ইবনে আব্দুল আজিজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সময়, যা খাইরুল কুরুনের অন্তর্ভূক্ত।
প্রয়োজনীয়তা : ইমাম এবং মুক্তাদী যদি একই কাতারে দাঁড়ান, আর মুক্তাদীর সংখ্যা যদি দুই বা ততোধিক হয়, তাহলে নামায মাকরূহ হবে। অতএব দুই বা ততোধিক মুক্তাদী হলে ইমাম সাহেবকে সামনে একা দাঁড়াতে হবে। স্থান সংকুলানের অভাবেই হোক অথবা এমনিতেই হোক, ইমাম সাহেব যদি মসজিদে না দাঁড়িয়ে সম্পূর্ণ মেহরাবের ভিতর প্রবেশ করে নামায পড়ান, তাহলে নামায মাকরূহ হবে। তখন শর্ত হচ্ছে- ইমাম সাহেবের সাথে কমপক্ষে একজন মুছল্লী মেহরাবের ভিতর দাঁড়াতে হবে। তাহলে মাকরূহ হবে না। (বাহরুর রায়েক, হাশিয়ায়ে তাহতাবি, শামী, গায়তুল আওতার)।
আবা-৩৪
৬১৪ নং- সুওয়াল : বসে আযান দেয়া পবিত্র ইসলাম উনার মধ্যে জায়িয আছে কি? নতুন শিশু জন্ম নিলে ঐ বাড়ীতে সাতদিন পর্যন্ত আযান দেয়া হয়। এ আযানের গুরুত্ব ইসলাম উনার মধ্যে কতটুকু জানিয়ে খুশী করবেন।

সুওয়াল : বসে আযান দেয়া পবিত্র ইসলাম উনার মধ্যে জায়িয আছে কি? নতুন শিশু জন্ম নিলে ঐ বাড়ীতে সাতদিন পর্যন্ত আযান দেয়া হয়। এ আযানের গুরুত্ব ইসলাম উনার মধ্যে কতটুকু জানিয়ে খুশী করবেন।
জাওয়াব : বসে আযান দেয়া মাকরূহের অন্তর্ভূক্ত। আযানের সুন্নাত হচ্ছে, দাঁড়িয়ে আযান দেয়া। আর কোন নতুন শিশু জন্ম গ্রহন করলে সাতদিন আযান দিতে হবে- এটা সুন্নতের খেলাফ। সন্তান ভুমিষ্ঠ হলে শিশুকে ধুয়ে পরিস্কার করে কাপড় দিয়ে জড়িয়ে কোন বুযুর্গ ব্যক্তির নিকট এনে দিবে। তিনি শিশুর ডান কানে আযানের লফজ বা শব্দগুলি এবং বাম কানে ইক্বামতের লফজ বা শব্দগুলি বলবেন। এটাকে তাযীন বলা হয়। এটা খাছ সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত। এছাড়া তাহনীক করাও সুন্নত। অর্থাৎ কোন বুযুর্গ ব্যক্তি শাহাদত অঙ্গুলি দ্বারা মধু নিয়ে নিজের জিহ¡ায় লাগিয়ে নবজাতকের উপরের তালুতে লাগিয়ে দিবেন। যাতে বাচ্চা শিশু চুষে চুষে খেতে পারে। (শামী, বাহরুর রায়েক ইত্যাদি)।
আবা-৩৪
৬১৪ নং- সুওয়াল : পবিত্র সূরা ফিল উনার ৪নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার শেষে সিজ্জীন - সিজ্জীল-সিজ্জীলিন কোনটা উচ্চারণ হবে?

সুওয়াল : পবিত্র সূরা ফিল উনার ৪নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার শেষে সিজ্জীন - সিজ্জীল-সিজ্জীলিন কোনটা উচ্চারণ হবে?
জাওয়াব : সিজ্জীন বলা সম্পূর্ণ নাযায়িয, হারাম ও কুফরী। কেননা সিজ্জীন উচ্চারণে অক্ষরের এবং অর্থের পরিবর্তন হয়, যা তাহরীফে কুরআন উনার অন্তর্ভুক্ত।
আর সিজ্জীল ও সিজ্জীলিন উভয়টি পড়া জায়িয রয়েছে। যিনি ওয়াকফ করবেন, তিনি সিজ্জীল পড়বেন। আর যিনি মিলিয়ে পড়বেন, তিনি সিজ্জীলিন পড়বেন। (সমূহ তাজবীদের কিতাব)
 আবা-৩৪

৬১৩ নং- সুওয়াল : নামাযে ক্বিরাত পাঠ বলতে কি বুঝায়? কতটুকু ক্বিরাত পাঠ করলে নামাযে ক্বিরাত পাঠের ফরয আদায় হবে?

সুওয়াল : নামাযে ক্বিরাত পাঠ বলতে কি বুঝায়? কতটুকু ক্বিরাত পাঠ করলে নামাযে ক্বিরাত পাঠের ফরয আদায় হবে?
জাওয়াব : নামাযে ক্বিরাত পাঠ বলতে বুঝায়- পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ ও অপর কোন পবিত্র সূরা (যা কমপক্ষে বড় এক পবিত্র আয়াত শরীফ অথবা ছোট তিন পবিত্র আয়াত শরীফ) পাঠ করা। নামাযে মুতলাক্ব ক্বিরাত পাঠ করা ফরয। চাই তা পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ থেকেই হোক অথবা অন্য যে কোন সূরা থেকেই হোক। বড় এক পবিত্র আয়াত অথবা ছোট তিন পবিত্র আয়াত শরীফ পাঠ করলে নামাযে ক্বিরাতের ফরয আদায় হয়ে যাবে।
নামাযে যদি শুধু সূরা ফাতিহা পাঠ করা হয় কিন্তু অন্য কোন সূরা না মিলানো হয়, তাহলে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে। আর যদি নামাযে সূরা ফাতিহা না পড়ে অন্য কোন সূরা পাঠ করে, তাহলেও সিজদায়ে সাহু ওয়াযিব হবে।
আর যদি পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফও না পড়ে এবং অন্য কোন সূরাও না মিলায়, তাহলে নামায দোহরায়ে পড়তে হবে। কেননা নামাযের ফরয ক্বিরাত পাঠ করা তরক হয়েছে। (সমূহ ফিক্বাহর কিতাব)

আবা-৩৪
৬১২ নং- সুওয়াল : দাড়ি সুন্দর, খসখসে বা চাপদাড়ি রাখার জন্য, নতুন দাড়ি গজানোর সময় প্রথমে কয়েকবার মুণ্ডন করা জায়িয কিনা, জানতে বাসনা রাখি।

সুওয়াল : দাড়ি সুন্দর, খসখসে বা চাপদাড়ি রাখার জন্য, নতুন দাড়ি গজানোর সময় প্রথমে কয়েকবার মুণ্ডন করা জায়িয কিনা, জানতে বাসনা রাখি।
জাওয়াব : একমুষ্ঠির কমে দাড়ি ছাটা বা মুণ্ডন করা নাযায়িয ও হারাম। কারণ একমুষ্ঠি পরিমাণ দাড়ি রাখা ফরয/ওয়াযিবের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং কোন অবস্থাতেই দাড়ি ছাটা ও মুণ্ডন করা জায়িয নেই। চাই নতুন গজানোর সময়েই হোক অথবা পরবর্তীতেই হোক, কিম্বা দাড়িকে চাপদাড়ি বা সুন্দর করার অজুহাতে হোক না কেন সকল অবস্থায়ই দাড়ি ছাটা বা মুণ্ডন করা উভয়ই নাজায়িয, হারাম ও কবীরা গুণাহের অন্তর্ভুক্ত। (সমূহ ফিক্বাহের কিতাব)
[বিস্তারিত জানার জন্য মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার ৩০-৩৪তম সংখ্যায় প্রকাশিত দাড়ির ফতওয়া পড়ুন।]
আবা-৩৩

দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া

৬১১ নং- সুওয়াল : মসজিদের ভিতরে খালি মুখে অথবা মাইকের দ্বারা হারানো জিনিসের বিজ্ঞপ্তি বা ঘোষণা দেয়া জায়েয আছে কি? দলীলসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।


সুওয়াল : মসজিদের ভিতরে খালি মুখে অথবা মাইকের দ্বারা হারানো জিনিসের বিজ্ঞপ্তি বা ঘোষণা দেয়া জায়েয আছে কি? দলীলসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াব : মসজিদের ভিতরে কোন হারানো জিনিসের বিজ্ঞপ্তি বা ঘোষণা দেয়া, চাই তা খালি মুখে হোক অথবা মাইকের দ্বারা হোক, সম্পূর্ণরূপে নাযায়িয ও হারাম। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে,
عن ابى هريرة (رض) قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من سمع رجلا ينشد ضالة فى المسجد قليقل لا ردها الله عليهك- فان المساجد لم تبن لهذا- (مسلم شريف، مشكوة شريف، مرقات شريف، اشعة اللمعات، لمعات(
অর্থ : হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কোন ব্যক্তি যদি কাউকে মসজিদে কোন হারানো জিনিসের বিজ্ঞপ্তি বা ঘোষণা দিতে শুনে, তাহলে সে যেন বলে মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন তোমাকে হারানো বস্তু ফিরিয়ে না দেন। নিশ্চয়ই মসজিদসমূহ হারানো জিনিসের বিজ্ঞপ্তি দেয়ার জন্য তৈরী করা হয়নি।” (মুসলিম শরীফ, মেশকাত শরীফ, উেনারকাত শরীফ, আশয়াতুল লুমুয়াত, লুমুয়াত)
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারা একথা স্পষ্টরূপে প্রমাণিত হয় যে, মসজিদসমূহে হারানো জিনিসের বিজ্ঞপ্তি বা ঘোষণা দেয়া জায়িয তো নেই বরং মসজিদের ভিতরে হারানো জিনিসের ঘোষণা শুনলে একথা বলে বদ দোয়া করতে হবে যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন তোমাকে হারানো মাল ফিরিয়ে না দেন।
অতএব, মসজিদের মধ্যে কোন প্রকার হারানো জিনিসের ঘোষণা বা বিজ্ঞপ্তি দেয়া শরীয়ত উনার খেলাফ তথা নাযায়িয ও হারাম। (সমূহ ফিক্বাহর কিতাব)
আবা৩৪
৬১০ নং- সুওয়াল : বর্তমান সময়ে বিভিন্ন দেশে নববর্ষ উপলক্ষে পহেলা তারিখে যেমন- ১লা বৈশাখ, ১লা জানুয়ারী ইত্যাদি তারিখে ভাল ভাল খাওয়ার জন্য উৎসাহ দেয়া হয়, এটা কতটুকু শরীয়তসম্মত?

সুওয়াল : বর্তমান সময়ে বিভিন্ন দেশে নববর্ষ উপলক্ষে পহেলা তারিখে যেমন- ১লা বৈশাখ, ১লা জানুয়ারী ইত্যাদি তারিখে ভাল ভাল খাওয়ার জন্য উৎসাহ দেয়া হয়, এটা কতটুকু শরীয়তসম্মত?
জাওয়াব : শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে পহেলা বৈশাখ, পহেলা জানুয়ারীতে ভাল খাওয়ার জন্য আলাদাভাবে কোন তাগিদ করা হয়নি। বরং দশই মুহররমুল হারাম শরীফ প্রত্যেক পরিবারের প্রধান ব্যক্তিকে তার পরিবারের সদস্যদেরকে ভাল খানা খাওয়ানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
من وسع على عياله فى النفقة يوم عاشورا وسع الله عليه سائر سنته.
অর্থ : যে ব্যক্তি তার পরিবারবর্গকে আশূরার দিন অর্থাৎ দশই মুহররমে ভাল খাদ্য খাওয়াবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে এক বছরের জন্য সচ্ছলতা দান করবেন।

আবা-৩৪
৬০৯ নং- সুওয়াল : হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাত সম্পর্কে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দোষারোপ করা কতটুকু জায়েয?


সুওয়াল : হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাত সম্পর্কে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দোষারোপ করা কতটুকু জায়েয?
জাওয়াব : কোন হযরত ছাহাবায়ে ক্বিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালঅ আনহুম উনাদেরকে কোন ব্যাপারে দোষী সাব্যস্ত করা জায়িয নেই। সুতরাং কাতিবে ওহী হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দোষারোপ করা সম্পূর্ণ নাযায়িয। কেননা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারা ছাবিত আছে, হযরত ছাহাবায়ে ক্বিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে দোষারোপ করা কুফরী। যেমন- মিশকাত শরীফ উনার বর্ণিত হয়েছে,
من غاطه اصحاب محمد صلى الله عله وسلم فهو كافر.        
অর্থ : যে ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হযরত ছাহাবায়ে ক্বিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, সে কাফির।
আবা-৩৪
৬০৮ নং- সুওয়াল :আমরা শুনে আসছি, হাঁটুর উপর কাপড় ওঠালে ফরয তরক করা এমন কি অযু নষ্ট হয়। একজন আরব প্রবাসীর মুখে শুনি, আরব দেশে নাকি হাঁটুর উপর কাপড় তুলে হাঁটুর উপর পর্যন্ত ধুয়ে অযু করে। তারা বলে, এর নাকি কোন দলীল নাই। আসলে এর কি কোন দলীল আছে?

সুওয়াল : মাসিক মদীনা এপ্রিল/৯৬ সংখ্যায় নিম্নোক্ত প্রশ্নোত্তর ছাপানো হয়-
প্রশ্ন : আমরা শুনে আসছি, হাঁটুর উপর কাপড় ওঠালে ফরয তরক করা এমন কি অযু নষ্ট হয়। একজন আরব প্রবাসীর মুখে শুনি, আরব দেশে নাকি হাঁটুর উপর কাপড় তুলে হাঁটুর উপর পর্যন্ত ধুয়ে অযু করে। তারা বলে, এর নাকি কোন দলীল নাই। আসলে এর কি কোন দলীল আছে?
উত্তর : নাভির নিচ থেকে শুরু করে হাঁটুর উপরিভাগ পর্যন্ত পুরুষ লোকের ছতর। এই ছতর উন্মুক্ত করা গোনাহর কাজ, হাদীছ শরীফে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। তবে, হঠাৎ ছতর উন্মুক্ত হয়ে গেলে অযু ভঙ্গ হয়ে যায় এ ধারণা ঠিক নয়। আরব দেশেও প্রচুর অশিক্ষিত লোক বাস করে। সেরূপ কোন লোকের মন্দ আমল বা দায়িত্বহীন মন্তব্য তো আর শরীয়তের দলীল হতে পারে না।
এখন আমার প্রশ্ন হলো- পুরুষ লোকের ছতর সম্পর্কে মাসিক মদীনার উপরোক্ত উত্তর সঠিক হয়েছে কি না? নির্ভরযোগ্য দলীলসহ সঠিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।

জাওয়াব : প্রথমতঃ বলতে হয় যে, ছতর সম্পর্কে মাসিক মদীনার উপরোক্ত বক্তব্য হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ ও মোখতার (গ্রহণযোগ্য) বর্ণনার সম্পূর্ণ বিপরীত। মূলতঃ ফিক্বাহ শাস্ত্রে পূর্ণ তাহক্বীক্ব ও মাযহাব সম্পর্কে পর্যাপ্ত পরিমাণ ইলম না থাকার কারণেই মদীনা পত্রিকায় ছতরসম্পর্কে উপরোক্ত ভুল বক্তব্য পেশ করা হয়েছে, যা মানুষকে ফরয তরক করাবে। যার কারণে মানুষ কবীরা গুণাহে গুণাহগার হবে।
ছতর সম্পর্কে আমাদের হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ ও মোখতার ফতওয়া এই যে,    
وعورة الرجل من تحت سر ته الى تحت ركبتيه فا لسرة عندنا ليست بعورة والركبة عورة وعند الشافعى بالعلس ......... (شرح النقاية ج صفه ১৪১) وكذا فى شرح الوقاية، نور الهداية، رسالهء دينيات
অর্থ : পুরুষের ছতরে আওরাত, তার নাভীর নীচ থেকে উভয় হাঁটুর নীচ পর্যন্ত। সুতরাং আমাদের (হানাফীদের) নিকট নাভী ছতরের অন্তর্ভুক্ত নয়, কিন্তু হাঁটু ছতরের অন্তর্ভুক্ত। ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইহার বিপরীত মত পেশ করেছেন। অর্থাৎ শাফিয়ী মাযহাব মতে ছতর হলো- নাভীর উপর থেকে হাঁটুর উপর পর্যন্ত।
আর ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে শুধু লজ্জাস্থানদ্বয় (পেশাব ও পায়খানার রাস্তা) ছতরের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ যা আন্ডারওয়ার বা ছোট প্যান্ট দ্বারা আবৃত করা সম্ভব।” (শরহুন নেক্বায়া ১ম জিঃ পৃষ্ঠা-১৪১। অনুরূপ শরহে বেকায়া, নুরুল হেদায়া, রেসালায়ে দ্বীনিয়াত ইত্যাদি আরো অনেক ফিক্বাহের বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাবে উল্লেখ আছে।
মোটকথা হলো- ১। হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের ছতর হলো- নাভীর নীচ থেকে হাঁটুর নীচ পর্যন্ত।
২। শাফিয়ী মাযহাব মতে নাভীর উপর থেকে হাঁটুর উপর পর্যন্ত, অর্থাৎ হানাফী মাযহাবের বিপরীত।
৩। মালিকী মাযহাব মতে শুধু লজ্জা স্থানদ্বয় আবৃত করা, যা আন্ডারওয়ার বা ছোট প্যান্ট দ্বারা আবৃত করা সম্ভব।
৪। হাম্বলী মাযহাবে দুটি মত রয়েছে- একটি শাফিয়ী মাযহাবের অপরটি মালিকী মাযহাবের অনুরূপ।
দ্বিতীয়তঃ মাসিক মদীনার সম্পাদক সাহেবের উপরোক্ত মাসয়ালার পরিপ্রেক্ষিতে আরব দেশের লোকদেরকে দোষারোপ করা ঠিক হয়নি। কারণ আরব দেশের উক্ত লোকেরা যদি মালেকী মাযহাবের হয়ে থাকেন, তবে ছতর সম্পর্কে এবং হাঁটুর উপর কাপড় তুলে হাঁটুর উপর পর্যন্ত ধুয়ে ওযু করার ব্যাপারে তাদের উক্ত বক্তব্য ঠিকই আছে। কারণ মালিকী মাযহাব মতে ছতর হলো- শুধু লজ্জাস্থানদ্বয় আবৃত করা।
সুতরাং এমতাবস্থায় মালিকী মাযহাব মতে ওযুর সময় হাঁটুর উপরে কাপড় উঠালে যেরূপ ওযু ভঙ্গ হয়না, তদ্রুপ ফরযও তরক হবেনা।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, কোন মাযহাবেই ওযুর সময় ছতর উম্মুক্ত হওয়া ওযু ভঙ্গের কারণ নয়। তবে সকলের মতেই জনসমুক্ষে ছতর উম্মুক্ত করা কবীরা গুণাহের অন্তর্ভুক্ত।
সুতরাং সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, ছতর সম্পর্কে মাসিক মদীনার উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ ভুল, মনগড়া, বিভ্রান্তিকর ও কবীরা গুণাহের কারণ।
এখানে আরো উল্লেখ্য যে, মদীনার উপরোক্ত বক্তব্যের কারণে যতগুলো লোক ফরয তরক করে কবীরা গুণাহে গুণাহগার হবে, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের ফায়সালা মোতাবেক মদীনা সম্পাদকের আমলনামায় সর্ব প্রথম সমস্ত লোকের গুণাহগুলো পৌঁছবে। অতঃপর যারা আমল করবে, তাদের আমলনামায় পৌঁছবে।
অতএব, মদীনা সম্পাদকের উচিৎ, পরবর্তী সংখ্যায় এর ভুল সংশোধনী দিয়ে লোকদেরকে ও নিজেকে কবীরা গুণাহ থেকে হিফাযত করা।
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকে হিদায়েত ও ছহীহ সমঝ দান করুন।
আবা-৩৪