সুওয়াল :
মাসিক মদীনা এপ্রিল/৯৬ সংখ্যায় নিম্নোক্ত প্রশ্নোত্তর ছাপানো হয়-
প্রশ্ন :
আমরা শুনে আসছি, হাঁটুর উপর কাপড় ওঠালে ফরয তরক করা এমন কি অযু নষ্ট হয়। একজন আরব প্রবাসীর
মুখে শুনি, আরব দেশে নাকি হাঁটুর উপর কাপড় তুলে হাঁটুর উপর পর্যন্ত ধুয়ে অযু করে। তারা
বলে, এর নাকি কোন দলীল নাই। আসলে এর কি কোন দলীল আছে?
উত্তর :
নাভির নিচ থেকে শুরু করে হাঁটুর উপরিভাগ পর্যন্ত পুরুষ লোকের ছতর। এই ছতর উন্মুক্ত
করা গোনাহর কাজ, হাদীছ শরীফে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। তবে, হঠাৎ ছতর উন্মুক্ত হয়ে গেলে অযু
ভঙ্গ হয়ে যায় এ ধারণা ঠিক নয়। আরব দেশেও প্রচুর অশিক্ষিত লোক বাস করে। সেরূপ কোন
লোকের মন্দ আমল বা দায়িত্বহীন মন্তব্য তো আর শরীয়তের দলীল হতে পারে না।
এখন আমার
প্রশ্ন হলো- পুরুষ লোকের ছতর সম্পর্কে মাসিক মদীনার উপরোক্ত উত্তর সঠিক হয়েছে কি
না? নির্ভরযোগ্য দলীলসহ সঠিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।
জাওয়াব :
প্রথমতঃ বলতে হয় যে,
ছতর সম্পর্কে মাসিক মদীনার উপরোক্ত বক্তব্য হানাফী মাযহাবের
প্রসিদ্ধ ও মোখতার (গ্রহণযোগ্য) বর্ণনার সম্পূর্ণ বিপরীত। মূলতঃ ফিক্বাহ শাস্ত্রে
পূর্ণ তাহক্বীক্ব ও মাযহাব সম্পর্কে পর্যাপ্ত পরিমাণ ইলম না থাকার কারণেই মদীনা
পত্রিকায় “ছতর” সম্পর্কে উপরোক্ত ভুল বক্তব্য পেশ করা হয়েছে, যা মানুষকে ফরয তরক করাবে। যার
কারণে মানুষ কবীরা গুণাহে গুণাহগার হবে।
ছতর
সম্পর্কে আমাদের হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ ও মোখতার ফতওয়া এই যে,
وعورة
الرجل من تحت سر ته الى تحت ركبتيه فا لسرة عندنا ليست بعورة والركبة عورة وعند
الشافعى بالعلس ......... (شرح النقاية ج ১ صفه ১৪১) وكذا فى شرح الوقاية، نور الهداية،
رسالهء دينيات
অর্থ : “পুরুষের
ছতরে আওরাত, তার নাভীর নীচ থেকে উভয় হাঁটুর নীচ পর্যন্ত। সুতরাং আমাদের (হানাফীদের) নিকট
নাভী ছতরের অন্তর্ভুক্ত নয়,
কিন্তু হাঁটু ছতরের অন্তর্ভুক্ত। ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি
আলাইহি তিনি ইহার বিপরীত মত পেশ করেছেন। অর্থাৎ শাফিয়ী মাযহাব মতে ছতর হলো- নাভীর
উপর থেকে হাঁটুর উপর পর্যন্ত।
আর ইমাম
মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে শুধু লজ্জাস্থানদ্বয় (পেশাব ও পায়খানার রাস্তা)
ছতরের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ যা আন্ডারওয়ার বা ছোট প্যান্ট দ্বারা আবৃত করা সম্ভব।” (শরহুন
নেক্বায়া ১ম জিঃ পৃষ্ঠা-১৪১। অনুরূপ শরহে বেকায়া, নুরুল হেদায়া, রেসালায়ে
দ্বীনিয়াত ইত্যাদি আরো অনেক ফিক্বাহের বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাবে উল্লেখ আছে।
মোটকথা
হলো- ১। হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের ছতর হলো- নাভীর নীচ থেকে হাঁটুর নীচ পর্যন্ত।
২।
শাফিয়ী মাযহাব মতে নাভীর উপর থেকে হাঁটুর উপর পর্যন্ত, অর্থাৎ
হানাফী মাযহাবের বিপরীত।
৩।
মালিকী মাযহাব মতে শুধু লজ্জা স্থানদ্বয় আবৃত করা, যা আন্ডারওয়ার বা ছোট প্যান্ট
দ্বারা আবৃত করা সম্ভব।
৪।
হাম্বলী মাযহাবে দু’টি মত রয়েছে- একটি শাফিয়ী মাযহাবের অপরটি মালিকী মাযহাবের অনুরূপ।
দ্বিতীয়তঃ
মাসিক মদীনার সম্পাদক সাহেবের উপরোক্ত মাসয়ালার পরিপ্রেক্ষিতে আরব দেশের লোকদেরকে
দোষারোপ করা ঠিক হয়নি। কারণ আরব দেশের উক্ত লোকেরা যদি মালেকী মাযহাবের হয়ে থাকেন, তবে ছতর
সম্পর্কে এবং হাঁটুর উপর কাপড় তুলে হাঁটুর উপর পর্যন্ত ধুয়ে ওযু করার ব্যাপারে
তাদের উক্ত বক্তব্য ঠিকই আছে। কারণ মালিকী মাযহাব মতে ছতর হলো- শুধু
লজ্জাস্থানদ্বয় আবৃত করা।
সুতরাং
এমতাবস্থায় মালিকী মাযহাব মতে ওযুর সময় হাঁটুর উপরে কাপড় উঠালে যেরূপ ওযু ভঙ্গ হয়না, তদ্রুপ
ফরযও তরক হবেনা।
এখানে
বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে,
কোন মাযহাবেই ওযুর সময় ছতর উম্মুক্ত হওয়া ওযু ভঙ্গের কারণ
নয়। তবে সকলের মতেই জনসমুক্ষে ছতর উম্মুক্ত করা কবীরা গুণাহের অন্তর্ভুক্ত।
সুতরাং
সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, ছতর সম্পর্কে মাসিক মদীনার উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ ভুল, মনগড়া, বিভ্রান্তিকর
ও কবীরা গুণাহের কারণ।
এখানে
আরো উল্লেখ্য যে,
মদীনার উপরোক্ত বক্তব্যের কারণে যতগুলো লোক ফরয তরক করে
কবীরা গুণাহে গুণাহগার হবে,
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের ফায়সালা মোতাবেক মদীনা সম্পাদকের
আমলনামায় সর্ব প্রথম সমস্ত লোকের গুণাহগুলো পৌঁছবে। অতঃপর যারা আমল করবে, তাদের
আমলনামায় পৌঁছবে।
অতএব, মদীনা
সম্পাদকের উচিৎ, পরবর্তী সংখ্যায় এর ভুল সংশোধনী দিয়ে লোকদেরকে ও নিজেকে কবীরা গুণাহ থেকে
হিফাযত করা।
মহান
আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকে হিদায়েত ও ছহীহ সমঝ দান করুন।
আবা-৩৪