গবেষণা কেন্দ্র-
মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
[সমস্ত
প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আ’লামীন উনার এবং অসংখ্য দুরূদ ও
সালাম মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি। মহান আল্লাহ পাক উনার অশেষ রহমতে
আমাদের গবেষণা কেন্দ্র,
“মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ” উনার ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে, বহুল
প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী,
বাতিলের আতঙ্ক “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায়
যথাক্রমে টুপির ফতওয়া,
অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান, নিয়ত করে মাজার শরীফ জিয়ারত করা, ছবি ও
তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া, জুমুয়ার নামায ফরজে আইন ও তার
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া,
মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী
সম্পর্কে ফতওয়া, কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া
মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ফরজ
নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ইনজেকশন
নেয়া রোজা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তারাবীহ-এর
নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা ও তার
সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া এবং তারাবীহ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট
বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া প্রকাশ করার পর ৩০তম সংখ্যা থেকে ত্রয়োদশ ফতওয়া হিসাবে দাড়ি ও
গোঁফের শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া প্রকাশ করে আসতে পারায়
মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।]
একমুষ্ঠি
হওয়ার পূর্বে দাড়ি কর্তন ও মুণ্ডনকারী ইমামের পিছনে নামায পড়ার হুকুম
কমপক্ষে
একমুষ্ঠি পরিমাণ লম্বা দাড়ি রাখা ফরয-ওয়াযিবের অন্তর্ভূক্ত। আর এক মুষ্ঠির কমে
দাড়ি চাছা ও কাটা হারাম।
শরীয়ত
উনার ফায়সালা হলো- যারা সর্বদা ফরয, ওয়াযিব ও সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ তরক
করে অথবা সর্বদা হারাম কাজে লিপ্ত, শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে তারা ফাসিকের
অন্তর্ভূক্ত। আর সর্বসম্মতিক্রমে ফাসেকের পিছনে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী।
অতএব, যারা
দাড়ি এক মুষ্ঠি হওয়ার পূর্বে কাটে বা ছাটে, তারা ফরজ তরক করা বা হারাম কাজে
লিপ্ত থাকার কারণে ফাসেকের অন্তর্ভূক্ত। এরূপ ব্যক্তির পিছনে নামায পড়া মাকরূহ
তাহরীমী।
ফাসিকের
পরিচয় ও তার আহকাম
এ
প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে,
والفاسق
من فعل كبيرة او اصر على صغيرة- (شامى ج ৪ صفه ৫৩১)
অর্থ :
ফাসিক ঐ ব্যক্তি,
যে কবীরা গুণাহ করে অথবা ছগীরা গুণাহ বারবার করে। (ফতওয়ায়ে
শামী ৪র্থ জিঃ পৃষ্ঠা-৫৩১)
আর
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে,
قال
رسول الله صلى الله عليه وسلم- لايؤم فاجر مو عمنا. (ابن ماجه)
অর্থ :
সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি বলেন, “ফাসিক ব্যক্তি মু’মিন ব্যক্তিদের ইমামতী করবে না।” (ইবনে মাযাহ)
আর তাই
ফিক্বাহের কিতাবসমূহে উল্লেখ আছে যে,
ঊদূ লেখা
ঢুকবে......................................................................................
অর্থ :
ফাসিক ব্যক্তি ইমামতী করার উপযুক্ত নয়। ফাসিকের পিছনে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী।
তাই এরূপ (ফাসিক) ইমামকে অনতিবিলম্বে ইমামতী পদ থেকে সরিয়ে দেয়া আবশ্যক। (ফতওয়ায়ে
রহীমিয়াহ ১ম জিঃ পৃষ্ঠা-১৬৫)
উপরোক্ত
আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, যে ব্যক্তি কবীরা গুণায় লিপ্ত অথবা সর্বদা ছগীরা গুণাহ করে
থাকে, অর্থাৎ যে ব্যক্তি ফরয,
ওয়াযিব অথবা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ বিনা শরয়ী ওজরে তরক করে, শরীয়ত
উনার দৃষ্টিতে সে ব্যক্তি ফাসিক। আর পবিত্র হাদীছ শরীফ ও ফিক্বাহের কিতাবের বর্ণনা
দ্বারা প্রমাণিত হয় যে,
ফাসিকের পিছনে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী।
অতএব, এক
মুষ্ঠির কমে দাড়ি মুণ্ডন করা বা ছাটা যেহেতু হারাম ও কবীরাহ গুণাহ, সেহেতু
এক মুষ্ঠির কমে যারা দাড়ি কাটে বা ছাটে, শরীয়তের দৃষ্টিতে তারাও ফাসিকের
অন্তর্ভূক্ত। এরূপ ব্যক্তির পিছনে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী।
এ
প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে,
ঊদূ লেখা
ঢুকবে......................................................................................
অর্থ :
এক মুষ্ঠির কমে দাড়ি রাখা নাযায়িয, হারাম। এজন্যে দাড়ি মুণ্ডন বা
কর্তনকারী ফাসিক। আর ফাসিক ব্যক্তি ইমামতী করা মাকরূহ তাহরীমী। তাই এরূপ ব্যক্তিকে
ইমাম বানানো উচিৎ নয়। (আহসানুল ফতওয়া পৃষ্ঠা-২৬০)
এ
প্রসঙ্গে কিতাবে আরো উল্লেখ আছে যে,
ঊদূ লেখা
ঢুকবে......................................................................................
অর্থ :
দাড়ি মুণ্ডন করা হারাম,
দাড়ি মুণ্ডনকারী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে ফাসিক। তাই এরূপ
ব্যক্তিকে তারাবীহ (বা অন্যান্য নামাযের জন্যে) ইমাম হিসাবে নিয়োগ করা জায়িয নেই।
এরূপ (ফাসিক) ইমামের পিছনে তারাবীহ (বা অন্যান্য নামায) পড়া মাকরূহ তাহরীমী।
(ফতওয়ায়ে রহীমিয়াহ ১ম জিঃ পৃঃ ৩৫৩, অনুরূপ ফতওয়ায়ে শামী ১ম জিঃ ৫২৩
পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে)
উক্ত কিতাবে এ প্রসঙ্গে
আরো উল্লেখ আছে যে,
ঊদূ লেখা
ঢুকবে......................................................................................
অর্থ :
দাড়ি মুণ্ডনকারী ব্যক্তি প্রকাশ্য ফাসিক (যার ফাসিকী সুস্পষ্ট) “মালাবুদ্দা
মিনহু” কিতাবে উল্লেখ আছে,
দাড়ি এক মুষ্ঠি হওয়ার পূর্বে মুণ্ডন করা হারাম।
(পৃষ্ঠা-১৩০) ....... দ্বীনদার লোক উপস্থিত থাকা সত্বেও ফাসেক ব্যক্তি আযান ও
ইক্বামত দেয়া মাকরূহ তাহরীমী। “নুরুল ইযাহ” কিতাবে উল্লেখ আছে, ফাসেক
ব্যক্তি আযান ও ইক্বামত দেয়া মাকরূহ তাহরীমী, পৃষ্ঠা-৬২)। তাই দাড়ি মুণ্ডনকারী
ব্যক্তিকে আযান ও ইক্বামতের অনুমতি দেয়া জায়েয নেই, (বরং) মাকরূহ তাহরীমী। “জাওহারাতুন
নাইয়্যারাহ” কিতাবে উল্লেখ আছে যে,
ফাসেক ব্যক্তিকে মুয়াজ্জিন হিসাবে নিয়োগ করা মাকরূহ তাহরীমী, পৃষ্ঠা-৪৪।
(ফতওয়ায়ে রহীমিয়াহ ৩য় জিঃ পৃষ্ঠা-১৫)
এখানে
উল্লেখ্য যে, এক মুষ্ঠির কমে দাড়ি রাখা, দাড়ি মুণ্ডন করারই নামান্তর।
সুতরাং
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, এক মুষ্ঠির কমে দাড়ি কর্তনকারী বা
মুণ্ডনকারী ব্যক্তির পিছনে নামায পড়া যেরূপ মাকরূহ তাহরীমী, অনুরূপ
এরূপ ব্যক্তির আযান ও ইক্বামতও মাকরূহ তাহরীমীর অন্তর্ভূক্ত।
ওজর বশতঃ ফাসিকের পিছনে
নামায
পড়ার হুকুম
সুস্পষ্টভাবেই
প্রমাণিত হয়েছে যে,
এক মুষ্ঠির কমে দাড়ি কর্তনকারী অথবা মুণ্ডনকারী ব্যক্তির
পিছনে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। যেহেতু শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সে ফাসিক। এমতাবস্থায়
কোন দ্বীনদার, পরহেজগার ইমামের পিছনে নামায পড়তে হবে। হ্যাঁ যদি কোন দ্বীনদার, পরহেযগার
ইমাম না পাওয়া যায়,
তবে শুধুমাত্র জামায়াতের খাতিরে বা “জামায়াত” রক্ষার্থে
ফাসিক ইমামের পিছনে নামায পড়া যাবে।
যেমন এ
প্রসঙ্গে ফিক্বাহের বিখ্যাত কিতাব “দুররুল মুখতার” কিতাবে
উল্লেখ আছে যে,
صلى خلف فاسق اومبتدع نال فضل الجماعة.
অর্থ : “(জামায়াত
রক্ষার্থে) ফাসিক অথবা বিদয়াতী লোকের পিছনে নামায পড়লে জামায়াতের ফযীলত পাওয়া
যাবে।”
আর “ফতওয়ায়ে
শামীতে” উল্লেখ আছে যে,
ان
الصلاة خلفهما اولى من الانفراد لكن لا ينال كما
ينال
خلف تقى وورع=
অর্থ : “নিশ্চয়ই
একা নামায পড়ার চেয়ে ফাসেক ও বিদয়াতী ইমামের পিছনে (জামায়াত রক্ষার্থে) নামায পড়া
উত্তম। কিন্তু দ্বীনদার,
পরহেযগার ইমামের পিছনে নামায পড়লে যতটুকু ফযীলত পাওয়া যাবে, ফাসেক
অথবা বিদয়াতী ইমামের পিছনে নামায পড়লে ততটুকু ফযীলত পাওয়া যাবেনা।”
উপরোক্ত
আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, এক মুষ্ঠির কমে দাড়ি কর্তনকারী
অথবা দাড়ি মুণ্ডনকারী ব্যক্তি ফাসেক, আর এরূপ ফাসেক ইমামের পিছনে শরয়ী
ওজর ব্যতীত নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। ফতওয়ায়ে আলমগীরী ও ফতহুল ক্বাদীরে মাকরূহের
অধ্যায়ে বর্ণিত আছে যে,
নামাজে মাকরূহ তাহরীমী হলে নামায দোহরানো ওয়াজিব। আর
জামায়াত রক্ষার্থে ফাসেকের পিছনে নামায পড়া জায়িয।
অতএব, দ্বীনদার, পরহেজার
ইমাম থাকা সত্বেও এবং শরয়ী কোন ওজর ব্যতীত ফাসেক ইমামের পিছনে নামায পড়লে, নামায
দোহরায়ে পড়া ওয়াজিব।
নামায
এখানে লক্ষণীয় বিষয় এই যে,
এক মুষ্ঠির কমে দাড়ি কাটা বা ছাটা যেরূপ হারাম, তদ্রুপ
অত্যাধিক লম্বা দাড়ি রাখাও ঠিক নয় বরং সুন্নতের খিলাফ। কারণ, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দাড়ি মুবারক ছিল, “সীনা পোর” বা বুক
ভরা। এ প্রসঙ্গে হুজ্জাতুল ইসলাম, ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত কিতাব
ইহইয়াউ উলূমিদ্দীনে উল্লেখ করেন যে, অতি লম্বা দাড়ি যা সীনার নীচ
পর্যন্ত চলে যায়,
তা আহমকের লক্ষণ।
অতএব, দাড়ি
অধিক লম্বা হলে তা কেটে সুন্নত তরীক্বা (সীনা পোর) মুতাবেক রাখা উচিৎ।
হাদীছ
শরীফের দৃষ্টিতে গোঁফ বা মোঁছের আহকাম :
সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, যে সকল পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে দাড়ি লম্বা করার কথা
বলেছেন, তার সাথে সাথে গোঁফ বা মোঁছ খাট বা ছোট করে রাখার নির্দেষ দেয়া হয়েছে। মূলতঃ
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে গোঁফ বা মোঁছ ছোট বা খাট করে রাখার নির্দেষ দেয়া
হয়েছে। কিন্তু দেখা যায়,
অনেকে মোঁছ সর্ম্পূণ (হলক্ব) চেছে ফেলে। বস্তুতঃ মোঁছ
সম্পূর্ণ চেছে ফেলা শরীয়ত বিরোধী কাজ। কারণ এমন একখানা হাদীছ শরীফ কেউ পেশ করতে
পারবেনা যে, তাতে উল্লেখ আছে যে,
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীববুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো নিজে মোঁছ বা
গোঁফ মুবারক চেছেছেন বা চেছে ফেলার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। বরং অসংখ্য ক্বাওলী ও ফে’লী হাদীছ
শরীফের দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ গোঁফ বা মোঁছ
মুবারক ছোট ছোট করে রাখতেন এবং অপরকেও ছোট করে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন- এ
প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে যে,
عن
عائشة رضى الله تعالى عنها قالت قال رسول الله صلى الله علي وسلم- عشر من الفطرةقص
الشارب واعفاء اللحية. (ابوداود- احمد- ترمذ- ابن ماجه(
অর্থ :
হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার থেতে বর্ণিত আছে যে, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামূল মুরসালীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “দশটি জিনিস মানুষের ফিৎরাতের
অন্তর্ভূক্ত। তার মধ্যে দু’টি হচ্ছে- গোঁফ কাটা বা দাড়ি লম্বা রাখা।” (আবু দাউদ শরীফ, আহমদ, তিরমিযী, ইবনে
মাজাহ)
পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن
ابى هريرة قال- قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من فطرة الاسلام اخذ الشارب
واعفاء اللحى فان المجوص تعفى شواربها وتحفى لحاهما فخالفواهم خذوا شواربكم واعفوا
لحاكم. (ابن حبان)
অর্থ :
হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামূল
মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
বলেন, গোঁফ কাটা ও দাড়ি লম্বা রাখা ইসলামী ফিৎরাতের অন্তর্ভূক্ত। আর নিশ্চয়ই
মজুসীরা গোঁফ লম্বা রাখে এবং দাড়ি কেটে ফেলে, সুতরাং তোমরা মজুসীদের বিরোধীতা
কর, গোঁফ কাট এবং দাড়ি লম্বা রাখ। (ইবনে হাব্বান)
গোঁফ বা
মোঁছ সর্ম্পকে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো উল্লেখ আছে যে,
عن
ابن عمر رضى الله عنهما عن النبى صلى الله عليه وسلم قال- خالفوا المشر كين- وفروا
اللحى واحفوا الشوارب. (رواه المسلم(
অর্থ :
হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- মুশরিকদের বিরোধীতা কর, দাড়ি
লম্বা রাখ ও গোঁফ খুব ছোট কর। (মুসলিম শরীফ)
পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে,
عن
ابن عمر رضى الله عنهما- قال رسول الله صلى الله عليه وسلم- انهكوا الشوارب واعفوا
للحى.
অর্থ :
হযরত ইবনে উমর ফারুক আলাইহিস সালাম তিনি বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামূল মুরসালীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “গোঁফ ছোট কর এবং দাড়ি লম্বা কর।”
পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এ প্রসঙ্গে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن
ابى هريرة قال- قال رسول الله صلى الله عليه وسلم- جزوا الشوارب وارخوا اللحى-
خالفوا المجوس. (رواه المسلم(
অর্থ :
হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বণিত- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামূল
মুরসালীন নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
বলেন, তোমরা মজুসীদের বিরোধীতা করে গোঁফ ছেটে ফেল ও দাড়ি লম্বা কর।” (মুসলিম
শরীফ)
পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এ প্রসঙ্গে আরো
উল্লেখ আছে যে,
عن
زيد بن ارقم رضى الله عنه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال- من لم يا خذ شاربه
فليس منا. (اخرجه احمد- ترمذى- والنسانى(
অর্থ :
হযরত যায়িদ ইবনে আরকাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
বলেন, “যে ব্যক্তি নিজ গোঁফ কাটেনা (ছোট করেনা) সে আমার উম্মত নয়।” (আহমদ, তিরমিযী, নাসায়ী
শরীফ)
উপরোক্ত
পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, গোঁফ বা
মোঁছ অধিক লম্বাও রাখা যাবেনা এবং সম্পূর্ণ চেছেও ফেলা যাবেনা বরং ছোট ছোট করে
রাখতে হবে। মূলতঃ উল্লেখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মর্ম বা উদ্দেশ্য এটাই। কারণ
পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহে গোঁফ বা মোঁছের ব্যাপারে যতগুলো শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে, তার
প্রত্যেকটির দ্বারাই গোঁফ ছেটে খাট বা ছোট করে রাখার নির্দেশ পাওয়া যায়, হলক্ব (حلق) বা চেছে ফেলার নয়।
যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ
মুবারক হয়েছে, মোঁছ কাটা ** তোমাদের মোঁছ ধর (খাট কর) ** মোঁছ কাট ** মোছঁ ভালরুপে ছোট কর
** মোঁছ অধিক খাট কর ** উল্লেখিত হাদীছ
শরীফের একটির দ্বারাও ** বা মুণ্ডন অর্থাৎ
গোঁফ বা মোঁছ চেছে ফেলার প্রমাণ পাওয়া যায়না। মূলতঃ গোঁফ বা মোঁছ
সম্পূর্ণ চেছে ফেলায় আকৃতি বিকৃতি হয়, যা শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সম্পুর্ণ
হারাম। আর তাই কারো পক্ষেই প্রমাণ করা সম্ভব হবেনা যে, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবেয়ীন, তাবে
তাবেয়ীন ও হযরত ইমাম মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কেউ নিজ গোঁফ বা মোঁছ মুণ্ডন
করতেন। মূলতঃ সকলেই গোঁফ বা মোঁছ ছোট ছোট করে রাখতেন।
এ
প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে,
كان
رسول الله صلى الله عليه وسلم- اذا راى رجلا طويل الشوارب ياخذ شفرة رسواكا فيضع
الشوال تحت الشارب ويقص عليه. (كشف الغمة(
অর্থ :
সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখনই কোন লম্বা মোঁছ বিশিষ্ট লোক
দেখতেন, তখনই তিনি কেচি গ্রহণ করে মোছের নীচে মেছওয়াক রেখে মোঁছের বর্ধিতাংশ কেটে
দিতেন। (কাশফুল গুম্মাহ)
উপরোক্ত
বর্ণনা দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে, গোঁফ বা মোঁছ কেটে বা ছোট করে রাখতে হবে, গোঁফ মুণ্ডন
বা চাছা যাবেনা। মূলতঃ কারো কারো মতে আকৃতি বিকৃত হওয়ার কারণে, গোঁফ বা
মোঁছ সম্পুর্ণ মুণ্ডন করা হারাম। আর অধিকাংশ ফক্বীহগণের মতে গোঁফ বা মোঁছ মুণ্ডন করা মাকরূহ তাহরীমী।
কেউ কেউ
ইহফা শব্দের উপর ভিত্তি করে বলে থাকে যে, মোঁছ হলক্ব বা চেছে ফেলাই
সুন্নত। কারণ ‘ইহফা’ শব্দটি মোবালেগা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যার অর্থ হলো- ভালরূপে মুণ্ডন করা।
মূলতঃ তাদের এ কথাটি শুদ্ধ নয়, কারণ অধিকাংশ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মোঁছ খাট করার
কথা বলা হয়েছে। আর অনুসরণীয় মুহাদ্দিসীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা, যেমন-
হযরত ইবনে হাজার রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মুল্লা আলী ক্বারী
রহমতুল্লাহি আলাইহি,
হযরত আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি
উনাদের কিতাবসমূহে ‘ইহফা’ শব্দের অর্থ করেছেন,
অধিক খাট করা।
অতএব, ‘ইহফা’ শব্দের
লোগাতী অর্থ যদিও মুণ্ডন করা, কিন্তু মোঁছের ক্ষেত্রে লোগাতী অর্থ গ্রহণযোগ্য হবেনা বরং
মুহাদ্দিসগণের ইছতেলাহী অর্থই গ্রহণযোগ্য অর্থাৎ এখানে ইহফা শব্দের অর্থ হলো- অধিক
খাট করা। তাছাড়া ‘ইহফা’ শব্দের অর্থ- বারবার বা বেশী বেশী খাট করাও হতে পারে।
এখানে
উল্লেখ্য যে, আরবী এমন অনেক শব্দ রয়েছে, যার লোগাতী অর্থ সর্বক্ষেত্রে গ্রহণয্যো নয়। বরং কোন কোন
ক্ষেত্রে লোগাতী বা আভিধানিক অর্থ বাদ দিয়ে ইস্তেলাহী বা পারিভাষিক অর্থ গ্রহণ করা
জরুরী হয়ে যায়। যেমন- মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ
মুবারক করেছেন,
مكروا ومكرالله والله خير الماكرين.
যার
লোগাতী অর্থ হলো- কাফিররা ধোকাবাজী করলো, মহান আল্লাহ পাক তিনিও ধোকাবাজী
করলেন, আর মহান আল্লাহ পাক তিনি উত্তম ধোকাবাজ।” (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)
অর্থাৎ
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে কাফিরদের প্রসঙ্গে মকর শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে এবং
মহান আল্লাহ পাক উনার শানেও মকর শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। মাকারুন শব্দের লোগাতী অর্থ
হচ্ছে, ধোকাবাজী, প্রতারনা ইত্যাদি। অতএব, মকর শব্দটি যখন কাফিরদের প্রসঙ্গে আসবে তখন তার লোগাতী
অর্থই গ্রহণ করতে হবে,
আর মকর শব্দটি যখন মহান আল্লাহ পাক উনার শানে ব্যবহৃত হবে, তখন তার
লোগাতী অর্থ বাদ দিয়ে ইস্তেলাহী অর্থ গ্রহণ করতে হবে। কেননা যদি মহান আল্লাহ পাক
উনার শানেও উক্ত শব্দের লোগাতী অর্থ গ্রহণ করা হয়, তবে সেটা হবে স্পষ্ট কুফরী।
সুতরাং
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার সঠিক অর্থ হলো- “কাফিররা ধোঁকাবাজী করলো, আর মহান
আল্লাহ পাক তিনি হেকমত বা কৌশল করলেন, আর মহান আল্লাহ পাক তিনি উত্তম
হেকমতওয়ালা”
অনুরূপ
দাড়ির ক্ষেত্রে ইহফা শব্দের লোগাতী অর্থ গ্রহণযোগ্য নয়, বরং
মুহাদ্দিসগণের দেয়া ইস্তেলাহী বা পারিভাষিক অর্থই গ্রহণযোগ্য। কেননা যদি ইহফা
শব্দের লোগাতী অর্থ গ্রহণ করা হয়, তবে তা হবে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, হযরত তাবেয়ীন, তাবে
তাবেয়ীন ও হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের আমলের বিপরীত। কারণ
উল্লেখিত কেউ নিজ মোঁছ মুণ্ডন করেছেন বলে প্রমাণিত নেই। তাছাড়া অসংখ্য হাদীছ
শরীফে মোঁছ খাট করার কথা বলা হয়েছে।
সুতরাং
উনাদের আমল ও অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার নির্দেষ “মোঁছ
খাট কর” দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, মূলতঃ ইহফা শব্দের দ্বারাও মোঁছ খাট করার কথা বলা হয়েছে, মুণ্ডন
করার কথা নয়। অতএব,
মোঁছ ছোট বা খাট করে রাখাই সুন্নত উনার অন্তর্ভূক্ত। আর
চেছে ফেলা হলো- মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ।
গোঁফ বা
মোঁছের শরয়ী পরিমাপ ও আহকাম
এখন
প্রশ্ন হচ্ছে- পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে গোঁফ খাট বা ছোট করার যে নির্দেশ দেয়া
হয়েছে, তার পরিমাণ কতটুকু?
নিম্নে গোঁফ বা মোঁছের শরয়ী পরিমাপ ও তার আহকাম উল্লেখ করা
হলো-
এ
প্রসঙ্গে মিশকাত শরীফ উনার বিখ্যাত ফার্সী শরাহ আশয়াতুল লুময়াত, ১ম জিঃ
২২৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,
ঊদূ লেখা
ঢুকবে......................................................................................
অর্থ :
হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদের দশটি সুন্নতের মধ্যে একটি হলো- মোঁছ বা গোঁফ
কাটা। উপরের ঠোটের উপরিভাগে যে লোম বা কেশ উঠে, উহাকে মোঁছ বা গোঁফ বলে।
গ্রহণযোগ্য বা মোখতার মত হলো- গোঁফ বা মোঁছ খাট বা ছোট করে রাখবে, উহা
এরূপভাবে খাট করে রাখবে,
যেন ঠোটের প্রান্ত দেখা যায়। অর্থাৎ এ পরিমাণ খাট করবে, যেন
মোঁছের চিহ্ন পরিস্ফুটিত থাকে। আর মোঁছ সর্ম্পূণ মুণ্ডন করে ফেলা মাকরূহ তাহরীমী।
উক্ত
কিতাবের উক্ত স্থানে আরো উল্লেখ আছে যে,
ঊদূ লেখা
ঢুকবে...............................
অর্থ : “(পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত) ইহফা শব্দের অর্থ হলো- খাট করা, মোঁছ বা
গোঁফ খাট করার পরিমাণের ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। তবে ইমামে আ’যম, আবূ
হানীফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মত হলো- মোঁছ বা গোঁফ চোখের ভ্রুর ন্যায়
রাখবে।”
বিখ্যাত
মুহাদ্দিস মূল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রসিদ্ধ কিতাব মিরকাত
শরীফের ১ম জিঃ ৩০১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-
(قص
الشارب) قال ابن حجر فيسن احفائه حتى تبدو حمرة الضفة العليا ولا يحفه من اصله
والامر با حفائه محمول على ما ذكر واخرج بقصه حلقه فهو مكروه وقيل حرام لائه مثلة.
অর্থ :
ইবনে হাজার রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, মোঁছ বা গোঁফ এ পরিমাণ খাট করা
সুন্নত, যাতে ঠোটের লালিমা প্রকাশ পায়। মোঁছ মূল থেকে মুণ্ডন করবেনা। মোঁছ খাট করার
ব্যাপারে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে “ইহফা” শব্দ
ব্যবহৃত হয়েছে, যার অর্থ উপরে আলোচনা করা হয়েছে। অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ক্বাচ্ছুন
শব্দ এসেছে, এর অর্থও খাট করা। যার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মোঁছ সম্পূর্ণ মুণ্ডন করে ফেলা
মাকরূহ তাহরীমী। কেউ কেউ হারামও বলেছেন, কেননা মোঁছ মুণ্ডন করার কারণে
(মোছলা) অর্থাৎ আকৃতি বিকৃতি হয়। ফিক্বাহর
বিখ্যাত কিতাব ফতওয়ায়ে আলমগীরীতে উল্লেখ আছে যে,
وياخذ
من شاربه حتى يصير مثل الحاجب ركذا فى الغياثية-
অর্থ :
চোখের ভ্রূর লোম পরিমাণ রেখে মোঁছ কেটে ফেলবে। অনুরূপ গিয়াছিয়াতে উল্লেখ আছে।
বাহরুর
রায়েক ৮ম জিঃ ২০৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وينبغى
للرجل ان ياخذ من شاريه حتى يوازى الطرف العليا من الشفة ويصير مثل الحاجب.
অর্থ :
পুরুষের জন্যে, উর্দ্ধ ওষ্ঠ প্রকাশ পায় এবং ভ্রুর লোম পরিমাণ রেখে মোঁছ কাটা উচিৎ।
তাহাবী
শরীফ উনার ২য় জিঃ ৩৩৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
فالنظر
على ذالك ان يكون كذالك حكم الشارب قصه حسن واحفائه احسن وافضل وهذا مذهت ابى
حنيفة وابى يوسف ومحمد رحمهم الله تعالى.
অর্থ :
মোঁছ খাট করার ব্যাপারে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার তাৎপর্য এই যে, মোঁছ
খাট করা উত্তম, আর কিছু বেশী খাট করা অধিকতর ভাল ও উত্তম। এটাই ইমামে আ’যম আবু
হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ইমাম আবূ ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম মুহম্মদ
রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাযহাব বা মত।
গায়াতুল
আওতার ৪র্থ জিঃ ১৩৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ঊদূ লেখা ঢুকবে........................................
অর্থ : “মোজতবা” নামক
কিতাবে উলেখ আছে যে,
মোঁছ মুণ্ডন করা বিদয়াত। আর যারা মুণ্ডন করা সুন্নত বলে, তাদের
ক্বওল জঈফ বা দূর্বল। অর্থাৎ গ্রহণযোগ্য নয়।
উপরোক্ত
আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, গ্রহণযোগ্য ও মোফতাবিহী মতানুসারে মোঁছ রাখার নিয়ম বা পদ্ধতি হলো- মোঁছ চোখের ভ্রুর ন্যায় খাট
রাখবে। মোঁছ সম্পূর্ণ চেছে ফেলা অধিকাংশের মতে মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে
সাইয়্যিয়াহ, আর কারো কারো মতে হারাম।
গোঁফ
ভিজা পানি পান করার হুকুম :
অনেকের
ধারণা গোঁফ বা মোঁছ ভিজা পানি পান করা মাকরূহ বা নিষেধ, যার
কারণে অনেকে মোঁছ সম্পূর্ণ চেছে ফেলে। অথচ তাদের এ ধারণা সম্পূর্ণই ভুল। কারণ
শরীয়ত তথা ফিক্বাহের নির্ভরযোগ্য কোন কিতাবেই এ ধরণের কথা উল্লেখ নেই। বরং মোঁছ
ভিজা পানি পান করা সম্পূর্ণ জায়েয ও হালাল। তাছাড়া মোঁছ যতই চেছে ফেলা হোক না কেন
তার চিহ্ন অবশ্যই কিছুনা কিছু অবশিষ্ট থাকবে। কাজেই কোন অবস্থাতেই মোঁছ ভিজানো
ছাড়া পানি পান করা সম্ভব নয়। অতএব, এরূপ ভুল ধারণা বা রসমের বশবর্তী
হয়ে মোঁছ চেছে ফেলা জায়িয নয় বরং মোঁছ সম্পূর্ণ চেছে ফেলা মাকরূহ তাহরীমী ও
বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ। যেটা উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
দাড়ি ও
গোঁফে খেযাব ব্যবহারের গুরুত্বপূর্ণ ফায়সালা :
মূলত :
দাড়িতে খেযাব ব্যবহার করা সুন্নতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুম। অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা কাতম মিশ্রিত
মেহেদী বা মেন্দী পাতা দ্বারা সাদা দাড়িকে রঙ্গিন করতেন। কিন্তু সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হায়াত মুবারক উনার মধ্যে কখনো খেযাব ব্যবহার
করেননি, আর এটাই সর্বসম্মত ও গ্রহণযোগ্য মত। যা ছহীহ পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা স্পষ্ট
প্রমাণিত।
কেননা
বিভিন্ন রেওয়ায়েত অনুযায়ী দেখা যায়- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাদা চুল ও দাড়ি মুবারক উনার সংখ্যা ছিল মোট-
১৪, ১৭, ১৮, ২০ ইত্যাদি। যে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যেভাবে
দেখেছেন, তিনি সেভাবেই বর্ণনা করেছেন। তবে ২০টির বেশী কেউ বর্ণনা করেননি। এ প্রসঙ্গে
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن
عبد الله بن عمر رضى الله عنهما قال انما كان شيب رسول الله صلى الله عليه وسلم
نحوا من عشرين شعرة بيضاء.
অর্থ :
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর আলাইহিস সালাম তিনি বর্ণনা করেন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চুল মুবারক বিশটির
মত সাদা হয়েছিল।”
উক্ত
বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন
নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
দাড়ি ও চুল মুবারকসহ মোট ২০টি সাদা হয়েছিল। তাও আবার চুল বা দাড়ি মুবারক উনার
একস্থানে নয় বরং বিভিন্ন স্থান মিলিয়ে, যার কারণে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চুল বা দাড়ি মুবারক কালোই দেখা
যেতো। খেয়াল না করলে পাকা চুল বা দাড়ি মুবারক দেখা যেতো না। যদি তাই হয়ে থাকে, তবে
মাত্র ২০টি চুল ও দাড়ি মুবারক উনার জন্যে খেযাব ব্যবহার করার প্রশ্নই উঠেনা। কারণ
খেযাব ব্যবহার করা হয় সাদা চুলের জন্যে।
নিম্মোক্ত
পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা একথাটি আরো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়- পবিত্র হাদীছ শরীফ
উনার মধ্যে এসেছে,
عن
قتادة قال قلت لا نس بن مالك هل خضب رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لم يبلغ ذلك
انما كان شيبا فى صدغيه. (ترمذى شريف(
অর্থ : “হযরত
ক্বাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন- আমি হযরত আনাস বিন মালিক
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খেযাব ব্যবহার করেছেন কি? হযরত
আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চুল বা দাড়ি
মুবারক খেযাব ব্যবহার করার অবস্থায় পৌঁছেনি, উনার কান মুবারকদ্বয়ের পাশে মাত্র
কয়েকখানা চুল মুবারক সাদা হয়েছিল।” (তিরমিযী শরীফ)
কাজেই
হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বর্ণনা দ্বারাও স্পষ্ট
প্রমাণিত হয় যে, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো
খেযাব ব্যবহার করেননি।
আর যারা
বলেছেন যে, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
খেযাব ব্যবহার করেছেন,
তাদের এরূপ বলার কারণ হলো- চুল বা দাড়ি সাদা হওয়ার পূর্বে
সাধারণতঃ কিছুটা লালচে রং ধারণ করে থাকে, সম্ভবতঃ যারা খেযাবের পক্ষে
বলেছেন, তারা উক্ত লালচে রং দেখেই বলেছেন।
তবে
হ্যাঁ খলীফাতু রসূলিল্লাহ,
হযরত আবু বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম তিনিসহ অনেক হযরত
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা খেযাব ব্যবহার করেছেন। কিন্তু সে
খেযাব ছিল কাতম মিশ্রিত মেহদী বা মেন্দি। অর্থাৎ মেহদী পাতার সাথে কাতম নামক গাছ
মিশ্রিত করে, তার দ্বারা খেযাব লাগানো হতো, ওটা ব্যবহারে দাড়ি লাল বা জাফরানী রং ধারণ করতো।
এ
প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে যে,
عن
ابن شيرين قال- يالت انس بن مالك هل كان رسول الله صلى الله عليه وسلم خضب فقال لم
يبلغ الخضاب فقال كان فى لحيته شعرات بيض- فقلت له اكان ابوبكر يخضب فقال نعم
بالحناء والكتم.
অর্থ :
হযরত ইবনে শীরীন রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি আনাস ইবনে মালেক
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে প্রশ্ন করলাম সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খেযাব ব্যবহার করেছেন
কি? জবাবে তিনি বলেন,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দাড়ি মুবারক
খেযাব ব্যবহারের পর্যায়ে পৌঁছেনি। কারণ উনার মাত্র কয়েকটি চুল ও দাড়ি মুবারক সাদা
হয়েছিল। অতঃপর উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম, হযরত আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু খেযাব ব্যবহার করেছেন কি? তিনি বলেন, হ্যাঁ, কাতম মিশ্রিত
মেন্দি দ্বারা খেযাব ব্যবহার করেছেন। (মুসলিম শরীফ)
অতএব, দাড়ি বা
চুল রঙ্গিন করার জন্যে মেহদী পাতার খেযাব ব্যবহার করা জায়িয ও সুন্নতে হযরত
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম। কিন্তু কালো খেযাব ব্যবহার করা আমাদের
হানাফী মাযহাব মোতাবেক মাকরূহ তাহরীমী।
যেমন
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে যে,
عن
جابر قال اتى بابى قحافة يوم فتح مكة ورأسه ولحيته كالثغامة بياضا فقال رسول الله
صلى الله عليه وسلم غيروا هذا بشنى واجتنبوا السوادز (رواه المسلم(
অর্থ :
হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, হযরত আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার পিতা আবূ কুহাফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে মক্কা
বিজয়ের দিন নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
নিকট আসেন এমতাবস্থায় যে,
উনার চুল ও দাড়ি মুবারকগুলো সাদা হয়ে গিয়েছিল। উহা দেখে
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “সাদা
রংকে অন্যকোন রং দ্বারা পরিবর্তন কর, তবে কালো রং থেকে বেঁচে থাক।” (মুসলিম
শরীফ)
পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে,
قال
رسول الله صلى الله عليه وسلم- يكون فى اخرالزمان قوم يخضبون بالسواد كحواصل
الحمام لايجدون رائحة الجنة. (رواه ابودرد والنسائى(
অর্থ :
সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আখিরী
যামানায় এমন কিছু লোক বের হবে, যারা কবুতরের পালকের ন্যায় কালো খেযাব ব্যবহার করবে, তারা
জান্নাতের ঘ্রাণও পাবেনা। (আবূ দাউদ শরীফ, নাসাঈ শরীফ)
পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم- من
خضب بالسواد سودالله وجهه يوم القيامة. (طبرانى(
অর্থ :
সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “যে
ব্যক্তি কালো খেযাব ব্যবহার করবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্বিয়ামতের দিন তার চেহারাকে কালো করে
দিবেন।” (তিবরানী শরীফ)
কালো
খেযাব সম্পর্কে বিখ্যাত মুহাদ্দিস মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি শরহে
শামায়েলে তিরমিযীতে উল্লেখ করেন,
ذهب اكثر العلماء الى كراهة الخضاب
بالسواد ورجح الثورى الى انها كراهة تحريم.
অর্থ :
অধিকাংশ আলিম উনাদের মতে কালো খেযাব ব্যবহার করা মাকরূহ। হযরত ইমাম সুফিয়ান ছাওরী
রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে মাকরূহ তাহরীমী।
মিশকাত
শরীফ উনার শরাহ আশয়াতুল লুময়াতে উল্লেখ আছে,
خضاب
بحناء با تفاق جائز است- ومختاردر سواد حرمت است.
অর্থ :
মেন্দী দ্বারা খেযাব দেয়া সর্বসম্মতিক্রমে জায়েয। আর গ্রহণযোগ্য মতে কালো খেযাব
ব্যবহার করা হারাম।
উপরোক্ত
আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, চুল বা দাড়িতে কালো রংয়ের খেযাব ব্যবহার করা আমাদের হানাফী
মাযহাব মোতাবেক মাকরূহ তাহরীমী।
তবে কালো
খেযাব তা দু’ধরণের হয়ে থাকে-
(১) যেটা
ব্যবহার করলে আবরণ বা প্রলেপ পড়েনা কিন্তু কালো হয়, এ ধরণের কালো রংয়ের খেযাব ব্যবহার
করা মাকরূহ তাহরীমী।
(২) যেটা
ব্যবহার করলে চুল বা দাড়িতে নেল পালিশের ন্যায় একটি আবরণ পড়ে যায়, যার
কারণে মূল দাড়ি বা চুলে পানি পৌঁছেনা, যেকারণে তার ওযূ ও ফরয গোসল কিছুই
দুরস্ত হবেনা। সুতরাং যতদিন সে উক্ত খেযাব বা কলপ ব্যবহার করবে, ততদিন সে
পবিত্র হবেনা। এরূপ কালো খেযাব ব্যবহার করা সম্পূর্ণ হারাম। আমাদের দেশের
খেযাবগুলো সাধারণতঃ এ ধরণের হয়ে থাকে।
কেননা
আমরা তাহক্বীক করে দেখেছি,
বর্তমানে বাজারে যেসকল কলপ বা খেযাব পাওয়া যায়, তা
ব্যবহার করলে চুল বা দাড়িতে নখ পালিশের ন্যায় প্রলেপ পড়ে যায়। প্রলেপ পড়েনা এ
ধরণের খেযাব বা কলপ বাজারে পাওয়া যায়না। অতএব, বর্তমান বাজারের খেযাব বা কলপ
ব্যবহার করা সম্পূর্ণ হারাম ও নাযায়িয।
অতএব, মূলকথা
হলো- সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হায়াত মুবারক উনার মধ্যে কখনো
খেযাব ব্যবহার করেননি,
এটাই সর্বপেক্ষা বিশুদ্ধ ও নির্ভযোগ্য মত। যেটা পবিত্র
হাদীছ শরীফ দ্বারাই স্পষ্ট প্রমাণিত। আর যে কালো খেযাব বা কলপ ব্যবহার করার কারণে
দাড়ি বা চুলে আবরণ বা প্রলেপ পড়েনা, তা ব্যবহার করা হানাফী মাযহাব
মুতাবিক মাকরূহ তাহরীমী। আর যেটা ব্যবহার করলে চুল বা দাড়িতে নখ পালিশের ন্যায়
আবরণ বা প্রলেপ পড়ে যায়,
যার কারণে ওযূ বা গোসলের সময় তার মূল দাড়ি বা চুলে পানি
পৌঁছেনা। আর এ অবস্থায় যদি সে মারা যায়, তবে তার জানাযার নামায শুদ্ধ
হবেনা। কারণ তাকে গোসল দেয়ার সময় তার দাড়ি বা চুলে পানি না পৌঁছার কারণে সে
পবিত্র হবেনা।
দাড়ি
নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করা কুফরী
দাড়ি
রাখা দ্বীন ইসলাম উনার ফরয একটি আমল। অথচ অনেককেই দেখা যায়, এ দাড়ি
নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করতে। যেমন অনেকে দাড়িকে সাইন বোর্ড বলে থাকে। (নাউযুবিল্লাহ)
আবার
অল্প বয়সে দাড়ি রাখলে বিদ্রুপ করার জন্যে চাচা বলে ডাকে। মূলতঃ এগুলো সম্পূর্ণ
কুফরীর নামান্তর। কেননা আক্বায়েদের কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কদু
খাওয়া সুন্নত, কেউ যদি কদুকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য জ্ঞান করে, তবে সে কাফির বা মুরতাদ হবে।
যেহেতু এটা সুন্নতের সাথে সম্পর্কযুক্ত। আর দাড়ি রাখা হলো ফরজ, এ বিষয়ে
কেউ যদি ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে, তবে সেও মুরতাদ হবে, হজ্ব করে থাকলে হজ্ব বাতিল বলে
গণ্য হবে, বিবাহ করে থাকলে স্ত্রী তালাক হবে, সকল নেকী বরবাদ হবে, ওয়ারিস
স্বত্ত বাতিল হবে। তওবা করে হজ্ব ও বিবাহ দোহরাতে হবে। আর ইসলামী খেলাফত থাকলে
তাকে তওবা করার জন্যে তিনদিন সময় দেয়া হবে, তিনদিনের মধ্যে তওবা না করলে, তার
শাস্তি মৃত্যুদন্ড। কাজেই দাড়ির ব্যাপারে সকলকে সাবধান থাকতে হবে। দাড়ি নিয়ে
ঘুর্ণাক্ষরেও ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা যাবেনা, দাড়ি নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা
শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণই কুফরীর নামান্তর। (ফিক্বাহুল আকবর, আকাইদে
নসফী)
উপসংহার
উপরোল্লিখিত
দীর্ঘ, অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য আলোচনা দ্বারা এটাই সাব্যস্ত হলো যে,
১।
একমুষ্ঠির কমে দাড়ি কাটা হারাম। কারণ দাড়ি কাটার কারণে আকৃতির বিকৃতি ঘটে, বিধর্মী
বা বিজাতীয়দের অনুসরণ হয়। উপরুন্ত সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
নির্দেশ অমান্য ও শয়তানের নির্দেশ মান্য করা হয়।
২।
কমপক্ষে একমুষ্ঠি পরিমাণ দাড়ি রাখা ফরয- ওয়াযিবের অন্তর্ভূক্ত। কারণ হারাম থেকে
বেঁচে থাকা ফরয-ওয়াযিবের অন্তর্ভূক্ত, এ ব্যাপারে সকলেই একমত।
৩। এক
মুষ্ঠির কমে দাড়ি কর্তন বা মুণ্ডনকারী ফাসিক, সাধারণতঃ ফাসিকের পিছনে নামায পড়া
মাকরূহ তাহরীমী।
৪।
সীনাপোর দাড়ি রাখা সুন্নত,
দাড়ি সীনা অতিক্রম করা আহমকীর লক্ষণ।
৫। নীম
দাড়িও দাড়ির অন্তর্ভূক্ত,
উহা কাটাও বিদয়াত ও মাকরূহ তাহরীমী।
৬। মোঁছ
বা গোঁফ ছোট ছোট করে ভ্রুর ন্যায় রাখতে হবে। মোঁছ অধিক লম্বা রাখা যেরূপ নাযায়িয, তদ্রুপ
সম্পূর্ণ চেছে ফেলাও মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াত, কারো কারো মতে হারাম।
৭। মোঁছ
ভিজা পানি পান করা সম্পূর্ণ জায়িয।
৮।
মেন্দী দ্বারা খেযাব ব্যবহার করা সুন্নতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম। তবে কালো রংয়ের খেযাব (যা ব্যবহার করলে প্রলেপ পড়েনা) ব্যবহার করা
মাকরূহ তাহরীমী। আর যে কালো রংয়ের খেযাব ব্যবহার করলে নেইল পলিসের ন্যায় প্রলেপ
পড়ে, উহা ব্যবহার করা হারাম। আমাদের দেশের কালো খেযাবগুলো এ ধরণের খেযাবের
অন্তর্ভূক্ত।
৯। দাড়ি
নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা কুফরীর নামান্তর।
মহান
আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকে উক্ত ফতওয়া মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ পাক উনার ও
উনার রসূল নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাদের খাছ সন্তুষ্টি হাছিল করার তৌফিক দান করুন।
[বি : দ্র :- আগামী সংখ্যায় দাড়ি
সম্পর্কিত বিষয়ের দলীলসমূহ পেশ করা হবে।]
(অসমাপ্ত)