দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া ( ২ নং )

দাড়ি ও গোঁফের শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া

গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

[সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন উনার এবং অসংখ্য দরূদ ও সালাম মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি। মহান আল্লাহ পাক উনার অশেষ রহমতে আমাদের গবেষণা কেন্দ্র, “মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফেরফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে, বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকায় যথাক্রমে টুপির ফতওয়া, অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান, নিয়ত করে মাজার শরীফ জিয়ারত করা, ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া, জুময়ার নামায ফরজে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া, মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী সম্পর্কে ফতওয়া, কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ফরজ নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ইনজেকশন নেয়া রোজা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তারাবীহ-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া এবং তারাবীহ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া প্রকাশ করার পর ৩০তম সংখ্যা থেকে ত্রয়োদশ ফতওয়া হিসাবে দাড়ি ও গোঁফের শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া প্রকাশ করে আসতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।]

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দাড়ি মুবারকের বর্ণনা
পূর্ববর্তী আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো যে, পুরুষের জন্যে দাড়ি কাটা হারাম আর দাড়ি রাখা ফরয/ওয়াযিবের অন্তর্ভূক্ত। এখন জানার বিষয় হচ্ছে- দাড়ি কি পরিমাণ লম্বা রাখতে হবে, আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সকল হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের দাড়ি মুবারক কতটুক লম্বা ছিল।
মূলত : কমপক্ষে একমুষ্ঠি পরিমাণ দাড়ি রাখা ফরয/ওয়াযিবের অন্তর্ভূক্ত। আর তাই দেখা যায়, সকল নবী আলাইহিমুস সালাম উনারা সবাই নিজ দাড়ি মুবারক একমুষ্ঠি পরিমাণ লম্বা রাখতেন, যার প্রমাণ পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে। অর্থাৎ পবিত্র কুরআনী বর্ণনা দ্বারা পূর্ববর্তী সকল হযরত নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের দাড়ি মুবারক কমপক্ষে একমুষ্ঠি হওয়া প্রমাণিত হয়। যেমন- হযরত মুসা আলাইহিস সালাম উনার অনুপস্থিতী ও হযরত হারুন আলাইহিস সালাম উনার দায়িত্ব পালনকালে সংঘটিত বাছুর পুঁজার কারণে, হযরত মুসা আলাইহিস সালাম প্রত্যাবর্তন করে রাগান্বিত হয়ে হযরত হারুন আলাইহিস সালাম উনার দাড়ি মুবারক পাকড়াও করলে হযরত হারুন আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, যেটা পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে এভাবে বর্ণিত হয়েছে,
يا ابن ام لا تأ خذ بلحيتى ولا برأسى.
অর্থ : হে আমার মায়ের পেটের ভাই হযরত মুসা আলাইহিস সালাম, আপনি আমার দাড়ি ও চুল পাকড়াও করবেন না।
এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো- পবিত্র কুরআন শরীফ উনার উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে تأخذ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে, যার অর্থ হলো- পাকড়াও। আর পাকড়াও বলতে সম্পূর্ণ হাত দ্বারা পাকড়াও করাকেই বুঝানা হয়ে থাকে, গুটি কয়েক আঙ্গুলী দ্বারা নয়। আর সম্পূর্ণ হাত দ্বারা শুধু মাত্র লম্বা দাড়িই পাকড়াও করা সম্ভব, ছোট দাড়ি নয়। অতএব, প্রমাণিত হলো যে, হযরত হারুন আলাইহিস সালাম উনার দাড়ি মুবারক ছিল কমপক্ষে একমুষ্ঠি।
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা তো মাত্র একজন রসূল আলাইহিস সালাম উনার দাড়ি মুবারক কমপক্ষে একমুষ্ঠি তথা লম্বা রাখার প্রমাণ পাওয়া গেলো। আর পবিত্র কুরআন শরীফ উনার অসংখ্য পবিত্র আয়াত শরীফ, বিশেষভাবে এ পবিত্র আয়াত শরীফ-
فبهدا هم اقتده.
অর্থ : হে রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! পূর্ববর্তী হযরত নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে অনুসরণ করুন।
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার সাধারণ মূলনীতি দ্বারা প্রমাণিত যে, সকল হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনারা স্বভাবজাত নিয়ম-নীতিসমূহের ক্ষেত্রে একে অন্যের অনুসরণ করেন বিধায় বোধ ও বুদ্ধি তথা ক্বিয়াস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কোন হযরত নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালাম উনার দাড়ি মুবারক একমুষ্ঠির কম ছিলনা বরং উনাদের দাড়ি মুবারক ছিল কমপক্ষে একমুষ্ঠি পরিমাণ লম্বা। যার প্রমাণ ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যেও রয়েছে। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن عائشة رضى الله عنها قالت- قال رسول الله صلى الله عليه وسلم عشر من الفطرة- قص الشارب واعفاء اللحية. (رواه ابودود)
অর্থ : হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “দশটি জিনিস ফিৎরাতের (স্বভাবজাত বিষয়ের) অন্তর্ভূক্ত। তন্মধ্যে দুটি হচ্ছে গোঁফ কাটা ও দাড়ি লম্বা করা।” (আবূ দাউদ শরীফ)
আর আবূ দাউদ শরীফের বিখ্যাত শরাহ বজলুল মাজহুদে উল্লেখ আছে যে, ফিৎরাত অর্থ হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের সুন্নত। অর্থাৎ এই দশটি সুন্নত যেগুলোর মধ্যে গোঁফ কাটা ও দাড়ি লম্বা করাও অন্তর্ভূক্ত, তা সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরই সুন্নত বা তরীক্বা।
সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, পূর্ববর্তী সকল হযরত নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা কমপক্ষে একমুষ্ঠি পরিমাণ লম্বা দাড়ি রাখতেন, যেটা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র আয়াত শরীফ ও সহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত। আর এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক আমাদেরকে পূর্ববর্তী হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরও অনুসরণ করতে বলেছেন। এ প্রসঙ্গে পবিত কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
اولئك الذين هدى الله فبهداهم اقتده.
অর্থ : উনারা এরূপ,উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক স্বয়ং হিদায়াত তথা পথ প্রদর্শন করেছেন। সুতরাং আপনিও উনাদেরকে অনুসরণ করুন।
মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ পালন করা যেহেতু ফরয, সেহেতু সকল হযরত নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ফিৎরাতকে অনুসরণ করতে গিয়ে একমুষ্ঠি পরিমাণ লম্বা দাড়ি রাখাও ফরয/ওয়াযিবের অন্তর্ভূক্ত। অনুরূপ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও নিজ দাড়ি মুবারক কমপক্ষে একমুষ্ঠি পরিমাণ লম্বা রাখতেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن عمروبن شعيب انه صلى الله عليه وسلم كان يأخذ من لحيته طولا وعرضا على قدرالقبضة.
অর্থ : হযরত আমর ইবনে শুয়াইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একমুষ্ঠি পরিমাণ দাড়ি রাখতেন এবং একমুষ্ঠির বেশীগুলো কাটছাট করতেন।” (তানবীর)
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে, তাবেয়ী, হযরত ইয়াযীদ ফারসী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার যুগে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে স্বপে¦ দেখে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট ব্যক্ত করলে তিনি বর্ণনা করেন- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যে ব্যক্তি আমাকে স্বপে¦ দেখলো, সে বাস্তবিকভাবে আমাকেই দেখলো, কেননা শয়তান আমার ছুরত ধারণ করতে পারেনা।
অতঃপর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত ইয়াযীদ ফারসী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি স্বপে¦ দেখা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের ছূরত বা আকৃতি মুবারক বর্ণনা করতে পারবে কি? জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ অবশ্যই পারবো। একথা বলে তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র ও বরকতময় ছূরত বা আকৃতি মুবারক বর্ণনা করতে লাগলেন। যার মধ্যে একটি বর্ণনা এরূপ ছিলো-
ملات لحيته مابين هذه الى هذه.
অর্থ : (আমি দেখলাম) উনাদের দাড়ি মুবারক (প্রস্থে নিজ গ-দ্বয় এবং চিবুকের প্রতি ইঙ্গিত করে) এপাশ ওপাশের মধ্যবর্তী স্থান (ডান-বাম গন্ডদ্বয়ের উভয় পার্শ্ব এবং দৈর্ঘে চিবুকের পাশও) ভরাট করে রেখেছিলো।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ছূরত মুবারকের এরূপ বর্ণনা শুনে ইরশাদ মুবারক করলেন,
لو رأيته فى اليقظة ما استطعت ان تنعته فوق هذا.
অর্থ : হে ইয়াযীদ! হায়াত মুবারকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখার সৌভাগ্য হলেও স্বপে¦ দেখার চেয়ে বেশী সুন্দর করে উনার ছূরত বা আকৃতি মুবারক বর্ণনা করা তোমার পক্ষে সম্ভব হতো না।” (শামায়েলে তিরমিযী শরীফ)
উপরোক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দাড়ি মুবারক ছিল কমপক্ষে একমুষ্ঠি ও সীনা পোর, যা সমস্ত সীনা মুবারক উনাকে ভরাট করে রাখতো।
সুতরাং উপরোক্ত অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, পূর্ববর্তী সকল নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের দাড়ি মুবারক যেরূপ কমপক্ষে একমুষ্ঠি পরিমাণ লম্বা ছিল, তদ্রুপ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দাড়ি মুবারকও ছিল কমপক্ষে একমুষ্ঠি পরিমাণ লম্বা। অতএব, দাড়ি কমপক্ষে একমুষ্ঠি পরিমাণ লম্বা করা ফরয আর কমপক্ষে একমুষ্ঠি হওয়ার পূর্বে দাড়ি কাটা ও ছাঁটা সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়িয।
তাছাড়া পবিত্র হাদীছ শরীফে স্পষ্ট বর্ণিত আছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওযু করার সময় নিজ দাড়ি মুবারক খিলাল করতেন। অর্থাৎ দাড়িতে চোয়ালের নীচ দিয়ে অঙ্গুলী মুবারক চালনা করে পানি পৌঁছাতেন। যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে,
عن حسان بن بلال قال- رايت عمار بن ياسر توضا يخلل لخيته فقيل له اوقال فقلت له اتخلل لحيتك قال ويمنعنى ولقد رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يخلل تحته.
অর্থ : হযরত হাসসান ইবনে বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে ওযু করার সময় স্বীয় দাড়ি খিলাল করতে দেখলাম। আমি উনাকে প্রশ্ন করলাম, কি ব্যাপার আপনি দাড়ি খিলাল করছেন? তিনি উত্তরে বললেন, আমি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে স্বীয় দাড়ি মুবারক খিলাল করতে দেখেছি বিধায় আমার তা থেকে বিরত থাকার কোনই কারণ থাকতে পারেনা। (তিরমিযী শরীফ ১ম জিঃ পৃষ্ঠা-৬)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে,
عن ابن عمر رضى الله عنهما- كان رسول الله صلى الله عليه وسلم- اذا توضأ عرك عارضيه بعض العوك ثم شبك لحيه با صابعه من تحتها.
অর্থ : হযরত ইবনে উমর ফারুক আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওযু করার সময় পবিত্র মুখম-ল মর্দন করতেন, অতঃপর নীচ থেকে আঙ্গুল প্রবেশ করিয়ে নিজ দাড়ি মুবারক খিলাল করতেন।
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের দাড়ি মুবারক খসখসীও ছিলনা, ছোটও ছিলনা বরং এতটুকু লম্বা ছিল যে, তার নীচ দিয়ে অঙ্গুলী দ্বারা পানি পৌঁছানো যেত বা খিলাল করা যেত। চোয়ালের নীচ দিয়ে আঙ্গুল দ্বারা পানি পৌঁছানো বা দাড়ি খিলাল করা এক মুষ্ঠি পরিমাণ বা ততোধিকের মধ্যেই সম্ভব। খসখসী বা ছোট দাড়িতে সম্ভব নয় বা তার প্রয়োজনও নেই।
অতএব, দাড়ি কমপক্ষে একমুষ্ঠি পরিমাণ লম্বা করতে হবে। কারণ একমুষ্ঠি পরিমাণ লম্বা করা ফরয-ওয়াযিবের অন্তর্ভুক্ত।
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের আমল দ্বারা এক মুষ্টি দাড়ির প্রমাণ
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে কমপক্ষে একমুষ্ঠি পরিমাণ দাড়ি রাখতেন, তার আরেকটি মজবুত দলীল হলো- হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের আমল। কেননা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আমালী সুন্নতসমূহের যথার্থ নিরূপন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের আমল দ্বারাই সর্বাপেক্ষা বেশি হয়ে থাকে। তাছাড়া হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের কথা মানার উপরই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নতসমূহের প্রমাণ নির্ভরশীল। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ ও পবিত্র সুন্নতসমূহ আমাদের নিকট পৌঁছিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাই মূল মাধ্যম। আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে একমাত্র হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাই পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ-অনুকরণ করেছেন। তাই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
عليكم بسنتى وسنة الخلفاء الراشدين المهديين تمسكوا بها وعضوا عليها بالنواجذ.
অর্থ : তোমাদের জন্যে আমার সুন্নত এবং আমার হযরত খোলাফায়ে রাশেদীন উনাদের সুন্নত অবশ্য পালনীয়। তোমরা মাড়ীর দাঁত দ্বারা মজবুতভাবে তা আঁকড়িয়ে ধর।” (মিশকাত শরীফ)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
اصحابى كالنجوم بايهم اقتديتم اهتديتم.
অর্থ : আমার প্রত্যেক হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা তারকা সাদৃশ, উনাদের যে কাউকে তোমরা অনুসরণ করবে, হিদায়াত পেয়ে যাবে।
অতএব, দাড়ির পরিমাপের ব্যাপারেও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের আমলই অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীল।
এ প্রসঙ্গে আশিকে সুন্নাতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর আলাইহিস সালাম উনার আমল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কারণ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন সুন্নত অনুসরণের ক্ষেত্রে বিশিষ্ট ছাহাবী। তিনি সুন্নতের এতবেশী অনুসরণ করতেন, যা বলার অপেক্ষাই রাখেনা। এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয় যে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর আলাইহিস সালাম একদিন উনার সঙ্গীগণের সাথে কোথাও যাচ্ছিলেন, কিছু দূর গিয়ে হঠাৎ উনার মাথা মুবারক নিচু করে ফেললেন। তখন উনার সঙ্গীগণ বললেন, হুযূর আপনি এখানে মাথা মুবারক নিচু করার কারণ কি? জবাবে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, দেখ এই স্থান দিয়ে আমি একবার সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে কোথাও যাচ্ছিলাম। এখানে একটি গাছ ছিল, গাছের একটি ডালা বাঁকা হয়ে রাস্তার উপরে পড়েছিল, ডালাটি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাথা মুবারকে লাগবে বিধায় তিনি নিজ মাথা মুবারক নিচু করে রাস্তা অতিক্রম করেছিলেন। যদিও আজ এখানে সে গাছটি নেই, তথাপিও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে তথা উনার সুন্নত উনাকে অনুসরণ করার জন্যেই আমি এখানে আমার মাথা নিচু করলাম।” (সুবহানাল্লাহ)
সেই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর আলাইহিস সালাম তিনি কি পরিমাণ দাড়ি রাখতেন, নিম্নে তার প্রমাণ পেশ করা হলো-
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
كان ابن عمر رضى الله عنه اذا حج اواعتمر قبض على لحيته فما فضل اخذه. (بخارى شريف)
অর্থ : হযরত ইবনে উমর আলাইহিস সালাম তিনি যখন হজ্ব বা উমরা আদায় করতেন, নিজ দাড়ি হাতের মুষ্ঠিতে নিয়ে মুষ্ঠির অবশিষ্টগুলো ছেটে ফেলতেন।” (বুখারী শরীফ)
আছারনামক কিতাবে ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম আযম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হায়সাম ইবনে হায়সাম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণনা করেন,
انه كان يقبض على لحيته ثم بقص ما تحت.
অর্থ : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর আলাইহিস সালাম স্বীয় দাড়ি মুবারক মুষ্ঠিতে নিয়ে, মুষ্ঠির নিচের অতিরিক্ত দাড়িগুলো কেটে ফেলতেন।আবূ দাউদ ও নাসাঈ শরীফেও তার সমর্থনকারী বর্ণনা রয়েছে।
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফদ্বয় দ্বারা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে গেল যে, সুন্নত অনুসরণের ক্ষেত্রে বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর আলাইহিস সালাম উনার দাড়ি মুবারক ছিল কমপক্ষে একমুষ্ঠি।
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বিশাল ভা-ার হতে সবচেয়ে অধিক পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারী ছাহাবী হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আমল দ্বারাও একমুষ্ঠি পরিমাণ দাড়ির আহকাম প্রমাণিত হয়। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
 روى عن ابى هريرة ايضا انه كان يقبض على لحيته فياخذ ما فضل عن القبضة. (مضف ابن ابى شيبه)
অর্থ : হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকেও বর্ণিত যে, তিনি দাড়ি নিজ মুষ্ঠিতে আবদ্ধ করে বর্ধিতাংশ কেটে ফেলতেন।” (মুছান্নেফ ইবনে আবী শায়বা)
এখানে উল্লেখ্য যে, হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত ইবনে উমর আলাইহিস সালাম উনার ন্যায় ফিৎরী হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনাকারী বা রাবী। স্বয়ং উনাদের আমলও একমুষ্ঠি পরিমাণ দাড়ির প্রমাণ বহন করছে। যার দ্বারা এটাই সাব্যস্ত হয় যে, ফিৎরাতের বর্ণনা সম্পর্কিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে দাড়ি লম্বা করার যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তাতে একমুষ্ঠির কথা উল্লেখ না থাকলেও উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার রাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর আলাইহিস সালাম ও হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের কর্তৃক দাড়ি কাট-ছাঁট করার ক্ষেত্রে একমুষ্ঠি পরিমাণের এক ইঞ্চিও এদিক ওদিক অর্থাৎ কমবেশী না করা দ্বারাই প্রমাণিত হয় যে, একমুষ্ঠি পরিমাণের শর্তও উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার অবশ্যই উদ্দেশ্য ছিল। মূলতঃ একমুষ্ঠি পরিমাণের আমলই উনাদের দৃষ্টিতে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আমল। যেটা পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারাও প্রমাণিত রয়েছে।
অতএব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের আমল দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, দাড়ি কমপক্ষে একমুষ্ঠি পরিমাণ লম্বা করতে হবে। আর দাড়ি একমুষ্ঠি পরিমাণ লম্বা করা ফরয-ওয়াযিবের অন্তর্ভূক্ত।
ফক্বীহ উনাদের মতে দাড়ির
শরয়ী মেক্বদার বা পরিমাপ
দাড়ি লম্বা করার নির্দেশ সম্বলিত পবিত্র হাদীছ শরীফ ও সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের আমলের ভিত্তিতে হযরত ফুক্বাহায়ে কিরাম তথা হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ফতওয়া দেন যে, এক মুষ্টির কমে দাড়ি কাটা-ছাটা নাযায়িয বা হারাম। আর দাড়ি একমুষ্ঠি পরিমাণ লম্বা করা ফরয ওয়াযিবের অন্তর্ভূক্ত।
এ প্রসঙ্গে ফিক্বাহের বিখ্যাত কিতাব বাহরূর রায়েক ২য় জিঃ ২৮০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,
الاخذ من اللحية وهى ما دون القبضة كما يفعله بعض المغارية والفحشة الرجال فلم يبحه احد.
অর্থ : একমুষ্ঠির কমে দাড়ি কাটা, যেটা পাশ্চাত্যবাসী ও দুশ্চরিত্র লোকদের আমল। এটাকে কেউই জায়িয বলেননি। অর্থাৎ সকলেই একমুষ্ঠির কমে দাড়ি কাটা হারাম বলেছেন।
শরাম্বলালিয়া কিতাবের ২৯৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,
واما الاخذ من اللحية هى دون القبضة كما يفعله بعض المغاوبة ومخنثة الرجال فلم يبحه احد.
অর্থ : একমুষ্ঠির কমে দাড়ি কাটা যেরূপ পাশ্চাত্যবাসী ও নপুংষকরা করে থাকে, ইহা কারো মতেই জায়িয নয়।
আর শরীয়ত উনার ফায়সালা হলো- হারাম থেকে বেঁচে থাকা ফরয-ওয়াযিবের অন্তর্ভূক্ত। অতএব, কমপক্ষে দাড়ি একমুষ্ঠি পরিমাণ লম্বা করা ফরয-ওয়াযিবের অন্তর্ভূক্ত।
মিশকাত শরীফ উনার বিখ্যাত শরাহ আশয়্যাতুল লোময়াতে সুস্পষ্টভাবে একথা উল্লেখ আছে যে,
وكزاشتن ان بقدر قبضة واجب است.
অর্থ : দাড়ি কমপক্ষে একমুষ্ঠি পরিমাণ লম্বা করা ওয়াজিব।
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, দাড়ি কমপক্ষে একমুষ্ঠি পরিমাণ লম্বা করা বা রাখা ফরয-ওয়াযিবের অন্তর্ভূক্ত। আর একমুষ্ঠির কমে দাড়ি কাটা-ছাটা সম্পূর্ণ হারাম। এটাই আমাদের অনুসরণীয় হযরত ইমাম-মুজতাহিদ তথা ফক্বীহ উনাদের রায় বা ফতওয়া। আর এটাই দাড়ির শরয়ী মেক্বদার বা পরিমাপ।
দাড়ি একমুষ্ঠি পরিমাণ ওয়াযিব হওয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন উত্থাপনকারীদের প্রশ্নের জবাব
শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে দাড়ি কমপক্ষে একমুষ্ঠি পরিমাণ লম্বা রাখা ফরয-ওয়াযিব হওয়ার পরও কারো মনে এ প্রশ্ন উদয় হতে পারে যে, উল্লিখিত পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ দ্বারা একমুষ্ঠি পরিমাণ লম্বা দাড়ি রাখা সুন্নত প্রমাণিত হয় সত্য কথাই, কিন্তু ফরয-ওয়াযিব প্রমাণিত হয়না। কারণ কোন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে দাড়ি একমুষ্ঠি পরিমাণ লম্বা রাখার নির্দেশ দেয়া হয়নি, বরং শর্তহীনভাবে লম্বা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাই আমরা একমুষ্ঠি পরিমাণকে বেশীর থেকে বেশী সুন্নতরূপেই স্বীকার করে নিব ওয়াযিবরূপে নয়। যার কারণে কেউ কেউ বলে থাকে যে, দাড়ি ছোট-বড় হওয়ার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই, দুর থেকে মুখে দাড়ি রয়েছে বলে বুঝা গেলেই চলবে।
এর জবাব হলো- দাড়ি কমপক্ষে একমুষ্ঠি পরিমাণ লম্বা রাখা ওয়াযিব হওয়ার ক্ষেত্রে এ প্রশ্ন করাই অহেতুক ও অজ্ঞতা। কেননা যে সকল পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে একমুষ্ঠির কথা উল্লেখ আছে, উহার দ্বারা দাড়ি একমুষ্ঠি পরিমাণ ওয়াযিব সাব্যস্ত্য করা উদ্দেশ্য নয়, বরং দাড়ি থেকে ওয়াযিবকে রোহিত করাই তার উদ্দেশ্য। অর্থাৎ যে সকল পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে দাড়ি লম্বা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যাদ্বারা দাড়ি লম্বা করা ওয়াজিব প্রমাণিত হয়। তবে তাতে কোন নির্দিষ্ট পরিমাণের শর্ত ছিলনা, আর ওয়াযিব থেকে দাড়ির কোন অংশই বাইরে ছিলনা। কিন্তু সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের আমল অর্থাৎ একমুষ্ঠি পরিমাণের বর্ধিতাংশ কেটে ফেলার দ্বারা একমুষ্ঠি পরিমাণের বর্ধিতাংশ দাড়ি থেকে ওয়াযিবকে রোহিত করে দেয়। অর্থাৎ কমপক্ষে একমুষ্ঠি পরিমাণ লম্বা করা হলো ওয়াযিব, আর একমুষ্ঠির পরেরগুলো রাখা ও কাটা উভয়টাই জায়িয। কাজেই ফক্বীহগণ যে একমুষ্ঠি পরিমাণ দাড়ি রাখাকে ফরয-ওয়াযিব বলে আখ্যায়িত করেছেন, আর তার কম পরিমাণ দাড়ি রাখাকে নাযায়িয ও হারাম বলেছেন, সেটা উনাদের নিজস্ব কোন ফতওয়া নয়। অথবা নতুন করে ওয়াযিবকে সাব্যস্ত করা নয়। বরং পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত একমুষ্ঠির বর্ধিতাংশ কেটে ফেলে কমপক্ষে একমুষ্ঠি পরিমাণ দাড়ি বহাল রাখা ওয়াযিবকে বর্ণনা করে দেয়া, অর্থাৎ উনারা মূলতঃ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের হুকুমকেই বর্ণনা করে দিয়েছেন। অতএব, সরাসরি পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারাই কমপক্ষে একমুষ্ঠি পরিমাণ লম্বা দাড়ি রাখা ওয়াযিব প্রমাণিত হয়।
কাজেই যারা বলে দাড়ি একমুষ্ঠি পরিমাণ লম্বা করা ওয়াযিব হওয়া পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত নেই, আর দাড়ি বড়-ছোট হওয়ার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই, দূর থেকে মুখে দাড়ি আছে বুঝা গেলেই চলবে। তাদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর, কল্পনাপ্রসূত, অজ্ঞতাসূচক ও সহীহ হাদীছ শরীফ বিরোধী।

দাড়ির শরয়ী তারীফ বা পরিচয়

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, দাড়ি কমপক্ষে একমুষ্ঠি পরিমাণ লম্বা করা ফরয-ওয়াযিবের অন্তর্ভূক্ত। আর একমুষ্ঠি হওয়ার পূর্বে দাড়ি কাটা ও ছাটা উভয়ই হারাম। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, শরীয়তে দাড়ি কাকে বলে? আর চেহারার কোন কোন স্থানের লোম বা পশমের নাম দাড়ি? মূলতঃ দাড়ির সঠিক পরিচয় না জানার কারণে অনেকেই শরীয়ত সম্মতভাবে দাড়ি রাখতে সক্ষম হয়না। যেমন অনেকে দাড়ি রাখে ঠিকই কিন্তু গালের উপরের লোম বা পশম চেঁছে ফেলে, আবার অনেকে গলার নীচ দিয়ে চেঁছে ফেলে। বস্তুতঃ উল্লেখিত অবস্থায় কতটুকু পর্যন্ত চাঁছা যাবে, সেটাই এখানে তুলে ধরা হলো।
বিশ্ববিখ্যাত আরবী লোগাত লোগাতুল ক্বামূসে উল্লেখ আছে যে,
الللحية= بكسر اللام- شعر الخدين والذقن.
অর্থ : লাম অক্ষরে যের দিয়ে, লিহইয়াহ শব্দের অর্থ হলো- দুই গাল ও থুৎনীর লোমসমূহ।
প্রসিদ্ধ আরবী অভিধান আল মানজিদে উল্লেখ আছে যে,
اللحية- شعر الخدين والذقن.
অর্থ : দুই গাল ও থুৎনীর লোম বা পশমসমূহকে দাড়ি বলে।
উপরোক্ত লোগাতী তাহক্বীক দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, দুই গাল ও থুৎনীর সমূদয় লোম বা পশমই দাড়ির অন্তর্ভূক্ত।
তবে বুখারী শরীফ উনার বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য শরাহ আইনীকিতাবে উল্লেখ আছে যে,
(اللحية) وهى اسم لما نبت على الخدين والذقن قاله بعضهم قلت على الخدين ليس بشئ ولو قال عارضين لكان صوابا.
অর্থ : গাল ও থুৎনীতে যে লোম বা পশম উঠে, ওটাকেই দাড়ি বলে, এটা কারো কারো অভিমত। আমি (আইনী) বলি, গালের উপর কিছুই নয়, বরং যদি আরেজের লোমসমূহকে দাড়ি বলা হতো, তবে সঠিক হতো।
আর ফিক্বাহের বিখ্যাত কিতাব বাহরূর রায়েকে উল্লেখ আছে,
ان المراد باللحية- الشعر النابت على الخدين من عذار وعارض والذقن- وفى شرح الارشاد- اللحية- الشعر النابت بمجتمع اللحيين والعارض ما بينهما وبين العذار وهوالقدر رالحاذى للاذن بتصل من الاعلى بالصدغ ومن الاسفل ببالعارض.
অর্থ : লিহইয়াহ বা দাড়ি দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- দুই গালের  (عارض) আরেজ  ও ইজার  নামক  স্থানে ও থুৎনীতে যে লোম বা পশম উঠে, ওটাই দাড়ি। শরহুল ইরশাদনামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে, দুই নিম্ম মাড়ীর সংযোগস্থল অর্থাৎ থুৎনীতে এবং ইজার ও আরেজে যে পশম বা লোম উঠে, ওটাই দাড়ি।
আর মিনহাতুল খালেককিতাবে উল্লেখ আছে যে,
قال الرملى اى يمشى الشعر النات على الخلدين الى العظم الله تى بقرب الاذن عارضا والنابت على العظم الا تى بقرب الاذن عذارا.
অর্থ : রমলী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, কানের নিকটবর্তী উঁচু হাড় পর্যন্ত দুগাল ব্যাপি যে লোম বা পশম উঠে, ওটাই দাড়ি। আর গালের এ অংশকে বা স্থানকে আরেজ বলে। আর কানের সমীপবর্তী উঁচু হাড়ের উপরে যে লোম উঠে, উহাও দাড়ির অন্তর্ভূক্ত। আর গালের এ অংশ বা স্থানকে ইজার বলে।
উপরোক্ত কিতাবসমূহের বর্ণনা দ্বারা আমরা দাড়ির তিনটি অংশ বা স্থানের পরিচয় জানতে পারলাম-
(১) লাহইয়াইনবা দুই  চোয়ালের সংযোগস্থল, যাকে থুৎনী বলা হয়। অর্থাৎ থুৎনীর লোম বা পশমসমূহ দাড়ির অন্তর্ভূক্ত।
(২) আরেজঐ স্থান বা অংশকে বলা হয়, যা থুৎনী হতে উপরের দিকে কানের নিকটবর্তী হাড় পর্যন্ত। অর্থাৎ এস্থান বা অংশের লোমসমূহও দাড়ির অন্তর্ভূক্ত।
(৩) ইজারঐ স্থান বা অংশকে বলে, যা কানের নিকটবর্তী হাড্ডি, যেটা উপরের দিকে কান এবং চোখের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত এবং নিচের দিকে প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত, এ অংশের লোম বা পশমকেও দাড়ি বলে।
উপরোক্ত বর্ণনার সার সংক্ষেপ হলো- ত্মতল্ফƒশুত্র জক্বন ইজার ও আরেজে যে লোমসমূহ উঠে উহাকে দাড়ি বলে। নিম্নে জক্বন, আরেজ ও ইজার-এর লোগাতী বা আভিধানিক অর্থ তুলে ধরা হলো। যার কারণে বিষয়টি আরো সুস্পষ্টভাবে বুঝে আসবে যে, কোন স্থানসমূহের লোমসমূহ দাড়ির অন্তর্ভূক্ত।
العارض- صفحة الخدين
অর্থ : আরেজঅর্থ : গালের পার্শ্বদেশ।
العذار= جائب اللحية شعر الذى يحاذى الاذن مانبت عليه ذالك الشعر=
ইজার অর্থ : দাড়ির প্রান্ত কানের নিকটবর্তী স্থানের পশম, অর্থাৎ যে হাড়ের উপর উক্ত পশম উঠে।
الذقن- بمعنى- تهورى
জক্বন অর্থঃ- থুৎনী। যাকে লাইহয়ানবলা হয় অর্থাৎ দুই চোয়ালের সংযোগস্থল।
উপরোক্ত শব্দত্রয়ের লোগাতী বা আাভিধানিক বর্ণনা দ্বারা বুঝা যায় যে, থুৎনী হতে শুরু করে দুই পার্শ্বে কানের নিকটবর্তী হাড় পর্যন্ত এবং গালের প্রান্তদেশে যে পশম বা লোম উঠে, তাকেই দাড়ি বলে।
এখন প্রশ্ন হলো, তবে কি গালের সমুদয় লোমকে দাড়ি বলে? অবশ্য উল্লিখিত বর্ণনা দ্বারা বুঝা যায় যে, গালের কোন অংশের লোমই দাড়ির বর্হিভূত নয়। তবে আরেজ শব্দের অন্য একটি অর্থ লোগাতে এই আছে যে,
العارض- (مؤنث العارضة)- السن لتى فى عرض الفم.
অর্থাৎ আরেজাহ হলো আরেজ শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ, যার অর্থ মুখের উপরের  মাড়ীর দাত।
সুতরাং মুখের উপরের পাটির দাতের গোড়া বা মাড়ী, আরেজের মধ্যে গণ্য। অতএব, আরেজের মধ্যস্থিত লোমসমূহ দাড়ির অর্ন্তভূক্ত আর আরেজ বর্হিভুত লোমসমুহ দাড়ি নয়। তবে বুখারী শরীফের শরাহ ফায়জুল বারীতে উল্লেখ আছে যে, “চেহারার উপড়ের অংশের (অর্থৎ আরজের বহির্ভূত লোম বা কেশ যা দাড়ি নয়) কাটা জায়েয হলেও না কাটাই আফজল ও উত্তম।
আর ফতওয়ায়ে আলমগীরীতে উল্লেখ আছে যে, “গলার নীচের কেশ না কাটাই উচিৎ। ইমাম আযম, আবু  হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এ মতেরই অনুসারী। তবে ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে কাটতে অসুবিধা নেই।সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, দাড়ি বহির্ভূত কেশ বা লোমসমূহ কাটা জায়িয থাকলেও না কাটাই আফযল ও উত্তম। তাছাড়া এমন কোন বর্ণনা কেউ পেশ করতে পারবেনা যে, সাইয়্যিদূল মুরসালীন, ইমামূল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের কেউ উক্ত কেশ কাটতেন। অতএব, এদিক দিয়ে উহা না কাটাই সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সুন্নতে হযরত ছাহবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম।

নীম দাড়ির পরিচয় ও তার আহকাম

নীচের ঠোট ও থুৎনীর মধ্যবর্তী ছোট ছোট দাড়িকে নীম দাড়ি বা বাচ্চা দাড়ি বলা হয়। অনেকে এ দাড়ির  আহকাম না জানার কারণে তা কেটে ফেলে বা চেছে  ফেলে। অথচ শরীয়ত উনার হুকুম মোতাবেক উক্ত নীম দাড়ি ছাটা বা কাটাও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও মাকরূহে তাহরীমী।
এ প্রসঙ্গে ফিক্বাহর বিথ্যাত কিতার ফতওয়ায়ে আলমগীরীতে উল্লেখ আছে  যে,
ونتف الفنتكين دعة وهما جانبا العنفقة وهى شعر الشفة السفلى كذا فى الغرائب وكذا فى الشامى.
অর্থ : নীচের ঠোটের নিম্নবর্তী লোম বা কেশসমুহ ছাটা বা কাটা বিদয়াত অর্থাৎ বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ অনুরূপ গারায়েব ও ফতওয়ায়ে শামীতেও উল্লেখ আছে।
আর বুখারী শরীফ উনার শরাহ ফায়জুল বারীতে উল্লেথ আছে যে,                     
فان قطع الاشعار التى على وسط الشفة السفلى اى العنفقة بدعة.
অর্থ : ঠোট ও থুৎনীর মধ্যবর্তী কেশ বা লোম দাড়ির অর্ন্তভুক্ত, তাও কাটা ও ছাটা বিদয়াত। (৪ জিঃ, পৃঃ ৩৮০) অনুরূপ আল মানহালকিতাবেও উল্লেথ আছে।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা স্পষ্টই প্রমাণিত হলো যে, নীম দাড়ি বা বাচ্চা দাড়ি কাটা বা ছাটা বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও মাকরূহে তাহরীমী। এর থেকে বেঁচে থাকা সকলের জন্যেই দায়িত্ব ও কর্তব্য।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে দাড়ির উপকারীতা

পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস উনাদের দৃষ্টিতে দাড়ির গুরুত্ব, তাৎপর্য ও আহকাম সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হওয়ার পরও দাড়ির জন্যে চিকিৎসা বিজ্ঞানের সমর্থনের অবকাশ রাখে না। তথাপিও যারা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত, তাদের কিছুটা বুঝ দেয়ার জন্যেই এখানে এ বিষয়ে কিছু আলোকপাত করা হলো-
ইউনানী চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে দাড়ি হলো পুরুষের সৌন্দর্যের প্রতিক এবং বক্ষদেশের হিফাযতকারী।
আর আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও দাড়ির বহু ফায়দা পরিলক্ষিত। এ প্রসঙ্গে জনৈক অভিজ্ঞ ডাক্তার বলেন যে, দাড়ির উপর বার বার ক্ষুর চালালে চোখের শিরার ক্ষতি হয়, যারফলে চোখের জ্যোতি হ্রাস পেতে থাকে। অপর এক জনৈক ডাক্তার বলেন যে, লম্বা দাড়ি রোগ জীবানুকে গলা ও বক্ষ পর্যন্ত পৌঁছতে বাধা দেয়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের বক্তব্য হলো- সাত পুরুষ পর্যন্ত যদি দাড়ি মু-নের বদ অভ্যাস থাকে, তবে অষ্টম পুরুষের লোকদের মুখে দাড়ি উঠবেনা।
দাড়ি সম্পর্কে আমেরিকার ডাক্তার চার্লস হোমর বলে- জনৈক লেখক, দাড়ি মু-নের বৈদ্যুতিক যন্ত্র প্রস্তুত করার জন্যে জোর দিয়েছে, যেন কাজটি তাড়াতাড়ী সমাধা করা যায় এবং সময় বাঁচে। আমি বুঝিনা, দাড়ির ব্যাপারে মানুষের এত আপত্তি কেন? মাথায় যদি চুল রাখা যায়, মুখে দাড়ি রাখতে অসুবিধা কোথায়? মাথার কোন স্থানে চুল না উঠলে টাকে খাওয়ার লজ্জা হয়, কিন্তু চেহারাকে টাক পড়ার মত বানাতে লজ্জা হয় না। মূলতঃ এ দাড়ি পুরুষত্বের লক্ষণ। দাড়ি ও গোঁফ মানুষের চেহারাকে পৌরুষদীপ্ত, প্রত্যয়ী ও দৃঢ় মনোবল সম্পন্ন করে তোলে এবং পুরুষত্বের পরিচয় বহন করে। দাড়ি পুরুষকে রমনীয় তথা মেয়েলী ভাব হতে পৃথক রাখে, নতুবা শরীরের অন্যান্য স্থানের চুলগুলো তো নারী-পুরুষের প্রায় সমান। বস্তুতঃ মহিলারা দাড়ি ও গোঁফের খুব ভক্ত, যে কারণে দাড়িহীন পুরুষের চেয়ে দাড়িওয়ালা পুরুষের প্রতি অধিক আকৃষ্ট। যদিও মনে করা হয় যে, দাড়ি, গোঁফ তাদের ভাল লাগে না, এটার এক মাত্র কারণ, আধুনিক ফ্যাশনের প্রতি অন্ধ অনুরাগ। অথচ এ দাড়ি ও গোঁফের কারণে ক্ষতিকর ধুলা-বালী ও রোগ-জীবানু নাক ও মুখের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে না, মূলতঃ উহা চালুনির ন্যায় কাজ দেয়। তাছাড়া ঘন ও দীর্ঘ দাড়ি গলাকে সর্দি কাশি হতে বাঁচায়।
এখানে উল্লেখ্য যে, ডাঃ হোমর দাড়ি মু-নকে চেহারায় টাক পড়া ফ্যাশনের গোলামী ও নারীসুলভ আচরন বলে দাবী করেন, তার মতে দাড়ি মু-ন সর্দি, কাশির অন্যতম কারণ।
অতএব, চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও প্রমাণিত হলো যে, দাড়ি পুরুষের স্বাস্থ্যের জন্যে অত্যন্ত ফায়দাজনক বা উপকারী। তবে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো- দাড়ি রাখা মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নির্দেশের অন্তর্ভূক্ত অর্থাৎ ফরয-ওয়াযিব, আর কাটা হারাম। সুতরাং মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ পালন করার মধ্যেই রয়েছে দুনিয়াবী ও উখরভী, জিসমানী ও রূহানী ফায়দা বা উপকারীতা, আর উনাদের নির্দেশ অমান্য করাই হচ্ছে নানাবিধ ক্ষতির কারণ। অতএব, শরীয়ত উনার কোন বিষয়ের উপরেই বিজ্ঞানকে প্রাধান্য দেয়া যাবে না, সর্বক্ষেত্রেই শরীয়ত উনার নির্দেশ বা আহকামকে প্রাধান্য দিতে হবে।
 (অসমাপ্ত)