উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত ও পবিত্রতা
যেমন, মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম পাকে ইরশাদ করেন-
رضى الله عنهم ورضوا عنه
অর্থ: “আল্লাহ পাক উনাদের (হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের) উপর সন্তুষ্ট; উনারাও যিনি খালিক্ব-মালিক আল্লাহ পাক উনার প্রতি সন্তুষ্ট।” (সূরা মায়িদা-১১৯, সূরা মুজাদালাহ-২২, সূরা বাইয়্যিনাহ-৮)

হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা একদিকে যেমন ছাহাবীয়াগণের অন্তর্ভুক্ত, অন্যদিকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইহকাল ও পরকালীন জীবনসঙ্গিনী হওয়ারও সুমহান সৌভাগ্য অর্জন করেন। যার কারণে অন্যান্য পরহিযগার-মুত্তাক্বী মহিলাগণের থেকে উনাদেরকে অসংখ্য-অগণিত নিয়ামত, মর্যাদা, মর্তবা, ফাযায়িল-ফযীলত প্রদান করা হয়েছে। যা স্বয়ং আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রদান করেছেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া হওয়ার কারণেই অন্যান্য নারীদের উপরে উনাদের মর্যাদা।
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাকে ইরশাদ করেন-
يا نساء النبى لستن كاحد من النساء
অর্থ: “হে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার যারা আহলিয়া অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম; আপনারা অন্য নারীদের মতো নন।” (সূরা আহযাব : আয়াত শরীফ ৩২)
এ আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় বিশ্ববিখ্যাত ও সর্বজনমান্য তাফসীরের কিতাব “তাফসীরে মাযহারী”-এর ৭ম খণ্ডের ৩৩৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
اى ليست كل واحدة منكن او المعنى لم توجد جماعة واحدة من جماعات النساء مثلكن فى الفضل قال ابن عباس اى ليس قدركن عندى مثل قدر غيركن من النساء الصالحات انتن اكرم على وثوابكن اعظم لدى. هذه الاية تدل على فضلهن على سائر النساء.
অর্থ: “হে উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম! আপনারা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার সহধর্মিণী হওয়ার কারণেই মর্যাদা, মর্তবা, ফযীলতের দিক থেকে কোনো মহিলাই আপনাদের সমকক্ষ নয়। .... হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায়) বলেছেন, আপনাদের মর্যাদা, মর্তবা, ফাযায়িল, ফযীলত অন্যান্য সতী-সাধ্বী মহিলাগণের মতো নয়। বরং আপনাদের সম্মান-মর্যাদা, ফাযায়িল-ফযীলত, অধিক পুণ্য ও প্রতিদান আমার নিকটে অধিক মর্যাদা সম্পন্ন, অনেক ঊর্ধ্বে। এ আয়াত শরীফ-এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সমস্ত মহিলাগণের উপরে আপনাদের অধিক মর্যাদা, মর্তবা, ফাযায়িল, ফযীলত রয়েছে।” (অনুরূপভাবে তাফসীরে খাযিন ৫ম খণ্ডের ২৫৭ পৃষ্ঠা, তাফসীরে বাগবী ৫ম খন্ডের ২৫৭ পৃষ্ঠা, তাফসীরে মাদারিকুত তানযীল ৩য় খণ্ডের ৪৬৫ পৃষ্ঠা এবং অন্যান্য সকল নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থে আলোচনা রয়েছে।)

আল্লাহ পাক স্বয়ং উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে আহলে বাইত হিসেবে ঘোষণা করেছেন এবং পূত-পবিত্রা করেছেন।
আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি বলেন-
انما يريد الله ليذهب عنكم الرجس اهل البيت ويطهركم تطهيرا
অর্থ: “হে আহলে বাইতগণ! আল্লাহ পাক চান আপনাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং আপনাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে।” (সূরা আহযাব : আয়াত শরীফ ৩৩)
এ আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় “তাফসীরে মাযহারী”-এর ৭ম খণ্ডের ৩৩৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
قال عكرمة ومقاتل اراد باهل البيت نساء النبى صلى الله عليه وسلم
অর্থ: “হযরত ইকরামা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও মুক্বাতিল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা বলেন, আয়াত শরীফ-এ ‘আহলে বাইত’ দ্বারা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে।”
“তাফসীরে ইবনে কাছীর”-এর ৩য় খণ্ডের ৭৬৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
نص فى دخول ازواج النبى صلى الله عليه وسلم فى اهل البيت ههنا لانهن سبب نزول هذه الاية.
অর্থ: “এ আয়াত শরীফটি এটাই প্রমাণ করে যে, হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালামগণ উনারা আহলে বাইত-এর অন্তর্ভুক্ত।”

আয়াত শরীফ-এ উম্মুল মু’মিনীন উনাদের সাথে উনাদের সন্তান-সন্ততিগণও আহলে বাইত-এর অন্তর্ভুক্ত হবেন। যেমনটি হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে। ‘তাফসীরে মাযহারী’-এর ৭ম খণ্ডের ৩৪০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, হযরত আবু সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং তাবিয়ীনগণের একটি বিরাট দল হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত কাতাদা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও অন্যান্যগণ বলেন: আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন- হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম, হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম ও হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম।

“ছহীহ মুসলিম শরীফ”-এ বর্ণিত রয়েছে, উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, “একদা রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি চাদরাবৃত হয়ে ঘরের ভিতর উপস্থিত হলেন। চাদরটির উপরে ছিলো উটের পশমের নকশা আঁকা। একটু পরে সেখানে উপস্থিত হলেন হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম। আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে চাদর দ্বারা ঢেকে নিলেন। এরপর এলেন হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম। তিনি উনাকেও চাদরে ঢেকে নিলেন। এরপর এলেন উম্মু আবীহা হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম। তিনি উনাকেও টেনে নিলেন চাদরের ভিতর। শেষে এলেন হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকেও জড়িয়ে নিলেন চাদরের ভিতর। তারপর পাঠ করলেন এই আয়াত শরীফ, “হে আহলে বাইতগণ! আল্লাহ পাক চান আপনাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং আপনাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে।” (অনুরূপভাবে তাফসীরে ইবনে কাছীর, আহকামুল কুরআন লিল কুরতুবী, আহকামুল কুরআন লি ইবনিল আরাবী, মিশকাত শরীফ এবং অন্যান্য হাদীছ শরীফ-এর কিতাবসমূহে হাদীছ শরীফটি বর্ণিত আছে।)
উপরোক্ত আয়াত শরীফ, তাফসীর এবং হাদীছ শরীফ-এর দলীল থেকে প্রমাণিত হলো যে, ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ঐকমত্যে, আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, উম্মু আবীহা হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম, হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম ও হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম এবং সমস্ত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা হচ্ছেন আহলে বাইত।

উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে বিবাহ করা কোনো মুসলমানের জন্য জায়িয নেই; যেহেতু উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া তথা উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম।
মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম পাকে তিনি ইরশাদ করেন-
ولا ان تنكحوا ازواجه من بعده ابدا ان ذلكم كان عند الله عظيما.
অর্থ: “উনার অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছাল শরীফ-এর পর উনার আহলিয়া অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য জায়িয নেই। আল্লাহ পাক উনার কাছে এটা অত্যন্ত গুরুতর অপরাধ।” (সূরা আহযাব : আয়াত শরীফ ৫৩)

“তাফসীরে ইবনে কাছীর”-এর ৩য় খণ্ডের ৮০৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
ولهذا اجمع العلماء قاطبة على ان من توفى عنها رسول الله صلى الله عليه وسلم من ازواجه انه يحرم على غيره تزوجها من بعده لانهن ازواجه فى الدنيا والاخرة وامهات المؤمنين.
অর্থ: “সমস্ত উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারা ইজমা করেছেন যে, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছাল শরীফ-এর পর উনার কোনো আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে বিবাহ করা অন্য কারো জন্য জায়িয নেই বরং হারাম। কেননা, উনারা ইহকালে উনার (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার) সহধর্মিণী ছিলেন পরকালেও সহধর্মিণী হিসেবে থাকবেন। আর উনারা ক্বিয়ামত পর্যন্ত সকল মু’মিনগণের সম্মানিত মাতা।”

তাফসীরে মাযহারী-এর ৭ম খন্ডের ৩৭২, ৩৭৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে যে, হযরত ইবনু আবী হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ইবনু যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “একদা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে সংবাদ পৌঁছলো যে, এক ব্যক্তি বলেছে: হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছাল মুবারক-এর পর আমি উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে বিবাহ করবো। এ প্রেক্ষিতে উক্ত আয়াত শরীফ অবতীর্ণ হয়।”
হযরত ইমাম বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত মুয়াম্মার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেছেন, হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে বিবাহ করা নিষিদ্ধতার হুকুম আসার পূর্বে হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘আলিয়া বিনতে যুবইয়ান’ নামের এক আহলিয়াকে তালাক দিয়েছিলেন। পরে তিনি জনৈক ব্যক্তির সহধর্মিণী হন এবং কয়েকজন সন্তান-সন্ততির জননীও হন।

হযরত ইমাম বাইযাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ওই সকল আহলিয়াগণ বিবাহ নিষিদ্ধ আইনের বিধানের বাইরে যারা উনার সাথে নির্জন অবস্থানের সুযোগ পাননি।

এক বর্ণনায় এসেছে- “হযরত উমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খিলাফতকালে আশয়াছ ইবনে কায়েস নামীয় এক আরবীয় ব্যক্তি হযরত মুস্তায়িযা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাকে বিবাহ করেছিলেন। হযরত উমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এ খবর জানতে পেরে আশয়াছ ইবনে কায়েসকে প্রস্তর নিক্ষেপের মাধ্যমে হত্যা করতে মনস্থ করলেন। কারণ হযরত মুস্তায়িযা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি ছিলেন- হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া। কিন্তু পরে তিনি যখন জানতে পারলেন যে, হযরত মুস্তায়িযা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার সঙ্গে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্জন অবস্থান হওয়ার আগেই তিনি উনাকে পরিত্যাগ করেছিলেন। তখন তিনি আশয়াছ ইবনে কায়েসকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত পরিত্যাগ করেন।” (তাফসীরে বাইযাবী, শায়খ যাদাহ, হাশিয়াতুশ শিহাব, তাফসীরে বাগবী, খাযিন, মাদারিকুত তানযীল ইত্যাদি তাফসীর গ্রন্থেও এ সম্পর্কে আলোচনা রয়েছে।)
হায়াতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হওয়ার কারণেই উনার আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে বিবাহ করা হারামঃ
তাফসীরে মাযহারী-এর ৭ম খণ্ডের ৩৭৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
اى ذنبا عظيما قلت وجاز ان يكون ذلك لاجل ان النبى صلى الله عليه وسلم حى فى قبره ولذلك لم يورث ولم يتئم ازواجه عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من صلى على عند قبرى سمعته ومن صلى على نائبا ابلغته
অর্থ: “(হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম) উনাদেরকে বিবাহ করা বড় গুনাহ। আমি বলি: হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে বিবাহ করা হারাম এজন্যই যে, যেহেতু তিনি উনার রওযা শরীফ-এ জীবিত আছেন, তিনি হায়াতুন নবী। সে কারণে উনার সম্পত্তির কোন ওয়ারিস নেই এবং উনার আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালামগণও বিধবা নন।”
হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি আমার রওযা শরীফ-এর নিকটে এসে ছলাত ও সালাম দিবে আমি তা সরাসরি শুনি। আর যে আমার নিকট দূরদেশ থেকে ছলাত ও সালাম পাঠাবে তা আমার কাছে পৌঁছে দেয়া হয়।”(বাইহাক্বী ফী শুয়াবুল ঈমান)

হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কারণেই আল্লাহ পাক উনার থেকে উনাদেরকে নিয়ামত প্রদানঃ
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক-এ ইরশাদ করেন-
ومن يقنت منكن لله ورسوله وتعمل صالحا نؤتها اجرها مرتين واعتدنا لها رزقا كريما.
অর্থ: “আপনাদের মধ্যে যে কেউ আল্লাহ পাক এবং উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অনুগত হবেন ও সৎকার্য করবেন উনাকে আমি পুরস্কার দিবো দুইবার এবং উনার জন্য আমি প্রস্তুত রেখেছি সম্মানজনক রিযিক।” (সূরা আহযাব : আয়াত শরীফ ৩১)

তাফসীরে মাযহারী-এর ৭ম খণ্ডের ৩৩৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, দ্বিগুণ পুরস্কারের অর্থ হচ্ছে-

প্রথমত: উনারা দ্বিগুণ পুরস্কার লাভ করবেন আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইতায়াত বা আনুগত্যতার জন্য।

দ্বিতীয়ত: হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি-রেযামন্দী অর্জনের জন্য। অল্পে তুষ্ট হয়ে উত্তম জীবনযাপনের জন্য।
হযরত মুক্বাতিল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উনাদের প্রতিটি পুণ্যের প্রতিদান দেয়া হবে দশগুণ করে। এটা হচ্ছে আম বদলা। আর খাছ বদলা হচ্ছে অসংখ্য, অগণিত। কারণ দাতা আল্লাহ পাক হচ্ছেন অসীম আর উনার হাবীব হচ্ছেন উনার কুদরত-এর অধীন।
তাফসীরে মাযহারী-এর ৭ম খণ্ডের ৩৩৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
اى جليل القدر وهو الجنة زيادة على اجرها قلت وذالك لانهن يرزقن بمتابعة النبى صلى الله عليه وسلم مايرزق النبى صلى الله عليه وسلم.
অর্থ: “(হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালামগণ) উনাদেরকে সম্মানজনক রিযিক প্রদান করা হবে। তা হচ্ছে জান্নাত। যা সবচেয়ে বড় প্রতিদান। আমি বলি: উনারা উত্তম রিযিক পাবেন হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া হওয়ার কারণেই। তাই নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য যে রিযিক উনাদের জন্যও সে রিযিক ধার্য হবে।” (তাফসীরে ইবনে কাছীর, কুরতুবী, আহকামুল কুরআন খাযিন, বাগবী, মাদারিক ইত্যাদি তাফসীরগুলোতে আরো বিশদভাবে আলোচনা রয়েছে।)

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, তাফসীর ইত্যাদি কিতাবের উপরোক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে-

(১) আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া হওয়ার কারণেই উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মর্যাদা অন্যান্য সকল নারীর উপরে।

(২) উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা যেমন ইহকালে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া; তদ্রূপ বেহেশতও উনারা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া হিসেবেই থাকবেন।

(৩) উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত।

(৪) অন্যান্য মানুষের থেকে উনাদের আমলের প্রতিদান দ্বিগুণ-বহুগুণে প্রদান করা হবে।

(৫) পৃথিবী সৃষ্টির পূর্বে-পরে, যে কোনো কালে যারাই অনেক মর্যাদাশালী হয়েছেন; তারাই আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কারণেই মর্যাদাময় হয়েছেন। এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা।

আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি, রেযামন্দী অর্জনের মূল মাধ্যম হচ্ছে ছোহবত। এজন্য ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ ওলীআল্লাহ উনাদের ছোহবত অর্জন করাকে ফরযে আইন ফতওয়া দিয়েছেন। তাই বর্তমান যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, আওলাদুর রসূল, গাউসুল আ’যম, হাবীবুল্লাহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী উনার হাক্বীক্বী ছোহবত অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে উনার এবং উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম এবং সমস্ত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি যথাযথ সম্মান-মর্যাদা, তা’যীম-তাকরীম ও সুধারণা রাখার তাওফীক দান করুন। (আমীন)



নূরুম মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আহলিয়া আফদ্বালুন নাস বা’দা রসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, লাসতুন্না কাআহাদিম মিনাননিসা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের তা’রীফ ও তা’যীম

নূরুম মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আহলিয়া আফদ্বালুন নাস বা’দা রসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, লাসতুন্নাকা আহাদিম মিনাননিসা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের তা’রীফ ও তা’যীম-
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আযওয়াজ বা আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালাম উনারাই হচ্ছেন উম্মুল মু’মিনীন অর্থাৎ মু’মিনগণ উনাদের মা। উম্মুন শব্দটি একবচন, বহুবচন উম্মাহাতুন। অর্থ মা। আর মু’মিন শব্দটির বহুবচন হচ্ছে মু’মিনীন। একত্রে উম্মুল মু’মিনীন অথবা উম্মাহাতুল মু’মিনীন শব্দ মুবারক দ্বয়ের অর্থ হলো মু’মিনগণ উনাদের মা। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে اُمَّهَاتُ الْمُؤْمِنِيْنَ শব্দ মুবারক উল্লেখ রয়েছে। আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে اُمُّ الْمُؤْمِنِيْنَ শব্দ মুবারক।
হযরত উম্মুল মু’মিনীন বা উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা কতজন ছিলেন সে সম্পর্কে বিভিন্ন মত রয়েছে। এক বর্ণনা মতে, উনাদের সর্বাধিক সংখ্যা বর্ণিত রয়েছে উনিশজন পর্যন্ত। আর সর্বনিম্ন সংখ্যা বর্ণিত রয়েছে এগারজন। তবে মশহূর বা প্রসিদ্ধ বর্ণনা মতে, উনাদের সংখ্যা তেরজন।

এখানে মশহূর বর্ণনা অনুযায়ী উনাদের সংখ্যা উল্লেখ করা হলো-

১. উম্মুল মু’মিনীন হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম।
২. উম্মুল মু’মিনীন হযরত সাওদা আলাইহাস সালাম।
৩. উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম।
৪. উম্মুল মু’মিনীন হযরত হাফছা আলাইহাস সালাম।
৫. উম্মুল মু’মিনীন হযরত যাইনাব বিনতে খুজায়মা আলাইহাস সালাম।
৬. উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু সালামা আলাইহাস সালাম।
৭. উম্মুল মু’মিনীন হযরত জুওয়াইরিয়া আলাইহাস সালাম।
৮. উম্মুল মু’মিনীন হযরত যাইনাব বিনতে জাহাশ আলাইহাস সালাম।
৯. উম্মুল মু’মিনীন হযরত রাইহানা আলাইহাস সালাম।
১০. উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু হাবীবা আলাইহাস সালাম।
১১. উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছফিয়্যা আলাইহাস সালাম।
১২.উম্মুল মু’মিনীন হযরত মারিয়া কিবতিয়্যাহ আলাইহাস সালাম।
১৩. উম্মুল মু’মিনীন হযরত মাইমূনা আলাইহাস সালাম।

(পবিত্র নক্শবন্দিয়ায়ে মুজাদ্দিদিয়া তরীক্বা পৃষ্ঠা ৮ ও ৯) বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণকালে নয়জন হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা হায়াত মুবারক-এ ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!

হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মর্যাদা-মর্তবা, বুযূর্গী-সম্মান সম্পর্কে অসংখ্য পবিত্র আয়াত শরীফ ও অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার শ্রেষ্ঠতম রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যেরূপ মনোনীত করেছেন তদ্রুপ উনার সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ- আযওয়াজ এবং আবনা-বানাত আলাইহিমুস সালাম ও আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকেও মনোনীত করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সমস্ত সৃষ্টির জন্য রসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন। অর্থাৎ সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম, সকল হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম, সকল ইনসান ও জিন সকলেই উনার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত। এক কথায় কায়িনাতের সকল সৃষ্টির জন্য তিনি যেমন মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে প্রেরিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তদ্রুপ উনার সম্মানিতা আযওয়াজ আলাইহিন্নাস সালাম উনারা হলেন কায়িনাতের সকলের মা। সুবহানাল্লাহ! যেমন এ প্রসঙ্গেঁ পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
اَلنَّبِيُّ اَوْلٰى بِالْمُؤْمِنِيْنَ مِنْ اَنْفُسِهِمْ ۖ وَاَزْوَاجُه اُمَّهَاتُهُمْ ۗ
অর্থ : “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মু’মিনগণ উনাদের নিকট উনাদের প্রাণের চেয়েও অধিক প্রিয় এবং উনার আযওয়াজ আলাইহিন্নাস সালাম উনারা হচ্ছেন মু’মিনগণ উনাদের মা। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬)

উল্লেখ্য, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরেই হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মাক্বাম বা মর্যাদা। সুবহানাল্লাহ!

বর্ণিত রয়েছে, প্রত্যেক মানুষ তথা জিন-ইনসানের হাক্বীক্বী মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত ও প্রকাশিত হবে জান্নাতে। সেই জান্নাতে হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা অবস্থান করবেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে। সুবহানাল্লাহ!

কাজেই, বলার অপেক্ষা রাখে না যে, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মর্যাদা-মর্তবার সমতুল্য সৃষ্টির কেউই নেই বা কেউই হতে পারে না। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
يَا نِسَاءَ النَّبِيّ لَسْتُنَّ كَاَحَدٍ مّنَ النّسَاءِ ۚ
অর্থ : “হে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালাম! অর্থাৎ হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম! আপনারা অন্য কোন মহিলাদের মত নন।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩২)

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিতা আম্মা অর্থাৎ উম্মু রূহিল্লাহ হযরত মারইয়াম আলাইহাস সালাম উনার মনোনীত ও পবিত্র হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করার পাশাপাশি উনার ফযীলত মুবারক সম্পর্কে আরো যে বিষয়টি উল্লেখ করেছেন তা হচ্ছে-
لَيْسَ الذَّكَرُ‌ كَالْاُنثٰى ۖ
অর্থাৎ “হযরত উম্মু রূহিল্লাহ আলাইহাস সালাম তিনি এমন এক মহিলা; উনার সমতুল্য কোন পুরুষও নেই।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৬)

কিন্তু হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের শান মুবারক এ বলা হয়েছে-
لستن كاحد من النساء
অর্থাৎ “আপনারা অন্য কোন মহিলাদের মত নন।”
প্রতীয়মান হলো, হযরত উম্মু রূহিল্লাহ আলাইহাস সালাম তিনিসহ কোন মহিলাই হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মত না। সুবহানাল্লাহ!

হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের আরও যে বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদা মুবারক তা হচ্ছে, উনারা হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত। উনাদের পবিত্রতার বিষয়টি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ঘোষিত হয়েছে। ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
اِنَّـمَا يُرِ‌يْدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرّ‌جْسَ اَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهّرَ‌كُمْ تَطْهِيْرً‌ا ◌
অর্থ : “হে হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম! নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাদের থেকে অপবিত্রতা দূরীভূত করে আপনাদেরকে পরিপূর্ণরূপে পবিত্র করতে চান। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩)
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার অর্থ এই নয় যে, হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে কোন প্রকার অপবিত্রতা ছিল, যা থেকে উনাদেরকে পবিত্র করা হয়েছে; বরং অর্থ হচ্ছে যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে পুত-পবিত্র করেই সৃষ্টি করেছেন। হক্বীক্বত মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে স্বীয় ভাষায় হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্রতার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছেন। যেমন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নবী হিসেবে সৃষ্টি হওয়ার পরও উনাকে দুনিয়াবী চল্লিশ বছর বয়স মুবারকে আনুষ্ঠানিকভাবে নবী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

স্মরণীয় যে, হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রথম সারির অন্তর্ভুক্ত হলেন আযওয়াজু রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা। আর দ্বিতীয় সারির অন্তর্ভুক্ত হলেন আবনাউ ওয়া বানাতু রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা। উনাদের প্রত্যেককেই মুহব্বত করা উম্মতের জন্য ফরয-ওয়াজিব। সুবহানাল্লাহ!

যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
قُل لَّا اَسْاَلُكُمْ عَلَيْهِ اَجْرً‌ا اِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْ‌بٰى ۗ
অর্থ : “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মতদেরকে বলুন, আমি তোমাদের নিকট কোন বিনিময় চাই না (প্রকৃতপক্ষে উম্মতের পক্ষে বিনিময় দেয়াও সম্ভব নয়; বিনিময় দেয়ার চিন্তা করাটাও হবে কুফরীর শামিল তবে উম্মতকে যেহেতু নাজাত ও সন্তষ্টি লাভ করতে হবে সে কারণে) তোমাদের দায়িত্ব কর্তব্য হচ্ছে, আমার ঘনিষ্টজন অর্থাৎ হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করা।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা শূরা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৩)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
احبوا اهل بيتى لـحبى
অর্থ : “আমার হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে তোমরা মুহব্বত করো আমার পবিত্র মুহব্বত মুবারক পাওয়ার জন্য।” (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
উল্লেখ্য, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মুহব্বত মুবারক ও সন্তুষ্টি মুবারক ব্যতীত মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র মুহব্বত মুবারক ও সন্তুষ্টি মুবারক পাওয়া কখনোই সম্ভব হবে না। কাজেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মুহব্বত মুবারক ও সন্তুষ্টি মুবারক পেতে হলে উনার হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করতে হবে এবং উনাদেরকে সন্তুষ্ট করতে হবে। উনাদের পবিত্র মুহব্বত মুবারক ও সন্তুষ্টি মুবারক যারা অর্জন করতে পারবে কেবল তারাই নাজাত ও কামিয়াবী লাভ করবে। আর উনাদের পবিত্র মুহব্বত মুবারক ও সন্তুষ্টি মুবারক যারা হাছিল করতে পারবে না, তারা হালাক বা ধ্বংস হয়ে যাবে। যেমন এ প্রসঙ্গে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
عن حضرت ابى ذر رضى الله تعالى عنه انه قال وهو اخذ بباب الكعبة سمعت النبى صلى الله عليه وسلم يقول الا ان مثل اهل بيتى فيكم مثل سفينة نوح عليه السلام من ركبها نـجا ومن تـخلف عنها هلك.
অর্থ : হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি কা’বা শরীফ উনার দরজা মুবারক ধরে বলেছেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি, “সাবধান! নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আমার হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা হলেন হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার কিশতীর ন্যায়। যে তাতে আরোহন করেছে সে রক্ষা পেয়েছে আর যে তা হতে পশ্চাতে থেকেছে, সে ধ্বংস হয়েছে।” (মুসনাদে আহমদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)

অর্থাৎ হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে যারা মুহব্বত করবে তারা নাজাত পাবে। সুবহানাল্লাহ! আর উনাদেরকে যারা মুহব্বত করবে না তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। নাউযুবিল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
عَنْ حضرت أَبِي لَيْلَى رضى الله تعالى عنه ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لا يؤمن عبد حتى اكون احب اليه من نفسه ويكون عترتى احب اليه من عترته ويكون اهلى احب اليه من اهله ويكون ذاتى احب اليه من ذاته.
অর্থ: “হযরত আবু লায়লা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কোনো বান্দা ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার নিজের জীবন অপেক্ষা আমাকে বেশি মুহব্বত না করবে এবং আমার সম্মানিত আওলাদ তথা বংশধরগণ উনাদেরকে তার বংশধর থেকে বেশি মুহব্বত না করবে এবং আমার সম্মানিত পরিবার-পরিজন উনাদেরকে তার পরিবার-পরিজন থেকে বেশি মুহব্বত না করবে এবং আমার সম্মানিত জাত মুবারক উনাকে তার জাত থেকে বেশি মুহব্বত না করবে।” (মু’জামুল আওসাত লিত তবারানী)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-
عن حضرت عويـمر بن ساعدة رضى الله تعالى عنه انه صلى الله عليه و سلم قال ان الله اختارنى واختار لى اصحابا فجعل لى منهم وزراء وانصارا واصهارا فمن سبهم فعليه لعنة الله والـملئكة والناس اجـمعين ولايقبل الله منهم صرفا وعدلا.
অর্থ : “হযরত উয়াইমির ইবনে সায়িদাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে এবং আমার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদেরকে মনোনীত করেছেন এবং উনাদের মধ্য থেকে আমার কার্য সম্পাদনকারী, খিদমতকারী এবং বৈবাহিক সূত্রে আত্মীয়বর্গ নিযুক্ত করেছেন। অতএব, যে ব্যক্তি উনাদেরকে গালি দিবে বা দোষারোপ করবে, তার প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত এবং সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের ও সমস্ত মানুষ সকলেরই লা’নত। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি তার কোন ফরয ও নফল ইবাদত কবুল করবেন না।” (তবারানী শরীফ, হাকিম শরীফ)

এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনায় হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা বিশেষভাবে শামিল রয়েছেন। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার প্রিয়তম রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মনোনীত করেছেন এবং সেই সাথে উনার জীবনসঙ্গিনী হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকেও বিশেষভাবে মনোনীত করেছেন উনার মুবারক খিদমতে আঞ্জাম দেয়ার লক্ষ্যে।

কাজেই, উনাদের শান-মান, মর্যাদা-মর্তবা মুবারক উপলব্ধি করা সমস্ত জিন-ইনসানের জন্য ফরয-ওয়াজিব। উনাদের প্রতি মুহব্বত ও সু-ধারণা পোষণ করাই হচ্ছে ঈমান। আর উনাদের প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ করা, উনাদের সমালোচনা করা সুস্পষ্ট কুফরী, কাফির ও চিরজাহান্নামী হওয়ার কারণ।
হযরত মারিয়া কিবতিয়া আলাইহাস সালাম সম্পর্কে অপবাদের জবাব

হযরত মারিয়া কিবতিয়া আলাইহাস সালাম সম্পর্কে অপবাদের জবাব

যে ঘটনাগুলো নিয়ে হিন্দু ও নাস্তিকেরা সবচেয়ে বেশি মিথ্যাচার ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে থাকে, সেগুলোর মধ্যে উম্মুল মু’মিনীন হযরত মারিয়া কিবতিয়া আলাইহাস সালাম উনার বিষয়টি অন্যতম। অন্যদের দেখাদেখি কালীদেবির একনিষ্ঠ ভক্ত সুষুপ্ত পাঁঠাও এরকম মিথ্যাচার করে একটি পোস্ট দিয়েছে।
সুষুপ্ত পাঁঠার লাদির পরিমাণ বেশি হওয়ায় তা সরাসরি কোট করাটা বাহুল্য হয়ে যায় । তবে তার মিথ্যাচারগুলো সংক্ষেপে এরকম-

১) হযরত মারিয়া কিবতিয়া আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন দাসী। নাউযুবিল্লাহ!

২) হযরত মারিয়া কিবতিয়া আলাইহাস সালাম উনার সাথে রসূলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিয়ে হয়নি। নাউযুবিল্লাহ!

৩) হযরত মারিয়া কিবতিয়া আলাইহাস সালাম উনাকে কেন্দ্র করে হযরত হাফসা আলাইহাস সালাম উনার সাথে দ্বন্দ্ব হয়েছিলো। হযরত হাফসা আলাইহাস সালামের পিতা হযরত উমর রদ্বিআল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিও এর সাথে জড়িত ছিলেন। নাউযুবিল্লাহ!

প্রথমত বলতে হয়, হযরত মারিয়া কিবতিয়া আলাইহাস সালামকে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট প্রেরণ করেছিলেন মিশরের সম্রাট মুকাউকিস। আমরা জানি যে, নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তৎকালীন সময়ের সম্রাটদের নিকট ইসলামের দাওয়াত দিয়ে পত্র ও দূত প্রেরণ করেছিলেন। মিশরের সম্রাট মুকাউকিসের নিকট প্রেরিত পত্রের জবাবে মুকাউকিস লিখেছিলেন-

“আমি আপনার পত্র মুবারক পাঠ করেছি এবং যা কিছু আপনি বলতে চেয়েছেন তা অনুধাবন করেছি। আমার জানা আছে যে, এখনও একজন সম্মানিত নবী উনার আবির্ভাব অবশিষ্ট রয়েছে এবং তিনি আসবেন। কিন্তু আমার ধারণা ছিল যে, তিনি শাম (সিরিয়া) অঞ্চলে তাশরীফ মুবারক আনবেন। আমি আপনার কাসেদ (দূত) উনার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছি। মুবারক হাদিয়া স্বরূপ আপনার জন্য দুজন মেয়ে প্রেরণ করছি। উনারা দুইজন সহোদরা এবং নিতান্ত সম্ভ্রান্ত পরিবারের। এছাড়া দুল দুল নামক একটি বাহন ও কিছু কাপড় হাদিয়া মুবারক হিসেবে পাঠানো হচ্ছে।”

পত্রে উল্লিখিত এই দুজনের একজন ছিলেন হযরত মারিয়া কিবতিয়া আলাইহাস সালাম, এবং অন্যজন ছিলেন হযরত সীরিন রদ্বিআল্লাহু তায়ালা আনহা। হযরত মারিয়া কিবতিয়া আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন সম্ভ্রান্ত পরিবারের, অনেক বর্ণনায় সম্রাট মুকাউকিসের আপন চাচাতো বোন। হযরত মারিয়া কিবতিয়া আলাইহিসা সালাম উনাকে হুযূর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজে গ্রহণ করেন এবং হযরত সীরিন রদ্বিআল্লাহু তায়ালা আনহা উনাকে বিয়ে দেন হযরত হাসসান বিন সাবিত রদ্বিআল্লাহু তায়ালা আনহুর নিকট।

নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্ত্রী হিসেবে কবুল করার জন্য একজন সম্ভ্রান্ত নারীকে পাঠিয়েছেন একজন শাসক, এখানে নোংরামির কী আছে? কিন্তু হিন্দুরা সব কিছুতেই নোংরামি প্রবেশ করায়, কারণ তারা জাতিগতভাবে নাপাক। সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান হযরত মারিয়া আলাইহাস সালাম উনাকে ‘দাসী’ বলার সাথে সাথে এই নাস্তিকেরা আরো মিথ্যাচার করে যে, উনাকে নাকি বিয়ে করা হয়নি। নাউযুবিল্লাহ!

এর উত্তরে বলতে হয়, প্রথম খলীফা হযরত আবু বকর আলাইহিস সালাম ও হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম উনাদের নিজ নিজ খিলাফতকালে উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত মারিয়া কিবতিয়া আলাইহাস সালাম উনাকে অতিশয় সম্মান ও মর্যাদা প্রদান করা হয়। খিলাফত থেকে হযরত মারিয়া কিবতিয়া আলাইহাস সালাম উনার জন্য ভাতা নির্ধারণ করে দেয়া হয়, যা উনার ওফাত মুবারকের পূর্ব পর্যন্ত তিনি পেতে থাকেন।

এখন বলুন পাঠকেরা, হযরত মারিয়া কিবতিয়া আলাইহাস সালাম উনাকে যদি বিয়ে না করা হতো, তাহলে উনার সম্মানার্থে কেন খোদ খলীফা পর্যন্ত ভাতার ব্যবস্থা করবেন? শুধু তাই নয়, হযরত উমর রদ্বিআল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে যে কাল্পনিক ঝগড়ার কথা নাস্তিক ও হিন্দুরা বলে থাকে, সেরকম কিছুর অস্তিত্ব থাকলে নিশ্চয়ই উনার সময়ে এই ভাতা জারি থাকতো না।

হযরত মারিয়া কিবতিয়া আলাইহাস সালাম তিনি যে নবী পরিবারের একজন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিত্ব ছিলেন, তার প্রমাণ আরো দেয়া যায়। তিনি ছিলেন মিসরের আনসানা অঞ্চলের হাফন নামক গ্রামের বাসিন্দা। নববী পরিবারের অন্যতম সদস্য হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনার সুপারিশক্রমে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হাফন বাসিদের খারাজ (ভূমি কর) মাফ করে দিয়েছিলেন। ইহা উম্মুল মু’মিনীন হযরত মারিয়া কিবতিয়া আলাইহাস সালাম উনার সম্মানার্থে করা হয়েছিল। সুবহানাল্লাহ!

হিজরী ১৬ সালে পবিত্র মুহররমুল হারাম শরীফ মাসে হযরত মারিয়া আলাইহাস সালাম উনার ওফাত মুবারক হয়। দ্বিতীয় খলীফা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি উনার পবিত্র জানাযার নামায পড়ান। পবিত্র জান্নাতুল বাক্বী শরীফ উনার পবিত্র রওজা শরীফ অবস্থিত। (উসুদুল গাবা, ইছাবা, সিয়ারুস ছাহাবা, অন্যান্য সীরত গ্রন্থ)

নিজ কন্যা হযরত হাফসা আলাইহাস সালাম উনার সাথে যদি ঝগড়া থাকতোই, তাহলে নিশ্চয়ই হযরত উমর রদ্বিআল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত মারিয়া আলাইহাস সালাম উনার জানাযা পড়াতেন না। আরো অনেক খণ্ডনমূলক জবাব দেয়া যায়, কিন্তু হিন্দুরা এরপরও মিথ্যাচার করতেই থাকবে। আসলে জন্মপরিচয়ে সমস্যা থাকলে যা হয়।আর সুষুপ্ত পাঁঠাদের এসব মিথ্যাচারের ফলাফল হবে ভয়াবহ। পাহাড়ে যখন সেনা কর্মকর্তাদের সাথে পাহাড়িরা দুর্ব্যবহার করে ও গায়ে হাত তোলে, তখন তারা কিছু করতে পারে না। কারণ উপর থেকে পাহাড়িদের জামাই আদরের নির্দেশ দেয়া আছে। আমার পরিচিত একজন বলেছিলেন, করতে দাও। কারণ সময় হলে পাহাড়িদের উপর নিষ্ঠুরতা দেখাতে কারো হাত কাঁপবে না।

ঠিক সেভাবেই এই বেজন্মা হিন্দু আর নাস্তিকদের নির্মূল করতেও মুসলমানদের হাত কাঁপবে না। হিন্দু বেজন্মার দল বোঝে না, এসব সুষুপ্ত পাঁঠাদের নিয়োগ দিয়ে তারা নিজেদের চিতায় নিজেরাই ঘি ঢালছে।








খাদিজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম আরবে শ্রেষ্ঠ ধণী ছিলেন

খাদিজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম আরবে শ্রেষ্ঠ ধণী ছিলেন

পৃথিবীর ইতিহাসে তৎকালীন সময়ে সমগ্র আরব জাহানে যত বড় ব্যবসায়ী ও বণিক ছিল, তার মূল কেন্দ্র বিন্দু ছিলেন উম্মুল মু’মিনীন হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত পিতাজান এবং টাকা পয়সায়, ধন-সম্পদে একমাত্র খ্যাতিসম্পন্ন, সুপরিচিত, এবং সম্মানিত একক ব্যক্তিত্ব। আর এই সম্মানিত ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের একমাত্র খ্যাতিসম্পন্না, পুত-পবিত্রা কন্যা ছিলেন উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুন্ নিসায়িল আলামীন হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি। উনার জ্ঞান-গরিমা, ধৈর্য-সহিষ্ণুতা, সততা, ন্যায়পরায়ণতা, উদারতা, সৌন্দর্যতা, বুদ্ধিমতিতা, ঐশর্য্যমণ্ডিতা, অপরূপ লাবণ্যতা, পুত-পবিত্রতা, অনুপম মুবারক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে লক্ষ্য করে সারা আরব জাহানের সবচেয়ে সম্পদওয়ালা ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের সুযোগ্য ব্যক্তিগণ স্বীয় পুত্রবধু হিসেবে উনাকে পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতার দ্বারে অপেক্ষমান ছিলেন।

একদা আবু তালিব উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুন্ নিসায়িল আলামীন হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার পণ্যদ্রব্য নিয়ে সিরিয়ায় যাওয়ার প্রাক্কালে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, হে আমার প্রাণ প্রতীম ভাতিজা! আমাদের খান্দানের অনেকে উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুন্ নিসায়িল আলামীন হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার ব্যবসার পণ্যদ্রব্য সিরিয়ায় নিয়ে গিয়ে সেখানে ব্যবসা করে তারা অনেকে জীবিকা নির্বাহ করছে এবং বিরাট লাভবান হচ্ছে। তাই আমারও ইচ্ছা যে আপনাকে অনেক সম্পদশালী রূপে গড়ে তুলতে। আর এ মুহূর্তে এ রকম কোনো ধন-সম্পদও আমার নেই যে, আপনাকে টাকা-পয়সা দিয়ে একটি উন্নত ব্যবসার ব্যবস্থা করবো। কাজেই যদি আপনি মনে কিছু না করেন তাহলে আমার সঙ্গে পণ্য নিয়ে সিরিয়ায় গেলে অনেক মুনাফা অর্জন করতে পারবেন। আরজি মুতাবিক হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কবুল করলেন। আর অপর পক্ষে উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুন্ নিসায়িল আলামীন হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি পূর্বই থেকে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ন্যায়-পরায়ণতা, উদারতা চরম ও পরম সাধুতা, সততা, সহিঞ্চুতা, নমনীয়তা, বিশ্বস্ততা এবং চারিত্রিক অনুপম বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলীর স্নিগ্ধতা যে, সারাবিশ্বকে বিমোহিত ও স্নিগ্ধ করে তুলে ছিলেন তা তিনি খুব ভালভাবেই জানতেন। হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক ছোহবত পাওয়ার জন্য অধিক আগ্রহে দিন গণনা করছিলেন। এমনি মূহুর্তে ব্যবসায় হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কাছে পেয়ে বিমুগ্ধ হয়ে উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুন্ নিসায়িল আলামীন হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সাদরে গ্রহণ করেন এবং ব্যবসার পণ্য দিয়ে ঘোষণা করলেন যে, অন্যান্যদেরকে যা মুনাফা দেয়া হয় তার চেয়ে আপনাকে দ্বিগুণ মুনাফা দেয়া হবে।

শুধু তাই নয়, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুন্ নিসায়িল আলামীন হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার একান্ত বিশ্বস্ত গোলাম হযরত মাইসারা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে দিয়ে দিলেন। আর কোনো প্রকার যেন বেয়াদবীপূর্ণ, ত্রুটিপূর্ণ আচরণ না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন।

কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুন্ নিসায়িল আলামীন হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি ব্যবসা-বাণিজ্যে ধন-সম্পদে সমগ্র আরব তথা গোটা জগতে ছিলেন অদ্বিতীয়া। তাই এই বিপুল ধন সম্পদের যথাযথ হিফাযতের ও সংরক্ষণের জন্য একজন যথার্থ উপযুক্ত রক্ষণশীল ব্যক্তিত্ব উনাকে অন্তর মুবারকে দীর্ঘদিন ধরে খুঁজছিলেন। এমনি যুগসন্ধিক্ষণে হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল. হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ন্যায়পরায়ণতা, বিচক্ষণতা, সততা, দায়িত্বশীলতা, সৌন্দর্যতা, দয়াদ্রতা, পরোপকারিতা, পরম পুত-পবিত্রতা পরম বিশ্বস্ততা এবং জীবনের সার্বিক অনুপম গুণাবলীর স্নিগ্ধতা শুধু আরব জাহানেই নয় গোটা কুল-কায়িনাতকে বিমুগ্ধ ও বিমোহিত করে তোলে এবং অতি অল্প সময়ে আরবদের অন্তরের গভীর কোঠা থেকে ভক্তিপূর্ণ শ্রদ্ধাপূর্ণ “কণ্ঠস্বর” হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আল্ আমীন তথা চরম ও পরম বিশ্বাসী মুবারক লক্ববে ভূষিত করেন।

হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যাবতীয় অনুপম মুবারক চরিত্রও ঐশ্বর্যমণ্ডিত গুণাবলীতে বিমুগ্ধ হয়ে উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুন্ নিসায়িল আলামীন হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনিস্বীয় ব্যবসার যাবতীয় বিষয়ের রক্ষণাবেক্ষণের মুবারক দায়িত্ব পালনের জন্য পয়গাম মারফত সবিনয় আবেদন করেন এবং প্রস্তাব দেন যে, অন্যান্যদেরকে যে মুনাফা দেয়া হয় তার দ্বিগুণ মুনাফা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেয়া হবে। হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এতে মুবারক সম্মতি জ্ঞাপন করলেন। তখন উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুন্ নিসায়িল আলামীন, হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার একান্ত বিশ্বস্ত গোলাম হযরত মাইসারা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে সাথে দিয়ে দিলেন এবং বিশেষ খিদমতে থাকার জন্য মুবারক নির্দেশ দিলেন। তবে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এমন নিপুনতা ও সুদক্ষতার সহিত সমস্ত পণ্যদ্রব্য বিক্রয় করলেন, কিন্তু দেখা গেল যে, অন্যান্য বারের তুলনায় এবার বহুগুণে বেশি মুনাফা অর্জিত হল। যা আরব ব্যবসায়িক ইতিহাসে অদ্বিতীয়।

ইতোমধ্যেইহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক সঙ্গী হওয়ার সৌভাগ্যতায় হযরত মাইসারা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নিজেকে ধন্য মনে করেন। পথিমধ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক অনেক অলৌকিক ঘটনা চাক্ষুস দেখতে পান। যা মানুষের জন্য অস্বাভাবিক ও অসাধারণ। তাছাড়া সিরিয়া যাওয়ার পথে একগাছের নিচে মুবারক বিশ্রামের সময় সেখানে এক রাহিব হযরত মাইসারা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন তিনি কে?

জবাবে তিনি বলেন, তিনি হচ্ছেন মক্কা মুয়ায্যামার সুসম্মানিত অধিবাসী সম্মানিত ও সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশের একজন সম্ভ্রান্ত যুবক। ‘আল আমীন’ বলে সকলের নিকট তিনি সুপরিচিত। হযরত মাইসারা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জবাব শুনে রাহিব বলে উঠলো তিনি অবশ্যই ভবিষ্যতে আখিরী নবী হবেন এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। উনার এরূপ ভবিষ্যদ্বাণী করার মূল রহস্য হলো, অতীতে আসমানী কিতাবের বর্ণনা অনুযায়ী সমস্ত মুবারক আলামতসমূহ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরানী চেহারা মুবারকে চমকাচ্ছিল বলেই।