পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার ২৭ তারিখ রাতে মহান আল্লাহ পাক উনার প্রিয়তম রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বশরীর মুবারক-এ মহান আল্লাহ পাক উনার দিদার মুবারক-এ যান। তাই রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার ২৭ তারিখ রাত হচ্ছে পবিত্র লাইলাতুল মিরাজ শরীফ বা শবে মিরাজ শরীফ উনার রাত। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা এবং অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা পবিত্র মিরাজ শরীফ প্রমাণিত। উনার শান-মান, ইজ্জত ঐতিহ্য, বুযূর্গী ও মর্যাদা এত অধিক যে, যা বর্ণনা করার ভাষা মানুষের নেই। এক কথায় বলা যায় যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথেই সংশ্লিষ্ট হওয়ার কারণে পবিত্র মিরাজ শরীফ উনার শান-মান, বুযূর্গী, মর্যাদা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহান শান-মান ও মর্যাদা উনাদের অনুরূপ। পবিত্র মিরাজ শরীফ উনার দিবাভাগে রোযা রাখার ব্যাপারে অসংখ্য হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে এবং মিরাজ শরীফ উপলক্ষ্যে ২৭শে রজব তারিখের রোযার অসংখ্য ফাযায়িল-ফযীলতও পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। যা গুনাহখতা মাফ ও ক্ষমা, মর্যাদা বৃদ্ধি, অসংখ্য ফযীলত ও নাযাতের কারণও বটে।
এ প্রসঙ্গে ওলীয়ে মাদারজাত, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী, গাউছে সামদানী, মাহবুবে ইলাহী, মুজাদ্দিদে যামান, গাউছুল আযম, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস্ সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত, আওলাদুর রসূল সাইয়্যিদ মহিউদ্দিন আব্দুল কাদির জিলানী বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তার বিশ্বখ্যাত কিতাব “গুন্ইয়াতুত তালিবীন” নামক কিতাবে শবে মিরাজ-এর তথা রজব মাসে ২৭ তারিখের রোযার ফযীলত সম্পর্কে হাদীছ শরীফগুলো বর্ণনা করেন। যেমন-
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه عـن النبى صلى الله عليه وسلم قال من صام يوم السابع والعشرين من رجب كتب له ثواب صيا م ستين شهرا.
অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার ২৭ তারিখে তথা শবে মিরাজ শরীফ উনার দিবাভাগে রোযা রাখবে তার আমলনামায় ৬০ মাসের রোযা রাখার ছওয়াব লেখা হবে। (সুবহানাল্লাহ) (আল ইতহাফ ৫ম খণ্ড পৃষ্ঠা ২০৮, আল মা’য়ানী আনিল হামলিল ইসফার প্রথম খণ্ড ৩৬৭ পৃষ্ঠা, গুনিয়াতুত তালিবীন, ক্বিসমুস ছায়ালিস ৩৩২ পৃষ্ঠা)
এ প্রসঙ্গে উক্ত কিতাবে আরো বর্ণিত আছে,
عن ابى هريرة رضى الله عنه وسلمان الفارسى رضى الله عنه قالا قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان فى رجب يوما و ليلة من صام ذالك اليوم وقام تلك اليلة كان له من الاجر كمن صام مأة سنة وقامهما وهى لثلاث بقين من رجب.
অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত সালমান ফারিসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের উভয়েই বর্ণনা করেন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার এমন একটি দিন ও রাত আছে ওই রাত্রে যে ব্যক্তি ইবাদত-বন্দিগী করবে এবং দিবাভাগে রোযা রাখবে তার আমলনামায় ওই পরিমাণ ছওয়াব লেখা হবে যে পরিমাণ ছওয়াব কোন ব্যক্তি একশত বছর রাতে ইবাদত-বন্দিগী করলে এবং একশত বছর দিনের বেলায় রোযা রাখলে তার আমলনামায় যেরূপ ছওয়াব লেখা হয়। আর সেই মুবারক রাত ও দিনটিই হচ্ছে রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার ২৭ তারিখ তথা পবিত্র শবে মি’রাজ শরীফ উনার রাত ও দিনটি।” (সুবহানাল্লাহ)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ খাদিম হযরত ছাওবান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে মুসলমান নর ও নারী রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার মধ্যে একদিন রোযা রাখবে এবং একরাত ইবাদত করবে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার আমলনামায় পূর্ণ এক বছর দিনে রোযা রাখার ও রাতে ইবাদত করার ছাওয়াব লিখে দিবেন। সুবহানাল্লাহ।
উল্লিখিত হাদীছ শরীফ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, পবিত্র শবে মি’রাজ শরীফ উনার রাত্রিতে ইবাদত-বন্দিগী করা এবং দিবাভাগে রোযা রাখা খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। এ প্রসঙ্গে আরো অসংখ্য হাদীছ শরীফ রয়েছে।
অথচ কিছু বিদয়াতী রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার মধ্যে রোযা রাখার বিরোধিতা করে থাকে। তারা দলীল হিসেবে যে হাদীছ শরীফখানা পেশ করে তাহলো-
“হযরত খারশাতা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনাকে দেখেছি যে, তিনি এক ব্যক্তিকে রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার মধ্যে রোযা রাখার কারণে তার হাতে বেত্রাঘাত করেছেন যতক্ষণ পর্যন্ত সে ব্যক্তি রোযা ভঙ্গ না করেছে।”
মূলতঃ বিদয়াতীরা উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সঠিক ব্যাখ্যা না জানার কারণেই বিভ্রান্তিতে পড়েছে। উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সঠিক ব্যাখ্যা হলো- জাহিলিয়াতের যুগে যিলহজ্জ শরীফ মাস ও রজবুল হারাম শরীফ মাস উনাদের মধ্যে কুরবানী করা হতো এবং রোযাও রাখা হতো। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যিলহজ্জ শরীফ মাস উনার কুরবানী ও রোযা বহাল রেখেছেন আর রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার কুরবানী ও কুরবানী উপলক্ষ্যে যে রোযা রাখা হতো যাকে রজবিয়া বলা হতো তা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।
হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি যে ব্যক্তিকে বেত্রাঘাত করেছেন সে জাহিলিয়াত যুগের রসম অনুযায়ী রজবিয়া রোযা রেখেছিল। তাই তিনি তার রোযা ভাঙ্গতে বাধ্য করেন। নচেৎ হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার কি একথা জানা ছিল না যে, বছরের মাত্র পাঁচ দিন রোযা রাখা ইসলামী শরীয়ত উনার মধ্যে নিষিদ্ধ।” এছাড়া বছরের যে কোন দিন বা মাসে রোযা রাখা জায়িয। যদি তাই হয়ে থাকে তবে অসংখ্য হাদীছ শরীফ দ্বারা রজছুল হারাম শরীফ মাস উনার রোযা রাখা প্রমাণিত হওয়ার পরও তিনি কেন তাকে রোযা রাখতে নিষেধ করবেন।
কাজেই যেসব নামধারী আলিম তথা উলামায়ে সূ’রা পবিত্র শবে মি’রাজ শরীফ উপলক্ষ্যে রোযা রাখাকে বিদ্্য়াত ও গুনাহের কাজ বলে তাদের উক্ত সমস্ত কথা ও কাজগুলো পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ তথা ইসলামী শরীয়ত উনার বিরোধী, মনগড়া, বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর, ভিত্তিহীন ও কুফরীমূলক। অর্থাৎ সেসব নামধারী আলিম তথা উলামায়ে সূ’রা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে বিদ্য়াত বলে মূলত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে অস্বীকার করে থাকে। আর পবিত্র হাদীছ শরীফ যেহেতু পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ন্যায় ওহীর অন্তর্ভুক্ত। কাজেই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে অস্বীকার করার অর্থই হচ্ছে পবিত্র কুরআন শরীফ উনাকে অস্বীকার করা। যা কাট্টা কুফরী।
ইসলামী শরীয়ত উনার মূল উছূল হচ্ছে- কোন মুসলমান যদি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে অস্বীকার করে, বিদ্য়াত বলে কিংবা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে, সে ঈমান থেকে খারিজ হয়ে কাট্টা কাফির ও মুরতাদে পরিণত হবে।
আর মুরতাদের হুকুম হচ্ছে- সে যদি বিয়ে করে থাকে তাহলে তার স্ত্রী তালাক হবে, হজ্জ করে থাকলে তা বাতিল হবে, সমস্ত নেক আমল বরবাদ হবে। এ অবস্থায় মারা গেলে তার গোসল কাফন-দাফন এবং জানাযা কোনটাই করা জায়িয হবে না। এবং তাকে কোন মুসলমানদের করবস্থানেও দাফন করা যাবে না। তাকে কুকুর, শৃগালের ন্যায় গর্তে পুঁতে রাখতে হবে। আর যদি সে ইমাম বা খতীব হয়ে থাকে, তাহলে মুসলমান হিসেবে মুছল্লীদের দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে উক্ত ইমাম ও খতীবকে ইমাম ও খতীবের পদ থেকে বহিস্কার করে এলাকাবাসীর সকল মুছল্লীদের ঈমান আক্বীদা হিফাযত করা। এরূপ কুফরীমূলক ফতওয়া দেয়ার পর থেকে তার পিছনে নামায-কালাম পড়া কোনটাই জায়িয হবে না। যদি কেউ তার পিছনে নামায আদায় করে থাকে তাহলে মুছল্লীদের দায়িত্ব-কর্তব্য হবে সমস্ত নামায দোহরায়ে পড়া। যা ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। (ফতওয়ায়ে শামী, আলমগীরী, বাহরুর রায়েক, আইনী ইত্যাদি ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহ)
0 Comments:
Post a Comment