হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নিজেই নিজের বিলাদত শরীফ উনার আলোচনা মুবারক করেছেন।13
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, ‍হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নিজেই নিজের বিলাদত শরীফ উনার আলোচনা মুবারক করেছেন।
=================================================
উত্তর: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই উনার সুমহান বিলাদত শরীফ সর্ম্পকে আলোচনা করেছেন-
দেশের সকল মাদ্রাসাসমূহে পঠিত হাদীছ শরীফ-এর বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাব “মেশকাতুল মাছাবীহ এর ৫১৩ পৃষ্ঠায় “ ফাযায়েলে সাইয়্যিদুল মুরসালীন ” নামক অধ্যায়ে উল্লেখ আছে,
عن حضرت عرباض بن سارية رضى الله تعالى عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال انى عبد الله وخاتم النبيين وان آدم لمنجدل فى طينته وسأخبركم عن ذلك دعوة أبى ابراهيم عليه السلام وبشارة حضرت عيسى عليه السلام ورؤيا امى التى رأت، وكذلك امهات النبيين يرين، وأن ام رسول الله صلى الله عليه وسلم رأت حين وضعته نورا أضاءت له قصور الشام
অর্থ: “হযরত ইরবাজ ইবনে সারিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আমি তখন থেকে আল্লাহ পাক উনার আবদ তথা হাবীব এবং আমি খাতামুন নাবিইয়ীন তথা আখিরী নবী নিশ্চয়ই যখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি মৃত্তিকায় অবস্থান করছিলেন। তোমাদের নিকট খবর পৌঁছেছে ওই ব্যাপারে যে আমি হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার দোয়া মুবারক, আমি হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সুসংবাদ এবং আমি আমার মা (হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম) উনার স্বপ্ন মুবারক। যা আমার সম্মানিত মা জননী তিনি মুবারক স্বপ্ন দেখেছেন অনুরূপ স্বপ্ন হযরত নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের জননীগণ উনারাও দেখেছিলেন। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর ক্ষনে উনার সম্মাণিত মা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি এক নূর মুবারক দেখতে পান। সেই নূর মুবারক-এর আলোয় শাম তথা সিরিয়ার রাজ প্রাসাদ আলোকিত হয়েছিলো। সুবহানাল্লাহ!
(সহীহ ইবনে হিব্বান: হাদীস ৬৪০৪, মুসতাদরেকে হাকীম: হাদীস ৩৬২৩, সিয়ারু আলামীন আননুবুলা পৃষ্ঠা ৪৬, মুসনাদে তয়লাসী: হাদীস ১২৩৬, মুসনাদে বাযযার ৪১৯৯, দালায়েলুন নুবুওওয়াত-১ম খন্ডের ৮৩ পৃষ্ঠা ,শোয়াবুল ঈমান-২য় জিঃ, ১৩৪ পৃষ্ঠা, শরহুসসুন্নাহ ও মসনদে আহমাদ)
নিম্নে কতিপয় কিতাবের নাম দেয়া হলো:
1. দালায়েলুন নবুওয়াত লি ইমাম বায়হাক্বী 
2. সহীহ ইবনে হিব্বান
যেখানে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই নিজের পবিত্র বিলাদত শরীফ উনার আলোচনা মুবারক করেছেন, সেখানে আমরা করলে এটা বিদয়াত হবে কেন?
পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পূর্ণ সুন্নাহ শরীফ সম্মত একটি আমল
=================================================Related image
ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নতুন কোন আমল নয়। জেনে রাখুন স্বয়ং আখেরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই উনার বিলাদত শরীফ আলোচনা করেছেন।
পবিত্র সহীহ হাদীস শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে,
عن ابن عمر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم ان الله خلق الخلق فاختار من الخلق بنى ادم عليه السلام، واختار من بين ادم العرب، واختار من العرب مضر، واختار من مضر قريشا، واختار من قريش بنى هاشم، واختارنى من بنى هاشم فانا من خيار الى خيار
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন মাখলূক সৃষ্টি করেন তখন সব মাখলুকের মধ্যে বনী আদম উনাদেরকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে মনোনীত করেন। বনী আদমের মধ্যে আরবকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে পছন্দ করেন। আরবের মধ্যে মুদ্বারকে, মুদ্বারের মধ্যে কুরাইশকে, কুরাইশ-এর মধ্যে বনী হাশিমকে এবং বনী হাশিম-এর মধ্যে আমাকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে মনোনীত করেন। নিশ্চয়ই আমি সর্বোত্তমের মধ্যে সর্বোত্তম। সুবহানাল্লাহ!
(বায়হাক্বী শরীফ, ত্ববরানী শরীফ, খাছায়িছুল কুবরা, আবূ নায়ীম)
عن العباس رضى الله تعالى عنه انه جاء الى النبى صلى الله عليه و سلم فكانه سمع شيئا فقام النبي صلى الله عليه و سلم على المنبر فقال من انا ؟ فقالوا انت رسول الله فقال انا محمد بن عبد الله بن عبد المطلب عليهما السلام. ان الله خلق الخلق فجعلنى فى خيرهم ثم جعلهم فرقتين فجعلنى فى خيرهم فرقة ثم جعلهم قبائل فجعلنى فى خيرهم .قبيلة ثم جعلهم بيوتا فجعلنى فى خيرهم بيتا فانا خيرهم نفسا وخيرهم بيتا
অর্থ: হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, একদা আমি রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সমীপে উপস্থিত ছিলাম। ইতোপূর্বে কোনো কোনো লোক আমাদের বংশ মর্যাদা সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেছিলো। সম্ভবত এ সংবাদ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক কর্ণগোচর হয়েছিলো। এ সময় উনার দরবার শরীফ-এ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন। তিনি মিম্বর শরীফ উনার মধ্যে আরোহণ করতঃ উপস্থিত লোকদের জিজ্ঞাসা করলেন, “আমি কে?” তখন সকলে সমস্বরে উত্তর দিলেন, “আপনি হলেন মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল।” অতঃপর তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, “আমি হচ্ছি হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যিনি হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পুত্র, হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার পৌত্র। মহান আল্লাহ পাক আমাকে কুল-মাখলূকাতের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম, মাখলূকাতের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম গোত্র কুরাইশ খান্দানে এবং কুরাইশ গোত্রের বিভিন্ন শাখার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হাশেমী শাখায় এবং মহান আল্লাহ পাক উনার কায়িনাত মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ ঘর মুবারক এ আমাকে প্রেরণ করেছেন।” (তিরমীযী শরীফ: হাদীস শরীফ ৩৫৩২, মুসনাদে আহমদ: হাদীস ১৭৯১ মিশকাত, মিরকাত, ১১/৫৭, আহমদ, কানযুল উম্মাল/২১৯৪৭)
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ اللهَ قَسَّمَ الْـخَلْقَ قِسْمَيْنِ فَجَعَلَنِىْ فِىْ خَيْرِهِـمَا قِسْمًا ثُـمَّ جَعَلَ الْقِسْمَيْنِ اَثْلَاثًا فَجَعَلَنِىْ فِىْ خَيْرِهَا ثُلُثًا ثُـمَّ جَعَلَ الْاَثْلَاثَ قَبَائِلَ فَجَعَلَنِىْ فِىْ خَيْرِهَا قَبِيْلَةً ثُـمَّ جَعَلَ الْقَبَائِلَ بُيُوْتًا فَجَعَلَنِىْ فِىْ خَيْرِهَا بَيْتًا فَذٰلِكَ قَوْلُهٗ تَعَالـٰى اِنَّـمَا يُرِيْدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ اَهْلَ الْبَيْتِ وَيُـطَـهِّـرَكُـمْ تَطْهِيْراً فَاَنَا وَاَهْلُ بَيْتِىْ مُطَهَّرُوْنَ مِنَ الذُّنُوْبِ.
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত সৃষ্টিকে দু’ভাগে বিভক্ত করে আমাকে সর্বোত্তম ভাগে রেখেছেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর উভয় ভাগকে তিন প্রকারে বিভক্ত করে আমাকে সর্বোত্তম প্রকারে রেখেছেন। সুবহানাল্লাহ! এরপর প্রত্যেক প্রকারকে গোত্রে গোত্রে বিভক্ত করে আমাকে সর্বোত্তম গোত্র মুবারক-এ রেখেছেন। সুবহানাল্লাহ! তারপর গোত্রকে সম্মানিত আহাল বা পরিবার মুবারক-এ বিভক্ত করে আমাকে সর্বোত্তম মহাসম্মানিত আহাল বা পরিবার মুবারক-এ রেখেছেন। সুবহানাল্লাহ! এ কারণেই মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, ‘হে মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম! নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি চান আপনাদের থেকে সমস্ত প্রকার অপবিত্রতা দূর করে পবিত্র করার মতো পবিত্র করতে। অর্থাৎ তিনি আপনাদেরকে পবিত্র করার মতো পবিত্র করেই সৃষ্টি মুবারক করেছেন।’ সুবহানাল্লাহ! আর আমি এবং আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা অর্থাৎ আমরা সকলেই যুনূব তথা সমস্ত প্রকার ছগীরা-কবীরা এবং যাবতীয় অপছন্দনীয় কাজ থেকে পূত-পবিত্র।” সুবহানাল্লাহ! (দালায়িলুন নুবুওওয়াহ লিল বায়হাক্বী, আশ শিফা ১/৩২৫, সীরাতে হালবিয়্যাহ ১/৪২, আল মা’রিফাতু ওয়াত তারীখ ১/৪৯৮, খছাইছুল কুবরা ১/৬৬, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১/২৩৫ ইত্যাদি)
সুতরাং সহীহ হাদীস শরীফ থাকার পরও যারা বিরোধীতা করে, সুন্নতকে বিদয়াত বলে তাদের ঈমান অছে কিনা আপনাদের কাছে প্রশ্ন রইলো…….!
স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ পালন করেছেন।
=================================================
সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ তথা সর্বশ্রেষ্ট ঈদ,ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা কখনোই বিদয়াত বা নতুন বিষয় নই, যারা বিদয়াত বলে, তারা তাদের জিহালতের কারনেই বলে থাকে।
মূলত সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই উনার ঈদে মীলাদে (হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পালন করেছেন। উনার পবিত্র বিলাদত শরীফের বার হচ্ছে ইয়াওমুল ইছনাইন বা সোমবার। এই দিনে শুকরিয়া আদায় করে তিনি রোজা রাখতেন। অর্থাৎ মীলাদে হাবীবী (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পালন করেছেন।
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـيْ قَتَادَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ بِـهٰذَا الْـحَدِيْثِ زَادَ قَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَرَاَيْتَ صَوْمَ يَوْمِ الْاِثْنَيْنِ وَيَوْمِ الْـخَمِيْسِ قَالَ ‏فِيْهِ وُلِدْتُّ وَفِيْهِ اُنْزِلَ عَلَىَّ الْقُرْاٰنُ.
অর্থ : “হযরত আবূ ক্বাতাদা আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইয়াওমুল ইছলাইনিল আযীম শরীফ ও ইয়াওমুল খ¦মীস রোযা রাখার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলো, তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন যে, এদিন (ইয়াওমুল ইছলাইনিল আযীম শরীফ) আমি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছি, আর এদিনই আমার উপর ওহী মুবারক বা পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল হয়েছে।” (মুসলিম শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২৮০৭, আবূ দাঊদ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২৪২৮, সুনানে কুবরা লি বায়হাক্বী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৮২১৭, ইবনে খুজাইমা শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২১১৭, মুসনাদে আবি আওয়ানা : হাদীছ শরীফ নং ২৯২৬, মুসনাদে আহমদ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২২৬০৩)
অত্র পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার থেকে জানা যায় যে, পবিত্র সোমবার শরীফ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক ও আনুষ্ঠানিকভাবে নুবুওওয়াত মুবারক প্রকাশ লাভের দিন। এই দিনে রোযা রাখার ইঙ্গিত অত্র পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে।
এর থেকেও প্রমাণিত হয় যে, বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের দিন এবং বরকতী বিশেষ দিন সমূহের দিন খুশি প্রকাশ করা বা তা পালন করতে হবে। কারন স্বয়ং হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই উনার আগমনের বারে শুকরিয়া আদায় করে রোজা রাখতেন। হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন উপলক্ষে নিজেই নিজের আগমন দিবস পালন করেছেন।
আর এই রোজা রাখাকে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ পালনের ভিত্তি হিসাবে সাব্যস্ত করেছেন যুগশ্রেষ্ঠ ইমাম হযরত জালালুদ্দীন সূয়ূতি রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। নিম্নে সে দলীল উল্লেখ করা হয়েছে:
“আর স্থান ও কালের ফযীলতের ভিত্তি হচ্ছে ওইগুলোতে সম্পনকৃত ইবাদতসমূহ, যেগুলো আল্লাহ্ পাক ওইগুলোর সাথে, অর্থাৎ ওই কাল ও স্থানগুলোর সাথে নির্দিষ্ট করেছেন। কেননা, একথা সর্বজন বিদিত যে, স্থান ও কালের মহত্ব (বুযুর্গী) তো (কখনো) ওইসব সত্তা থেকে হয় না বরং সেগুলোর এসব বুযুর্গী ওইগুলোর অভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্যাদি (অথবা সম্পর্ক ইত্যাদি)’র কারণেই অর্জিত হয়ে থাকে, যেগুলোর সাথে এ স্থান ও কাল নির্দিষ্ট হয়ে থাকে। এখন আপনারা ওইসব বৈশিষ্ট্য ও বরকতরাজি দেখুন, যেগুলো আলাহ্ তা‘আলা রবিউল আউয়াল মাস ও সোমবারের সাথে নির্দিষ্ট করেছেন। আপনি কি দেখেননি যে, সোমবার রোযা রাখলে বড় ফযীলত রয়েছে? কেননা, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার বেলাদত শরীফ এ দিনে হয়েছে। সুতরাং যখন এ মাস আসে, তখন এ মাসের উপযোগী সম্মান প্রদর্শন ও গুরুত্ব প্রদান করা, আর নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম –উনার অনুসরণ করা উচিৎ। কারণ, উনার পবিত্র অভ্যাস ছিলো যে, তিনি ফযীলতমণ্ডিত সময়গুলোতে বেশী ইবাদত করতেন এবং অধিক পরিমাণে দান-খায়রাত করতেন।
প্রসঙ্গে আমি (ইমাম জালাল উদ্দীন সুয়ূত্বী) ও মীলাদের (বৈধতার) জন্য একটি মূলনীতি বের করেছি। তাহচ্ছে- ইমাম বায়হাক্বী (রহমতুল্লাহি আলাইহি) হযরত আনাস রাদ্বিয়ালাহু তা‘আলা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেছেন, নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নুবূয়ত মুবারক প্রকাশের পর নিজের আক্বীক্বা মুবারক করেছেন, অথচ উনার সম্মানিত দাদা হযরত আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার বেলাদত শরীফের সপ্তম দিনে উনার আক্বীকা মুবারক করেছিলেন। আর আক্বীক্বা দ্বিতীয়বার করা যায় না। সুতরাং এই আক্বীকা মুবারকের কারণ এটা বলা যাবে যে, তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া আদায় করার জন্য তা করেছেন যে, তিনি তাঁকে‘রাহমাতাল্লিল আ-লামীন’ (সমস্ত বিশ্বের জন্য রহমত) করেছেন এবং উম্মতের জন্য উনার বেলাদত শরীফের উপর আলাহর শোকর আদায় করাকে শরীয়তসম্মত করার জন্য পুনরায় আক্বীক্বা মুবারক করেছেন।
যেমন তিনি স্বয়ং নিজের উপর দুরূদ পাঠ করতেন। সুতরাং আমাদেরও উচিত হবে মীলাদে পাকে লোকজনকে জমায়েত করে, তাদেরকে খানা খাইয়ে এবং অন্যান্য বৈধপন্থায় খুশী মুবারক প্রকাশ করে মহামহিম আল্লাহ পাক পাক উনার শুকরিয়া আদায় করা।
হযরত ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি পবিত্র আশুরা শরীফ উনার দুই রোজাকে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের ভিত্তী হিসাবে দলীল দিয়েছেন। তিনি বলেছেন শুকরিয়া স্বরূপ এ রোজা রাখা হয়। মহান আল্লাহ পাক উনার নিয়ামতের শুকরিয়া বিভিন্ন ভাবে করা যায়। রোজা রেখে, সিজদা করে, তিলওয়াত করে, দান ছদকা করে। আর হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন সবচাইতে বড় নিয়ামত মুবারক।” (হুসনুল মাকাছিদ ফি আমালিল মাওলিদ ৬৩, আল হাবী লিল ফতওয়া ১০৫, সুবহুল হুদা ওয়ার রাশাদ ১ম খন্ড ৩৬৬ পৃষ্ঠা, হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন ২৩৭ পৃষ্ঠা)
সূতরাং উপরোক্ত আলোচনা থেকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাওয়ার কারনে খুশী মুবারক প্রকাশ করে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা বিদয়াত তো নয়ই বরং খাছ সুন্নাত মুবারক হিসেবেই প্রমানিত হলো।
Related imageপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ তথা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে উনার জন্য খুশি মুবারক প্রকাশ তথা ঈদ পালন করা ফরজ, এ বিষয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার দলীল।
=================================================
পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ তথা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে উনার জন্য খুশি মুবারক প্রকাশ করা তথা ঈদ পালন করা ফরজ।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, শাফেউল মুজনেবীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি হচ্ছেন সমস্ত কায়িনাত বা সৃষ্টি জগতের মূল উৎস। তিনি মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার সকল নিয়ামত মুবারক উনার উৎস। উনার সন্তুষ্টি মুবারক ব্যতিত মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক কখনোই পাওয়া সম্ভব নয়। উনাকে যে ব্যক্তি মুহব্বত মুবারক করে মহান আল্লাহ পাকে তাকে মুহব্বত করেন। আর উনাকে মুহব্বত মুবারক না করে কারো পক্ষে মু’মিন হওয়া কষ্মিনকালেও সম্ভব নয়।
এই বিষয়ে পবিত্র হাদীস শরীফ উনার মধ্যে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন-
 
لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَلَدِهِ وَوَالِدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ وفي رواية من ماله و نفسه
অর্থ: “কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবেনা যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার পিতা-মাতা, সন্তান সন্তুতি, এবং সমস্ত মানুষ অপেক্ষা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বেশি মুহব্বত না করবে। অন্য বর্ননায় এসেছে, তার ধন সম্পদ এবং জীবনের চাইতে বেশি মুহব্বত না করবে।”
(বুখারী শরীফ ১/৭-কিতাবুল ঈমান- হাদীস নম্বর ১৪ এবং ১৫)
এই পবিত্র সহীহ হাদীস শরীফ থেকেই বুঝা গেলো, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সবকিছুর চাইতে বেশি মুহব্বত করাই হচ্ছে ঈমান। আর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বতে উনার আগমন উপলক্ষে খুশি মুবারক প্রকাশ করাটাই হচ্ছে ঈমানদাগণ উনাদের বৈশিষ্ট্য। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন উপলক্ষে খুশি মুবারক প্রকাশ করেন স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই, খুশি প্রকাশ করেন সকল ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ উনারা, এক কথায় সমস্ত সৃষ্টি জগৎ।
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উনার দিন সব চাইতে বেশি কষ্ট পেয়েছিলো কে জানেন? সব চাইতে বেশি কষ্ট পেয়েছিলো ইবলিশ শয়তান । সে এতোটাই কষ্ট পেয়েছিল যে, কষ্টে সে রীতিমত কান্না করছে।
حكى السهيلي عن تفسير بقي بن مخلد الحافظ : أن إبليس رن أربع رنات; حين لعن ، وحين أهبط ، وحين ولد رسول الله صلى الله عليه وسلم ، وحين أنزلت الفاتحة
“শয়তান চার বার উচ্চস্বরে কেঁদেছিল ,প্রথম বার যখন মহান আল্লাহ তায়ালা তাকে অভিশপ্ত আখ্যা দেন; দ্বিতীয়বার যখন তাকে বেহেস্ত থেকে বের করে দেয়া হয়। তৃতীয়বার, যখন হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেলাদত(আগমণ) শরীফ হয়। এবং চতুর্থবার যখন সূরা ফাতেহা শরীফ নাযেল হয়।”
(দলীল: আল-বেদায়া ওয়ান নেহায়া-২য় খণ্ড ২৬৬, ২৬৭,পৃষ্ঠা লেখক: আবুল ফিদা হাফিজ ইবনে কাছির আদ দামেষ্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি। প্রকাশনা: মাকতাবাতুল মা’রেফা, বয়রুত লেবানন।)
‘ঈদ’(عيد) অর্থ খুশি বা আনন্দ প্রকাশ করা। আর ‘মীলাদ’(ميلاد) অর্থ জন্মের সময় বা দিন। ‘আন নাবিইয়্য’(النبى) শব্দ দ্বারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বুঝানো হয়। কাজেই আভিধানিক অর্থে ‘ঈদু মীলাদিন নাবিইয়ি’(عيد ميلاد النبى) বলতে নূরে মুজাসসাম,হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-উনার সম্মানার্থে বেলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি মুবারক প্রকাশ করাকেই বুঝায়।
আর পারিভাষিক অর্থে ‘ঈদে মীলাদুন নবী’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ দিবস উপলক্ষে খুশি মুবারক প্রকাশ করা, উনার ছানা-ছিফত, ফাযায়িল-ফযীলত, শান-মান মুবারক বর্ণনা করা, উনার প্রতি ছলাত-সালাম ও তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করা, উনার পূত পবিত্রতম জীবনী মুবারক-উনার সামগ্রিক বিষয়ের আলোচনা মুবারক কে বুঝায়।
এবার দেখুন মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন প্রসঙ্গে মু’মিন মুসলমানদের কি আদেশ মুবারক করেছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْـمَتِهٖ فَبِذٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوْا هُوَ خَيْرٌ مّـمَّا يَـجْمَعُوْنَ
অর্থ : হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আপনি উম্মাহকে বলে দিন , মহান আল্লাহ পাক উনার অনুগ্রহ ও রহমত( হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুবারক উনার সজন্য তারা যেন খুশি প্রকাশ করে। এ খুশি প্রকাশ করাটা সবচাইতে উত্তম, যা তারা সঞ্চয় করে রাখে !” (পবিত্র সূরা ইউনূছ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৮)
উক্ত আয়াত শরীফ উনার তাফসিরে বিখ্যাত মুফাসসির, সমগ্র মাদ্রাসায় যিনার তাফসীর পড়ানো হয়, হাফিযে হাদীস, আল্লামা জালালুদ্দীন সূয়ূতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন–
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ فِي الْاٰيَةِ فَضْلِ اللهِ اَلْعِلْمُ وَ رَحْـمَتِه مُـحَمَّدٌ صَلَّي اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اللهُ تَعَالٰي وَمَا اَرْسَلْنَاكَ اِلَّا رَحْـمَةً لّلْعٰلَمِيْنَ
অর্থ : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, এ আয়াত শরীফের তাফসিরে এখানে আল্লাহ পাক উনার অনুগ্রহ বলতে ‘ইলিম’ বুঝানো হয়েছে। আর রহমত দ্বারা বুঝানো হয়েছে ‘হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ উনাকে। যেমন, আল্লাহ পাক বলেন, আমিতো আপনাকে তামাম আলমের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরন করেছি।”
দলীল-
√তাফসীরে দূররুল মানছুর –১০নংসূরা–১১পারা- সূরা ইউনূছ ৫৮আয়াত।
√তাফসীরে রুহুল মা’য়ানী।
√তাফসীরে কবীর।
তাফসীরে রূহুল মায়ানী ৬ষ্ঠ খন্ড ১৪১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ্য রয়েছে,
اخرج ابو الشيخ عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنهما ان الفضل العلم و الرحمة محمد صلى الله عليه و سلم
অর্থ: হযরত আবুশ শায়েখ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত “নিশ্চয়ই “ফদ্বল” দ্বারা উদ্দেশ্য ইলম, আর ‘রহমত’ দ্বারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।”।
তাহলে দেখা যাচ্ছে ঈদ পালন করাটা মহান আল্লাহ পাক উনারই আদেশ। আর আদেশ সূচক বাক্য দ্বারা ফরজ এবং ওয়াজিব সাব্যস্ত হয়।
এই বিষয়ে ঊছুলে ফিক্বাহ উনার সমস্ত কিতাবেই উল্লেখ আছে যে,
الامر للوجوب
অর্থাৎ আদেশসূচক বাক্য দ্বারা সাধারণত ফরয-ওয়জিব সাব্যস্ত হয়ে থাকে। যেমন উছুলুশ শাশী কিতাবের ‘কিতাবুল্লাহ’ অধ্যায়ের ‘আমর’ পরিচ্ছেদে বর্ণিত আছে,
والصحيح من المذهب ان موجبه الوجوب
অর্থ: “ আমাদের হানাফী মাযহাবের বিশুদ্ধ মত হলো- নিশ্চয় কুরআন শরীফ- এর আমর বা নিদর্শনগুলো পালন করা ফরজ বা ওয়াজিব। যেমন পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
اقيموا الصلوة
অর্থাৎ “তোমরা নামায আদায় করো।” পবিত্র কুরআন শরীফ উনার এ নির্দেশসূচক বাক্য দ্বারাই পবিত্র নামায ফরয সাব্যস্ত হয়েছে।
অনুরূপ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
واعفوا للحى
অর্থাৎ “তোমরা (পুরুষরা) দাড়ি লম্বা করো।” পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার এ নির্দেশসূচক বাক্য দ্বারাই কমপক্ষে এক মুষ্ঠি পরিমাণ দাড়ি রাখা ফরয সাব্যস্ত হয়েছে।
তদ্রুপ সূরা ইউনূছ শরীফ উনার ৫৮নং আয়াত শরীফ উনার فليفرحوا বা খুশি মুবারক প্রকাশ করা বা ঈদ পালন করো এটা আদেশ সূচক বাক্য। এ আদেশ মুবারক এর দ্বারাই খুশি মুবারক প্রকাশ করা বা ঈদ পালন করা ফরজ ও ওয়াজিব প্রমানিত হয়। সুবহানাল্লাহ্ !
এছাড়াও পবিত্র কুরআন শরীফ উনার অনেক জায়গায় মহান আল্লাহ পাক ঈদ পালন করতে বলেছেন, উনার প্রদত্ত নিয়ামতক মুবারক স্মরন করতে বলেছেন। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
اذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ
অর্থ :“তোমাদের যে নিয়ামত দেয়া হয়েছে, তোমরা সে নিয়ামতকে স্মরন কর।” (সূরা আল ইমরান শরীফ: পবিত্র  আয়াত  শরীফ ১০৩)
প্রশ্ন হচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক উনার সবচাইতে বড় নিয়ামত কি ?
এ ব্যাপারে সমস্ত জগৎবাসী একমত যে, মহান আল্লাহ পাক উনার সবচাইতে বড় নিয়মত হচ্ছেন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি” শুধু তাই নয় সমস্ত জাহানের সকল নিয়মাত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই হাদীয়া মুবারক করা হয়েছে। আর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন “আননি’মাতিল কুবরা আলাল আলাম”। অর্থাৎ, সমস্ত কায়িনাতের সবচাইতে বড় নিয়ামত। সুবহানাল্লাহ্ !
মহান আল্লাহ পাক সূরা আল ইমরান শরীফ উনার ১০৩ নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে সেটাই বলছেন, তোমাদের যে নিয়ামত ( হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দেয়া হয়েছে, তোমরা সে নিয়ামত উনার যিকির করো, স্বরন করো, আলোচনা করো, খুশি প্রকাশ করো। সুবহানাল্লাহ্ !
সূতরাং উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মাধ্যমেই বুঝা যাচ্ছে, সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পেয়ে উনার স্বরনে খুশি মুবারক প্রকাশ করা মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ মুবারক।
আর বিশেষ নিয়ামত প্রাপ্তির দিন যে ঈদের দিন সেটা স্পষ্ট কুরআন শরীফ উনার মধ্যেই আছে। মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন,
اللَّهُمَّ رَبَّنَا أَنزِلْ عَلَيْنَا مَائِدَةً مِّنَ السَّمَاءِ تَكُونُ لَنَا عِيدًا لِّأَوَّلِنَا وَآخِرِنَا وَآيَةً مِّنكَ ۖ وَارْزُقْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ
অর্থ: “আয় আমাদের রব আল্লাহ পাক! আমাদের জন্য আপনি আসমান হতে (বেহেশতী খাদ্যের) খাদ্যসহ একটি খাঞ্চা নাযিল করুন। খাঞ্চা নাযিলের উপলক্ষটি অর্থাৎ খাদ্যসহ খাঞ্চাটি যেদিন নাযিল হবে সেদিনটি আমাদের জন্য, আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ (খুশি) স্বরূপ হবে এবং আপনার পক্ষ হতে একটি নিদর্শন হবে। আমাদেরকে রিযিক দান করুন। নিশ্চয় আপনিই উত্তম রিযিকদাতা।( পবিত্র  সূরা মায়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ১১৪)
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উল্লিখিত হয়েছে, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তিনি উনার উম্মতের জন্য আসমান থেকে একটি খাঞ্চা ভর্তি খাবার চাইলেন, এবং এই নিয়ামত পূর্ন খাবার নাযিল হওয়ার দিনটা উনার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ স্বরুপ হবে বললেন। এই খাদ্য সহ খাঞ্চা নাযিল হওয়ার দিন যদি ঈদের দিন হয়, তাহলে সমগ্র জগৎ এর নিয়ামত, সকল নিয়ামতের মূল,হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন এর দিন মুবারক কি ঈদ হবেনা? এই দিনে কি খুশি করা যাবে না ??
অবশ্যই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের দিন ঈদ হবে, শুধু তাই না বরং কুল কায়িনাতের সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদ তথা ‘সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ’ হবে। সুবহানাল্লাহ্ !!
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার অসংখ্য স্থানে নূরে মুজাসসাম,হাবীবুল্লাহ,সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন মুবারক উনার সুসংবাদ দেয়া হয়েছে এবং উনার আগমন মুবারক উপলক্ষে শুকরিয়া আদায় এবং ঈদ পালন করার কথা স্পষ্ট বর্ননা করা হয়েছে !
মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার প্রিয়তম হাবীব, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন সম্পর্কে অনেক আয়াত শরীফ নাজিল করেছেন। যেমন,
إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا ◌ لِّتُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُعَزِّرُوهُ وَتُوَقِّرُوهُ وَتُسَبِّحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلًا
অর্থ : “হে আমার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারীরূপে। অতএব, তোমরা (উম্মতরা) মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রতি ঈমান আনো এবং তোমরা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক করো, সম্মান মুবারক করো ও সকাল-সন্ধ্যা অর্থাৎ সদা-সর্বদা উনার ছানা-ছিফত মুবারক করো।” (পবিত্র সূরা ফাতহ শরীফ :পবিত্র আয়াত শরীফ ৮-৯)
لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُم بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ
অর্থ : তোমাদের কাছে তোমাদের জন্য একজন রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসেছেন, তোমাদের দুঃখ-কষ্ট উনার কাছে বেদনাদায়ক, তিনি তোমাদের ভালাই চান,মু’মিনদের প্রতি স্নেহশীলএবং দয়ালু।” (পবিত্র  সূরা তাওবা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১২৮)
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ
অর্থ :“হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনাকে সমস্ত কায়িনাতের জন্য রহমত হিসাবে পাঠিয়েছি।” (পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৭)
لَقَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا مِّنْ أَنفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِن كَانُوا مِن قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ
অর্থ :“নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক মু’মিনদের প্রতি ইহসান করেছেন যে, তিনি তাদের মাঝে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন, যিনি তাদেরকে আল্লাহ পাক উনার আয়াত শরীফ সমূহ তিলাওয়াত করে শোনান এবং তাদের অন্তর সমূহকে পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদের কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন” (পবিত্র সূরা আল ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৬৪)
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا◌ وَدَاعِيًا إِلَى اللَّهِ بِإِذْنِهِ وَسِرَاجًا مُّنِيرًا
অর্থ : “হে আমার হবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সাক্ষীদাতা, সুসংবাদ দাতা, ভয় প্রদর্শনকারী এবং আমার নির্দেশে আমার দিকে আহ্বানকারী ও নূরানী প্রদীপ রুপে প্রেরন করেছিঅ” ( পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ :পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৫,৪৬ )
قَدْ جَاءَكُم مِّنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُّبِينٌ
অর্থ :“নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে এক মহান নূর ( হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসেছেন।” (পবিত্র সূরা মায়েদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫)
وَإِذْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ النَّبِيِّينَ لَمَا آتَيْتُكُم مِّن كِتَابٍ وَحِكْمَةٍ ثُمَّ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مُّصَدِّقٌ لِّمَا مَعَكُمْ لَتُؤْمِنُنَّ بِهِ وَلَتَنصُرُنَّهُ ۚ قَالَ أَأَقْرَرْتُمْ وَأَخَذْتُمْ عَلَىٰ ذَٰلِكُمْ إِصْرِي ۖ قَالُوا أَقْرَرْنَا ۚ قَالَ فَاشْهَدُوا وَأَنَا مَعَكُم مِّنَ الشَّاهِدِينَ
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত নবী- রসূল আলাইহিমুস সালামগন উনাদের থেকে এ মর্মে ওয়াদা নিলেন যে, আমি আপনাদের কিতাব ও হিকমত হাদিয়া করবো। অতঃপর আপনাদের প্রদত্ত কিতাবের সত্য প্রতিপাদনকারী হিসাবে একজন রসূল (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আগমন করবেন ! আপনারা অবশ্যই উনার প্রতি ঈমান আনবেন এবং উনাকে পেলে খিদমত করবেন ! মহান আল্লাহ পাক বললেন, আপনারা কি আমার এ ওয়াদা স্বীকার ও গ্রহণ করলেন ? উনারা বললেন, হ্যাঁ, আমরা স্বীকার করে নিলাম। তখন আল্লাহ পাক বললেন, তাহলে আপনারা সাক্ষী থাকুন এবং আমিও আপনাদের সাথে সাক্ষী রইলাম”
(পবিত্র সূরা আল ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৮১)
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ ছাড়াও আরো অনেক আয়াত শরীফে রহমাতুল্লিল আলামীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে ! আর উনার আগমন উপলক্ষে ঈদ পালন করার কথা স্পষ্ট ভাবে কুরআন শরীফে ঘোষণা করে দিয়েছেন —
يَا اَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُم مَّوْعِظَةٌ مّن رَّبّكُمْ وَشِفَاءٌ لّمَا فِي الصُّدُورِ وَهُدًى وَرَحْـمَةٌ لّلْمُؤْمِنِيْنَ ◌ قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْـمَتِه فَبِذٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوْا هُوَ خَيْرٌ مّـمَّا يَـجْمَعُوْنَ
অর্থ: “হে মানবজাতি! অবশ্যই তোমাদের মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে এসেছেন মহান নছীহতকারী, তোমাদের অন্তরের সকল ব্যাধিসমূহ দূরকারী, মহান হিদায়েত ও ঈমানদারদের জন্য মহান রহমত (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলে দিন, তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার দয়া, ইহসান ও রহমত (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পেয়ে) উনার জন্য ঈদ উদযাপন তথা খুশি প্রকাশ করো। তোমরা যতো কিছুই করোনা কেনো তিনিই হচ্ছেন সমগ্র কায়িনাতের জন্য সবচেয়ে বড় ও সর্বোত্তম নিয়ামত।” (পবিত্র  সূরা ইউনুস শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৭- ৫৮)
তাফসীরে রূহুল মায়ানী ৬ষ্ঠ খন্ড ১৪১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ্য রয়েছে,
اخرج ابو الشيخ عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنهما ان الفضل العلم و الرحمة محمد صلى الله عليه و سلم
অর্থ: হযরত আবুশ শায়েখ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত “নিশ্চয়ই “ফদ্বল” দ্বারা উদ্দেশ্য ইলম, আর ‘রহমত’ দ্বারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।”।
এ আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় হাফিজে হাদীস, ইমামুল মুফাসসিরিন জালালুদ্দীন সূয়ুতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার বরাত দিয়ে বলেন-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ فِي الْاٰيَةِ فَضْلِ اللهِ اَلْعِلْمُ وَ رَحْـمَتِهٖ مُـحَمَّدٌ صَلَّي اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اللهُ تَعَالٰي وَمَا اَرْسَلْنَاكَ اِلَّا رَحْـمَةً لّلْعٰلَمِيْنَ
অর্থ : উক্ত আয়াত শরীফে অনুগ্রহ বলতে ইলমকে বুঝানো হয়েছে এবং রহমত দ্বারা বুঝানো হয়েছে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ! যেমন, আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, আমিতো আপনাকে তামাম আলমের জন্য রহমত হিসাবে পাঠিয়েছি !””
দলীল-
√তাফসীরে দূররে মানছুর
√তাফসীরে রুহুল মায়ানী !
√তাফসীরে কবীর।
কুরআন শরীফ উনার সরাসরি পবিত্র আয়াত শরীফ উনার দলীল দ্বারাই ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রমান হলো! কারন মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন মুবারক উনার ঘোষণা দিয়েছেন এবং সেই আগমন উপলক্ষে ঈদ পালন করতে বলেছেন সুবহানআল্লাহ !!
শুধু তাই নয় স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদ শরীফের সু সংবাদ পূর্ববর্তী নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাধ্যমে দান করেছেন !
কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়-
وَإِذْ قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُم مُّصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيَّ مِنَ التَّوْرَاةِ وَمُبَشِّرًا بِرَسُولٍ يَأْتِي مِن بَعْدِي اسْمُهُ أَحْمَدُ ۖ فَلَمَّا جَاءَهُم بِالْبَيِّنَاتِ قَالُوا هَٰذَا سِحْرٌ مُّبِينٌ
অর্থ :“হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, হে বনী ইসরাঈল ! নিশ্চয়ই আমি তোমাদের নিকট মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হিসাবে প্রেরিত হয়েছি ! আমার পূর্ববর্তী তাওরাত শরীফে আমি সত্যায়নকারী এবং আমি এমন একজন রসূল উনার সুসংবাদ দানকারী যিনি আমার পরে আগমন করবেন, উনার নাম মুবারক হচ্ছে আহমদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” (পবিত্র সূরা ছফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬)
এ আয়াত শরীফ উনার পরিপ্রেক্ষিতে স্বয়ং হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজের মীলদ শরীফ সম্পর্কে বলেন–
“আমি তোমাদের আমার পূর্বের কিছু কথা জানাবো! তা হলো- আমি হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম উনার দোয়া আমি হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার সুসংবাদ ও আমার মাতার সুস্বপ্ন ! আমার বিলাদতের সময় আমার মাতা দেখতে পান যে, একখানা নূর মোবারক বের হয়ে শাম দেশের রাজ প্রসাদ সমূহ আলোকিত করে ফেলেছে।”
দলীল-
√মুসনাদে আহমদ ৪র্থ খন্ড ২৭ পৃষ্ঠা !
√মুস্তদরেকে হাকিম ২য় খন্ড ৬০১ পৃষ্ঠা !
√মিশকাত শরীফ ৫১৩ পৃষ্ঠা !
উপরোক্ত আয়াত শরীফ থেকে আমরা দেখতে পেলাম স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুসংবাদ দিয়েছেন এবং পরবর্তীতে স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজের মীলাদ শরীফ উনার বর্ননা দিলেন।সুবহানাল্লাহ্ !!
মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন –
اذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ
অর্থ : “তোমাদেরকে যে নিয়ামত দেয়া হয়েছে, তোমরা সে নিয়ামতকে স্বরন করো।” (পবিত্র  সূরা আল ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৩)
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَأَمَّا بِنِعْمَةِ رَبِّكَ فَحَدِّثْ
অর্থ : “আপনার রব উনার নিয়ামতের কথা প্রকাশ করুন।”( পবিত্র  সূরা আদ্ব দ্বুহা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১১)
উক্ত নিয়ামত সমূহের ব্যাখ্যায় পবিত্র হাদীস শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে-
“আল্লাহ পাক উনার কসম ! তারা ( যারা নবীজী উনার বিরোধীতা করেছিলো) কুরায়িশ কাফির আর হযরত সাইয়্যিদুনা মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন আল্লাহ পাক উনার নিয়ামত !” (বুখারী শরীফ ১/২২১)
আর নিয়ামত পূর্ন দিন সমূহ স্বরন করা বা আলোচনা করার বিষয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরোদ মুবারক হয়েছে–
وَذَكِّرْهُم بِأَيَّامِ اللَّهِ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّكُلِّ صَبَّارٍ شَكُورٍ
অর্থ : “আল্লাহ পাক উনার বিশেষ দিন সমূহ স্বরন করান। নিশ্চয়ই এতে প্রত্যেক ধৈর্যশীল শোকরগুযার বান্দাদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে।”
(পবিত্র সূরা ইব্রাহীম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার দ্বারা বিশেষ দিন সমূহ স্বরন করা এবং এ দিবসে খুশি প্রকাশ করার কথা সরাসরি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার থেকে প্রমান হলো।
সুতরাং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন দিবসে ঈদ পালন করা, উনার আলোচনা মুবারক করা,পবিত্র কুরআন শরীফ থেকে অকাট্যভাবে প্রমানিত হলো।
সুবহানাল্লাহ্।
১২ রবিউল আউয়াল শরীফ উম্মতের জন্য খুশি মুবারক প্রকাশ করার দিবস
Related image
=================================================
এক শ্রেনীর বাতিল ফিরকার লোক পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ অর্থাৎ সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর, মহাপবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অস্বীকার করে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিতে একটা প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে থাকে। তারা বলে থাকে, “নবীজী(ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) উনার বিছাল (ইন্তিকাল) শরীফ দিবস হচ্ছে দুঃখের দিন,আর দুঃখের দিনে খুশি প্রকাশ করাটা নাকি অন্যায়।”নাউযুবিল্লাহ।
প্রকৃত বিষয় হচ্ছে বাতিল ফির্কাদের এই বক্তব্যটা সম্পূর্ণ মিথ্যে এবং পবিত্র কুরআন শরীফ পবিত্র হাদীস শরীফ উনাদের খেলাফ হওয়ায় তা কুফরী মূলক হয়েছে। কেননা নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিলাদত শরীফ, বিছাল শরীফ( ইন্তেকাল),পুনরুত্থান প্রত্যকটি রহমত,বরকত,ঈদ বা খুশি মুবারক প্রকাশের কারন। সুবহানাল্লাহ্।
যেমন, মহান আল্লাহ পাক হযরত ঈসা রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার বিষয়ে ইরশাদ মুবারক করেন ,
وَسَلَامٌ عَلَيْهِ يَوْمَ وُلِدَ وَيَوْمَ يَـمُوْتُ وَيَوْمَ يُبْعَثُ حَيًّا
অর্থ : উনার প্রতি সালাম ( শান্তি), যেদিন তিনি বিলাদত শরীফ লাভ করেছেন এবং যেদিন তিনি বিছাল শরীফ লাভ করবেন এবং যেদিন তিনি পুনরুত্থিত হবেন !” (সূরা মারইয়াম শরীফ: আয়াত শরীফ ১৫)
অনুরুপ হযরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে বলা হয়েছে, যা তিনি নিজেই বলেন-
وَالسَّلَامُ عَلَىَّ يَوْمَ وُلِدْتُّ وَيَوْمَ اَمُوْتُ وَيَوْمَ اُبْعَثُ حَيًّا
অর্থ : আমার প্রতি সালাম বা শান্তি যেদিন আমি বিলাদত শরীফ লাভ করি, যেদিন আমি বিছাল শরীফ লাভ করি , যেদিন পুনুরুত্থিত হবো!” (সূরা মারইয়াম শরীফ: আয়াত শরীফ ৩৩)
উপরোক্ত আয়াত শরীফদ্বয় থেকে আমরা জানতে পারলাম, নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম গণ উনাদের বিছাল শরীফের(ইন্তেকাল) দিবসও শান্তির দিন।
আর পবিত্র হাদীস শরীফ উনার মধ্যে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন –
عن ابن مسود رضي الله عنه قال قال رسول الله صلي عليه و سلم حياتيخير لكم و مماتي خير لكم
অর্থ : আমার হায়াত-বিছাল (ইন্তেকাল) সব অবস্থাই তোমাদের জন্য কল্যাণ বা উত্তম বা খায়ের বরকতের কারন।” (দলীল- কানযুল উম্মাল শরীফ : হাদীস ৩১৯০৩, জামিউছ ছগীর ৩৭৭০, শিফা শরীফ ২য় খন্ড ১৯ পৃষ্ঠা) উক্ত হাদীস শরীফদ্বয়ের সনদ সহীহ। দেখা গেল উক্ত হাদীস শরীফ উনার মধ্যে নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং ইরশাদ মুবারক করতেছেন, উনার বিছাল শরীফ এর দিনও কল্যাণময়।
এছাড়া পবিত্র হাদীস শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে —
ان من افضل ايامكم يوم الجمعة فيه خلق ادم وفيه قبض
অর্থ : তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে উত্তম দিন হচ্ছে, জুমুয়ার দিন। এদিনে হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনি সৃষ্টি হয়েছেন এবং এদিনেই তিনি বিছাল (ইন্তেকাল) শরীফ লাভ করেন !” (নাসায়ী শরীফ- কিতাবুল জুমুয়া: হাদীস ১৩৮৫, মুসলিম শরীফ- কিতাবুল জুমুয়া: হাদীস ৮৫৫,তিরমিযী :হাদীস ৪৯১, মুসনাদে আহমদ : ৮৯৫৪, হাদীস নম্বর ৮৯ ইবনে মাজাহ : হাদীস ১৭০৫, সুনানে আবু দাউদ – কিতাবুস সালাত: হাদীস ১০৪৭, ইবনে খুযায়মা: হাদীস ১৬৩২)
অতপর এই জুমুয়ার দিন ঈদের দিন ঘোষনা করে ইরশাদ মুবারক হয়েছে —
انهذايوم جعله اللهعيدا
অর্থ : এ জুমুয়ার দিন হচ্ছে এমন একটি দিন, যেদিনকে মহান আল্লাহ পাক ঈদের দিন হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন।” (ইবনে মাজাহ : হাদীস নম্বর ১১৯৮,মুয়াত্তা মালিক- কিতাবুত ত্বহারাত: হাদীস নম্বর ১৪৪, বায়হাক্বী : হাদীস ১৩০৩, মা’য়ারিফুল সুনান ওয়াল আছার বায়হাক্বী: হাদীস ১৮০২, মুসনাদে শাফেয়ী: হাদীস ২৬৮, মুজামুল আওসাত তাবরানী ৩৪৩৩, মিশকাত শরীফ)
উক্ত পবিত্র হাদীস শরীফ থেকে প্রমানিত হলো জুমুয়ার দিন আল্লাহ পাক এর নবী এবং রসূল হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার বিছাল শরীফ এর দিন হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ পাক স্বয়ং নিজেই সে দিনটিকে খুশির দিন হিসাবে নিদৃষ্ট করে দিয়েছেন। এবং স্বয়ং নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজে জুমুয়ার দিনকে ঈদের দিন বলে ঘোষনা দিয়েছেন।
এখন বাতিলপন্থী ওহাবী/ দেওবন্দীরা কি বলবে যে, মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিছাল শরীফ উনার দিন ঈদ পালন করতে বলে অন্যায় করেছেন ?? নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক। তারা কখনোই হা বলতে পারবে না , কারন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের আগমন এবং বিছাল শরীফ উভয়ই খুশি বা ঈদের দিন ! যারা শোকের বা কষ্টের দিন বলবে তারা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীস শরীফ অস্বীকারকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
এছাড়াও সম্মানিত শরীয়ত উনার ফায়সালা হচ্ছে কারো ইন্তেকালের পর তিন দিনের বেশি শোক প্রকাশ করা যাবে না। যে বিষয়ে পবিত্র হাদীস শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اُمّ عَطِيَّةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا قَالَتْ كُنَّا نُنْهٰى اَنْ نُـحِدَّ عَلٰى مَيّتٍ فَوْقَ ثَلَاثٍ اِلَّا عَلٰى زَوْجٍ اَرْبَعَةَ اَشْهُرٍ وَّعَشْرًا.‏
অর্থ : “হযরত উম্মু আতিয়্যাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কারো ইন্তিকালে তিন দিনের পর আর শোক প্রকাশ করতে আমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে। তবে স্বামীর জন্য আহলিয়া চার মাস দশ দিন শোক পালন করতে পারবে।” (মুয়াত্তা মালিক শরীফ, বুখারী শরীফ : কিতাবুত তালাক : হাদীছ শরীফ নং ৫৩৪১, মুসলিম শরীফ : কিতাবুত তালাক : হাদীছ শরীফ নং ১৪৯৩, আবূ দাউদ শরীফ, নাসায়ী শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, দারিমী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
সূতরাং দেখা গেলো ইন্তেকালের ৩ দিন পর আর শোক পালন করা যাবে না। যদি কেউ কারো ইন্তেকালের ৩ দিন পরও শোক পালন করে সেটা সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাপ হবে। হাদীস শরীফ উনার বিরোধীতা হবে। আর সবচাইতে বড় কথা হলো হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি হচ্ছেন হায়াতুন্নবী। উনি পবিত্র রওজা শরীফ উনার মধ্যে জীবীত রয়েছেন। উনার পবিত্র বিছাল শরীফ উপলক্ষে শোক প্রকাশ স্পষ্ট গোমরাহী ও হায়াতুন্নবী অস্বীকার করার নামান্তর।
পবিত্র হাদীস শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
اَلاَنْبِيَاءُ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ اَحْيَاءُ فِيْ قُبُوْرِهِمْ يُصَلُّوْنَ
অর্থ : “হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা উনাদের রওযা শরীফ উনাদের মধ্যে জীবিত, উনারা নামায আদায় করেন।’’ (আবূ ইয়ালা শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৩৪২৫, হায়াতুল আম্বিয়া লিল বাইহাকী ১ম খ- ৭৩ পৃষ্ঠা)
“শহীদগণ যেহেতু দলীলের ভিত্তিতে জীবীত প্রমাণিত, কোরআন শরীফ উনার মধ্যে তার সুষ্পষ্ট র্বণনা আছে, সুতরাং নবীগণ জীবিত থাকবেন। কারণ উনারা শহীদগণ হতে উত্তম।’’ (ফাতহুল বারী-৬/২৮৮)।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে –
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـى الدَّرْدَاءِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ اَنَّ اللهَ تَعَالٰى حَرَّمَ عَلَى الْاَرْضِ اَنْ تَأْكُلَ اَجْسَادَ الْاَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ فَنَبِىُّ اللهِ حَىٌّ يُرْزَقُ
অর্থ : হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের জিসিম মুবারক যমীনের উপর ভক্ষণ করা হারাম করেছেন। সুতরাং মহান আল্লাহ পাক উনার হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা জীবিত ও রিযিকপ্রাপ্ত। (ইবনে মাজাহ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১৬৩৬, সুনানে দারীমী : হাদীছ শরীফ নং ১৫৭২, মিশকাত শরীফ, জালাউল আফহাম ৬৩ পৃষ্ঠা, তাযকিরাতুল হুফফাজ : হাদীছ শরীফ নং ১০৮৫)
কিতাবে আরো উল্লেখ করা হয়েছে –
اِنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِـىْ قَبْرِه حَىٌّ
অর্থ : “নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রওযা মুবারকে জীবিত অবস্থায়ই আছেন।” (মিরকাত শরীফ ২য় খন্ড ২২৩ পৃষ্ঠা)
বিখ্যাত মুহাদ্দিছ আল্লামা ইমাম মুল্লা আলী ক্বারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন –
لَيْسَ هُنَا مَوْتٌ وَلَاَفَوْتٌ بَلْ هُوَ اِنْتِقَالٌ مّنْ حَالٍ اِلٰى حَالٍ وَاِرْتِـحَالٌ مّنْ دَارٍ اِلٰى دَارٍ وَاِنَّ الْـمُعْتَقَدَ الْـمُحَقَّقَ اِنَّه حَىٌّ يُرْزَقُ
অর্থ : “এখানে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য মৃত্যুও নেই, নিঃশেষ হওয়াও নেই। বরং এক শান মুবারক হতে অন্য শান মুবারক উনার দিকে স্থানান্তরিত হওয়া এবং এক মুবারক ঘর হতে অন্য মুবারক ঘরে হিজরত করা। নিশ্চিত বিশ্বাস এই যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হায়াত মুবারক-এ (জীবিত) আছেন এবং সম্মানিত রিযিকপ্রাপ্ত হচ্ছেন।” (শরহুশ শিফা শরীফ ১ম খ-, পৃষ্ঠা ১৫২, মিরকাত শরীফ)
শুধু তাই নয়, দেওবন্দীদের মুরুব্বী মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীন লিখেছে,
হযরত আবুল মাওয়াহেব শাযালী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন- একবার স্বপ্নযোগে হুযুর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাক্ষাৎলাভ করলাম। তিনি নিজের সম্পর্কে বললেন- আমি মৃত নই। আমার পরলোক গমনের বিষয়টা এরূপ যে, যারা আল্লাহ প্রদত্ত রূহানী জ্ঞান থেকে বঞ্চিত,আমি তাদের দৃষ্টির আড়ালে পরলোকবাসী। কিন্তু যারা আল্লাহর দেওয়া রূহানী জ্ঞান রাখে, তাদের মধ্যে আমি জীবিতই রয়েছি। আমি যেমন তাদের দেখতে পাই তারাও আমার সাক্ষাৎলাভ করে। [তবক্কাতুল কোবরা] (দলীল- স্বপ্নযোগে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৬৮ পৃষ্ঠা, মদীনা পাবলিকেশান্স)
উক্ত হাদীস শরীফ উনার আলোকে প্রমাণ হলো সকল নবী রসূল আলাইহিমুস সালামগন উনারা পবিত্র রওজা শরীফ উনার মধ্যে জীবীত। সকল নবীদের নবী রসূলদের রসূল হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র রওজা শরীফ উনার মাঝে জীবীত। তাহলে কি করে বলা যেতে পারে যে ১২ রবিউল আউয়াল শরীফ শোকের দিন। নাউযুবিল্লাহ!! যিনি হায়াতুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য কি করে শোক দিবস পালন করা যেতে পারে? যারা হায়াতুন্নবী মানে না,সহীহ হাদীস শরীফ উনাকে অস্বীকারকারী, তারাই বলে থাকে ১২ ই রবিউল শরীফ শোকের ‍দিন।
অতএব, সম্মানিত শরীয়ত উনার অকাট্য দলীল আদীল্লার দ্বারা প্রমান হলো, কারো পক্ষে নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছাল শরীফ এর দিন ১২ই রবীউল আওয়াল শরীফ উনাকে শোকের দিন হিসাবে সাব্যস্ত করা সম্ভব নয় !!
যারা শোকের কথা বলবে তারা পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীস শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ এবং পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ অস্বীকার করে ঈমানহারা হবে !
তাই আখেরী রসূল, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উনাকে নিয়ামত মনে করে উক্ত দিনকে ঈদ হিসেবে পালন করতে হবে !
সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে শুধু মাত্র দুটি নয় আরো অসংখ্য ঈদ রয়েছে যার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ তম ঈদ হচ্ছে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।Related image
=================================================
সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ তথা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুধীতা করতে গিয়ে এক শ্রেণীর বাতিল ফেরকার লোকেরা বলে থাকে ঈদে মীলাদুন্নবী আবার কেমন ঈদ এবং শরীয়তে নাকি দু ঈদ ব্যতিত আর কোন ঈদ নাই !! নাউযুবিল্লাহ
মূলত দুই ঈদ ব্যাতীত আর কোন ঈদ নাই। এই কথার মত হাস্যকর কথা আমরা কমই শুনেছি। যারা এই কথা বলে তাদের জীবন কতটা যে নিরানন্দ তা মহান আল্লাহ পাক ‍তিনিই ভালো জানেন। মহান আল্লাহ পাক হয়তো তাদের জীবন থেকে সকল সুখ শান্তি উঠিয়ে নিয়েছেন তাদের বেয়াদবির কারনে। যারা বলে দুই ঈদ ব্যতীত আর কোন ঈদ নাই, তারা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীস শরীফ অস্বীকারকারী। আর পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীস শরীফ অস্বীকারকারীরা কাফির।
পবিত্র হাদীস শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “যে আমার নামে মনগড়া মিথ্যা কথা বললো, সে দুনিয়াই থাকতেই তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারন করে নিলো। (বুখারী শরীফ ১১০)
সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে অসংখ্য ঈদ থাকার পরও যারা বলে দুই ঈদ ব্যাতীত ঈদ নাই তারা পবিত্র হাদীস শরীফ অস্বীকারকারী, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি মিথ্যারোপকারী। কারন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি নিজেই দুই ছাড়া আরো অনেক ঈদের কথা উল্লেখ করেছেন।
ক) যেমন পবিত্র জুমুয়ার দিন মুসলমান গণ উনারদের জন্য ঈদের দিন। পবিত্র সহীহ হাদীস শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেঃ
عن حضرت عبيد بن السباق رضي الله عنه مرسلا قال قال رسول اللهصلي الله عليه و سلم في جمعة من الجمع يا معشر المسلمين ان هذا يومجعله الله عيدا
অর্থ : হযরত ওবায়িদ বিন সাব্বাক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মুরসাল সূত্রে বর্ননা করেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক জুমুআর দিন বলেন, হে মুসলমান সম্প্রদায় ! এটি এমন একটি দিন যাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি ঈদ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন !” (ইবনে মাজাহ : হাদীস নম্বর ১১৯৮, মুয়াত্তা মালিক- কিতাবুত ত্বহারাত: হাদীস নম্বর ১৪৪, বায়হাক্বী : হাদীস ১৩০৩, মা’য়ারিফুল সুনান ওয়াল আছার বায়হাক্বী: হাদীস ১৮০২, মুসনাদে শাফেয়ী: হাদীস ২৬৮, মুজামুল আওসাত তাবরানী ৩৪৩৩, মিশকাত শরীফ)
عَنْ حَضْرَتْ عُبَيْدِ ابْنِ السَّبَّاقِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ فِي جُـمُعَةٍ مِنَ الْـجُمَعِ يَا مَعْشَرَ الْمُسْلِمِيْنَ اِنَّ هٰذَا يَوْمٌ جَعَلَهُ اللهُ عِيْدًا فَاغْتَسِلُوْا وَمَنْ كَانَ عِنْدَهٗ طِيْبٌ فَلَا يَضُرُّهٗ اَنْ يـَّمَسَّ مِنْهُ وَعَلَيْكُمْ بِالسّوَاكِ
অর্থ : “হযরত উবাইদ বিন সাব্বাক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক পবিত্র জুমুআ উনার দিনে ইরশাদ মুবারক করেন, এ পবিত্র জুমআহ উনার দিন হচ্ছেন এমন একটি দিন, যে দিনকে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র ঈদ উনার দিন সাব্যস্ত করেছেন। তাই তোমরা গোসল কর আর যার নিকট সুগন্ধি রয়েছে, সে তা হতে স্পর্শ করলে ক্ষতি নেই। মিসওয়াক ব্যবহার করা তোমাদের কর্তব্য।” সুবহানাল্লাহ! (মুয়াত্তা মালিক শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১৪৪, ইবনে মাজাহ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১১৯৮, মা’য়ারিফুস সুনান ওয়াল আছার বায়হাক্বী শরীফ : হাদীছ শরীফ ১৮০২, মুসনাদে শাফিয়ী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২৬৮, আল্ মু’জামুল আওসাত লিত্ ত্ববারানী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৩৪৩৩)
এই জুমুআর দিন কতবড় ঈদের দিন ও শ্রেষ্ঠ দিন জানেন কি ? দেখুন পবিত্র হাদীস শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
قال النبى صلى الله عليه وسلم ان يوم الـجمعة سيد الايام واعظمها عندالله وهو اعظم عند الله من يوم الاضحى ويوم الفطر
অর্থ: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, জুমুআর দিন সকল দিনের সর্দার এবং সকল দিন অপেক্ষা আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এটি ঈদুল আযহার দিন ও ঈদুল ফিতরের দিন অপেক্ষাও মহান আল্লাহ পাক-উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। (ইবনে মাজাহ : হাদীস নম্বর ১১৩৭,মুজামুল কবীর তাবরানী ৪৫১১, শুয়াইবুল ঈমান বায়হাকী : হাদীস ২৯৭৩, মিশকাত শরীফ)
এবার দেখূন কেন জুমুয়ার দিন ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার চাইতে বেশি শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত:
ان من افضل ايامكم يوم الـجمعة فيه خلق ادم وفيه قبض
অর্থ: ‘তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে উত্তম দিন হচ্ছে জুমুআর দিন। এ দিনে হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি মুবারক করা হয়েছে এবং এ দিনেই তিনি বিছাল শরীফ লাভ করেছেন।’ (নাসায়ী শরীফ- কিতাবুল জুমুয়া: হাদীস ১৩৮৫, মুসলিম শরীফ- কিতাবুল জুমুয়া: হাদীস ৮৫৫, তিরমিযী :হাদীস ৪৯১, মুসনাদে আহমদ : ৮৯৫৪, হাদীস নম্বর ৮৯ ইবনে মাজাহ : হাদীস ১৭০৫, সুনানে আবু দাউদ –কিতাবুস সালাত: হাদীস ১০৪৭, ইবনে খুযায়মা: হাদীস ১৬৩২)
দেখা যাচ্ছে হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সৃষ্টি, দুনিয়ায় আগমন, বিছাল শরীফ এর জন্য পবিত্র জুমুয়ার দিন এত শ্রেষ্ঠ যে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার চাইতেও বেশি শ্রেষ্ঠ, এবং ঈদের দিন।
খ) সহীহ হাদীস শরীফ উনার দ্বারা প্রমানিত সম্মানিত আরাফার দিন ও ঈদের দিনঃ
عَنْ حَضْرَتْ عَمَّارِ بْنِ اَبِـي عَمَّارٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ قَالَ قَرَاَ حَضْرَتْ اِبْنُ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ ‏‏(‏اَلْيَوْمَ اَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَاَتْـمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْاِسْلاَمَ دِيْنًا‏)‏ وَعِنْدَهٗ يَهُوْدِيٌّ فَقَالَ لَوْ اُنْزِلَتْ هٰذِهٖ عَلَيْنَا لَاتَّـخَذْنَا يَوْمَهَا عِيْدًا‏.‏ قَالَ حَضْرَتْ اِبْنُ عَبَّاسٍ فَإِنَّـهَا نَزَلَتْ فِيْ يَوْمِ عِيْدٍ فِيْ يَوْمِ جُـمُعَةٍ وَيَوْمِ عَرَفَةَ‏.‏
অর্থ : “হযরত আম্মার ইবনে আবূ আম্মার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি একদা ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করে দিলাম। ……. (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩)’ এ আয়াত শরীফ খানা শেষ পর্যন্ত তিলাওয়াত করলেন। তখন উনার নিকট এক ইয়াহূদী ছিল, সে বলে উঠলো, যদি এমন আয়াত শরীফ আমাদের ইয়াহূদী সম্প্রদায়ের প্রতি নাযিল হতো, আমরা আয়াত শরীফ নাযিলের দিনটিকে ঈদের দিন হিসেবে ঘোষণা করতাম। এটা শুনে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, এ আয়াত শরীফ সেই দিন নাযিল হয়েছে যেদিন ঈদ ছিলো- (১) জুমুয়ার দিন এবং (২) আরাফার দিন!” (তিরমিযী শরীফ : হাদীছ শরীফ ৩৩১৮)
عَنْ حَضْرَتْ طَارِقِ بْنِ شِهَابٍ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اَنَّ الْيَهُوْدَ قَالُوْا لِعُمَرَ عَلَيْهِ السَّلَامُ  اِنَّكُمْ تَقْرَءُوْنَ اٰيَةً لَوْ اُنْزِلَتْ فِيْنَا لَاتَّـخَذْنَا ذٰلِكَ الْيَوْمَ عِيْدًا‏.‏ فَقَالَ حَضْرَتْ عُمَرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ اِنّـيْ لَاَعْلَمُ حَيْثُ اُنْزِلَتْ وَاَىُّ يَوْمٍ اُنْزِلَتْ وَاَيْنَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَيْثُ اُنْزِلَتْ اُنْزِلَتْ بِعَرَفَةَ وَرَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَاقِفٌ بِعَرَفَةَ.
অর্থ : “হযরত তারিক ইবনে শিহাব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়াহূদী লোকেরা সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে বললো, আপনারা এমন একটি আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করে থাকেন তা যদি আমাদের সম্পর্কে নাযিল হতো, তবে এ দিনটিকে আমরা খুশির দিন হিসাবে গ্রহণ করতাম। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আমি জানি, ওই আয়াত শরীফ খানা কখন (কোথায়) ও কোন দিন নাযিল হয়েছিল। আর যখন তা নাযিল হয়েছিল তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কোথায় অবস্থান মুবারক করছিলেন (তাও জানি)। পবিত্র আয়াত শরীফ খানা আরাফা উনার দিন নাযিল হয়েছে; নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখন আরাফা উনার ময়দানেই অবস্থান মুবারক করছিলেন।” (মুসলিম শরীফ : কিতাবুত তাফসীর : হাদীছ শরীফ নং ৭২৪৪, নাসাঈ শরীফ শরীফ : কিতাবুল হজ্জ : হাদীছ শরীফ নং ৩০০২, মুসনাদে আহমদ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১৯০)
উক্ত হাদীস শরীফসমূহ উনাদের মধ্যে জুমুয়ার দিনের সাথে সাথে আরাফার দিনকেও ঈদের দিন হিসাবে সাব্যস্ত করা হয়েছে।
গ) সহীহ হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমানিত আইয়ামে তাশরীকের দিন ঈদের দিনঃ
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ إِنَّ يَوْمَ عَرَفَةَوَيَوْمَ النَّحْرِ وَأَيَّامَ التَّشْرِيقِعِيدُنَا أَهْلَ الإِسْلاَمِ
অর্থ: হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, আরাফার দিন, নহর বা কুরবানীর দিন এবং আইয়্যামে তাশরীক (অর্থ্যাৎ ১১, ১২ ও ১৩ ই জিলহজ্জ) আমাদের মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন। (দলীল: নাসাঈ শরীফ কিতাবুল হজ্জ : হাদীস নম্বার ৩০০৪, আবু দাউদ – কিতাবুছ সিয়াম : হাদীস ২৪১৯, তিরমিযী শরীফ- কিতাবুছ ছিয়াম: হাদীস ৭৭৩)
ঘ) পবিত্র হাদীস শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে মুসলমান গণ উনাদের জন্য প্রতি মাসে চারদিন বা পাঁচদিন ঈদের দিনঃ
لكل مؤمن في كل شهر اربعة اعياد اوخمسة اعياد
অর্থ : হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, মু’মিন মুসলমানদের, প্রতি মাসে চারটি অথবা পাঁচটি ঈদ রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিমাসে চারটি অথবা পাঁচটি সোমবার শরীফ হয়ে থাকে।’ ( কিফায়া শরহে হিদায়া ২য় খন্ড – বাবু ছালাতিল ঈদাইন, হাশিয়ায়ে লখনবী আলাল হিদায়া )
ঙ) রোজদারদের জন্য ইফতারের সময় ঈদের সময়ঃ
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ‏ كُلُّ عَمَلِ ابْنِ اٰدَمَ يُضَاعَفُ الْـحَسَنَةُ بِعَشْرِ اَمْثَالِـهَا اِلٰى سَبْعِ مِائَةِ ضِعْفٍ اِلٰى مَا شَاءَ اللهُ يَقُوْلُ اللهُ اِلَّا الصَّوْمَ فَاِنَّهٗ لِيْ وَاَنَا اَجْزِيْ بِهٖ يَدَعُ شَهْوَتَهٗ وَطَعَامَهٗ مِنْ اَجْلِيْ لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ فَرْحَةٌ عِنْدَ فِطْرِهٖ وَفَرْحَةٌ عِنْدَ لِقَاءِ رَبّهٖ وَلَـخُلُوْفُ فَمِ الصَّائِمِ اَطْيَبُ عِنْدَ اللهِ مِنْ رِيْحِ الْمِسْكِ
অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আদম সন্তানের প্রতিটি আমল মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক ইচ্ছা অনুযায়ী দশগুণ হতে সাতশত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। তবে রোযা ব্যতীত। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, রোযা আমার জন্য। আমি স্বয়ং রোযার প্রতিদান দিবো। বান্দারা আমার জন্য তাদের নফসানিয়ত ও পানাহার তরক করেছে। রোযাদারের জন্য দুটি ঈদ বা খুশি। একটি হলো তার প্রতিদিন ইফতারের সময়। আর অন্যটি হলো মহান আল্লাহ পাক উনার সাক্ষাতের সময়।” (বুখারী শরীফ : কিতাবুস সাওম; মুসলিম শরীফ : কিতাবুস সাওম : হাদীছ শরীফ নং ১১৫৩; ইবনে মাজাহ শরীফ : কিতাবুস সাওম : হাদীছ শরীফ নং ১৬৩৮; মিশকাত শরীফ, সুনানে নাসাঈ শরীফ : কিতাবুস সাওম : হাদীছ শরীফ নং ২২১৫)
দেখুন, উক্ত হাদীস শরীফে রোজাদার দের জন্য দুটি ঈদ বা খুশির কথা বলা হইছে। একটা তার ইন্তেকালের পর আল্লাহ পাক উনার সাক্ষাত। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে , ইফতার করার সময়।
ইফতার দুই প্রকার –
(১) ইফতারে কুবরা, (২) ইফতারে ছোগরা।
কুবরা হচ্ছে, ঈদুল ফিতর যা পবিত্র হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমানিত। আর ছুগরা হচ্ছে, রোজাদার প্রতিদিন মাগরিবের সময় করে থাকেন।
এটি প্রতিবছর ২৯ বা ৩০ দিন হয়ে থাকে। এছাড়া সুন্নত রোজা হিসাবে আরো রোজা রয়েছে, যেমন- মুহররম শরীফ মাসে ৯,১০ বা ১০,১১ তারিখ দুইটি রোজা এবং এর সাথে আরো ১ টি রাখা হয়, মোট ৩ টি। শাওয়াল শরীফ মাসে ৬ টি রোজা। যিলহজ্জ শরীফ মাসে ১ হতে ৯ তারিখ পর্যন্ত ৯ টি রোজা। এবং বাকি ১১ মাসে ৩টি করে সুন্নত রোজা , মোট ৩৩ টি রোজা।
এই রোজাদার দের প্রতিটি ইফতার হলো ঈদ। সুবহানাল্লাহ্!
আসুন আমারা মোট ঈদ সংখ্যা হিসাব করি —
বছরে ৫২ টি জুমাবার + ৫২ টি সোমবার শরীফ + আরফার দিন+ আইয়ামে তাশরীক ৩ দিন+ রমাদ্বান শরীফে ৩০ টি + বাকি ১২ মাসে ৩ করে ৩৪ টি + যিলহজ্জ শরীফ মাসে ৯ টি + মুহররম মাসে ২ টি + পহেলা রজব ১ টি + ২৭ শে রজব ১টি + ১৫ শাবান ১ টি = (৫২+৫২+৩০+১+৩+৩৩+৯+২+১+১)
= ১৮৪ টি ঈদ ! সুবহানাল্লাহ্ !
সূতরাং হাদীস শরীফ থেকেই ১৮৪ টা ঈদ প্রমাণিত হলো।
চ) এছাড়াও বিশেষ কোন নিয়ামত নাযিলের দিন ঈদের দিন:
قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا أَنزِلْ عَلَيْنَا مَائِدَةً مِّنَ السَّمَاءِ تَكُونُ لَنَا عِيدًا لِّأَوَّلِنَا وَآخِرِنَا وَآيَةً مِّنكَ ۖ وَارْزُقْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ
অর্থঃ ঈসা ইবন মারিয়ম আলাইহিস সালাম বললেন- “আয় আমাদের রব আল্লাহ পাক ! আমাদের জন্য আপনি আসমান হতে খাদ্যসহ একটি খাঞ্ঝা নাযিল করুন। খাঞ্ঝা নাযিলের উপলক্ষটি অর্থাৎ খাদ্যসহ খাঞ্ঝাটি যেদিন নাযিল হবে সেদিনটি আমাদের জন্য, আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ স্বরূপ হবে এবং আপনার পক্ষ থেকে একটি নিদর্শন হবে। আমাদের কে রিযিক দান করুন। নিশ্চয় আপনিই উত্তম রিযিকদাতা। (সূরা মায়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৪)
ছ) শবে বরাত শরীফ হচ্ছে ফেরশতা আলাইহিমুস সালাম গণ উনাদের ঈদের দিন:
“লাইলাতুর বরাত ও লাইলাতুল কদর হচ্ছে ফিরিশতা আলাইহিমুস সালাম গণ উনাদের জন্য ঈদের দিন” (গুনিয়াতুত ত্বলেবীণ ৩৬৫ পৃষ্ঠা)
জ) দুইয়ের অধিক ঈদের কথা একসাথে পবিত্র হাদীস শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে:
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زَيّنُوا اَعْيَادَكُمْ بِالتَّكْبِيْرِ.
অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা তোমাদের ঈদগুলোকে তাকবীর ধ্বনী দ্বারা সৌন্দর্য্যমন্ডিত করো।” (আল্ মু’জামুল আওসাত লিত্ ত্ববারানী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৪৫০৯)
হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলোচ্য হাদীস শরীফ উনার মধ্যে اعياد (আইয়াদ) শব্দ ব্যবহার করেছেন। আর اعياد (আইয়াদ) শব্দ ঈদ عيد শব্দের বহুবচন। অর্থাৎ একটি ঈদকে আরবীতে বলা হয়عيد (ঈদ) দু’টি হলেعيدان (ঈদাইনে) আর দু’য়ের অধিক ঈদকে বলেاعياد (আইয়াদ) । সূতরাং হাদীস শরীফ উনার মধ্যে উল্লিখিত আইয়াদ শব্দ দ্বারা প্রমানিত হলো দুই ঈদের বেশি ঈদ রয়েছে। অতএব হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ শব্দ চয়নই প্রমাণ করে ঈদ দু’য়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং অসংখ্য হতে পারে।
এই পবিত্র সহীহ হাদীস শরীফ থেকেই দেখা গেলো, এক হাদীস শরীফেই তিনটা ঈদের কথা বলা হয়েছে। এখন বলুন কিভাবে বলা যায় দুই ঈদের বেশি ঈদ নাই? একমাত্র চরম স্তরের মূর্খ ছাড়া কেউ বলতে পারে না যে দুই ঈদের ব্যতীত আর ঈদ নাই।
অতএব প্রমানিত হলো যে, শরীয়তে দুই ঈদ ব্যতীত আরো অনেক ঈদ আছে! যা পবিত্র হাদীস শরীফ দ্বারাই প্রমানিত সুতরাং যারা বলে, দুই ঈদ ব্যতীত আর ঈদ নাই তাদের কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং কুরআন শরীফ সুন্নাহ শরীফের খেলাফ ও কুফরীমূলক প্রমানিত হলো।
দুনিয়াবী হায়াতে জিন্দেগীর প্রত্যেকটা মুহূর্ত তো অবশ্যই এমনকি পরকালে গিয়েও হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য খুশী মুবারক প্রকাশ করতে থাকতে হবে।
=================================================
Image result for সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ
উম্মতদের কতক্ষণ বা কতদিন পর্যন্ত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন অর্থাৎ সর্বশ্রেষ্ট ঈদ পালন তথা খুশী মুবারক প্রকাশ করতে হবে।
এই বিষয়ে অনেকে মনে করে থাকে হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য শুধূমাত্র ১২ রবিউল আউয়াল শরীফ একদিন খুশী প্রকাশ করলেই হবে। প্রকৃত বিষয় হচ্ছে তাদের এই ধারণা ভুল। নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার জন্য খুশী মুবারক তথা ঈদ পালন করা শুধুমাত্র ১২ রবিউল আউয়াল শরীফ একদিনের সাথে সংশ্লিষ্ট না। একজন উম্মতের জন্য এই খুশী প্রতিটা সেকেন্ড এর খুশী। আর এই খুশী মুবারক অনন্তকাল ব্যাপী প্রকাশ করতে হবে। এটাই মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ মুবারক। যে আদেশ মুবারক হাক্বীক্বীভাবে পালন করেছেন সাহাবা ই কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ।
এই বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক বলেন-
” وتعزروه وتوقروه وتسبحوه بكرة واصيلا
“অর্থাৎ তোমরা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক করো, তা’যীম-তাকরীম মুবারক অর্থাৎ সম্মান মুবারক করো, উনার ছানা-ছিফত মুবারক অর্থাৎ প্রশংসা মুবারক করো সকাল-সন্ধ্যা অর্থাৎ সদা-সর্বদা”
(পবিত্র সূরা ফাতহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৯) সুবহানাল্লাহ।
সুতরাং প্রমাণিত হল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাওয়ার কারনে খুশী প্রকাশ শুধুমাত্র ১২ রবিউল আউয়াল শরীফ একদিন করলেই হবে না এবং এই ঈদ তথা খুশী প্রকাশ একদিনের সাথে সংশ্লিষ্টও না। এই খুশী প্রতিটা সেকেন্ড এর খুশী। আর এই খুশী মুবারক অনন্তকাল ব্যাপী প্রকাশ করতে হবে। যা করতে হবে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার সুন্নত মুবারক এর পরিপূর্ণ অনুসরণ অনুকরণ, উনার খিদমত মুবারক, সম্মান তথা তা’যীম- তাকরীম মুবারক, ছানা-ছিফত তথা প্রসংশা মুবারক এর মাধ্যম দিয়ে।
বর্তমানে সম্মানিত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের খেদমত মুবারক, তাযীম তাকরীম মুবারক ও ছানা সিফত মুবারক করার মাধ্যম দিয়েই হাক্বীক্বীভাবে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন তথা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা সহয ও সম্ভব হবে।Related image
=================================================
বর্তমানে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাক্বীক্বী খেদমত মুবারক ও তাযীম তাকরীম মুবারক করার সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম হচ্ছেন হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা। যিনাদের খেদমত মুবারক,  তা’যীম তাকরীম মুবারক ও সানাসিফত মুবারক উনার মাধ্যম দিয়ে হাক্বীক্বীভাবে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ তথা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু পালন করা সহয ও সম্ভব হবে।
যেমন পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
قُل لَّا اَسْاَلُكُمْ عَلَيْهِ اَجْرًا اِلَّا الْمَوَدَّةَ فِى الْقُرْبٰـى
অর্থ : (হে আমার হাবীব হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি বলে দিন, আমি তোমাদের কাছে কোন বিনিময় চাচ্ছি না, (তোমরা কোন বিনিময় দিতেও পারবে না, কোন বিনিময় দেয়ার চিন্তা করাও কুফরী হবে) তোমাদের দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে, আমার যাঁরা আহাল ও ইয়াল, আওলাদ যাঁরা রয়েছেন, আহলে বাইত যাঁরা রয়েছেন উনাদের প্রতি তোমরা মুহব্বত পোষন করবে ও সৎ ব্যবহার করবে, উনাদের খিদমত করবে, তা’যীম-তাকরীম করবে সবদিক থেকে। উনাদেরকে যেভাবে তোমাদের খিদমতের আঞ্জাম দেয়া দরকার, তা’যীম-তাকরীম করা দরকার, ছানা-ছিফত করা দরকার সেভাবে তোমরা করবে।
অর্থাৎ বর্তমানে হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের تُعَزِّرُوهُ ‘তুয়াযযিরূহু’ (খিদমত মুবারক করে), تُوَقِّرُوهُ ‘তুয়াক্বিরূহু’ (তা’যীম-তাকরীম মুবারক অর্থাৎ সম্মান মুবারক করে) এবং تُسَبِّحُوهُ ‘তুসাব্বিহূহু’ (উনার প্রশংসা মুবারক) করলে বা করতে পারলে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার হাক্বীক্বী খেদমত মুবারক, তা’যীম-তাকরীম মুবারক ও প্রশংসা, ছানা-ছিফত মুবারক এর হক আদায় হবে।
আবার নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَحِبُّوا اللهَ لِمَا يَغْذُوكُمْ مِنْ نِعَمِهِ وَاَحِبُّوْنِـىْ بِـحُبِّ اللهِ وَاَحِبُّوا اَهْلَ بَيْتِى لِـحُبِّى‏.‏
অর্থ : “তোমরা যিনি খালিক্ব, যিনি মালিক, যিনি রব আল্লাহ পাক উনাকে মুহব্বত করো। কারণ তিনি তোমাদের খাওয়াচ্ছেন, পরাচ্ছেন, সমস্ত ব্যবস্থা তিনি গ্রহণ করতেছেন। কাজেই উনার নিয়ামতের কারণে উনার ইজ্জত-সম্মানের কারণে উনাকে তোমরা মুহব্বত করো। আর আমাকে অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মুহব্বত কর খালিক্ব, মালিক রব আল্লাহ পাক উনার রেযামন্দী হাছিলের লক্ষ্যে। আর আমার হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যাঁরা আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করো নূরে জাসমুসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামূল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বত মুবারক হাছিলের লক্ষ্যে, উনার মুহব্বতের কারণে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করে উনাদের تُعَزِّرُوهُ ‘তুয়াযযিরূহু’ বা খিদমত মুবারক করার মাধ্যমে, تُوَقِّرُوهُ ‘তুয়াক্বিরূহু’ বা তা’যীম-তাকরীম মুবারক অর্থাৎ সম্মান মুবারক করার মাধ্যমে এবং تُسَبِّحُوهُ ‘তুসাব্বিহূহু’ বা উনাদের প্রশংসা মুবারক করার মাধ্যমে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার تُعَزِّرُوهُ ‘তুয়াযযিরূহু’ (খিদমত মুবারক), تُوَقِّرُوهُ ‘তুয়াক্বিরূহু’ (তা’যীম-তাকরীম মুবারক অর্থাৎ সম্মান মুবারক) এবং تُسَبِّحُوهُ ‘তুসাব্বিহূহু’ (উনার প্রশংসা মুবারক) করা সম্ভব।
আর তাই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আখাচ্ছুল খাছ আওলাদ, হযরত আহলু বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, যামানার ইমাম, মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ লক্ষ্যস্থল, মুজাদ্দিদে আ’যম, হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার খিদমত মুবারক, তা’যীম-তাকরীম মুবারক অর্থাৎ সম্মান মুবারক ও উনার প্রশংসা মুবারক করতে হবে। হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক, তা’যীম-তাকরীম মুবারক অর্থাৎ সম্মান মুবারক ও উনার প্রশংসা মুবারক করার লক্ষ্যে রাজারবাগ শরীফে জারী করেছেন অনন্তকাল ব্যাপী অর্থাৎ অনির্দিষ্ট কাল ব্যাপী সাইয়্যিদুল শরীফ তথা হুযূর পাক সল্লাল্লাহু আলােইহি ওয়াসাল্লাম উনাকে পাওয়ার কারনে খুশী তথা ঈদ পালন করে উনার সুমহান সম্মানার্থে মাহফিল। তাই দুনিয়ার সমস্ত মুসলমানের উচিত হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার সংসর্গে আসা এবং দায়িমীভাবে ‘ফালইয়াফরাহু’ বা খুশি প্রকাশ করার জন্য রাজারবাগ শরীফে আসা।