সুওয়াল - ভূগোলে পড়েছি, পৃথিবীর ছায়া যখন চাঁদের উপর পড়ে, তখন একে চন্দ্রগ্রহণ বলে। আমরা জানি, চন্দ্রগ্রহণের সময় আযান দিতে হয় এবং নামায পড়তে হয়। প্রশ্ন হলো- পৃথিবীর ছায়া চাঁদের উপর পড়লে আযান কেন দিতে হবে? নামায কেন পড়তে হবে? কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর আলোকে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানালে খুশি হবো।
জাওয়াব - চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণ মহান আল্লাহ্ পাক উনার কুদরতের অন্তর্ভূক্ত। মহান আল্লাহ্ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হায়াতে তাইয়্যেবায় একবার সূর্যগ্রহণ ও একবার চন্দ্রগ্রহণ সংঘঠিত হয়েছিল, যা হাদীছ শরীফ ও তারীখের কিতাবে বর্ণনা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ পাক মানুষকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র উনার ইবাদত-বন্দিগী করার জন্য। যেমন- কুরআন শরীফে মহান আল্লাহ্ পাক তিনি ইরশাদ করেন,
وما خلقت الجن والانس الا ليعبدون. অর্থঃ- “আমি মানুষ ও জ্বিন জাতিকে একমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছি।” কাজেই মুসলমানদের প্রতি মুহূর্তে মহান আল্লাহ্ পাক উনার মতে মত এবং মহান আল্লাহ্ পাক উনার রাসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথে পথ থাকতে হবে। সূর্যগ্রহণ এবং চন্দ্রগ্রহণের সময়টিও এর থেকে খালি নয়। স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূর্য গ্রহণের সময় দু’রাকায়াত নামায জামায়াতের সাথে পড়েছেন এবং চন্দ্রগ্রহণের সময়ও দু’রাকায়াত নামায একাকী আদায় করেছেন এবং বাকী সময় তাস্বীহ্-তাহ্লীল ও যিকির-ফিকির করে কাটিয়েছেন। মহান আল্লাহ্ পাক তিনি আমাদেরকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদেশ-নিষেধকে আঁকড়িয়ে ধরার জন্য বলেছেন, কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছে,
وما اتاكم الرسول فخذوه وما نهاكم عنه فانتهوا. অর্থঃ- “তোমাদের জন্য রসূল (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা নিয়ে এসেছেন, তা তোমরা আঁকড়িয়ে ধর এবং যা থেকে নিষেধ করেছেন, তা পরিত্যাগ কর।” অতএব, মহান আল্লাহ্ পাক উনার আদেশ পালনার্থে এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণার্থে (সুন্নত হিসেবে) সূর্য গ্রহণ ও চন্দ্র গ্রহণের সময় নামায আদায় করতে হবে। আর যেহেতু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আজান ব্যতীতই গ্রহণের নামায পড়েছিলেন, তাই চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণের সময় আজান দেয়া বিদ্য়াত ও নাজায়িয। হ্যাঁ, তবে যদি কেউ চন্দ্র গ্রহণ ও সূর্য গ্রহণের সময় পৃথিবী অন্ধকারাচ্ছন্ন দেখে ভীত হয়ে আজান দেয়, তবে সেটা জায়িয আছে। যা ফিক্বাহ্র কিতাব শামী ও বাহ্রুর রায়েকে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ঝড়, বৃষ্টি তুফানের সময় অন্ধকারাচ্ছন্ন ও ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় ইত্যাদি কারণে আজান দেয়া মুস্তাহাব। শরয়ী কোন মাসয়ালার ব্যাপারে কারণ তালাশ করা বা তলব করা জায়িয নেই। যেমন হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয় যে,
عن معاذة العدوية انها قالت لعائشة ما بال الحائض نقص الصوم ولا نفض الصلوة قالت عائشة كان يصيبنا ذالك فنؤمر بقضاء الصوم ولا نؤمر بقضاء الصلوة. (رواه مسلم) অর্থঃ- “হযরত মুয়াজাহ্ আদভিয়া তাবেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, হায়েজওয়ালী স্ত্রীলোক রোজা কাজ্বা করে কিন্তু নামায কাজ্বা করেনা, তার কি কারণ? তখন হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, যখন আমরা এ অবস্থায় পৌঁছতাম, তখন আমাদেরকে রোজা কাজ্বা করার আদেশ দেয়া হতো কিন্তু নামায কাজ্বা করার আদেশ দেয়া হতোনা।” (অথচ আমরা কখনো কোন কারণ তালাশ করিনি) (মুসলিম শরীফ) তবে অবশ্য মহান আল্লাহ্ পাক এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা যে সমস্ত বিষয়ে কারণ উল্লেখ করেছেন, শুধু সে সমস্ত বিষয়ে কারণ বর্ণনা/উল্লেখ করা যেতে পারে। কারণ কুরআন শরীফে বলা হয়েছে,
وما اوتيتم من العلم الا قليلا. অর্থঃ- “তোমাদেরকে অল্প জ্ঞান ব্যতীত প্রদান করা হয়নি।” আরো বলা হয়েছে, عسى ان تكرهوا شيئا وهو خير لكم وعسى ان تحبوا شيئا وهو شرلكم والله يعلم وانتم لا تعلمون.
অর্থঃ- “সম্ভবতঃ তোমরা যেটা খারাপ মনে করো সেটাই ভাল, আর সম্ভবতঃ যা তোমরা ভাল মনে কর, তাই খারাপ, মহান আল্লাহ্ পাক তিনিই জানেন কোন্টি ভাল এবং কোন্টি মন্দ, তোমরা তা জাননা।” অতএব, আমাদের প্রত্যেক কাজেই মহান আল্লাহ্ পাক উনার মতে মত এবং হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথে পথ হতে হবে। আবা২৫