জাওয়াব - অনুবাদ- “নিশ্চয় আমি (মহান আল্লাহ্ পাক) আপনাকে (হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাওসার দিয়েছি। অতএব, আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কুরবানী করুন। নিশ্চয় আপনার শত্রুই নির্বংশ।” অবতীর্ণের কারণ ঃ- মহান আল্লাহ্ পাক উনার রাসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পুত্র সন্তান (হযরত কাসেম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত তাহের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত তাইয়্যেব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) জন্মগ্রহণ করে বেশীদিন জীবিত ছিলেন না। উনারা শৈশবেই ইন্তেকাল করেন। তখন ইসলামের চিরশত্রু কাফিরদের, বিশেষ করে আস ইবনে ওয়ায়েলের সামনে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক বা আলোচনা উচ্চারিত হলে, সে বলতো- আরে উনার কথা বাদ দাও। তিনি কোন চিন্তারই বিষয় নন, কারণ তিনি নির্বংশ অর্থাৎ উনার কোন পুত্র সন্তান জীবিত নেই। অতএব উনার ইন্তেকাল হলে কে বা কারা করবেন উনার নাম উচ্চারণ? নাউযুবিল্লাহ! তার এ ধরণের কটুক্তি শুনে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিছুটা ব্যথিত হলে মহান আল্লাহ্ পাক তিনি উক্ত সূরাটি অবতীর্ণ করে শান্তনা প্রদান করেন। কোন কোন বর্ণনা মতে, ইহুদী কা’ব ইবনে আশরাফ একদা মক্কায় আগমন করলে কোরাইশরা তার কাছে এসে বললো, আপনি কি সেই যুবুককে দেখেননি, যিনি নিজকে ধর্মের দিক দিয়ে সর্বোত্তম বলে দাবী করেন? অথচ আমরা হাজীদের সেবা করি, বায়তুল্লাহ্র হিফাজত করি এবং মানুষকে পানি পান করাই। কা’ব একথা শুনে বললো- আপনারাই উনার চেয়ে উত্তম। নাউযুবিল্লাহ! এর পরিপ্রেক্ষিতে সূরা কাওসার অবতীর্ণ হয়।
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাঃ- সূরা কাওসার কুরআন শরীফে বর্ণিত সূরাগুলির মধ্যে সবচেয়ে ছোট সূরা এবং তিন আয়াত শরীফ বিশিষ্ট। সূরাটির প্রথম আয়াত শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে, মহান আল্লাহ্ পাক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ‘কাওসার’ দান করেছেন। ‘কাওসার’ কি? এর ব্যাখ্যায় বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, একদা মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে আমাদের সামনে উপস্থিত ছিলেন। হঠাৎ তাঁর মধ্যে এক প্রকার নিদ্রা কিম্বা তন্দ্রার ভাব দেখা দিল। অতঃপর তিনি হাসিমুখে মাথা মুবারক উঠালেন। আমরা আরজ করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার হাসার কারণ কি? তিনি বললেন, “এই মুহূর্তে আমার নিকট একখানা সূরা অবতীর্ণ হয়েছে।” অতঃপর তিনি বিস্মিল্লাহ্সহ সূরা কাওসার পাঠ করলেন এবং বললেন, “তোমরা জান কাওসার কি?” আমরা বললাম মহান আল্লাহ্ পাক উনার ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ভাল জানেন। তিনি বললেন, “এটা জান্নাতের একটি নহর। আমার পালনকর্তা আমাকে এটা দিবেন বলে ওয়াদা করেছেন। এতে অজস্র কল্যাণ নিহীত রয়েছে এবং এ হাউজে ক্বিয়ামতের দিন আমার উম্মত পানি পান করতে যাবে। এর পানি পান করার পাত্রের সংখ্যা আকাশের তারকার সমান হবে। কতক লোককে ফেরেশ্তাগণ হাউজ থেকে তাড়িয়ে দিবেন। তখন আমি বলবো, হে আমার রব! সে তো আমার উম্মত।” মহান আল্লাহ পাক তিনি বলবেন, “আপনি জানেন না, আপনার পরে সে নতুন মত-পথ অবলম্বন করেছিল।” (বুখারী, মুসলিম, আবূ দাউদ, নাসাঈ) উপরোক্ত বর্ণনা ছাড়াও হাদীছ শরীফের একাধিক বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, অজস্র কল্যান, অফুরন্ত কল্যাণ এবং জান্নাতে অবস্থিত এক বিশেষ নহর বা প্রস্রবনের নাম কাওসার। যার পানির সচ্ছতা, মিষ্টতা এবং কিনারাসমূহ মনি-মানিক্য দ্বারা কারুকার্যখচিত হওয়া সম্পর্কে সহীহ্ হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে। এটা এমন এক নিয়ামত, যা মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বীয় হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য খাছ করে প্রদান করেছেন এহেতু পরবর্তী অর্থাৎ দ্বিতীয় আয়াত শরীফে শুকরিয়া জ্ঞাপনের নিমিত্তে নামায এবং কুরবানী করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তৃতীয় আয়াত শরীফে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মহান আল্লাহ্ পাক সান্তনা দানপূর্বক দৃঢ়তার সাথে জানিয়ে দিলেন যে, মূলতঃ আপনার শত্রুরাই (কাফিররাই) নির্বংশ, পৃথিবীতে তাদেরই নাম নেয়ার মত কেউ থাকবেনা। দুনিয়া ও আখিরাতে তারা লাঞ্ছিত, অপমানিত এবং ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভূক্ত হবে। অপর দিকে
ورفعنا لك ذكرك
অর্থ- “আমি আপনার আলোচনাকে বুলন্দ করেছি।” অর্থাৎ আপনার বংশধরই ক্বিয়ামত অবধি থাকবে।” যেটা আমরা দেখতে পাই, খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতিমা আলাইহাস সালাম উনার থেকে হযরত হাসান আলাইহাস সালাম ও হযরত হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাদের মাধ্যমে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সিলসিলাহ্ জারী রয়েছে এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত জারী থাকবে।
আবা-২৫
0 Comments:
Post a Comment