কদমবুছী খাছ সুন্নত
Image result for কদমবুছিকদমবুছী খাছ সুন্নত
কদমবুছীর সংজ্ঞাঃ “কদমবুছী” (بوسي قدم)-এর “কদম” (قدم) শব্দটি আরবী যার অর্থ “পা”, আর “বুছী” (بوسي) শব্দটি ফার্সী যার অর্থ “চুম্বন করা”। সুতরাং “কদমবুছী” অর্থ হলো “পায়ে চুম্বন করা”। অর্থাৎ সরাসরি মুখ দিয়ে পায়ে চুম্বন দেয়াকে “কদমবুছী” বলে। কিন্তু প্রচলিত অর্থে কদমবুছী বলতে আমাদের দেশে হাত দিয়ে পা স্পর্শ করে হাতে চুমু খাওয়ার যে প্রচলন তা মূলতঃ কদমবুছী নয় বরং তা দস্তবুছী।
কদমবুছীর প্রকৃষ্ট উদাহরণ দেখিয়েছেন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ। আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ্‌, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কদম মুবারকে সরাসরি চুম্বন করতেন বা বুছা দিতেন তাঁরা, এমনকি তাঁরা একে অপরকেও কদমবুছী করেছেন। আর তাই কদমবুছী হচ্ছে খাছ সুন্নত।

কদমবুছী হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিতঃ
হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত আছে, “হযরত ওযায়ে ইবনে যারে, তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমরা আব্দুল কায়েস গোত্রে থাকা অবস্থায় যখন মদীনা শরীফ-এ আসতাম তখন তাড়াতাড়ি করে নিজেদের সওয়ারী হতে নেমে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ্‌, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাত মুবারক এবং কদম মুবারকে চুম্বন করতাম।” (আবূ দাউদ শরীফ, ২য় জিলদ্‌, পৃষ্ঠা ৭০৯; বযলুল মাজহুদ, ৬ষ্ঠ জিলদ্‌, পৃষ্ঠা ৩২৮; ফতহুল বারী, ১১ জিলদ্‌, পৃষ্ঠা ৫৭; মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, ৭ম জিলদ্‌, পৃষ্ঠা ৮০; আশয়াতুল লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব)
হযরত সাফওয়ান ইবনে আস্‌সাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, “একবার ইহুদীদের একটি দল এসে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ্‌, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উভয় হাত মুবারক ও পা মুবারকে বুছা (চুম্বন) দিলো।” (আবূ দাউদ শরীফ; নাসাঈ শরীফ; ইবনে মাযাহ শরীফ, পৃষ্ঠা ২৭০; তিরমিযী শরীফ, ২য় জিলদ্‌, পৃষ্ঠা ৯৮; ফতহুল বারী, ১১ জিলদ্‌, পৃষ্ঠা ৫৭; তুহফাতুল আহওয়াযী শরহে তিরমিযী, ৭ম জিলদ্‌, পৃষ্ঠা ৫২৫; মুছান্নিফে ইবনে আবী শায়বা, ৭ম জিলদ্‌, পৃষ্ঠা ৫৬২)

হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত আছে, “এক ব্যক্তি আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ্‌, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, ইয়া রসূলাল্লাহ্‌ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাকে এমন কোন বিষয়ে আদেশ করেন, যা আমার বিশ্বাসকে আরো বৃদ্ধি করবে। তখন আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ্‌, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, “তুমি ঐ গাছটিকে ডেকে আনো।” অতঃপর সে ব্যক্তি গাছটির নিকটে গিয়ে বললো, নিশ্চয় রসূলাল্লাহ্‌ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাকে ডেকেছেন। সুতরাং গাছটি এসে আল্লাহ্‌ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সালাম করলো। আল্লাহ্‌ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে চলে যেতে বললেন, গাছটি তখন চলে গেল। অতঃপর ঐ ব্যক্তি অনুমতি সাপেক্ষে আল্লাহ্‌ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাথা মুবারক ও উভয় কদম মুবারক বুছা দিল।” (মুস্তাদিরেকে হাকিম; ফতহুল বারী, ১১ জিলদ্‌, পৃষ্ঠা ৫৭; তুহফাতুল আহওয়াযী শরহে তিরমিযী, ৭ম জিলদ্‌, পৃষ্ঠা ৫২৮; আল কালামুল মুবীন, পৃষ্ঠা ১৪৬)
হযরত বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “(গাছের সিজদা দেয়ার ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর) একদিন আমি আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ্‌, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খিদমতে আরজ করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ্‌, ইয়া হাবীবাল্লাহ্‌ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাক আপনার উভয় হাত মুবারক এবং পা মুবারকে বুছা দেয়ার অনুমতি দিন। আল্লাহ্‌ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুমতি দিলেন। অতঃপর তিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উভয় হাত মুবারক এবং পা মুবারকে বুছা দিলেন।” (নাসীমুর রিয়াজ শরহে কাজী আয়াজ ৩য় জিলদ্‌, পৃষ্ঠা ৫০; কিতাবুল আযকার লিন্‌ নববী)
হযরত যায়েদ বিন সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা রয়েছে যে, “নিশ্চয়ই তিনি হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর হাত মুবারকে বুছা দিয়েছেন। তিনি এটাও বর্ণনা করেন যে, নিশ্চয়ই হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর হাত ও পা মুবারকে বুছা দিয়েছেন।” (ফতহুল বারী, ১১ জিলদ্‌, পৃষ্ঠা ৫৭; তুহফাতুল আহওয়াযী শরহে তিরমিযী, ৭ম জিলদ্‌, পৃষ্ঠা ৫২৮)

শুধু তাই নয় বরং হাদীছ শরীফ-এ মাকেও কদমবুছী করার ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে, যেমন এ প্রসঙ্গে ফিক্বাহের কিতাবে উল্লেখ আছে, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ্‌, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি তার মায়ের কদমবুছী করলো সে যেন জান্নাতের চৌকাঠে চুম্বন করলো।” (মাবসূত লিস্‌ সারাখ্‌সী, ১ম জিলদ্‌, পৃষ্ঠা ১৪৯)

ইমাম-মুজতাহিদ তথা আউলিয়ায়ে কিরাম রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি-এর জীবনীতে কদমবুছীঃ
বস্তুত গভীর শ্রদ্ধা, আদব, মুহব্বত এবং আনুগত্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটে কদমবুছীর মাধ্যমে। আর তাই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ্‌, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কদম মুবারকে সরাসরি চুম্বন দিয়ে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা, মুহব্বত, তা’যীম এবং আনুগত্যের চরম পরাকাষ্ঠা প্রকাশ করেছেন। এই ধারাবাহিকতায় মুরীদও তাঁদের অনুসরণে একইভাবে স্বীয় মুর্শিদ ক্বিবলার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা, পরম মুহব্বত এবং আনুগত্য প্রকাশ করে থাকে কদমবুছীর মাধ্যমে। কেননা হাদীছ শরীফ-এ এসেছে, “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, শায়খ (বা মুর্শিদ বা পীর ছাহেব) তাঁর ক্বওম তথা মুরীদের কাছে তেমন; নবী (আলাইহিস্‌ সালাম) তাঁর উম্মতের মাঝে যেমন।” (দাইলামী শরীফ, মাকতুবাত শরীফ, আত্‌ তায্‌কিরাহ ফি আহাদীসিল মুশ্তাহিরাহ, মাকাছিদুল হাসানা)
হাদীছ শরীফ-এ আরো এসেছে, “হযরত আনাছ বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমরা পীর-মাশায়িখকে সম্মান করবে। পীর-মাশায়িখকে সম্মান করা আল্লাহ্‌ পাককে সম্মান করারই নামান্তর। কাজেই যে ব্যক্তি তাঁদের যথাযথ সম্মান করে না সে আমাদের দলভূক্ত নয়।” (দাইলামী শরীফ, আত্‌ তায্‌কিরাহ ফি আহাদীসিল মুশ্তাহিরাহ)
আর তাই চিশ্‌তীয়া তরীক্বার মাশায়িখ (রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহিম)-এর মাঝে কদমবুছীর এতো অধিক প্রচলন ছিল যে, তাঁরা স্বীয় মুর্শিদ ক্বিবলার কদমবুছী করতে পারাকে বিশেষ নিয়ামত প্রাপ্তি মনে করতেন। যখনই কোন সালিক মুর্শিদ ক্বিবলার দরবার শরীফ-এ যেতেন তখনই মুর্শিদ ক্বিবলার কদমবুছী করতেন।
শায়খুল মাশায়িখ, সুলতানুল আউলিয়া, হযরত কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাক্বী রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “বুধবার আমার পীর ছাহেব সুলতানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি-এর কদমবুছীর বরকত নছীব হলো।” (দলীলুল আরিফীন)
চিশ্‌তীয়া তরীক্বার ইমাম, ইমামুশ্‌ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত, হাবীবুল্লাহ্‌, সুলতানুল মাশায়িখ, কুতুবুল আক্তাব, কুতুবুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশ্‌তী আজমিরী রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি একবার দিল্লীতে আসলেন। তাঁর প্রধান খলীফা শায়খুল মাশায়িখ, সুলতানুল আউলিয়া, হযরত কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাক্বী রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি-এর দরবার শরীফ-এ হাজির হলেন। কদমবুছী করার জন্য দিল্লীর লোকেরা দলে দলে তাঁর খিদমতে ভিড় জমালো। সুলতান আলতামাশা রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহিও আসলেন। কিন্তু শায়খুল আলম, বাবা ফরীদুদ্দীন গঞ্জে শকর রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি আসলেন না। সুলতানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশ্‌তী আজমিরী রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি তাঁর সম্মন্ধে জিজ্ঞাসা করলেন। শায়খুল মাশায়িখ, সুলতানুল আউলিয়া, হযরত কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাক্বী রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি বললেন, সে রিয়াজত-মুশাক্কাতে রত রয়েছে। এটা শুনে তিনি বললেন, তুমি সত্যি বখ্‌তিয়ার। এমন “শাহ্‌বায”কে কবলে এনেছ যার বাস “সিদরাতুল মুন্তাহা”র এদিকে নয়। এমন লোকের উপর আর কঠোরতা করা সমীচীন নয়। তাঁর রিয়াজত-মুশাক্কাত বন্ধ করে দেয়া উচিত।
অতঃপর তাঁরা উভয়েই শায়খুল আলম, বাবা ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শকর রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি-এর হুজরা শরীফ-এ গেলেন এবং বাবা ছাহেব রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহিকে উভয়ের মাঝে রেখে দীর্ঘ সময় ধরে দু’য়া করলেন, “আল্লাহ্‌ পাক! আপনি ফরীদকে কবুল করুন।” গায়েব হতে আওয়াজ আসলো, “আমি ফরীদকে কবুল করলাম।” তারপর তাঁরা উভয়ে তাঁকে অনেক ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ দান করলেন এবং বললেন, “ফরীদ এমন একটি প্রদীপ যা আমাদের সিলসিলাকে আলোকিত করবে এবং যুগের অদ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব হবে।”

সুলতানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশ্‌তী আজমিরী রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহিও তাঁকে “বাবা” বলে সম্বোধন করতেন। এই বরকতে আজ পর্যন্ত তাঁকে “বাবা” লক্ববে সম্বোধন করা হয়।
ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ প্রদানের পর শায়খুল মাশায়িখ, সুলতানুল আউলিয়া, হযরত কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাক্বী রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি বললেন, “তোমার দাদা পীর ছাহেব, তাঁর কদমবুছী করো।”
শায়খুল আলম, বাবা ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শকর রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি গিয়ে স্বীয় পীর ছাহেব হযরত কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাক্বী রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি–এর কদমবুছী করলেন। তিনি আবার আদেশ করলেন, “তোমার দাদা পীর ছাহেব সুলতানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি–এর কদমবুছী করো।” এবারো তিনি স্বীয় পীর ছাহেব শায়খুল মাশায়িখ, হযরত কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাক্বী রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি–এর কদমবুছী করলেন। হযরত বখতিয়ার কাক্বী রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি এবার একটু ধমকের স্বরে বললেন, “আমি তোমাকে “তোমার দাদা পীর ছাহেব সুলতানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি–এর কদমবুছী করতে বলছি। আর তুমি করছ আমার কদমবুছী তার কারণ কি?”
বিনিত-বিনম্র স্বরে জাওয়াব দিলেন শায়খুল আলম, বাবা ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শকর রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি, “আমি আপনার কদম মুবারক ব্যতীত আর কোন কদম মুবারক দেখতে পাচ্ছি না।”
শায়খুল আলম, হযরত বাবা ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শকর রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি-এর এরূপ জাওয়াব শুনে সুলতানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি বললেন, “বখতিয়ার! মাসউদ ঠিকই বলেছে। সে মঞ্জিলে মাকছুদে পৌঁছেছে। সেখানে এক ভিন্ন দ্বিতীয়ের কোন অস্তিত্বই নেই। কাজেই সেখানে তুমি ভিন্ন আমি তাঁর দৃষ্টিতে আসবো কেন?” (তাযকিরাতুল আউলিয়া)
সুতরাং কদমবুছী গভীর শ্রদ্ধা, আদব, মুহব্বত এবং আনুগত্যের বহিঃপ্রকাশ তো বটেই, অধিকিন্তু এটা কামিয়াবী ও বিজয়ের সোপানও বটে। কারণ কদমবুছী করা সেই ব্যক্তির পক্ষে সহজ ও সম্ভব যে স্বীয় মুর্শিদ ক্বিবলাকে সকলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, সর্বোচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন মনে করে। আর নিজেকে ভাবে সর্বনিকৃষ্ট, হীন ও তুচ্ছ, যা ইলমে তাছাউফের বুনিয়াদী শিক্ষা। এরূপ মনোভাবই তাকে আল্লাহ্‌ পাক পর্যন্ত পৌঁছে দেয় এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ্‌, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নৈকট্যভাজনে পরিণত করে। কেননা হাদীছ শরীফ-এ এসেছে, “যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌ পাক-এর জন্য বিনয়ী হয় আল্লাহ্‌ পাক তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।” (ইহ্‌ইয়াউ উলুমিদ্দীন, কিমিয়ায়ে সা’য়াদাত)
পক্ষান্তরে যারা অহংকারী, যাদের অন্তরে রয়েছে আত্ম-অহংকার তারা কখনও কদমবুছীর ফযীলত, বরকত লাভ করতে পারে না। অন্তরে লালিত অহংকারই তাকে কদমবুছী থেকে বিরত রাখে। অহংকার ব্যক্তি কখনও হাক্বীক্বীভাবে কদমবুছী করে না। যদি লোক লজ্জার ভয়ে কিংবা অবস্থার চাপে করে তা হয় একান্ত অন্তঃসারশুন্য। খুব কমসংখ্যক লোক নিজেকে নিকৃষ্ট, হীন ও তুচ্ছ মনে করতে পারে, “বড় যদি হতে চাও ছোট হও আগে” এই নীতি বাক্যের উপর আমল করতে পারে।

কদমবুছীর সময় অনিচ্ছাকৃত মাথা ঝুঁকে যাওয়া সিজদার অন্তর্ভূক্ত নয়ঃ
আমাদের সমাজে কিছু আত্ম-অহংকারী মহল আছে যারা কিল্লতে ইলম কিল্লতে ফাহম অর্থাৎ কম জ্ঞান ও কম বুঝের অধিকারী তারা কদমবুছীকে নাজায়িয ও শিরক বলে থাকে। তারা বলে থাকে কোন সম্মানিত ব্যক্তিকে মাথা নীচু করে কদমবুছী করা, তাশাব্বুহ্‌ বিস্‌ সিজদাহ-এর কারণে হারাম।
মূলতঃ কদমবুছীর সময় অনিচ্ছা সত্ত্বেও যে মাথা ঝুঁকে যায় তা সিজদার অন্তর্ভূক্ত নয়। কেননা শুধুমাত্র মাথা নীচু করলেই সিজদা হয় না বরং সিজদার জন্য যমীনে কপাল ও নাক লাগানোর সাথে সাথে সিজদার নিয়ত থাকাও শর্ত। কিন্তু কদমবুছীর ক্ষেত্রে এসবই অনুপস্থিত। উল্লেখ্য, মাথা নীচু করলেই যদি হারাম হয়, তবে দৈনন্দিন অনেক কাজ করার সময় মাথা নীচু করতে হয়। যেমন- ঘর ঝাড়ু দিতে, খুঁটি পুতার সময়, যমীনে চারা রোপন করতে ইত্যাদি কাজগুলি কি হারাম হবে? কখনই নয়।

কদমবুছী করার সময় মাথা ঝুঁকানো সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ করা হয়, “কদমবুছীর সময় মাথা ঝুঁকানো মূলতঃ উদ্দেশ্য নয়। কারো সম্মানার্থে ইচ্ছাকৃত সিজদার ন্যায় মাথা ঝুঁকানো নাজায়িয। তাই, সিজদার নিয়ত ব্যতীত মাথা ঝুঁকানো নিষেধ নয় এবং স্থান বিশেষে এর থেকে বেঁচে থাকাও সম্ভব নয়। যেমনঃ কোন বস্তু উঠাবার সময়, রাখার সময়, দেখার সময় ইত্যাদি কারণে স্থান বিশেষে মাথা নিচু করতে হয়। অথচ উপরোক্ত কারণে মাথা ঝুঁকানোকে কেউ নাজায়িয বলেন না, কারণ সিজদার নিয়ত করে তা করা হয় না।” (রদ্দুল মুহতার, মুহীত, যাহিদী, শেফা লি কাজী আয়াজ, মকতুবাতে ইমামে রব্বানী)
এ প্রসঙ্গে কিতাবে একটি ঘটনা উল্লেখ আছে, এক মাওলানা ছাহেব বিদেশ হতে সদ্য পাশ করে এসেছে। সে যখন তার গ্রামের বাড়ীতে গেল, বাড়ীতে যাওয়ার পথে দেখলো কৃষকরা ক্ষেত্রের মধ্যে ধানের চারা রোপন করছে। যেহেতু ক্ষেতের মধ্যে পানি ও কাদায় ভর্তি, তাই কৃষকরা উপুড় হয়ে মাথা নীচু করে ধানের চারা রোপন করছিল। মাওলানা ছাহেব কৃষকদের এ অবস্থা দেখে বলতে লাগলো, আস্তাগফিরুল্লাহ্‌! শেরেক করে করে ধান রোপন করার কারণেই তো ফসলে বরকত হয় না। সেই কৃষকদের মধ্যে এক ব্যক্তি ছিলেন, যিনি মোটামুটি আলিম। মাওলানা ছাহেবের উক্ত ফতওয়া যখন তিনি শুনলেন, তখন তিনি বললেন, মাওলানা ছাহেব আপনার ফতওয়াটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে। তাই আপনি ফতওয়াটি লিখিতভাবে দিলে হয়ত আমরা এ শিরক থেকে বেঁচে থাকতে পারবো। মাওলানা ছাহেব যখন তার পকেট থেকে কাগজ-কলম বের করতে লাগলো, ঘটনাক্রমে কলমখানা তার হাত থেকে মাটিতে পড়ে যায়। মাওলানা ছাহেব (মাটি থেকে কলমটি উঠাবার সময় মাথা নীচু করতে হয়) যখনই কলম উঠাবার সময় মাথা নীচু করল, তখন সেই কৃষক বললেন, আস্তাগফিরুল্লাহ্‌! শেরেক করে করে ফতওয়া দিলে সে ফতওয়া গ্রহণযোগ্য নয়। তখন মাওলানা ছাহেব বুঝতে পারলো যে, শুধুমাত্র মাথা ঝুঁকালেই সিজদা হয় না, বরং নিয়ত থাকা শর্ত।
তাই ফুক্বাহায়ে কিরাম রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যদি সিজদার নিয়তে মাথা ঝুঁকানো হয়, তবে তা সম্পূর্ণ হারাম। আর যদি অনিচ্ছা সত্ত্বেও কদমবুছী করার সময় মাথা কিছুটা ঝুঁকে যায়, তবে তা কদমবুছীরই অন্তর্ভূক্ত, তা সিজদার অন্তর্ভূক্ত নয়।

তা’যীমি সিজদা ও কদমবুছী এক নয়ঃ
তা’যিমী সিজদা এবং কদমবুছী একতো নয়ই বরং ব্যবধানে আসমান-যমীন পার্থক্য। তা’যীমি সিজদা তথা সম্মান প্রদর্শনার্থে কাউকে সিজদা করা প্রকাশ্য হারাম ও শির্‌কের অন্তর্ভুক্ত।
আখিরী রসুল হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “আমি যদি মানুষকে সিজদা করার অনুমতি দিতাম তবে স্ত্রীদেরকে আদেশ করতাম তারা যেন তাদের স্বামীকে সিজদা করে।” (আহমদ, মিশকাত শরীফ)
এ হাদীছ শরীফ, পূর্বের সমস্ত তা’যীমি সিজদাকে রহিত বা বাতিল করেছে। একজন মানুষ যত মর্যাদা-মর্তবা সম্পন্ন হোক না কেন তাকে সিজদা করা জায়িয নেই। আল্লাহ পাকই একমাত্র সিজদার উপযুক্ত অন্য কেউ নয়। কাজেই যারা সিজদা করে আর যারা সিজদা নেয় উভয়ই কাট্টা কাফির এবং মুশরিক।
আল্লাহ পাক বলেন, “আল্লাহ পাক-এর সাথে শরীক (অংশীদার স্থাপন) করো না। নিশ্চয়ই শিরক সবচেয়ে বড় গুনাহ্‌।” (সূরা লুকমান ১৩)
আখিরী রসুল হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “যদি তোমাকে হত্যা করা হয় কিংবা আগুনে নিক্ষেপ করা হয় তথাপি আল্লাহ পাক-এর সাথে কোন ব্যাপারে কাউকে শরীক করবে না।” (মিশকাত শরীফ)
পক্ষান্তরে কদমবুছী সুন্নতে ছাহাবা। সেই সুন্নতের মধ্যে আছে আল্লাহ পাক এবং তাঁর হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পরম সন্তুষ্টি, নৈকট্য। কাজেই যারা কদমবুছীকে নাজায়িয ও হারাম বলবে, শিরক বলে ফতওয়া দিবে তারা শরীয়তের বিধানকে অস্বীকার, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, হালালকে হারাম বলার কারণে কাট্টা কাফিরের অন্তর্ভূক্ত। কেননা হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ করা হয়েছে, “হযরত আব্দুল্লাহ্‌ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, নূরে মুজাস্‌সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যদি তোমরা তোমাদের নবী (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নতকে (অবজ্ঞা বা অপছন্দ করে) তরক কর, তবে তোমরা নিঃসন্দেহে কুফরী করলে।” (আবূ দাউদ শরীফ)
এর উপর ভিত্তি করে আক্বাইদের কিতাবে উল্লেখ করা হয়, “সুন্নতকে ইহানত করা কুফরী।”
আর শরীয়তে ঈমান আনার পর কুফরী করলে অর্থাৎ মুরতাদ হলে, তার ফায়সালা হলো-
তার স্ত্রী তালাক হবে যদি বিয়ে করে থাকে এবং এক্ষেত্রে পুনরায় তওবা না করে বিয়ে না দোহরানো ব্যতীত তার স্ত্রী সাথে বসবাস করা বৈধ হবে না। আর অবৈধ অবস্থায় সন্তান হলে সে সন্তানও অবৈধ হবে। হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে যদি হজ্জ করে থাকে। সমস্ত নেক আমল বরবাদ হয়ে যাবে। তার ওয়ারিশ স্বত্ত্ব বাতিল হবে। তাকে ৩ দিন সময় দেয়া হবে তওবা করার জন্য এবং যদি তওবা করে তবে ক্ষমা হবে। অন্যথায় তার একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদন্ড। কেননা হাদীস শরীফে রয়েছে, তিন কারণে মৃত্যুদন্ড দেয়া জায়িয। যথাঃ (১) ঈমান আনার পর কুফরী করলে অর্থাৎ মুরতাদ হলে, (২) ঐ যিনাকার বা যিনাকারিণী যারা বিবাহিত বা বিবাহিতা, (৩) যে অন্যায়ভাবে কাউকে ক্বতল করে। (তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাযাহ, মসনদে শাফিয়ী, মসনদে বাজ্জার, মুস্তাদরিকে হাকিম)
আর মুরতাদ মারা যাওয়ার পর যারা জানাযার নামাজ পড়ে বা পড়ায় বা জানাযার নামাজে সাহায্য-সহযোগীতা করে, তাদের সকলের উপরই মুরতাদের হুকুম বর্তাবে এবং এ সকল মুরতাদ মরলে বা নিহত হলে তাকে মুসলমানদের কবরস্তানে দাফন করা যাবে না। বরং তাকে কুকুরের ন্যায় একটি গর্তের মধ্যে পুঁতে রাখতে হবে।
কুরআন শরীফ-এ আল্লাহ্‌ পাক ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই যারা কাফির এবং কুফরী অবস্থায় মারা গিয়েছে, তারা যদি পৃথিবী পরিমাণ স্বর্ণ তার ফিদিয়া বা (কুফরীর পরিবর্তে) কাফ্‌ফারা বাবদ দেয় (আমার থেকে বাঁচার জন্য), তা কখনো গ্রহণ করা হবে না। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি বা আযাব এবং তাদের জন্য কস্মিনকালেও সাহায্যকারী নেই।” (সূরা আল ইমরান ৯১)
১০০ হত্যা করেও জান্নাতী


১০০ হত্যা করেও জান্নাতী
হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমান, " বনী ঈস্রাঈলে এক ব্যক্তি ছিলো, যে নিরানব্বই লোককে হত্যা করেছিল।তারপর মাসআলার সমাধান জিজ্ঞেস করার জন্য বের হলো।অতঃপর এক পাদ্রীর নিকট গিয়ে পৌঁছলো।সে জিজ্ঞেস করলো - এর তওবা হতে পারে কিনা। সে বললো, "না"।সে তাকেও মেনে ফেললো।আর মাসআলা জানার জন্য বেরিয়ে পড়লো।তাকে কেউ বললো, "অমুক বস্তিতে যাও"(ওই খানে একজন আল্লাহর অলী আছেন তোমার কি করা উচিত তিনি হয়ত সঠিক কোন সমাধান দিতে পারবেন)। এমতাবস্থায় তাকে মৃত্যু পেয়ে বসলো।তখন সে আপন বুক ওই বস্তির দিকে ফিরিয়ে নিলো।তার সম্পর্কে রহমত ও আযাবের ফিরিশতারা বদানুবাদ করলো।মহান রব ওই বস্তির দিকে নির্দেশ পাঠালেন- 'তুমি তার নিকটস্থ হয়ে যাও। আর ওই বস্তির দিকে নির্দেশ পাঠালেন- তুমি তার থেকে দূরবর্তী হয়ে যাও! তারপর এরশাদ করলেন, "ওই দুই বস্তির মধ্যে মাপো"।তখন তাকে এ বস্তি থেকে এক বিঘত পরিমাণ নিকটে পাওয়া গেল।সুতারাং তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হল। ---- সুবহানাল্লাহ
★মুসলিম শরীফঃ৮ম খন্ড,২৭৪পৃঃ
★বোখারী শরীফ
★মিশকাত শরীফঃহাদিস নংঃ২২১৮

ইতিহাসের পাতায় ওলীআল্লাহগণ উনাদের অঢেল অর্থ খরচের উদাহরণ এবং সেই অর্থের প্রতি হিন্দুদের লোলুপ মনোবৃত্তি
Related image











ইতিহাসের পাতায় ওলীআল্লাহগণ উনাদের অঢেল অর্থ খরচের
উদাহরণ এবং সেই অর্থের প্রতি হিন্দুদের লোলুপ মনোবৃত্তি
চিশতীয়া তরীক্বা উনার একজন প্রধান ওলীআল্লাহ হযরত নিযামউদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি। দিল্লীতে ছিল উনার খানকা শরীফ। ইতিহাসে লেখা রয়েছে, খানকা শরীফ ও লঙ্গরখানার খরচ বহনের জন্য তিনি উনার খাদিমকে নির্দেশ মুবারক দিয়ে রেখেছিলেন, যদি কখনো অর্থের দরকার হয় অমুক তাকের মধ্যে হাত দিতে। প্রয়োজনীয় অর্থ সেখানেই কুদরতীভাবে পাওয়া যেতো।
শুধু হযরত নিযামউদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নন, বরং গোটা ইতিহাসেই ওলীআল্লাহগণ উনাদের অঢেল অর্থ খরচের ইতিহাস পাওয়া যায়। চিশতীয়া তরীক্বা উনার অন্যতম আরো একজন ওলীআল্লাহ হলেন হযরত আলাউল হক রহমতুল্লাহি আলাইহি। উনার খানকা শরীফ ছিল তৎকালীন বাংলার রাজধানী পান্ডুয়ায়। তিনি উনার খানকা শরীফে এতো অর্থ খরচ করতেন যে, তৎকালীন বাংলার বাদশাহ সিকান্দার শাহও তার রাজকোষ থেকে এতো অর্থ খরচ করতে পারতেন না।

সিকান্দার শাহ যদিও কোনো বদকার রাজা ছিলেন না, কিন্তু হযরত আলাউল হক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে সিকান্দার শাহ পান্ডুয়া থেকে সোনারগাঁয়ে পাঠিয়ে দেন। সোনারগাঁয়ে গিয়ে হযরত আলাউল হক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পূর্বের তুলনায় আরো দ্বিগুণ খরচ করা শুরু করেন। কিন্তু কেউ বলতে পারতো না, তিনি এতো অর্থসম্পদ কোথা থেকে পান।

সিকান্দার শাহের পর বাংলার রাজা হন তাঁর পুত্র হযরত গিয়াসউদ্দীন আযমশাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি। সাথে সাথে হযরত আলাউল হক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার স্থানে গদীনশীন হন উনার আওলাদ হযরত নূর কুতুবে আলম রহমতুল্লাহি আলাইহি। হযরত গিয়াসউদ্দীন আযমশাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সময়ে গণেশ নামক এক বিশ্বাসঘাতক হিন্দুর উত্থান ঘটে, যার ষড়যন্ত্রে তিনি শহীদ হন।

এই বিশ্বাসঘাতক গণেশ বাংলার শাসনক্ষমতা দখল করে ওলীআল্লাহগণ উনাদের শহীদ করা শুরু করে। তখন হযরত নূর কুতুবে আলম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উত্তরপ্রদেশের শাসক ইবরাহীম শর্কীকে নির্দেশ দেন গণেশকে আক্রমণ করে উৎখাত করতে।

গণেশ তখন হযরত নূর কুতুবে আলম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ক্বদম মুবারকে পড়ে ক্ষমা চায় এবং নিজের ছেলে যদু’কে ধর্মান্তরিত করে জালালউদ্দীন নাম দিয়ে বাংলার সিংহাসনে বসায়। তখন হযরত নূর কুতুবে আলম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইবরাহীম শর্কীকে নির্দেশ দেন সৈন্য নিয়ে ফিরে যেতে।

ইবরাহীম শর্কী ফিরে যাওয়ার সাথে সাথেই গণেশ ফের তার পূর্বের রূপে আবির্ভূত হয়। গণেশ জালালউদ্দীনকে সিংহাসন থেকে সরিয়ে ফের নিজে ক্ষমতা দখল করে এবং জালালউদ্দীনকে ফের হিন্দুধর্মে ফিরিয়ে আনার অপচেষ্টা চালায়। শুধু তাই নয়, যেই হযরত নূর কুতুবে আলম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দয়ার কারণে গণেশ প্রাণভিক্ষা পেয়েছিল, সেই হযরত নূর কুতুবে আলম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আওলাদ হযরত আনোয়ার রহমতুল্লাহি আলাইহি ও নাতি হযরত জাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদেরকে গণেশ আটক করে সোনারগাঁয়ে নিয়ে আসে। গণেশের উদ্দেশ্য ছিল, উনাদেরকে সে নির্যাতন করে সে উনাদের পূর্বপুরুষ হযরত আলাউল হক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ধনসম্পদের খোঁজ বের করবে। গণেশের নির্যাতনে হযরত আনোয়ার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি শহীদ হন। নাউযুবিল্লাহ!

ইতিহাসের এই দিকটি সম্পর্কে অনেকেই জানে না। মুসলমান ওলীআল্লাহ ও ছূফী-দরবেশগণ সব সময়েই অঢেল অর্থসম্পদের অধিকারী ছিলেন, বিপরীতে মুশরিক হিন্দুরা সবসময় উনাদের ধনসম্পদ কেড়ে নিতে তৎপর থাকতো। গণেশ তার উদ্দেশ্যে সফল হতে পারেনি, কারণ হযরত আনোয়ার রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার শাহাদাতী শান মুবারক গ্রহণের পরই গণেশ মৃত্যুমুখে পতিত হয় এবং জালালউদ্দীন বাংলার সিংহাসনে আরোহন করে বাংলায় ফের মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত করেন।

গণেশ মারা গিয়েছিল, কিন্তু গণেশের উত্তরসূরিদের উপর থেকে মুসলমান শাসক, ব্যবসায়ী ও জমিদারেরা তাদের আস্থা ও বিশ্বাস ত্যাগ করেনি। নাউযুবিল্লাহ! যার অবশ্যম্ভাবী ফল পাওয়া গিয়েছিল ব্রিটিশ আমলে, যখন গণেশের মতোই মুসলমানদের অধীনস্থ হিন্দুরা বিশ্বাসঘাতকতা করে মুসলমানদের জমিদারী ও অর্থসম্পদ দখল করেছিল। ব্রিটিশ আমলে গণেশের উত্তরসূরিরা আর ছোবল দিতে ব্যর্থ হয়নি, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত আইন করে ব্রিটিশ আমলে হিন্দু আর ব্রিটিশরা মিলে ছূফী দরবেশ ও ওলীআল্লাহগণ উনাদের থেকে সমস্ত লাখেরাজ সম্পত্তি কেড়ে নিয়েছিল। এর ফলশ্রুতিতে বাংলায় ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার ধারা অস্তমিত হয়ে বাংলায় মুসলমানদের প্রভাব প্রতিপত্তি সম্পূর্ণরূপে শেষ হয়ে গিয়েছিল, যার জের বাঙালি মুসলমান আজও বহন করে চলেছে। নাউযুবিল্লাহ!

হক্কানী শায়েখ উনার কাছে বাইয়াত হওয়া ফরয
Image result for বায়য়াতহক্কানী শায়েখ উনার কাছে বাইয়াত হওয়া ফরয

কজন হক্কানী শায়েখ তথা ওলী আল্লাহ উনার নিকট বাইয়াত হয়ে জিকির-ফিকির করে ইছলাহ হাছিল করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরয। নিচে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা-কিয়াস এর দৃষ্টিতে আলোচনা করা হলোঃ

১। মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ইমহান আল্লাহ পাক উনার রহমত মুহসিন বা আল্লাহওয়ালাগণ উনাদের নিকটে।” (সূরা আ’রাফঃ আয়াত শরীফ ৫৬)


২। কামিল মুর্শিদের গুরুত্ব সম্পর্কে কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,“আল্লাহ পাক যাঁকে হিদায়েত দান করেন, সেই হিদায়েত পায়। আর যে ব্যক্তি গুমরাহীর মধ্যে দৃঢ় থাকে, সে কোন ওলীয়ে মুর্শিদ (কামিল শায়খ বা পীর) উনার ছোহবত লাভ করতে পারে না।” (সূরা কাহাফঃআয়াত শরীফ-১৭)

৩। মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, “তোমরা সব আল্লাহওয়ালা হয়ে যাও”। (সূরা ইমরানঃ আয়াত শরীফ-৭৯)

৪। মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালাম পাক-এ ইরশাদ করেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো এবংছাদিক্বীন বা সত্যবাদীগণের সঙ্গী হও।” (সূরা তওবাঃ আয়াত শরীফ-১১৯) এখানে ছাদিক্বীন বলতে ওলী-আল্লাহ উনাকেরকেই বুঝানো হয়েছে।

৫। মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ আরো ইরশাদ করেন, “মহানআল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইত্বায়াত কর এবং তোমাদের মধ্যে যাঁরা (উলিল আমর) আদেশদাতা, উনাদেরকে অনুসরণ কর”।

৬। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আমাকে পাওয়ার জন্য উসিলা তালাশ কর”।

৭। পবিত্র কুরআন শরীফ আরো উল্লেখ রয়েছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “আপনি নিজেকে উনাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন, যাঁরা সকাল-সন্ধ্যায় উনাদের রবকে ডাকে উনার সন্তুষ্টি হাছিলের জন্য। অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক, উনার সন্তুষ্টি হাছিলের জন্য ক্বলবী যিকির করেন, উনার অনুসরণ ও ছোহ্বত (সাক্ষাত) এখতিয়ার করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।” (সূরা কাহাফঃ আয়াত শরীফ- ২৮)


৮। হাদীস শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “আদম সন্তানের শরীরে এক টুকরা গোশতআছে যদি সেটা শুদ্ধ হয়ে যায় তবে সমস্ত শরীর শুদ্ধ হয়ে যায়। আর যদি সেটা অশুদ্ধ হয় তাহলে সমস্ত শরীর বরবাদ হয়ে যায়, সাবধান ওটা হচ্ছে ক্বলব”। (বুখারী শরীফ)

৯। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “যার ক্বলবে আমার যিকির জারি নেই সে নফসের অনুসরণ করে এবং তার আমলগুলো হয় শরীয়তের খিলাফ”।

১০। মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ বলেন, “সাবধান! মহানআল্লাহ পাক উনার যিকির দ্বারা দিল ইতমিনান হয়”। এই আয়াতের ব্যাখ্যায় হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “শয়তান আদম সন্তানের ক্বলবের উপর বসে, যখন আল্লাহ পাক উনারযিকির করে তখন পালিয়ে যায়, আর যখন আল্লাহ পাক উনার যিকির থেকে গাফিল হয় তখন শয়তান ওসওয়াসা দেয়”।

১১। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ করেন, “প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য (জরুরত আন্দাজ) ইলম অর্জন করা ফরয।” (বায়হাক্বী, মিশকাত,মিরকাত, লুময়াত, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, শরহুত্ ত্বীবী, মোযাহেরে হক্ব, আশয়াতুল লুময়াত)

১২। হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “ইলম দু’প্রকার- (১) ক্বলবী ইলম অর্থাৎ ইলমে তাছাউফ। আর এটাই মূলতঃ উপকারী ইলম। (২) যবানী ইলম অর্থাৎ ইলমে ফিক্বাহ্, যা আল্লাহ্ পাক উনার পক্ষ হতে বান্দার জন্য দলীল।” (দারিমী, তারগীব ওয়াত তারহীব, তারীখ, আব্দুল বার, দাইলামী, বায়হাক্বী, মিশকাত, মিরকাত,শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব)

সকলেই একমত যে, ইলমে তাছাউফ অর্জন করার মাধ্যমে অন্তর পরিশুদ্ধ করতঃ হুযূরী ক্বলব হাছিল করা তথা অন্ততঃপক্ষে বিলায়েতে আম হাছিল করা ফরয। এ ফরয ততক্ষণ পর্যন্ত আদায় করা সম্ভব হবেনা,যতক্ষণ পর্যন্ত একজন কামিল মুর্শিদ, উনার নিকট বাইয়াত না হবে। তাই বাইয়াত গ্রহণ করাও ফরয।

১৩। এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ “তাফসীরে মাযহারী” তে উল্লেখ আছে যে,“যে কাজ বা আমল ব্যতীত ফরযসমূহ আদায় করা সম্ভব হয়না, উক্ত ফরযগুলোকে আদায় করার জন্য সে কাজ বা আমল করাও ফরয”।

১৪। হানাফী মায্হাবের মশহুর ফিক্বাহর কিতাব “দুররুল মুখতার” এ উল্লেখ আছে, “যে আমল ব্যতীত কোন ফরয পূর্ণ হয়না; উক্ত ফরয পূর্ণ করার জন্য ঐ আমল করাটাও ফরয”।

১৫। সুলতানুল আরিফীন, হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি, সাইয়্যিদুত্ ত্বায়িফা হযরত জুনায়েদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হুজ্জাতুল ইসলাম, হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ আরো অনেকেই বলেন যে, “যার কোন পীর বা মুর্শিদ নেই তার মুর্শিদ বা পথ প্রদর্শক হলো শয়তান”। (ক্বওলুল জামীল, নুরুন আলা নূর, তাছাউফ তত্ত্ব)

১৬। হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “তোমরা কার নিকট থেকে দ্বীন শিক্ষা করছ, তাকে দেখে নাও”। (মুসলিম শরীফ)। তাই, ইসলাম কখনও বলে না যে তোমরা কোন ওলী-আল্লাহর কাছে যেও না, বরং উনাদের কাছে যাওয়ার জন্যই নির্দেশ করা হয়েছে।

১৭। মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, “যদি তোমরা না জান, তবে আহলে যিকির বা আল্লাহওয়ালাগণকে জিজ্ঞেস করে জেনে নাও”। (সূরা নহলঃআয়াত শরীফ- ৪৩ ও সূরা আম্বিয়াঃ আয়াত শরীফ-৭)

উল্লিখিত উছুলের ভিত্তিতে সুস্পষ্টভাবে এটিই প্রমাণিত হয় যে, ফরয পরিমাণ ইলমে তাছাউফ যেহেতু অর্জন করা ফরয, আর তা যেহেতু কামিল মুর্শিদ বা পীর ছাহেব, উনার নিকট বাইয়াত হওয়া ব্যতীত অর্জন করা সম্ভব নয়, সেহেতু একজন কামিল মুর্শিদ অর্থাৎ যিনি সর্বদা আল্লাহ্ পাক, উনার যিকিরে মশগুল,উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করাও ফরয।
হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম অন্যান্য নারীদের মত নন।
Image result for মদীনা শরীফহযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম অন্যান্য নারীদের মত নন।
হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা একদিকে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবী। আরেকদিকে উনারা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহাল তথা আহলে বাইত, উনাদের অন্তর্ভুক্ত। সর্বোপরি উনারা হচ্ছেন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র আহলিয়া বা আযওয়াজে মুত্বাহহারাত। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মু’মিনদের নিকট তাঁদের জানের চেয়ে প্রিয়। আর উনার পবিত্র আযওয়াজ বা আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালাম উনারা হলেন তাঁদের (মু’মিনগণের) মাতা।”

, যার কারণে অন্যান্য পরহেযগার-মুত্তাক্বী মহিলাগণের চেয়ে উনাদেরকে অসংখ্য-অগণিত নিয়ামত, মর্যাদা, মর্তবা, ফাযায়িল-ফযীলত প্রদান করা হয়েছে। যা স্বয়ং খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা প্রদান করেছেন।
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক-এ ইরশাদ করেন, “হে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যারা আহলিয়া অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম! আপনারা অন্য নারীদের মতো নন।” (সূরা আহযাব : আয়াত শরীফ ৩২)
এ আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় বিশ্ববিখ্যাত ও সর্বজনমান্য তাফসীরের কিতাব “তাফসীরে মাযহারী”-এর ৭ম খন্ডের ৩৩৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে- “হে উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম! আপনারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সহধর্মিনী হওয়ার কারণেই মর্যাদা, মর্তবা, ফযীলতের দিক থেকে কোনো মহিলাই আপনাদের সমকক্ষ নয়। .... হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি (আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায়) বলেন, আপনাদের মর্যাদা, মর্তবা, ফাযায়িল, ফযীলত অন্যান্য সতী-সাধ্বী মহিলাগণ উনাদের মতো নয়। বরং আপনাদের সম্মান-মর্যাদা, ফাযায়িল-ফযীলত, অধিক পুণ্য ও প্রতিদান আমার নিকটে অধিক মর্যাদা সম্পন্ন, অনেক ঊর্ধ্বে। এ আয়াত শরীফ-এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সমস্ত মহিলাগণ উনাদের উপরে আপনাদের অধিক মর্যাদা, মর্তবা, ফাযায়িল, ফযীলত রয়েছে।” (অনুরূপভাবে তাফসীরে খাযিন ৫ম খন্ডের ২৫৭ পৃষ্ঠা, তাফসীরে বাগবী ৫ম খন্ডের ২৫৭ পৃষ্ঠা, তাফসীরে মাদারিকুত তানযীল ৩য় খন্ডের ৪৬৫ পৃষ্ঠা এবং অন্যান্য সকল নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থে আলোচনা রয়েছে।)

থালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি আরো বলেন- “হে আহলে বাইতগণ! খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি চান আপনাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং আপনাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে।” (সূরা আহযাব : আয়াত শরীফ ৩৩) এ আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় “তাফসীরে মাযহারী”-এর ৭ম খন্ডের ৩৩৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে- “হযরত ইকরামা ও মুক্বাতিল রহমতুল্লাহি আলাইহিমা উনারা বলেন, আয়াত শরীফ-এ ‘আহলে বাইত’ দ্বারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া অর্থাৎ হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে।”
“তাফসীরে ইবনে কাছীর”-এর ৩য় খন্ডের ৭৬৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “এ আয়াত শরীফ এটাই প্রমাণ করে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া অর্থাৎ হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা আহলে বাইত উনাদের অন্তর্ভুক্ত।”
কাজেই, প্রত্যেক উম্মতের জন্য, প্রত্যেক মু’মিন-মুসলমানের জন্য হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করা, উনাদের প্রতি সুধারণা পোষণ করা এবং উনাদেরকে অনুসরণ করা কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর নির্দেশ তথা ফরযের অন্তর্ভুক্ত।