হক্কানী শায়েখ উনার কাছে বাইয়াত হওয়া ফরয

Image result for বায়য়াতহক্কানী শায়েখ উনার কাছে বাইয়াত হওয়া ফরয

কজন হক্কানী শায়েখ তথা ওলী আল্লাহ উনার নিকট বাইয়াত হয়ে জিকির-ফিকির করে ইছলাহ হাছিল করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরয। নিচে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা-কিয়াস এর দৃষ্টিতে আলোচনা করা হলোঃ

১। মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ইমহান আল্লাহ পাক উনার রহমত মুহসিন বা আল্লাহওয়ালাগণ উনাদের নিকটে।” (সূরা আ’রাফঃ আয়াত শরীফ ৫৬)


২। কামিল মুর্শিদের গুরুত্ব সম্পর্কে কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,“আল্লাহ পাক যাঁকে হিদায়েত দান করেন, সেই হিদায়েত পায়। আর যে ব্যক্তি গুমরাহীর মধ্যে দৃঢ় থাকে, সে কোন ওলীয়ে মুর্শিদ (কামিল শায়খ বা পীর) উনার ছোহবত লাভ করতে পারে না।” (সূরা কাহাফঃআয়াত শরীফ-১৭)

৩। মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, “তোমরা সব আল্লাহওয়ালা হয়ে যাও”। (সূরা ইমরানঃ আয়াত শরীফ-৭৯)

৪। মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালাম পাক-এ ইরশাদ করেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো এবংছাদিক্বীন বা সত্যবাদীগণের সঙ্গী হও।” (সূরা তওবাঃ আয়াত শরীফ-১১৯) এখানে ছাদিক্বীন বলতে ওলী-আল্লাহ উনাকেরকেই বুঝানো হয়েছে।

৫। মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ আরো ইরশাদ করেন, “মহানআল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইত্বায়াত কর এবং তোমাদের মধ্যে যাঁরা (উলিল আমর) আদেশদাতা, উনাদেরকে অনুসরণ কর”।

৬। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আমাকে পাওয়ার জন্য উসিলা তালাশ কর”।

৭। পবিত্র কুরআন শরীফ আরো উল্লেখ রয়েছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “আপনি নিজেকে উনাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন, যাঁরা সকাল-সন্ধ্যায় উনাদের রবকে ডাকে উনার সন্তুষ্টি হাছিলের জন্য। অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক, উনার সন্তুষ্টি হাছিলের জন্য ক্বলবী যিকির করেন, উনার অনুসরণ ও ছোহ্বত (সাক্ষাত) এখতিয়ার করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।” (সূরা কাহাফঃ আয়াত শরীফ- ২৮)


৮। হাদীস শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “আদম সন্তানের শরীরে এক টুকরা গোশতআছে যদি সেটা শুদ্ধ হয়ে যায় তবে সমস্ত শরীর শুদ্ধ হয়ে যায়। আর যদি সেটা অশুদ্ধ হয় তাহলে সমস্ত শরীর বরবাদ হয়ে যায়, সাবধান ওটা হচ্ছে ক্বলব”। (বুখারী শরীফ)

৯। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “যার ক্বলবে আমার যিকির জারি নেই সে নফসের অনুসরণ করে এবং তার আমলগুলো হয় শরীয়তের খিলাফ”।

১০। মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ বলেন, “সাবধান! মহানআল্লাহ পাক উনার যিকির দ্বারা দিল ইতমিনান হয়”। এই আয়াতের ব্যাখ্যায় হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “শয়তান আদম সন্তানের ক্বলবের উপর বসে, যখন আল্লাহ পাক উনারযিকির করে তখন পালিয়ে যায়, আর যখন আল্লাহ পাক উনার যিকির থেকে গাফিল হয় তখন শয়তান ওসওয়াসা দেয়”।

১১। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ করেন, “প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য (জরুরত আন্দাজ) ইলম অর্জন করা ফরয।” (বায়হাক্বী, মিশকাত,মিরকাত, লুময়াত, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, শরহুত্ ত্বীবী, মোযাহেরে হক্ব, আশয়াতুল লুময়াত)

১২। হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “ইলম দু’প্রকার- (১) ক্বলবী ইলম অর্থাৎ ইলমে তাছাউফ। আর এটাই মূলতঃ উপকারী ইলম। (২) যবানী ইলম অর্থাৎ ইলমে ফিক্বাহ্, যা আল্লাহ্ পাক উনার পক্ষ হতে বান্দার জন্য দলীল।” (দারিমী, তারগীব ওয়াত তারহীব, তারীখ, আব্দুল বার, দাইলামী, বায়হাক্বী, মিশকাত, মিরকাত,শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব)

সকলেই একমত যে, ইলমে তাছাউফ অর্জন করার মাধ্যমে অন্তর পরিশুদ্ধ করতঃ হুযূরী ক্বলব হাছিল করা তথা অন্ততঃপক্ষে বিলায়েতে আম হাছিল করা ফরয। এ ফরয ততক্ষণ পর্যন্ত আদায় করা সম্ভব হবেনা,যতক্ষণ পর্যন্ত একজন কামিল মুর্শিদ, উনার নিকট বাইয়াত না হবে। তাই বাইয়াত গ্রহণ করাও ফরয।

১৩। এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ “তাফসীরে মাযহারী” তে উল্লেখ আছে যে,“যে কাজ বা আমল ব্যতীত ফরযসমূহ আদায় করা সম্ভব হয়না, উক্ত ফরযগুলোকে আদায় করার জন্য সে কাজ বা আমল করাও ফরয”।

১৪। হানাফী মায্হাবের মশহুর ফিক্বাহর কিতাব “দুররুল মুখতার” এ উল্লেখ আছে, “যে আমল ব্যতীত কোন ফরয পূর্ণ হয়না; উক্ত ফরয পূর্ণ করার জন্য ঐ আমল করাটাও ফরয”।

১৫। সুলতানুল আরিফীন, হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি, সাইয়্যিদুত্ ত্বায়িফা হযরত জুনায়েদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হুজ্জাতুল ইসলাম, হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ আরো অনেকেই বলেন যে, “যার কোন পীর বা মুর্শিদ নেই তার মুর্শিদ বা পথ প্রদর্শক হলো শয়তান”। (ক্বওলুল জামীল, নুরুন আলা নূর, তাছাউফ তত্ত্ব)

১৬। হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “তোমরা কার নিকট থেকে দ্বীন শিক্ষা করছ, তাকে দেখে নাও”। (মুসলিম শরীফ)। তাই, ইসলাম কখনও বলে না যে তোমরা কোন ওলী-আল্লাহর কাছে যেও না, বরং উনাদের কাছে যাওয়ার জন্যই নির্দেশ করা হয়েছে।

১৭। মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, “যদি তোমরা না জান, তবে আহলে যিকির বা আল্লাহওয়ালাগণকে জিজ্ঞেস করে জেনে নাও”। (সূরা নহলঃআয়াত শরীফ- ৪৩ ও সূরা আম্বিয়াঃ আয়াত শরীফ-৭)

উল্লিখিত উছুলের ভিত্তিতে সুস্পষ্টভাবে এটিই প্রমাণিত হয় যে, ফরয পরিমাণ ইলমে তাছাউফ যেহেতু অর্জন করা ফরয, আর তা যেহেতু কামিল মুর্শিদ বা পীর ছাহেব, উনার নিকট বাইয়াত হওয়া ব্যতীত অর্জন করা সম্ভব নয়, সেহেতু একজন কামিল মুর্শিদ অর্থাৎ যিনি সর্বদা আল্লাহ্ পাক, উনার যিকিরে মশগুল,উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করাও ফরয।

0 Comments: