নাস্তিকদের আপত্তি-আকাশ এবং পৃথিবী কিভাবে আসলো?- আলাদাভাবে নাকি একসাথে

 আকাশ এবং পৃথিবী কিভাবে আসলো?- আলাদাভাবে নাকি একসাথে

নাস্তিকদের আপত্তি : আকাশ এবং পৃথিবী কিভাবে আসলো?- আলাদাভাবে (universe expanding) (Quran 21:30) নাকি একসাথে (universe contracting) (Quran 41:11)!

খণ্ডণ: আকাশ এবং যমীন আলাদাভাবে বা একসাথে আসার কিছুই নেই। বরং প্রথমাবস্থায় সমস্ত আসমান ও সকল যমীন ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। তারপর এর অভ্যন্তরে বাতাস প্রবেশ করিয়ে উভয়কে আলাদা করে দেয়া হয়েছে। যেহেতু প্রথমাবস্থায় সমস্ত আসমান সম্মিলিত অবস্থায় ছিল তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ ৩০ (Quran 21:30 উনার মধ্যে اَلسَّمَاوَاتِ ‘আসসামাওয়াত্’ বহুবচন শব্দ মুবারক ব্যবহার করেছেন আর যমীনের গঠন উপাদান একই বস্তু বিধায় اَلْاَرْضَ ‘আরদ্ব’ একবচন শব্দ মুবারক ব্যবহৃত হয়েছে। আর বাতাস সৃষ্টি করে আসমান এবং যমীনের অভ্যন্তরভাগ দিয়ে প্রবাহিত করিয়ে উভয়ের মধ্যে ব্যবধান তৈরির আগ পর্যন্ত পরস্পর একত্রিভূত ছিল বিধায় رَتْقًا ‘রতক্ব’ শব্দ মুবারক ব্যবহৃত হয়েছে, যার অর্থ বন্ধ করা, একত্রিভূত করা। আর فَتَقْنَا ‘ফাতক্বান’ অর্থ পৃথক করা। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

أَوَلَمْ يَرَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنَاهُمَا ۖ وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَاءِ كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّ ۖ أَفَلَا يُؤْمِنُونَ

অর্থ : “কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে, আসমানসমূহ ও যমীনের মুখ বন্ধ ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না?”  (পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩০)

এ সম্পর্কে হযরত ইকরামা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত আতিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা বলেন-

ان السموات كانت رتقاً لا تـمطر والارض كانت رتقاً لا تنبت ففتق السماء بالـمطر والارض بالنبات 

অর্থ : “প্রথমাবস্থায় আসমান মার্গ ছিলো অভেদ্য, তাই বৃষ্টিপাত হতো না। আর যমীনও ছিল অচ্ছেদ্য, তাই যমীনে জন্ম নিতো না কোন উদ্ভিদ। মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের এই অনমনীয় অবস্থা দূর করে দিলেন। ফলে শুরু হলো বৃষ্টিপাত। যমীনেও অঙ্কুরোদগম ঘটলো উদ্ভিদরাজির।” (তাফসীরে মাযহারী : পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ ৩০)

বাতাস প্রবাহের মাধ্যমে যখন আসমান ও যমীনকে পৃথক করে দেয়া হলো এমতাবস্থায় মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

‏ثُـمَّ اسْتَوٰى اِلٰى السَّمَاءِ وَهِيَ دُخَانٌ فَقَالَ لَـهَا وَلِلْاَرْضِ ائْتِيَا طَوْعًا اَوْ كَرْهًا قَالَتَا اَتَيْنَا طَائِعِيْنَ.

অর্থ : “অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন যা ছিল ধু¤্রকুঞ্জ, অতঃপর তিনি তাকে ও যমীনকে বললেন, তোমরা উভয়ে আসো ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বলল, আমরা স্বেচ্ছায় আসলাম।” (পবিত্র সূরা হা-মীম সাজদাহ্ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০-১১)

এখানে ثُـمَّ اسْتَوٰى ‘ছুম্মাস তাওয়া’ অর্থ অতঃপর মনোযোগ দিলেন, এই ثُـمَّ শব্দ মুবারক কালক্ষেপনের জন্য ব্যবহৃত হয়নি বরং এই শব্দ মুবারক দিয়ে আসমান ও যমীন- এই দুই সৃষ্টির মধ্যে পার্থক্য নির্ণীত হয়েছে।

আর হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, অত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত- لَـهَا وَلِلْاَرْضِ ائْتِيَا طَوْعًا اَوْ كَرْهًا ‘তোমরা উভয়ে আসো ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়’ দ্বারা মহান আল্লাহ পাক তিনি আসমান ও যমীন উভয়কে নির্দেশ মুবারক দিলেন, আমি আমার বান্দাদের জন্য যে সকল কল্যাণকর বস্তু তোমাদের মধ্যে সৃষ্টি করেছি, সেগুলো প্রকাশ করো। মহান আল্লাহ পাক তিনি তখন আসমানকে আদেশ মুবারক দিলেন, হে আসমান! তুমি প্রকাশ করো তোমার সূর্য, চাঁদ ও নক্ষত্রপুঞ্জকে। আর যমীনকে নির্দেশ মুবারক দিলেন, আর হে যমীন! তুমি তোমার সমুদ্রসমূহকে সলিলিত ও তরঙ্গময় করো এবং স্থলভাগকে করো বৃক্ষময়, পুষ্পময়, শস্যময় ও তৃণগুল্মবিশিষ্ট। (তাফসীরে মাযহারী : পবিত্র সূরা হা-মীম সাজদাহ্ শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ ১১)

সুতরাং উপরের আলোচনা হতে বুঝা গেল যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি প্রথমাবস্থায় সমস্ত আসমান ও সকল যমীনকে একত্রিভূত করে সৃষ্টি করেন। অতঃপর উভয়ের অভ্যন্তরভাগ দিয়ে বাতাস প্রবাহিত করিয়ে উভয়কে আলাদা করে দেন। বাতাস প্রবাহের ফলে তাদের অনমনীয় অবস্থা দূর হয়ে অভেদ্য আসমান হতে বৃষ্টিপাত হলো আর অচ্ছেদ্য যমীনে জন্ম নিলো উদ্ভিদ। আসমান ও যমীন- এই দুই সৃষ্টির মধ্যে যখন পার্থক্য নির্ণীত হয়ে গেল, এমতাবস্থায় মহান আল্লাহ পাক তিনি আসমান ও যমীন উভয়কে বান্দাদের জন্য সৃষ্টিকৃত সকল কল্যাণকর বস্তু প্রকাশ করতে নির্দেশ মুবারক দিলেন। ফলে আকাশে সূর্য, চাঁদ ও নক্ষত্রপুঞ্জ প্রকাশিত হলো আর যমীনে সমুদ্রসমূহ তরঙ্গময় ও স্থলভাগ বৃক্ষময় হয়ে উঠলো।

অর্থাৎ উভয় আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে কোন বৈপরীত্যই নেই বরং রয়েছে ধারাবাহিকতা। কিন্তু নাস্তিকরা বিদ্বেষের কারণে কিছুই বুঝতে পারে না।


পৃথিবী এবং চন্দ্রের আবর্তনের কারনে গ্রহন ঘটে থাকে! কিন্তু হাদিস অনুসারে, চন্দ্র-সূর্যের গ্রহন ঘটে আল্লাহ কতৃক মানুষকে ভয় পাওয়ানোর উদ্দেশ্যে এ ধরনের কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধর্ম কোন কোন সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত বলে এখনো আপনার মনে হয়?

পৃথিবী এবং চন্দ্রের আবর্তনের কারনে গ্রহন ঘটে থাকে! কিন্তু হাদিস অনুসারে, চন্দ্র-সূর্যের গ্রহন ঘটে আল্লাহ কতৃক মানুষকে ভয় পাওয়ানোর উদ্দেশ্যে এ ধরনের কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধর্ম কোন কোন সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত বলে এখনো আপনার মনে হয়? 

নাস্তিকদের আপত্তি : পৃথিবী এবং চন্দ্রের আবর্তনের কারনে গ্রহন ঘটে থাকে! কিন্তু হাদিস অনুসারে, চন্দ্র-সূর্যের গ্রহন ঘটে আল্লাহ কতৃক মানুষকে ভয় পাওয়ানোর উদ্দেশ্যে (Sahih Bukhari 2:18:158)!  এ ধরনের কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধর্ম কোন কোন সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত বলে এখনো আপনার মনে হয়? 

খণ্ডণ : যেহেতু নাস্তিকরা মূর্খ। তাই তাদের সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞানের অভাব রয়েছে। আর এজন্যই এ ধরণের আপত্তির অবতারণা করেছে।

সাধারণতঃ অমাবস্যার সময় সূর্যগ্রহণ হয় আর পূর্ণ জ্যোৎস্নার সময় হয় চন্দ্রগ্রহণ।

অমাবস্যার সময় চাঁদ থাকে সূর্য এবং পৃথিবীর মাঝখানে। এ সময় যদি চাঁদ, পৃথিবী ও সূর্যের কেন্দ্রগুলি একই সরল রেখায় অবস্থান করে তখন চাঁদ সূর্যকে ঢেকে ফেলে এবং একটি সূর্যগ্রহণ পরিলক্ষিত হয়।

একইভাবে পূর্ণ জ্যোৎস্নার সময় বা পূর্ণিমায় পৃথিবী থাকে চাঁদ আর সূর্যের মাঝখানে। তখন পৃথিবী, সূর্য ও চন্দ্র যদি একই সরল রেখায় থাকে। তাহলে পৃথিবীর ছায়া চাঁদের উপর পড়ে। এটিই চন্দ্রগ্রহণ।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, অমাবস্যা সময় তো চাঁদ পৃথিবী এবং সূর্যের মাঝখানে আসে, তবে প্রত্যেক অমাবস্যায় সূর্যগ্রহণ হয় না কেন? তেমনি করে প্রতি জ্যোৎস্নায় তো পৃথিবী সূর্য এবং চাঁদের মাঝখানে আসে তবে প্রতি জ্যোৎস্নায় চন্দ্রগ্রহণ হয় না কেন?

বস্তুত, মাঝখানে আসা আর এক সরল রেখায় আসা তো এক কথা নয়। গ্রহণের জন্য সূর্য, চন্দ্র ও পৃথিবীকে আসতে হবে এক সরলরেখায় বা সরলরেখার খুব কাছাকাছি। এর কারণ হচ্ছে পৃথিবীর কক্ষপথ আর চাঁদের কক্ষপথ একই তলে নেই, প্রায় ৫ক্ক হেলান অবস্থান আছে। তাই সামনাসামনি হলেও পৃথিবীর ছায়া চাঁদের উপর না পড়েই জ্যোৎস্না চলে যেতে পারে, কোন চন্দ্রগ্রহণ হবে না। একইভাবে চাঁদের পৃষ্ঠ অমাবস্যায় সূর্যকে না ঢেকেও আপন পথে চলে যেতে পারে। তাই সব অমাবস্যায় সূর্য গ্রহণ হয় না।

আর এই জন্যই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে,

عَنْ حَضْرَتْ اَبِي بَكْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ اٰيَتَانِ مِنْ اٰيَاتِ اللهِ لَا يَنْكَسِفَانِ لِمَوْتِ اَحَدٍ وَلَكِنَّ اللهَ تَعَالَى يُـخَوِّفُ بِـهَا عِبَادَهُ‏.‏

অর্থ : “হযরত আবূ বাকারাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক উনার নিদর্শন সমূহের মধ্যে দু’টি নিদর্শন হচ্ছে সূর্য ও চাঁদ। কারো মৃত্যুর কারণে এ দু’টির গ্রহণ হয় না। তবে গ্রহণের মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার বান্দাদের সতর্ক করে থাকেন।” (বুখারী শরীফ : কিতাবুল কুসুফ : হাদীছ শরীফ নং ১০৪৮)

বস্তুত মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার বান্দাদেরকে সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ দ্বারা ভীতি প্রদর্শন করেন, যাতে মানুষ ঈমান ও আমলমুখী হয় এবং পাপাচার বন্ধ করে। কেননা, যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বান্দাদেরকে সতর্ক করতে চান তখনই গ্রহণ সংঘটিত হয় অর্থাৎ চাঁদ, পৃথিবী ও সূর্যের কেন্দ্রগুলি তখন একই সরল রেখায় অবস্থান করে।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এ প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ كَسَفَتِ الشَّمْسُ عَلَى عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ مَاتَ حَضْرَتْ اِبْرَاهِيمُ عَلَيْهِ السَّلَامَ فَقَالَ النَّاسُ كَسَفَتِ الشَّمْسُ لِمَوْتِ حَضْرَتْ إِبْرَاهِيمَ‏ عَلَيْهِ السَّلَامَ.‏ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ لَا يَنْكَسِفَانِ لِمَوْتِ اَحَدٍ وَلَا لِـحَيَاتِهِ فَاِذَا رَاَيْتُمْ فَصَلُّوا وَادْعُوا اللهَ‏‏.‏

অর্থ : “হযরত মুগীরা ইব্নু শু’বাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত নূরুর রাবি আলাইহিস সালাম তিনি যেদিন পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন, সেদিন সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা তখন বলতে লাগলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত নূরুর রাবি আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশের কারণেই সূর্যগ্রহণ হয়েছে। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কারো ইন্তিকাল বা বিলাদতের কারণে সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ হয় না। আপনারা যখন তা দেখবেন, তখন নামায আদায় করবেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দু’আ করবেন।” (বুখারী শরীফ : কিতাবুল কুসুফ : হাদীছ শরীফ নং ১০৪৩)

এভাবে আরো অনেক পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে বিভিন্ন ইবাদতের নির্দেশ মুবারক প্রদান করা হয়েছে।

যেহেতু আপাতদৃষ্টিতে সূর্য গ্রহণ বা চন্দ্র গ্রহণের সময় মহাকাশের ব্যাপক পরিবর্তনের বিষয়টি বুঝা যায় না। তাই এ সময় ইবাদতের বিষয়টিকে কুসংস্কার বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। নাঊযুবিল্লাহ! অথচ আধুনিক সৌর বিজ্ঞানীদের মতে, মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহ দু’টির কক্ষপথের মধ্যবলয়ে রয়েছে এস্টিরয়েড (অংঃবৎড়রফ), মিটিওরিট (গবঃবড়ৎরঃব) ও উল্কাপিন্ড প্রভৃতি ভাসমান পাথরের এক সুবিশাল বেল্ট (ইবষঃ), এগুলোকে এককথায় গ্রহাণুপুঞ্জ বলা হয়। গ্রহানুপুঞ্জের এই বেল্ট আবিষ্কৃত হয় ১৮০১ সালে। বেল্টের এক একটি ঝুলন্ত পাথরের ব্যাস ১২০ মাইল থেকে ৪৫০ মাইল। বিজ্ঞানীরা পাথরের এই ঝুলন্ত বেল্ট নিয়ে শঙ্কিত। কখন জানি এ বেল্ট থেকে কোন পাথর নিক্ষিপ্ত হয়ে পৃথিবীর বুকে আঘাত হানে, যা পৃথিবীর জন্য ধ্বংসের কারণ হয় কিনা? গ্রহাণুপুঞ্জের পাথরখন্ডগুলোর মাঝে সংঘর্ষের ফলে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাথরখন্ড প্রতিনিয়তই পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে। কিন্তু সেগুলো পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে এসে জ্বলে ভস্ম হয়ে যায়। বৃহদাকার পাথরখন্ডগুলো যদি পৃথিবীতে আঘাত করে তাহলে কি হবে?

বিজ্ঞানীরা বলে, সূর্য অথবা চন্দ্রগ্রহণের সময় ঝুলন্ত পাথরগুলো পৃথিবীতে ছুটে এসে আঘাত হানার আশংকা বেশী থাকে। কারণ হচ্ছে, এসময় সূর্য, চন্দ্র ও পৃথিবী একই সমান্তরালে, একই অক্ষ বরাবর থাকে। আগন্তুক গ্রহাণু সূর্য, চন্দ্র ও পৃথিবী ত্রয়ের সমান্তরাল অক্ষ বরাবর স্বল্প কৌণিক মান সৃষ্টি করে ধাবমান হওয়ার সময় ত্রয়ী বিন্দু শক্তি রেখা দ্বারা বিচ্যুত হয়ে সোজাসুজি পৃথিবীর দিকে তীব্র গতিতে ছুটে আসবে। পৃথিবীর ইতিহাসে সমাপ্তি রেখা টেনে দেবার জন্য এমন একটি ঘটনা যথেষ্ট! সূর্য কিংবা চন্দ্রগ্রহণ মূলতঃ আগন্তুক জ্যোতিষ্ক কর্তৃক পৃথিবীকে আঘাত করার সম্ভাব্যতা উদ্বেগজনকভাবে বাড়িয়ে দেয়। ফলে তিনটির মধ্যাকর্ষণ শক্তি একত্রিত হয়ে ত্রিশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এমনি মুহূর্তে যদি কোন পাথর বেল্ট থেকে নিক্ষিপ্ত হয় তখন এই ত্রিশক্তির আকর্ষণের ফলে সেই পাথর প্রচন্ড শক্তিতে, প্রবল বেগে পৃথিবীর দিকে আসবে, এ প্রচন্ড শক্তি নিয়ে আসা পাথরটিকে প্রতিহত করা তখন পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। ফলে পৃথিবীর একমাত্র পরিণতি হবে ধ্বংস।

একজন বিবেকবান মানুষ যদি মহাশূন্যের এ তত্ব জানে, সূর্যগ্রহণের সময় তার শঙ্কিত হবারই কথা। এই দৃষ্টিকোণ থেকে সূর্য কিংবা চন্দ্রগ্রহণের সময় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সেজদাবনত হওয়ার মাধ্যমে উম্মতকে তা’লিম প্রদান এবং সৃষ্টিকুলের জন্য পানাহ চাওয়ার মধ্যে একটি নিখুঁত বাস্তবতার সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায় ।

অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এ আমলটি ছিল যুক্তিসঙ্গত ও একান্ত বিজ্ঞানসম্মত।

আর যারা এরকম নাজুক মুহূর্তে আনন্দ উল্লাসে মত্ত থাকে, মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে স্বীয় কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে না তারাই মূলত কুসংস্কারাচ্ছন্নতার অন্ধকারে নিমজ্জিত।

এছাড়াও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন মানুষের মধ্যে গুনাহের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে হুকুম করেন, সেখানে চাঁদের বা সূর্যের আলো কিছুক্ষণের জন্য ঢেকে দেয়ার জন্য, যাতে সৃষ্টি সাবধান হয়। এরপর ইরশাদ মুবারক করেন, যখন মুহররমুল হারাম মাসে সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ হয় সে বছর অনেক বালা (দুঃখ) অবতীর্ণ হয়, ফিতনা (বিশৃঙ্খলা) বৃদ্ধি পায়, বুজুর্গদের উপরে বিনা কারণে অপবাদ ঘটে। ছফর মাসে সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ হলে বৃষ্টি কম হবে, নদী শুকিয়ে যাবে। পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাসে সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ হলে কঠিন আকাল (দুর্ভিক্ষ) পড়বে, যার ফলে অসংখ্য মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে। রবীউছ ছানী মাসে সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ হলে দেশের শস্যভান্ডার ভরে উঠবে কিন্তু বুজুর্গদের মৃত্যু অধিক হবে। জুমাদাল ঊলা মাসে সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ হলে ঝড়, বৃষ্টি ও তুফান হবে এবং আকস্মিক মৃত্যুর হার বেড়ে যাবে। জুমাদাল উখরা মাসে সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ হলে সুফল ফলবে। সে বছর ফসল খুব ভাল হবে এবং দ্রব্যমূল্য হ্রাস পাবে ও ঐশ্বর্য বেড়ে যাবে। পবিত্র রজবুল হারাম মাসে যদি সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ, মাসের প্রথম জুমুয়াবারে হয়, তাহলে দু”খ-দুর্ভিক্ষ মানুষের প্রতি অত্যাধিক বেড়ে যাবে। আকাশ হকে বিকট আওয়াজ শোনা যাবে। শা’বান মাসে সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ হলে মানুষ সুখ-শান্তিতে থাকবে। এরপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যদি পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসের প্রথম জুমুয়াবার দিনে অথবা রাতে সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ হয় তাহলে দেশে বিপদাপদ নেমে আসবে এবং অনেক লোক মারা যাবে। শাওওয়াল মাসে গ্রহণ হলে বাতাসের গতি অত্যাধিক বেড়ে গিয়ে অনেক গাছ উপড়িয়ে ফেলবে। পবিত্র যিলক্বদ মাসে গ্রহণ হলে অনেক রোগ অবতীর্ণ হবে। পবিত্র যিলহজ্জ মাসে গ্রহণ হলে মনে করবে দুনিয়ার আয়ু শেষ হয়ে এসেছে, ফিতনা প্রতিষ্ঠিত হবে,আয়েব (দোষ-ত্রুটি) ঢেকে রাখার লোক মরে যাবে, অপরের দোষ বলে বেড়ানোর লোক অধিক হবে, বাইরের সাজসজ্জা বেড়ে যাবে, তাদের আখিরাতের সুফল বিনষ্ট হবে। দুনিয়ার প্রতি মুহব্বত বেড়ে যাবে। অর্থাৎ মানুষ পরকালের চিন্তা পর্যন্ত ছেড়ে দিবে। মানুষ মুনাফিকদের সম্মান করবে, দরবেশদেরকে দীন-দুঃখী মনে করে ঘৃণা করবে। সে সময় তাদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক তিনি এমন একটি বিপদ প্রতিষ্টিত করবেন যার কারণে তাদের সুখ বিনষ্ট হবে।” (আনিসুল আরওয়াহ : দ্বিতীয় মজলিস)

সুতরাং পবিত্র হাদীছ শরীফ অনুযায়ী চন্দ্র-সূর্যের গ্রহণ ঘটে মহান আল্লাহ পাক উনার কর্তৃক মানুষকে সতর্ক করার জন্য, এটা কোন কুসংস্কার নয়। শিশুতূল্য বিজ্ঞানও তা স্বীকার করেছে।


কুরান অনসারে, চাঁদ সূর্যকে অনুসরন করে কিন্তু বাস্তবিক ভাবে তা কখনোই সম্ভব না যেহেতু চাঁদ এবং সূর্যের মধ্যবর্তি দুরুত্ব প্রায় ১৪৯ million কিলোমিটার এবং চাঁদ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে ....

 

কুরান অনসারে, চাঁদ সূর্যকে অনুসরন করে কিন্তু বাস্তবিক ভাবে তা কখনোই সম্ভব না যেহেতু চাঁদ এবং সূর্যের মধ্যবর্তি দুরুত্ব প্রায় ১৪৯ million কিলোমিটার এবং চাঁদ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে ....

নাস্তিকদের আপত্তি : কুরান অনসারে, চাঁদ সূর্যকে অনুসরন করে (Quran 91:1-2) [Talaahaa (means it follows it) as used in this verse, literally means that the Moon is following the Sun]! কিন্তু বাস্তবিক ভাবে তা কখনোই সম্ভব না যেহেতু চাঁদ এবং সূর্যের মধ্যবর্তি দুরুত্ব প্রায় ১৪৯ million কিলোমিটার এবং চাঁদ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে (follows the Earth)!  এগুলো কি মুহম্মদের অজ্ঞতার ফল নয়?

খণ্ডণ : “অনুসরণ” করে বললেই কি পিছনে পিছনে চলে বুঝায়? মূর্খতার একটি সীমা থাকা দরকার।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَالشَّمْسِ وَضُحَاهَا. وَالْقَمَرِ اِذَا تَلَاهَا.

অর্থ : “কসম! সূর্য ও তার রশ্মির। কসম! চাঁদের যখন তা সূর্যের পশ্চাদগামী হয়।” (পবিত্র সূরা শামস্ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১-২)

বস্তুত অত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে تَلَاهَا শব্দ মুবারক দ্বারা সূর্যের পিছনে পিছনে চলা বুঝায় না। কেননা পূর্ববর্তী আয়াত শরীফ উনার মধ্যে সূর্য ও সূর্যের রশ্মি বা কিরণের বিষয় উল্লেখ রয়েছে। যার ফলে এর অর্থ দাঁড়ায় সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর চাঁদ উদ্ভাসিত হয়। এমনকি এখানে সূর্য ও সূর্যের রশ্মি একসাথে আসার কারণে এটাও বুঝাচ্ছে যে, প্রতিফলিত রশ্মির কারণে পূর্ণিমার চাঁদ সূর্যের মতো উজ্জল ও গোলাকার রূপ লাভ করে।

অত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে تَلَاهَا শব্দ মুবারক দ্বারা যে সূর্যের পিছনে পিছনে চলা বুঝায়নি তার একটি প্রমাণ নিম্নরুপ-

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ۖ كُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ.

অর্থ : “তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চাঁদ। সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে।” (পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)

যেহেতু সূর্য ও চাঁদ প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে, তাই চাঁদের জন্য সূর্যের পিছনে পিছনে চলার কোন সুযোগ নেই। বরং সূর্য চলে সূর্যের কক্ষপথে আর চাঁদ চলে চাঁদের কক্ষপথে। তবে সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর চাঁদ উদ্ভাসিত হয় বিধায় সূর্যের আলো দ্বারা চাঁদ আলোকিত হয়।

সত্যিই যদি চাঁদ সূর্যের পিছনে পিছনে চলতো তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি নি¤েœাক্ত আয়াত শরীফ নাযিল করতেন না- 

لَا الشَّمْسُ يَنْبَغِي لَـهَا أَن تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلَا اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ ۚ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ

অর্থ : “সূর্য নাগাল পেতে পারে না চাঁদের এবং রাত অগ্রে চলে না দিনের। প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে।” (পবিত্র সূরা ইয়াসিন শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪০)

চাঁদ যদি সূর্যকে অনুসরণ করে পিছনে পিছনেই চলতো তাহলে لَا الشَّمْسُ يَنْبَغِي لَـهَا أَن تُدْرِكَ الْقَمَرَ “সূর্য নাগাল পেতে পারে না চাঁদের” বলা অর্থ কি? কেননা এই আয়াত শরীফ দিয়ে তো নাস্তিকদের সূত্র মুতাবিক মনে হচ্ছে সূর্য বুঝি চাঁদকে অনুসরণ করছে!

সুতরাং নাস্তিকদের আপত্তির ধরণ দেখেই বুঝা যাচ্ছে তারা কোন পর্যায়ের মূর্খ। মূর্খ বলেই তারা এ ধরণের কুফরীর অবতারনা করেছে।

তাছাড়াও তাদের আপত্তির মধ্যেই পরস্পর বিরোধী বক্তব্য রয়েছে। যেমন- প্রথমে বলছে যে, “চাঁদ সূর্যকে অনুসরন করেi (Quran 91:1-2) [Talaahaa (means it follows it) as used in this verse, literally means that the Moon is following the Sun]  পরে আবার বলছে- “কিন্তু বাস্তবিক ভাবে তা কখনোই সম্ভব না যেহেতু চাঁদ এবং সূর্যের মধ্যবর্তি দুরুত্ব প্রায় ১৪৯ million কিলোমিটার এবং চাঁদ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে (follows the Earth)!Ó

এখানে ‘অনুসরণ করা’ এবং ‘প্রদক্ষিণ করা’ উভয় অর্থেই ইংরেজী শব্দ ব্যবহার করেছে ÔfollowsÕ। প্রথমে অনুসরণ অর্থে ÔfollowsÕ শব্দটি ব্যবহার করলেও পরের ÔfollowsÕ শব্দটির অর্থ ‘অনুসরণ’ গ্রহণ না করে ‘প্রদক্ষিণ’ গ্রহণ করলো কেন? তাদের ধোকা কি এখানে স্পষ্ট নয়? নিজেদের বেলায় যথাস্থানে যথার্থ অর্থ বেছে নিলেও পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ক্ষেত্রে যথাস্থানে যথার্থ অর্থ বেছে না নিয়ে নিজেদের মনগড়া অর্থ বেছে নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে। 


 যুলকারনাইন সূর্যের অস্তগমন (অর্থাৎ সর্বপশ্চিম) স্থলে পৌছান যেখানে সুর্য এক পঙ্কিল জলাশয়ে অস্ত যায় এরপর তিনি অন্য এক পথ ধরেন এবং সূর্যের উদয় (অর্থাৎ সর্বপূর্ব) স্থলে পৌছান যা এমন এক সম্প্রদায়ের ওপর উদিত হয় যারা সূর্যের কাছাকাছি হওয়ায় তাপ থেকে কোন আড়াল পায়না এর থেকেই কি বোঝা যায় না যে পৃথিবি সমতল, যার দুই সর্বশেষ প্রান্ত রয়েছে?


 
যুলকারনাইন সূর্যের অস্তগমন (অর্থাৎ সর্বপশ্চিম) স্থলে পৌছান যেখানে সুর্য এক পঙ্কিল জলাশয়ে অস্ত যায় এরপর তিনি অন্য এক পথ ধরেন এবং সূর্যের উদয় (অর্থাৎ সর্বপূর্ব) স্থলে পৌছান যা এমন এক সম্প্রদায়ের ওপর উদিত হয় যারা সূর্যের কাছাকাছি হওয়ায় তাপ থেকে কোন আড়াল পায়না এর থেকেই কি বোঝা যায় না যে পৃথিবি সমতল, যার দুই সর্বশেষ প্রান্ত রয়েছে?

 নাস্তিকদের আপত্তি : যুলকারনাইন সূর্যের অস্তগমন (অর্থাৎ সর্বপশ্চিম) স্থলে পৌছান যেখানে সুর্য এক পঙ্কিল জলাশয়ে অস্ত যায় (Quran 18:86), এরপর তিনি অন্য এক পথ ধরেন এবং সূর্যের উদয় (অর্থাৎ সর্বপূর্ব) স্থলে পৌছান যা এমন এক সম্প্রদায়ের ওপর উদিত হয় যারা সূর্যের কাছাকাছি হওয়ায় তাপ থেকে কোন আড়াল পায়না (Quran 18:89-90)! এর থেকেই কি বোঝা যায় না যে পৃথিবি সমতল, যার দুই সর্বশেষ প্রান্ত রয়েছে?

খণ্ডণ : সূর্যের অস্তগমন স্থল মানেই যেমন সর্বপশ্চিম নয় ঠিক তেমনি সূর্যের উদয় স্থল মানেই সর্বপূর্ব নয়। পৃথিবীর প্রত্যেকটি স্থানই আপেক্ষিকভাবে পশ্চিমে বা পূর্বে। পূর্বের দেশের তুলনায় পশ্চিমের দেশগুলো যেমন পশ্চিমে, কেননা সূর্য ধীরে ধীরে পশ্চিম দিকে অস্ত যায়। আবার পূর্বের দেশটিতে যখন সূর্য অস্ত যায় তখন তার পূর্বের দেশের তুলনায় সে দেশটি পশ্চিমে পড়ে।

তাই এর মাধ্যমে কখনোই প্রমাণিত হয় না যে, পৃথিবী সমতল। কেননা পৃথিবী সমতল হলে সব দেশে একসাথেই সূর্যোদয় হতো এবং একসাথেই সূর্যাস্ত হতো। তা না হয়ে বরং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত হয়।

কোন পরিব্রাজক যদি কোন স্থান থেকে রওয়ানা দিয়ে এমন স্থানে পৌঁছে যখন সূর্য অস্ত যাচ্ছে। এর মাধ্যমে কেউই বলে না যে, উক্ত স্থানটি পৃথিবীর সর্বপশ্চিম। কিংবা কোন স্থান থেকে রওয়ানা দিয়ে এমন স্থানে পৌঁছে যখন সূর্য উদয় হচ্ছে। এর মাধ্যমেও কেউই বলে না যে, উক্ত স্থানটি পৃথিবীর সর্বপূর্ব। একমাত্র যারা মূর্খ-জাহিল বরং যারা আশাদ্দুর দরজার জাহিল (চরম মূর্খ) তারাই এক্ষেত্রে সর্বপশ্চিম বা সর্বপূর্ব শব্দ ব্যবহার করে থাকে। কারণ তাদের মোটেও ভৌগলিক জ্ঞান নেই।

যখন জাপানকে সূর্যোদয়ের দেশ বলা হয়, তখন স্বাভাবিকভাবে বুঝা যায় যে দেশটি সর্বপূর্ব। এই প্রেক্ষিতে আশাদ্দুর দরজার জাহিলগুলো বলে না যে, পৃথিবী সমতল। যদিও সূর্যোদয়ের দেশ বলে আলাদা কোন দেশ নেই, বরং প্রত্যেক দেশেই সূর্যোদয় হয়।

আবার কানাডাকে সূর্যাস্তের দেশ বলা হয় এবং কানাডার ওন্টারিও শহরকে সূর্যাস্তের শহর বলা হয়ে থাকে। তাহলে কি সূর্য জাপানে উদিত হয়ে কানাডায় অস্ত যায়? সূর্য যদি জাপানে উদিত হয়ে কানাডায় অস্ত যায়। তাহলে কোন দিন সূর্য কানাডায় অস্ত যাওয়ার পরে সেদিন কানাডা থেকে জাপান পর্যন্ত রৈখিকভাবে ৮,০৭৮ কিলোমিটার এলাকায় রাত দিন হয় কিভাবে? 

জাপানে সূর্য উদিত হওয়ার পর ওই দিনই যদি জাপানে অস্ত যায় কিংবা কানাডায় যেদিন সূর্য অস্ত যায় সেদিনের সকালেই কানাডায় যদি সূর্যোদয় হয়। তাহলে হযরত যুলকারনাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সূর্যের অস্তগমন স্থলে কিংবা সূর্যের উদয় স্থলে পৌঁছালে কেন উক্ত স্থানদ্বয়কে যথাক্রমে পৃথিবীর সর্বপশ্চিম ও সর্বপূর্ব বলা হবে? কেন উক্ত দু’টি স্থানকে দুই সর্বশেষ প্রান্ত হিসেবে উল্লেখ করা হবে?

মূলত পৃথিবীতে পরিভ্রমণকালে যে কোন স্থানেই সূর্যাস্ত কিংবা সূর্যোদয় হতে পারে। যেমনটি হযরত যুলকারনাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি দেখতে পেয়েছিলেন।

যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

حَتَّىٰ إِذَا بَلَغَ مَغْرِبَ الشَّمْسِ وَجَدَهَا تَغْرُبُ فِي عَيْنٍ حَمِئَةٍ وَوَجَدَ عِندَهَا قَوْمًا ۗ قُلْنَا يَا ذَا الْقَرْنَيْنِ إِمَّا أَن تُعَذِّبَ وَإِمَّا أَن تَتَّخِذَ فِيهِمْ حُسْنًا

অর্থ : “অবশেষে হযরত যুলকারনাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যখন সূর্যের অস্তাচলে পৌঁছালেন; তখন তিনি সূর্যকে এক পঙ্কিল আধারে অস্ত যেতে দেখলেন এবং তিনি সেখানে এক সম্প্রদায়কে দেখতে পেলেন। আমি (মহান আল্লাহ পাক) বললাম, হে হযরত যুলকারনাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি! আপনি তাদেরকে শাস্তি দিতে পারেন অথবা তাদেরকে সদয়ভাবে গ্রহণ করতে পারেন।” (পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৬)   

এই আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে বর্ণিত রয়েছে-

قال البيضاوي لعله بلغ ساحل لمحيط فراها كذلك إذا لم يكن في مطمح نظره غير الماء والطين ولذلك قال اللّه سبحانه وجدها تغرب ولم يقل كانت تغرب كذا قال القيتبى وَوَجَدَ عِنْدَها أى عند العين قَوْماً قال البيضاوي قيل كان لباسهم جلود الوحش وطعامهم ما لفظه البحر وكانوا كفارا قُلْنا يا ذَا الْقَرْنَيْنِ إِمَّا أَنْ تُعَذِّبَ ذلك القوم بالقتل على كفرهم ان أصروا على كفرهم بعد ما دعوتهم إلى الإسلام وَإِمَّا أَنْ تَتَّخِذَ فِيهِمْ فعلة حُسْناً

অর্থ : “হযরত বায়যাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেন, সম্ভবত হযরত যুলকারনাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন কোন মহাসাগরের পাড়ে এবং সূর্যকে অস্তমিত হতে দেখেছিলেন মহাসাগরের অগাধ পানিরাশির মধ্যে। উনার এই দৃষ্টিকোণকেই উল্লেখ করা হয়েছে আলোচ্য আয়াত শরীফ উনার মধ্যে এভাবে- وَجَدَهَا تَغْرُبُ فِي عَيْنٍ حَمِئَةٍ তিনি সূর্যকে এক পঙ্কিল আধারে অস্ত যেতে দেখলেন।” (তাফসীরে মাযহারী : পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৬)

বাস্তবিক অর্থেই হযরত যুলকারনাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পরিভ্রমণকালে এমন একটি মহাসাগরের পাড়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন যার অগাধ পানিরাশির রং ছিলো কালো। কেননা এখানে حَمِئَةٍ ‘হামিয়াতিন’ শব্দ মুবারক ব্যবহৃত হয়েছে, যার অর্থ পঙ্কিল বা কালো। 

আবার আটলান্টিকের লাগোয়া কৃষ্ণ সাগরের পানিতে খুব উঁচুমাত্রায় হাইড্রোজেন সালফাইড দ্রবীভূত রয়েছে। তাই প্রায় ২০০ মিটার গভীরতারও নিচে এই সাগরের প্রতিটি স্তরে হাইড্রোজেন সালফাইড দেখা যায় ফলে এ সাগরে জীবের অস্তিত্বও উপরের স্তরে তেমন দেখা যায় না। এ কারণেই এই সাগরের পানির রঙটাও কালো দেখায়।

সুতরাং হযরত যুলকারনাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পরিভ্রমণকালে কৃষ্ণ সাগরের পাড়ে পৌঁছেছিলেন যার কালো রঙের অগাধ পানিরাশির মধ্যে সূর্যকে অস্তমিত হতে দেখেছিলেন।

কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـيْ ذَرٍّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ كُنْتُ رَدِيْفَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ عَلٰى حِمَارٍ وَالشَّمْسُ عِنْدَ غُرُوْبِـهَا فَقَالَ‏ هَلْ تَدْرِيْ اَيْنَ تَغْرُبُ هَذِهِ‏ قُلْتُ اللهُ وَرَسُوْلُهُ اَعْلَمُ قَالَ‏ فَاِنَّـهَا تَغْرُبُ فِي عَيْنِ حَامِيَةٍ. 

অর্থ : “হযরত আবূ যর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক ছোহবতে আমি একটি গাধার পেছনে সওয়ার ছিলাম। এ সময় সূর্য অস্ত যাচ্ছিল। তখন তিনি আমাকে সুওয়াল মুবারক করেন, আপনি কি জানেন, সূর্য কোথায় অস্তমিত হয়? আমি বললাম, মহান আল্লাহ্ পাক তিনি এবং উনার রসূল ও হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই এ ব্যাপারে অধিক অবহিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, এটি গরম প্রসবণের মধ্যে অস্ত যায়।” (আবূ দাঊদ শরীফ : কিতাবুল হুরূফ ওয়াল ক্বিরাত : হাদীছ শরীফ নং ৪০০২)

আরব উপদ্বীপের পাশেই লোহিত সাগর অবস্থিত আর আশপাশের মরুভূমির প্রচ- উত্তপ্ত বালুর উত্তাপ এই সাগরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার কারণে এই সাগরের পানি উত্তপ্ত থাকে বিধায় এখানে عَيْنِ حَامِيَةٍ শব্দ মুবারক ব্যবহৃত হয়েছে। 

এছাড়াও বর্ণিত রয়েছে-

سال معاوية كعبا كيف تـجد في التوراة اين تغرب الشمس قال نـجدها تغرب في ماء وطين

অর্থ : “হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে সুওয়াল করলেন, সূর্য কিভাবে অস্তমিত হয়? পবিত্র তাওরাত শরীফ উনার মধ্যে আপনারা এ সম্পর্কে কোন কিছু দেখেছেন কি? হযরত কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, পবিত্র তাওরাত শরীফ উনার মধ্যে লিখিত রয়েছে, সূর্য অস্তমিত হয় পানি ও কাদার মধ্যে।” (তাফসীরে মাযহারী : পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ উনা পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৬)

সুতরাং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেমন গরম প্রসবণের মধ্যে সূর্য অস্ত যাওয়ার বর্ণনা মুবারক দ্বারা লোহিত সাগরে সূর্য অস্ত যাওয়া বুঝিয়েছেন। তেমনি হযরত যুলকারনাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এক পঙ্কিল আধারে সূর্যকে অস্ত যেতে দেখলেন বলার মাধ্যমে কৃষ্ণ সাগরে সূর্য অস্ত যাওয়া বুঝানো হয়েছে। আর পবিত্র তাওরাত শরীফ উনার মধ্যে পানি ও কাদার মধ্যে সূর্য অস্তমিত হওয়ার বর্ণনা দ্বারা আম বা সাধারণভাবে পানিতে সূর্য অস্ত যাওয়া বুঝানো হয়েছে।

যেহেতু সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় তার থেকে বিচ্ছুরিত আলোক রশ্মিগুলো পানিতে প্রতিফলিত হয় ফলে অনেক সময় যাবৎ সূর্যাস্ত পর্যবক্ষেণ করা যায়। তাই সূর্য অস্ত যাওয়ার বিষয়টি স্থলভাগে পর্যবেক্ষণের চেয়ে পানিতে পর্যবেক্ষণে বুঝতে বেশি সুবিধাজনক বিধায় এরূপ বর্ণনা করা হয়েছে।

“সাধারণত যখন কেউ সমুদ্র তীরে দাঁড়িয়ে সূর্য অস্ত যাওয়া প্রত্যক্ষ করবে, তখনই উক্ত ব্যক্তির কাছে এটা মনে হবে, অথচ সূর্য কখনো তার কক্ষপথ ত্যাগ করে না।” (তাফসীরে ইবনে কাছীর : পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৬)

এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُئِلَ هٰذِهِ الْـمَغَارِبُ مِنْ اَيْنَ تَغْرِبُ؟ وَهٰذِهِ الْـمَطَالِعُ مِنْ اَيْنَ تَطُلعُ؟ فَقَالَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هي عَلٰى رَسِلهَا لَا تَبْرَحُ وَلَا تَزُوْل تَغْرُبُ عَنْ قَوْمٍ وَتَطْلُعُ عَلٰى قَوْمٍ وَتَغْرُبُ عَنْ قَوْمٍ وتَطْلُعُ فَقَوْمٌ يَقُوْلُوْنَ غَرْبَتَ وَقَوْمٌ يَقُوْلُوْنَ طَلْعَتٌ.

অর্থ : “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সুওয়াল মুবারক করা হলো- সূর্য কোথায় অস্ত যায় এবং সূর্য কোথা থেকে উদিত হয়? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রত্যুত্তরে ইরশাদ মুবারক করেন, এটি নিয়মিত চলতে থাকে, ক্ষান্তও হয়না আর অদৃশ্যও যায় না। এটি এক স্থানে অস্তমিত হয় অন্য স্থানে উদিত হয়। আবার অন্য এক স্থানে অস্তমিত হয় আরেক স্থানে উদিত হয়, এভাবে চলতে থাকে। তাই কেউ বলে সূর্য অস্ত গিয়েছে (একই সময়ে) অন্যরা বলে সূর্য উদিত হচ্ছে।” (মুসনাদে ইমাম আবূ ইসহাক্ব হামাদানী)

সুতরাং হযরত যুলকারনাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পরিভ্রমণকালে কৃষ্ণ সাগরের পাড়ে  পৌঁছে কালো রঙের অগাধ পানিরাশির মধ্যে সূর্যকে অস্তমিত হতে দেখেছিলেন। এর মাধ্যমে অত্র স্থানটি সর্বপশ্চিম প্রমাণিত হয় না। যেমন লোহিত সাগরে সূর্য অস্ত যাওয়ার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় না যে, লোহিত সাগর পৃথিবীর সর্বপশ্চিম স্থান।

আবার মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

ثُـمَّ اَتْبَعَ سَبَبًا. حَتّٰى اِذَا بَلَغَ مَطْلِعَ الشَّمْسِ وَجَدَهَا تَطْلُعُ عَلٰى قَوْمٍ لَّـمْ نَـجْعَل لَّـهُم مِّنْ دُوْنِـهَا سِتْرًا. 

অর্থ : “অতঃপর তিনি এক পথ অবলম্বন করলেন। অবশেষে তিনি যখন সূর্যের উদয়াচলে পৌঁছলেন, তখন তিনি তাকে এমন এক সম্প্রদায়ের উপর উদয় হতে দেখলেন, যাদের জন্যে সূর্যতাপ থেকে আত্মরক্ষার কোন আড়াল আমি সৃষ্টি করিনি।” (পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৯-৯০)   

অত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- وَجَدَهَا تَطْلُعُ عَلٰى قَوْمٍ لَّـمْ نَـجْعَل لَّـهُم مِّنْ دُوْنِـهَا سِتْرًا অর্থাৎ হযরত যুলকারনাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যখন সূর্যের উদয়াচলে পৌঁছালেন সেখানে এমন এক সম্প্রদায়কে দেখতে পেলেন, যাদের জন্যে সূর্যতাপ থেকে আত্মরক্ষার কোন আড়াল নেই।

এই আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে উল্লেখ করা হয়েছে-

حَتَّى إِذا بَلَغَ مَطْلِعَ الشَّمْسِ يعنى الـموضع الّذي تطلع الشمس عليه اولا من معمورة الأرض وَجَدَها تَطْلُعُ عَلى قَوْمٍ لَـمْ نَـجْعَلْ لَـهُمْ مِنْ دُونِـها سِتْراً (৯০) من اللباس أو البناء فان ارضهم لا تـحمل بناء وانـهم اتـخذوا الأسراب بدل الابنية.كَذلِكَ أى امر ذى القرنين كما وصفناه في رفعة الـمكان وبسطة الـملك أو أمره في أهل الـمشرق كامره في أهل الـمغرب من التخير والاختيار أو هو صفة لـمصدر مـحذوف لوجدها أى وجدها تطلع كما وجدها تغرب أو لـمصدر لـم نـجعل أى لـم نـجعل لـهم من دونـها سترا كما لـم نـجعل لاهل الـمغرب أو صفة لقوم يعنى وجدها تطلع على قوم مثل ذلك القوم الذين كانت تغرب عليهم الشمس في الكفر والـحكم وَقَدْ أَحَطْنا بِـما لَدَيْهِ من الـجنود والآلات والعدد والأسباب خُبْراً

অর্থ: “এ কথার অর্থ হযরত যুলকারনাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এবার পথ চলতে শুরু করলেন পূর্ব দিকে। চলতে চলতে পৃথিবীর পূর্বপ্রান্তে পৌঁছে তিনি দেখতে পেলেন এক জনপদ। বিস্ময়ের সঙ্গে আরো দেখলেন জনপদবাসীদের শরীর ও সূর্যের মধ্যে কোন আড়াল নেই। অর্থাৎ তাদের ঘরবাড়ী যেমন নেই, তেমনি নেই কোন পোশাক-আশাক। সভ্য সমাজের সাথে তারা সম্পূর্ণরূপে সম্পর্কচ্যুত।” (তাফসীরে মাযহারী : পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ ৯০)

এই আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে অন্যত্র উল্লেখ করা হয়েছে-

سـمعت الـحسن وسئل عن قوله تعالى: {لَمْ نَجْعَلْ لَهُمْ مِنْ دُونِهَا سِتْرًا} قال: إن أرضهم لا تـحمل البناء فإذا طلعت الشمس تغوروا في الـمياه، فإذا غربت خرجوا يتراعون كما ترعى البهائم. قال الـحسن: هذا حديث سـمرة.

وقال قتادة: ذكر لنا أنـهم بأرض لا تنبت لـهم شيئًا، فهم إذا طلعت الشمس دخلوا في أسراب، حتى إذا زالت الشمس خرجوا إلى حروثهم ومعايشهم.

অর্থ : “সূর্য উদিত হওয়ার স্থানে যখন তিনি পৌঁছেন তখন সেখানে দেখতে পান যে, একটি জনবসতি। কিন্তু সেখানকার লোকেরা প্রায় চতুষ্পদ জন্তুর মতো ছিল। না তারা ঘরবাড়ী তৈরী করে, না তথায় কোন গাছপালা রয়েছে, না রৌদ্র থেকে রক্ষা পাওয়ার কোন কিছু সেখানে বিদ্যমান রয়েছে। তাদের দেহের রঙ ছিল লাল এবং তারা বেঁটে আকৃতির লোক ছিল। তাদের সাধারণ খাদ্য ছিল মাছ। সূর্য উদিত হওয়ার সময় তারা পানিতে নেমে যেতো এবং সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর তারা চতুষ্পদ জন্তুর মতো এদিক ওদিক ছড়িয়ে পড়তো। এটা হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অভিমত। হযরত কাতাদাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অভিমত এই যে, সেখানে কিছুই উৎপন্ন হতো না। সূর্য উদিত হবার সময়ে তারা পানিতে চলে যেতো, সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়ার পর তারা তাদের দূরবর্তী ক্ষেত-খামারে ছড়িয়ে পড়তো।” (তাফসীরে ইবনে কাছীর : পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ ৯০)

 সুতরাং ৯০ নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে জনপদবাসীদের শরীর ও সূর্যের মধ্যে কোন আড়াল নেই। অর্থাৎ তাদের ঘরবাড়ী যেমন নেই, তেমনি নেই কোন পোশাক-আশাক। আর ৮৬ নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- وَوَجَدَ عِنْدَهَا قَوْمًا অর্থাৎ হযরত যুলকারনাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যখন সূর্যের অস্তাচলে পৌঁছালেন সেখানে এক সম্প্রদায়কে দেখতে পেলেন।

এই সম্প্রদায় সম্পর্কে তাফসীরে বর্ণিত রয়েছে-

وَوَجَدَ عِنْدَها أى عند العين قَوْماً قال البيضاوي قيل كان لباسهم جلود الوحش وطعامهم ما لفظه البحر وكانوا كفارا

অর্থ : “তিনি সেখানে এক সম্প্রদায়কে দেখতে পেলেন- এ সম্পর্কে হযরত বায়যাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেন, ওই মহাসমুদ্রের পাড়ে বাস করতো চামড়ার পোশাক পরিহিত একদল সত্যপ্রত্যাখ্যানকারী। জোয়ারের সময় সমুদ্র থেকে যেসব মৃত মাছ ও সামুদ্রিক প্রাণী তটভূমিতে এসে আটকে যেতো, সেগুলোই তারা ভক্ষণ করতো।” (তাফসীরে মাযহারী : পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ উনা পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৬)

অর্থাৎ পূর্ব এবং পশ্চিম উভয় স্থানেই যে সম্প্রদায়কে দেখতে পান তারা উভয়ই মৎস শিকারী ছিল। সম্প্রদায় দু’টির মধ্যে শুধু পার্থক্য এই যে, পশ্চিমে বসবাসকারী সম্প্রদায় চামড়ার পোশাক পরিহিত ছিল কিন্তু পূর্বে বসবাসকারী সম্প্রদায়ের কোন পোশাক-আশাক ছিল না। এমনকি সেখানে কোন ঘরবাড়ী, গাছপালা বা রৌদ্র থেকে রক্ষা পাওয়ার কোন কিছুই ছিল না। আর তাই তাদের জন্যে সূর্যতাপ থেকে আত্মরক্ষার কোন আড়াল নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু অত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে “সূর্যের কাছাকাছি হওয়ায়” এ ধরণের কোন ব্যাখ্যার অবকাশ নেই। এই বাড়তি কথা যোগ করে নাস্তিকরা মিথ্যাচারীতার পরিচয় দিয়েছে।

সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, সূর্যের অস্তগমন স্থল দ্বারা সর্বপশ্চিম অর্থ নেয়া যেমন মিথ্যাচারীতা ঠিক তেমনি সূর্যের উদয় স্থল বলতে সর্বপূর্ব বোঝানোও মিথ্যাচারীতার প্রমাণ বহন করে। তাই পৃথিবীর দু’টি স্থানকে জোরপূর্বক সর্বপশ্চিম বা সর্বপূর্ব অর্থাৎ পৃথিবীর দুই সর্বশেষ প্রান্ত বানিয়ে নিয়ে পৃথিবীকে কখনোই সমতল প্রমাণ করা সম্ভবপর নয়। 

আবার “সূর্যের কাছাকাছি হওয়ায়” এই বাড়তি কথা জুড়ে দেয়াও নাস্তিকদের একটি অপকৌশল, যা তাদের মিথ্যাচারীতার পরিচয় বহন করে। 


কুরান অনুসারে, আল্লাহ পৃথিবীর ওপর পর্বতরাজি কে স্থাপন করেছেন বা পেরেকের মত গুজে দিয়েছেন কিন্তু বিজ্ঞান কেন বলে পর্বত তৈরি হয় lithospheric plate এর গতির ফলে

কুরান অনুসারে, আল্লাহ পৃথিবীর ওপর পর্বতরাজি কে স্থাপন করেছেন বা পেরেকের মত গুজে দিয়েছেন কিন্তু বিজ্ঞান কেন বলে পর্বত তৈরি হয় lithospheric plate এর গতির ফলে

 নাস্তিকদের আপত্তি : কুরান অনুসারে, আল্লাহ পৃথিবীর ওপর পর্বতরাজি কে স্থাপন করেছেন বা পেরেকের মত গুজে দিয়েছেন (Quran 16:15, 15:19, 41:10, 50:7, 78:6-7)!  কিন্তু বিজ্ঞান কেন বলে পর্বত তৈরি হয় lithospheric plate  এর গতির ফলে (either orogenic movement or epeirogenic movement)?

টেকটোনিক প্লেটগুলো চলতে চলতে যখন একটা অন্যটার সাথে ধাক্কা খায় তখনই ভূমিকম্প সৃষ্টি হয় এবং সংলগ্ন স্থানে ভূ-পৃষ্ঠ উপরে উঠে যায় যার ফলে সৃষ্টি হয় পাহাড়-পর্বত ।

খণ্ডণ: এখানে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের সাথে বিজ্ঞানের অসঙ্গতি কোথায়? খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক তিনি পানি উপরে যমীন সৃষ্টি করার পর, সেই যমীনকে পানির উপর বিস্তৃত করে দিলেন। যা বিভিন্ন আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-

وَالْأَرْضَ مَدَدْنَاهَا

অর্থ : “আমি ভূমিকে বিস্তৃত করেছি।” (পবিত্র সূরা হিজর শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৯; পবিত্র সূরা ক্বাফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)

এই বিস্তৃত করার মাধ্যমেই মূলত ভূপৃষ্ঠের সৃষ্টি হয়েছে যা একধরনের পাতলা প্লেট। এদেরকে বলা হয় টেকটোনিক প্লেট। টেকটোনিক প্লেটগুলো পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারণে পানির উপর টলমল করতে থাকে, সদা নড়াচড়া করতে থাকে। এই নড়াচড়া করার কারণে দুই বা ততোধিক প্লেট যখন একটির উপর আরেকটি উঠে যায় বা একটি সাথে আরেকটি ধাক্কা খায়, তখন এদের মিলনস্থলে পাহাড়ের সৃষ্টি হয়।

উদহারণস্বরূপ আমরা যদি কোন একটি বোতল বা কৌটা বা কোন গোলক বস্তুর উপরে কোন মোড়ল চড়াতে যাই তাহলে দেখা যাবে মোড়কের শেষ প্রান্তটি প্রথম প্রান্তের উপরে উঠে যায়। মোড়কটির এই মিলিত প্রান্তদ্বয়কে পরে আঠা দিয়ে উক্ত বোতল বা কৌটা বা গোলক বস্তুর উপরে জোড়া লাগিয়ে দিতে হয়।

আর এই বিষয়টিকেই পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে এভাবে-

وَاَلْقَىٰ فِي الْاَرْضِ رَوَاسِيَ اَن تَـمِيْدَ بِكُمْ وَأَنْـهَارًا

অর্থ : “এবং তিনি পৃথিবীর উপর পর্বতমালা স্থাপন করেছেন যে, কখনো যেন তা তোমাদেরকে নিয়ে হেলে-দুলে না পড়ে।” (পবিত্র সূরা নাহল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ  ১৫)

وَاَلْقَيْنَا فِيهَا رَوَاسِيَ وَاَنبَتْنَا فِيهَا

অর্থ : “এবং তার উপর পর্বতমালা স্থাপন করেছি।” (পবিত্র সূরা হিজর শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৯) 

وَجَعَلَ فِيهَا رَوَاسِيَ مِن فَوْقِهَا

অর্থ : “তিনি পৃথিবীর উপরিভাগে অটল পর্বতমালা স্থাপন করেছেন।” (পবিত্র সূরা হা-মীম সিজদাহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০)

وَأَلْقَيْنَا فِيهَا رَوَاسِيَ وَأَنبَتْنَا فِيهَا

অর্থ : “তাতে পর্বতমালার ভার স্থাপন করেছি।” (পবিত্র সূরা ক্বাফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)

এই পাহাড় ভূমির উপরে যতদূর উপরে উঠে, পরের অংশে অনেকগুণ পরিমানে ভূমির নিচে ডেবে যায়। অনেকটা ভাঁজ সৃষ্টির মত। এর ফলে টেকটোনিক প্লেটগুলোর নড়াচড়া কমে যায়। অর্থাৎ এই প্লেটগুলোর সংযোগ স্থলে পাহাড় বা পর্বত অনেকটা পেরেক বা গোঁজ বা খিলের মতো কাজ করে। যেমন এভারেষ্ট পর্বতমালার সবচেয়ে উঁচু মাথা ভূমির প্রায় ১৫ কি. মি. উপরে উঠেছে। ঠিক একই জায়গায় এর ভিত্তিমূল মাটির নিচে পৌঁছে গেছে ১২৫ কি. মি. পর্যন্ত। শুধু যদি এই অংশটিকে বিবেচনা করলে একে দেখতে মনে হবে দৈত্যাকার এক পেরেক বা গোঁজ বা খিলের মতো!

আর এই জন্যই মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

  اَلَـمْ نَـجْعَلِ الْاَرْضَ مِهَادًا ﴿٦﴾ وَالْـجِبَالَ اَوْتَادًا ﴿٧﴾

অর্থ : “আমি কি যমীনকে বিস্তৃত করিনি এবং পাহাড়কে গোঁজ বানাইনি?” (পবিত্র সূরা নাবা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬-৭)

পেরেক বা গোঁজ বা খিলের কাজ হলো দুই বা ততোধিক কাষ্ঠখ-কে এমনভাবে জোড়া লাগানো, যাতে সংযুক্ত বস্তুটিকে নাড়াচড়া করে হলেও খুলে না যায়। পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগ ভীষণ উত্তপ্ত গলিত তরল পদার্থে পূর্ণ। পেরেক বা গোঁজ বা খিল আকৃতির এই পাহাড়গুলো না থাকলে, পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারণে হয়তো কোন একদিকের প্লেট সরে গিয়ে ওই অঞ্চলের গলিত তরলকে বাইরে বের হয়ে আসার সুযোগ করে দিতো। ফলে ভয়ানক বিপর্যয় ঘটতো।


আল্লাহ কি আসলেই পৃথিবিকে এমন ভাবে স্থির রেখেছেন যাতে তা টলে না যায়

আল্লাহ কি আসলেই পৃথিবিকে এমন ভাবে স্থির রেখেছেন যাতে তা টলে না যায়

নাস্তিকদের আপত্তি : আল্লাহ কি আসলেই পৃথিবিকে এমন ভাবে স্থির রেখেছেন যাতে তা টলে না যায় (Quran 35:41, 40:64)?

খণ্ডণ : মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

وَالسَّمَاءِ ذَاتِ الْـحُبُكِ ﴿٧﴾

অর্থ : “আর আকাশ, যা পথ ও কক্ষপথ দ্বারা পরিপূর্ণ।” (পবিত্র সূরা জারিয়াহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)

অর্থাৎ মহাবিশ্বের সমস্ত গ্রহ-নক্ষত্রই কক্ষপথে বিচরণশীল। তাই এগুলো যাতে কক্ষচ্যুত না হয় সেজন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি কুদরতীভাবে তা ধরে রেখেছেন। আর এই ক্ষমতাই হলো মহাকর্ষ।

যেমন ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

إِنَّ اللهَ يـُمْسِكُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ أَن تَزُولَا ۚ وَلَئِن زَالَتَا إِنْ اَمْسَكَهُمَا مِنْ اَحَدٍ مِّن بَعْدِهِ ۚ اِنَّهُ كَانَ حَلِيمًا غَفُوْرًا ﴿٤١﴾

অর্থ : “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি আসমান ও যমীনকে ধরে রেখেছেন, যাতে স্থানচ্যুত না হয়। যদি এগুলো স্থানচ্যুত হয়ে যায়, তবে তিনি ব্যতীত কে এগুলো ধরে রাখবে। তিনি সহনশীল ও ক্ষমাপরায়ণ।” (পবিত্র সূরা ফাত্বির শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪১)

আবার পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারণে ভূপৃষ্ঠ যাতে টলে না যায় সে জন্য মহান আল্লাহ পাক পাহাড় সৃষ্টি করে এর ভারসাম্য রক্ষা করেছেন।

যেমন ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

وَجَعَلْنَا فِي الْاَرْضِ رَوَاسِيَ اَن تَـمِيْدَ بِـهِمْ

অর্থ : “আমি পৃথিবীতে পাহাড় রেখে দিয়েছি যাতে তাদেরকে নিয়ে পৃথিবী ঝুঁকে না পড়ে।” (পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩১)

মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র আরো ইরশাদ মুবারক করেন- 

وَاَلْقٰى فِي الْاَرْضِ رَوَاسِيَ اَن تَـمِيْدَ بِكُمْ

অর্থ : “তিনি পৃথিবীতে স্থাপন করেছেন পর্বতমালা, যাতে পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে ঢলে না পড়ে।” (পবিত্র সূরা লুকমান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০) 

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

وَاَلْقَىٰ فِي الْاَرْضِ رَوَاسِيَ اَن تَـمِيْدَ بِكُمْ وَأَنْهَارًا

অর্থ : “এবং তিনি পৃথিবীর উপর পর্বতমালা স্থাপন করেছেন যে, কখনো যেন তা তোমাদেরকে নিয়ে হেলে-দুলে না পড়ে।” (পবিত্র সূরা নাহল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ  ১৫)

সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা হতে বুঝা গেল যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাবিশ্ব থেকে যাতে পৃথিবী টলে না যায় সেজন্য মহাকর্ষ সৃষ্টি করেছেন আর ভূপৃষ্ঠকে টলে যাওয়া প্রতিরোধের জন্য পাহাড়-পর্বতগুলো গোঁজ বা খিল হিসেবে যমীনে স্থাপন করেছেন।

আর এই ভারসাম্যপূর্ণ পৃথিবীকে মানুষের বসবাসোপযোগী করেছেন বলেই ইরশাদ মুবারক করেন-

اَللهُ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ قَرَارًا وَالسَّمَاءَ بِنَاءً وَصَوَّرَكُمْ فَأَحْسَنَ صُوَرَكُمْ وَرَزَقَكُم مِّنَ الطَّيِّبَاتِ ۚ ذٰلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمْ ۖ فَتَبَارَكَ اللهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ ﴿٦٤﴾

অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক তিনি পৃথিবীকে করেছেন তোমাদের জন্যে বাসোপযোগী বাসস্থান, আকাশকে করেছেন সমুন্নত এবং তিনি তোমাদেরকে আকৃতি দান করেছেন, অতঃপর তোমাদের আকৃতি সুন্দর করেছেন এবং তিনি তোমাদেরকে দান করেছেন পরিচ্ছন্ন রিযিক। তিনি মহান আল্লাহ পাক, তোমাদের রব তায়ালা। বিশ্বজগতের রব তায়ালা মহান আল্লাহ পাক তিনি বরকতময়।” (পবিত্র সূরা মু’মিন শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৪)


 নাস্তিকদের আপত্তি : কুরানের কোথাও ‘পৃথিবী’ এবং ‘ঘুরছে’ শব্দ দুটোর পাশাপাশি অবস্থান নেই, বরং বার বার বলা আছে আল্লাহ পৃথিবিকে রেখেছেন ‘স্থির’ যেন তা নড়াচড়া করতে না পারে  একজন মুসলিম এরপরেও কি করে দাবি করতে পারে কুরানের সকল আয়াত বিজ্ঞানের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ?

 নাস্তিকদের আপত্তি : কুরানের কোথাও ‘পৃথিবী’ এবং ‘ঘুরছে’ শব্দ দুটোর পাশাপাশি অবস্থান নেই, বরং বার বার বলা আছে আল্লাহ পৃথিবিকে রেখেছেন ‘স্থির’ যেন তা নড়াচড়া করতে না পারে  একজন মুসলিম এরপরেও কি করে দাবি করতে পারে কুরানের সকল আয়াত বিজ্ঞানের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ?

 নাস্তিকদের আপত্তি : কুরানের কোথাও ‘পৃথিবী’ এবং ‘ঘুরছে’ (falak)  শব্দ দুটোর পাশাপাশি অবস্থান নেই, বরং বার বার বলা আছে আল্লাহ পৃথিবিকে রেখেছেন ‘স্থির’ যেন তা নড়াচড়া করতে না পারে (Quran 27:61, 35:41, 40:64)!  একজন মুসলিম এরপরেও কি করে দাবি করতে পারে কুরানের সকল আয়াত বিজ্ঞানের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ?

খণ্ডণ : সাধারণভাবে কোন একজন মানুষের প্রশ্ন করা থেকেই বুঝে নেয়া যায় তার জ্ঞানের সীমানা কতটুকু। তেমনিভাবে নাস্তিকদের এই বক্তব্যটি থেকেও বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়েছে।

তাদের বক্তব্য - “কুরানের কোথাও ‘পৃথিবী’ এবং ‘ঘুরছে’ (falak শব্দ দুটোর পাশাপাশি অবস্থান নেই”। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ‘পৃথিবী’ এবং ‘ঘুরছে’ (falakশব্দ দুটো পাশাপাশি অবস্থান করলেই কি পৃথিবী ঘুরছে- কথাটি প্রমাণিত হয়ে যায়? উত্তর হচ্ছে না। 

যে আয়াত শরীফগুলো পৃথিবীকে স্থির প্রমাণ করতে গর্দভগুলো ব্যবহার করেছে সেই আয়াত শরীফত্রয়ের মধ্যে প্রথম আয়াত শরীফখানা হচ্ছে পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠকে ভারসাম্যপূর্ণ রাখা বিষয়ক আয়াত শরীফ। আয়াত শরীফখানা হচ্ছে -

اَمَّن جَعَلَ الْاَرْضَ قَرَارًا وَجَعَلَ خِلَالَـهَا اَنْهَارًا وَجَعَلَ لَـهَا رَوَاسِيَ وَجَعَلَ بَيْنَ الْبَحْرَيْنِ حَاجِزًا ۗ   

অর্থ : “বলুন তো কে পৃথিবীকে বাসোপযোগী করেছেন এবং তার মাঝে মাঝে নদ-নদী প্রবাহিত করেছেন এবং তাকে স্থিত রাখার জন্যে পর্বত স্থাপন করেছেন এবং দুই সমুদ্রের মাঝখানে অন্তরায় রেখেছেন।” (পবিত্র সূরা নমল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬১)

এই আয়াত শরীফ উনার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক তিনি ভূপৃষ্ঠ সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের প্রতি ইহসানের বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন। ভূ-অভ্যন্তরস্থ গলিত উতপ্ত তরলের উপর ভূপৃষ্ঠকে সম্প্রসারিত করার মাধ্যমে পৃথিবীকে বসবাসোপযোগী করেছেন। আর তরলের উপর দোদুল্যমান যমীনকে পাহাড়-পর্বতের মাধ্যমে ভারসাম্যপূর্ণ করেছেন। সুতরাং এই আয়াত শরীফ উনার মধ্যে পৃথিবীকে স্থির বলা হয়েছে - এই কথাটি ডাহা মিথ্যা বৈ অন্য কিছু নয়।

মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন-

وَالْأَرْضَ مَدَدْنَاهَا وَاَلْقَيْنَا فِيهَا رَوَاسِيَ وَاَنبَتْنَا فِيهَا مِن كُلِّ شَيْءٍ مَّوْزُونٍ ﴿١٩﴾ وَجَعَلْنَا لَكُمْ فِيهَا مَعَايِشَ وَمَن لَّسْتُمْ لَهُ بِرَازِقِينَ ﴿٢٠﴾

অর্থ : “আমি ভূপৃষ্ঠকে বিস্তৃত করেছি এবং তার উপর পর্বতমালা স্থাপন করেছি এবং তাতে প্রত্যেক বস্তু সুপরিমিতভাবে উৎপন্ন করেছি। আমি তোমাদের জন্যে তাতে জীবিকার উপকরণ সৃষ্টি করেছি এবং তাদের জন্যেও যাদের অন্নদাতা তোমরা নও।” (পবিত্র সূরা হিজর শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৯-২০) 

অর্থাৎ মহান  আল্লাহ পাক তিনি ভূপৃষ্ঠকে বিস্তৃত করে এই পৃথিবীকে বাসোপযোগী বাসস্থান করেছেন। কিন্তু ভূপৃষ্ঠ হচ্ছে শক্ত ছালের মত একটি পাতলা স্তর, যার পুরুত্ব ২-৩৫ কিলোমিটার। পক্ষান্তরে ভূপৃষ্ঠের নিচের স্তরগুলো গরম ও তরল যা কোন উদ্ভিদ ও প্রাণীর জন্য বাসোপযোগী নয়। উপরন্তু ভূপৃষ্ঠ পাতলা হওয়ার কারণে তরল স্তরের উপরে নড়াচড়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট। আর তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি পাহাড়গুলোকে স্থাপন করলেন যাতে ভূপৃষ্ঠ টলমল না করে স্থিতিশীল থাকে। অর্থাৎ পৃথিবী তার নিজ অক্ষের উপর প্রচ- বেগে ঘোরা সত্ত্বেও মানুষ ও অন্যান্য জীবের সুবিধার জন্য পৃথিবীকে আপাতদৃষ্টিতে স্থির অবস্থায় রাখা হয়েছে। অন্যথায় পৃথিবীতে জীবনযাত্রা ব্যাহত হতে পারতো। সুতরাং ভূপৃষ্ঠের উপর পাহাড়-পর্বতগুলো এক-একটি গোঁজ বা খিলের মতো কাজ করছে, যার ফলে ভূপৃষ্ঠ টলমল করা থেকে বা ঝটুকে পড়া থেকে রক্ষা পেয়েছে।

আর এই বিষয়টিই মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন এভাবে-

اَلَـمْ نَـجْعَلِ الْاَرْضَ مِهَادًا ﴿٦﴾ وَالْـجِبَالَ اَوْتَادًا ﴿٧﴾

অর্থ : “আমি কি যমীনকে বিস্তৃত করিনি এবং পাহাড়কে গোঁজ বানাইনি?” (পবিত্র সূরা আন নাবা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬-৭)

মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন-

وَجَعَلْنَا فِي الْاَرْضِ رَوَاسِيَ اَن تَـمِيْدَ بِـهِمْ

অর্থ : “আমি পৃথিবীতে পাহাড় রেখে দিয়েছি যাতে তাদেরকে নিয়ে পৃথিবী ঝুঁকে না পড়ে।” (পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩১)

মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র আরো ইরশাদ মুবারক করেন- 

وَاَلْقٰى فِي الْاَرْضِ رَوَاسِيَ اَن تَـمِيْدَ بِكُمْ

অর্থ : “তিনি পৃথিবীতে স্থাপন করেছেন পর্বতমালা, যাতে পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে ঢলে না পড়ে।” (পবিত্র সূরা লুকমান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০) 

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

وَاَلْقَىٰ فِي الْاَرْضِ رَوَاسِيَ اَن تَـمِيْدَ بِكُمْ وَأَنْهَارًا

অর্থ : “এবং তিনি পৃথিবীর উপর পর্বতমালা স্থাপন করেছেন যে, কখনো যেন তা তোমাদেরকে নিয়ে হেলে-দুলে না পড়ে।” (পবিত্র সূরা নাহল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ  ১৫)

উপরোক্ত আলোচনা হতে বুঝা গেল যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ভূপৃষ্ঠকে টলে যাওয়া প্রতিরোধের জন্যই মূলত পাহাড়-পর্বতগুলো গোঁজ বা খিল হিসেবে যমীনে স্থাপন করেছেন।

সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার সাথে বিজ্ঞান সাদৃশ্যতাপূর্ণ।

পৃথিবীকে স্থির প্রমাণ করতে তাদের ব্যবহৃত ২য় আয়াত শরীফখানা হচ্ছে -

إِنَّ اللهَ يـُمْسِكُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ أَن تَزُولَا ۚ وَلَئِن زَالَتَا إِنْ اَمْسَكَهُمَا مِنْ اَحَدٍ مِّن بَعْدِهِ ۚ اِنَّهُ كَانَ حَلِيمًا غَفُوْرًا ﴿٤١﴾

অর্থ : “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি আসমান ও যমীনকে ধরে রেখেছেন, যাতে স্থানচ্যুত না হয়। যদি এগুলো স্থানচ্যুত হয়ে যায়, তবে তিনি ব্যতীত কে এগুলো ধরে রাখবে। তিনি সহনশীল ও ক্ষমাপরায়ণ।” (পবিত্র সূরা ফাত্বির শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪১)

মহান আল্লাহ পাক তিনি এই আয়াত শরীফ উনার মধ্যে আসমান ও যমীন উভয়েরই কথা উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ এই পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা ঘূর্ণায়মান পৃথিবীসহ সকল গ্রহ-নক্ষত্রের কার্যাবলী বর্ণনা করে বুঝিয়ে দিচ্ছেন যে, এগুলো ঘূর্নায়মান হওয়ার পরও ছিটকে যাচ্ছে না বরং নিজ নিজ কক্ষপথে আর্বনশীল রয়েছে। তিনি উনার কুদরত মুবারক দ্বারা পৃথিবী সহ সকল গ্রহ-নক্ষত্রকে ধরে রেখেছেন যাতে হেলে দুলে ও স্বস্থান থেকে বিচ্যুত হয়ে না যায়। আর উনার কুদরত মুবারক উনার একটি বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে মহাকর্ষ বল, যার ফলে পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্রগুলো ঘূর্ণায়মান হওয়া সত্ত্বেও নিজ নিজ কক্ষপথ হতে ছিটকে পড়ে যাচ্ছে না। যদি পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্রগুলো ঘূর্ণায়মান না হয়ে থেমেই থাকতো তাহলে তা ধরা ও সংরক্ষণের প্রয়োজনই ছিল না। সুতরাং এই আয়াত শরীফ দ্বারাও পৃথিবী স্থির বুঝানো হয়নি বরং মহাকর্ষ বলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

আর পৃথিবীকে স্থির প্রমাণ করতে তাদের ব্যবহৃত তৃতীয় আয়াত শরীফখানা হচ্ছে -

اَللهُ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ قَرَارًا وَالسَّمَاءَ بِنَاءً وَصَوَّرَكُمْ فَأَحْسَنَ صُوَرَكُمْ وَرَزَقَكُم مِّنَ الطَّيِّبَاتِ ۚ ذٰلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمْ ۖ فَتَبَارَكَ اللهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ ﴿٦٤﴾

অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক তিনি পৃথিবীকে করেছেন তোমাদের জন্যে বাসোপযোগী বাসস্থান, আকাশকে করেছেন সমুন্নত এবং তিনি তোমাদেরকে আকৃতি দান করেছেন, অতঃপর তোমাদের আকৃতি সুন্দর করেছেন এবং তিনি তোমাদেরকে দান করেছেন পরিচ্ছন্ন রিযিক। তিনি মহান আল্লাহ পাক, তোমাদের রব তায়ালা। বিশ্বজগতের রব তায়ালা মহান আল্লাহ পাক তিনি বরকতময়।” (পবিত্র সূরা মু’মিন শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৪)

এই আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি মানুষকে কি কি নিয়ামত প্রদান করে ইহসান করেছেন সে নিয়ামতসমূহের কিছু নমুনা উল্লেখ করেছেন। এখানে ‘পৃথিবী স্থির’ এ ধরণের কোন কথা বলা হয়নি। তাই এই আয়াত শরীফ দ্বারা পৃথিবী স্থির প্রমাণের চেষ্টা নিতান্তই মূর্খতার পরিচায়ক।

সুতরাং প্রদত্ত আয়াত শরীফত্রয় দ্বারা কখনোই প্রমাণিত হয় না যে, পৃথিবী স্থির। আয়াত শরীফ উনাদের সাথে বিজ্ঞানের কোন অসঙ্গতিও নেই। উপরন্তু বিজ্ঞান এখনো শিশুতুল্য। তাই এ কথা বলা যায় যে, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার প্রতিটি আয়াত শরীফ বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার পরিপূর্ণ ও একমাত্র পথনির্দেশক। কেননা পবিত্র কুরআন শরীফ নিজেই বিজ্ঞানময়।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَالْقُرْاٰنِ الْـحَكِيمِ ﴿٢﴾

অর্থ : “কসম! প্রজ্ঞাময় পবিত্র কুরআন শরীফ উনার।” (পবিত্র সূরা ইয়াছিন শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২)


কুরানের আয়াত 21:33  এর অনুবাদের 'everything' or 'all'  ব্যাবহার করে কোন প্রেক্ষিতে আপনি দাবি করছেন যে ‘সকল গ্রহ নক্ষত্র নিজ কক্ষপথে ঘুরছে’, যেখানে আয়াতে ব্যাবহৃত  'Kullun Fee' (which is also used in Quran 36:40)  এর অর্থ 'each in'  দ্বারা শুধুমাত্র সুর্য আর চাঁদের কথা বোঝানো হচ্ছে?

 কুরানের আয়াত 21:33  এর অনুবাদের 'everything' or 'all'  ব্যাবহার করে কোন প্রেক্ষিতে আপনি দাবি করছেন যে ‘সকল গ্রহ নক্ষত্র নিজ কক্ষপথে ঘুরছে’, যেখানে আয়াতে ব্যাবহৃত  'Kullun Fee' (which is also used in Quran 36:40)  এর অর্থ 'each in'  দ্বারা শুধুমাত্র সুর্য আর চাঁদের কথা বোঝানো হচ্ছে?

নাস্তিকদের আপত্তি : কুরানের আয়াত 21:33  এর অনুবাদের 'everything' or 'all'  ব্যাবহার করে কোন প্রেক্ষিতে আপনি দাবি করছেন যে ‘সকল গ্রহ নক্ষত্র নিজ কক্ষপথে ঘুরছে’, যেখানে আয়াতে ব্যাবহৃত  'Kullun Fee' (which is also used in Quran 36:40)  এর অর্থ 'each in'  দ্বারা শুধুমাত্র সুর্য আর চাঁদের কথা বোঝানো হচ্ছে?

The Arabic word for 'everything' is 'kullushaiyin' and the word for 'all' is 'Jamian'

খণ্ডণ : মিথ্যাবাদীদের মিথ্যাচার উন্মোচনের জন্য প্রথমেই পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ উনার ৩৩ নং আয়াত শরীফ (Quran 21:33 ও পবিত্র সূরা ইয়াছিন শরীফ উনার ৪০ নং আয়াত শরীফ (Quran 36:40দেখে নেয়া যাক। 

وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ۖ كُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ ﴿٣٣﴾

অর্থ : “তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চাঁদ। সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে।” (পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)

لَا الشَّمْسُ يَنبَغِي لَـهَا أَن تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلَا اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ ۚ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ ﴿٤٠﴾

অর্থ : “সূর্য নাগাল পেতে পারে না চাঁদের এবং রাত্রি অগ্রে চলে না দিনের। প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে সন্তরণশীল।” (পবিত্র সূরা ইয়াছিন শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪০)

পবিত্র সূরা ইয়াছিন শরীফ উনার ৪০ নং আয়াত শরীফ দ্বারা তো শুধুমাত্র সূর্য আর চাঁদের কথা বুঝানো হয়নি পাশাপাশি দিন-রাত অর্থাৎ পৃথিবী ঘূর্ণনের কথাও বুঝানো হয়েছে। অতএব তাদের মিথ্যাচার এখানে সুস্পষ্ট।

দ্বিতীয়ত পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ উনার ৩৩ নং আয়াত শরীফ (Quran 21:33)  উনার অনুবাদে ‘সকল গ্রহ নক্ষত্র নিজ কক্ষপথে ঘুরছে’ লিখা হলে সমস্যা কোথায়?

কেননা, মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন-

وَالسَّمَاءِ ذَاتِ الْـحُبُكِ ﴿٧﴾

অর্থ : “আর আকাশ, যা পথ ও কক্ষপথ দ্বারা পরিপূর্ণ।” (পবিত্র সূরা জারিয়াহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)

সুতরাং পবিত্র সূরা ইয়াছিন শরীফ উনার ৪০ নং আয়াত শরীফ (Quran 36:40) উনার অনুবাদেও ‘সকল গ্রহ নক্ষত্র নিজ কক্ষপথে ঘুরছে’ লিখা হলে কোন সমস্যা হবে না।


কুরানের কোন আয়াতই নির্দেশ করে না পৃথিবি ঘুর্নায়মান! বরং সর্বত্র রয়েছে সূর্য আর চন্দ্রের নিয়ম করে আবর্তনের কথা-

কুরানের কোন আয়াতই নির্দেশ করে না পৃথিবি ঘুর্নায়মান! বরং সর্বত্র রয়েছে সূর্য আর চন্দ্রের নিয়ম করে আবর্তনের কথা-

 নাস্তিকদের আপত্তি : কুরানের কোন আয়াতই নির্দেশ করে না পৃথিবি ঘুর্নায়মান! বরং সর্বত্র রয়েছে সূর্য আর চন্দ্রের নিয়ম করে আবর্তনের কথা (Quran 13:2, 31:29, 36:38-40, 21:33, 16:12, 14:33, 39:5, 35:13, 55:5, 2:258, 18:86-90)!  এটা কি এই প্রমান করে না যে কুরান মনে করে পৃথিবি স্থির (যাকে কেন্দ্র করে সূর্য-চন্দ্র ঘুরছে)?

খণ্ডণ : পেঁচা যেমন চক্ষু থাকার পরও দিনের বেলায় সূর্যের আলোতে দেখতে পায় না। ঠিক তেমনি নাস্তিকরাও পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে পৃথিবী ঘূর্ণনের বর্ণনা থাকার পরও বলে থাকে, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার কোন আয়াত শরীফই নির্দেশ করে না পৃথিবী ঘূর্ণায়মান। অথচ তাদের আপত্তিমূলক বক্তব্যের মধ্যে প্রদত্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের দ্বারাই প্রমাণিত যে, পৃথিবী ঘূর্ণায়মান।

যেমন আপত্তিকর বক্তব্যে প্রদত্ত ২য় আয়াত শরীফ খানা (৩১:২৯) উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

اَلَـمْ تَرَ اَنَّ اللهَ يُوْلِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَيُوْلِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَـجْرِي اِلٰى اَجَلٍ مُّسَمًّى

অর্থ : “আপনি কি দেখেন না যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি রাত্রিকে দিবসে প্রবিষ্ট করেন এবং দিবসকে রাত্রিতে প্রবিষ্ট করেন? তিনি চাঁদ ও সূর্যকে কাজে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকেই নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত পরিভ্রমণ করে।” (পবিত্র সূরা লুক্বমান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৯)

আপত্তিকর বক্তব্যে প্রদত্ত ৪র্থ আয়াত শরীফ খানা (২১:৩৩) উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ۖ كُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ ﴿٣٣﴾

অর্থ : “তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চাঁদ। সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে।” (পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)

আপত্তিকর বক্তব্যে প্রদত্ত ৫ম আয়াত শরীফ খানা (১৬:১২) উনার প্রথমাংশে বর্ণিত রয়েছে-

وَسَخَّرَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ۖ 

অর্থ : “তিনিই তোমাদের কাজে নিয়োজিত করেছেন রাত্রি, দিন, সূর্য এবং চাঁদকে।” (পবিত্র সূরা নাহল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১২)

আপত্তিকর বক্তব্যে প্রদত্ত ৬ষ্ঠ আয়াত শরীফ খানা (১৪:৩৩) উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

وَسَخَّرَ لَكُمُ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ دَائِبَيْنِ ۖ وَسَخَّرَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ ﴿٣٣﴾

অর্থ : “এবং তোমাদের সেবায় নিয়োজিত করেছেন সূর্যকে এবং চাঁদকে সর্বদা এক নিয়মে এবং রাত্রি ও দিবাকে তোমাদের কাজে লাগিয়েছেন।” (পবিত্র সূরা ইবরাহীম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)

আপত্তিকর বক্তব্যে প্রদত্ত ৭ম আয়াত শরীফ খানা (৩৯:৫) উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِالْحَقِّ ۖ يُكَوِّرُ اللَّيْلَ عَلَى النَّهَارِ وَيُكَوِّرُ النَّهَارَ عَلَى اللَّيْلِ ۖ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ۖ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ مُّسَمًّى ۗ أَلَا هُوَ الْعَزِيزُ الْغَفَّارُ ﴿٥﴾

অর্থ : “তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে। তিনি রাত্রিকে দিবস দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং তিনি সূর্য ও চাঁদকে কাজে নিযুক্ত করেছেন। প্রত্যেকেই বিচরণ করে নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত। জেনে রাখুন, তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।” (পবিত্র সূরা যুমার শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫)

আপত্তিকর বক্তব্যে প্রদত্ত ৮ম আয়াত শরীফ খানা (৩৫:১৩) উনার প্রথমাংশে বর্ণিত রয়েছে-

يُولِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَيُولِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ مُّسَمًّى ۚ 

অর্থ : “তিনি রাত্রিকে দিবসে প্রবিষ্ট করেন এবং দিবসকে রাত্রিতে প্রবিষ্ট করেন। তিনি সূর্য ও চাঁদকে কাজে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকটি আবর্তন করে এক নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত।” (পবিত্র সূরা ফাত্বির শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩)

এমনকি ৩৬ নং পবিত্র সূরা ইয়াছিন শরীফ উনার ৩৭ নং আয়াত শরীফ খানা উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

وَاٰيَةٌ لَّـهُمُ اللَّيْلُ نَسْلَخُ مِنْهُ النَّهَارَ فَإِذَا هُم مُّظْلِمُوْنَ ﴿٣٧﴾

অর্থ : “তাদের জন্যে এক নিদর্শন রাত্রি, আমি তা থেকে দিনকে অপসারিত করি, তখনই তারা অন্ধকারে থেকে যায়।”

উপরে বর্ণিত পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে দিবস ও রাত্রির বিষয়ে বর্ণিত রয়েছে। আলোচ্য পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে কোথাও দিবা-রাত্রির আগমন বা প্রস্থানকে চাঁদ বা সূর্যের আবর্তনের সাথে সংশ্লিষ্ট বলে উল্লেখ করা হয়নি। বরং দিবা-রাত্রির যে নিজস্ব স্বকিয়তা রয়েছে, নিজেরা আবর্তন বা বিচরণ করছে সে বিষয়টি সুস্পষ্টভাবেই বর্ণিত রয়েছে। অর্থাৎ দিবা-রাত্রির আবর্তন বা বিচরণের মাধ্যমে পৃথিবীর ঘূর্ণন বা পৃথিবীর আহ্নিক গতি বুঝানো হয়েছে। কেননা দিবা-রাত্রির আবর্তনের স্থল হচ্ছে পৃথিবী। যেমন এ প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছে-

الْـحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ وَجَعَلَ الظُّلُمَاتِ وَالنُّوْرَ ۖ

অর্থ : “সকল প্রশংসা সেই মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য যিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন এবং অন্ধকার ও আলোর উদ্ভব করেছেন।” (পবিত্র সূরা আন‘আম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১)

এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি আসমান ও যমীনের ব্যাপারে خَلَقَ ‘খালাকা’ শব্দ মুবারক ব্যবহার করেছেন এবং আলো ও অন্ধকারের ব্যাপারে جَعَلَ ‘যায়ালা’ শব্দ মুবারক ব্যবহার করেছেন। 

অর্থাৎ এখানে অন্ধকার ও আলো অর্থাৎ রাত ও দিনকে উল্লেখ করে এদের প্রকাশ স্থল পৃথিবীকে বুঝানো হয়েছে। কেননা রাত ও দিন পৃথিবীতেই প্রকাশ পেয়ে থাকে। যদি পৃথিবী না থাকতো তবে দিবা-রাত্রি প্রকাশ পেত না, কোন রাত ও দিনের আবির্ভাব ঘটতো না।

এছাড়াও পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

وَالنَّهَارِ إِذَا جَلَّاهَا ﴿٣﴾ وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشَاهَا ﴿٤﴾

অর্থ : “কসম! দিনের যখন তা সূর্যকে প্রখরভাবে প্রকাশ করে। কসম! রাতের যখন তা সূর্যকে গভীরভাবে আচ্ছাদিত করে।” (পবিত্র সূরা শামস শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩-৪)

উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফদ্বয় উনাদের মধ্যে বর্ণিত جَلَّاهَا يَغْشَاهَا শব্দ মুবারকদ্বয় যথাক্রমে সূর্যকে প্রখরভাবে প্রকাশ করে ও সূর্যকে গভীরভাবে আচ্ছাদিত করে বুঝানো হয়েছে। পৃথিবী যদি ঘূর্নায়মান নাই হয়ে থাকে তাহলে দিন কিভাবে সূর্যকে প্রখরভাবে প্রকাশ করে আর রাত কিভাবে সূর্যকে গভীরভাবে আচ্ছাদিত করে।

আবার পবিত্র সূরা ফাত্বির শরীফ উনার ১৩ নং পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র সূরা লুক্বমান শরীফ উনার ২৯ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, দিবা-রাত্রির দৈর্ঘ্যরে হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে থাকে। সুতরাং এর দ্বারা বিভিন্ন ঋতু পরিবর্তনের সুস্পষ্ট প্রমাণ পরিলক্ষিত হয়। অর্থাৎ উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা পৃথিবীর বার্ষিক গতির বর্ণনাও প্রদান করা হয়েছে।

এ সম্পর্কে অন্যত্র ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

رَبُّ الْمَشْرِقَيْنِ وَرَبُّ الْمَغْرِبَيْنِ ﴿١٧﴾

অর্থ : “তিনি দুই উদয়াচল ও দুই অস্তাচলের মালিক।” (পবিত্র সূরা রহমান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৭)

এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত দুই উদয়াচল ও দুই অস্তাচল দ্বারা শীত ও গ্রীষ্ম ঋতুকে বুঝানো হয়েছে। কেননা পৃথিবী অবিরত নিজ অক্ষে ঘূর্ণনের পাশাপাশি সূর্যের চারদিকে পদক্ষিণের ফলে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অবস্থানের পরিবর্তন হয়। অর্থাৎ বছরে কেবল একটা সময়েই সূর্য একদম পূর্ব দিকে উঠে। অন্য সময় তা কিছুটা বাম দিকে নয়ত ডান দিকে থাকে। সর্ব বামের বিন্দু হল একটি চরম বিন্দু এবং সর্ব ডানের বিন্দু হল বিপরীত চরমবিন্দু। এর একটি হল উত্তর আয়তান্ত (summer solstice)  এবং অপরটি হল দক্ষিণ আয়তান্ত (winter solstice)|

সুতরাং দেখা যাচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি দুই উদয়াচল ও দুই অস্তাচল দ্বারা সূর্যের উদয় ও অস্তের ২টি চরম বিন্দুকে বুঝিয়েছেন, যা মূলত শীত ও গ্রীষ্ম ঋতুকে প্রতিনিধিত্ব করে থাকে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি শুধুমাত্র ২টি ঋতুর কথা বর্ণনা করেননি বরং বিভিন্ন স্থানের বিভিন্ন ঋতুর কথাও বর্ণনা করেছেন। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

فَلَا أُقْسِمُ بِرَبِّ الْمَشَارِقِ وَالْمَغَارِبِ إِنَّا لَقَادِرُونَ ﴿٤٠﴾

অর্থ : “আমি শপথ করছি উদয়াচল ও অস্তাচলসমূহের সম্মানিত রব তায়ালা উনার, নিশ্চয়ই আমি সক্ষম!” (পবিত্র সূরা মা‘আরিজ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪০)

অর্থাৎ বিভিন্ন ঋতুতে সূর্যের উদয়াচল ও অস্তাচলের অবস্থান পরিবর্তনের বিষয়টি এখানে বর্ণিত হয়েছে।

কেননা পৃথিবী নিজের অক্ষের উপর পশ্চিম থেকে পূর্ব বরাবর ঘূর্ণনের ফলে সকাল বেলা পূর্ব দিকে সূর্য উদিত হয়। কিন্তু এই ঘূর্ণন কেবল পশ্চিম থেকে পূর্বে নয় বিধায় সর্বদা সূর্য বিষুবরেখা বরাবর উদিত হয় না, বরং সূর্য বছরে কেবল মার্চ এবং সেপ্টেম্বরেই বিষুবরেখা বরাবর উদিত হয়। আর জুনে সূর্য কর্কটক্রান্তি বরাবর উদিত হয়, অতঃপর সূর্য মকরক্রান্তির দিকে ধাবিত হয়। ফলশ্রুতিতে বিষুবরেখা হয়ে ডিসেম্বরে মকরক্রান্তিতে পৌঁছে। অর্থাৎ বছরে জুন মাসে পূর্ব দিক হবে কর্কটক্রান্তি বরাবর, মার্চ এবং সেপ্টেম্বরে পূর্ব দিক হবে বিষুবরেখা বরাবর এবং ডিসেম্বরে পূর্ব দিক হবে মকরক্রান্তি বরাবর। অর্থাৎ দুই উদয়াচল ও মধ্যবর্তী বহু উদয়াচল বৈজ্ঞানিক নিদর্শন।

এছাড়াও তাদের আপত্তিকর বক্তব্যে প্রদত্ত আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে শুধুমাত্র সূর্য আর চাঁদ নিয়ম করে আবর্তনের কথা উল্লেখ করা হয়নি। পাশাপাশি রাত-দিনেরও আর্বতনের কথা উল্লেখ থাকায় উক্ত আয়াত শরীফ উনাদের দ্বারা প্রত্যেকের আবর্তনের কথা উল্লেখ রয়েছে। তাই আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে দ্বিবচন ব্যবহার করা হয়নি। যেহেতু দ্বিবচন ব্যবহৃত হয়নি, তাই উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা শুধুমাত্র সূর্য আর চাঁদ নিয়ম করে আবর্তন করে থাকে, পৃথিবী আবর্তন করে না বা পৃথিবী ঘূর্ণয়মান নয় - এই কথা কোনভাবেই প্রমাণ করা যায় না। বরং এর দ্বারা আপত্তি উত্থাপনকারীদের চরম-পরম অজ্ঞতা ও মূর্খতারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

আবার মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لَا الشَّمْسُ يَنبَغِـي لَـهَا اَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلَا اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ ۚ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُوْنَ

অর্থ : “সূর্যের পক্ষে সম্ভব নয় চাঁদের নাগাল পাওয়া, আর রাত্রির পক্ষে সম্ভব নয় দিবসকে অতিক্রম করা; আর প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করছে।” (পবিত্র সূরা ইয়াসিন শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪০)

মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন-

وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ۖ كُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ

অর্থ : “তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চাঁদ। সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে।” (পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)

উক্ত সূরা শরীফদ্বয় উনাদের মধ্যে ব্যবহৃত يَسْبَحُونَ ‘ইয়াসবাহুন’ শব্দ মুবারক এসেছে سَبَحَ ‘সাবাহা’ শব্দ থেকে। এ শব্দটি কোন মাটিতে চলা লোকের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হলে অর্থ হবে সে হাঁটছে অথবা দৌঁড়াচ্ছে। এ শব্দটি পানিতে থাকা কোন লোকের ক্ষেত্রে বলা হলে এর অর্থ এই না যে লোকটি ভাসছে, বরং বুঝতে হবে লোকটি সাঁতার কাটছে। এ শব্দটি কোন মহাজাগতিক বস্তুর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হলে এর অর্থ করতে হবে এটা নিজ অক্ষে ঘুরছে সাথে সাথে কোন কিছুকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে।   

এছাড়াও পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আরো বিভিন্ন পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, পৃথিবী ঘূর্ণায়মান।

(১)

أَلَـمْ نَـجْعَلِ الْأَرْضَ كِفَاتًا ﴿٢٥﴾  

এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত كِفَاتًا ‘কিফাতান’ শব্দ মুবারক দ্বারা পৃথিবীর গতি বুঝানো হয়েছে। এই كِفَاتًا শব্দ মুবারক যদি কোন পাখির জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে তাহলে এর অর্থ দাঁড়াবে “পাখির পালক সংকুচিত করে জোরে উড়া।” (লুগাতুল কুরআন)

যদি এ শব্দ মুবারক ঘোড়ার জন্য ব্যবহৃত হয় তাহলে হবে “ঘোড়াটি অনিয়ন্ত্রিভাবে দৌড়াচ্ছে” এবং অশ্বারোহী তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম নয়। (লুগাতুল কুরআন)

অতএব এ كِفَاتًا ‘কিফাতান’ শব্দ মুবারক পৃথিবীর জন্য ব্যবহৃত হলে এটি বুঝাবে  দ্রুতগামী বস্তু যার গতি আরোহীদের অর্থাৎ পৃথিবীতে বসবাসকারী জীব দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়।

সুতরাং উক্ত আয়াত শরীফ উনার অর্থ হবে-

“আমি কি পৃথিবীকে সৃষ্টি করিনি প্রচ- বেগে ঘূর্ণায়মান বস্তুরূপে?” (পবিত্র সূরা মুরছালাত শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৫)

পৃথিবী যেহেতু প্রচ- বেগে ঘূর্ণায়মান তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

إِنَّ اللهَ يـُمْسِكُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ أَن تَزُولَا ۚ وَلَئِن زَالَتَا إِنْ اَمْسَكَهُمَا مِنْ اَحَدٍ مِّن بَعْدِهِ ۚ اِنَّهُ كَانَ حَلِيمًا غَفُوْرًا ﴿٤١﴾

অর্থ : “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি আসমান ও যমীনকে ধরে রেখেছেন, যাতে স্থানচ্যুত না হয়। যদি এগুলো স্থানচ্যুত হয়ে যায়, তবে তিনি ব্যতীত কে এগুলো ধরে রাখবে। তিনি সহনশীল ও ক্ষমাপরায়ণ।” (পবিত্র সূরা ফাত্বির শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪১)

মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কুদরত মুবারক দ্বারা পৃথিবীকে ধরে রেখেছেন যাতে হেলে দুলে ও স্বস্থান থেকে বিচ্যুত হয়ে না যায়। যদি পৃথিবী ঘূর্ণায়মান না হয়ে থেমেই থাকতো তাহলে তা ধরা ও সংরক্ষণের প্রয়োজনই ছিল না। যেমন করে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কুদরত মুবারক দ্বারা আসমানকে ধরে রেখেছেন যাতে যমীনে পতিত না হয়। তেমনিভাবে, তিনি পৃথিবীকে উনার কুদরত মুবারক দ্বারা ধরে রেখেছেন যাতে হেলে দুলে না যায় এবং সূর্যের  নিকটবর্তী না হয় অথবা সূর্য থেকে দূরে সরে না যায়। কারণ উভয়টিই মহাবিপদজনক।

(২)

وَالْأَرْضَ وَضَعَهَا لِلْأَنَامِ ﴿١٠﴾

এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত وَضَعَهَا ‘ওয়াদ্বা‘আহা’ শব্দ মুবারক দ্বারাও পৃথিবী ঘূর্ণনশীল বুঝানো হয়েছে। এই وَضَعَهَا ‘ওয়াদ্বা‘আহা’ শব্দ মুবারক যদি মানুষের সাথে ব্যবহৃত হয় তাহলে তার অর্থ হবে মানুষটি দৌঁড়াচ্ছে। যেমন- وَضَعَهَا رَّجُلٌ ‘ওয়াদ্বা‘আহার রজুল’ এর অর্থ হচ্ছে দৌঁড়ানো মানুষ।

এই وَضَعَهَا ‘ওয়াদ্বা‘আহা’ শব্দ মুবারক যদি উটের সাথে ব্যবহৃত হয় তাহলে তার অর্থ হবে উটটি দৌঁড়াচ্ছে। যেমন- وَضَعَهَا نَكَة ‘ওয়াদ্বা‘আতিন নাকাহ’ এর অর্থ হচ্ছে দৌঁড়ানো উট।

আর যদি وَضَعَهَا ‘ওয়াদ্বা‘আহা’ শব্দ মুবারক যদি পৃথিবীর সাথে ব্যবহৃত হয় তাহলে তার অর্থ হবে পৃথিবীটি ঘুরতেছে।

সুতরাং উক্ত আয়াত শরীফ উনার অর্থ হবে- “তিনি পৃথিবীকে ঘূর্ণনশীল করেছেন সৃষ্টজীবের জন্যে।” (পবিত্র সূরা আররহমান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০)

(৩)

الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ فِرَاشًا

এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত فِرَاشًا ‘ফিরাশান’ শব্দ মুবারক দ্বারাও পৃথিবী ঘূর্ণনশীল বুঝানো হয়েছে। এই فِرَاشًا ‘ফিরাশান’ বলতে উড়ন্ত কীটপতঙ্গকে বুঝায়। যেমন- মশা, মাছি ইত্যাদি।

পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

يَوْمَ يَكُونُ النَّاسُ كَالْفَرَاشِ الْمَبْثُوثِ ﴿٤﴾

অর্থ : “যেদিন মানুষ হবে বিক্ষিপ্ত পতঙ্গ (فَرَاشِ)-এর ন্যায়।” (পবিত্র সূরা ক্বারিয়াহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪)

অর্থাৎ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ فِرَاشًا এই আয়াত শরীফ দ্বারা পৃথিবীকে উড়ন্ত কীটপতঙ্গ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে যা প্রমাণ করে যে, পৃথিবী গতিশীল।

অতএব উপরোক্ত আলোচনা হতে প্রতীয়মাণ হয় যে, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার বিভিন্ন আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে চাঁদ ও সূর্যের পাশাপাশি পৃথিবী ঘূর্ণনের বিষয়টিও সুস্পষ্ট করেই বর্ণনা করা হয়েছে।

এমনকি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ৬ষ্ঠ ইমাম হযরত ইমাম জাফর ছদিক্ব আলাইহিস সালাম (বিলাদত শরীফ : ৯৬ হিজরী ১৭ই রবীউল আউওয়াল শরীফ ইছনাইনিল আযীম; বিছাল শরীফ : ১৪৮ হিজরী ১৮ই রজবুল হারাম, ইছনাইনিল আযীম) তিনি মাত্র ১১ বছর বয়স মুবারকে সূর্য, চাঁদ এবং অন্যান্য গ্রহগুলো পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘূর্ণায়মানের অ্যারিস্টোটল এবং টলেমী কর্তৃৃক যে তত্ত্ব প্রচলিত ছিল তা ভুল/অমূলক বলে প্রতিপন্ন করেন। এছাড়াও তিনি ইরশাদ মুবারক করেন যে, পৃথিবী এর নিজ অক্ষের উপর ঘূর্ণায়মান।