কুরানের কোন আয়াতই নির্দেশ করে না পৃথিবি ঘুর্নায়মান! বরং সর্বত্র রয়েছে সূর্য আর চন্দ্রের নিয়ম করে আবর্তনের কথা-
নাস্তিকদের আপত্তি : কুরানের কোন আয়াতই নির্দেশ করে না পৃথিবি ঘুর্নায়মান! বরং সর্বত্র রয়েছে সূর্য আর চন্দ্রের নিয়ম করে আবর্তনের কথা (Quran
13:2, 31:29, 36:38-40, 21:33, 16:12, 14:33, 39:5, 35:13, 55:5, 2:258, 18:86-90)! এটা কি এই প্রমান করে না যে কুরান মনে করে পৃথিবি স্থির (যাকে কেন্দ্র করে সূর্য-চন্দ্র ঘুরছে)?
খণ্ডণ : পেঁচা যেমন চক্ষু থাকার পরও দিনের বেলায় সূর্যের আলোতে দেখতে পায় না। ঠিক তেমনি নাস্তিকরাও পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে পৃথিবী ঘূর্ণনের বর্ণনা থাকার পরও বলে থাকে, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার কোন আয়াত শরীফই নির্দেশ করে না পৃথিবী ঘূর্ণায়মান। অথচ তাদের আপত্তিমূলক বক্তব্যের মধ্যে প্রদত্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের দ্বারাই প্রমাণিত যে, পৃথিবী ঘূর্ণায়মান।
যেমন আপত্তিকর বক্তব্যে প্রদত্ত ২য় আয়াত শরীফ খানা (৩১:২৯) উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
اَلَـمْ تَرَ اَنَّ اللهَ يُوْلِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَيُوْلِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَـجْرِي اِلٰى اَجَلٍ مُّسَمًّى
অর্থ : “আপনি কি দেখেন না যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি রাত্রিকে দিবসে প্রবিষ্ট করেন এবং দিবসকে রাত্রিতে প্রবিষ্ট করেন? তিনি চাঁদ ও সূর্যকে কাজে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকেই নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত পরিভ্রমণ করে।” (পবিত্র সূরা লুক্বমান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৯)
আপত্তিকর বক্তব্যে প্রদত্ত ৪র্থ আয়াত শরীফ খানা (২১:৩৩) উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ۖ كُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ ﴿٣٣﴾
অর্থ : “তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চাঁদ। সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে।” (পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)
আপত্তিকর বক্তব্যে প্রদত্ত ৫ম আয়াত শরীফ খানা (১৬:১২) উনার প্রথমাংশে বর্ণিত রয়েছে-
وَسَخَّرَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ۖ
অর্থ : “তিনিই তোমাদের কাজে নিয়োজিত করেছেন রাত্রি, দিন, সূর্য এবং চাঁদকে।” (পবিত্র সূরা নাহল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১২)
আপত্তিকর বক্তব্যে প্রদত্ত ৬ষ্ঠ আয়াত শরীফ খানা (১৪:৩৩) উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
وَسَخَّرَ لَكُمُ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ دَائِبَيْنِ ۖ وَسَخَّرَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ ﴿٣٣﴾
অর্থ : “এবং তোমাদের সেবায় নিয়োজিত করেছেন সূর্যকে এবং চাঁদকে সর্বদা এক নিয়মে এবং রাত্রি ও দিবাকে তোমাদের কাজে লাগিয়েছেন।” (পবিত্র সূরা ইবরাহীম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)
আপত্তিকর বক্তব্যে প্রদত্ত ৭ম আয়াত শরীফ খানা (৩৯:৫) উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِالْحَقِّ ۖ يُكَوِّرُ اللَّيْلَ عَلَى النَّهَارِ وَيُكَوِّرُ النَّهَارَ عَلَى اللَّيْلِ ۖ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ۖ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ مُّسَمًّى ۗ أَلَا هُوَ الْعَزِيزُ الْغَفَّارُ ﴿٥﴾
অর্থ : “তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে। তিনি রাত্রিকে দিবস দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং তিনি সূর্য ও চাঁদকে কাজে নিযুক্ত করেছেন। প্রত্যেকেই বিচরণ করে নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত। জেনে রাখুন, তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।” (পবিত্র সূরা যুমার শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫)
আপত্তিকর বক্তব্যে প্রদত্ত ৮ম আয়াত শরীফ খানা (৩৫:১৩) উনার প্রথমাংশে বর্ণিত রয়েছে-
يُولِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَيُولِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ مُّسَمًّى ۚ
অর্থ : “তিনি রাত্রিকে দিবসে প্রবিষ্ট করেন এবং দিবসকে রাত্রিতে প্রবিষ্ট করেন। তিনি সূর্য ও চাঁদকে কাজে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকটি আবর্তন করে এক নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত।” (পবিত্র সূরা ফাত্বির শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩)
এমনকি ৩৬ নং পবিত্র সূরা ইয়াছিন শরীফ উনার ৩৭ নং আয়াত শরীফ খানা উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
وَاٰيَةٌ لَّـهُمُ اللَّيْلُ نَسْلَخُ مِنْهُ النَّهَارَ فَإِذَا هُم مُّظْلِمُوْنَ ﴿٣٧﴾
অর্থ : “তাদের জন্যে এক নিদর্শন রাত্রি, আমি তা থেকে দিনকে অপসারিত করি, তখনই তারা অন্ধকারে থেকে যায়।”
উপরে বর্ণিত পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে দিবস ও রাত্রির বিষয়ে বর্ণিত রয়েছে। আলোচ্য পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে কোথাও দিবা-রাত্রির আগমন বা প্রস্থানকে চাঁদ বা সূর্যের আবর্তনের সাথে সংশ্লিষ্ট বলে উল্লেখ করা হয়নি। বরং দিবা-রাত্রির যে নিজস্ব স্বকিয়তা রয়েছে, নিজেরা আবর্তন বা বিচরণ করছে সে বিষয়টি সুস্পষ্টভাবেই বর্ণিত রয়েছে। অর্থাৎ দিবা-রাত্রির আবর্তন বা বিচরণের মাধ্যমে পৃথিবীর ঘূর্ণন বা পৃথিবীর আহ্নিক গতি বুঝানো হয়েছে। কেননা দিবা-রাত্রির আবর্তনের স্থল হচ্ছে পৃথিবী। যেমন এ প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছে-
الْـحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ وَجَعَلَ الظُّلُمَاتِ وَالنُّوْرَ ۖ
অর্থ : “সকল প্রশংসা সেই মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য যিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন এবং অন্ধকার ও আলোর উদ্ভব করেছেন।” (পবিত্র সূরা আন‘আম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১)
এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি আসমান ও যমীনের ব্যাপারে خَلَقَ ‘খালাকা’ শব্দ মুবারক ব্যবহার করেছেন এবং আলো ও অন্ধকারের ব্যাপারে جَعَلَ ‘যায়ালা’ শব্দ মুবারক ব্যবহার করেছেন।
অর্থাৎ এখানে অন্ধকার ও আলো অর্থাৎ রাত ও দিনকে উল্লেখ করে এদের প্রকাশ স্থল পৃথিবীকে বুঝানো হয়েছে। কেননা রাত ও দিন পৃথিবীতেই প্রকাশ পেয়ে থাকে। যদি পৃথিবী না থাকতো তবে দিবা-রাত্রি প্রকাশ পেত না, কোন রাত ও দিনের আবির্ভাব ঘটতো না।
এছাড়াও পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَالنَّهَارِ إِذَا جَلَّاهَا ﴿٣﴾ وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشَاهَا ﴿٤﴾
অর্থ : “কসম! দিনের যখন তা সূর্যকে প্রখরভাবে প্রকাশ করে। কসম! রাতের যখন তা সূর্যকে গভীরভাবে আচ্ছাদিত করে।” (পবিত্র সূরা শামস শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩-৪)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফদ্বয় উনাদের মধ্যে বর্ণিত جَلَّاهَا ও يَغْشَاهَا শব্দ মুবারকদ্বয় যথাক্রমে সূর্যকে প্রখরভাবে প্রকাশ করে ও সূর্যকে গভীরভাবে আচ্ছাদিত করে বুঝানো হয়েছে। পৃথিবী যদি ঘূর্নায়মান নাই হয়ে থাকে তাহলে দিন কিভাবে সূর্যকে প্রখরভাবে প্রকাশ করে আর রাত কিভাবে সূর্যকে গভীরভাবে আচ্ছাদিত করে।
আবার পবিত্র সূরা ফাত্বির শরীফ উনার ১৩ নং পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র সূরা লুক্বমান শরীফ উনার ২৯ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, দিবা-রাত্রির দৈর্ঘ্যরে হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে থাকে। সুতরাং এর দ্বারা বিভিন্ন ঋতু পরিবর্তনের সুস্পষ্ট প্রমাণ পরিলক্ষিত হয়। অর্থাৎ উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা পৃথিবীর বার্ষিক গতির বর্ণনাও প্রদান করা হয়েছে।
এ সম্পর্কে অন্যত্র ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
رَبُّ الْمَشْرِقَيْنِ وَرَبُّ الْمَغْرِبَيْنِ ﴿١٧﴾
অর্থ : “তিনি দুই উদয়াচল ও দুই অস্তাচলের মালিক।” (পবিত্র সূরা রহমান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৭)
এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত দুই উদয়াচল ও দুই অস্তাচল দ্বারা শীত ও গ্রীষ্ম ঋতুকে বুঝানো হয়েছে। কেননা পৃথিবী অবিরত নিজ অক্ষে ঘূর্ণনের পাশাপাশি সূর্যের চারদিকে পদক্ষিণের ফলে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অবস্থানের পরিবর্তন হয়। অর্থাৎ বছরে কেবল একটা সময়েই সূর্য একদম পূর্ব দিকে উঠে। অন্য সময় তা কিছুটা বাম দিকে নয়ত ডান দিকে থাকে। সর্ব বামের বিন্দু হল একটি চরম বিন্দু এবং সর্ব ডানের বিন্দু হল বিপরীত চরমবিন্দু। এর একটি হল উত্তর আয়তান্ত (summer
solstice) এবং অপরটি হল দক্ষিণ আয়তান্ত (winter
solstice)|
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি দুই উদয়াচল ও দুই অস্তাচল দ্বারা সূর্যের উদয় ও অস্তের ২টি চরম বিন্দুকে বুঝিয়েছেন, যা মূলত শীত ও গ্রীষ্ম ঋতুকে প্রতিনিধিত্ব করে থাকে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি শুধুমাত্র ২টি ঋতুর কথা বর্ণনা করেননি বরং বিভিন্ন স্থানের বিভিন্ন ঋতুর কথাও বর্ণনা করেছেন। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
فَلَا أُقْسِمُ بِرَبِّ الْمَشَارِقِ وَالْمَغَارِبِ إِنَّا لَقَادِرُونَ ﴿٤٠﴾
অর্থ : “আমি শপথ করছি উদয়াচল ও অস্তাচলসমূহের সম্মানিত রব তায়ালা উনার, নিশ্চয়ই আমি সক্ষম!” (পবিত্র সূরা মা‘আরিজ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪০)
অর্থাৎ বিভিন্ন ঋতুতে সূর্যের উদয়াচল ও অস্তাচলের অবস্থান পরিবর্তনের বিষয়টি এখানে বর্ণিত হয়েছে।
কেননা পৃথিবী নিজের অক্ষের উপর পশ্চিম থেকে পূর্ব বরাবর ঘূর্ণনের ফলে সকাল বেলা পূর্ব দিকে সূর্য উদিত হয়। কিন্তু এই ঘূর্ণন কেবল পশ্চিম থেকে পূর্বে নয় বিধায় সর্বদা সূর্য বিষুবরেখা বরাবর উদিত হয় না, বরং সূর্য বছরে কেবল মার্চ এবং সেপ্টেম্বরেই বিষুবরেখা বরাবর উদিত হয়। আর জুনে সূর্য কর্কটক্রান্তি বরাবর উদিত হয়, অতঃপর সূর্য মকরক্রান্তির দিকে ধাবিত হয়। ফলশ্রুতিতে বিষুবরেখা হয়ে ডিসেম্বরে মকরক্রান্তিতে পৌঁছে। অর্থাৎ বছরে জুন মাসে পূর্ব দিক হবে কর্কটক্রান্তি বরাবর, মার্চ এবং সেপ্টেম্বরে পূর্ব দিক হবে বিষুবরেখা বরাবর এবং ডিসেম্বরে পূর্ব দিক হবে মকরক্রান্তি বরাবর। অর্থাৎ দুই উদয়াচল ও মধ্যবর্তী বহু উদয়াচল বৈজ্ঞানিক নিদর্শন।
এছাড়াও তাদের আপত্তিকর বক্তব্যে প্রদত্ত আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে শুধুমাত্র সূর্য আর চাঁদ নিয়ম করে আবর্তনের কথা উল্লেখ করা হয়নি। পাশাপাশি রাত-দিনেরও আর্বতনের কথা উল্লেখ থাকায় উক্ত আয়াত শরীফ উনাদের দ্বারা প্রত্যেকের আবর্তনের কথা উল্লেখ রয়েছে। তাই আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে দ্বিবচন ব্যবহার করা হয়নি। যেহেতু দ্বিবচন ব্যবহৃত হয়নি, তাই উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা শুধুমাত্র সূর্য আর চাঁদ নিয়ম করে আবর্তন করে থাকে, পৃথিবী আবর্তন করে না বা পৃথিবী ঘূর্ণয়মান নয় - এই কথা কোনভাবেই প্রমাণ করা যায় না। বরং এর দ্বারা আপত্তি উত্থাপনকারীদের চরম-পরম অজ্ঞতা ও মূর্খতারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
আবার মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لَا الشَّمْسُ يَنبَغِـي لَـهَا اَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلَا اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ ۚ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُوْنَ
অর্থ : “সূর্যের পক্ষে সম্ভব নয় চাঁদের নাগাল পাওয়া, আর রাত্রির পক্ষে সম্ভব নয় দিবসকে অতিক্রম করা; আর প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করছে।” (পবিত্র সূরা ইয়াসিন শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪০)
মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন-
وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ۖ كُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ
অর্থ : “তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চাঁদ। সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে।” (পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)
উক্ত সূরা শরীফদ্বয় উনাদের মধ্যে ব্যবহৃত يَسْبَحُونَ ‘ইয়াসবাহুন’ শব্দ মুবারক এসেছে سَبَحَ ‘সাবাহা’ শব্দ থেকে। এ শব্দটি কোন মাটিতে চলা লোকের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হলে অর্থ হবে সে হাঁটছে অথবা দৌঁড়াচ্ছে। এ শব্দটি পানিতে থাকা কোন লোকের ক্ষেত্রে বলা হলে এর অর্থ এই না যে লোকটি ভাসছে, বরং বুঝতে হবে লোকটি সাঁতার কাটছে। এ শব্দটি কোন মহাজাগতিক বস্তুর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হলে এর অর্থ করতে হবে এটা নিজ অক্ষে ঘুরছে সাথে সাথে কোন কিছুকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে।
এছাড়াও পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আরো বিভিন্ন পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, পৃথিবী ঘূর্ণায়মান।
(১)
أَلَـمْ نَـجْعَلِ الْأَرْضَ كِفَاتًا ﴿٢٥﴾
এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত كِفَاتًا ‘কিফাতান’ শব্দ মুবারক দ্বারা পৃথিবীর গতি বুঝানো হয়েছে। এই كِفَاتًا শব্দ মুবারক যদি কোন পাখির জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে তাহলে এর অর্থ দাঁড়াবে “পাখির পালক সংকুচিত করে জোরে উড়া।” (লুগাতুল কুরআন)
যদি এ শব্দ মুবারক ঘোড়ার জন্য ব্যবহৃত হয় তাহলে হবে “ঘোড়াটি অনিয়ন্ত্রিভাবে দৌড়াচ্ছে” এবং অশ্বারোহী তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম নয়। (লুগাতুল কুরআন)
অতএব এ كِفَاتًا ‘কিফাতান’ শব্দ মুবারক পৃথিবীর জন্য ব্যবহৃত হলে এটি বুঝাবে দ্রুতগামী বস্তু যার গতি আরোহীদের অর্থাৎ পৃথিবীতে বসবাসকারী জীব দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়।
সুতরাং উক্ত আয়াত শরীফ উনার অর্থ হবে-
“আমি কি পৃথিবীকে সৃষ্টি করিনি প্রচ- বেগে ঘূর্ণায়মান বস্তুরূপে?” (পবিত্র সূরা মুরছালাত শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৫)
পৃথিবী যেহেতু প্রচ- বেগে ঘূর্ণায়মান তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
إِنَّ اللهَ يـُمْسِكُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ أَن تَزُولَا ۚ وَلَئِن زَالَتَا إِنْ اَمْسَكَهُمَا مِنْ اَحَدٍ مِّن بَعْدِهِ ۚ اِنَّهُ كَانَ حَلِيمًا غَفُوْرًا ﴿٤١﴾
অর্থ : “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি আসমান ও যমীনকে ধরে রেখেছেন, যাতে স্থানচ্যুত না হয়। যদি এগুলো স্থানচ্যুত হয়ে যায়, তবে তিনি ব্যতীত কে এগুলো ধরে রাখবে। তিনি সহনশীল ও ক্ষমাপরায়ণ।” (পবিত্র সূরা ফাত্বির শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪১)
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কুদরত মুবারক দ্বারা পৃথিবীকে ধরে রেখেছেন যাতে হেলে দুলে ও স্বস্থান থেকে বিচ্যুত হয়ে না যায়। যদি পৃথিবী ঘূর্ণায়মান না হয়ে থেমেই থাকতো তাহলে তা ধরা ও সংরক্ষণের প্রয়োজনই ছিল না। যেমন করে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কুদরত মুবারক দ্বারা আসমানকে ধরে রেখেছেন যাতে যমীনে পতিত না হয়। তেমনিভাবে, তিনি পৃথিবীকে উনার কুদরত মুবারক দ্বারা ধরে রেখেছেন যাতে হেলে দুলে না যায় এবং সূর্যের নিকটবর্তী না হয় অথবা সূর্য থেকে দূরে সরে না যায়। কারণ উভয়টিই মহাবিপদজনক।
(২)
وَالْأَرْضَ وَضَعَهَا لِلْأَنَامِ ﴿١٠﴾
এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত وَضَعَهَا ‘ওয়াদ্বা‘আহা’ শব্দ মুবারক দ্বারাও পৃথিবী ঘূর্ণনশীল বুঝানো হয়েছে। এই وَضَعَهَا ‘ওয়াদ্বা‘আহা’ শব্দ মুবারক যদি মানুষের সাথে ব্যবহৃত হয় তাহলে তার অর্থ হবে মানুষটি দৌঁড়াচ্ছে। যেমন- وَضَعَهَا رَّجُلٌ ‘ওয়াদ্বা‘আহার রজুল’ এর অর্থ হচ্ছে দৌঁড়ানো মানুষ।
এই وَضَعَهَا ‘ওয়াদ্বা‘আহা’ শব্দ মুবারক যদি উটের সাথে ব্যবহৃত হয় তাহলে তার অর্থ হবে উটটি দৌঁড়াচ্ছে। যেমন- وَضَعَهَا نَكَة ‘ওয়াদ্বা‘আতিন নাকাহ’ এর অর্থ হচ্ছে দৌঁড়ানো উট।
আর যদি وَضَعَهَا ‘ওয়াদ্বা‘আহা’ শব্দ মুবারক যদি পৃথিবীর সাথে ব্যবহৃত হয় তাহলে তার অর্থ হবে পৃথিবীটি ঘুরতেছে।
সুতরাং উক্ত আয়াত শরীফ উনার অর্থ হবে- “তিনি পৃথিবীকে ঘূর্ণনশীল করেছেন সৃষ্টজীবের জন্যে।” (পবিত্র সূরা আররহমান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০)
(৩)
الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ فِرَاشًا
এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত فِرَاشًا ‘ফিরাশান’ শব্দ মুবারক দ্বারাও পৃথিবী ঘূর্ণনশীল বুঝানো হয়েছে। এই فِرَاشًا ‘ফিরাশান’ বলতে উড়ন্ত কীটপতঙ্গকে বুঝায়। যেমন- মশা, মাছি ইত্যাদি।
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
يَوْمَ يَكُونُ النَّاسُ كَالْفَرَاشِ الْمَبْثُوثِ ﴿٤﴾
অর্থ : “যেদিন মানুষ হবে বিক্ষিপ্ত পতঙ্গ (فَرَاشِ)-এর ন্যায়।” (পবিত্র সূরা ক্বারিয়াহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪)
অর্থাৎ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ فِرَاشًا এই আয়াত শরীফ দ্বারা পৃথিবীকে উড়ন্ত কীটপতঙ্গ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে যা প্রমাণ করে যে, পৃথিবী গতিশীল।
অতএব উপরোক্ত আলোচনা হতে প্রতীয়মাণ হয় যে, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার বিভিন্ন আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে চাঁদ ও সূর্যের পাশাপাশি পৃথিবী ঘূর্ণনের বিষয়টিও সুস্পষ্ট করেই বর্ণনা করা হয়েছে।
এমনকি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ৬ষ্ঠ ইমাম হযরত ইমাম জাফর ছদিক্ব আলাইহিস সালাম (বিলাদত শরীফ : ৯৬ হিজরী ১৭ই রবীউল আউওয়াল শরীফ ইছনাইনিল আযীম; বিছাল শরীফ : ১৪৮ হিজরী ১৮ই রজবুল হারাম, ইছনাইনিল আযীম) তিনি মাত্র ১১ বছর বয়স মুবারকে সূর্য, চাঁদ এবং অন্যান্য গ্রহগুলো পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘূর্ণায়মানের অ্যারিস্টোটল এবং টলেমী কর্তৃৃক যে তত্ত্ব প্রচলিত ছিল তা ভুল/অমূলক বলে প্রতিপন্ন করেন। এছাড়াও তিনি ইরশাদ মুবারক করেন যে, পৃথিবী এর নিজ অক্ষের উপর ঘূর্ণায়মান।