আকাশ এবং পৃথিবী কিভাবে আসলো?- আলাদাভাবে নাকি একসাথে
নাস্তিকদের আপত্তি : আকাশ এবং পৃথিবী কিভাবে আসলো?- আলাদাভাবে (universe expanding) (Quran 21:30) নাকি একসাথে (universe contracting) (Quran 41:11)!
খণ্ডণ: আকাশ এবং যমীন আলাদাভাবে বা একসাথে আসার কিছুই নেই। বরং প্রথমাবস্থায় সমস্ত আসমান ও সকল যমীন ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। তারপর এর অভ্যন্তরে বাতাস প্রবেশ করিয়ে উভয়কে আলাদা করে দেয়া হয়েছে। যেহেতু প্রথমাবস্থায় সমস্ত আসমান সম্মিলিত অবস্থায় ছিল তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ ৩০ (Quran 21:30) উনার মধ্যে اَلسَّمَاوَاتِ ‘আসসামাওয়াত্’ বহুবচন শব্দ মুবারক ব্যবহার করেছেন আর যমীনের গঠন উপাদান একই বস্তু বিধায় اَلْاَرْضَ ‘আরদ্ব’ একবচন শব্দ মুবারক ব্যবহৃত হয়েছে। আর বাতাস সৃষ্টি করে আসমান এবং যমীনের অভ্যন্তরভাগ দিয়ে প্রবাহিত করিয়ে উভয়ের মধ্যে ব্যবধান তৈরির আগ পর্যন্ত পরস্পর একত্রিভূত ছিল বিধায় رَتْقًا ‘রতক্ব’ শব্দ মুবারক ব্যবহৃত হয়েছে, যার অর্থ বন্ধ করা, একত্রিভূত করা। আর فَتَقْنَا ‘ফাতক্বান’ অর্থ পৃথক করা। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
أَوَلَمْ يَرَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنَاهُمَا ۖ وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَاءِ كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّ ۖ أَفَلَا يُؤْمِنُونَ
অর্থ : “কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে, আসমানসমূহ ও যমীনের মুখ বন্ধ ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না?” (পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩০)
এ সম্পর্কে হযরত ইকরামা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত আতিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা বলেন-
ان السموات كانت رتقاً لا تـمطر والارض كانت رتقاً لا تنبت ففتق السماء بالـمطر والارض بالنبات
অর্থ : “প্রথমাবস্থায় আসমান মার্গ ছিলো অভেদ্য, তাই বৃষ্টিপাত হতো না। আর যমীনও ছিল অচ্ছেদ্য, তাই যমীনে জন্ম নিতো না কোন উদ্ভিদ। মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের এই অনমনীয় অবস্থা দূর করে দিলেন। ফলে শুরু হলো বৃষ্টিপাত। যমীনেও অঙ্কুরোদগম ঘটলো উদ্ভিদরাজির।” (তাফসীরে মাযহারী : পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ ৩০)
বাতাস প্রবাহের মাধ্যমে যখন আসমান ও যমীনকে পৃথক করে দেয়া হলো এমতাবস্থায় মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
ثُـمَّ اسْتَوٰى اِلٰى السَّمَاءِ وَهِيَ دُخَانٌ فَقَالَ لَـهَا وَلِلْاَرْضِ ائْتِيَا طَوْعًا اَوْ كَرْهًا قَالَتَا اَتَيْنَا طَائِعِيْنَ.
অর্থ : “অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন যা ছিল ধু¤্রকুঞ্জ, অতঃপর তিনি তাকে ও যমীনকে বললেন, তোমরা উভয়ে আসো ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বলল, আমরা স্বেচ্ছায় আসলাম।” (পবিত্র সূরা হা-মীম সাজদাহ্ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০-১১)
এখানে ثُـمَّ اسْتَوٰى ‘ছুম্মাস তাওয়া’ অর্থ অতঃপর মনোযোগ দিলেন, এই ثُـمَّ শব্দ মুবারক কালক্ষেপনের জন্য ব্যবহৃত হয়নি বরং এই শব্দ মুবারক দিয়ে আসমান ও যমীন- এই দুই সৃষ্টির মধ্যে পার্থক্য নির্ণীত হয়েছে।
আর হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, অত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত- لَـهَا وَلِلْاَرْضِ ائْتِيَا طَوْعًا اَوْ كَرْهًا ‘তোমরা উভয়ে আসো ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়’ দ্বারা মহান আল্লাহ পাক তিনি আসমান ও যমীন উভয়কে নির্দেশ মুবারক দিলেন, আমি আমার বান্দাদের জন্য যে সকল কল্যাণকর বস্তু তোমাদের মধ্যে সৃষ্টি করেছি, সেগুলো প্রকাশ করো। মহান আল্লাহ পাক তিনি তখন আসমানকে আদেশ মুবারক দিলেন, হে আসমান! তুমি প্রকাশ করো তোমার সূর্য, চাঁদ ও নক্ষত্রপুঞ্জকে। আর যমীনকে নির্দেশ মুবারক দিলেন, আর হে যমীন! তুমি তোমার সমুদ্রসমূহকে সলিলিত ও তরঙ্গময় করো এবং স্থলভাগকে করো বৃক্ষময়, পুষ্পময়, শস্যময় ও তৃণগুল্মবিশিষ্ট। (তাফসীরে মাযহারী : পবিত্র সূরা হা-মীম সাজদাহ্ শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ ১১)
সুতরাং উপরের আলোচনা হতে বুঝা গেল যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি প্রথমাবস্থায় সমস্ত আসমান ও সকল যমীনকে একত্রিভূত করে সৃষ্টি করেন। অতঃপর উভয়ের অভ্যন্তরভাগ দিয়ে বাতাস প্রবাহিত করিয়ে উভয়কে আলাদা করে দেন। বাতাস প্রবাহের ফলে তাদের অনমনীয় অবস্থা দূর হয়ে অভেদ্য আসমান হতে বৃষ্টিপাত হলো আর অচ্ছেদ্য যমীনে জন্ম নিলো উদ্ভিদ। আসমান ও যমীন- এই দুই সৃষ্টির মধ্যে যখন পার্থক্য নির্ণীত হয়ে গেল, এমতাবস্থায় মহান আল্লাহ পাক তিনি আসমান ও যমীন উভয়কে বান্দাদের জন্য সৃষ্টিকৃত সকল কল্যাণকর বস্তু প্রকাশ করতে নির্দেশ মুবারক দিলেন। ফলে আকাশে সূর্য, চাঁদ ও নক্ষত্রপুঞ্জ প্রকাশিত হলো আর যমীনে সমুদ্রসমূহ তরঙ্গময় ও স্থলভাগ বৃক্ষময় হয়ে উঠলো।
অর্থাৎ উভয় আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে কোন বৈপরীত্যই নেই বরং রয়েছে ধারাবাহিকতা। কিন্তু নাস্তিকরা বিদ্বেষের কারণে কিছুই বুঝতে পারে না।
0 Comments:
Post a Comment