নাস্তিকদের আপত্তি-আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন কোথা থেকে? - ধুলা থেকে, কাদা মাটি থেকে ,বীর্য থেকে,পানি থেকে,নাকি শূন্য থেকে?

আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন কোথা থেকে? - ধুলা থেকে, কাদা মাটি থেকে ,বীর্য থেকে,পানি থেকে,নাকি শূন্য থেকে?

নাস্তিকদের আপত্তি ১ : আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন কোথা থেকে? - ধুলা থেকে (Quran 3:59, 30:20, 35:11), কাদা মাটি থেকে (Quran 6:2, 15:26, 32:7, 55:14), বীর্য থেকে (Quran 16:4),  রক্তপিন্ড থেকে (Quran 96:2),  পানি থেকে (Quran 21:30, 25:54, 24:45নাকি শূন্য থেকে (Quran 19:67) !

নাস্তিকদের আপত্তি ২ : আল্লাহ মানুষকে তৈরি করেছেন কি ধরনের মাটি থেকে ?-পোড়া মাটি (Quran 15:26),  কাদা মাটি (Quran 38:71) নাকি ধুলো (Quran 3:59) থেকে?

খণ্ডণ: মহান আল্লাহ পাক তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন কোথা থেকে তা পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে সুস্পষ্টভাবেই বর্ণনা করেছেন। কিন্তু যালিম ও জাহিল কাট্টা নাস্তিকগুলো ইসলাম বিদ্বেষীতার কারণে মানব সৃষ্টির বিষয়টি সহ প্রত্যেকটি বিষয় নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে।

যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি মানব সৃষ্টি বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে ইরশাদ মুবারক করেন-

ذٰلِكَ عَالِـمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ الْعَزِيْزُ الرَّحِيْمُ ◌ الَّذِى اَحْسَنَ كُلَّ شَىْءٍ خَلَقَهٗ وَبَدَاَ خَلْقَ الْاِنْسَانِ مِن طِيْنٍ ◌ ثُـمَّ جَعَلَ نَسْلَهٗ مِن سُلَالَةٍ مِّن مَّاء مَّهِيْنٍ◌ 

অর্থ : “তিনিই দৃশ্য ও অদৃশ্যের জ্ঞানী, পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু যিনি উনার প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সুন্দর করেছেন এবং কাদামাটি থেকে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন। অতঃপর তিনি (মহান আল্লাহ পাক) মানব বংশধর সৃষ্টি করেন সম্মানিত পানির নির্যাস থেকে।” (পবিত্র সূরা সাজদা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬-৮)

সুতরাং পবিত্র আয়াত শরীফত্রয় হতে বুঝা যাচ্ছে যে, মানুষকে ধোকা দেয়ার জন্য আয়াত শরীফ উনার পূর্ণ অংশ উল্লেখ না করে প্রতারক সম্প্রদায় তাদের যুক্তি-তর্কের জন্য উপযোগী অংশটুকু তুলে ধরেছে। পবিত্র সূরা সাজদা শরীফ উনার শুধুমাত্র ৭ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উল্লেখ করে বুঝাতে চাচ্ছে মানুষ কাদা মাটির তৈরি হলে আবার অন্যান্য উপাদানগুলোর বর্ণনা আসলো কিভাবে? অথচ পবিত্র সূরা সাজদা শরীফ উনার পরবর্তী আয়াত শরীফ ৮ নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্ট করেই বর্ণনা করা হয়েছে যে, মানব বংশধরকে সম্মানিত পানির নির্যাস থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে।

তাদের প্রতারণাগুলোর আরো কয়েকটি ধরণ নিম্নে প্রদান করা হলো-

১) পবিত্র সূরা আছর শরীফ উনার শুধুমাত্র ২ নং পবিত্র আয়াত শরীফ-

اِنَّ الْاِنْسَانَ لَفِيْ خُسْرٍ

উল্লেখ করলে বিষয়টি এমন দাঁড়ায় যে- দুনিয়ার সমস্ত মানুষই ক্ষতির মধ্যে লিপ্ত রয়েছে, চাই সে ঈমানদার হোক আর বেঈমান হোক। অথচ পরবর্তী ৩ নং পবিত্র আয়াত শরীফ-

اِلَّا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِـحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْـحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ

স্পষ্ট করে দিচ্ছে কারা প্রকৃতপক্ষে ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। মূলত ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তারাই যারা ঈমান আনেনি, আমলে ছলেহ করেনি এবং পরস্পরকে হক্ব ও ছবরের তাকীদ করেনি।

২) অনুরূপভাবে পবিত্র সূরা নিসা শরীফ উনার ৪৩ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার প্রথমাংশ-

يَا اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَقْرَبُوْا الصَّلٰوةَ

উল্লেখ করলে অর্থ দাঁড়ায় - “হে মুমিনগণ! তোমরা নামাযের ধারে-কাছেও যেওনা”। নাঊযুবিল্লাহ! অথচ পরবর্তী আয়াতাংশ -

وَاَنْتُمْ سُكَارٰى حَتّٰى تَعْلَمُوْا مَا تَقُوْلُوْنَ

প্রথমাংশের সাথে মিলিত হলেই পূর্ণ অর্থ প্রদান করে। তখন পূর্ণ অর্থ দাঁড়ায়- “হে মুমিনগণ! তোমরা যখন নেশাগ্রস্ত থাক, তখন নামাযের ধারে-কাছেও যেওনা, যতক্ষণ না বুঝতে সক্ষম হও যা কিছু তোমরা বলছ।”

সুতরাং বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, পবিত্র সূরা সাজদা শরীফ উনার ৬-৮ নং পবিত্র আয়াত শরীফ (৩২:৬-৮) উনাদের দ্বারা স্পষ্ট করেই বর্ণনা করা হয়েছে যে, প্রথম মানব হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে কাদা মাটি থেকে সৃষ্টি করে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন। অতঃপর সম্মানিত পানির নির্যাস থেকে মানব বংশধরকে সৃষ্টি করেছেন।

আরবী ব্যাকরণ না জেনে শুধু অনুবাদ পড়ে বিতর্ক করার ফলেই এমন হচ্ছে। মূলত আরবী ব্যাকরণে জ্ঞান আছে এমন ব্যক্তি মাত্রেই জানা রয়েছে যে “মাতূফ” ও “মাতূফ আলাইহি” উভয়ই কখনো একই জাতের এবং একই সময়ে সংগঠিত হয়না। সুতরাং طِيْنٍ “ত্বীন” এবং مَاء مَّهِيْنٍ “মায়িম্মাহীন” দ্বারা সৃষ্টির বিষয়টি একই সময় সংগঠিত নয় এবং একই জাতের নয়। তাই হরফে আতফ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে মাটি ও সম্মানিত পানির দ্বারা সৃষ্টির ঘটনা একই সময়ে এবং একইভাবে বা পদ্ধতিতে সৃষ্টি নয়। অর্থাৎ মানুষ সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় প্রথম মানব হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সৃষ্টি পদ্ধতি এক ধরণের। আর মানব বংশধর সৃষ্টি পদ্ধতি অন্য ধরণের।

মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার কিছু পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন- “তোমরা ছলাত কায়িম করো এবং যাকাত আদায় করো।” এখানে তোমরা বলতে কি সবাই? অবশ্যই না। কারণ বিধর্মী, নাবালিগ, পাগল প্রমুখের উপর নামায ও যাকাত ফরয নয়, আবার গরীবের জন্য যাকাত ফরয নয়। অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্বোধন করেছেন সকলকে।

অনুরূপভাবে পবিত্র সূরা হজ্জ শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ ৫, পবিত্র সূরা ফাতির শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ ১১, পবিত্র সূরা মু’মিন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৭ ও পবিত্র সূরা ত্বহা শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৫ উনাদের মধ্যে বর্ণিত- “নিশ্চয়ই তোমাদের মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।”- এই তোমাদের শব্দের ক্ষেত্রেও এই ব্যাখ্যা প্রযোজ্য। অর্থাৎ হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।

পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টির উপাদান সম্পর্কে ৬টি শব্দ মুবারক ব্যবহার করেছেন।

১) تُرَابٍ মাটি,

২) طِيْنٍ কাদা মাটি,

৩) صَلْصَالٍ পোড়া মাটির মতো শুষ্ক ঠনঠনে মাটি,

৪) حَمَإٍ مَّسْنُونٍ কালো মাটি,

৫) طِينٍ لَّازِبٍ এঁটেল মাটি ও

৬) صَلْصَالٍ كَالْفَخَّارِ পোড়া মাটির মতো শুষ্ক ঠনঠনে মাটি।

শুধু মাটি বললেই তো হয়ে যেত, তাহলে ৬টি শব্দ মুবারক কেন ব্যবহার করা হলো। ৬টি শব্দ মুবারক ব্যবহার করার কারণ হলো- মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করতে পৃথিবীর যমীনের বিভিন্ন স্থানের মাটি ব্যবহার করেছেন।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـي مُوسَى الاَشْعَرِيِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ اللهَ تَعَالٰى خَلَقَ اٰدَمَ مِنْ قَبْضَةٍ قَبَضَهَا مِنْ جَمِيعِ الاَرْضِ فَجَاءَ بَنُو اٰدَمَ عَلَى قَدْرِ الاَرْضِ فَجَاءَ مِنْهُمُ الاَحْمَرُ وَالاَبْيَضُ وَالاَسْوَدُ وَبَيْنَ ذَلِكَ وَالسَّهْلُ وَالْـحَزْنُ وَالْخَبِيثُ وَالطَّيِّبُ

অর্থ : “হযরত আবূ মূসা আশ‘আরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করেন পৃথিবীর সর্বত্র হতে এক মুষ্টি মাটি দিয়ে। তাই আদম-সন্তানরা মাটির বৈশিষ্ট্য প্রাপ্ত হয়েছে। যেমন তাদের কেউ লাল, কেউ সাদা, কেউ কালো বর্ণের আবার কেউ বা এসবের মাঝামাঝি, কেউ বা নরম ও কোমল প্রকৃতির। আবার কেউ কঠোর প্রকৃতির, কেউ মন্দ স্বভাবের, আবার কেউ বা ভালো চরিত্রের।” (তিরমিযী শরীফ : কিতাবুত তাফসীর : সূরা বাক্বারা)

সুতরাং হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করতে মাটি নেয়া হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশ থেকে, এর কিছু অংশ ছিল পাহাড়ী মাটি, কিছু নেয়া হয়েছিল উপত্যকা থেকে, কিছু অংশ নেয়া হয়েছে উর্বর জমি থেকে আর কিছু নেয়া হয়েছে অনুর্বর শুষ্ক মাটি থেকে এবং এই সব একসাথে মিশানো হয়েছিল। আর এ কারণে হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার বংশধরগণ বিভিন্ন বর্ণের, ভিন্ন গুণাবলীর হয়ে থাকে। কিছু অংশ হলো ন্যায়পরায়ণ, কিছু মন্দ, কেউ বলিষ্ঠ, কেউ বা আবার দুর্বল। মহান আল্লাহ পাক তিনি এই মাটিকে বলেছেন, ধুলা, ময়লা, কাদা, ঠনঠনে শুষ্ক মাটি, কালো মসৃণ মাটি। এই মিশ্র মাটিতে পানি মিশানো হয়েছিল যা ছিল সকল জীবনের উৎস। আর এই কাদা মাটি কিছুদিন ফেলে রাখার পর তাতে আদ্রতার পরিমাণ কমে গিয়ে তা আঠাল, মসৃণ মাটিতে পরিণত হয় এবং এটি কালোবর্ণ ধারণ করে। আর এটি দিয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার জিসিম মুবারক তৈরি করেন। (..............)

সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টির উপাদান হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। আর পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের মাটি বিভিন্ন রংয়ের ও বিভিন্ন প্রকৃতির বিধায় মহান আল্লাহ পাক তিনি কখনো শুষ্ক ঠনঠনে মাটি, কখনো কাদা মাটি, কখনো কালো মাটি ইত্যাদি শব্দ উল্লেখ করেছেন। আবার এই মিশ্র মাটিতে পানি মিশানো হয়েছিল বলে মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন-

وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَاءِ كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّ ۖ

অর্থ : “আর আমি প্রাণবন্ত সবকিছু পানি থেকে সৃষ্টি করলাম।” (পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩০)

এছাড়াও মানব বংশধরকে পানি থেকে সৃষ্টি করার ব্যাপারে অন্যান্য পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের বর্ণিত রয়েছে-

هُوَ الَّذِي خَلَقَ مِنَ الْمَاء بَشَرًا فَجَعَلَهٗ نَسَبًا وَصِهْرًا وَكَانَ رَبُّكَ قَدِيرًا ◌

অর্থ : “তিনি পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন মানবকে অতঃপর তাকে রক্তগত, বংশ ও বৈবাহিক সম্পর্কশীল করেছেন। আপনার মহান রব তায়ালা তিনি সবকিছু করতে সক্ষম।” (পবিত্র সূরা ফুরক্বান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৪)

اَلَـمْ نَـخْلُقْكُّمْ مِّنْ مَّاءٍ مَّهِيْنٍ ◌ فَجَعَلْنَاهُ فِي قَرَارٍ مَّكِيْنٍ ◌

অর্থ : “আমি কি তোমাদেরকে সম্মানিত পানির নির্যাস হতে সৃষ্টি করিনি। অতঃপর আমি তা রেখেছি এক সংরক্ষিত আধারে।” (পবিত্র সূরা মুরসালাত শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২০-২১)

فَلْيَنْظُرِ الْاِنْسَانُ مِمَّ خُلِقَ ◌ خُلِقَ مِنْ مَّاءٍ دَافِقٍ ◌

অর্থ : “অতএব, মানুষের দেখা উচিত, সে কি বস্তু হতে সৃষ্টি হয়েছে। সে সৃষ্টি হয়েছে সবেগে নির্গত পানি থেকে।” (পবিত্র সূরা ত্বারিক্ব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫-৬)

সুতরাং পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে ব্যবহৃত مَاء ‘পানি’ শব্দ মুবারক মূলত نُطْفَةٍ ‘নুত্বফা’ বুঝানো হয়েছে, যা নর-নারী উভয় থেকেই নিঃসৃত হয়।

আর তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা নাহল শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন- 

خَلَقَ الْاِنسَانَ مِن نُّطْفَةٍ

অর্থ : “তিনি মানবকে নুত্বফা থেকে সৃষ্টি করেছেন।” (পবিত্র সূরা নাহল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪)

মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন-

وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ مِنْ سُلَالَةٍ مِنْ طِيْنٍ ◌ ثُـمَّ جَعَلْنَاهُ نُطْفَةً فِي قَرَارٍ مَكِيْنٍ ◌ ثُـمَّ خَلَقْنَا النُّطْفَةَ عَلَقَةً فَخَلَقْنَا الْعَلَقَةَ مُضْغَةً فَخَلَقْنَا الْمُضْغَةَ عِظَامًا فَكَسَوْنَا الْعِظَامَ لَـحْمًا ثُـمَّ اَنْشَأْنَاهُ خَلْقًا اٰخَرَ فَتَبَارَكَ اللهُ اَحْسَنُ الْـخَالِقِيْنَ ◌

অর্থ : “আর আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মাটির সারাংশ থেকে। অতঃপর আমি তাকে নুত্বফারূপে এক সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি। এরপর আমি নুত্বফাকে ‘আলাক্বা’ বা জমাট রক্তে পরিণত করেছি, অতঃপর ‘আলাক্বা’ বা জমাট রক্তকে গোশতপি-ে পরিণত করেছি, এরপর সেই গোশতপি- থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর অস্থিকে গোশত দ্বারা আবৃত করেছি। অবশেষে তাকে একটি নতুন রূপে দাঁড় করিয়েছি। নিপুণতম সৃষ্টিকর্তা কতই না কল্যাণময়।” (পবিত্র সূরা মু’মিনুন শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১২-১৪)

সুতরাং দেখা যাচ্ছে নুত্বফার পরবর্তী ধাপ হচ্ছে ‘আলাক্বা’। আর তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা আলাক্ব শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

خَلَقَ الْاِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍ

অর্থ : “মানবকে সৃষ্টি করা হয়েছে আলাক্ব থেকে।” (পবিত্র সূরা আলাক্ব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২)

যেহেতু মানব বংশধর সৃষ্টির বিভিন্ন ধাপ রয়েছে তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত ধাপের মধ্য থেকে কখনো নুত্বফা, কখনো আলাক্ব ইত্যাদি সম্বোধনে সম্বোধিত করেছেন।

উদাহরণস্বরূপ কেউ চা বানানোর উদ্দেশ্যে কোন একটি পাত্রে কিছু পানি নিলো। অতঃপর পানির পাত্রটি চুলাতে দিয়ে আগুনের সাহায্যে উক্ত পানি ফুটানো হলো। এরপর সে পানিতে কিছু চা পাতা দিয়ে আরো জ্বাল দেয়া হলো। একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে ফুটানোর পর পাত্রটি নামিয়ে ফেলা হলো। এবার চায়ের লিকার ছেঁকে কাপে নিয়ে তাতে পরিমাণ মতো দুধ ও চিনি মিশ্রিত করে পরিবেশন করা হলো।

এমতবস্থায় যদি বলা হয় যে, চা বানানো হয়েছে পানি দিয়ে। অন্যত্র বলা হলো চা বানানো হয়েছে গরম পানি দিয়ে। আবার বলা হলো চা বানানো হয়েছে লিকার দিয়ে। কিংবা বলা হলো চা বানানো হয়েছে দুধ দিয়ে। বা বলা হলো চা বানানো হয়েছে চিনি দিয়ে। এতে ভুল কোথায়?

সুতরাং মানব বংশধরকে নুত্বফা কিংবা আলাক্ব থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে বলার মধ্যে যেমন কোন ভুল নেই। ঠিক একইভাবে মানব সম্প্রদায়সহ সমস্ত জীবের এক সময় কোন অস্তিত্বই ছিলো না বিধায় মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اَوَلَا يَذْكُرُ الْاِنْسَانُ اَنَّا خَلَقْنَاهُ مِنْ قَبْلُ وَلَـمْ يَكُ شَيْئًا ◌

অর্থ : “মানুষ কি স্মরণ করে না যে, আমি তাকে ইতিপূর্বে সৃষ্টি করেছি এবং সে তখন কিছুই ছিল না।” (পবিত্র সূরা মরিয়ম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৭)

এছাড়াও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ خَضْرَتْ اَبِي هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَفِي حَدِيثِ ابْنِ حَاتِـمٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اِذَا قَاتَلَ اَحَدُكُمْ اَخَاهُ فَلْيَجْتَنِبِ الْوَجْهَ فَاِنَّ اللهَ خَلَقَ اٰدَمَ عَلَى صُوْرَتِه. 

অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, অন্য হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে হযরত হাতিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। উনারা বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা যদি তোমাদের কোন ভাইকে প্রহার করো, তাহলে তার মুখে আঘাত করো না। কেননা, মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে উনার নিজ পছন্দনীয় ছূরতে সৃষ্টি করেছেন।” (মুসলিম শরীফ : বাবুন নাহয়ি আন দ্বরবিল ওয়াযহি : হাদীছ শরীফ নং ২৬১২)

উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে উনার নিজ পছন্দনীয় ছূরতে সৃষ্টি করেছেন। এই কথাটার অর্থ কি? এর অর্থ হলো হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি আমাদের মত জীবনের বিভিন্ন ধাপ ও পর্যায়গুলো দিয়ে আসেননি। অর্থাৎ ভ্রƒণ থেকে শিশু, তারপর প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া ইত্যাদি এই ধাপগুলো হযরত হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার জন্য নেই। হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করা হয়েছে একরূপে। প্রথম দিন থেকেই উনাকে উনার ছূরত বা চেহারাতেই সৃষ্টি করা হয়েছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি এরপর হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার জিসিম মুবারক-এ রূহ ফু’কে দিলেন। যা আমাদেরকে জীবন দেয়, তারই নাম রূহ বা আত্মা। জীবন নামক রহস্যের মূল যা মহান আল্লাহ পাক তিনি গোপন রেখেছেন, তা তথাকথিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চরম শিখরে এসেও রহস্যই রয়ে গেছে।

উপরের পর্যালোচনা হতে সুস্পষ্ট হলো যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সহ উনার বংশধর সকলকেই অস্তিত্বহীন অবস্থা থেকে অস্তিত্ব দান করেছেন অর্থাৎ শূণ্য হতে সৃষ্টি করেছেন। আর হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে পৃথিবীর যমীনের বিভিন্ন স্থানের মাটির সাথে পানি মিশ্রিত করে সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনিই একমাত্র সরাসরি মাটি হতে সৃষ্টি হয়েছেন, আর উনার সৃষ্টি উপাদান মাটি ও পানি। পরবর্তীতে সকল মানব বংশধরকে কুদরতীভাবে মায়ের রেহেমে নুত্বফা নামক সম্মানিত স্বচ্ছ পানি হতে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আলাক্ব সহ বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করিয়ে মানবাকৃতিতে যমীনে পাঠিয়েছেন।

বস্তুত মহান আল্লাহ পাক তিনি মানব সৃষ্টির বিষয়সহ এমন অনেক বিষয় রয়েছে যা নাযিলের মাধ্যমে ঈমানদার উনাদের জন্য রোগের শিফা ও রহমত মুবারক হাছিলের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। অন্যপক্ষে এর মাধ্যম দিয়ে যালিমদের অন্তরের বক্রতাই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْاٰنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَرَحْـمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ ۙ وَلَا يَزِيْدُ الظَّالِمِيْنَ اِلَّا خَسَارًا ◌

 অর্থ : “আমি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মু’মিন উনাদের জন্য রহমত মুবারক। আর যালিমদের তো এতে শুধু ক্ষতিই বৃদ্ধি পায়।” (পবিত্র সূরা বনী ইসরাঈল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮২) 


0 Comments: