একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৪৮

 


ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছাহেবে কাশ্ফ ওয়া কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছূফীয়ে বাতিন, ছাহেবে  ইস্মে আযম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলার্দু রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম-উনার স্মরণে-

একজন কুতুবুজ্জামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান

 

লব্ধ মাকাম মুবারকে ইস্তিকামত-

 

তিনি পরিপূর্ণরূপে আল্লাহ্ পাক কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। এই নিয়ন্ত্রনের ব্যাখ্যায় কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

 

وما ينطق عن الهوى ان هو الا وحى يوحى.

অর্থঃ- তিনি মনগড়া কথা বলেন না। উনার মুখ নিঃসৃত বাণী ওহীর মাধ্যমে আসে।” (সূরা নজম/ ৩-৪)    দুর্বল ও অস্থিরচিত্ত মানুষ আল্লাহ্ পাক-উনার আদেশ পালনে হেরফের করবে এবং কথা ও কাজে অবিচল থাকবেনা, বিশেষতঃ ঈমান, আক্বীদা, আমল, অনুভব ও কোশেশে ইস্তিকামত না থাকায় উম্মতের বিনাশ সাধন সম্পর্কে তিনি শঙ্কিত হয়েছেন।

            ঈমান এনে মুমিনে কামিল হওয়া, বিশুদ্ধ আক্বীদায় অনাবিল কর্মনিযুক্তিতে (আমলে ছলেহ) ব্যাপৃত থাকা বান্দার মূল দায়িত্ব। একই সঙ্গে আল্লাহ্ পাক এবং উনার প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক নির্দেশিত সকল বিষয়ে দৃঢ়পদ থাকা অপরিহার্য। আল্লাহ্ পাক-উনার রহমত এবং শাফিউল উমাম, রহমতুল্লিল আলামীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার মুবারক মধ্যস্থতায় কোশেশকারী বান্দার কামিয়াবী হাছিল হয়ে থাকে।

            আরম্ভ সবাই করে, কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছে কেউ কেউ। এ গন্তব্যের পথিক সংখ্যা একান্তই নগণ্য। আয়াসসাধ্য আয়োজনে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে প্রতিকুল পথ পাড়ি দিয়ে যাঁরা মন্জিলে মাকছূদে উপনীত হন, তাঁরা আল্লাহ্ পাক-উনার মনোনীত বন্ধু। এমন দৃঢ়চিত্ত মাহবুব ওলীগণকে আল্লাহ্ পাক উনার মুহব্বত-মারিফাত ও নৈকট্যসুধায় পরিপুষ্ট করে জান্নাতুল ফিরদাউস এবং উনার দিদারের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান। উনাদের কোন পিছুটান থাকেনা। দুনিয়া ও গায়রুল্লাহ্-উনার প্রতি তাঁরা বিমুখ ও বেপরোয়া। আল্লাহ্ পাক-উনার নিগূঢ় নৈকট্যসুধায় আপ্লুত এমন একজন পরিপূর্ণ ও শীর্ষ সোপান অর্জনকারী কামিয়াব মাহবুব ওলী হলেন, আফজালুল ইবাদ, ছহবে কাশ্ফ ও কারামত, ফখরুল আওলিয়া, আওলার্দু রসূল, হযরতুল আল্লামা, শাহ্ ছূফী, সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি। লব্ধ মাকামে তিনি দৃঢ়চিত্ত, অটল ও অবিচল। ইস্তিকামতপূর্ণ আত্মনিবেদন, নিষ্ঠা ও নিমগ্নতায় আল্লাহ্ পাক-উনার অশেষ নৈকট্যসুধায় কামিয়াবীর অগ্রযাত্রায় এখন কেবলই উনার নিরন্তর উত্তরণ। মুরশিদ ক্বিবলার কর্মপরিধি ও ইন্তিকাল

            ওলী আল্লাহগণ উনাদের জীবন মুবারকের সামগ্রিক পরিসরে আভ্যন্তরীন ও বাহ্যিকভাবে পরিপূর্ণরূপে আল্লাহ্ পাক-উনার প্রতি সমর্পিত থাকেন। উনাদের জাহির, বাতিনের নূর ও অনুভব দ্বারা পরিচালিত হয়। বাহ্যিক আমল দেখে উনাদের কর্মপরিধির গভীরতা নিরূপণ করা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব হয়না। কারণ উনাদের প্রয়োজন, আয়োজন ও কর্মপ্রয়াস অনুক্ষণ আল্লাহ্ পাক এবং উনার প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে। উনাদের কথা, আচরণ, নিবেদন ও ইবাদত-বন্দেগীর অনাবিল একাগ্রতা দেখে শীর্ষ মাকামে কামিয়াবীর একটি প্রচ্ছন্ন ধারণা লাভ করা যায় মাত্র। সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতা, অনুভব ও অনুসন্ধানের তারতম্যের প্রেক্ষিতে সে আপেক্ষিক ধারণাও পৃথক হতে বাধ্য। উদ্দিষ্ট কাজ শেষে সকলকেই বিদায় নিতে হয়। ওলীআল্লাহগণও উনার ব্যতিক্রম নন। অবশ্য ইন্তিকালের পূর্বে ওলীআল্লাহ্গণকে বলতে শোনা যায়, “সব কাজই বাকী রয়ে গেল। কিছুই শেষ করা হলোনা।আল্লাহ্ পাক-উনার উদ্দিষ্ট ব্যবস্থায় আরোপিত দায়িত্বপালন সমাপ্ত না করে ইন্তিকালের প্রশ্নই উঠেনা। আল্লাহ্ পাক-উনার মাহবুব ওলীগণের এমন উচ্চারণ কেবলই উনাদের বিনয় প্রকাশ। অকাল মৃত্যুবলে কোন কথা নেই। বয়সের নির্ধারিত ধাপে উপনীত হয়েই সকলের ইন্তিকাল হয়। অনুপলব্ধির কারণে কম বয়সের ইন্তিকালকে মানুষ অকাল মৃত্যুনামে অভিহিত করে থাকে (নাউযুবিল্লাহ)! মানুষের ইহলৌকিক জীবন খুব সীমিত। নির্ধারিত সময় শেষে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় সকল মানুষকেই আখিরাতে পাড়ি জমাতে হয়।  (অসমাপ্ত)

আবা-১০৭

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৪৭

 

ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছহিবে কাশ্ফ ওয়া কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছুফীয়ে বাতিন, ছহিবে ইস্মে আযম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম-উনার স্মরণে- একজন কুতুবুয্ যামান-উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান-

লব্ধ মাকামে ইস্তিকামত

আল্লাহ্ পাক -উনার মুহব্বত ও মারিফাত লাভকারী আত্মনিষ্ঠ ওলীগণের লব্ধ মাকামে ইস্তিকামত (অবিচল) থাকা অপরিহার্যআত্মকেন্দ্রিকতা ও আত্মনিষ্ঠতা এক নয়আত্মকেন্দ্রিকতা একান্তই অন্তর্মূখী বিষয়সাধারণ ক্ষেত্রে ব্যষ্টি ও সমষ্টিতে উনার কোন প্রভাব পড়েনাআত্মজ্ঞ বান্দার নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সঙ্গে ইস্তিকামত যুক্ত না হলে শুধু প্রবল আত্মকেন্দ্রিক প্রয়াসে ক্রমবর্ধিষ্ণু অগ্রযাত্রার গতি ও প্রকৃতি শঙ্কামুক্ত থাকেনাওলীয়ে মাদারজাদ, লিসানুল হক, আওলার্দু রসূল, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার বর্তমান মাকামে পরিপূর্ণরূপে ইস্তিকামত রয়েছেনতা এমন যে, আল্লাহ্ পাক-উনার অপার অনুগ্রহে নৈকট্য প্রাপ্তির শীর্ষ সোপান থেকে উনার পিছুটানের আর কোন শঙ্কা নেই

            মানুষের বড় অসংগতি যে, জন্মগতভাবে সে দুর্বলস্বভাবগত দুর্বলতার গ্লানি তাকে আমৃত্যু বয়ে বেড়াতে হয়সাধ ও সাধ্যের বৈরী ব্যবধানের দুঃসহ নিপীড়নে মানুষের নশ্বর জীবন আবর্তিত হয়আল্লাহ্ পাক বলেন,

خلق الانسان ضعيفا.

অর্থঃ- মানুষকে দুর্বল করে সৃষ্টি করা হয়েছে” (সূরা নিসা/২৮) এ আয়াত শরীফে আল্লাহ্ পাক জানিয়েছেন যে, স্বভাবগতভাবে মানুষ খুব অসহায়তার অসহায়ত্বের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রবৃত্তিগত সত্বরতা, চঞ্চলতা ও অস্থিরতাচঞ্চল ও অস্তিরমতি সাধারণ মানুষ কোন কথা ও কাজেই ইস্তিকামত থাকতে পারেনাপ্রবৃত্তির তাড়নায় অতি দ্রুত তার কর্মনিযুক্তি, আত্মনিবেদন, প্রয়াস ও প্রচেষ্টার পরিবর্তন ঘটে যায়কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

خلق الانسان من عجل.

অর্থঃ- মানুষ সত্বরতা প্রিয় স্বভাবে সৃষ্ট হয়েছে” (সূরা আম্বিয়া/৩৭)    একান্তভাবে আল্লাহ্ পাক-উনার মেহেরবানী না পেলে জন্মগত দুর্বল ও অস্থির মানুষের দুর্ভোগ দূর হয়না এবং কাম্য পর্যায়ের আত্মবিশ্বাস ও আত্মনিবেদন অর্জিত হয়নাফলে, ইবাদত-বন্দেগীতে ষোল আনা দখল জমেনাআল্লাহ্ পাক এবং উনার প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার পরিপূর্ণ সন্তুষ্টি হাছিলের নির্ধারিত পথে ইস্তিকামত থাকা আদৌ সম্ভব হয়নামূলতঃ ইস্তিকামতের উপর সুদৃঢ় না থাকতে পারা মানুষের জন্মগত স্বভাব ও দূর্বলতার সঙ্গে সম্পৃক্ত সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, সুলতানুল নাছীর, সিরাজুম মুনীরা, দলীলে কাবায়ে মাকছূদ, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “সূরা হুদ আমাকে বৃদ্ধ করে ফেলেছেসূরা হুদ’-উনার যে আয়াত শরীফ সম্পর্কে তিনি একথা বলেছেন তাহলো,

فاستقم كما امرت

অর্থঃ- আপনি ইস্তিকামত অবলম্বন করুন, যেমন আপনি আদিষ্ট হয়েছেন” (সূরা হুদ/১১২) তা হলে কি তাফসীরে কালামে ইলাহী, ছহিবু জামিউল কালিম, ছহিবু লাওলাক, ছহিবুল আয়াত, মাশুকে মাওলা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ্ পাক-উনার নির্দেশিত পথে ইস্তিকামত থাকতে না পারার শস্কায় বৃদ্ধ হবার কথা বলেছেন? (নাউযুবিল্লাহ)আয়াত শরীফের মর্মবানীতে অস্থিরমতি উম্মতের স্বভাবগত দুর্বলতা এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে আদেশ পালনে প্রবৃত্তিগত অনীহার কথা ভেবে তিনি উদ্বিগ্ন হয়েছেনসমগ্র কুরআন পাক-উনার মধ্যে এ আয়াত শরীফে ইস্তিকামত থাকার আদেশকেই তিনি সবচেয়ে কঠিন বলে বিবেচনা করেছেনবুযূর্গানে দ্বীনের অন্যান্য কারামতের মধ্যে ইস্তিকামতের কারামত সবচেয়ে বড় কারামতকারণ, ইস্তিকামতের মর্যাদা অনেক ঊর্ধ্বেহযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছেন, “পূর্ণ কুরআন পাক-উনার মধ্যে এই আয়াত শরীফের চেয়ে কঠিন ও কষ্টকর কোন হুকুম নাযিল হয়নিআল্লাহ্ পাক-উনার এই কঠিন আদেশ উনার প্রিয়তম হাবীব, সাইয়্যিদুল খালায়িক্ব, ছহিবু মাক্বামি মাহমূদ, রিসালতে পানাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার ইস্তিকামতের সঙ্গে আদৌ সম্পৃক্ত নয়নুবুওওয়াত ও রিসালতের মহান দায়িত্ব পালনসহ সকল বিষয়ে অনুক্ষণ ইস্তিকামত (অটল) থাকার যোগ্যতা দানসহ আল্লাহ্ পাক তাঁকে সর্বাগ্রে সৃষ্টি করেছেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন  (অসমাপ্ত)

আবা-১০৬

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৪৬

 

ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছহিবে কাশফ্ ওয়া কারামত, ফখরুল আওলিয়া, ছূফীয়ে বাতনি, ছহিবে ইস্মে আযম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নওেয়াজ, আওলাদে রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্ববিলা আলাইহিস সালাম উনার স্মরণে

একজন কুতুবুয যামান উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান-

খিলাফত ও নিয়ামতলাভের পর নবতর উপলব্ধির জাগরণে আত্মনিমগ্নতা -

         বাইয়াত হবার তাৎপর্য এবং খিলাফতলাভ ও নিয়ামত প্রাপ্তির অভিজ্ঞতা নতুন নয়। উনার পূর্বেও দুজন মুর্শিদ ক্বিবলার মুবারক সান্নিধ্যে হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম-উনার নিয়ামতের পরিবৃদ্ধি ঘটেছে। কিন্তু আজকের পাওয়ার প্রকৃতি ও পরিধি ভিন্ন। পূর্বের প্রাপ্তি ও অভিজ্ঞতা এবং বর্তমানের কামিয়াবী ও লব্ধ নিয়ামতের নিয়ামক নির্যাসে পরিপূর্ণরূপে জানা গেল যে, আল্লাহ্ পাক-উনার সঙ্গে একজন ওলীর নৈকট্য স্থাপনের মাত্রা ও ব্যাপ্তি সীমাহীন। নিয়ামতের বিচিত্র ক্রমধারা এবং কামিয়াবীর আপেক্ষিক পূর্ণতায় আল্লাহ্ পাককে আরো নিগূঢ়ভাবে পাবার আশা ও প্রয়োজন কখনো ফুরায়না। আল্লাহ্ পাক এক। কিন্তু উনার নৈকট্য হাছিলের আয়োজন, আকুতি ও প্রকৃতি বহুধা বিভক্ত। সবার পথ ও প্রয়াস এক নয়, যদিও ওলীগণের মহিমাময় কামালত পূর্ণতা ও পরিপুষ্টিলাভ করে মহামিলনের অভিন্ন মোহনায়। প্রত্যাশা কখনো প্রাপ্তির সমান্তরাল হয়ে উঠেনা। তাই আল্লাহ্ প্রেমে মশগুল সকল ওলীগণই বিচ্ছেদ যাতনায় কাতর। যাঁর নৈকট্য যতো বেশী, উনার দুঃখবোধ ততো গভীর। নিয়ামত পরিবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ্ পাক-উনার মাহবুব ওলীগণের অন্তর মুবারকে ক্রমান্বয়ে বেড়ে উঠা অচেনা যন্ত্রনা অনুক্ষণ উনাদেরকে দগ্ধ করে। ইন্তিকালের পর জান্নাতে আল্লাহ্ পাক-উনার দিদারলাভ না হওয়া পর্যন্ত এ যন্ত্রনার আর অবসান হয়না। তাঁদের স্বভাব সঞ্জাত অপরিমেয় দুঃখবোধের অপর নাম পরিপূর্ণ কামালত।কারণ, কামিয়াবী লাভে অন্তরের দুঃখবোধ নিয়ামক নিয়ামত হিসাবে ধার্য হয়। 

          আল্লাহ্ পাক-উনার জাতছিফাতউপলব্ধির সর্বোচ্চ ও সর্বোত্তম মাকামে অধিষ্ঠিত থেকেও অন্তর মুবারকের সহজাত উদ্বেলতা, চিন্তাযুক্ত অপার অন্বেষা, মোরাকাবার অনুপম তন্ময়তা এবং স্বতঃপ্রবৃত্ত মধুর যন্ত্রনাকাতরতায় অনুক্ষণ নিবিষ্ট সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, সাইয়্যিদুল কাওনাইন, ফখ্রে দুআলম, মাশুকে মাওলা, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবে প্রাণের আকুতি জানিয়েছেন- হে  পরওয়ারদিগার আল্লাহ্ পাক! আপনার সম্পর্কে আমার বিস্ময়কে আরো বৃদ্ধি করে দিন।আল্লাহ্ পাক-উনার মাহবুব ওলীগণ আল্লাহ্ পাক-উনারই উদ্দিষ্ট ব্যবস্থায় উনার প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার মুবারক স্বভাব-সম্পৃক্ত দুঃখবোধ ও যন্ত্রনাকাতরতার অনিবার্য ওয়ারিশ হয়ে থাকেন। এমন মধুর যন্ত্রনায় আক্রান্ত না হলে ওলীআল্লাহ্ অভিধায় বিবেচিত হবার আশা কেবল দূরাশাই থেকে যায়।  

খিলাফত ও নিয়ামতের নির্যাস দানের মাধ্যমে ওলীয়ে মাদারজাদ, আওলাদে রসূল, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালামকে আল্লাহ্ পাক নিগূঢ় নৈকট্যে তাঁকে কামিয়াবীর শীর্ষ সোপানে অধিষ্ঠিত করেছেন। কামিয়াবীর একান্ত অনুষঙ্গ হিসাবে আপন হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সুন্নত মুতাবিক আল্লাহ্ পাক উনার মনোবেদনা পূর্বের তুলনায় আরো তীব্র করে তুলেছেন। এই মধুর বেদনা, দুঃখবোধ ও যন্ত্রনাকাতরতা শিশু-কৈশোরকাল থেকেই উনার মুবারক জীবনের সঙ্গী। কিন্তু বর্তমানের আনন্দ, বেদনা, আগ্রহ, আকুতি, বিনয়, বিস্ময় ও দুঃখের প্রকৃতি ও পরিধি পূর্বের অভিজ্ঞতার তুলনায় ভিন্নতর। বোঝা যাচ্ছে যে, নৈকট্যের দ্বার যতো অবারিত হয়, ততোই মানসিক গোপন নিপীড়নের পরিবৃদ্ধি ঘটে। প্রাণের আঁকা মুর্শিদ ক্বিবলার মুবারক সান্নিধ্যে জাহিরী হাজিরা এবং অবিরাম বাতিনী মুয়ামিলা অব্যাহত রয়েছে। আল্লাহ্ পাক-উনার নৈকট্যসুধার নবতর মাত্রাযোগ এবং বেদনা-বিমুগ্ধ মননে যে উপলব্ধি ও জীবনবোধ নির্মিত হয়েছে, তাতে একমাত্র আল্লাহ্ পাক এবং উনার প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাড়া জীবন, জগৎ, ইহকাল ও পরকালের সব কিছুই এখন মূল্যহীন হয়ে পড়েছে। কামিয়াবীর এমন শীর্ষ সোপানে উপনীত হয়ে তিনি এখন আল্লাহ্ পাক-উনার মুহব্বত ও মারিফাতের নিবিড় সংযোগসাধনে আত্মনিমগ্নতায় বিভোর। (অসমাপ্ত)

আবা-১০৫

 

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৪৫

 


ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছহিবে কাশ্ফ ওয়া কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছুফীয়ে বাতিন, ছহিবে ইস্মে আযম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম-উনার স্মরণে- একজন কুতুবুয্ যামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

 আনুষ্ঠানিক খিলাফত মুবারক লাভ -

 ভিন্নতর অবস্থার কারণে ওলী আল্লাহ্গণেরও আকাঙ্খা-আকুতি এবং চাওয়া-পাওয়ার তারতম্য ঘটা বিচিত্র নয়। যেমন, আল্লাহ্ পাক কোন বিশেষ মুহূর্তে সুলতানুল আরিফীন হযরত বায়েযীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে ইলহাম করলেনঃ আমার তরফ থেকে আজ আপনাকে বখশিশ্ করার সময়। আপনি দরখাস্ত করুন। যা চাইবেন তাই দেয়া হবে।

          তিনি মস্তক সিজদায় অবনত করে নিবেদন জানালেনঃ গোলামের দরখাস্তের কী প্রয়োজন আল্লাহ্ পাক! আপনি যা দান করবেন, তাতেই আমি সন্তুষ্ট। 

          আল্লাহ্ পাক বললেনঃ আমি আপনাকে আখিরাত দান করলাম। তিনি সবিনয়ে জবাব দিলেনঃ আল্লাহ্ পাক! আখিরাততো আপনার আশিকদের জন্য কয়েদখানা। অতঃপর আল্লাহ্ পাক বললেনঃ হে আমার আশিক বায়েযীদ! বেহেশত-দোযখ, আরশ-কুরসী, অর্থাৎ আমার অধিকারের সব কিছুই আজ আপনাকে দান করে দিলাম।    সুলতানুল আরিফীন হযরত বায়েযীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি পুনরায় নিবেদন করলেনঃ আয় পরওয়ারদিগার! আমি যা চাই, তা আপনি অবহিত আছেন। আল্লাহ্ পাক-এর তরফ থেকে আবার আওয়াজ এলোঃ হে বায়েযীদ! আপনি কী আমাকেই চান? আমি যদি আপনাকে চাই, তাহলে আপনি কী করবেন? এতে সুলতানুল আরিফীন হযরত বায়েযীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি বিনীত আরয করলেনঃ আয় আল্লাহ্ পাক! আপনি যদি আমাকে চান, তবে হাশরের দিন জাহান্নামের নিকট দাঁড়িয়ে আমি এমন এক দীর্ঘশ্বাস ফেলব যে, জাহান্নামের আগুন নিভে যাবে। কারণ, মুহব্বতের মুকাবিলায় জাহান্নামের আগুন অস্তিত্বহীন। আল্লাহ্ পাক জানালেনঃ হে বায়েযীদ! আপনি যা চাইছেন, তা পেয়েই গেছেন। অর্থাৎ আমি আপনার হয়ে গেছি। (সুবহানাল্লাহ্)    আমাদের আলোচ্য ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, আফজালুল ইবাদ, ছহেবে কাশ্ফ ও কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছূফীয়ে বাতিন, ছহেবে ইস্মে আযম, লিসানুল হক্ব, কুতুবুজ্জামান, আওলার্দু রসূল, আলহাজ্ব, শাহ্ ছূফী, হযরতুল আল্লামা, শায়খ, সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান, আল হাসানী ওয়াল হুসাইনী ওয়াল কুরাঈশী রহমতুল্লাহি আলাইহিও জীবনভর কেবল আল্লাহ্ পাককেই চেয়েছেন।

          আল্লাহ্ পাককে তিনি পেয়েওছেন। আজ সেই পরম চাওয়া-পাওয়ার পূর্ণতাদান করলেন তাঁর প্রাণের আঁকা মুর্শিদ ক্বিবলা, আমীরে শরীয়ত, মাহতাবে তরীক্বত, হাজীউল হারামাইন, হাদিউস্ সাক্বালাইন, মাহিউল বিদ্য়াত, মুহইস্ সুন্নাতিন্ নুবুবিয়া, নাশিরুল মিল্লাতিল মুস্তাফিয়া, ছদরে জমিয়তে উলামায়ে হানাফিয়া, শায়খুল ইসলাম, ইমামুল হুদা, কাইউমুয্ যামান, কুতুবুল আলম, খলিফাতুল্লাহ, ছাজ্জাদানশীন পীর, পীরে দস্তগীর, পীরে কামিল, আলহাজ্ব, হযরত মাওলানা আবূ নছর মুহম্মদ আবদুল হাই ছিদ্দীকী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

          খানকা শরীফে উপস্থিত সবার অলক্ষ্যে খাছ কামরার একান্ত নিরিবিলিতে প্রাণের আঁকা মুর্শিদ ক্বিবলা মুবারক জীবনের সঞ্চিত নিয়ামতের নির্যাস উনারমাহবুব হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহিকে দান করে সমৃদ্ধ করলেন এবং নিজে নির্ভার হয়ে উনাকে বিশিষ্ট খলিফা অভিধায় অভিষিক্ত করে আল্লাহ্ পাক-এর কাছে সোপর্দ করে দিলেন।  (অসমাপ্ত)

আবা-১০৪

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৪৪

 

ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছহিবে কাশ্ফ ওয়া কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছুফীয়ে বাতিন, ছহিবে ইস্মে আযম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম-উনার স্মরণে-

একজন কুতুবুয্ যামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

আনুষ্ঠানিক খিলাফত মুবারক লাভ-

          আজ মুর্শিদ ক্বিবলার অনুপম দানে আল্লাহ্ পাক-উনার সঙ্গে নিগূঢ় নৈকট্য হাছিলে হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম-উনার প্রত্যাশিত কামিয়াবী পরিপূর্ণতা লাভ করবে। এটি এক পরম অর্জন। প্রত্যাশা পূরণের সহায়ক যে কোন অর্জনই মনকে আনন্দিত করে। যা চাওয়া, তাপাওয়া হলে অন্তরের প্রশান্তি ঘটে। আকাঙ্খার পূর্ণতায় জীবন অর্থবহ হয়। নিত্যদিন বিরূপ পরিবেশ-প্রতিবেশ মুকাবিলা করেও দুনিয়ার নশ্বর পরিধিতে বেঁচে থাকা প্রেরণাদায়ক ও আশাব্যঞ্জক হয়। সাধারণ বিবেচনায় মানুষ দুদলে বিভক্ত। একদল জান্নাতী, অন্যদল জাহান্নামী। উভয় দলই অবিরাম গতিতে আপন গন্তব্যে এগিয়ে চলছে। সমঝদার অথবা মুর্খ (এখানে মূর্খ অর্থ দুনিয়ার প্রতি আসক্ত) সকলেই তাদের অবস্থাভেদে অন্তরে ঐশ্বর্যের (নিয়ামত) অধিকারী অথবা ব্যাধিগ্রস্থ হয়। মানসিক অবস্থার ভিত্তিতেই প্রত্যেকের পৃথক অভিপ্রায়, জীবনবোধ এবং দুনিয়া ও আখিরাত সম্পর্কিত প্রজ্ঞা জন্মলাভ করে। দুর্নিবার মানসিক ঝোঁক, অর্থাৎ অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্যই সব সময় প্রাধান্যে থেকে মানুষের জীবনবোধ গঠন করে। প্রত্যেকেই অবধারিতভাবে তার আত্ম-অনুভূতির ধারক ও বাহক। এই অকাট্য বোধ-বিবেচনায় মানুষ আমরণ আবর্তিত হয় এবং আপন কর্ম প্রবাহে (আমলে) নিয়োজিত হয়। এমন ঈমান, আক্বীদা ও আমলে সে অনবরত নির্ধারিত গন্তব্য পানে অগ্রসর হতে থাকে। নেক মানুষের মন ঐশ্বর্য মন্ডিত এবং মন্দ মানুষের মন দূষিত। সাধারণতঃ ভালো সব সময়ই ভালো এবং মন্দ সব সময় মন্দই থেকে যায়। মন্দ মানুষের বিপর্যয় ও দূরবস্থা সহজে নিরাময়যোগ্য হতে দেখা যায়না। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ অন্তরের ঐশ্বর্যই প্রকৃত ঐশ্বর্য।মনের এই ঐশ্বর্যই মানুষকে আল্লাহ্ পাক-উনার দিকে ধাবিত করে।

          ভালো ও মন্দ উভয়ের চাওয়া তাদের অন্তর থেকেই উৎসারিত হয়। অজ্ঞ ও গাফিল মানুষের চাওয়া-পাওয়ার সবটুকুই দুনিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত। সমঝদার মানুষের প্রত্যাশা ও কর্মনিযুক্তি কেবলই আখিরাত ভিত্তিক। নফ্সের পায়রবী করে কেউ দুনিয়া পেলে খুশী। কেউ আখিরাতের প্রতি মনোযোগী থেকে এতমিনান (প্রশান্ত)দুনিয়ার বাসিন্দা হিসেবে পরিচিত-অপরিচিত মানুষ ও আপনজন পরিবেষ্টিত থেকে এবং নিত্য প্রয়োজনে ভাব ও বিষয়ের লেনদেন করেও নেককার মানুষ নিজ আবাসে পরবাসী এবং দুনিয়ার সবকিছুর প্রতি নির্লিপ্ত, উদাসীন। কারণ, এটি উনার মানসিক অবস্থা এবং আপন গন্তব্যে পৌঁছার ক্ষেত্রে এটি উনার জীবন যাপনের নির্ঝঞ্ঝাট পদ্ধতি। অন্তরে লুকানো অবস্থার কারণেই একজন মানুষ গায়রুল্লাহ্ পন্থী হয় এবং ভিন্নতর মন ও মননের কারণেই অপরজন ক্রমান্বয়ে পরিপূর্ণ আল্লাহ্ওয়ালা হয়ে উঠে।

          পরিপূর্ণ গাফিল মানুষ ইবলিসের শিকার হয়ে গায়রুল্লাহ পন্থী হতে বাধ্য হয়। এমন গুরুতর ব্যাধিগ্রস্থ মানুষের সুস্থতা লাভের আর অবকাশ থাকেনা। ইবলিসের ধোঁকায় অনেক সময় মনে করে, সে নেক কাজেই মশগুল আছে। সে কী চায়, কোন কাজে আগ্রহী, কোন আমলে নিয়োজিত এবং কী তার পরিণতি, তাসে নিজেই জানেনা। কারণ, অজ্ঞতার আবরণে সে আল্লাহ্ পাক থেকে বিমূখ। অনেকে ইবাদত-বন্দেগী করে, এমনকি অতিরিক্ত কিছু যিকির-ফিকিরে অভ্যস্ত হয়ে আত্মতৃপ্ত। আবার অনেকে আয়াসসাধ্য কোশেশে রত থেকে আনন্দিত। কিন্তু আভ্যন্তরীন ইসলাহ্ ছাড়া যে বান্দার কোন কোশেশই আল্লাহ্ পাক কবুল করেননা, সে সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষ বেখবর। ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ দুনিয়ায় থেকেই জান্নাতের চিরস্থায়ী বাসিন্দা হবার সুসংবাদ পেয়েও পূর্বের তুলনায় বেমেছাল কোশেশে নিয়োজিত ছিলেন। একজন মানুষের কথা, আমল, আচরণ, প্রয়াস ও প্রার্থনা তার মাকামের (উপলব্ধি ও মনের অবস্থা) অনুরূপ হতে বাধ্য। (অসমাপ্ত)

আবা-১০৩

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৪৩

 

ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছহিবে কাশ্ফ ওয়া কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছুফীয়ে বাতিন, ছহিবে ইস্মে আযম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম-উনার স্মরণে- একজন কুতুবুয্ যামান-উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান-

 আনুষ্ঠানিক খিলাফত মুবারক লাভ-

হযরত খাজা উসমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার মতো আখিরাতে চূড়ান্ত পরীক্ষার মুখোমুখী অবস্থানে আল্লাহ্ পাককে খুশী ও রাজী করার ক্ষেত্রে অনেক আল্লাহ্ প্রেমিকেরই প্রত্যাশা ও প্রত্যয়, মানসিক স্বস্তি, স্থিতি, দৃঢ়তা ও বলিষ্ঠতা উনাদের এমন যোগ্যতম মুরীদ তথা খলীফাকে কেন্দ্র করেও পল্লবিত ও প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। এখানে বুঝতে হবে যে, আল্লাহ্ পাক-উনার সঙ্গে প্রশ্নোত্তরে কোন কোন সময় যোগ্য মুরীদের প্রসঙ্গ গুরুত্ববহ হলেও মুর্শিদ ক্বিবলাই সব সময় প্রাধান্যে থাকেন। কারণ, মুরীদের  কামিয়াবী মুর্শিদ ক্বিবলার মুবারক মাধ্যমেই অর্জিত হয়। আজ সেই নিয়ামত আদান-প্রদান, গোপন আলাপন ও অব্যক্ত ভাব বিনিময়ে অথৈ প্রেম দরিয়ায় অবগাহনের জন্যে আল্লাহ্ পাক-উনার পূর্ব নির্ধারিত সময় উপস্থিত। প্রাণের আঁকা মুর্শিদ ক্বিবলা হযরত মাওলানা আবু নছর মুহম্মদ আব্দুল হাই ছিদ্দীকী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং উনার অন্তরঙ্গ খলীফা হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার পারস্পরিক জানাজানির গভীরতা পরিবৃদ্ধি এবং উভয়ের অন্তর্লীন হবার দুর্লভ মুহূর্ত উপস্থিত।      মাদারজাদ ওলী, আওলাদে রসূল, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি যে পরম নিয়ামতের জন্য অধীর অপেক্ষায় থেকেছেন এবং যে কামিয়াবী প্রত্যাশায় সুন্নত অনুসরণে নিজেকে সযত্নে গুছিয়ে তুলেছেন, প্রাণের আকাঁ মুর্শিদ ক্বিবলা আজ উনাকে তা-ই দান করবেন। অতি শৈশব থেকেই স্বতঃপ্রবৃত্ত স্বভাব, মনোগত আগ্রহ ও বেদনা-বিমুগ্ধ অনুভূতিতে তিনি মুবারক জীবনব্যাপী আন্দোলিত হয়েছেন। আল্লাহ্ পাক এবং উনার প্রিয়তম হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার পরিপূর্ণ সন্তুষ্টি হাছিলের লক্ষ্যে তিনি অনুক্ষণ মধুর বেদনায় আক্রান্ত থেকেছেন। এই অন্তর্দহন ও দুঃখবোধ  এবং আনন্দ ও আকুতি  জন্মসূত্রেই আল্লাহ্ পাক উনার অতল গভীর অন্তর মুবারকে ঠাঁই করে দিয়েছেন। অন্তরে স্থাপিত নৈকট্য হাছিলের মূল সূত্রগুলো উনার জীবনের বিভিন্ন সোপানে, আয়াসসাধ্য কোশেশের অসংখ্য মাকামে এবং মুর্শিদ ক্বিবলাগণের মুবারক সান্নিধ্যের প্রিয় মুহূর্তগুলোয় বিকশিত ও বাস্তবায়িত হয়েছে। কামিয়াবীর নির্ধারিত পথে চূড়ান্ত গন্তব্যে উপনীত হবার ক্ষেত্রে প্রত্যেক ওলীর জন্য একই নিয়ম প্রযোজ্য। মুকাম্মিল মুর্শিদের মুবারক ছোহ্বতে ছালিকের সুপ্ত মেধা, মনন, আগ্রহ ও আকুতির জাগরণ ঘটে এবং তার কামিয়াবীর দরজা অবারিত হয়। আল্লাহ্ পাক-উনার নির্ধারিত ব্যবস্থায় সহজ অথবা ভিন্ন প্রক্রিয়ায় জীবনের স্তরে স্তরে সাজানো অনেক সোপান অতিক্রমণে ছালিকের অবিরাম অগ্রযাত্রা ও পূর্ণতাপ্রাপ্তি নিশ্চিত হয়।    ছালিক তার পাওয়া না পাওয়ার হিসাব মিলাতে পারেনা। প্রকৃত ছালিকের তা কাজও নয়। সে শুধু জানে এবং সর্বক্ষণ মনে রাখে, তার পাবার আরো অনেক বাকি আছে। অতৃপ্তিবোধের এই দুঃসহ যাতনা তাকে আরো বেশী করে অনাবিল আনুগত্যে অভ্যস্ত করে তোলে। কামিয়াবীর পরিণত ধাপে উপনীত হয়ে হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহিও এখন আর পাওয়া না পাওয়ার হিসাব মিলাতে চাননা। শুধু চান, উত্তরণের অবারিত পথে নৈকট্যের অবিরাম পরিবৃদ্ধি ঘটতে থাকুক। মুর্শিদ ক্বিবলা সন্নিধানে প্রত্যাশা পূরণের ক্রমধারা অব্যাহত থাকুক। নৈকট্যসুধার মধুর প্রাপ্তিযোগ নিঃশেষ না হোক। উনাকে দিতে মুর্শিদ ক্বিবলা কিছু বাকি রাখেননি। যা বাকি আছে, তা কেবল নিয়ামতের নির্যাস সোপর্দ করণের আনুষ্ঠানিকতা। আজ সেই প্রতীক্ষিত আনুষ্ঠানিকতা পালনের মুবারক মুহূর্ত সমাগত।         খানকা শরীফে আজ অনেকের ভিড়। প্রবীণ ও নবীন অনেক মুরীদ উপস্থিত। অন্তরঙ্গ মুরীদ হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি আজকের বরকতময় মাহ্ফিলের বিশেষ অতিথি। প্রাণের আঁকা মুর্শিদ ক্বিবলা উনাকে একান্ত কাছে ডেকে নিলেন। মুর্শিদ ক্বিবলার কদম মুবারকে তিনি নিজেকে সোপর্দ করলেন। নিবেদনের এই পরম মুহূর্তে বাধা-বিপত্তির আর কোন পর্দা অবশিষ্ট নেই। (অসমাপ্ত)

আবা-১০২

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৪২

আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার স্মরণে একজন কুতুবুজ্জামান উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

আনুষ্ঠানিক খিলাফত মুবারক লাভ-

নিয়ামত হাছিলের ক্ষেত্রে ছালিকের জন্যও একই নিয়ম প্রযোজ্য। মুর্শিদ ক্বিবলা উনার (মহান আল্লাহ্ পাক উনার মাহবুব ওলী) মুবারক সম্পৃক্ততা ব্যতীত মুরীদের কোন নিয়ামতই অর্জিত হয়না। মহান আল্লাহ্ পাক উনার তরফ থেকে মাহবুবিয়াত হাছিলের জন্য আপন মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নেক দৃষ্টি অত্যাবশ্যক।

 মহান আল্লাহ্ পাক তিনি এমন অপরিমেয় নিয়ামতের সমাবেশ ঘটিয়েছেন উনার মনোনীত বন্ধু ওলীয়ে মাদারজাদ, ছহিবে কাশ্ফ ওয়া কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছূফীয়ে বাতিন, ছহিবে ইস্মে আযম, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, আফজালুল ইবাদ, কুতুবুজ্জামান, আওলাদুর রসূল, আলহাজ্ব, শাহ্ ছূফী, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলিছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার অন্তর মুবারকে। মহান আল্লাহ্ পাক উনার নিগূঢ় নৈকট্য হাছিলে অবিরাম উত্তরণের এমন পর্যায়ে দুনিয়া বা অন্য কিছুর প্রতি এক নিমিষের তরেও উনার পিছুটানের প্রশ্ন অবান্তর।

  এই অন্তর মুবারকই উনার প্রাণের আঁকা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার জীবনব্যাপী লব্ধ নিয়ামতের নির্যাস সোপর্দকরণের একান্ত উপযুক্ত স্থান।

বিশিষ্ট খলীফা মনোনয়নের অতি প্রয়োজনীয় কাজটি ইতোমধ্যেই সমাপ্ত হয়েছে। প্রাণের আঁকা মুর্শিদ ক্বিবলা মনে প্রাণে বুঝে নিয়েছেন, উনার মাধ্যমে মহান আল্লাহ্ পাক উনার উদ্দিষ্ট কাজ বাস্তবায়নের পর্যায় শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থানের সময় এখন প্রায় সমাগত। আবহমান পদ্ধতি অনুসরণে মহান আল্লাহ্ পাক উনার মহান দান নিয়ামত উনার নির্যাস একান্ত আপনজনকে দান করে তিনি এখন নির্ভার হতে চান। নিয়ামত সোপর্দকরণে যোগ্যতম মুরীদ খুঁজে পাবার আনন্দ অপার। মহান আল্লাহ্ পাক ও উনার প্রিয়তম হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টিধন্য একজন মুর্শিদ উনার জীবদ্দশায় পরমতম আনন্দ ও পরিতৃপ্তি সাধিত হয় উপযুক্ত খলীফা হিসেবে একজন অন্তরঙ্গ মানুষকে খুঁজে পাওয়ায় এবং তাকে নিয়ামত দানের একান্ত গোপন আনুষ্ঠানিকতায়। সমকালীন ও আগামী প্রজন্মকে ধর্মীয়, আধ্যাত্মিক ও নৈতিক শিক্ষায় উজ্জীবিত ও অভ্যস্তকরণ এবং ইসলাম ভিত্তিক মানবতার বিকাশ সাধনই একজন মুর্শিদ উনার মূল লক্ষ্য। এ লক্ষ্য অর্জনে চলমান প্রক্রিয়ায় অন্যজনে নিয়ামত হস্তান্তর অবধারিত। কারণ, অন্যান্য সমুদয় বিষয়সহ এই নিয়ামতের সঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক উনার মহাপয়গাম এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের অনুসৃত ও নিদের্শিত মুবারক পন্থা সম্পৃক্ত। মুর্শিদ ও মুরীদের নিগূঢ় সম্পর্কে এটি এমন এক অনির্বচনীয় ভাব বিনিময়, যা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা এবং যৌক্তিক অনুশীলনে বুঝে ফেলা অসম্ভব।

সাধারণভাবে একজন মুর্শিদ উনার কামিয়াবী উপলব্ধির বাহ্যিক অনেক মানদন্ড নিরূপিত আছে। মুর্শিদ সন্নিধানে উপযুক্ত খলীফা তৈরী হওয়া সেসব মানদন্ডের মধ্যে একটি। তবে এটি জরুরী নয় যে, খলীফা না থাকলে বা নিয়ামত সোপর্দ করার মতো কাউকে না পেলেই তিনি (মুর্শিদ) মহান আল্লাহ্ পাক উনার মাহবুব ওলী হবেননা। মূলকথা যা, তা হলো, যিনি খলীফা, আপন মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নেক নজরদারি ও সতর্ক তত্ত্বাবধানে তিনি অবশ্যই উপযুক্ত হবেন এবং পর্যায়ক্রমে তিনিও মহান আল্লাহ্ পাক উনার একান্ত মাহবুব হয়ে উঠবেন।
উপযুক্ত খলীফা মনোনয়ন ও নিয়ামত সোপর্দকরণের পরম পরিতৃপ্তিবোধে হযরত খাজা উছমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জীবদ্দশায় বলেছেন যে, মহান আল্লাহ্ পাক যদি জানতে চান, তিনি কী সম্বল নিয়ে আখিরাতে পাড়ি জমিয়েছেন। তবে কাল বিলম্ব না করেই সবিনয়ে জবাব দিবেন, তিনি সুলতানুল হিন্দ, হাবীবুল্লাহ, শায়খ সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুঈনুদ্দীন হাসান সাঞ্জেরী ছুম্মা আজমিরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে যোগ্য খলীফা হিসেবে আখিরাতে নিয়ে গেছেন। যিনি এক কোটিরও বেশী বিধর্মীকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করেছেন। যমীনে মহান আল্লাহ্ পাক উনার আহকাম প্রতিষ্ঠিত করেছেন। অজানা ও অবলুপ্ত সমুদয় সুন্নত মুবারক যিন্দা করেছেন। মানুষকে সুন্নত মুবারক পালনে অভ্যস্ত করে তুলেছেন। উনার সিলসিলা ক্বিয়ামত পর্যন্ত কায়িম থাকবে। তিনি ছিলেন ইমামুশ্ শরীয়ত ওয়াত্ তরীক্বত, আতায়ে রসূল, ইমামুল আইম্মা, মুঈনুল মিল্লাত, সুলতানুল আরিফীন, গরীবে নেওয়াজ, মুহ্ইস্ সুন্নাহ, মাহিয়্যুল বিদয়াত। সর্বোপরি তিনি ছিলেন মহান আল্লাহ্ পাক উনার লক্ষ্যস্থল।  (অসমাপ্ত)

আবা-১০১

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৪১

 


আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার স্মরণে একজন কুতুবুজ্জামান উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

আনুষ্ঠানিক খিলাফত মুবারক লাভ-

  মহান আল্লাহ্ পাক এবং উনার প্রিয়তম হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সন্তুষ্ট করার লক্ষ্যে, অর্থাৎ একান্তভাবে তাঁদের অনুগত হবার অবধারিত প্রয়োজনে একজন মুরীদকে তার নিজ মুর্শিদ ক্বিবলার সকল আদেশ-নিষেধ মেনে চলতে হয় এবং অনুক্ষণ উনাকে সন্তুষ্ট রাখতে হয়। পূর্ণ ঈমান, বিশুদ্ধ আক্বীদা ও নির্মল অন্তকরণে ইবাদত-বন্দেগীর একাগ্রতা, যিকির-ফিকিরের নিবিষ্টতা এবং মুরাকাবা-মুশাহিদার অবিরাম অভ্যস্ততায় সন্তুষ্টি হাছিলের দরজা অবারিত হয়। ইছলাহ্ (যাহির ও বাতিনের পরিশুদ্ধি) অর্জিত না হলে বান্দার ইবাদত-বন্দেগী এবং কোন কোশেশই যে আল্লাহ্ পাক কবুল করেননা, একথা প্রায় সকলেরই জানা। কিন্তু এতে পরিপূর্ণ সফলতালাভ করা আয়াসসাধ্য এবং ঝুঁকি ও বিপদসংকুল। সাধারণ মানুষের অনেকেই এ পথের সন্ধান জানেনা। যারা জানে, তাদের কারো কারো ক্লেশ ও ঝুঁকি গ্রহণে অনীহা এবং অনেকে এ পথে পা বাড়াতে ও কোশেশে নিয়োজিত হতেই অপারগ। আবার অনেকে তাদের মানসিক দুর্গতি ও ব্যর্থতার গোপন বিষয় আমরণ অনবহিতই থেকে যায়। যে অনাবিল আন্তরিকতা ও প্রাণপণ অধ্যবসায়ের মাধ্যমে কামিয়াবীর দরজা উন্মুক্ত হয়, তার সূক্ষ্ম সন্ধানই তারা জানতে পারেনা। দুনিয়া ও আখিরাতে এটিই মানব জীবনের প্রথম ও শেষ দুর্ভাগ্য। ইল্ম থাকা সত্ত্বেও অজ্ঞ ও পরিপূর্ণ দুনিয়াদার, ইবাদত-বন্দেগী করেও নফসানিয়াতের প্রতি আসক্ত এবং বিবেক ও প্রজ্ঞা চর্চার নামে ইসলামের খিলাফ কার্যকলাপে নিয়োজিত। মানুষের অন্তিম বিড়ম্বনা থেকে নিস্কৃতির কোন পথই খোলা নেই।

          ইবাদত-বন্দেগীতে ষোল আনা দখল জমাতে না পারলে বান্দার কোশেশ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। আল্লাহ্ পাক-উনার রহমত ব্যতিরেকে ইবাদত-বন্দেগীতে পরিপূর্ণরূপে নিয়োজিত হবার মতো নির্মল অন্তর ও একাগ্রতা হাছিল হয়না। আল্লাহ্ পাক-উনার উদ্দিষ্ট নিয়মে ছালিকের(আধ্যাত্ম পথের যাত্রী) এই নিয়ামত হাছিল হয় মুর্শিদ ক্বিবলার মুবারক ছোহবত (সাহচর্য) ও নেক দৃষ্টির মাধ্যমে। ওলীগণ আল্লাহ্ পাক-উনার মনোনীত বন্ধু। তাই আল্লাহ্ পাক-উনার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে উনারই মনোনীত বন্ধুগণের সঙ্গলাভ করা ফরয হিসেবে সাব্যস্ত হয়েছে। আল্লাহ্ পাক-উনার পরিপূর্ণ সন্তুষ্টি পাওয়াই বান্দার মূল লক্ষ্য। উনার জন্য আনুগত্যপূর্ণ ইবাদত-বন্দেগী নিয়ামক মাধ্যম হিসেবে নির্ধারিত হয়েছে। আল্লাহ্ পাক-উনার অভিপ্রায় অনুযায়ী সম্পাদিত সকল আমলে উনাকে খুশী করা বান্দার পক্ষে দুরূহ। এতে বান্দার অক্ষমতা সীমাহীন। অন্যদিকে উনাকে সন্তুষ্ট করায় বান্দার কোন কাজই ঝুঁকি ও ক্লেশমুক্ত নয়। আল্লাহ্ পাক কর্তৃক বান্দা আকৃষ্ট অর্থাৎ মাহবুব বলে গণ্য হলে কামিয়াবীর আর কোন অবশেষ থাকেনা। মুর্শিদ সন্নিধানে মাহবুব মুরীদের অনুমিত ও অননুমিত এমন উত্তরণের কোন নিম্ন গতি নেই।

          হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আফজালুন্ নাছ বাদাল আম্বিয়াঅভিধায় (সম্মানিত লক্বব) অভিষিক্ত করেছেন। তা কেবল মাত্র এ কারণে নয় যে, তিনি নামায, রোযা, ইবাদত-বন্দেগী বেশী পরিমাণে করতেন। মূলতঃ উনার অন্তর মুবারকে আল্লাহ্ পাক সদয় হয়ে এমন অনূভব, ঔদার্য, সহানুভূতি, আনুগত্য ও নিয়ামত দান করেছিলেন, যা উনার আফজালিয়াতের সমান্তরাল। আর তাই তিনি সকলেরই অগ্রগামী। সংগত কারণেই দুনিয়া থেকে বিদায় নেবার আগে হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকলের পাওনাদি পরিশোধ করে দিয়েছিলেন। অবশিষ্ট ছিলেন একমাত্র হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। এ সম্পর্কে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, আল্লাহ্ পাক পরিমিত পরিমাণে উনাকে উত্তম বিনিময় দান করবেন(সুবহানাল্লাহ)। সমঝদার মানুষের বুঝতে কষ্ট হয়না যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, রহমতুল্লিল আলামীন হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার মুবারক ছোহ্বতের মাধ্যমেই হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে আল্লাহ্ পাক নিয়ামত সমৃদ্ধ করেছিলেন। (অসমাপ্ত)

আবা-১০০

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৪০

 


আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার স্মরণে একজন কুতুবুজ্জামান উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

আনুষ্ঠানিক খিলাফত মুবারক লাভ-

এই আলোচনার গুঞ্জন মুর্শিদ ক্বিবলা শুনলেন এবং মুরীদগণের মনোভাব বুঝলেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ দেখ, তোমরা অনেকদিন ধরে আমার মুবারক ছোহ্বতে থাকছো একথা সত্যি। কিন্তু তোমরা এখনো ভিজে কাঠের মতো। আর্দ্রতা দূর হতে আরো সময় প্রয়োজন। ভিজে কাঠে আগুন জ্বলেনা। মূল নিয়ামতের নির্যাস ধারণ ও বহনের জন্য যোগ্যতা প্রয়োজন। হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার বিষয়টি ভিন্ন। আমার নেক নজরে আসার পর পরই তিনি শুকিয়ে গেছেন। আর্দ্রতা রোধ বা দূর করার জন্য অপেক্ষার প্রয়োজন হয়নি। আগুন দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি জ্বলে উঠেছেন। তাই মহান আল্লাহ্ পাক-উনার সদয় অভিপ্রায় অনুযায়ী উনাকে আমি প্রধান খলীফা অভিধায় সম্মানিত করেছি। সঙ্গে সঙ্গে নিয়ামতের নির্যাসও আমি উনাকে দান করেছি।

          ওলীআল্লাহ্গণ মুরীদের পথের প্রতিবন্ধকতা দূর করেন এবং উনাদেরকে নিজ আশ্রয়ে রাখেন। এ আশ্রয় মুরীদকে আল্লাহ্ পাক-উনার খাছ রহমত, মুহব্বত ও মারিফাতের সঙ্গে স্থায়ীভাবে সম্পৃক্ত করে দেয়। মুর্শিদের ইচ্ছার সঙ্গে মুরীদের ইচ্ছার নিবিড় সংযোগ স্থাপিত না হলে উদ্দেশ্য অপূর্ণই থেকে যায়। এরূপ মুবারক সংযোগ বিহনে অথবা বিচ্ছিন্নতায় সালেকের জীবনব্যাপী আয়াসসাধ্য আয়োজন, চেষ্টা, তদবীর, কোশেশ ও আমল পন্ডশ্রমে পরিণত হয়। হৃদয়ের অভ্যন্তরভাগ রওশন হলেই বুকের সকল বন্ধ দরজা উন্মুক্ত হয়। এমন উন্মুক্ত ও অনাবিল মানসসরোবরেই আল্লাহ্ পাক-উনার মুহব্বত ও মারিফাতের পদ্মকলি ফোটে। অবিরাম প্রাপ্তিযোগের এ পর্যায়ে একজন মানুষ মুরীদ থেকে মুরাদে এবং পরজন থেকে আপনজনে গণ্য হয়। তখন কাঙ্খিত উপায়ে আল্লাহ্ পাক-উনার নৈকট্যের মন্জিল ক্রমশঃ নিকটবর্তী হতে থাকে। ওলীআল্লাহ্গণের মুবারক সন্নিধান ব্যতিরেকে অন্তর পরিশুদ্ধ হবার অন্য কোন বিকল্প ব্যবস্থা নেই। তাই কেবলমাত্র আপন অভিপ্রায়, প্রয়াস ও কোশেশে কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, অন্যান্য কিতাবাদী অধ্যয়ন এবং তাছাউফের জটিল ও গূঢ় রহস্য সংবলিত বিবরণাদি মুখস্থ করে নিলেই ছহীহ্ সমঝ্ অর্জিত হয়না। ইছলাহ্ অর্জনের মাধ্যমে কামিয়াবী হাছিলের জন্য কামিল মুর্শিদের সাহচর্য ও কৃপাদৃষ্টি অত্যাবশ্যক। ওলীআল্লাহ্গণের মুবারক অন্তর্দৃষ্টি মুরীদের হৃদয়ে রেখাপাত করলেই ধর্মজ্ঞানের উদ্ভব হয়।

          একজন মুর্শিদের আশ্রয় ও তত্ত্বাবধানে থাকা সকল মুরীদের অবস্থান ও পর্যায় একীভূত। আর তাই আমভাবে নিয়ামত হাছিল ও মর্যাদায় সকল মুরীদই সমান। সাধারণভাবে উনার কোন ব্যতিক্রম দেখা না গেলেও মুরীদের যোগ্যতা ও অবস্থাভেদে খাছ নিয়ামত হাছিলের ক্ষেত্রে অবধারিতভাবে পার্থক্য সূচিত হয়ে থাকে। আল্লাহ্ পাক-উনার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে খাছ নিয়ামতের জন্য খাছ অন্তঃকরণ, কাম্য পর্যায়ের উপলব্ধি, শানিত অনুভূতি, নিঃশর্ত আনুগত্য ও নিবেদন অপরিহার্য। ইখলাছবিহীন ইবাদত-বন্দেগী ও আমলের মাধ্যমে খাছ নিয়ামত হাছিলের আশা কেবল দূরাশা মাত্র। অন্তর ইসলাহ্ না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ্ পাক-উনার সন্তুষ্টি হাছিলতো দূরের কথা, বান্দার নিয়তই পরিশুদ্ধ হয়না এবং কোন আমলও কবুল হয়না।

          মুবারক জীবনব্যাপী আয়াসসাধ্য আয়োজনে লব্ধ নাজ-নিয়ামত সোপর্দ করার লক্ষ্যে উপযুক্ত পাত্র নির্বাচনে ওলী আল্লাহ্গণ সংগত কারণে গভীর পর্যবেক্ষণ ও সূক্ষ্ম যাচাই-বাছাই করে থাকেন। জীবন সায়াহ্নে এসে অথবা আল্লাহ্ পাক-উনার ইচ্ছা অনুযায়ী যে কোন সময়ে নিয়ামত সোপর্দ করণে একজন মুর্শিদ অধীর আগ্রহ ও অনুসন্ধানে যোগ্যতম মুরীদের অপেক্ষায় থাকেন। ওলীয়ে মাদারজাদ, ছহেবে কাশ্ফ ওয়া কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছূফীয়ে বাতিন, ছহেবে ইসমে আযম, কুতুবুজ্জামান, আওলাদুর রসূল, আলহাজ্ব, হযরত মাওলানা শাহ্ ছূফী শায়খ সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহিস সালাম উনাকে নিবিড় করে কাছে পেয়ে তাঁর প্রাণের আকাঁ মুর্শিদ ক্বিবলার দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান হওয়ায় তিনি এখন পরিতৃপ্ত। কারণ, মুর্শিদ ক্বিবলার খুঁজে পাওয়া প্রিয়তম মুরীদ হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম অন্তরের বিশুদ্ধতায়, ইল্মের গভীরতায়, আনুগত্য ও নিবেদনের পরীক্ষায়, উপলব্ধির উৎকর্ষতায়, অপ্রয়োজনীয় আড়ম্বরহীনতায় এবং ইবাদত-বন্দেগী, আমল ও যিকির-ফিকিরের একাগ্রতায় অতুলনীয়। (অসমাপ্ত)

আবা-৯৯