আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার স্মরণে একজন কুতুবুজ্জামান উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-
আনুষ্ঠানিক খিলাফত মুবারক লাভ-
মহান আল্লাহ্ পাক এবং উনার প্রিয়তম হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সন্তুষ্ট করার লক্ষ্যে, অর্থাৎ একান্তভাবে তাঁদের অনুগত হবার অবধারিত প্রয়োজনে একজন মুরীদকে তার নিজ মুর্শিদ ক্বিবলার সকল আদেশ-নিষেধ মেনে চলতে হয় এবং অনুক্ষণ উনাকে সন্তুষ্ট রাখতে হয়। পূর্ণ ঈমান, বিশুদ্ধ আক্বীদা ও নির্মল অন্তকরণে ইবাদত-বন্দেগীর একাগ্রতা, যিকির-ফিকিরের নিবিষ্টতা এবং মুরাকাবা-মুশাহিদার অবিরাম অভ্যস্ততায় সন্তুষ্টি হাছিলের দরজা অবারিত হয়। ইছলাহ্ (যাহির ও বাতিনের পরিশুদ্ধি) অর্জিত না হলে বান্দার ইবাদত-বন্দেগী এবং কোন কোশেশই যে আল্লাহ্ পাক কবুল করেননা, একথা প্রায় সকলেরই জানা। কিন্তু এতে পরিপূর্ণ সফলতালাভ করা আয়াসসাধ্য এবং ঝুঁকি ও বিপদসংকুল। সাধারণ মানুষের অনেকেই এ পথের সন্ধান জানেনা। যারা জানে, তাদের কারো কারো ক্লেশ ও ঝুঁকি গ্রহণে অনীহা এবং অনেকে এ পথে পা বাড়াতে ও কোশেশে নিয়োজিত হতেই অপারগ। আবার অনেকে তাদের মানসিক দুর্গতি ও ব্যর্থতার গোপন বিষয় আমরণ অনবহিতই থেকে যায়। যে অনাবিল আন্তরিকতা ও প্রাণপণ অধ্যবসায়ের মাধ্যমে কামিয়াবীর দরজা উন্মুক্ত হয়, তার সূক্ষ্ম সন্ধানই তারা জানতে পারেনা। দুনিয়া ও আখিরাতে এটিই মানব জীবনের প্রথম ও শেষ দুর্ভাগ্য। ইল্ম থাকা সত্ত্বেও অজ্ঞ ও পরিপূর্ণ দুনিয়াদার, ইবাদত-বন্দেগী করেও নফসানিয়াতের প্রতি আসক্ত এবং বিবেক ও প্রজ্ঞা চর্চার নামে ইসলামের খিলাফ কার্যকলাপে নিয়োজিত। মানুষের অন্তিম বিড়ম্বনা থেকে নিস্কৃতির কোন পথই খোলা নেই।
ইবাদত-বন্দেগীতে ষোল আনা দখল জমাতে না পারলে বান্দার কোশেশ ব্যর্থতায় পর্যবসিত
হয়। আল্লাহ্ পাক-উনার রহমত ব্যতিরেকে ইবাদত-বন্দেগীতে পরিপূর্ণরূপে নিয়োজিত হবার
মতো নির্মল অন্তর ও একাগ্রতা হাছিল হয়না। আল্লাহ্ পাক-উনার উদ্দিষ্ট নিয়মে
ছালিকের(আধ্যাত্ম পথের যাত্রী) এই নিয়ামত হাছিল হয় মুর্শিদ ক্বিবলার মুবারক ছোহবত
(সাহচর্য) ও নেক দৃষ্টির মাধ্যমে। ওলীগণ আল্লাহ্ পাক-উনার মনোনীত বন্ধু। তাই আল্লাহ্
পাক-উনার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে উনারই মনোনীত বন্ধুগণের সঙ্গলাভ করা ফরয
হিসেবে সাব্যস্ত হয়েছে। আল্লাহ্ পাক-উনার পরিপূর্ণ সন্তুষ্টি পাওয়াই বান্দার মূল
লক্ষ্য। উনার জন্য আনুগত্যপূর্ণ ইবাদত-বন্দেগী নিয়ামক মাধ্যম হিসেবে নির্ধারিত
হয়েছে। আল্লাহ্ পাক-উনার অভিপ্রায় অনুযায়ী সম্পাদিত সকল আমলে উনাকে খুশী করা
বান্দার পক্ষে দুরূহ। এতে বান্দার অক্ষমতা সীমাহীন। অন্যদিকে উনাকে সন্তুষ্ট করায়
বান্দার কোন কাজই ঝুঁকি ও ক্লেশমুক্ত নয়। আল্লাহ্ পাক কর্তৃক বান্দা আকৃষ্ট অর্থাৎ
মাহবুব বলে গণ্য হলে কামিয়াবীর আর কোন অবশেষ থাকেনা। মুর্শিদ সন্নিধানে মাহবুব
মুরীদের অনুমিত ও অননুমিত এমন উত্তরণের কোন নিম্ন গতি নেই।
হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম “আফজালুন্
নাছ বা’দাল আম্বিয়া”
অভিধায় (সম্মানিত লক্বব) অভিষিক্ত করেছেন। তা কেবল মাত্র এ
কারণে নয় যে, তিনি নামায, রোযা, ইবাদত-বন্দেগী বেশী পরিমাণে করতেন। মূলতঃ উনার অন্তর মুবারকে আল্লাহ্ পাক সদয়
হয়ে এমন অনূভব, ঔদার্য, সহানুভূতি, আনুগত্য ও নিয়ামত দান করেছিলেন, যা উনার আফজালিয়াতের সমান্তরাল।
আর তাই তিনি সকলেরই অগ্রগামী। সংগত কারণেই দুনিয়া থেকে বিদায় নেবার আগে
হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকলের পাওনাদি পরিশোধ করে
দিয়েছিলেন। অবশিষ্ট ছিলেন একমাত্র হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু। এ সম্পর্কে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, আল্লাহ্
পাক পরিমিত পরিমাণে উনাকে উত্তম বিনিময় দান করবেন(সুবহানাল্লাহ)। সমঝদার মানুষের
বুঝতে কষ্ট হয়না যে,
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, রহমতুল্লিল আলামীন হুজুর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার মুবারক ছোহ্বতের মাধ্যমেই হযরত আবূ বকর
ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে আল্লাহ্ পাক নিয়ামত সমৃদ্ধ করেছিলেন।
(অসমাপ্ত)
আবা-১০০
0 Comments:
Post a Comment