ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ্ দা’ওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছহিবে কাশ্ফ ওয়া কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছুফীয়ে বাতিন, ছহিবে ইস্মে আ’যম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম-উনার স্মরণে-
একজন
কুতুবুয্ যামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-
আনুষ্ঠানিক খিলাফত মুবারক লাভ-
আজ মুর্শিদ ক্বিবলার অনুপম দানে আল্লাহ্ পাক-উনার সঙ্গে নিগূঢ় নৈকট্য হাছিলে
হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম-উনার প্রত্যাশিত
কামিয়াবী পরিপূর্ণতা লাভ করবে। এটি এক পরম অর্জন। প্রত্যাশা পূরণের সহায়ক যে কোন
অর্জনই মনকে আনন্দিত করে। যা চাওয়া, তা’ পাওয়া হলে অন্তরের প্রশান্তি ঘটে।
আকাঙ্খার পূর্ণতায় জীবন অর্থবহ হয়। নিত্যদিন বিরূপ পরিবেশ-প্রতিবেশ মুকাবিলা করেও
দুনিয়ার নশ্বর পরিধিতে বেঁচে থাকা প্রেরণাদায়ক ও আশাব্যঞ্জক হয়। সাধারণ বিবেচনায়
মানুষ দু’দলে বিভক্ত। একদল জান্নাতী, অন্যদল জাহান্নামী। উভয় দলই অবিরাম গতিতে আপন গন্তব্যে
এগিয়ে চলছে। সমঝদার অথবা মুর্খ (এখানে মূর্খ অর্থ দুনিয়ার প্রতি আসক্ত) সকলেই
তাদের অবস্থাভেদে অন্তরে ঐশ্বর্যের (নিয়ামত) অধিকারী অথবা ব্যাধিগ্রস্থ হয়। মানসিক
অবস্থার ভিত্তিতেই প্রত্যেকের পৃথক অভিপ্রায়, জীবনবোধ এবং দুনিয়া ও আখিরাত
সম্পর্কিত প্রজ্ঞা জন্মলাভ করে। দুর্নিবার মানসিক ঝোঁক, অর্থাৎ
অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্যই সব সময় প্রাধান্যে থেকে মানুষের জীবনবোধ গঠন করে।
প্রত্যেকেই অবধারিতভাবে তার আত্ম-অনুভূতির ধারক ও বাহক। এই অকাট্য বোধ-বিবেচনায়
মানুষ আমরণ আবর্তিত হয় এবং আপন কর্ম প্রবাহে (আমলে) নিয়োজিত হয়। এমন ঈমান, আক্বীদা
ও আমলে সে অনবরত নির্ধারিত গন্তব্য পানে অগ্রসর হতে থাকে। নেক মানুষের মন ঐশ্বর্য
মন্ডিত এবং মন্দ মানুষের মন দূষিত। সাধারণতঃ ভালো সব সময়ই ভালো এবং মন্দ সব সময়
মন্দই থেকে যায়। মন্দ মানুষের বিপর্যয় ও দূরবস্থা সহজে নিরাময়যোগ্য হতে দেখা
যায়না। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “অন্তরের ঐশ্বর্যই প্রকৃত ঐশ্বর্য।” মনের এই
ঐশ্বর্যই মানুষকে আল্লাহ্ পাক-উনার দিকে ধাবিত করে।
ভালো ও মন্দ উভয়ের চাওয়া তাদের অন্তর থেকেই উৎসারিত হয়। অজ্ঞ ও গাফিল মানুষের
চাওয়া-পাওয়ার সবটুকুই দুনিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত। সমঝদার মানুষের প্রত্যাশা ও
কর্মনিযুক্তি কেবলই আখিরাত ভিত্তিক। নফ্সের পায়রবী করে কেউ দুনিয়া পেলে খুশী। কেউ
আখিরাতের প্রতি মনোযোগী থেকে এতমিনান (প্রশান্ত)। দুনিয়ার বাসিন্দা হিসেবে পরিচিত-অপরিচিত মানুষ ও আপনজন পরিবেষ্টিত থেকে এবং
নিত্য প্রয়োজনে ভাব ও বিষয়ের লেনদেন করেও নেককার মানুষ নিজ আবাসে পরবাসী এবং
দুনিয়ার সবকিছুর প্রতি নির্লিপ্ত, উদাসীন। কারণ, এটি উনার মানসিক অবস্থা এবং আপন
গন্তব্যে পৌঁছার ক্ষেত্রে এটি উনার জীবন যাপনের নির্ঝঞ্ঝাট পদ্ধতি। অন্তরে লুকানো
অবস্থার কারণেই একজন মানুষ গায়রুল্লাহ্ পন্থী হয় এবং ভিন্নতর মন ও মননের কারণেই
অপরজন ক্রমান্বয়ে পরিপূর্ণ আল্লাহ্ওয়ালা হয়ে উঠে।
পরিপূর্ণ গাফিল মানুষ ইবলিসের শিকার হয়ে গায়রুল্লাহ পন্থী হতে বাধ্য হয়। এমন
গুরুতর ব্যাধিগ্রস্থ মানুষের সুস্থতা লাভের আর অবকাশ থাকেনা। ইবলিসের ধোঁকায় অনেক
সময় মনে করে, সে নেক কাজেই মশগুল আছে। সে কী চায়, কোন কাজে আগ্রহী, কোন আমলে
নিয়োজিত এবং কী তার পরিণতি,
তা’
সে নিজেই জানেনা। কারণ, অজ্ঞতার আবরণে সে আল্লাহ্ পাক
থেকে বিমূখ। অনেকে ইবাদত-বন্দেগী করে, এমনকি অতিরিক্ত কিছু যিকির-ফিকিরে
অভ্যস্ত হয়ে আত্মতৃপ্ত। আবার অনেকে আয়াসসাধ্য কোশেশে রত থেকে আনন্দিত। কিন্তু
আভ্যন্তরীন ইসলাহ্ ছাড়া যে বান্দার কোন কোশেশই আল্লাহ্ পাক কবুল করেননা, সে
সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষ বেখবর। ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ
দুনিয়ায় থেকেই জান্নাতের চিরস্থায়ী বাসিন্দা হবার সুসংবাদ পেয়েও পূর্বের তুলনায়
বেমেছাল কোশেশে নিয়োজিত ছিলেন। একজন মানুষের কথা, আমল, আচরণ, প্রয়াস ও
প্রার্থনা তার মাকামের (উপলব্ধি ও মনের অবস্থা) অনুরূপ হতে বাধ্য। (অসমাপ্ত)
আবা-১০৩
0 Comments:
Post a Comment