আমাদের সম্মানিত দাদা
হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার স্মরণে একজন কুতুবুজ্জামান
উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-
মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সন্নিধানে উপলব্ধি এবং কামিয়াবীর নবতর মাত্রাযোগ-
উপলব্ধি ও নৈকট্যের বিষয়টি আপেক্ষিক। ওলীআল্লাহ্গণের কামিয়াবীর এমন এক শীর্ষ সোপান আছে, যেখানে থেকে বিভেদ ও বিচ্যুতির কোন সম্ভাবনা থাকেনা কিন্তু ভয় থাকে। পরম নৈকট্যপ্রাপ্ত ওলীগণের যতো প্রকার যন্ত্রনা ও দুঃখ থাকে, ভয়সংকুল অবস্থা উনার মূল। না পাবার দুর্ভাবনা ও দুঃখ অথবা আল্লাহ্ পাক-এর সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপিত না হবার সংকটের চেয়ে পেয়ে হারানোর বেদনা অধিক দুঃসহ। তাই আরিফগণের (আল্লাহ্ পাক-এর পরিচয় লাভকারী সূক্ষ্মদর্শী ওলী) অনুক্ষণ চিন্তাক্লিষ্ট ও ব্যাকুল থাকায় অভ্যস্ত হওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকেনা। নশ্বর জীবন খুব ছোট, গন্তব্য সুদূর। আল্লাহ্ পাক-এর অন্তহীন মুহব্বত ও মারিফাত হাছিলের আয়াসসাধ্য যাত্রাপথের আপাত প্রান্তসীমায় উপনীত হয়েও নিদারুণ অতৃপ্তিবোধই ওলীগণের জীবনের পুঁজি হয়ে দাঁড়ায়। বিচ্ছেদ ও বিচ্যুতির আশঙ্কা ও সংশয়হীন পরিসীমায় পৌঁছেও সাইয়্যিদুত্ ত্বয়েফা হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি এমন মধুর অতৃপ্তির অব্যক্ত যন্ত্রনায় কাতর হয়েছেন। মুবারক জীবনব্যাপী নিরলস প্রয়াসে লব্ধ অক্ষমতা ও অতৃপ্তিবোধকেই তিনি উনার জীবনের লব্ধ সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করেছেন, যদিও তিনি সমকালীন আরিফগণের সুলতান ছিলেন। বিশিষ্ট সকল ওলী আল্লাহ্গণও কামিয়াবীর উৎকর্ষতায় উনার মতোই অভিন্ন অনুভূতিতে আমরণ আবর্তিত হয়ে থাকেন। পূর্ণতম উপায়ে আল্লাহ্ পাককে উপলব্ধি করার অযোগ্যতা এবং পরিপূর্ণরূপে উনার মুহব্বত-মারিফাত হাছিলের ক্ষেত্রে অক্ষমতাজনিত সচেতন অনুভূতির জাগরণ ঘটলেই মানুষ প্রকৃত আরিফ হয়। একান্তভাবে এই অক্ষমতা ও অযোগ্যতার ধারক ও বাহক হবার প্রয়োজনে উম্মতকে শিক্ষাদানের লক্ষ্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “হে পরওয়ারদিগার আল্লাহ্ পাক! অন্তরের ব্যাকুল ইচ্ছে সত্ত্বেও আমি পরিপূর্ণরূপে আপনার শুকরিয়া আদায় করতে পারিনা। আপনিতো তেমন, যেমন স্বয়ং আপনি আপনার প্রশংসা প্রকাশ করেছেন।”
তাছাউফ উপলব্ধি ও অনুসরণের ক্ষেত্রে সালেকের (মারিফাতের পথযাত্রী) অন্তরে না
পাবার দুঃখ এবং পেয়ে হারানোর বেদনাবোধের জাগরণই কাম্য। মুর্শিদ ও মুরীদের
পারস্পরিক লেনদেনের অনিশেষ প্রয়াসে মুরীদ তার আপন যোগ্যতায় স্তরভিত্তিক পূর্ণতা ও
মর্যাদায় উত্তীর্ণ হয়। অবস্থানগত কারণে মুরীদের পাওয়া নিঃশেষ হয়ে গেলেও মুর্শিদের
দান কখনো ফুরায়না। কারণ,
মুর্শিদের প্রাপ্তির উৎস আল্লাহ্ পাক। মুর্শিদের দান করার
ক্ষমতাই মূল বিষয়,
একথা সত্য। তবে নিয়ামত ধারণ ও বহনের ক্ষেত্রে মুরীদের
যোগ্যতা সবিশেষ গুরুত্ববহ। নিয়ামতলাভে মুরীদের এই যোগ্যতাই নিয়ামক ভূমিকা পালন করে
থাকে। তাছাউফের নিগূঢ় বিবেচনায় নির্দিষ্ট কোন মাকামে সালেকের থেমে থাকা কঠিন পাপ
বিবেচিত হওয়া সত্ত্বেও সতীর্থদের পেছনে ফেলে কেউ কেউ অবলীলায় কাঙ্খিত মন্জিলে
এগিয়ে যায়। ঈমান,
আক্বিদা, ইল্ম, আমল,
ইখলাছ ও আত্মোপলব্ধির দুর্বলতার কারণেই অনেককে পেছনে পড়ে
থাকতে হয়, যদিও আদিতে সকলের প্রত্যাশাই অভিন্ন থাকে। মুর্শিদের মহান দান গ্রহণের
উৎকর্ষমন্ডিত যোগ্যতার উপরই মুরীদের অগ্রযাত্রা ও কামিয়াবী নির্ভরশীল। এই অনিবার্য
যোগ্যতার প্রশ্নে মাদারজাদ ওলী, কুতুবুজ্জামান, আওলাদে রসূল, আলহাজ্ব, হযরতুল
আল্লামা, সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম ছিলেন অতুলনীয়। উনার ধমনীতে
প্রবাহিত ছিল বুযুর্গ পূর্বপুরুষের মুবারক রক্তধারা, যাঁরা ছিলেন তরীক্বত তথা তাছাউফের
সমকালীন প্রাণপুরুষ।উনাদের মাধ্যমে প্রচারিত ও প্রসারিত হয়েছে ইসলামের মর্মবাণী, বিচ্ছুরিত
হয়েছে তাছাউফের আলো।উনাদের উছীলায় সুন্নত পালনের অভ্যস্ততায় মানুষ খুঁজে পেয়েছে
ইসলামের মূল হিদায়েত।উনাদেরই অধস্তন সন্তান মাদারজাদ ওলী হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ
মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম পরিপূর্ণ কামিয়াবী হাছিল করবেন, যোগ্যতম
মুরীদ হিসেবে মুর্শিদ প্রদত্ত নিয়ামতের নির্যাস ধারণ, বহন এবং
তা প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় তিনি উনার প্রাণের আঁকা মুর্শিদ ক্বিবলার উত্তরসুরী হবেন, এটাইতো
স্বাভাবিক। (অসমাপ্ত)
আবা-৯০
0 Comments:
Post a Comment