আমাদের সম্মানিত দাদা
হুজুর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম-উনার স্মরণে একজন কুতুবুজ্জামান-উনার
দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-
দুখের সঙ্গে মিতালী-
নিগূঢ় উপলব্ধির জন্য গভীর
দুঃখ ও অতলান্ত মনোবেদনা আবশ্যক। মুহব্বতের এক নাম দুঃখ। আল্লাহ্ পাক উনার প্রেমের
নিরব অভিঘাতে প্রতিনিয়ত ওলীগণের যন্ত্রনা কাতরতার পরিবৃদ্ধি ঘটতে থাকে। একই সঙ্গে উনাদের
কাঙ্খিত মন্জিল নিকটতর হতে থাকে অনবরত। কামিয়াবীর সোপান সসীম নাগালে না থাকায় উনাদের
প্রত্যাশা ও প্রয়াস অনুক্ষণ নবতর গতি পায়। অনেক পেয়েও অতৃপ্তির যন্ত্রনা উনাদেরকে
কেবল দুঃখিতই করেনা,
অনাবিল প্রশান্তির স্বাদও এনে দেয়। দুনিয়ার সব কিছুর
বিনিময়ে, এমনকি জীবনের বদলে আল্লাহ্ পাককে পাবার প্রবল বাসনা, এই
দুঃখবোধ থেকেই সৃষ্টি হয়। উনাদের আত্মপ্রত্যয় ও আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব এই যাতনা
থেকেই গড়ে উঠে। অন্তরস্থ মধুর যন্ত্রনাগুলো ওলীগণের নিজস্ব সম্পদ। অন্যজনে তা
হস্তান্তরের সুযোগ থাকেনা। বাহ্যিক অবয়বে প্রসন্ন দেখা গেলেও ভেতরে উনারা
নিরানন্দ। অব্যক্ত বেদনাভারে ভাব ও ভালোবাসার লেনদেনের অভাবে জগৎ-সংসারের
কোলাহলমুখর পরিবেশ-প্রতিবেশেও উনারা থাকেন “আপন ঘরে পরবাসে।” অনির্বচনীয়
বেদনার এমন দুঃসহ পর্যায়ে আপন মুর্শিদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন ছাড়া অন্যকোন উৎকৃষ্ট
পন্থা সাব্যস্থ নেই। হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস
সালামএখন এমন নিদারুণ যন্ত্রণায় আক্রান্ত। ক্রমবর্ধিষ্ণুরূপে আল্লাহ্ পাক-উনার
নৈকট্য যতো হাছিল হচ্ছে,
বেদনা ও অনুসন্ধিৎসাও ততো বাড়ছে। মন ও মননে প্রাণের আঁকা
মুর্শিদ অনুক্ষণ বিরাজমান। কিন্তু মুর্শিদের ইন্তিকালে জাহেরী সংযোগ বিচ্ছিন্নতায়
বিচ্ছেদ যাতনা বড়ো প্রকট।
আবার একজন নতুন মুর্শিদের প্রয়োজনীয়তা অনুভব-
জীবন ও প্রকৃতি প্রবাহের অমোঘ ধারায় ব্যক্তি, বিষয় ও বস্তুর উত্থান-পতন সব
মানুষ মেনে নিতে বাধ্য হয়। বেঁচে থাকার অনিবার্য প্রয়োজনে আপনজনের মরণেও কেউ
দীর্ঘকাল বিচলিত থাকেনা। জীবনের স্বাভাবিক গতিময়তার জন্য স্থায়ী মনঃক্ষুন্নতা
প্রতিবন্ধক। আপনজনের বিয়োগে মনোবেদনার এই অতিস্বাভাবিক নিয়মের ব্যত্যয়ে মুর্শিদের
ইন্তিকাল অন্তরে স্থায়ী যন্ত্রনার উদ্রেক করে দেয়। কারণ, যোগ্য
মুর্শিদের বিকল্প পাওয়া দুস্কর। মুর্শিদের জাহেরী অনুপস্থিতির বেদনা মুরীদের হৃদয়ে
স্থায়ী রেখাপাত করে। সঙ্গত কারণেই প্রাণের আঁকা মুর্শিদ হযরত শেখ বোরহানুদ্দিন
ফরাজীকান্দি রহমতুল্লাহি আলাইহিকে হারিয়ে হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর
রহমান আলাইহিস সালামনিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছেন। এই নির্মম নিঃসঙ্গতার অবসান দরকার। কিন্তু
তা সম্ভব কী? এমন নিরন্তর ভাবনায় উনার মন এখন আচ্ছন্ন। উনার জন্য প্রয়োজন একজন যোগ্য
মুর্শিদ খুঁজে পাওয়া। এমন মুর্শিদের সন্ধান কিভাবে পাওয়া যাবে? কোথায়
তিনি? অন্তরে বিরাজমান বেদনা উপশমের লক্ষ্যে সেই মহান মুর্শিদের তালাশেই এখন উনার
উদ্বেলিত মনোযোগ।
নৈকট্যপ্রাপ্ত ওলীগণের সকল আরজুই আল্লাহ্পাক-উনার সদয় ইচ্ছায় পূরণ হয়ে যায়।
আখিরাতের প্রতি পূর্ণ মনঃসংযোগের কারণে আল্লাহ্ পাক উনাদের ব্যক্ত ও অব্যক্ত চাওয়া
এবং জটিল ও সূক্ষ্ম সকল সমস্যা দূর করে এত্মিনান দান করে থাকেন। তৃপ্তি ও
প্রশান্তি সকল মানুষের কাম্য হলেও মূলতঃ অনেকেই তাদের চাওয়া-পাওয়ার প্রকৃতি ও
পরিধি জানেনা। ওলীগণের একমাত্র কামনা আল্লাহ্ পাক-উনার পরিপূর্ণ সন্তুষ্টি। এই
সন্তুষ্টির নিশ্চিত প্রেক্ষিত এবং পরিণত সোপান আল্লাহ্ পাক উনাদের অজ্ঞাতে রাখেন।
বুযুর্গীর তারতম্যে এবং অবস্থাভেদে এই অভিজ্ঞান কম-বেশী হলেও, অনবহতির
প্রশ্ন সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। সূক্ষ্মদর্শী ওলীগণ উত্তরণের শীর্ষধাপে উপনীত
হয়েও অবহতির অনিশ্চয়তা থেকে মুক্ত নন্ বলে মনে করেন। রহস্যাবৃত মুহব্বত ও মা’রিফত
অর্জনে ওলীগণের প্রয়োজন ও প্রয়াসের পরিপূর্ণতা দানের বিষয় আল্লাহ্ পাক-উনার সদয়
এখতিয়ারে। আপাত বিবেচনায় যখন অধিক পাওয়া হয়, তখনও অনেক বাকী থাকে। তাই কাঙ্খিত
বিষয়ে কোশেশ-উনার অন্ত থাকতে নেই। যা পাওয়া দরকার, কিন্তু অনুপলব্ধির কারণে চাওয়া
হয়ে উঠেনা, এমন অজানা নিয়ামত সম্ভারে আল্লাহ্ পাক উনার মনোনীত ওলীগণকে পূর্ণতা দান করে
কামিয়াবীর পরিণত ধাপে এগিয়ে নিয়ে যান। সূক্ষ্ম ও জটিল বিষয়গুলো ইল্হাম, ইলকা এবং
উদ্দিষ্ট অন্যবিধ নিয়মে আল্লাহ্ পাক উনার খাছ বন্ধুদেরকে জানিয়ে দেন। কাজেই
মাদারজাদ ওলী হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালামআল্লাহ্
পাক-উনার রহমতে উনার কাঙ্খিত নতুন মুর্শিদ খুঁজে পাবেন, এটাইতো
স্বাভাবিক। এখন শুধু অনুসন্ধানে ব্যাপৃত হওয়া এবং প্রতীক্ষায় থাকা। (অসমাপ্ত)
আবা-৮৬
0 Comments:
Post a Comment