আমাদের সম্মানিত দাদা হুজুর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম-উনার স্মরণেন একজন কুতুবুজ্জামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-
মুর্শিদ ক্বিবলা উনার বিছাল লাভ করার পর আবার বিরহকাতরতা-
উনাদের কেবল ভাবনা ও পাওনার বিচিত্র পথপরিক্রমায় নিরবধি বিচরণ এবং তাতে অনুক্ষণ নবতর উত্তরণ। যা কিছু পাওয়া যায়, তাকেই হারাতে হয়, আরো মধুর কিছু পাবার প্রেক্ষিতে। যা পাওয়া যায় তাতে মন ভরেনা। কারণ, পরিপূর্ণ তৃপ্তি ও প্রশান্তি আল্লাহ্ পাক আখিরাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে রেখেছেন। আখিরাতে প্রশান্তি পাবার প্রয়োজনে মন ও ধ্যানকে ওলী আল্লাহ্গণের সঙ্গে মজবুত করে বেঁধে নিতে হয়। কালামুল্লাহ্ শরীফে উনারশাদ হয়েছে,
ان رحمت الله قريب من المحسنين.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই
আল্লাহ্ পাক-উনার রহমতের ফল্গুধারা সূফীগণের (ওলী আল্লাহ্) নিকটবর্তী।” হযরত
ছাওয়াল পীর সাহেব ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার ইন্তিকালে হযরতুল আল্লামা
সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান ক্বিবলা আলাইহিস, উনার প্রাণের আঁকা মুর্শিদ হযরত
শেখ বোরহানুদ্দিন ফরাজীকান্দি রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার সঙ্গে নিজেকে নিবিড়ভাবে
সংলগ্ন করেছিলেন,
আল্লাহ্ পাক-উনার আরো নৈকট্য প্রত্যাশায়। প্রত্যাশা পূরণও
হয়েছিল। কিন্তু তিনি পরপারে চলে গেলেন। উনার বিদায়ে এখন কেবল দুঃখের সঙ্গে
নিত্যদিনের বসতি।
দুঃখের সঙ্গে মিতালী
দুঃখ-বেদনা এখন উনার নিত্য সঙ্গী। মূলতঃ আল্লাহ্ পাক-উনার উদ্দিষ্ট অনুগ্রহে তিনি পেয়েছিলেন একটি অনুসন্ধিৎসু মন এবং চিন্তাক্লিষ্ট মনন। স্বভাব জাতরূপে জীবনব্যাপী অপার অন্বেষায় ব্যাপৃত থেকেছেন তিনি। এই মুবারক অভ্যস্ততা ক্রমবর্ধিষ্ণুরূপে উনার ইন্তিকাল অবধি অক্ষুন্ন থেকেছে। অপ্রত্যাশিত দুঃখের আবরণে অপরিমেয় নিয়ামতরাজি উনার জীবনকে অর্থবহ করেছে। পরিপূর্ণ কামিয়াবী হাছিলের অনিবার্য প্রয়োজনে যে মধুর যন্ত্রনাকাতরতা আবশ্যক, আল্লাহ্ পাক মুক্তভাবে তা উনাকে দান করেছেন। বেদনার সঙ্গেঁ অপরিমেয় ছবরের সম্মিলন উনার কাঙ্খিত নিয়ামতের পরিবৃদ্ধি ঘটিয়েছে। বিরহ যাতনার সঙ্গেঁ উনার গভীর জানাজানি অতি শৈশবেই। এই মাদারজাত ওলী মাত্র পাঁচ বছর বয়স মুবারকে আম্মাকে হারিয়েছেন। আম্মার আদর-সোহাগ বঞ্চিত শিশু ওলী লালিত-পালিত হয়েছেন উনার মমতাময়ী বড় বোনের কাছে। বোনের স্নেহসিক্ত আদর উনার মনকে ভরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আম্মাকে হারানোর বেদনাভার ইন্তিকাল পর্যন্ত উনাকে আক্রান্ত করে রেখেছে। এতো ছোট বয়সে আম্মাকে ইন্তিকাল দানের মাধ্যমে দুঃসহ বিরহকাতরতায় আক্রান্ত করে নিয়ামত সম্ভারে পরিপূর্ণ করে তোলার লক্ষ্যে আল্লাহ্ পাক উনাকে একটি অনন্য সুন্নত পালনের মুবারক অনুষঙ্গ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও উনারকম বয়স মুবারকেই উনার স্নেহময়ী আম্মা হযরত আমিনা রদিয়াল্লাহু আনহা কে হারিয়ে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন। সুখ-দুঃখ এবং আনন্দ-বেদনার নিদারুণ দহনের আবহে আল্লাহ্ পাক উনার মুবারক মন ও মননে যে সীমাহীন ঐশ্বর্য ও অপরিমেয় ব্যাপ্তি গড়ে তুলেছিলেন, তা’তে ঠাঁই পাওয়া সৃষ্টির সূচনালগ্নের সার্বিক যোগ্যতা এবং পূঞ্জীভূত নিয়ামতরাজি পবিত্র রিসালতের দায়িত্ব পালনের সহায়ক হয়েছিল। অনুক্ষণ আনন্দ-বেদনার মহিমান্বিত পালাবদলে সৃষ্ট মধুরতম চিন্তা ও অনুসন্ধানে বিভোর হয়ে তিনি দায়েমীভাবে (নিরন্তর) আল্লাহ্ পাক-উনার প্রতি অনুগত থেকেছেন। মুবারক জীবনব্যাপী স্বভাব-সম্পৃক্ত অভ্যস্ততায় উনার আনন্দ-বেদনা, বিপদ-আপদ, রোগ-শোক, ক্ষুধা-তৃষ্ণা এবং সকল অনুকূল-প্রতিকুল পরিস্থিতি একাকার হয়ে গেছে। এমন আনন্দ, বেদনা, অনুকূল ও বৈরী পরিস্থিতির হিস্যাদানের মাধ্যমে উদ্দিষ্ট নিয়ামত সম্ভারে পরিপূর্ণ করে তোলার লক্ষ্যেই আল্লাহ্ পাক হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার মুবারক মানসভূমি তৈরী করেছেন। ওলীগণকে আল্লাহ্ পাক পরনির্ভরশীল করেননা। তাই অতি শৈশবকাল থেকেই নিদারুণ দুঃখ-বেদনার মুখোমুখী করে উনাকে স্বাবলম্বী, সাহসী ও আত্মপ্রত্যয়ী মহান ব্যক্তিত্বরূপে গড়ে তুলেছেন। (অসমাপ্ত)
আবা-৮৫
0 Comments:
Post a Comment