আমাদের সম্মানিত দাদা
হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার স্মরণে একজন কুতুবুজ্জামান উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান-
মনোনীত ওলীগণের মাধ্যমে আল্লাহ্ পাক যমীনে ইসলাম ধর্মের আবাদ করেন। সহীহ্ সমঝের উন্মেষ ঘটিয়ে মানুষকে যিকির-ফিকিরে অভ্যস্ত করে তাদের মাঝে সুন্নত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ওলীআল্লাহ্গণ নিয়ামক ভূমিকা পালন করে থাকেন। সাধারণ মানুষের বেশীরভাগই মূর্খতার অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকায় তাদের পক্ষে ইল্মে তাছাউফের নেয়ামত লাভে দায়িত্ব পালনের প্রশ্নটি অবান্তর। সূক্ষ্মদর্শী ওলীগণও মর্যাদার অনুক্রমানুসারে উনাদের খাস নিয়ামত প্রাপ্তির উপযুক্ত সময়, পরিমাণ, প্রকার ও পদ্ধতি সম্পর্কে এক রকম অনবহিত থাকেন। আরো বেশী করে নৈকট্য পেতে আল্লাহ্প্রেমে বিভোর বান্দার অন্তর্বেদনা আল্লাহ্ পাক-উনার পছন্দ। দায়েমীভাবে হয়রান-পেরেশান ওলীগণের অবিরাম কোশেশ ও বেদনাকাতর মানসিকতা কাঙ্খিত নৈকট্য লাভের সহায়ক। তাই তাছাউফের মর্মবাণীতে বলা হয়, অন্তরের বন্ধ বাতায়ন অনুসন্ধানী সতর্কতায় অনুক্ষণ খুলে রাখতে হবে, যেখানে আসমানী নিয়ামত অনায়াসে ঠাঁই পেয়ে যায়। প্রয়াস, প্রত্যাশা, পর্যবেক্ষণ, প্রতীক্ষা ও অনুসন্ধান পরস্পর সম্বন্ধযুক্ত। কামিয়াবী হাছিলের জন্য আল্লাহ্ পাক এবং উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষকে বিশুদ্ধ আক্বীদা এবং অনাবিল অন্তরে প্রাণপণ কোশেশ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু এক অর্থে এই কোশেশ মূল্যহীন। কারণ, প্রতীক্ষা, প্রয়াস ও অনুসন্ধিৎসা আল্লাহ্ পাক-উনার সদয় ইচ্ছার অনুরূপ না হলে কোশেশকারী শুধু ব্যর্থই হয়না, অনিবার্যরূপে আল্লাহ্ পাক-উনার বিরাগভাজন হয়ে পড়ে।
আল্লাহ্ পাক যখন দেখতে পান, বান্দার প্রাণান্তকর প্রয়াস ও প্রতীক্ষার অন্ত নেই, তখন তিনি
অযাচিত ও অভাবিত বিষয়গুলো দানের মাধ্যমে কোশেশকারী বান্দাকে পূর্ণতার শীর্ষ ধাপে
পৌঁছে দেন। আল্লাহ্ পাক-উনার অভিপ্রায় সম্পর্কে অবহিত না থাকায় এতো নিয়ামত পেয়েও
উন্মুখ কোশেশকারীর উৎকক্তা দূর হয়না। আল্লাহ্ পাক-উনার সঙ্গে স্থাপিত নিগূঢ়
সম্পর্কের প্রেক্ষিতে মাহবুব ওলীগণ উনাদের অজান্তেও অনেক নিয়ামত লাভ করে থাকেন।
সতর্ক থাকার এবং সচেষ্ট হবার প্রশ্ন এক্ষেত্রে আপেক্ষিক। ক্ষেত্রভেদে অবান্তরও
বটে। যোগ্যতার মাপকাঠি আল্লাহ্ পাক-উনার নিয়ন্ত্রণে থাকায়, কখন
যোগ্যতা লাভ হয় বান্দা তা জানতেই পারেনা। এই অনবহিতি, অতলান্ত
মনোবেদনায় আক্রান্ত ওলীগণকে অবিরাম কোশেশে উদ্বুদ্ধ করে। মূলতঃ সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
খতামুন্নাবিয়্যীন হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-উনার স্বতঃপ্রবৃত্ত দায়েমী যন্ত্রণাকাতরতার মোবারক হিস্যাদানে আল্লাহ্ পাক
উনার উদ্দিষ্ট নিয়মে মনোনীত ওলীগণকে অনুক্ষণ চিন্তাযুক্ত ও পেরেশান রাখেন।
অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার প্রয়োজনে আল্লাহ্ পাক ওলীগণকে উনাদের বেলায়েত সম্পর্কে
জ্ঞাত রাখলেও পরিণতি সম্পর্কে নিশ্চিত ও নিশ্চিন্ত রাখেননা। মনোবেদনার এমন দুঃসহ
পর্যায়ে আল্লাহ্ পাক-উনার আশেকগণ হিম্মতহীন হয়ে পড়েন। এরূপ অবস্থায় অবিরাম কোশেশ ও
অনুসন্ধান অপেক্ষা আল্লাহ্ পাক-উনার প্রতি নির্ভরশীলতা ও প্রতীক্ষা বড় হয়ে দেখা
দেয়। একান্তভাবে আল্লাহ্ পাক-উনার প্রতি পরিপূর্ণ আস্থা ও নির্ভরশীলতা ছাড়া অন্য
কোন উপায়-উপকরণের প্রতি অনিচ্ছাকৃতভাবেও মনোযোগী হলে বেলায়েত ও বন্ধুত্ব স্থির
থাকেনা। সকল আয়োজন বিলীন হয়ে কেবলমাত্র পূর্ণ মনোযোগ, প্রত্যয়
ও প্রতীক্ষা খাস ওলীগণের অগ্রযাত্রা ও উত্তরণ অব্যাহত রাখে। একই কারণে পরম
নৈকট্যপ্রাপ্ত আল্লাহ্ পাক-উনার মাহবুব ওলী হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর
রহমান আলাইহিস সালাম-উনার জাগতিক সকল আয়োজনের প্রয়োজন আল্লাহ্ পাক গৌণ করে
তুলেছেন। এখন আল্লাহ্ পাকই উনার একমাত্র লক্ষ্য। এখন কেবল আল্লাহ্ পাক ও উনার
প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছল্লাম-উনার আদেশ প্রতিপালনের প্রয়োজনে নতুন
মুর্শিদ অনুসন্ধানে কোশেশ করা উনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। নইলে নিবিষ্ট মনে
প্রতীক্ষায় থাকাই উনার মোবারক মন ও মননের দাবী।
প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির অনেক দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে মাদারজাদ ওলী হযরতুল আল্লামা
সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম এখন নিরুদ্বেগ। রহস্যাবৃত
মুহব্বত-মারিফাতের গূঢ়তত্ত্ব উপলব্ধিতে তিনি পরিপূর্ণরূপে আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে উঠেছেন
যে, মনোবেদনার দায়েমী আবর্তে নিবদ্ধ করার মাধ্যমে নতুন একজন মুর্শিদ ক্বিবলার
সন্নিধানের মোবারক উছীলায় আল্লাহ্ পাক উনাকে উনার কাঙ্খিত কামিয়াবীর শীর্ষ সোপানে
উত্তরণ ঘটাবেন। মনোনীত ওলীগণকে অজ্ঞাত বিষয় জানিয়ে দেয়ার উদ্দিষ্ট নিয়মে আল্লাহ্
পাক এই মাহবুব ওলীকে ইতোমধ্যে উনার নতুন মুর্শিদ ক্বিবলার পরিচিতি দান করেছেন।
নতুন মুর্শিদের সন্ধান পেয়ে তিনি এতমিনান। এখন উনার সন্নিধানে গিয়ে বাইয়াত হওয়া
এবং মোবারক সোহ্বত এখতিয়ারের আনুষ্ঠানিকতার অপেক্ষা মাত্র। (অসমাপ্ত)
আবা-৮৭
0 Comments:
Post a Comment