আমাদের সম্মানিত দাদা
হুজুর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম-উনার স্মরণে একজন কুতুবুজ্জামান-উনার দিদারে
মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-
আনুষ্ঠানিক খিলাফত মুবারক লাভ-
বাইয়াত হবার পর ইতোমধ্যে দশ বছরেরও অধিক সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। মুর্শিদ ক্বিবলার মুবারক সন্নিধানে হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার মূল্যবান সময়গুলোর অতিবাহনে অর্জিত হয়েছে কাঙ্খিত মহামূল্যবান নিয়ামত। মুর্শিদ ক্বিবলার নৈকট্যসুধায় আল্লাহ্ পাক-উনার সঙ্গে স্থাপিত হয়েছে এক অবিচ্ছেদ্য সংযোগ। এই সংযোগের ক্রমবর্ধিষ্ণু মাত্রা জীবন-মরণের ভেদরেখা মুছে দিয়েছে। যে প্রাণের আঁকা মুর্শিদ ক্বিবলার ছোহ্বতে এতো অর্জন, মন বলে উনার কাছে পাবার আরো বাকী আছে। কিন্তু সে প্রাপ্তির প্রকার ও পরিধি কেমন, সে ভাবনায় হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি কখনো কখনো উদ্বেল হয়ে পড়েন। সত্য যে, মুর্শিদের বখশ্শি-উনার তুলনায় মুরীদের জীবনব্যাপী সামগ্রিক নিবেদন একান্তই অপ্রতুল। গ্রহীতার উৎকর্ষতার চেয়ে দাতার প্রাচুর্য ও বদান্যতা বিশাল। তাই ওলীগণের কৃপা ও নেক দৃষ্টির মুবারক উছীলায় অনুৎকৃষ্ট মুরীদও অবলীলায় শীর্ষ মন্জিলে পৌঁছে যায়। তবে হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার উৎকর্ষতা এবং আপন মুর্শিদ ক্বিবলার সঙ্গে স্থাপিত সম্পর্ক ও সংযুক্তির প্রক্রিয়া ও মাত্রা ভিন্নতর। উপলদ্ধির গভীরতা, ইবাদত-বন্দেগী ও যিকির-ফিকিরের নিরবচ্ছিন্নতা, আত্মসমর্পণজনিত নিবেদন ও একাগ্রতা এবং মুর্শিদ ক্বিবলার “জাত” (সত্তা)-উনার সঙ্গে আপন জাত বা সত্তার সংলগ্নতায় নিয়ামতের প্রাপ্তিযোগ অনিঃশেষ। উত্তরণের ক্রমোন্নতিতে অনবরত কামিয়াবীর নবতর সোপান রচিত হচ্ছে। সবইতো মুর্শিদ ক্বিবলার মহান দান। মনে হয় মুর্শিদ ক্বিবলার সঙ্গে যুগযুগান্তরের পরিচয়, কতো জনমের জানাজানি! আরো কতো নিয়ামত যে পাবার বাকী আছে, তা কেবল মুর্শিদ ক্বিবলাই জানেন।
খলিফাতুল্লাহ,
ইমামুল হুদা, কুতুবুল আলম, নায়েবে
মুজাদ্দিদ, শাইখুল ইসলাম,
আলহাজ্ব, হযরত মাওলানা আবু নছর মুহম্মদ আবদুল হাই ছিদ্দীকী ফুরফুরাবী
রহমতুল্লাহি আলাইহি এখন বার্ধক্যে উপনীত হয়েছেন। তিনি এখন পরপারের ডাক শুনতে পান।
এক জীবনে উনার সম্পাদিত কাজের পরিমাণ ও পরিধি কতো ব্যাপক! তবু মনে হয় উদ্দিষ্ট কাজ
সমাপ্ত করা হলো না। কতো কাজ বাকী রয়ে গেল। অতৃপ্তিবোধের অতলান্ত বেদনা তাঁকে
অনুক্ষণ কষ্ট দেয়। মহান আল্লাহ্ পাক-উনার কী ইচ্ছে! এমন বেদনাদহনে তিনি উনার
মাহবুব ওলীগণকে নিগূঢ় নৈকট্যসুধায় কামিয়াবী দান করেন। দিদারে মাওলার দিকে
প্রস্থানের আগে উনার জীবন মুবারকের আয়াসসাধ্য আয়োজনে লব্ধ অমূল্য সঞ্চয় (খাছ
নিয়ামত) বিশিষ্ট কাউকে সোপর্দ করা প্রয়োজন। এ জন্য উপযুক্ত খলীফা মনোনীত করা
আবশ্যক।
আওলিয়া-ই-কিরামগণের (রহমতুল্লাহি আলাইহিম) মুবারক জীবন চরিত পাঠে জানা যায়, ইন্তিকালের
পূর্বে সকলেই উনাদের খাছ মুরীদকে (নিয়ামত ধারণ ও বহনের জন্য পরিপূর্ণরূপে উপযুক্ত)
বিশেষ নিয়ামত সোপর্দ করে যান। তবে উনার ব্যতিক্রমও রয়েছে। কোন কোন ওলীআল্লাহ্
বিশেষ কারণে উনাদের নিয়ামতের নির্যাস কাউকে নিঃশেষে দান না করে কবরে উনাদের লাশ
মুবারকের সঙ্গে দাফন হবার কথা উচ্চারণ করেছেন। অনেক কারণের মধ্যে যোগ্যতম মুরীদ না
পাবার বিষয়টিই এক্ষেত্রে মূখ্য বলে মনে
করা যায়। মূল যা বিষয় তাহলো, আল্লাহ্ পাক প্রদত্ত বিশেষ নিয়ামত প্রত্যেক হক্ব সিলসিলার
উর্ধ্বতন ওলী আল্লাহ্ কর্তৃক উনাদের অধস্তনে সোপর্দ করণের মাধ্যমে যমীনে ত্বরীকত
প্রবাহমান আছে। যোগ্যতার অনুক্রম অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে অধস্তনে নিয়ামতের নির্যাস
হস্তান্তরের এই অবধারিত প্রক্রিয়াই ত্বরীকতের প্রাণ। যুগেযুগে, কালেকালে
সিলসিলা পরম্পরায় খাছ নিয়ামতের নির্যাস হস্তান্তরের এই প্রবাহমানতাই তাছাউফ চর্চার
মাধ্যমে আল্লাহ্ পাক এবং উনার প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার
মুহব্বত ও মারিফাত হাছিলের ক্ষেত্রে সঞ্জীবনী শক্তি। এই প্রক্রিয়া চালু আছে বলেই
প্রবল বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও ক্বিয়ামত পর্যন্ত যমীনে ইসলাম ধর্মের প্রকৃত আবাদ
বহাল থাকবে। একই পদ্ধতির ধারাবাহিকতায় প্রাণের আঁকা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার মুবারক
জীবনের সঞ্চিত নিয়ামতের নির্যাস সোপর্দ করার জন্য প্রিয়তম মুরীদ, ওলীয়ে
মাদারজাদ, কুতুবুজ্জামান আওলাদে রসূল, আলহাজ্ব, হযরতুল আল্লামা শাহ্ ছুফী সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান
আলহাসানী, ওয়াল হুসাইনী,
ওয়াল কুরাঈশী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে বিশিষ্ট খলীফা মনোনীত
করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখন কেবল আল্লাহ্ পাক-উনার সদয় ইচ্ছায় আনুষ্ঠানিকতার
অপেক্ষা মাত্র। (অসমাপ্ত)
আবা-৯৪
0 Comments:
Post a Comment