আমাদের সম্মানিত দাদা
হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার স্মরণে একজন কুতুবুজ্জামান উনার দিদারে
মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-
আনুষ্ঠানিক খিলাফত মুবারক লাভ-
এই আলোচনার গুঞ্জন মুর্শিদ ক্বিবলা শুনলেন এবং মুরীদগণের মনোভাব বুঝলেন। অতঃপর
তিনি বললেনঃ “দেখ, তোমরা অনেকদিন ধরে আমার মুবারক ছোহ্বতে থাকছো একথা সত্যি। কিন্তু তোমরা এখনো
ভিজে কাঠের মতো। আর্দ্রতা দূর হতে আরো সময় প্রয়োজন। ভিজে কাঠে আগুন জ্বলেনা। মূল
নিয়ামতের নির্যাস ধারণ ও বহনের জন্য যোগ্যতা প্রয়োজন। হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া
রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার বিষয়টি ভিন্ন। আমার নেক নজরে আসার পর পরই তিনি শুকিয়ে
গেছেন। আর্দ্রতা রোধ বা দূর করার জন্য অপেক্ষার প্রয়োজন হয়নি। আগুন দেয়ার সঙ্গে
সঙ্গে তিনি জ্বলে উঠেছেন। তাই মহান আল্লাহ্ পাক-উনার সদয় অভিপ্রায় অনুযায়ী উনাকে আমি
প্রধান খলীফা অভিধায় সম্মানিত করেছি। সঙ্গে সঙ্গে নিয়ামতের নির্যাসও আমি উনাকে দান
করেছি।”
ওলীআল্লাহ্গণ মুরীদের পথের প্রতিবন্ধকতা দূর করেন এবং উনাদেরকে নিজ আশ্রয়ে
রাখেন। এ আশ্রয় মুরীদকে আল্লাহ্ পাক-উনার খাছ রহমত, মুহব্বত ও মারিফাতের সঙ্গে
স্থায়ীভাবে সম্পৃক্ত করে দেয়। মুর্শিদের ইচ্ছার সঙ্গে মুরীদের ইচ্ছার নিবিড় সংযোগ
স্থাপিত না হলে উদ্দেশ্য অপূর্ণই থেকে যায়। এরূপ মুবারক সংযোগ বিহনে অথবা
বিচ্ছিন্নতায় সালেকের জীবনব্যাপী আয়াসসাধ্য আয়োজন, চেষ্টা, তদবীর, কোশেশ ও
আমল পন্ডশ্রমে পরিণত হয়। হৃদয়ের অভ্যন্তরভাগ রওশন হলেই বুকের সকল বন্ধ দরজা
উন্মুক্ত হয়। এমন উন্মুক্ত ও অনাবিল মানসসরোবরেই আল্লাহ্ পাক-উনার মুহব্বত ও
মারিফাতের পদ্মকলি ফোটে। অবিরাম প্রাপ্তিযোগের এ পর্যায়ে একজন মানুষ মুরীদ থেকে
মুরাদে এবং পরজন থেকে আপনজনে গণ্য হয়। তখন কাঙ্খিত উপায়ে আল্লাহ্ পাক-উনার
নৈকট্যের মন্জিল ক্রমশঃ নিকটবর্তী হতে থাকে। ওলীআল্লাহ্গণের মুবারক সন্নিধান
ব্যতিরেকে অন্তর পরিশুদ্ধ হবার অন্য কোন বিকল্প ব্যবস্থা নেই। তাই কেবলমাত্র আপন
অভিপ্রায়, প্রয়াস ও কোশেশে কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, অন্যান্য কিতাবাদী অধ্যয়ন এবং
তাছাউফের জটিল ও গূঢ় রহস্য সংবলিত বিবরণাদি মুখস্থ করে নিলেই ছহীহ্ সমঝ্ অর্জিত
হয়না। ইছলাহ্ অর্জনের মাধ্যমে কামিয়াবী হাছিলের জন্য কামিল মুর্শিদের সাহচর্য ও
কৃপাদৃষ্টি অত্যাবশ্যক। ওলীআল্লাহ্গণের মুবারক অন্তর্দৃষ্টি মুরীদের হৃদয়ে রেখাপাত
করলেই ধর্মজ্ঞানের উদ্ভব হয়।
একজন মুর্শিদের আশ্রয় ও তত্ত্বাবধানে থাকা সকল মুরীদের অবস্থান ও পর্যায়
একীভূত। আর তাই আমভাবে নিয়ামত হাছিল ও মর্যাদায় সকল মুরীদই সমান। সাধারণভাবে উনার
কোন ব্যতিক্রম দেখা না গেলেও মুরীদের যোগ্যতা ও অবস্থাভেদে খাছ নিয়ামত হাছিলের
ক্ষেত্রে অবধারিতভাবে পার্থক্য সূচিত হয়ে থাকে। আল্লাহ্ পাক-উনার সন্তুষ্টি
অর্জনের লক্ষ্যে খাছ নিয়ামতের জন্য খাছ অন্তঃকরণ, কাম্য পর্যায়ের উপলব্ধি, শানিত
অনুভূতি, নিঃশর্ত আনুগত্য ও নিবেদন অপরিহার্য। ইখলাছবিহীন ইবাদত-বন্দেগী ও আমলের
মাধ্যমে খাছ নিয়ামত হাছিলের আশা কেবল দূরাশা মাত্র। অন্তর ইসলাহ্ না হওয়া পর্যন্ত
আল্লাহ্ পাক-উনার সন্তুষ্টি হাছিলতো দূরের কথা, বান্দার নিয়তই পরিশুদ্ধ হয়না এবং
কোন আমলও কবুল হয়না।
মুবারক জীবনব্যাপী আয়াসসাধ্য আয়োজনে লব্ধ নাজ-নিয়ামত সোপর্দ করার লক্ষ্যে
উপযুক্ত পাত্র নির্বাচনে ওলী আল্লাহ্গণ সংগত কারণে গভীর পর্যবেক্ষণ ও সূক্ষ্ম
যাচাই-বাছাই করে থাকেন। জীবন সায়াহ্নে এসে অথবা আল্লাহ্ পাক-উনার ইচ্ছা অনুযায়ী যে
কোন সময়ে নিয়ামত সোপর্দ করণে একজন মুর্শিদ অধীর আগ্রহ ও অনুসন্ধানে যোগ্যতম
মুরীদের অপেক্ষায় থাকেন। ওলীয়ে মাদারজাদ, ছহেবে কাশ্ফ ওয়া কারামত, ফখরুল
আউলিয়া, ছূফীয়ে বাতিন,
ছহেবে ইসমে আযম, কুতুবুজ্জামান, আওলাদুর
রসূল, আলহাজ্ব, হযরত মাওলানা শাহ্ ছূফী শায়খ সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহিস
সালাম উনাকে নিবিড় করে কাছে পেয়ে তাঁর প্রাণের আকাঁ মুর্শিদ ক্বিবলার দীর্ঘ
প্রতিক্ষার অবসান হওয়ায় তিনি এখন পরিতৃপ্ত। কারণ, মুর্শিদ ক্বিবলার খুঁজে পাওয়া
প্রিয়তম মুরীদ হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম
অন্তরের বিশুদ্ধতায়,
ইল্মের গভীরতায়, আনুগত্য ও নিবেদনের পরীক্ষায়, উপলব্ধির
উৎকর্ষতায়, অপ্রয়োজনীয় আড়ম্বরহীনতায় এবং ইবাদত-বন্দেগী, আমল ও যিকির-ফিকিরের একাগ্রতায়
অতুলনীয়। (অসমাপ্ত)
আবা-৯৯
0 Comments:
Post a Comment