আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম
উনার স্মরণে একজন কুতুবুজ্জামান উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান –
আল্লাহ পাক-উনার মনোনীত ওলীগণ স্বভাব ও আচরণে আরোপিত প্রভাব এবং অতুলনীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয়ে থাকেন। ওলীয়ে মাদারজাদ, কুতবুজ্জামান, আওলাদে রসূল, আলহাজ্ব, হযরতুল আল্লামা, সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালামও ছিলেন সুমহান ব্যক্তিত্ব ও ব্যাপক প্রভাব সম্পন্ন এক প্রত্যয়ী পুরুষ।
প্রজ্ঞাবান, দৃঢ়চেতা, অকুতোভয়, সুন্নত অনুকরণ ও অনুসরণের
অতুলনীয় দৃষ্টান্ত, আল্লাহ্ পাক-উনার ধ্যান-খেয়াল, মুরাকাবা-মুশাহিদা, মুজাহিদা এবং ইবাদত-বন্দেগীতে অবিরাম মশগুল এই সূক্ষ্মদর্শী ওলী বাহ্যিক
দৃষ্টিতে জালালী তবিয়তের হলেও অন্তর্গতভাবে ছিলেন জামালে পরিপূর্ণ। জালাল ও
জামালের অভাবিত সমন্বয়ে হৃদয়ের কোমলতা ও নির্মলতায় নির্মিত হয়েছিল উনার
মাধুর্যমন্ডিত চরিত্র মুবারক। একমাত্র সূক্ষ্মদর্শী মানুষের পক্ষেই উনাকে উপলদ্ধি
করা সম্ভব ছিল।
প্রাণের
আঁকা মুর্শিদ ক্বিবলা হযরত মাওলানা আবু নছর মুহম্মদ আব্দুল হাই ছিদ্দীকী
রহমতুল্লাহি আলাইহি ফুরফুরা শরীফ থেকে ঢাকাস্থ মীরপুর দারুস্সালাম খানকা শরীফে এলে
তিনি উনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যেতেন। অন্যান্য মুরীদগণও যেতেন। খানকা শরীফে উপস্থিত
সকলেই সাক্ষাতের জন্য মুর্শিদ ক্বিবলার সদয় অনুমতি প্রার্থনা করতেন। অনুমতি লাভের
পর সভয়ে কাছে গিয়ে সবাই কদমবুছি করে ফয়েজ ও তাওয়াজ্জুহ্ হাছিল করতেন। এই নিয়মের
ব্যতিক্রম ছিলেন কেবলমাত্র হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান
আলা্ইহিস সালাম। খানকা শরীফ অভ্যন্তরে মুর্শিদ ক্বিবলার মুবারক সান্নিধ্যে সরাসরি
উপস্থিত হতে উনার জন্য অনুমতি ছিল। এছাড়া, অনেক সময় মুর্শিদ ক্বিবলা ভেতর থেকে খানকা শরীফের
দরজায় এসে সহাস্যে এই মাহবুব মুরীদের সঙ্গে আলিঙ্গন করতেন। আলিঙ্গন শেষে তিনি অবনত হয়ে মুর্শিদ ক্বিবলাকে কদমবুছি করে
নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকতেন এবং লদ্ধ নিয়ামতের জন্য প্রাণভরে আল্লাহ্ পাক-উনার শুকরিয়া
আদায় করতেন।
হযরতুল
আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলা্ইহিস সালাম-উনার অনুরূপ গভীর সম্পর্ক
মাদারজাত ওলী, শাইখুত ত্বরীকত, সুলতানুল আরেফীন, গাউসুল আযম, আলিমে হাক্কানী, পীরে রব্বানী, কুতুবুল আলম, ওলীয়ে কামিল, ন’হুজুর
ক্বিবলা, শাহ ছূফী, হযরত মাওলানা মুহম্মদ
নাজমুস্ সায়াদাত ছিদ্দীকী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার সঙ্গেও ছিল।
নায়েবে
মুজাদ্দিদ, কুতুবুল
আলম, হযরত
মাওলানা আবু নছর মুহম্মদ আব্দুল হাই ছিদ্দীকী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার
নিকট বাইয়াত হবার অব্যবহিত পর হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান
আলা্ইহিস সালাম, কুতুবুল আলম, হযরত মাওলানা মুহম্মদ নাজমুস্ সায়াদাত ছিদ্দীকী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি
আলাইহি-উনার মুবারক হাতে ঢাকাস্থ গেন্ডারিয়া খানকা শরীফে বাইয়াত হন। এ বিষয়ে
যথাস্থানে সবিস্তারে আলোকপাত করা হবে।
বর্তমান
আলোচনার প্রয়োজনে এখানে শুধু এটুকু বলা যে, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস
সালামনিয়মিতভাবে উনার প্রাণের আঁকা মুর্শিদ ক্বিবলা কুতুবুল আলম, হযরত মাওলানা মুহম্মদ
নাজমুস্ সায়াদাত ছিদ্দীকী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার মুবারক সাক্ষাতে
গেন্ডারিয়াস্থ খানকা শরীফে যেতেন। খানকা শরীফের দরজা পর্যন্ত যাওয়া মাত্র বেশীরভাগ
সময়ে মুর্শিদ ক্বিবলা ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতেন। হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর
রহমান আলা্ইহিস সালাম-উনার কামিয়াবীর পূর্ণতা ও জালালী তবিয়তের স্তর এমন মাত্রায়
ছিল যে, উনার
আগমনের সংবাদ অন্যান্য মুরীদগণের নিকট শুনে, বিশেষতঃ কাশ্ফের মাধ্যমে পূর্বেই অবহিত থেকে
মুর্শিদ ক্বিবলা খানকা শরীফের দরজায় এসে সহাস্যে মাহবুব মুরীদকে আলিঙ্গন করতেন এবং
ভেতরে নিয়ে যেতেন। তাসাউফ-উনার গূঢ় রহস্য আলোচনা করতে গিয়ে এসব বিষয় হযরতুল
আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালামনিজ মুখে অনেকবার বলেছেন।
মুর্শিদ ও
মুরীদের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে উভয়ের গভীর আকর্ষণ, অন্তরের জানাজানি, পারস্পরিক যোগাযোগ ও
নিয়ামত লেনদেনের প্রকৃতি ও পরিধির এমন অবিস্মরণীয় দৃষ্টান্ত বিরল নয়। হযরত
মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী, শায়খ আহমদ ফারুকী সিরহিন্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার সঙ্গে উনার মুর্শিদ
ক্বিবলা হযরত বাকী বিল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার গভীর জানাজানি, পারস্পরিক মূল্যায়ণ ও
নিয়ামত আদান-প্রদানের ক্ষেত্রেও সৃষ্ট এ ধরনের অনুপম দৃষ্টান্ত সকলের জন্য
অনুসরণীয় হয়ে আছে। (অসমাপ্ত)
আবা-৯২
0 Comments:
Post a Comment