আমাদের সম্মানিত দাদা
হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার স্মরণে একজন কুতুবুজ্জামান উনার দিদারে
মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-
আনুষ্ঠানিক খিলাফত মুবারক লাভ-
আল্লাহ্ পাক-উনার রহমতের অফুরন্ত ধারায় জগৎ-সংসার ও সমুদয় কায়েনাত সঞ্জীবিত ও চলমান আছে। জ্বীন-ইনসান উদ্দিষ্ট নিয়মে অবলীলায় আমভাবে রহমত ও নিয়ামতের ভাগীদার। আল্লাহ্ পাক-উনার এই রহমত ও করুণা অবারিত। কিন্তু খাছ রহমত, অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক-উনার পরিপূর্ণ সন্তুষ্টি ও পরম নৈকট্য হাছিলের জন্য বান্দার পূর্ণ ঈমান, নেক আমল এবং খুলুছিয়তের উৎকর্ষতা অপরিহার্য। আল্লাহ্ পাক নিজ অভিপ্রায় ও অনুগ্রহে মনোনীত ওলীগণের মাধ্যমে দুনিয়ায় উনার রহমত বর্ষণ করে থাকেন। এই প্রক্রিয়ায় একজন ওলী আল্লাহ্-উনার মুবারক তত্ত্বাবধান ও নজরদারীতে মুরীদের দুনিয়া বিমুখ যে অনাবিল মানসভূমি তৈরী হয়, সেখানেই আল্লাহ্ পাক-উনার খাছ রহমত ও নিয়ামত ঠাঁই পেয়ে থাকে। ক্রমান্বয়ে নির্ধারিত নিয়ামতের পরিবৃদ্ধিতে মুরীদের কামিয়াবীর স্তর পূর্ণতা লাভ করে। আল্লাহ্ পাক-উনার রহমতের অবারিত ধারায় সৃষ্টিকুল প্রাণময় ও প্রবাহমান রাখায় নৈকট্যপ্রাপ্ত ওলীগণই নিয়ামক মাধ্যম। এই মর্মে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, রহমতুল্লিল আলামীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ্, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “ওলীগণের উছীলায় সৃষ্টিজগৎ সাহায্য পায়। উনাদের উছীলায় বৃষ্টি হয়। উনাদের বরকতে মানুষ রিযিকপ্রাপ্ত হয়। নামায, রোযার দরুন উনারা (ওলী আল্লাহ্গণ) এই মর্যাদালাভ করেননা, বরং উনাদের অন্তরের প্রশান্তি এবং নফ্সের বদান্যতা দ্বারাই এই নিয়ামত হাছিল হয়ে থাকে।”
আল্লাহ্ পাক-উনার মহান ইচ্ছায় যে মুরীদের জন্য যতটুকু নাজ-মিয়ামত নির্দিষ্ট
থাকে, মুর্শিদ ক্বিবলার মাধ্যমে তাই সে পেয়ে থাকে। কখনো উনার ব্যত্যয় ঘটেনা। কার
স্পর্ধা এই বন্টন ব্যবস্থায় লব্ধ নিয়ামতের বিরুদ্ধে “টু” শব্দটি
করে! তবুও যুগে-যুগে,
কালে-কালে আল্লাহ্ পাক-উনার নির্দেশে ওলীগণ কর্তৃক প্রধান ও
বিশিষ্ট খলীফা মনোনয়ন নিয়ে কখনো কখনো কথা উঠেছে। একই মুর্শিদ ক্বিবলার মুবারক হাতে
বাইয়াত মুরীদগণের আলাপচারিতায় ক্ষণিকের জন্য হলেও স্থান পেয়েছে খলীফা মনোনয়ন ও
নিয়ামত সোপর্দ করণের একান্ত গোপন ও স্পর্শকাতর বিষয়টি। প্রেক্ষিত কারণেই আমাদের
আলোচ্য ওলীয়ে মাদারজাদ,
মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, আফজালুল ইবাদ, ফখরুল
আউলিয়া, কুতুবুজ্জামান,
আওলাদুর রসূল, আলহাজ্ব, শাহ্
ছূফী, হযরতুল আল্লামা,
সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনাকে উনার
প্রাণের আঁকা মুর্শিদ ক্বিবলা কর্তৃক বিশিষ্ট খলীফা মনোনয়ন এবং নাজ-নিয়ামত সোপর্দ
করণে সমৃদ্ধ করে তোলা সম্পর্কে কোন মহল বা কেউ কিছু ভাবছে কিনা কে জানে! যেমন, সুলত্বানুল
আউলিয়া, মাহবুবে ইলাহী,
কুতুবুল আলম, ফক্বীহুল উম্মত, রঈসুল
মুহাদ্দিসীন হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে নিয়ে উনার সময়কালে
কথা উঠেছে। তিনি উনার মহান মুর্শিদ ক্বিবলা সুলতানুল আরিফীন, শাইখুল
ইসলাম, আমীরুল মুজাহিদীন,
ইমার্মু রাসিখীন, ইমামুল আইম্মা, হাবীবুল্লাহ্, হযরত
শায়খ ফরিদুদ্দীন মাসউদ গন্জেশকর রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার মুবারক ছোহ্বতে মাত্র
দশমাস ছিলেন। মুর্শিদ ক্বিবলার উছীলায় এই স্বল্প সময়ের মধ্যেই আল্লাহ্ পাক-উনার
সঙ্গে হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার পরম নৈকট্যের দ্বার অবারিত
হয়। প্রাণের আঁকা মুর্শিদ ক্বিবলা হযরত শায়খ ফরিদুদ্দীন মাসউদ গন্জেশকর
রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এই প্রিয়তম মুরীদকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধান খলীফা মনোনীত
করলেন এবং নিয়ামতের নির্যাস দান করলেন।
হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহিকে খিলাফত দান এবং নিয়ামত সোপর্দ
করণের এই অনুপম ঘটনার তাৎপর্য মুরীদগণ আপন আপন সমঝ্ অনুযায়ী বুঝে নিলেন। নিজ নিজ
অনুভব ও অভিজ্ঞতার আলোকে অনেকে বিষয়টির বিশ্লেষণ করলেন। কাউকে কাউকে বলতে শোনা গেল, “মুর্শিদ
ক্বিবলার মুবারক সন্নিধানে আমরা কতকাল ধরে থাকলাম! জীবনের আয়াসসাধ্য আয়োজনে ত্যাগ
ও তিতিক্ষার দীক্ষা নিলাম। মুর্শিদ ক্বিবলার মুবারক তত্ত্বাবধানে শরীয়ত ও তাছাউফের
অনুশাসনে দুনিয়া বিরাগী মানসিকতায় আখিরাতের জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করলাম। কিন্তু
আমাদের কাম্য বস্তু তেমন করে পাওয়া হলোনা, যেমন করে পেলেন হযরত নিযামুদ্দীন
আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি এলেন, মাত্র দশ মাস থাকলেন এবং খিলাফত ও
নিয়ামতের নির্যাস নিয়ে গেলেন।” (অসমাপ্ত)
আবা-৯৮
0 Comments:
Post a Comment