ওলীয়ে
মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ্ দা’ওয়াত, আফযালুল ইবাদ,
ছহিবে কাশফ্ ওয়া কারামত, ফখরুল আওলিয়া, ছূফীয়ে
বাতনি, ছহিবে ইস্মে আ’যম, লিসানুল হক্ব,
গরীবে নওেয়াজ, আওলাদে রসূল, আমাদের
সম্মানিত দাদা হুযূর ক্ববিলা আলাইহিস সালাম উনার স্মরণে
একজন কুতুবুয যামান উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান-
খিলাফত ও নিয়ামতলাভের পর নবতর উপলব্ধির জাগরণে আত্মনিমগ্নতা -
বাইয়াত হবার তাৎপর্য এবং খিলাফতলাভ ও নিয়ামত প্রাপ্তির অভিজ্ঞতা নতুন নয়। উনার পূর্বেও দু’জন মুর্শিদ ক্বিবলার মুবারক সান্নিধ্যে হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম-উনার নিয়ামতের পরিবৃদ্ধি ঘটেছে। কিন্তু আজকের পাওয়ার প্রকৃতি ও পরিধি ভিন্ন। পূর্বের প্রাপ্তি ও অভিজ্ঞতা এবং বর্তমানের কামিয়াবী ও লব্ধ নিয়ামতের নিয়ামক নির্যাসে পরিপূর্ণরূপে জানা গেল যে, আল্লাহ্ পাক-উনার সঙ্গে একজন ওলীর নৈকট্য স্থাপনের মাত্রা ও ব্যাপ্তি সীমাহীন। নিয়ামতের বিচিত্র ক্রমধারা এবং কামিয়াবীর আপেক্ষিক পূর্ণতায় আল্লাহ্ পাককে আরো নিগূঢ়ভাবে পাবার আশা ও প্রয়োজন কখনো ফুরায়না। আল্লাহ্ পাক এক। কিন্তু উনার নৈকট্য হাছিলের আয়োজন, আকুতি ও প্রকৃতি বহুধা বিভক্ত। সবার পথ ও প্রয়াস এক নয়, যদিও ওলীগণের মহিমাময় কামালত পূর্ণতা ও পরিপুষ্টিলাভ করে মহামিলনের অভিন্ন মোহনায়। প্রত্যাশা কখনো প্রাপ্তির সমান্তরাল হয়ে উঠেনা। তাই আল্লাহ্ প্রেমে মশগুল সকল ওলীগণই বিচ্ছেদ যাতনায় কাতর। যাঁর নৈকট্য যতো বেশী, উনার দুঃখবোধ ততো গভীর। নিয়ামত পরিবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ্ পাক-উনার মাহবুব ওলীগণের অন্তর মুবারকে ক্রমান্বয়ে বেড়ে উঠা অচেনা যন্ত্রনা অনুক্ষণ উনাদেরকে দগ্ধ করে। ইন্তিকালের পর জান্নাতে আল্লাহ্ পাক-উনার দিদারলাভ না হওয়া পর্যন্ত এ যন্ত্রনার আর অবসান হয়না। তাঁদের স্বভাব সঞ্জাত অপরিমেয় দুঃখবোধের অপর নাম “পরিপূর্ণ কামালত।” কারণ, কামিয়াবী লাভে অন্তরের দুঃখবোধ নিয়ামক নিয়ামত হিসাবে ধার্য হয়।
আল্লাহ্ পাক-উনার “জাত” ও “ছিফাত” উপলব্ধির সর্বোচ্চ ও সর্বোত্তম মাকামে অধিষ্ঠিত থেকেও অন্তর মুবারকের সহজাত উদ্বেলতা, চিন্তাযুক্ত অপার অন্বেষা, মোরাকাবার অনুপম তন্ময়তা এবং স্বতঃপ্রবৃত্ত মধুর যন্ত্রনাকাতরতায় অনুক্ষণ নিবিষ্ট সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, সাইয়্যিদুল কাওনাইন, ফখ্রে দু’আলম, মাশুকে মাওলা, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবে প্রাণের আকুতি জানিয়েছেন- “হে পরওয়ারদিগার আল্লাহ্ পাক! আপনার সম্পর্কে আমার বিস্ময়কে আরো বৃদ্ধি করে দিন।” আল্লাহ্ পাক-উনার মাহবুব ওলীগণ আল্লাহ্ পাক-উনারই উদ্দিষ্ট ব্যবস্থায় উনার প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার মুবারক স্বভাব-সম্পৃক্ত দুঃখবোধ ও যন্ত্রনাকাতরতার অনিবার্য ওয়ারিশ হয়ে থাকেন। এমন মধুর যন্ত্রনায় আক্রান্ত না হলে ওলীআল্লাহ্ অভিধায় বিবেচিত হবার আশা কেবল দূরাশাই থেকে যায়।
খিলাফত ও
নিয়ামতের নির্যাস দানের মাধ্যমে ওলীয়ে মাদারজাদ, আওলাদে রসূল, হযরতুল
আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালামকে আল্লাহ্ পাক নিগূঢ়
নৈকট্যে তাঁকে কামিয়াবীর শীর্ষ সোপানে অধিষ্ঠিত করেছেন। কামিয়াবীর একান্ত অনুষঙ্গ
হিসাবে আপন হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সুন্নত মুতাবিক আল্লাহ্ পাক
উনার মনোবেদনা পূর্বের তুলনায় আরো তীব্র করে তুলেছেন। এই মধুর বেদনা, দুঃখবোধ
ও যন্ত্রনাকাতরতা শিশু-কৈশোরকাল থেকেই উনার মুবারক জীবনের সঙ্গী। কিন্তু বর্তমানের
আনন্দ, বেদনা, আগ্রহ, আকুতি, বিনয়, বিস্ময় ও দুঃখের প্রকৃতি ও পরিধি পূর্বের অভিজ্ঞতার তুলনায় ভিন্নতর। বোঝা
যাচ্ছে যে, নৈকট্যের দ্বার যতো অবারিত হয়, ততোই মানসিক গোপন নিপীড়নের
পরিবৃদ্ধি ঘটে। প্রাণের আঁকা মুর্শিদ ক্বিবলার মুবারক সান্নিধ্যে জাহিরী হাজিরা
এবং অবিরাম বাতিনী মুয়ামিলা অব্যাহত রয়েছে। আল্লাহ্ পাক-উনার নৈকট্যসুধার নবতর
মাত্রাযোগ এবং বেদনা-বিমুগ্ধ মননে যে উপলব্ধি ও জীবনবোধ নির্মিত হয়েছে, তাতে
একমাত্র আল্লাহ্ পাক এবং উনার প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাড়া
জীবন, জগৎ, ইহকাল ও পরকালের সব কিছুই এখন মূল্যহীন হয়ে পড়েছে। কামিয়াবীর এমন শীর্ষ সোপানে
উপনীত হয়ে তিনি এখন আল্লাহ্ পাক-উনার মুহব্বত ও মারিফাতের নিবিড় সংযোগসাধনে
আত্মনিমগ্নতায় বিভোর। (অসমাপ্ত)
আবা-১০৫
0 Comments:
Post a Comment