যে সকল কারণে একজন মুসলমান ইসলামচ্যুত হয়ে যায় তথা কাফির হয়ে যায় ।
মানুষ বলে থাকে যে মুসলমানকে কাফির কেন বলা হয়?কাফির বলার কে ?আল্লাহ পাক -ই ভালো জানেন। আমাদের বলা ঠিকনা ।
এই ধারণা মানুষের ভুল। মুসলমান নাম নিলেই সে কাফির হবেনা তা অযোক্তিক। হযরত আদম আলাইহিস সালাম এর সন্তান কাবিল আর নুহ আলাইহিস সালাম এর সন্তান বাহ্যত মুসলমান ছিল কিন্তু কাফির ।
১) যাদের ঈমান আক্বিদা শুদ্ধ নয়
“নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে, আমলে ছলেহ করেছে, নামায কায়িম করেছে এবং যাকাত আদায় করেছে, তাদের জন্য তাদের রব মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট প্রতিদান রয়েছে।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৭৭)
“সময়ের কসম। মানুষ আসলে খুবই ক্ষতিগ্রস্থের মধ্যে রয়েছে। তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করতে থেকেছে এবং পরস্পরকে হক কথার ও সবর করার উপদেশ দিতে থেকেছে।– সুরা আছর
“পবিত্র ইসলাম উনার ভিত্তি পাঁচটি যথা- (১) সাক্ষ্য দেয়া যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যাতীত কোনো ইলাহ নেই এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল (২) নামায কায়িম করা (৩) যাকাত দেয়া (৪) হজ্জ করা (৫) এবং রমাদ্বান শরীফ উনার রোযা রাখা।” (বুখারী শরীফ)
অর্থাৎ ঈমান হল মুল । আলেম-উলামাগণ হাদীসের ইঙ্গিতের মাধ্যমে গবেষণা করে কুরআন হাদীস থেকে ঈমানের ৭৭টি শাখা নির্ণয় করেছেন। ঈমানের শাখা -প্রশাখার যেকোন একটিতে যদি কারো ত্রুটি থাকে সে মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে যাবে। বাতিল ৭২ ফিরকার যেমন কাদিয়ানি,বাহাই,রাফেযি,খারেজি,শিয়া,ওহাবী,মুতাজালিয়া ইত্যাদি ।
২) শিরক তথা আল্লাহ পাক সাথে উনার ইবাদাতে অন্য কাউকে অংশীদার বানানো।
“নিশ্চয় আল্লাহ পাক তাকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে। এছাড়া যাকে ইচ্ছা, ক্ষমা করেন। যে আল্লাহ পাকের সাথে শরীক করে সে সুদূর ভ্রান্তিতে পতিত হয়”। (আন-নিসা’ ৪:১১৬)
“নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহ পাকের সাথে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন। এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই”। (মা’য়িদাহ ৫: ৭২)
৩) যারা অংশীদার স্থাপনকারীদের(মুশরিকুন) অস্বীকারকারী(কাফির) মনে করে না, অথবা তাদের কুফরী সন্মন্ধে সন্দেহ পোষন করে অথবা তাদের পদ্ধতিকেও সঠিক মনে করে তারা কাফির।
৪) এ বিশ্বাস পোষণ করা যে, হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শের চেয়ে অন্য কোন ব্যক্তির মতাদর্শ উত্তম বা রাসূল হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনীত জীবন ব্যবস্থার চেয়ে অন্য কোন ধর্ম বা মতবাদ ভাল। যেমন-কেউ যদি বিশ্বাস করে যে সমাজতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা, ডারউইনের মতবাদ ইত্যাদি ইসলামের চেয়ে ভাল তবে সে মুরতাদ হয়ে যাবে।
“বল! তোমরা কি আল্লাহ পাক, উনার নিদর্শন ও উনার হাবীব হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদ্রুপ করছিলে? তোমরা আর অজুহাত দাড় করো না, তোমরা তো ঈমান আনার পর কুফরী করেছ।” (সূরা আত-তাওবা: ৬৫-৬৬)
তোমরা আল্লাহ পাক ও হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের আনুগত্য কর। তারপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে নিশ্চয় আল্লাহ কাফিরদেরকে ভালবাসেন না’ (সূরা আলে-ইমরান: ৩২)
আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন ‘যে হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যে বিমুখ হল, তবে আমি তোমাকে তাদের ওপর তত্ত্বাবধায়ক করে প্রেরণ করিনি’ (সূরা নিসা: ৮০)
যখন আল্লাহ পাক ও হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনো বিষয়ের ফায়সালা দিয়ে দেন তখ কোনো মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীর সেই ব্যাপারে নিজে ফায়সালা করার কোনো অধিকার নেই৷ আর যে কেউ আল্লাহ পাক ও হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাফরমানী করে সে সুস্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত হয়৷(আহযাব ৩৬)
৫) হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশিত কোন বিষয়কে মনে মনে ঘৃণা করা যদিও সে তা পালন করে। যেমন, কেউ যদি দাঁড়ি, পর্দা,সুন্নতি পোষাক, সুন্নতি জীবনযাপন ইত্যাদিকে মনে মনে অপছন্দ করে তবে সে মুসলমান থাকবেনা। কারণ, এগুলো ইসলামের আবশ্য পালণীয় নির্দেশ।
“এটা এজন্যে যে, আল্লাহ পাক যা নাযিল করেছেন, তারা তা পছন্দ করে না। অতএব, আল্লাহ পাক তাদের কর্ম ব্যর্থ করে দিবেন” (মুহাম্মাদ ৪৭: ৯)
আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, আমার প্রতিটি উম্মত জান্নাতে যাবে। তবে যে অস্বীকার করে সে নয়। সাহাবায়ে কেরাম বললেন,অস্বীকারকারী কে? হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যে আমার অনুকরণ করল সে জান্নাতে যাবে। আর যে আমার নাফরমানী করল, সে-ই অস্বীকারকারী’ (বুখারী)।
আল্লাহ পাক বলেনঃ “হে হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আপনার জন্য আল্লাহ পাকই যথেষ্ট এবং মু’মিনদের মধ্য থেকে যারা আপানাকে অনুসরণ করে তাদের জন্য।” [সূরা আনফালঃ ৬৪]
৬) হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রচারিত ধর্মের যে কোন বিষয় নিয়ে কেউ যদি মজা করে, অথবা পুরস্কার ও শাস্তি সম্পর্কিত যে কোন বক্তব্য নিয়ে টিটকারী দেয় বা দুষ্টুমি করে, সে কাফির। এর প্রমাণ হল নিচের আয়াতটি:
“আর যদি আপনি তাদের কাছে জিজ্ঞেস করেন, তবে তারা বলবে, আমরা তো কথার কথা বলছিলাম এবং কৌতুক করছিলাম। আপনি বলুন, তোমরা কি আল্লাহ পাকের সাথে, উনার হুকুম আহকামের সাথে এবং উনার হাবীব হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাথে ঠাট্টা করছিলে? ছলনা কর না, তোমরা যে কাফের হয়ে গেছ ঈমান প্রকাশ করার পর। তোমাদের মধ্যে কোন কোন লোককে যদি আমি ক্ষমা করে দেইও, তবে অবশ্য কিছু লোককে আযাবও দেব। কারণ, তারা ছিল গোনাহগার” (আত তাওবাহ ৯:৬৫-৬৬) । যেমন – ছবি তোলা,টিভি দেখাকে কেউ যদি হারাম মনে না করে জায়েয মনে করে, সুন্নতকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে, এত করা লাগবেনা, যামানার দোহাই দিয়ে আদেশ খিলাপ কাজ করে যেমন বেপর্দা,ছবি,টিভি,খেলা,গানবাজনা ইত্যাদি বলে তাহলে সে কাফিরের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
৭) যাদুবিদ্যা – একজন ব্যক্তিকে আরেকজনের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দেয়ার জন্য বা একজন ব্যক্তির সাথে অন্য ব্যক্তির ভালোবাসা সৃষ্টির জন্য যাদু করা এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত। যে ব্যক্তি এগুলো করবে বা এগুলোর সমর্থন করবে সে কাফির। কেননা:
“তারা ঐ শাস্ত্রের অনুসরণ করল, যা সুলায়মানের রাজত্ব কালে শয়তানরা আবৃত্তি করত। সুলায়মান কুফর করেনি; শয়তানরাই কুফর করেছিল। তারা মানুষকে জাদুবিদ্যা এবং বাবেল শহরে হারুত ও মারুত দুই ফেরেশতার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছিল, তা শিক্ষা দিত। তারা উভয়ই একথা না বলে কাউকে শিক্ষা দিত না যে, আমরা পরীক্ষার জন্য; কাজেই তুমি কাফের হয়ো না”। (বাকারাহ ২: ১০২)
৮) মুশরিকদের সমর্থন দেয়া এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে তাদেরকে সহযোগিতা করা। এর প্রমাণ হল এ আয়াতটি যেখানে আল্লাহ বলেন:
“হে মুমিণগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না” (মা’য়িদাহ ৫:৫১) ।
কোন মুসলমান দেশ ,জনগন কিম্বা শাসক যদি কাফিরদের সাহায্য করে কিম্বা সমর্থন করে তারাও কাফিরের অন্তর্ভুক্ত হবে। যেমন সউদি ওহাবী সরকার, মধ্যপ্রাচ্যের শাসক, মিশরের শাসক ।
৯) যারা বিশ্বাস করে যে কিছু ব্যক্তিদের হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আইনের বাইরে কাজ করার অনুমতি আছে যেমন অনুমতি ছিল মুসা কালিমুল্লাহ আলাইহিস সালাম এর আইনের বাইরে খিযির আল্লাইহিস সালাম এর কাজ করার, তারা কাফির। কেননা আল্লাহ পাক বলেন:
“যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতি গ্রস্ত” । (ইমরান ৩: ৮৫) ।
যেমন গনতন্ত্র ,হরতাল ,লংমার্চ, অবরোধ,কুশপোত্তলিকা দাহ,কোর্ট টাই পরাকে যারা হারাম মনে করবেনা তারা কাফিরের অন্তর্ভুক্ত
১০) আল্লাহ পাকের মনোনীত ধর্ম থেকে দূরে সরে যাওয়া বা মুখ ফিরিয়ে নেয়া, এটাকে না শেখা এবং এর অনুসারে জীবন যাপন না করা। এর প্রমান হল:
“যে ব্যক্তিকে তার পালনকর্তার আয়াতসমূহ দ্বারা উপদেশ দান করা হয়, অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার চেয়ে যালেম আর কে? আমি অপরাধীদেরকে শাস্তি দেব” (সেজদাহ ৩২:২২)