শরয়ী বিধান প্রতিষ্ঠায় দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য আহাদ হাদীছ শরীফ সমূহের প্রকারভেদ : ২










শরয়ী বিধান প্রতিষ্ঠায় দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য আহাদ হাদীছ শরীফ সমূহের প্রকারভেদ : ২
১২
حَسَنٌ (হাসান) : যে হাদীছ শরীফ-এর রাবীর যব্ত গুণে পরিপূর্ণতার অভাব রয়েছে সে হাদীছ শরীফকে হাদীছে হাসান বলে।
 (ফক্বীহ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারাসাধারণত এই দুই প্রকার হাদীছ হতেই আইন প্রণয়ণে সাহায্য গ্রহণ করেন।)
১৩ضَعِيْفٌ (দ্বঈফ) : যে হাদীছ শরীফ-এর দ্বারা কোন রাবী হাসান হাদীছ শরীফ-এর রাবীর গুণসম্পন্ন নয় সে হাদীছ শরীফকে হাদীছে দ্বঈফ বলে। (রাবীর দ্বু বাদুর্বলতার কারণেই হাদীছ শরীফটিকে দ্বঈফ বলা হয়অন্যথায় (নাউযুবিল্লাহনূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কোন কথাই দ্বঈফনয়। দ্বঈফ হাদীছের দ্বু কম  বেশী হতে পারে। খুব কম হলে এটা হাসানের নিকটবর্তী থাকে। আর বেশী হতে হতে এটা একাবারে মাওদুউতেও পরিণত হতে পারে। প্রথমপর্যায়ের দ্বঈফ হাদীছ শরীফ আমলের ফযীলত বা আইনের উপকারিতার বর্ণনায় ব্যবহার করা যেতে পারেআইন প্রণয়নে নয়।)
১৪مَوْضُوْعٌ (মাওদুউ’) : যে হাদীছ শরীফ-এর রাবী জীবনে কখনও নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নামে ইচ্ছা করেকোন মিথ্যা কথা রচনা করেছে বলে সাব্যস্ত হয়েছেতার হাদীছ শরীফকে হাদীছে মাওদুউ’ বলে। এরূপ ব্যক্তির কোন হাদীছ শরীফই কখনও গ্রহণযোগ্য নয়যদিও তিনিঅতঃপর খালিছ তওবা করেন
১৫مَتْرُوْكٌ (মাতরূক) : যে হাদীছ শরীফ-এর রাবী হাদীছের ব্যাপারে নয়বরং সাধারণ কাজ-কারবারে মিথ্যা কথা বলেন বলে খ্যাত হয়েছেনতার হাদীছ শরীফকেহাদীছে মাত্রূক বলে। এরূপ ব্যক্তিরও সমস্ত হাদীছ পরিত্যাজ্য। অবশ্য তিনি যদি পরে খালিছ তওবা করেন এবং মিথ্যা পরিত্যাগ  সত্য অবলম্বনের লক্ষণ উনার কাজ-কারবারে প্রকাশ পায়তা হলে তার পরবর্তীকালের হাদীছ শরীফ গ্রহণ করা যেতে পারে
১৬مُبْهَمٌ (মুবহাম) : যে হাদীছ শরীফ-এর রাবীর উত্তমরূপে পরিচয় পাওয়া যায়নিযাতে উনার দোষ-গুণ বিচার করা যেতে পারেউনার হাদীছ শরীফকে হাদীছেমুবহাম বলে। এরূপ ব্যক্তি ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু না হলে উনার হাদীছ গ্রহণ করা যায় না
১৭مُحْكَمٌ (মুহকাম) : কোন হাদীছ শরীফ বিপরীতার্থক অপর কোন হাদীছ শরীফ থেকে নিরাপদ হলে তাকে মুহকাম হাদীছ শরীফ বলে। এরূপ বিপরীত অর্থ বোধকঅবস্থায় উভয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধন সম্ভব না হলে এটাকে مُخْتَلِفُ الْحَدِيْثِ মুখতালিফুল হাদীছ শরীফ” বলে
১৮نَاسِخٌ مَنْسُوْخٌ (নাসেখ-মানসূখ) : পরস্পর বিপরীতমুখী দুটি হাদীছ শরীফকে কোনভাবেই যখন সমন্বয় সাধন সম্ভব না হয় এবং একটিকে পূর্বের অপরটিকে পরের বলে জানা যায় তখন পরেরটিকে নাসেখ বলে। আর পূর্বের বর্ণনাকে মানসূখ বলে। আর নাসেখ  মানসূখ-এর হুকুম বা বিধান হলো নাসেখ-এর উপর আমলকরা আবশ্যক তথা ফরজ-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। আর মানসূখ হাদীছ যার উপর আমল করা বৈধ নয়।  প্রসঙ্গে “বুখারী শরীফ”- উল্লেখ আছে,
عَنْ حَضَرَتْ اَنَسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ قَالَ قَنَتَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَهْرًا يَدْعُوْ عَلى رِعْلٍ وَذَكْوَانَ
অর্থ : “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন যেহযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রিল  যাকওয়ান গোত্রদ্বয়ের প্রতি বদ্ দোয়ায়একমাস ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেছেন।
 হাদীছ শরীফ খানা নিম্নে বর্ণিত হাদীছ শরীফ দ্বারা মানসূখ হয়ে যায়।  যেমনমিরকাত শরীফ”-এর ৩য় খণ্ডের ১৮০ পৃষ্ঠা উল্লেখ আছে,
عَنْ حَضَرَتْ اَنَسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ قَالَ اِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَنَتَ شَهْرًا ثُمَّ تَرَكَ
অর্থ : “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেননিশ্চয়ই হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুনূতে নাযেলাকেবলমাত্র একমাস পড়েছিলেন। অতঃপর  কুনূতে নাযেলা পাঠ করা পরিত্যাগ করেছেন” বর্ণিত হাদীছ শরীফ-এর প্রথম অংশ অর্থাৎ ‘এক মাস কুনূতে নাযেলা পাঠ করেছেন।এটা হলো মানসূখ। আর দ্বিতীয় অংশ অর্থাৎ ‘অতঃপর তা পরিত্যাগ করেছেন।’ এটা হলো নাসেখ

0 Comments: