আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মি’রাজ শরীফ-এর ঘটনাটি কালামুল্লাহ শরীফ-এর “সূরা বণী ইসরাইল”-এর ১ নম্বর আয়াত শরীফ-এ বর্ণনা করেছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “মহান আল্লাহ পাক যিনি উনার বান্দা (হাবীব) ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কোন এক রাতের সামান্য সময়ে (প্রথমে) বাইতুল্লাহ শরীফ থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ পর্যন্ত, যার আশপাশ বরকতময়; অতঃপর উনার নিদর্শনসমূহ দেখানোর জন্য (অর্থাৎ দীদার মুবারক আরশে আযীমে দেয়ার জন্য) ভ্রমণ করিয়েছেন। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।” সুবহানাল্লাহ!
আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মি’রাজ শরীফ হয়েছে ৩৩ থেকে ৩৪ বার। এক বার জিসমানী বাকি ৩৩ বার রূহানীভাবে হয়েছে। আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দুনিয়াবী হিসেবে ৫১তম বয়স মুবারক-এ ২৭ মাহে রজব রোববার দিবাগত রাত্রে অর্থাৎ সোমবার রাত্রে কা’বা শরীফ থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ, সিদরাতুল মুনতাহা হয়ে আরশে মুয়াল্লায় আল্লাহ পাক উনার সাক্ষাৎ করে আবার যমীনে তাশরীফ আনেন। যা উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম, হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুসহ বিশিষ্ট ৪৫ জন ছাহাবী বর্ণনা করেছেন।
আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অগণিত ফযীলত ও মর্যাদা হাদিয়া করেছেন। সে মর্যাদাসমূহের মধ্যে অন্যতম একটি মর্যাদা হচ্ছে মি’রাজ শরীফ।
মি’রাজ শরীফ-এর অর্থ হচ্ছে ঊর্ধ্বারোহণ। শরীয়তের পরিভাষায় আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে আল্লাহ পাক উনার যে সাক্ষাৎ বা দীদার হয়েছে আনুষ্ঠানিকভাবে সেটাই মি’রাজ শরীফ।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মিরাজ শরীফ থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে উম্মতের জন্য যে সকল নিয়ামত নিয়ে আসেন তন্মধ্যে নামায হচ্ছে অন্যতম।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, মুমিনের মিরাজ হচ্ছে নামায।”তিনি আরো ইরশাদ করেন, একজন মুসলমান আর একজন কাফিরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে নামায।”অর্থাৎ মুসলমান নামায আদায় করে কাফির নামায আদায় করে না।
মি’রাজ শরীফ-এর লক্ষ কোটি কারণ রয়েছে, তন্মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে আল্লাহ পাক উনার সরাসরি সাক্ষাৎ তথা ছোহবত, যা তিনি উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দিয়েছেন। এ মি’রাজ শরীফ দ্বারা আল্লাহ পাক উনার সাথে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিগূঢ় সম্পর্ক আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ পেয়েছে।
আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা হচ্ছে, যমীনে কেউ সরাসরি স্বচক্ষে হাক্বীক্বী ছূরত মুবারক-এ আল্লাহ পাক উনাকে কখনো দেখবে না। কিন্তু আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যেহেতু বেমেছাল হিসেবে সৃষ্টি করেছেন, সেজন্যে তিনি আল্লাহ পাক উনার সরাসরি সাক্ষাতে গিয়েছেন, সরাসরি আল্লাহ পাক উনার দীদার ও ছোহবত লাভ করেছেন।
কোন কোন গুমরাহ ও কাফির মি’রাজ শরীফ সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করে বলে থাকে যে, এত অল্প সময়ে কি করে সাত আসমান অতিক্রম করে আরশে আযীমে যাওয়া এবং জান্নাত জাহান্নাম পরিদর্শন করে যমীনে ফিরে আসা সম্ভব? নাউযুবিল্লাহ!
মূলত এরা যেহেতু আশদুদ দরজার জাহিল এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল ফাযায়িল-ফযীলত সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে বেখবর তাই তারা এধরনের কুফরী কথা বলে থাকে ও আক্বীদা পোষণ করে থাকে এবং মি’রাজ শরীফ সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করে। অথচ উনার খাদিম হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ উনারা চোখের পলকে আসমানে যান আর আসেন। যেমন- এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ আছে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে একবার হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম বসা ছিলেন এমতাবস্থায় হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে আসলেন।
হযরত দাহইয়াতুল কলবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ঈমান আনার পর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম সাধারণত উনার ছূরত মুবারকে আসতেন। আর হযরত দাহইয়াতুল কলবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আদত (অভ্যাস) ছিল তিনি যখন আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে আসতেন তখন হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাদের জন্য কিছু হাদিয়া নিয়ে আসতেন। উনাদেরকে কোলে নিতেন। যার কারণে উনার সাথে উনাদের আলাদা একটা মুহব্বত পয়দা হয়েছিল। উনারা দু’জন উনাকে দেখলেই উনার কাছে চলে যেতেন। হযরত দাহইয়াতুল কলবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদেরকে খাছভাবে মুহব্বত করতেন যে কারণে উনারাও উনাকে মুহব্বত করতেন।
একদিন হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আসলেন হযরত দাহইয়াতুল কলবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ছূরত মুবারকে। স্বাভাবিক হযরত দাহইয়াতুল কলবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আসলে হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনারা হযরত দাহইয়াতুল কলবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাছে যেতেন। তাই হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম আসা মাত্র উনারা উনার কাছে যেতে চাচ্ছিলেন।
হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে জরুরী কিছু আলোচনা করছিলেন আর এ দিকে হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার কাছে যেতে চাচ্ছিলেন। আর আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে ফিরিয়ে রাখছিলেন। এমনিভাবে একবার, দু’বার, তিনবার হয়ে গেল। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি ব্যাপারটা বুঝতে পারছি না যে, হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনারা আমার কাছে আসতে চাচ্ছেন, আপনি উনাদেরকে ফিরিয়ে রাখছেন, ব্যাপারটি কি?
আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হে ভাই হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম! আপনি তো হযরত দাহইয়াতুল কলবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ছূরত মুবারকে এসেছেন। হযরত দাহইয়াতুল কলবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার একটা আদত রয়েছে, তিনি আমার নিকট যখনই আসেন তখনই উনাদের জন্য কিছু হাদিয়া নিয়ে আসেন, উনাদেরকে কোলে নেন, মুহব্বত করেন, উনারাও উনার কাছে যান। আপনাকে দেখে উনারা মনে করেছেন, আপনি হয়তো হযরত দাহইয়াতুল কলবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, সেহেতু উনারা আপনার কাছে যেতে চাচ্ছেন। তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার বেয়াদবী ক্ষমা করবেন, আমাকে একটু সময় দেন, আমি এখনই আসছি।
একথা বলে তিনি বের হয়ে গেলেন, কিছুক্ষণ পর আবার আসলেন এক থোকা আঙ্গুর নিয়ে, আঙ্গুরগুলো পেশ করলেন, হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাদের খিদমতে, উনারা সেটা গ্রহণ করলেন। আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম! আপনি এগুলো এতো তাড়াতাড়ি কোথা থেকে আনলেন? তিনি বললেন, আল্লাহ পাক উনাদের জন্য যে জান্নাত নির্ধারণ করে রেখেছেন সে জান্নাত থেকে এ আঙ্গুর ফলগুলো আমি এনেছি। সুবহানাল্লাহ!
কিতাবে আরো উল্লেখ আছে যে, আল্লাহ পাক তিনি উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মি’রাজ শরীফ-এ যান হযরত উম্মে হানী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার ঘর থেকে। মি’রাজ শরীফ থেকে ফিরে এসে সকালে বললেন, আমি মি’রাজ শরীফ করেছি- মক্কা শরীফ থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ-এ গিয়েছি। যে বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ মক্কা শরীফ থেকে এক মাসের রাস্তা। বাইতুল মুকাদ্দাস থেকে আমি আরশ-কুরসী, লৌহ-কলম, বেহেশত-দোযখ, আসমান-যমীন সবকিছু দেখে আবার রাতারাতি প্রত্যাবর্তন করেছি। আল্লাহ পাক উনার রসূল তিনি ঘোষণা করে দিলেন। সমস্ত মানুষ শুনলো। যারা মুসলমান, তারা বিশ্বাস করলো। যারা মুনাফিক, তারা চু-চেরা শুরু করে দিলো। আর যারা কাফির, তারা বলাবলি করতে লাগলো যে, আপনারা যাঁকে আখিরী রসূল মেনে নিয়েছেন, যাঁকে আপনারা ইমামুল মুরসালীন, যাঁকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন মেনে নিয়েছেন, দেখেন! উনি কি বলেন? উনি একরাত্রে বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ-এ গিয়েছেন। একরাত্রে আরশ-কুরসী, লৌহ-কলম দেখেছেন। এত দূরের রাস্তা একরাত্রে সফর করা কি করে সম্ভব? এক কাফির সেই কথাটা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাছে নিয়ে পৌঁছালো। হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাছে তখনও মি’রাজ শরীফ-এর সংবাদ পৌঁছেনি। সেই কাফির বললো, হে হযরত আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনি এবং আপনারা যাঁকে নবী মনে করেন, যাঁকে রসূল মনে করেন, যাঁকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন মনে করেন, যাঁকে সৃষ্টি না করলে কিছুই সৃষ্টি করা হতো না এটা আপনারা বিশ্বাস করেন, তিনি কি বলেন জানেন? তিনি বলেন, তিনি একরাত্রে মি’রাজ শরীফ করেছেন, আল্লাহ পাক উনার সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। আরশ-কুরসী, লৌহ-কলম, বেহেশত-দোযখ, বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ সব ঘুরে এসেছেন। আপনি কি এটা বিশ্বাস করেন? হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, হে ব্যক্তি! তুমি কি তোমার নিজের কানে শুনেছো? সেই ব্যক্তি বললো যে, হ্যাঁ! আমি আমার নিজের কানে শুনেছি। তুমি কি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জবান মুবারক-এ শুনেছো? সে ব্যক্তি বললো যে, হ্যাঁ! আমি স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জবান মুবারক থেকে শুনেছি আমার নিজ কানে শুনেছি, উনি বলেছেন।তখন হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, হে ব্যক্তি যদি আল্লাহ পাক উনার রসূল এটা বলে থাকেন, তাহলে অবশ্যই আমি এটা বিশ্বাস করি। কারণ আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যাঁরা খিদমতগার হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম উনারা যেমন, হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম, হযরত মিকাঈল আলাইহিস সালামসহ অন্যান্য হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা চোখের পলকে আকাশে যান এবং ফিরে আসেন। এটা যদি সত্য এবং সম্ভব হতে পারে, তাহলে যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, সাইয়্যিদুল মাখদুম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষে কেন সম্ভব হবে না? আমি একশবার বিশ্বাস করি। এটা উনি বলে দিলেন। সুবহানাল্লাহ!
তিনি এটা বলে রওয়ানা হয়ে গেলেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবার শরীফ-এর দিকে। এদিকে আল্লাহ পাক তিনি হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম উনাকে প্রেরণ করে দিলেন- হে হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম! আপনি এখনই আমার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট যান। গিয়ে বলুন, আমি স্বয়ং আল্লাহ পাক আজ থেকে হযরত আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে ‘ছিদ্দীক্বে আকবর’ লক্বব দিয়ে দিলাম। সুবহানাল্লাহ! সত্যিই যখন হযরত আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবার শরীফ-এ এসে পৌঁছলেন, তখন আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “আজ থেকে হযরত আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার লক্বব হলো ছিদ্দীক্ব।” সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উসীলায় সৃষ্ট এবং উনার খাদিম হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম, হযরত মীকাঈল আলাইহিস সালাম, হযরত ইসরাফীল আলাইহিস সালাম ও হযরত আযরাঈল আলাইহিস সালামসহ অন্যান্য সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা যদি চোখের পলকে সাত আসমান অতিক্রম করে ও জান্নাত জাহান্নামে যেতে পারেন। তবে মহান আল্লাহ পাক উনার পরেই যাঁর স্থান উনাকে সৃষ্টি না করলে কোন কিছুই সৃষ্টি হতো না, সেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষে কেন তা সম্ভব হবে না? মূলত এব্যাপারে বিন্দু থেকে বিন্দুতম সংশয় বা সন্দেহ পোষণ করাও কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
মিরাজ শরীফ সত্য এবং তা কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর অসংখ্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু মিরাজ শরীফ কখন হয়েছিল এ নিয়ে কিছু মতপার্থক্য থাকলেও মশহুর বা প্রসিদ্ধ মতে মিরাজ শরীফ সংঘটিত হয়েছিলো রজব মাসের ২৭ তারিখ রাতে সোমাবার শরীফ-এ অর্থাৎ ২৬শে রজব দিবাগত রাতে।
যেমন, এ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বিশ্ববিখ্যাত সর্বজনমান্য মুহাদ্দিছ আরিফ বিল্লাহ আল্লামা হযরত শায়েখ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিজ হাতে লিখা ‘মা ছাবাতা বিস সুন্নাহ কিতাবের ৭৩ পৃষ্ঠায় বলেন,
اعلم انه قد اشتهر فيما بين الناس بديار العرب ان معراجه صلى الله عليه وسلم كان لسبع وعشرين من رجب
জেনে রাখুন! নিশ্চয়ই আরব জাহানের দেশগুলোর লোকদের মধ্যে মাশহূর বা প্রসিদ্ধ ছিলো যে, নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুনা হযরত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মিরাজ শরীফ সংঘটিত হয়েছিলো রজব মাসের ২৭ তারিখ রাতেই। সুবহানাল্লাহ!
এ বছরের জন্য পবিত্র মি’রাজ শরীফ-এর রাত্রিটি হচ্ছে- ২৯শে জুন ২০১১ ঈ, রোজ- বুধবার দিবাগত রাত। আর দিনটি হচ্ছে ৩০শে জুন ২০১১ ঈ, রোজ- বৃহস্পতিবার।
মিরাজ শরীফের আমলী ফযীলতঃ
গাউছুল আযম, আওলাদে রসূল, মুহিউদ্দীন হযরত সাইয়্যিদ আব্দুল ক্বাদির জিলানী হাম্বলী আশয়ারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের কাছে খবর দিয়েছেন হযরত শায়েখ আবুল বারাকাত হাক্কাতুল্লাহ সাকতী রহমতুল্লাহি আলাইহি। সনদ পরস্পরায় ছাহাবী হযরত আবূ সালামাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ছাহাবী হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ও ছাহাবী হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে। উনারা বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, রজব মাসে এমন একটি দিন ও রাত আছে, যে ব্যক্তি ওই দিনে রোযা রাখবে এবং রাতে ইবাদত-বন্দেগী করবে, তাকে শত শত বছর দিনে রোযা রাখার এবং শত শত বছর ইবাদত-বন্দেগী করার ছওয়াব দান করা হবে।” আর সেই দিন রাতটি হচ্ছে রজব মাসের তিনদিন অবশিষ্ট থাকতেই (অর্থাৎ ২৭ রজব তথা মিরাজ শরীফ-এর দিন ও রাত)। ওই দিন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি বিশেষ নিয়ামত হাদিয়া করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা প্রদাণ করা হয়েছিলো। (গুনয়িতুত ত্বালিবীন, ৩য় পর্ব, ৩৩২ পৃষ্ঠা)
0 Comments:
Post a Comment