আদ জাতির ধ্বংসের সময়সীমা নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের দাঁতভাঙ্গা জবাব

আদ জাতির ধ্বংসের সময়সীমা নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের দাঁতভাঙ্গা জবাব

নাস্তিকদের আপত্তি : আদ জাতিকে হত্যা করতে কত সময় লেগেছিল? – একদিন (Quran 54:19-21)  নাকি এক সপ্তাহ (Quran 69:6-7)!

খণ্ডণ : মহান আল্লাহ পাক তিনি আদ জাতিকে ধ্বংস করার ব্যাপারে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

وَاَمَّا عَادٌ فَاُهْلِكُوا بِرِيْحٍ صَرْصَرٍ عَاتِيَةٍ ◌ سَخَّرَهَا عَلَيْهِمْ سَبْعَ لَيَالٍ وَثَـمَانِيَةَ اَيَّامٍ حُسُوْمًا فَتَرَى الْقَوْمَ فِيْهَا صَرْعٰى كَاَنَّهُمْ اَعْجَازُ نَـخْلٍ خَاوِيَةٍ ◌ فَهَلْ تَرٰى لَـهُم مّن بَاقِيَةٍ ◌

অর্থ : “এবং আদ জাতিকে ধ্বংস করা হয়েছিল এক প্রচন্ড ঝঞ্জাবায়ু দ্বারা, যা মহান আল্লাহ পাক তিনি প্রবাহিত করেছিলেন তাদের উপর সাত রাত্রি ও আট দিবস পর্যন্ত অবিরাম। আপনি তাদেরকে দেখতেন যে, তারা অসার খর্জুর কান্ডের ন্যায় ভূপাতিত হয়ে রয়েছে।” (পবিত্র সূরা হাক্কাহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬-৭)

অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলেন যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি আদ জাতিকে ধ্বংস করার জন্য সাত রাত্রি ও আট দিবস পর্যন্ত অবিরাম প্রচন্ড ঝঞ্জাবায়ু প্রবাহিত করেন। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে অন্যত্র এই ঝঞ্জাবায়ু প্রবাহিত হওয়ার শুরুর দিন সম্পর্কে উল্লেখ করেন যে, 

اِنَّا أَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ رِيـْحًا صَرْصَرًا فِي يَوْمِ نَـحْسٍ مُّسْتَمرّ ◌ تَنْزِعُ النَّاسَ كَاَنَّهُمْ اَعْجَازُ نَـخْلٍ مُّنقَعِرٍ ◌

অর্থ : “আমি এক চিরাচরিত অকল্যাণকর দিনে তাদের উপর ঝঞ্জাবায়ু প্রেরণ করেছিলাম। তা মানুষকে উৎখাত করছিল, যেন তারা উৎপাটিত খর্জুর বৃক্ষের কান্ড।” (পবিত্র সূরা ক্বমর শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৯)

অর্থাৎ আদ জাতির জন্য তাদের পাপাচারের কারণে এক চিরাচরিত অকল্যাণকর দিনে প্রচন্ড ঝঞ্জাবায়ু প্রবাহিত শুরু হয়, যা একটানা সাত রাত্রি ও আট দিবস পর্যন্ত প্রবাহিত হয়। ফলে আদ জাতি অসার খর্জুর কান্ডের ন্যায় উৎপাটিত হয়ে গিয়েছিল।


 হযরত লূত আলাইহিস সালাম উনার আহলিয়াকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের দাঁতভাঙ্গা জবাব

হযরত লূত আলাইহিস সালাম উনার আহলিয়াকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের দাঁতভাঙ্গা জবাব

নাস্তিকদের আপত্তি : আল্লাহ কাকে রক্ষা করেননি? - লুতের স্ত্রিকে (Quran 7:83) নাকি এক বৃদ্ধাকে (Quran 26:170)?

খণ্ডণ: মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত লূত আলাইহিস সালাম উনার বয়োঃবৃদ্ধা আহলিয়াকে রক্ষা করেননি। কেননা সে ছিল পাপীষ্ঠদের অন্তর্ভুক্ত।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

فَاَنـْجَيْنَاهُ وَاَهْلَهٗ اِلَّا اَمْرَاَتَهٗ كَانَتْ مِنَ الْغَابِرِيْنَ ◌ وَاَمْطَرْنَا عَلَيْهِم مَّطَرًا ۖ

অর্থ : “অতঃপর আমি হযরত লূত আলাইহিস সালাম উনাকে ও উনার পরিবার-পরিজনকে বাঁচিয়ে দিলাম, কিন্তু উনার আহলিয়া ব্যতীত। সে তাদের মধ্যেই রয়ে গেল, যারা পিছনে রয়ে গিয়েছিল। আমি তাদের উপর প্রস্তর বৃষ্টি বর্ষণ করলাম।” (পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৩)

মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্য আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উক্ত মহিলার বয়সও উল্লেখ করেছেন। যেমন ইরশাদ মুবারক করেন-

فَنَجَّيْنَاهُ وَاَهْلَهُ اَجْـمَعِيْنَ ◌ اِلَّا عَجُوْزًا فِي الْغَابِرِيْنَ ◌

অর্থ : “অতঃপর আমি হযরত লূত আলাইহিস সালাম উনাকে ও উনার পরিবারবর্গকে রক্ষা করলাম। এক বৃদ্ধা ব্যতীত, সে ছিল ধ্বংসপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত।” (পবিত্র সূরা শূ‘আরা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৭০-১৭১)

সুতরাং উপরের আলোচনা হতে যে বিষয়টি স্পষ্ট তা হচ্ছে- হযরত লূত আলাইহিস সালাম উনার আহলিয়া, যে ছিল বয়সে বৃদ্ধা। তার পাপাচারের কারণে তাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি রক্ষা করেননি। অথচ মূর্খ নাস্তিকরা বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে, যা তাদের মূর্খতারই পরিচায়ক।


 দোযখ থেকে পরিত্রাণপ্রাপ্তদেরকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের দাঁতভাঙ্গা জবাব

 

দোযখ থেকে পরিত্রাণপ্রাপ্তদেরকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের দাঁতভাঙ্গা জবাব

নাস্তিকদের আপত্তি : কাদের জন্যে রয়েছে দোজখ থেকে পরিত্রান? - যেকোন ধর্মপ্রাণ আস্তিকের জন্যে (Quran 5:69, 2:62) নাকি শুধুই মুসলিমদের জন্যে (Quran 3:85, 3:19)!

খণ্ডণ : মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- 

اِنَّ الدّيْنَ عِنْدَ اللهِ الْاِسْلَامُ ۗ

অর্থ : “নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৯)

এই পরিপ্রেক্ষিতে মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন- 

وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الْاِسْلَامِ دِيْنًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْاٰخِرَةِ مِنَ الْـخَاسِرِيْنَ ◌

অর্থ : “যে লোক সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৫)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো স্পষ্ট করে ইরশাদ মুবারক করেন-

هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْـهُدٰى وَدِيْنِ الْـحَقّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدّيْنِ كُلّهِ ۚ وَكَفٰى بِاللهِ شَهِيْدًا ◌

অর্থ : “তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হিদায়েত এবং সত্য দ্বীন সহকারে পাঠিয়েছেন সকল দ্বীন উনার উপর প্রাধান্য দিয়ে (সমস্ত দ্বীনকে বাতিল ঘোষণা করে তা ওহী দ্বারা নাযিলকৃত হোক অথবা মানব রচিত হোক আর তা পূর্বে হোক অথবা পরে হোক) এবং এ বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার স্বাক্ষ্যই যথেষ্ট।” (পবিত্র সূরা ফাতহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮)

উক্ত আয়াত শরীফত্রয় উনাদের ব্যাখ্যায় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-

عن حضرت جابر رضى الله تعالى عنه ان عمر بن الـخطاب عليه السلام اتى رسول الله صلى الله عليه وسلم بنسخة من التورة فقال يا رسول الله صلى الله عليه وسلم هذه نسخة من التورة فسكت فجعل يقرأ ووجه رسول الله صلى الله عليه وسلم يتغير فقال حضرت ابو بكر الصديق عليه السلام ثكلتك الثواكل ما ترى ما بوجه رسول الله صلى الله عليه وسلم فنظر حضرت عمر عليه السلام الى وجه رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال اعوذ بالله من غضب الله وغضب رسوله رضينا بالله ربا وبالاسلام دينا وبـمحمد صلى الله عليه وسلم نبيا فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم والذى نفس مـحمد صلى الله عليه وسلم بيده لو بدا لكم موسى عليه السلام فاتبعتموه وتركتمونى لضللتم عن سواء السبيل ولو كان حيا وادرك نبوتى لا تبعنى.

অর্থ : “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, একদিন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট পবিত্র তাওরাত শরীফ উনার একটি অংশ এনে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এটি পবিত্র তাওরাত শরীফ উনার একটি অংশ। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি চুপ রইলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি তা পড়তে আরম্ভ করলেন। আর এদিকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চেহারা মুবারক লাল হতে লাগলো। অর্থাৎ অসন্তুষ্টির ভাব ফুটে উঠলো। এটা দেখে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হে হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম! আপনার জন্য আফসুস! আপনি কি দেখছেন না যে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চেহারা মুবারক কি রূপ ধারণ করছে। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চেহারা মুবারক উনার দিকে তাকালেন এবং অসন্তুষ্টির ভাব লক্ষ্য করে বললেন, আমি মহান আল্লাহ পাক উনার অসন্তুষ্টি থেকে এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অসন্তুষ্টি থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পানাহ চাচ্ছি। এবং আমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে রব হিসেবে, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাকে দ্বীন হিসেবে ও মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নবী হিসেবে পেয়ে খুশী হয়েছি। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সেই মহান আল্লাহ পাক উনার কছম! যার অধিকারে আমার প্রাণ মুবারক রয়েছে, এ সময় যদি আপনাদের নিকট হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম (যাঁর উপর তাওরাত কিতাব নাযিল হয়েছে) জাহির বা প্রকাশ হতেন আর আপনারা আমাকে ছেড়ে উনার অনুসরণ করতেন তবুও আপনারা সরল পথ থেকে অবশ্যই বিচ্যুত অর্থাৎ গুমরাহ হয়ে যেতেন। এমনকি তিনি যদি এখন হায়াত মুবারকে থাকতেন আর আমাকে পেতেন তাহলে তিনিও নিশ্চয়ই আমার অনুসরণ করতেন।” (দারিমী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

উপরের আলোচনা হতে যে বিষয়টি সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত হলো, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার নুবুওওয়াতী শান মুবারক প্রকাশ করার পর পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব দ্বারা নাযিলকৃত সমস্ত বিধান রহিত হয়ে গিয়েছে। যে কেউ পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব অনুসরণ করে আমল করবে সেই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।

কিন্তু পূর্ববর্তীতে যাঁরা উনাদের সময়ের কোন নবী আলাইহিস সালাম উনাকে বা সে সময়ের জন্য নাযিলকৃত কোন আসমানী কিতাব উনার প্রকৃত অনুসরণ করেছেন উনারা হক্বপন্থী হিসেবেই গণ্য হবেন। আর তাই মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন-

اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَالَّذِيْنَ هَادُوا وَالنَّصَارٰى وَالصَّابِئِيْنَ مَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَعَمِلَ صَالِـحًا فَلَهُمْ اَجْرُهُمْ عِندَ رَبّـهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَـحْزَنُونَ ◌

অর্থ : “নিঃসন্দেহে যারা মুসলমান হয়েছেন এবং যারা ইয়াহুদী, নাছারা ও ছাবিঈন, (তাদের মধ্য থেকে) যারা ঈমান এনেছেন মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি ও কিয়ামত দিবসের প্রতি এবং সৎকাজ করেছেন। তাদের জন্য রয়েছে তার সওয়াব তাদের রব তায়ালা উনার কাছে। আর তাদের কোনই ভয়-ভীতি নেই, তারা দুঃখিতও হবে না ।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬২)

এ ব্যাপারে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوا وَالَّذِيْنَ هَادُوا وَالصَّابِئُوْنَ وَالنَّصَارٰى مَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَعَمِلَ صَالِـحًا فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَـحْزَنُوْنَ ◌

অর্থ : “নিশ্চয়ই যারা মুসলমান, যারা ইহুদী, ছাবেয়ী ও খ্রিষ্টান, তাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি, কিয়ামতের প্রতি এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না ।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৯)

সুতরাং প্রত্যেক নবী আলাইহিস সালাম উনার সময়ের উম্মতের মধ্যে যারা সে সময়ের নবী আলাইহিস সালাম উনাকে প্রকৃত অনুসরণ করেছে তারাই নাজাতপ্রাপ্ত। আর এ কারণেই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ উনার পবিত্র ১৯ নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন- 

اِنَّ الدّيْنَ عِنْدَ اللهِ الْاِسْلَامُ ۗ وَمَا اخْتَلَفَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ اِلَّا مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْعِلْمُ بَغْيًا بَيْنَهُمْ ۗ وَمَن يَكْفُرْ بِاٰيَاتِ اللهِ فَاِنَّ اللهَ سَرِيْعُ الْـحِسَابِ ◌

অর্থ : “নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম। আর যাদের প্রতি কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের নিকট প্রকৃত জ্ঞান আসার পরও শুধুমাত্র পরস্পর বিদ্বেষবশতঃ ওরা মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছে। যারা মহান আল্লাহ পাক উনার নিদর্শনসমূহের প্রতি কুফরী করে তাদের জানা উচিত যে, নিশ্চিতরূপে মহান আল্লাহ পাক হিসাব গ্রহণে অত্যন্ত দ্রুত।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৯)

সুতরাং সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব উনাদের যারা প্রকৃত অনুসারী এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নুবুওওয়াতী শান মুবারক প্রকাশিত হওয়ার পর যারা উনার প্রকৃত অনুসরণ করেছেন উনারা সবাই নাজাতপ্রাপ্ত।


 মুসলমানদের জন্য অমুসলিমকে বিয়ে করার বিধান নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের দাঁতভাঙ্গা জবাব

 

মুসলমানদের জন্য অমুসলিমকে বিয়ে করার বিধান নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের দাঁতভাঙ্গা জবাব

নাস্তিকদের আপত্তি : একজন মুসলিম কি কোন অমুসলিমকে বিয়ে করতে পারবে? - না (Quran 2:221)  এবং হ্যা (Quran 5:5)!

খণ্ডণ : মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَلَا تَنكِحُوْا الْمُشْرِكَاتِ حَتّٰى يُؤْمِنَّ ۚ وَلَاَمَةٌ مُّؤْمِنَةٌ خَيْرٌ مّن مُّشْرِكَةٍ وَلَوْ اَعْجَبَتْكُمْ ۗ وَلَا تُنْكِحُوا الْمُشْرِكِيْنَ حَتّٰى يُؤْمِنُوْا ۚ وَلَعَبْدٌ مُّؤْمِنٌ خَيْرٌ مّن مُّشْرِكٍ وَلَوْ اَعْجَبَكُمْ ۗ اُولٰئِكَ يَدْعُوْنَ اِلَى النَّارِ ۖ وَاللهُ يَدْعُو اِلَى الْـجَنَّةِ وَالْمَغْفِرَةِ بِاِذْنِهٖ ۖ وَيُبَيّنُ اٰيَاتِهٖ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُوْنَ ◌

অর্থ : “আর তোমরা মুশরিকা নারীদেরকে বিয়ে করোনা, যতক্ষণ না তারা ঈমান গ্রহণ করে। অবশ্য মুসলমান ক্রীতদাসী মুশরিকা নারী অপেক্ষা উত্তম, যদিও তাদেরকে তোমাদের কাছে ভালো লাগে। এবং তোমরা (নারীরা) কোন মুশরিকের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ো না, যে পর্যন্ত সে ঈমান না আনে। একজন মুসলমান ক্রীতদাসও একজন মুশরিকের তুলনায় অনেক ভাল, যদিও তোমরা তাদের দেখে মোহিত হও। তারা দোযখের দিকে আহ্বান করে, আর মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজের হুকুমের মাধ্যমে আহ্বান করেন জান্নাত ও ক্ষমার দিকে। আর তিনি মানুষকে নিজের নির্দেশ মুবারক বাতলে দেন যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২২১)

মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন-

الْيَوْمَ اُحِلَّ لَكُمُ الطَّيِّبَاتُ ۖ وَطَعَامُ الَّذِينَ اُوتُوا الْكِتَابَ حِلٌّ لَّكُمْ وَطَعَامُكُمْ حِلٌّ لَّـهُمْ ۖ وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الَّذِينَ اُوْتُوا الْكِتَابَ مِن قَبْلِكُمْ إِذَا اٰتَيْتُمُوهُنَّ اُجُورَهُنَّ مُـحْصِنِينَ غَيْرَ مُسَافِحِينَ وَلَا مُتَّخِذِي اَخْدَانٍ ۗ وَمَن يَكْفُرْ بِالْاِيـمَانِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهُ وَهُوَ فِي الْاٰخِرَةِ مِنَ الْـخَاسِرِينَ ◌

অর্থ : “আজ তোমাদের জন্য পবিত্র বস্তুসমূহ হালাল করা হল। আহ্লে কিতাবদের খাদ্য তোমাদের জন্যে হালাল এবং তোমাদের খাদ্য তাদের জন্য হালাল। তোমাদের জন্যে হালাল সতী-সাধ্বী মুসলমান নারী এবং তাদের সতী-সাধ্বী নারী, যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তোমাদের পূর্বে, যখন তোমরা তাদেরকে মোহরানা প্রদান কর তাদেরকে স্ত্রী করার জন্যে, কামবাসনা চরিতার্থ করার জন্যে কিংবা গুপ্ত প্রেমে লিপ্ত হওয়ার জন্যে নয়। যে ব্যক্তি ঈমানের পরিবর্তে কুফরী করে, তার কর্ম বিফলে যাবে এবং পরকালে সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫)

উপরোক্ত আয়াত শরীফদ্বয় পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, মহান আল্লাহ পাক তিনি মুসলমান পুরুষদেরকে সরাসরি মুশরিক মেয়ে বিবাহ করতে নিষেধ করেছেন এবং মুসলমান মেয়েদেরকে মুশরিক পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে নিষেধ করেছেন। 

কিন্তু ২য় আয়াত শরীফ উনার মধ্যে আহলে কিতাবদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

আহলে কিতাব শব্দের অর্থ হচ্ছে যারা পূর্ববর্তী অবিকৃত আসমানী কিতাব পবিত্র তাওরাত শরীফ, পবিত্র যাবূর শরীফ ও পবিত্র ইন্যীল শরীফ অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করেন ও আমল করে থাকেন। অর্থাৎ যারা মহান আল্লাহ পাক উনার তাওহীদ বা একত্বে পূর্ণ বিশ্বাসী এবং মহান আল্লাহ পাক উনার প্রেরিত নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিশুদ্ধ আক্বীদা পোষণ করেন। আর কোন প্রকার শিরক করেন না।

মহান আল্লাহ পাক তিনি আহলে কিতাবদের সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক করেন-

قُلْ يَا اَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْا اِلٰـى كَلِمَةٍ سَوَاءٍ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ اَلَّا نَعْبُدَ اِلَّا اللهَ وَلَا نُشْرِ‌كَ بِهٖ شَيْئًا وَلَا يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا اَرْ‌بَابًا مّنْ دُوْنِ اللهِ ۚ فَاِنْ تَوَلَّوْا فَقُوْلُوا اشْهَدُوْا بِاَنَّا مُسْلِمُوْنَ ◌

অর্থ : “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলুন, হে আহ্লে কিতাবগণ! একটি বিষয়ের দিকে আস, যা আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে একই যে, আমরা মহান আল্লাহ পাক তিনি ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করব না, উনার সাথে কোন শরীক সাব্যস্ত করব না এবং একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনাকে ছাড়া কাউকে পালনকর্তা বানাব না। তারপর যদি তারা স্বীকার না করে, তাহলে আপনি বলে দিন যে, তোমরা সাক্ষী থাক আমরা তো মুসলমান।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৪)

সুতরাং আহলে কিতাব হচ্ছে- (১) ইহুদী সম্প্রদায় : যারা হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার উম্মত। যাদের প্রতি পবিত্র তাওরাত শরীফ নাযিল হয়েছে। (২) খ্রিষ্টান সম্প্রদায় : যারা হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার উম্মত। যাদের প্রতি পবিত্র ইন্যীল শরীফ নাযিল হয়েছে।

তাই ইহুদী হলে তারা যেন হযরত ওজায়ের আলাইহিস সালাম উনাকে যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ছেলে হিসেবে বিশ্বাস না করে বরং যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার নবী আলাইহিস সালাম হিসেবে বিশ্বাস করে। আর হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল হিসেবে বিশ্বাস করে এবং যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে এক হিসেবে জানে।

আর যদি খ্রিষ্টান হয় তাহলে তারা যেন ত্রিত্ববাদে বিশ্বাস না করে। অর্থাৎ হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে মহান আল্লাহ পাক উনার ছেলে এবং হযরত মরিয়ম আলাইহাস সালাম উনাকে মহান আল্লাহ পাক উনার স্ত্রী হিসেবে বিশ্বাস না করে বরং হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে মহান আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল আলাইহিস সালাম হিসেবে বিশ্বাস করে এবং হযরত মরিয়ম আলাইহাস সালাম উনাকে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার খালিছ বান্দী হিসেবে বিশ্বাস করে এবং মহান আল্লাহ পাক উনাকে এক হিসেবে জানে।

এই শ্রেণীর আহলে কিতাবদেরকে বাংলায় বলা হয় তাওহীদ বা একত্বতায় বিশ্বাসী এবং আরবীতে বলা হয় موحد “মুওয়াহহিদ” আর ইংরেজীতে বলা হয় টহরঃধৎরধহ “ইউনিটেরিয়ান”। আর এই موحد “মুওয়াহহিদ” শ্রেণীর আহ্লে কিতাবদের যবেহকৃত গোশত খাওয়া ও তাদের মেয়ে বিবাহ করা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে হালাল বলা হয়েছে। যেমন ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

الْيَوْمَ اُحِلَّ لَكُمُ الطَّيّبَاتُ ۖ وَطَعَامُ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ حِلٌّ لَّكُمْ وَطَعَامُكُمْ حِلٌّ لَّـهُمْ ۖ وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الَّذِيْنَ أُوْتُوا الْكِتَابَ مِن قَبْلِكُمْ اِذَا اٰتَيْتُمُوْهُنَّ اُجُوْرَ‌هُنَّ مُـحْصِنِيْنَ غَيْرَ‌ مُسَافِحِيْنَ وَلَا مُتَّخِذِي اَخْدَانٍ ۗ وَمَنْ يَّكْفُرْ‌ بِالْاِيـْمَانِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهٗ وَهُوَ فِي الْاٰخِرَ‌ةِ مِنَ الْـخَاسِرِ‌يْنَ ◌

অর্থ : “আজ তোমাদের জন্য পবিত্র বস্তুসমূহ হালাল করা হল। আহলে কিতাবদের খাদ্য তোমাদের জন্য হালাল এবং তোমাদের খাদ্য তাদের জন্য হালাল। ঈমানদার সতী-সাধবী মহিলা এবং যারা পূর্ববর্তী আহলে কিতাব তাদের সতী-সাধবী মহিলা তোমাদের জন্য বিবাহ করা হালাল এই শর্তে যে, সৎ উদ্দেশ্যে তোমরা তাদেরকে মহর প্রদান করবে আর অসৎ উদ্দেশ্যে ও গোপন বন্ধুত্ব বজায় রাখার জন্য নয়। যে ব্যক্তি পবিত্র ঈমান উনার পরিবর্তে কুফরী গ্রহণ করবে নিশ্চয়ই তার আমল বরবাদ হয়ে যাবে এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫)

উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত طَعَامُ “ত্বয়াম” শব্দের আভিধানিক অর্থ খাদ্যদ্রব্য। শাব্দিক অর্থে সর্বপ্রকার খাদ্যই এর অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু হযরত মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের মতে; এ স্থলে طَعَامُ বা খাদ্য বলে শুধু আহলে কিতাবদের যবেহ করা হালাল পশুর গোশত বোঝানো হয়েছে। কেননা, গোশত ছাড়া অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের বিধানের ক্ষেত্রে আহলে কিতাব, পৌত্তলিক, মুশরিক সবাই সমান। কাফিরদের হাতের দ্বারা উৎপাদিত আহার্য বস্তু যেমন গম, বুট, চাউল, ফল ইত্যাদি খাওয়া হালাল। এতে কারো দ্বিমত নেই। তবে যেসব খাদ্য মানুষের হাতে প্রস্তুত হয়, সেগুলোর ব্যাপারে যেহেতু কাফিরদের বাসন-কোসন ও হাতের পবিত্রতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়না এবং তারা যা হালাল ও জায়িয মনে করে থাকে, মুসলমান উনাদের নিকট তা সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম সেহেতু তা খাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ বা হারাম। আর তাদের দ্বারা প্রস্তুতকৃত খাদ্য-পানীয়তে কোন প্রকার হারাম মিশ্রণের সম্ভাবনা না থাকলেও উক্ত খাদ্য-পানীয় পানাহার না করাই তাক্বওয়া। কিন্তু এতে মুশরিক মূর্তিপূজারীর যে অবস্থা আহলে কিতাবদেরও একই অবস্থা। কারণ অপবিত্রতার সম্ভাবনা উভয় ক্ষেত্রেই সমান। অতএব উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে আহলে কিতাবদের যবেহ করা জন্তু মুসলমান উনাদের জন্য এবং মুসলমান উনাদের যবেহ করা জন্তু আহলে কিতাবদের জন্য হালাল।

আর তাই উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছে, শুধুমাত্র আহলে কিতাব হলেই তাদের যবেহকৃত পশুর গোশত খাওয়া হালাল হবে না। বরং শর্ত দেয়া হয়েছে যে, আহলে কিতাব হওয়ার সাথে সাথে মুশরিক না হওয়া। অর্থাৎ যে সকল আহলে কিতাব মুশরিক তাদের যবেহকৃত পশুর গোশত খাওয়া হালাল নয়। অর্থাৎ যে সমস্ত ইহুদী দাবীদাররা হযরত ওজায়ির আলাইহিস সালাম উনাকে যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ছেলে হিসেবে বিশ্বাস করে এবং যে সমস্ত খ্রিষ্টানরা ত্রিত্ববাদে বিশ্বাস করে তাদের যবেহকৃত পশুর গোশত খাওয়া কখনোই হালাল হবে না।

কারণ যারা মহান আল্লাহ পাক উনার তাওহীদে বিশ্বাসী নয়, উনার নাযিলকৃত কিতাবসমূহ এবং উনার প্রেরিত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিশ্বাসী নয় এরূপ লোকেরা কুফরী শেরেকীতে লিপ্ত। তারা মহান আল্লাহ পাক উনার ছাড়া অন্যের নামে পশু যবেহ বা উৎসর্গ করে থাকে। তাই তাদের যবেহকৃত পশুর গোশত খাওয়া সম্পূর্ণ হারাম।

আহলে কিতাবদের যবেহকৃত জন্তুর গোশত খাওয়া এবং তাদের মেয়েকে বিয়ে করার বিধানটি একইরূপ। অর্থাৎ উভয়ের ক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে মুশরিক না হওয়া। মুশরিক হলে তাদেরসহ সকলেরই যবেহকৃত পশুর গোশত খাওয়া এবং তাদের মেয়ে বিয়ে করা হারাম। 

যেমন মুশরিক মহিলাকে বিয়ে করা সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ঘোষণা করেন,

وَلَا تَنكِحُوا الْمُشْرِ‌كَاتِ حَتّٰـى يُؤْمِنَّ ۚ

অর্থ : “তোমরা ওইসব মেয়েকে বিবাহ করনা যারা মুশরিক বা কুফরী শেরেকীতে লিপ্ত। যে পর্যন্ত না তারা ঈমান গ্রহণ করে।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২২১)

বর্তমান সময়ে যেহেতু ছহীহ আক্বীদা ও আমলসম্পন্ন আহলে কিতাব অর্থাৎ ইয়াহুদী হলে যারা হযরত ওজায়ের আলাইহিস সালাম উনাকে যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ছেলে হিসেবে বিশ্বাস না করে বরং যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার নবী আলাইহিস সালাম হিসেবে বিশ্বাস করে। আর হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল হিসেবে বিশ্বাস করে এবং যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে এক হিসেবে জানে।

আর খ্রিষ্টান হলে যারা ত্রিত্ববাদে বিশ্বাস না করে অর্থাৎ হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে মহান আল্লাহ পাক উনার ছেলে এবং হযরত মরিয়ম আলাইহাস সালাম উনাকে মহান আল্লাহ পাক উনার স্ত্রী হিসেবে বিশ্বাস না করে বরং হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে মহান আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল আলাইহিস সালাম হিসেবে বিশ্বাস করে এবং হযরত মরিয়ম আলাইহাস সালাম উনাকে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার খালিছ বান্দী হিসেবে বিশ্বাস করে এবং মহান আল্লাহ পাক উনাকে এক হিসেবে জানে এদের সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য।

তাই আহলে কিতাবের দোহাই দিয়ে ঢালাওভাবে “ইয়াহুদী-খ্রিষ্টানদের যবেহকৃত জন্তুর গোশত খাওয়া হালাল” কিংবা “ইয়াহুদী-খ্রিষ্টানদের মেয়ে বিবাহ করা জায়িয”- এ ধরনের কথা বলা সম্পূর্ণরূপে ইসলামী শরীয়ত উনার খিলাফ ও কুফরী।

মোদ্দা কথা হচ্ছে, একজন মুসলিম কোনভাবেই কোন মুশরিককে বিয়ে করতে পারবে না। এমনকি কোন আহলে কিতাব যদি শিরকী গুনাহে লিপ্ত থাকে সে তাকেও আহলে কিতাবের দোহাই দিয়ে বিয়ে করা যাবে না।


 কিয়ামতের সময় পর্বতরাজির অবস্থা নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের দাঁতভাঙ্গা জবাব


কিয়ামতের সময় পর্বতরাজির অবস্থা নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের দাঁতভাঙ্গা জবাব

নাস্তিকদের আপত্তি : কেয়ামতের সময় পর্বতরাজির কি হবে? - পশমের মত হবে (Quran70:9)  নাকি অদৃশ্য হবে (Quran 78:20)!

খণ্ডণ : মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

يَوْمَ تَكُوْنُ السَّمَاءُ كَالْمُهْلِ ◌ وَتَكُونُ الْـجِبَالُ كَالْعِهْنِ ◌

অর্থ : “সেদিন আকাশ হবে গলিত তামার মত এবং পর্বতসমূহ হবে রঙ্গীন পশমের মত।” (পবিত্র সূরা মা’য়ারিজ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮-৯)

মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন-

يَوْمَ يُنفَخُ فِي الصُّوْرِ فَتَاْتُوْنَ اَفْوَاجًا ◌ وَفُتِحَتِ السَّمَاءُ فَكَانَتْ اَبْوَابًا ◌ وَسُيّرَتِ الْـجِبَالُ فَكَانَتْ سَرَابًا ◌

অর্থ : “যেদিন শিংগায় ফুঁঁক দেয়া হবে, তখন তোমরা দলে দলে সমাগত হবে। আকাশ বিদীর্ণ হয়ে; তাতে বহু দরজা সৃষ্টি হবে এবং পর্বতমালা চালিত হয়ে মরীচিকা হয়ে যাবে।” (পবিত্র সূরা নাবা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮-২০)

প্রথম আয়াত শরীফ উনার মধ্যে পর্বতমালা রঙ্গীন পশমের মত উড়তে থাকবে বলে উল্লেখ রয়েছে। এই অবস্থা কিয়ামতের সময় ঘটবে, যা প্রথম সিংগায় ফুঁঁ দেয়ার সাথে সাথে ঘটবে। 

আর দ্বিতীয় আয়াত শরীফ উনার মধ্যে পর্বতমালা মরীচিকা হয়ে যাবে বলে উল্লেখ রয়েছে। এই অবস্থা হাশরের ময়দান কায়িম হলে সংঘটিত হবে।

নাস্তিকরা মূর্খ বলে এই বিষয়টি অনুধাবনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ।


 কিনানের মৃত্যু নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের দাঁতভাঙ্গা জবাব

 কিনানের মৃত্যু নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের দাঁতভাঙ্গা জবাব

নাস্তিকদের আপত্তি : মহাপ্লাবনে নূহ নবীর কোন পুত্র কি মারা গিয়েছিল? - না (Quran 21:76, 37:75-77) এবং হ্যা (Quran 11:42-43)!

খণ্ডন: মহাপ্লাবনে হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার পুত্র কিনান পানিতে ডুবে মারা গিয়েছিল। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَهِيَ تَـجْرِي بِـهِمْ فِي مَوْجٍ كَالْـجِبَالِ وَنَادٰى نُوْحٌ ابْنَهُ وَكَانَ فِي مَعْزِلٍ يَا بُنَيَّ ارْكَب مَّعَنَا وَلَا تَكُن مَّعَ الْكَافِرِيْنَ ◌ قَالَ سَاٰوِي اِلٰى جَبَلٍ يَعْصِمُنِي مِنَ الْمَاءِ ۚ قَالَ لَا عَاصِمَ الْيَوْمَ مِنْ اَمْرِ اللّٰهِ اِلَّا مَن رَّحِمَ ۚ وَحَالَ بَيْنَهُمَا الْمَوْجُ فَكَانَ مِنَ الْمُغْرَقِيْنَ ◌

অর্থ : “আর নৌকাখানি উনাদের বহন করে চলল পর্বতসম তরঙ্গমালার মাঝে, আর হযরত নূহ আলাইহিস সালাম তিনি উনার পুত্রকে ডাক দিলেন আর সে সরে রয়েছিল, তিনি বললেন, বৎস! আমাদের সাথে আরোহন কর এবং কাফিরদের সাথে থেকো না। সে বলল, আমি অচিরেই কোন পাহাড়ে আশ্রয় নেব, যা আমাকে পানি হতে রক্ষা করবে। হযরত নূহ আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আজকের দিনে মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুম মুবারক থেকে কোন রক্ষাকারী নেই। একমাত্র তিনি যাকে দয়া করবেন। এমন সময় উভয়ের মাঝে তরঙ্গ আড়াল হয়ে দাঁড়াল, ফলে সে নিমজ্জিত হলো।” (পবিত্র সূরা হূদ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪২-৪৩)

কিনান যে ধ্বংস হয়েছিল তা একই পবিত্র সূরা উনার পরবর্তী আয়াত শরীফ উনার মধ্যেও স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَقِيلَ يَا اَرْضُ ابْلَعِي مَاءَكِ وَيَا سَـمَاءُ اَقْلِعِي وَغِيضَ الْمَاءُ وَقُضِيَ الْاَمْرُ وَاسْتَوَتْ عَلَى الْـجُودِيّ ۖ وَقِيلَ بُعْدًا لّلْقَوْمِ الظَّالِمِيْنَ ◌

অর্থ : “আর নির্দেশ দেয়া হল- হে পৃথিবী! তোমার পানি গিলে ফেল, আর হে আকাশ, ক্ষান্ত হও। আর পানি হ্রাস করা হল এবং কাজ শেষ হয়ে গেল, আর জুদী পর্বতে নৌকা ভিড়ল এবং ঘোষনা করা হল, দুরাতœা কাফিররা নিপাত যাক।” (পবিত্র সূরা হূদ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৪)

সুতরাং মহাপ্লাবনে কিনান যে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল বিষয়টি সুনিশ্চিত। আবার অন্যদিকে মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন-

وَنُوحًا اِذْ نَادٰى مِن قَبْلُ فَاسْتَجَبْنَا لَهٗ فَنَجَّيْنَاهُ وَاَهْلَهٗ مِنَ الْكَرْبِ الْعَظِيمِ ◌

অর্থ : “এবং স্মরণ করুন হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনাকে; যখন তিনি এর পূর্বে আহবান করেছিলেন। তখন আমি উনার দোয়া কবুল করেছিলাম, অতঃপর উনাকে ও উনার আহ্ল-ইয়াল বা পরিবারবর্গকে মহাসংকট থেকে উদ্ধার করেছিলাম।” (পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৭৬)

অন্যত্র মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَلَقَدْ نَادَانَا نُوْحٌ فَلَنِعْمَ الْمُجِيْبُوْنَ ◌ وَنَـجَّيْنَاهُ وَاَهْلَهٗ مِنَ الْكَرْبِ الْعَظِيْمِ ◌ وَجَعَلْنَا ذُرّيَّتَهٗ هُمُ الْبَاقِيْنَ ◌ 

অর্থ : “আর হযরত নূহ আলাইহিস সালাম তিনি আমাকে ডেকেছিলেন। আর কি চমৎকারভাবে আমি উনার ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম। আমি উনাকে ও উনার আহ্ল-ইয়াল বা পরিবারবর্গকে এক মহাসংকট থেকে রক্ষা করেছিলাম এবং উনার আহ্ল-ইয়াল বা বংশধরদেরকেই আমি অবশিষ্ট রেখেছিলাম।” (পবিত্র সূরা সাফফাত শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৭৫-৭৭)

পবিত্র আয়াত শরীফদ্বয় উনাদের বরাত দিয়ে মূর্খ ও ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিকরা সাধারণ মানুষকে গুমরাহ করার উদ্দেশ্যে বলতে চাচ্ছে যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তো হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার আহ্ল-ইয়াল বা পরিবার-পরিজন বা বংশধরদেরকে মহাপ্লাবণ থেকে উদ্ধার করেছিলেন, তাহলে কিনান মারা গেল কিভাবে?

মূলত প্রশ্নটির মধ্যেই তাদের ইসলাম বিদ্বেষের বিষয়টি স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। কেননা মহান আল্লাহ পাক উনার কর্তৃক হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার আহ্ল-ইয়াল বা পরিবার-পরিজন বা বংশধরদেরকে মহাপ্লাবণ থেকে উদ্ধারের বিষয়টি পবিত্র সূরা হূদ শরীফ উনার ৪২-৪৩ নং আয়াত শরীফদ্বয় উনাদের বরাত দিয়ে তারা তুলে ধরলেও উক্ত সূরা শরীফ উনার মধ্যে ৪৬ নং আয়াত শরীফ উনার দ্বারা যে কিনানকে হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার পরিবারভুক্ত নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে সে বিষয়টি তুলে ধরেনি। নাঊযুবিল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَنَادٰى نُوْحٌ رَّبَّهُ فَقَالَ رَبّ اِنَّ ابْنِي مِنْ اَهْلِي وَاِنَّ وَعْدَكَ الْـحَقُّ وَاَنْتَ اَحْكَمُ الْـحَاكِمِيْنَ ◌ قَالَ يَا نُوْحُ اِنَّهُ لَيْسَ مِنْ اَهْلِكَ ۖ اِنَّهُ عَمَلٌ غَيْرُ صَالِحٍ ۖ

অর্থ : “আর হযরত নূহ আলাইহিস সালাম তিনি উনার রব তায়ালা উনাকে বললেন- হে পরওয়ারদেগার! আমার পুত্র তো আমার আহাল বা পরিজনদের অন্তর্ভুক্ত; আর আপনার ওয়াদাও নিঃসন্দেহে সত্য আর আপনিই সর্বাপেক্ষা বিজ্ঞ ফয়সালাকারী। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে হযরত নূহ আলাইহিস সালাম! নিশ্চয়ই সে আপনার আহাল বা পরিবারভুক্ত নয়। নিশ্চয়ই সে দুরাচার!” (পবিত্র সূরা হূদ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৫-৪৬)

মহান আল্লাহ পাক তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলেন, হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার আহ্ল বা পরিবারের মধ্যে কিনান অন্তর্ভুক্ত ছিল না। সে ছিল দুরাচার, কাফির।

সুতরাং মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার আহ্ল বা পরিবার বলতে যাঁদেরকে বুঝিয়েছেন উনাদের মধ্যে কখনোই কিনান অন্তর্ভুক্ত ছিল না।


 মদ্যপানের ব্যাপারে বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের দাঁতভাঙ্গা জবাব

 মদ্যপানের ব্যাপারে বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের দাঁতভাঙ্গা জবাব

নাস্তিকদের আপত্তি : মদ খাওয়ার ব্যাপারে কুরান কি বলে? খাওয়া যাবে (Quran 16:67 তবে প্রার্থনা না করা অবস্থায় (Quran 4:43), খুবই খারাপ জিনিস (Quran 5:90যার জন্যে রয়েছে গুনাহ (Quran 2:219)!

খণ্ডণ : সাধারণ মুসলমানদেরকে ইসলাম সম্পর্কে দ্বিধাগ্রস্থ করার জন্যই এই প্রশ্নটির অবতারণা করা হয়েছে।

পবিত্র কুরআন শরীফ উনার প্রত্যেকটি আয়াত শরীফ নাযিলের প্রেক্ষাপট রয়েছে। যখন যে প্রেক্ষাপট সৃষ্টি হয়েছে তখন সে প্রেক্ষাপটের প্রেক্ষিতে পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে। একে শানে নুযূল বলে।

মানুষ সাধারণত প্রবৃত্তির গোলাম। আর তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি মানুষের স্বভাব বুঝে ক্রমধারা অনুযায়ী ধাপে ধাপে মদকে নিষিদ্ধ করেছেন। শিশুকে বুকের দুধ ছাড়াতে মা যেমন ধীরগতির কৌশল অবলম্বন করেন, স্নেহশীল পালনকর্তা মহান আল্লাহ পাক তিনিও তেমনি বান্দাকে মদের কঠিন নেশা ছাড়াতে ধীরগতির কৌশল অবলম্বন করেছেন।

সে সময় আরবরা ছিল দারুণভাবে মদে অভ্যস্ত। মদ্যপান ছিল সে যুগে আভিজাত্যের প্রতীক। আরব-আজম সর্বত্র ছিল এর ব্যাপক প্রচলন। তাই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম প্রথমে মানুষদের মানসিকতা তৈরী করে নিয়েছে। তারপর চূড়ান্তভাবে একে নিষিদ্ধ করেছে। আর যখনই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে, তখনই তা বাস্তবায়িত হয়েছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে। এজন্য কোন জবরদস্তি প্রয়োজন হয়নি।

মদ নিষিদ্ধের জন্য পরপর তিনটি আয়াত নাযিল হয়। প্রতিটি আয়াত শরীফ নাযিলের মধ্যে নাতিদীর্ঘ বিরতি ছিল এবং মানুষের মানসিকতা পরিবর্তনের অবকাশ ছিল। প্রতিটি আয়াত শরীফ যেহেতু একেকটি ঘটনা উপলক্ষে নাযিল হয়। যাতে মানুষ নিষেধাজ্ঞার গুরুত্ব উপলব্ধি করে তাকে সহজে গ্রহণ করে নেয়। যেমন প্রথম ধাপে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে কিছু হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা এসে মদের অপকারিতা সম্পর্কে সুওয়াল করেন এবং এ বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নির্দেশ মুবারক জানতে আরজু পেশ করেন। তখন নাযিল হয়,

يَسْاَلُوْنَكَ عَنِ الْـخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ ۖ قُلْ فِيْهِمَا اِثْـمٌ كَبِيْرٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَاِثْـمُهُمَا اَكْبَرُ مِن نَّفْعِهِمَا ۗ 

অর্থ : “ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি বলে দিন, এতদুভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর মানুষের জন্যে উপকারিতাও রয়েছে, তবে এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড়।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২১৯)

এ পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিলের ফলে বহু ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা মদ-জুয়া ছেড়ে দেয়। কিন্তু কিছু ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা ছেড়ে দিতে পারেননি। অতঃপর ২য় ধাপে একদিন এক ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বাড়ীতে খাওয়া-দাওয়া শেষে মদ্যপান করে একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। অন্য ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছলাতে ইমামতি করতে গিয়ে পবিত্র সূরা কাফিরূন উনার মধ্যে نَـحْنُ نَعْبُدُ مَا تَعْبُدُونَ পড়েন। যার অর্থ “আমরা ইবাদত করি তোমরা যাদের ইবাদত কর’। যাতে আয়াতের মর্ম একেবারেই পরিবর্তিত হয়ে যায়। তখন আয়াত নাযিল হয়-

يَا اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَقْرَبُوْا الصَّلٰوةَ وَاَنْتُمْ سُكَارٰى حَتّٰى تَعْلَمُوْا مَا تَقُوْلُوْنَ

অর্থ : “হে মুমিনগণ! তোমরা যখন নেশাগ্রস্ত থাক, তখন নামাযের ধারে-কাছেও যেওনা, যতক্ষণ না বুঝতে সক্ষম হও যা কিছু তোমরা বলছ।” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৩)

এ আয়াত শরীফ নাযিলের পর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে মদ্যপানের অভ্যস্ততা প্রায় শেষ হয়ে যায়। পরে সর্বশেষে একদিন জনৈক ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বাড়ীতে খানাপিনার পর মদ্যপান শেষে কিছু মেহমান অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এ সময় একজন মুহাজির ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নিজের বংশ গৌরব কাব্যাকারে বলতে গিয়ে হযরত আনছার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের দোষারোপ করে কবিতা বলেন। এতে একজন আনছার যুবক ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উক্ত মুহাজির ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মাথা লক্ষ্য করে উটের হাড্ডি ছুঁড়ে মারেন। এতে উনার নাক মারাত্মকভাবে আহত হয়। পরে বিষয়টি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট পেশ করা হয়। তখন পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ উনার আলোচ্য আয়াত শরীফদ্বয় নাযিল হয়।

অন্য বর্ণনায় এসেছে- হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, হযরত আবূ ত্বালহা আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বাড়ীতে খানাপিনা শেষে ‘ফাযীহ’ (الفضيح) নামক তৎকালীন উন্নতমানের মদ্যপান চলছিল। এমন সময় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হযযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে একজন ঘোষক উচ্চ কণ্ঠে ঘোষণা দিয়ে যান-

 اَلاَ اِنَّ الْـخَمْرَ قَدْ حُرّمَتْ “হুঁশিয়ার হও! মদ হারাম করা হয়েছে।”

মদ নিষিদ্ধ হওয়া সম্পর্কে হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার বর্ণনায় এসেছে, মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট তিনি মদ সম্পর্কে প্রার্থনা করে বলেন, اللّٰهُمَّ بَيّنْ لَنَا فِى الْـخَمْرِ بَيَانًا شَافِيًا ‘হে আল্লাহ! আমদেরকে মদ সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিন’। এর প্রেক্ষিতে পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ উনার ২১৯ নং আয়াত শরীফ নাযিল হলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে ডেকে আয়াত শরীফখানা শুনিয়ে দেন। তখন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি পুনরায় পূর্বের ন্যায় দো‘আ করেন। এর প্রেক্ষিতে পবিত্র সূরা নিসা শরীফ উনার ৪৩ নং আয়াত শরীফ নাযিল হলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে পূর্বের ন্যায় হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে ডেকে আনেন ও আয়াত শরীফখানা শুনিয়ে দেন। কিন্তু হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি পুনরায় পূর্বের ন্যায় দো‘আ করেন। তখন এর প্রেক্ষিতে পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ উনার ৯০-৯১ নং আয়াত শরীফদ্বয় নাযিল হয়। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে ডেকে এনে আয়াত শরীফদ্বয় শুনিয়ে দেন। এবারে হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি খুশী হয়ে বলে ওঠেন, انْتَهَيْنَا ‘এখন আমরা বিরত হলাম’ (অর্থাৎ আর দাবী করব না)।

সুতরাং শানে নুযূলের প্রেক্ষিতে বিষয়টি স্পষ্ট যে, মদ ৩ ধাপে নিষিদ্ধ হয়। আর তাই মদ্যপান করা স্পষ্টরূপে হারাম। ৩ ধাপে মদ নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে প্রথম আয়াত শরীফদ্বয় উনাদের বিধান মদ্যপানের ক্ষেত্রে বলবৎ নেই বরং পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ উনার ৯০-৯১ নং আয়াত শরীফদ্বয় স্থায়ীভাবে ক্বিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। কিন্তু প্রথম আয়াত শরীফদ্বয় উনাদের হুকুম বলবৎ না থাকলেও পবিত্র কুরআন শরীফ উনার অংশ হিসেবে থেকেই যাবে যা ক্বিয়ামত পর্যন্ত তিলাওয়াত করা হবে।


 দুনিয়াবী মদ ও বেহেশতী পানীয় নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের দাঁতভাঙ্গা জবাব


 
দুনিয়াবী মদ ও বেহেশতী পানীয় নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের দাঁতভাঙ্গা জবাব

নাস্তিকদের আপত্তি : অ্যালকোহল বা মদকে কুরানে ঘৃনিত বস্তু যা শয়তানের তৈরি বলে উল্লেখ করা হয়েছে (Quran 5:90-91), ), আবার সেই কুরানই কেন এই মদের প্রশংসা করছে (Quran 16:67 এবং বেহেস্তে পাওয়া যাবে বলে জানাচ্ছে (Quran 47:15)?

খন্ডণ: পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

وَمِنْ ثَـمَرَاتِ النَّخِيْلِ وَالْاَعْنَابِ تَتَّخِذُوْنَ مِنْهُ سَكَرًا وَرِزْقًا حَسَنًا ۗ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لّقَوْمٍ يَعْقِلُوْنَ ◌

অর্থ : “এবং খেজুর বৃক্ষ ও আঙ্গুর ফল থেকে তোমরা মদ ও উত্তম খাদ্য তৈরী করে থাক, এতে অবশ্যই বোধশক্তি সম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।” (পবিত্র সূরা নাহল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৭)

এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে খেজুর ও আঙ্গুর ফল যে হালাল ও হারাম উভয় ধরনের খাদ্য তৈরির দু’টি উপকরণ সে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে মাত্র। এখানে মোটেও মদের প্রশংসা করা হয়নি। নির্বোধরা বিষয়টি অনুধাবনে অক্ষম বলেই তারা মদের প্রশংসার গন্ধ পাচ্ছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার শেষাংশে স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছেন- “এতে অবশ্যই বোধশক্তি সম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।” অর্থাৎ নির্বোধদের পক্ষে এই বিষয়টি বোঝার নূন্যতম যোগ্যতাও নেই।

বস্তুত মদ এত ক্ষতিকর যে, এটি মানুষকে সম্পূর্ণরূপে অপ্রকৃতিস্থ করে ফেলে, ফলে সমাজে সৃষ্টি হয় চরম বিশৃঙ্খলা- চুরি, লুটতরাজ, রাহাজানি, খুন, সম্ভ্রমহরণ ইত্যাদি। যা পাশ্চাত্য সমাজে মহামারি আকার ধারণ করেছে শুধু মদপানের ব্যাপকতার কারণে। অথচ মদ পান করলে স্বাস্থও ভালো হয়। আর এই বিষয়টিই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ উনার ২১৯নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করেছেন এভাবে-

يَسْاَلُونَكَ عَنِ الْـخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ ۖ قُلْ فِيْهِمَا اِثْـمٌ كَبِيْرٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَاِثْـمُهُمَا اَكْبَرُ مِن نَّفْعِهِمَا ۗ 

অর্থ : “ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি বলে দিন, এতদুভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর মানুষের জন্যে উপকারিতাও রয়েছে, তবে এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড়।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২১৯)

আবার মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন-

مَّثَلُ الْـجَنَّةِ الَّتِي وُعِدَ الْمُتَّقُوْنَ ۖ فِيهَا اَنْهَارٌ مّن مَّاءٍ غَيْرِ اٰسِنٍ وَاَنْهَارٌ مّن لَّبَنٍ لَّـمْ يَتَغَيَّرْ طَعْمُهُ وَاَنْهَارٌ مّنْ خَـمْرٍ لَّذَّةٍ لّلشَّارِبِيْنَ وَاَنْهَارٌ مّنْ عَسَلٍ مُّصَفًّى ۖ وَلَـهُمْ فِيْهَا مِن كُلّ الثَّمَرَاتِ وَمَغْفِرَةٌ مّن رَّبّـهِمْ ۖ 

অর্থ : “পরহেযগারদেরকে যে জান্নাতের ওয়াদা দেয়া হয়েছে, তার অবস্থা নিম্নরূপঃ তাতে আছে পানির নহর, নির্মল দুধের নহর যার স্বাদ অপরিবর্তনীয়, পানকারীদের জন্যে সুস্বাদু শরাবের নহর এবং পরিশোধিত মধুর নহর। তথায় উনাদের জন্যে আছে রকমারি ফল-মূল ও উনাদের মহান রব তায়ালা উনার ক্ষমা।” (পবিত্র সূরা মুহম্মদ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫)

বেহেশতবাসীদেরকে প্রদত্ত মদের বর্ণনা দিতে গিয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

يَطُوْفُ عَلَيْهِمْ وِلْدَانٌ مُّـخَلَّدُوْنَ ◌ بِاَكْوَابٍ وَاَبَارِيْقَ وَكَاْسٍ مّن مَّعِيْنٍ ◌ لَّا يُصَدَّعُونَ عَنْهَا وَلَا يُنْزِفُوْنَ ◌

অর্থ : “বেহেশতবাসীদের কাছে ঘোরাফেরা করবে চির কিশোরেরা। পানপাত্র কুঁজা ও খাঁটি সূরাপূর্ণ পেয়ালা হাতে নিয়ে, যা পান করলে তাদের শিরঃপীড়া হবে না এবং বিকারগ্রস্তও হবে না।” (পবিত্র সূরা ওয়াকিয়া শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৭-১৯)

অর্থাৎ বেহেশতে প্রদত্ত মদ এই দুনিয়াতে প্রদত্ত মদের মতো ঘৃণিত বস্তু নয় বরং তা হবে পবিত্র ও নির্মল, যার ফলে বেহেশতে মদ পান করার পরও কোন শিরঃপীড়া হবে না এবং বিকারগ্রস্তও হবে না। অথচ দুনিয়াবী মদ শিরঃপীড়া ও বিকারগ্রস্ততা সৃষ্টি করে।

মূলত চোখ থাকার পরও দিনের বেলায় সূর্যের আলোতে পেঁচা যেমন দেখতে পায়না, আবার ফুলে মধু থাকার পরও ভোমর কোনদিনই মধু সংগ্রহ করতে পারে না বরং বিষ সংগ্রহ করে। ঠিক তেমনি নাস্তিকরা নির্বোধ ও মূর্খ হওয়ার কারণে মস্তিষ্ক থাকার পরও পবিত্র কুরআন শরীফ উনার দ্বারা উপকৃত হতে পারবে না বরং পথভ্রষ্টই হবে। 

এদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَلَقَدْ ذَرَاْنَا لِـجَهَنَّمَ كَثِيرًا مّنَ الْـجِنّ وَالْاِنْسِ ۖ لَـهُمْ قُلُوْبٌ لَّا يَفْقَهُوْنَ بِـهَا وَلَـهُمْ اَعْيُنٌ لَّا يُبْصِرُوْنَ بِـهَا وَلَـهُمْ اٰذَانٌ لَّا يَسْمَعُوْنَ بِـهَا ۚ اُولٰئِكَ كَالْاَنْعَامِ بَلْ هُمْ اَضَلُّ ۚ اُولٰئِكَ هُمُ الْغَافِلُوْنَ ﴿١٧٩﴾

অর্থ : “আর আমি সৃষ্টি করেছি দোযখের জন্য বহু জ্বিন ও মানুষ। তাদের অন্তর রয়েছে, তার দ্বারা বিবেচনা করে না, তাদের চোখ রয়েছে, তার দ্বারা দেখে না, আর তাদের কান রয়েছে, তার দ্বারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই হল শৈথিল্যপরায়ণ, উদাসীন।” (পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৭৯)


 বনী ইসলাঈলের পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার প্রেক্ষিতে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ব্যাপারে বেয়াদবীমূলক বক্তব্যের দাঁতভাঙ্গা জবাব


 
বনী ইসলাঈলের পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার প্রেক্ষিতে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ব্যাপারে বেয়াদবীমূলক বক্তব্যের দাঁতভাঙ্গা জবাব

নাস্তিকদের আপত্তি : ঈশা (Jesus কি দোজখে যাবে? - না (Quran 4:158, 3:45) এবং হ্যা (Quran 21:98 as he is worshiped by millions of Christians)!

খণ্ডন: মহান আল্লাহ পাক উনার কর্তৃক মনোনীত সর্বোচ্চ স্তরের আব্দ হচ্ছেন হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনারা। তাই উনাদের শান-মান মুবারক সম্পর্কে এ ধরনের প্রশ্ন করাই বেয়াদবী। 

আর তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার শান-মান মুবারক সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক করেন-

اِذْ قَالَتِ الْمَلَائِكَةُ يَا مَرْيَـمُ اِنَّ اللهَ يُبَشّرُكِ بِكَلِمَةٍ مّنْهُ اسْـمُهُ الْمَسِيْحُ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَـمَ وَجِيْهًا فِي الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ وَمِنَ الْمُقَرَّبِيْنَ ◌

অর্থ : “যখন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা বললেন, হে হযরত উম্মু রূহিল্লাহ আলাইহাস সালাম! মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে উনার এক কালাম মুবারক উনার সুসংবাদ দিচ্ছেন, উনার নাম মুবারক হলো মসীহ হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম। তিনি দুনিয়া ও আখিরাতে মহাসম্মানের অধিকারী এবং মহান আল্লাহ পাক উনার ঘনিষ্ঠদের অন্তর্ভুক্ত ।” (পবিত্র সূরা অএল ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৫)

আবার মহান আল্লাহ পাক তিনি যে হযরত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে ইয়াহুদীদের চক্রান্ত থেকে উদ্ধার করে আসমানে স্বশরীর মুবারকে উঠিয়ে নিয়েছেন সে প্রসঙ্গে ইরশাদ মুবারক করেন-

بَل رَّفَعَهُ اللهُ اِلَيْهِ ۚ وَكَانَ اللهُ عَزِيْزًا حَكِيْمًا ◌

অর্থ : “বরং মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে নিজের কাছে উঠিয়ে নিয়েছেন। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি হচ্ছেন মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫৮)

উপরোক্ত আয়াত শরীফদ্বয় উনাদের মধ্যে হযরত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার শান-মান মুবারক সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। অথচ নাস্তিকরা তাদের গুমরাহির প্রবলতা ও ইসলাম বিদ্বেষীতার কারণে হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে এলোমেলো বক্তব্য প্রদানের নিমিত্তে নিম্নোক্ত আয়াত শরীফ উনার অবতারণা করে সাধারণ মুসলমান উনাদেরকে বিভ্রান্ত করা অপচেষ্টা করছে- 

اِنَّكُمْ وَمَا تَعْبُدُونَ مِن دُوْنِ اللهِ حَصَبُ جَهَنَّمَ اَنْتُمْ لَـهَا وَارِدُوْنَ ◌

অর্থ : “তোমরা এবং মহান আল্লাহ পাক উনার পরিবর্তে তোমরা যাদেরকে উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করেছ, সেগুলো দোযখের ইন্ধন। তোমরাই তাতে প্রবেশ করবে।” (পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৯৮)

এই আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার পরিবর্তে বনী ইসরাইলরা যাদেরকে উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করেছ তাদেরকে দোযখের ইন্ধন বানানো বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। আর পরবর্তী আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বনী ইসরাইলীদের উপাস্য বস্তুগুলো যে মূর্তি তা স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে। আর তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- 

لَوْ كَانَ هٰؤُلَاءِ اٰلِـهَةً مَّا وَرَدُوْهَا ۖ وَكُلٌّ فِيْهَا خَالِدُوْنَ ◌

অর্থ : “এই মূর্তিরা যদি উপাস্যই হত, তবে জাহান্নামে প্রবেশ করত না। প্রত্যেকেই তাতে চিরস্থায়ী হয়ে পড়ে থাকবে।” (পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৯৯)

সুতরাং পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ উনার পবিত্র ৯৮নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত উপাস্যদের সাথে হযরত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সম্পৃক্ত করা স্পষ্টই ভন্ডামি বৈ কিছুই নয়।

এছাড়াও মুসলমান উনাদের জন্য হযরত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে ইংরেজীতে Jesus নামে অভিহিত করা সম্পূর্ণরূপে কুফরী। কেননা খ্রিষ্টানরা Jesus নামে যাকে অভিহিত করে সে ব্যক্তি হযরত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি নন। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَقَوْلِـهِمْ اِنَّا قَتَلْنَا الْمَسِيْحَ عِيْسَى ابْنَ مَرْيَـمَ رَسُوْلَ اللهِ وَمَا قَتَلُوهُ وَمَا صَلَبُوْهُ وَلٰكِن شُبّهَ لَـهُمْ ۚ وَاِنَّ الَّذِيْنَ اخْتَلَفُوْا فِيْهِ لَفِي شَكّ مّنْهُ ۚ مَا لَـهُم بِهِ مِنْ عِلْمٍ اِلَّا اتّبَاعَ الظَّنّ ۚ وَمَا قَتَلُوْهُ يَقِيْنًا ◌

অর্থ : “আর তাদের একথা বলার কারণে যে, মসীহ হযরত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করেছি যিনি ছিলেন মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল। অথচ তারা না উনাকে শহীদ করেছে, আর না শুলীতে চড়িয়েছে, বরং তারা এরূপ ধাঁধায় পতিত হয়েছিল। বস্তুতঃ তারা এ ব্যাপারে নানা রকম কথা বলে, তারা এক্ষেত্রে সন্দেহের মাঝে পড়ে আছে, শুধুমাত্র অনুমান করা ছাড়া তারা এ বিষয়ে কোন খবরই রাখে না। আর নিশ্চয়ই উনাকে তারা শহীদ করতে পারেনি।” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫৭)

যেহেতু খ্রিষ্টানরা ক্রুশবিদ্ধ ব্যক্তিটিকে Jesus নামে অভিহিত করে থাকে। অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَمَا قَتَلُوهُ يَقِينًا ◌ بَل رَّفَعَهُ اللهُ إِلَيْهِ ۚ

অর্থ : “আর নিশ্চয়ই হযরত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে তারা শহীদ করতে পারেনি। বরং মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে নিজের কাছে উঠিয়ে নিয়েছেন।” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫৭-১৫৮)

সুতরাং Jesus নামে অভিহিত ব্যক্তিটিকে হযরত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম জ্ঞান করা কিংবা হযরত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে Jesus নামে অভিহিত করা সম্পূর্ণরূপে কুফরী।


 নূরে মুজসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মহান আল্লাহ পাক উনার সমতুল্য হিসেবে সাব্যস্ত করার বেয়াদবীমূলক বক্তব্যের দাঁতভাঙ্গা জবাব

 

নূরে মুজসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মহান আল্লাহ পাক উনার সমতুল্য হিসেবে সাব্যস্ত করার বেয়াদবীমূলক বক্তব্যের দাঁতভাঙ্গা জবাব

নাস্তিকদের আপত্তি : কুরানে বার বার উল্লেখ আছে যে একজন মুসলিমকে অবশ্যই আল্লাহ এবং মুহম্মদ দুজনের আদেশই মান্য করে চলতে হবে (Quran 8:1, 8:20-21, 3:132, 33:31, 4:13, 4:80, 33:36, 4:14, 4:42, 58:20)! এতে কি আল্লাহ আর মুহম্মদকে সমতুল্য হিসেবে বোঝাচ্ছে না?

খণ্ডন : মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে অনেক আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মুসলমানদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের উভয়েরই আনুগত্য করার নির্দেশ মুবারক প্রদান করেছেন।

মূলত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুগত্যতাই মহান আল্লাহ পাক উনার আনুগত্যতা। কেননা, মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে ওহী মুবারক নাযিল হওয়া ব্যতীত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ থেকে কোন কথা বলেন না বা নিজ থেকে কোন কাজ করেন না।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْـهَوٰى ◌ اِنْ هُوَ اِلَّا وَحْيٌ يُوحٰى ◌

অর্থ : “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজ থেকে কোন কথা বলেন না বা কোন কাজ করেন না, যে পর্যন্ত উনার প্রতি ওহী মুবারক প্রেরণ করা হয়।” (পবিত্র সূরা নজম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩-৪)

সুতরাং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুগত্য করার অর্থ হলো মহান আল্লাহ পাক উনার আনুগত্য করা। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মহান আল্লাহ পাক উনার সমতুল্য বুঝানো হচ্ছে। নাঊযুবিল্লাহ! কেননা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন মাখলূক বা সৃষ্টি। তিনি খালিক বা  স্রষ্টা মহান আল্লাহ পাক উনার কাছ থেকে ওহী মুবারক উনার মাধ্যমে বিভিন্ন আদেশ-নিষেধ মানুষকে প্রদান করে থাকেন। তাই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মহান আল্লাহ পাক উনার সমতুল্য জ্ঞান করা কুফরী।


 মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের দাঁতভাঙ্গা জবাব


মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের দাঁতভাঙ্গা জবাব-

নাস্তিকদের আপত্তি : মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য কি? শূধু আল্লাহর উপাসনা করা (Quran 51:56)  নাকি সেই সাথে মুহম্মদের সুন্নাহ অনুসরন করা (Quran 7:158)!

খণ্ডন : মহান আল্লাহ পাক তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্যও জানিয়ে দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَمَا خَلَقْتُ الْـجِنَّ وَالْاِنْسَ اِلَّا لِيَعْبُدُوْنِ 

অর্থ : “আমার ইবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি।” (পবিত্র সূরা যারিয়াহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৬)

এখন মানুষ কিভাবে ইবাদত করবে, সে বিষয়টি শিক্ষা দেয়ার জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে প্রেরণ করেছেন। অর্থাৎ হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতিনিধি বা খ¦লীফা। আর তাই উনাদের আদেশ মান্য করার অর্থই হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ মান্য করা এবং উনাদের আদেশ অমান্য করার অর্থই হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ অমান্য করা।

এ বিষয়টিই মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

مَّن يُطِعِ الرَّسُوْلَ فَقَدْ اَطَاعَ اللهَ ۖ وَمَن تَوَلّٰى فَمَا اَرْسَلْنَاكَ عَلَيْهِمْ حَفِيْظًا.

অর্থ : “যে লোক রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হুকুম মান্য করবে সে মহান আল্লাহ পাক উনারই হুকুম মান্য করলো। আর যে লোক বিমুখতা অবলম্বন করলো, আমি আপনাকে তাদের জন্য রক্ষণাবেক্ষণকারী নিযুক্ত করে পাঠাইনি।” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮০)

নাস্তিকরা যেহেতু মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি ও উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে এবং তারা নিতান্তই মূর্খ তাই তারা বিষয়গুলো নিয়ে মতপার্থক্য করে থাকে।

বিষয়টি বুঝার জন্য সামান্য একটি উদাহরণের অবতারণা করা হলো। সাধারণত কোন একটি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমকে বেগবান করার জন্য বিভিন্ন কাজের উপযোগী করে বিভিন্ন সেকশনে ভাগ করে নেয়া হয়। প্রতিটি সেকশনে বিভিন্ন কর্মচারী কাজ করে থাকে। প্রতিটি সেকশনের কার্যাবলী সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য এক একজন দায়িত্বশীল নিযুক্ত থাকে যারা উক্ত সেকশনের কর্মচারীদেরকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কর্মচারীদের জন্য যখন কোন আদেশ-নির্দেশ প্রদান করে তখন প্রতিটি সেকশনের দায়িত্বশীলের মাধ্যমেই করে থাকে। প্রতিটি দায়িত্বশীল সেকশনের কর্মচারীদের উপর সে আদেশ-নির্দেশগুলো প্রয়োগ করে।

কর্মচারীদেরকে নির্দেশগুলো সেকশনের দায়িত্বশীলরাই প্রদান করে। কর্মচারীরা দায়িত্বশীলের সে আদেশ পালনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির প্রধানেরই আদেশ পালন করে। 

এটি দুনিয়াবী একটি উদাহরণ। এ সমস্ত দায়িত্বশীলরা সবাই ভুল-ত্রুটিযুক্ত। তাই আদেশ-নির্দেশ প্রদানের মধ্যে নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির বিষয় জড়িত থাকে। কিন্তু হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে ওহী মুবারক নাযিল হওয়া ব্যতীত নিজ থেকে কোন কথা বলেন না বা নিজ থেকে কোন কাজ করেন না।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْـهَوٰى ◌ اِنْ هُوَ اِلَّا وَحْيٌ يُوحٰى ◌

অর্থ : “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজ থেকে কোন কথা বলেন না বা কোন কাজ করেন না, যে পর্যন্ত উনার প্রতি ওহী মুবারক প্রেরণ করা হয়।” (পবিত্র সূরা নজম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩-৪)

আর তাই, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণ করার জন্য আদেশ মুবারক প্রদান করেছেন। 

যেমন, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

قُلْ يَا اَيُّهَا النَّاسُ اِنّـي رَسُوْلُ اللهِ اِلَيْكُمْ جَـمِيْعًا الَّذِي لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ ۖ لَا اِلٰهَ اِلَّا هُوَ يُـحْيِي وَيُـمِيْتُ ۖ فَاٰمِنُوا بِاللهِ وَرَسُوْلِهِ النَّبِيّ الْاُمّيّ الَّذِي يُؤْمِنُ بِاللهِ وَكَلِمَاتِهٖ وَاتَّبِعُوْهُ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ ◌

অর্থ : “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি বলে দিন। হে মানব সম্প্রদায়! আমি তোমাদের সবার প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার প্রেরিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সমগ্র আসমান ও যমীনে মহান আল্লাহ পাক উনারই রাজত্ব। তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি জীবন ও মৃত্যু দান করেন। সুতরাং তোমরা সবাই বিশ্বাস স্থাপন করো মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি, উনার প্রেরিত মূল নবী নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি, যিনি বিশ্বাস রাখেন মহান আল্লাহ পাক উনার উপর এবং উনার সমস্ত কালাম মুবারক উনাদের উপর। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণ করো যাতে তোমরা সরল পথপ্রাপ্ত হতে পারো।” (পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫৮)

সুতরাং স্পষ্টতই প্রমাণিত হলো যে, মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য হচ্ছে শুধুমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার উপাসনা বা ইবাদত করা। আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নাহ মুবারক উনার অনুসরন করা মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত উনারই নামান্তর।


 পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিলের সময়সীমা নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের দাঁতভাঙ্গা জবাব-



পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিলের সময়সীমা নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের দাঁতভাঙ্গা জবাব-

নাস্তিকদের আপত্তি : কুরান কিভাবে নাজিল হল? - এক পবিত্র রাতে (Quran 44:3, 97:1) নাকি পুরো রমজান মাস জুড়ে (Quran 2:185, 17:6, 25:32)!

খণ্ডন : মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ সময় ও অবস্থার প্রেক্ষিতে ধাপে ধাপে ২৩ বছরে নাযিল করেছেন।

যেমন কাফিররা প্রশ্ন করলো পবিত্র কুরআন শরীফ কেন এক দফায় নাযিল হয়নি। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি এর প্রত্যুত্তরে (Quran 25:32)  ইরশাদ মুবারক করেন- 

كَذٰلِكَ لِنُثَبّتَ بِهِ فُؤَادَكَ ۖ وَرَتَّلْنَاهُ تَرْتِيْلًا 

অর্থ : “আমি এমনিভাবে ক্রমে ক্রমে নাযিল করেছি, আপনার অন্তকরণকে মজবূত করার জন্যে।” (পবিত্র সূরা ফুরক্বান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩২)

উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা পবিত্র কুরআন শরীফ যে, পর্যায়ক্রমে ধাপে ধাপে নাযিল হয়েছে সে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে।

কিন্তু পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস জুড়ে পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল হয়েছে, এধরনের কোন কথা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার কোথাও উল্লেখ নেই। বরং পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিলের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি (Quran 2:185)  ইরশাদ মুবারক করেন-

شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي اُنزِلَ فِيهِ الْقُرْاٰنُ

অর্থ : “পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস হলো সে মাস, যে মাসে পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল করা হয়েছে।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮৫)

আর পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসের মধ্যে পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর শরীফ এক বিশেষ মহিমান্বিত রাত। এই মহিমান্বিত রাতে মহান আল্লাহ পাক তিনি লাওহে মাহফুয থেকে এক দফায় পূর্ণ কুরআন শরীফ বাইতুল মামূরে নাযিল করেন। 

তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি (Quran 97:1) ইরশাদ মুবারক করেন-

اِنَّا اَنْزَلْنَاهُ فِيْ لَيْلَةِ الْقَدْرِ 

অর্থ : “আমি পবিত্র কুরআন শরীফ পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর শরীফে নাযিল করেছি।” (পবিত্র সূরা ক্বদর শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১)

আর মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর শরীফে পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল করার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পবিত্র লাইলাতুল বরাত শরীফে, যাকে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পরিভাষায় “লাইলাতুল মুবারাকাহ” নামে অভিহিত করা হয় এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার পরিভাষায় “লাইলাতুন নিসফে মিন শা’বান” নামে অভিহিত করা হয়।

এই লাইলাতুল মুবারাকাহ বা লাইলাতুন নিসফে মিন শা’বান উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিলের সিদ্ধান্ত নেন। তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি (Quran 44:3) ইরশাদ মুবারক করেন-

اِنَّا اَنْزَلْنَاهُ فِيْ لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ ۚ اِنَّا كُنَّا مُنْذِرِيْنَ ◌ فِيْهَا يُفْرَقُ كُلُّ اَمْرٍ حَكِيْمٍ ◌ اَمْرًا مّنْ عِنْدِنَا ۚ 

অর্থ : “আমি (মহান আল্লাহ পাক) পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল করেছি (অর্থাৎ নাযিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছি) পবিত্র লাইলাতুল বরাত শরীফে, নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ মহামান্বিত রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ের ফায়সালা (স্থিরীকৃত) করা হয়। আমার পক্ষ থেকে আদেশক্রমে।” (পবিত্র সূরা দুখান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২-৫)

সুতরাং পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিলের ফায়সালা (স্থিরীকৃত) করা হয় পবিত্র লাইলাতুন নিসফে মিন শা’বান উনার মধ্যে, আর পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর শরীফ উনার মধ্যে লাওহে মাহফুয থেকে এক দফায় পূর্ণ কুরআন শরীফ বাইতুল মামূরে নাযিল করা হয়। সে বাইতুল মামূর থেকে পর্যায়ক্রমে ২৩ বছরে পবিত্র কুরআন শরীফ যমীনে নাযিল হয়। আর যমীনে প্রথম নাযিল হয় পবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, ইয়ামুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার), পবিত্র হেরা গুহায়।