কিনানের মৃত্যু নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের দাঁতভাঙ্গা জবাব
নাস্তিকদের আপত্তি : মহাপ্লাবনে নূহ নবীর কোন পুত্র কি মারা গিয়েছিল? - না (Quran 21:76, 37:75-77) এবং হ্যা (Quran 11:42-43)!
খণ্ডন: মহাপ্লাবনে হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার পুত্র কিনান পানিতে ডুবে মারা গিয়েছিল। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَهِيَ تَـجْرِي بِـهِمْ فِي مَوْجٍ كَالْـجِبَالِ وَنَادٰى نُوْحٌ ابْنَهُ وَكَانَ فِي مَعْزِلٍ يَا بُنَيَّ ارْكَب مَّعَنَا وَلَا تَكُن مَّعَ الْكَافِرِيْنَ ◌ قَالَ سَاٰوِي اِلٰى جَبَلٍ يَعْصِمُنِي مِنَ الْمَاءِ ۚ قَالَ لَا عَاصِمَ الْيَوْمَ مِنْ اَمْرِ اللّٰهِ اِلَّا مَن رَّحِمَ ۚ وَحَالَ بَيْنَهُمَا الْمَوْجُ فَكَانَ مِنَ الْمُغْرَقِيْنَ ◌
অর্থ : “আর নৌকাখানি উনাদের বহন করে চলল পর্বতসম তরঙ্গমালার মাঝে, আর হযরত নূহ আলাইহিস সালাম তিনি উনার পুত্রকে ডাক দিলেন আর সে সরে রয়েছিল, তিনি বললেন, বৎস! আমাদের সাথে আরোহন কর এবং কাফিরদের সাথে থেকো না। সে বলল, আমি অচিরেই কোন পাহাড়ে আশ্রয় নেব, যা আমাকে পানি হতে রক্ষা করবে। হযরত নূহ আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আজকের দিনে মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুম মুবারক থেকে কোন রক্ষাকারী নেই। একমাত্র তিনি যাকে দয়া করবেন। এমন সময় উভয়ের মাঝে তরঙ্গ আড়াল হয়ে দাঁড়াল, ফলে সে নিমজ্জিত হলো।” (পবিত্র সূরা হূদ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪২-৪৩)
কিনান যে ধ্বংস হয়েছিল তা একই পবিত্র সূরা উনার পরবর্তী আয়াত শরীফ উনার মধ্যেও স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَقِيلَ يَا اَرْضُ ابْلَعِي مَاءَكِ وَيَا سَـمَاءُ اَقْلِعِي وَغِيضَ الْمَاءُ وَقُضِيَ الْاَمْرُ وَاسْتَوَتْ عَلَى الْـجُودِيّ ۖ وَقِيلَ بُعْدًا لّلْقَوْمِ الظَّالِمِيْنَ ◌
অর্থ : “আর নির্দেশ দেয়া হল- হে পৃথিবী! তোমার পানি গিলে ফেল, আর হে আকাশ, ক্ষান্ত হও। আর পানি হ্রাস করা হল এবং কাজ শেষ হয়ে গেল, আর জুদী পর্বতে নৌকা ভিড়ল এবং ঘোষনা করা হল, দুরাতœা কাফিররা নিপাত যাক।” (পবিত্র সূরা হূদ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৪)
সুতরাং মহাপ্লাবনে কিনান যে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল বিষয়টি সুনিশ্চিত। আবার অন্যদিকে মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন-
وَنُوحًا اِذْ نَادٰى مِن قَبْلُ فَاسْتَجَبْنَا لَهٗ فَنَجَّيْنَاهُ وَاَهْلَهٗ مِنَ الْكَرْبِ الْعَظِيمِ ◌
অর্থ : “এবং স্মরণ করুন হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনাকে; যখন তিনি এর পূর্বে আহবান করেছিলেন। তখন আমি উনার দোয়া কবুল করেছিলাম, অতঃপর উনাকে ও উনার আহ্ল-ইয়াল বা পরিবারবর্গকে মহাসংকট থেকে উদ্ধার করেছিলাম।” (পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৭৬)
অন্যত্র মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَلَقَدْ نَادَانَا نُوْحٌ فَلَنِعْمَ الْمُجِيْبُوْنَ ◌ وَنَـجَّيْنَاهُ وَاَهْلَهٗ مِنَ الْكَرْبِ الْعَظِيْمِ ◌ وَجَعَلْنَا ذُرّيَّتَهٗ هُمُ الْبَاقِيْنَ ◌
অর্থ : “আর হযরত নূহ আলাইহিস সালাম তিনি আমাকে ডেকেছিলেন। আর কি চমৎকারভাবে আমি উনার ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম। আমি উনাকে ও উনার আহ্ল-ইয়াল বা পরিবারবর্গকে এক মহাসংকট থেকে রক্ষা করেছিলাম এবং উনার আহ্ল-ইয়াল বা বংশধরদেরকেই আমি অবশিষ্ট রেখেছিলাম।” (পবিত্র সূরা সাফফাত শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৭৫-৭৭)
পবিত্র আয়াত শরীফদ্বয় উনাদের বরাত দিয়ে মূর্খ ও ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিকরা সাধারণ মানুষকে গুমরাহ করার উদ্দেশ্যে বলতে চাচ্ছে যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তো হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার আহ্ল-ইয়াল বা পরিবার-পরিজন বা বংশধরদেরকে মহাপ্লাবণ থেকে উদ্ধার করেছিলেন, তাহলে কিনান মারা গেল কিভাবে?
মূলত প্রশ্নটির মধ্যেই তাদের ইসলাম বিদ্বেষের বিষয়টি স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। কেননা মহান আল্লাহ পাক উনার কর্তৃক হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার আহ্ল-ইয়াল বা পরিবার-পরিজন বা বংশধরদেরকে মহাপ্লাবণ থেকে উদ্ধারের বিষয়টি পবিত্র সূরা হূদ শরীফ উনার ৪২-৪৩ নং আয়াত শরীফদ্বয় উনাদের বরাত দিয়ে তারা তুলে ধরলেও উক্ত সূরা শরীফ উনার মধ্যে ৪৬ নং আয়াত শরীফ উনার দ্বারা যে কিনানকে হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার পরিবারভুক্ত নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে সে বিষয়টি তুলে ধরেনি। নাঊযুবিল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَنَادٰى نُوْحٌ رَّبَّهُ فَقَالَ رَبّ اِنَّ ابْنِي مِنْ اَهْلِي وَاِنَّ وَعْدَكَ الْـحَقُّ وَاَنْتَ اَحْكَمُ الْـحَاكِمِيْنَ ◌ قَالَ يَا نُوْحُ اِنَّهُ لَيْسَ مِنْ اَهْلِكَ ۖ اِنَّهُ عَمَلٌ غَيْرُ صَالِحٍ ۖ
অর্থ : “আর হযরত নূহ আলাইহিস সালাম তিনি উনার রব তায়ালা উনাকে বললেন- হে পরওয়ারদেগার! আমার পুত্র তো আমার আহাল বা পরিজনদের অন্তর্ভুক্ত; আর আপনার ওয়াদাও নিঃসন্দেহে সত্য আর আপনিই সর্বাপেক্ষা বিজ্ঞ ফয়সালাকারী। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে হযরত নূহ আলাইহিস সালাম! নিশ্চয়ই সে আপনার আহাল বা পরিবারভুক্ত নয়। নিশ্চয়ই সে দুরাচার!” (পবিত্র সূরা হূদ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৫-৪৬)
মহান আল্লাহ পাক তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলেন, হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার আহ্ল বা পরিবারের মধ্যে কিনান অন্তর্ভুক্ত ছিল না। সে ছিল দুরাচার, কাফির।
সুতরাং মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার আহ্ল বা পরিবার বলতে যাঁদেরকে বুঝিয়েছেন উনাদের মধ্যে কখনোই কিনান অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
0 Comments:
Post a Comment