দুনিয়াবী মদ ও বেহেশতী পানীয় নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের দাঁতভাঙ্গা জবাব


 
দুনিয়াবী মদ ও বেহেশতী পানীয় নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের দাঁতভাঙ্গা জবাব

নাস্তিকদের আপত্তি : অ্যালকোহল বা মদকে কুরানে ঘৃনিত বস্তু যা শয়তানের তৈরি বলে উল্লেখ করা হয়েছে (Quran 5:90-91), ), আবার সেই কুরানই কেন এই মদের প্রশংসা করছে (Quran 16:67 এবং বেহেস্তে পাওয়া যাবে বলে জানাচ্ছে (Quran 47:15)?

খন্ডণ: পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

وَمِنْ ثَـمَرَاتِ النَّخِيْلِ وَالْاَعْنَابِ تَتَّخِذُوْنَ مِنْهُ سَكَرًا وَرِزْقًا حَسَنًا ۗ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لّقَوْمٍ يَعْقِلُوْنَ ◌

অর্থ : “এবং খেজুর বৃক্ষ ও আঙ্গুর ফল থেকে তোমরা মদ ও উত্তম খাদ্য তৈরী করে থাক, এতে অবশ্যই বোধশক্তি সম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।” (পবিত্র সূরা নাহল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৭)

এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে খেজুর ও আঙ্গুর ফল যে হালাল ও হারাম উভয় ধরনের খাদ্য তৈরির দু’টি উপকরণ সে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে মাত্র। এখানে মোটেও মদের প্রশংসা করা হয়নি। নির্বোধরা বিষয়টি অনুধাবনে অক্ষম বলেই তারা মদের প্রশংসার গন্ধ পাচ্ছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার শেষাংশে স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছেন- “এতে অবশ্যই বোধশক্তি সম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।” অর্থাৎ নির্বোধদের পক্ষে এই বিষয়টি বোঝার নূন্যতম যোগ্যতাও নেই।

বস্তুত মদ এত ক্ষতিকর যে, এটি মানুষকে সম্পূর্ণরূপে অপ্রকৃতিস্থ করে ফেলে, ফলে সমাজে সৃষ্টি হয় চরম বিশৃঙ্খলা- চুরি, লুটতরাজ, রাহাজানি, খুন, সম্ভ্রমহরণ ইত্যাদি। যা পাশ্চাত্য সমাজে মহামারি আকার ধারণ করেছে শুধু মদপানের ব্যাপকতার কারণে। অথচ মদ পান করলে স্বাস্থও ভালো হয়। আর এই বিষয়টিই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ উনার ২১৯নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করেছেন এভাবে-

يَسْاَلُونَكَ عَنِ الْـخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ ۖ قُلْ فِيْهِمَا اِثْـمٌ كَبِيْرٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَاِثْـمُهُمَا اَكْبَرُ مِن نَّفْعِهِمَا ۗ 

অর্থ : “ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি বলে দিন, এতদুভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর মানুষের জন্যে উপকারিতাও রয়েছে, তবে এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড়।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২১৯)

আবার মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন-

مَّثَلُ الْـجَنَّةِ الَّتِي وُعِدَ الْمُتَّقُوْنَ ۖ فِيهَا اَنْهَارٌ مّن مَّاءٍ غَيْرِ اٰسِنٍ وَاَنْهَارٌ مّن لَّبَنٍ لَّـمْ يَتَغَيَّرْ طَعْمُهُ وَاَنْهَارٌ مّنْ خَـمْرٍ لَّذَّةٍ لّلشَّارِبِيْنَ وَاَنْهَارٌ مّنْ عَسَلٍ مُّصَفًّى ۖ وَلَـهُمْ فِيْهَا مِن كُلّ الثَّمَرَاتِ وَمَغْفِرَةٌ مّن رَّبّـهِمْ ۖ 

অর্থ : “পরহেযগারদেরকে যে জান্নাতের ওয়াদা দেয়া হয়েছে, তার অবস্থা নিম্নরূপঃ তাতে আছে পানির নহর, নির্মল দুধের নহর যার স্বাদ অপরিবর্তনীয়, পানকারীদের জন্যে সুস্বাদু শরাবের নহর এবং পরিশোধিত মধুর নহর। তথায় উনাদের জন্যে আছে রকমারি ফল-মূল ও উনাদের মহান রব তায়ালা উনার ক্ষমা।” (পবিত্র সূরা মুহম্মদ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫)

বেহেশতবাসীদেরকে প্রদত্ত মদের বর্ণনা দিতে গিয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

يَطُوْفُ عَلَيْهِمْ وِلْدَانٌ مُّـخَلَّدُوْنَ ◌ بِاَكْوَابٍ وَاَبَارِيْقَ وَكَاْسٍ مّن مَّعِيْنٍ ◌ لَّا يُصَدَّعُونَ عَنْهَا وَلَا يُنْزِفُوْنَ ◌

অর্থ : “বেহেশতবাসীদের কাছে ঘোরাফেরা করবে চির কিশোরেরা। পানপাত্র কুঁজা ও খাঁটি সূরাপূর্ণ পেয়ালা হাতে নিয়ে, যা পান করলে তাদের শিরঃপীড়া হবে না এবং বিকারগ্রস্তও হবে না।” (পবিত্র সূরা ওয়াকিয়া শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৭-১৯)

অর্থাৎ বেহেশতে প্রদত্ত মদ এই দুনিয়াতে প্রদত্ত মদের মতো ঘৃণিত বস্তু নয় বরং তা হবে পবিত্র ও নির্মল, যার ফলে বেহেশতে মদ পান করার পরও কোন শিরঃপীড়া হবে না এবং বিকারগ্রস্তও হবে না। অথচ দুনিয়াবী মদ শিরঃপীড়া ও বিকারগ্রস্ততা সৃষ্টি করে।

মূলত চোখ থাকার পরও দিনের বেলায় সূর্যের আলোতে পেঁচা যেমন দেখতে পায়না, আবার ফুলে মধু থাকার পরও ভোমর কোনদিনই মধু সংগ্রহ করতে পারে না বরং বিষ সংগ্রহ করে। ঠিক তেমনি নাস্তিকরা নির্বোধ ও মূর্খ হওয়ার কারণে মস্তিষ্ক থাকার পরও পবিত্র কুরআন শরীফ উনার দ্বারা উপকৃত হতে পারবে না বরং পথভ্রষ্টই হবে। 

এদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَلَقَدْ ذَرَاْنَا لِـجَهَنَّمَ كَثِيرًا مّنَ الْـجِنّ وَالْاِنْسِ ۖ لَـهُمْ قُلُوْبٌ لَّا يَفْقَهُوْنَ بِـهَا وَلَـهُمْ اَعْيُنٌ لَّا يُبْصِرُوْنَ بِـهَا وَلَـهُمْ اٰذَانٌ لَّا يَسْمَعُوْنَ بِـهَا ۚ اُولٰئِكَ كَالْاَنْعَامِ بَلْ هُمْ اَضَلُّ ۚ اُولٰئِكَ هُمُ الْغَافِلُوْنَ ﴿١٧٩﴾

অর্থ : “আর আমি সৃষ্টি করেছি দোযখের জন্য বহু জ্বিন ও মানুষ। তাদের অন্তর রয়েছে, তার দ্বারা বিবেচনা করে না, তাদের চোখ রয়েছে, তার দ্বারা দেখে না, আর তাদের কান রয়েছে, তার দ্বারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই হল শৈথিল্যপরায়ণ, উদাসীন।” (পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৭৯)


0 Comments: