দোযখ থেকে পরিত্রাণপ্রাপ্তদেরকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের দাঁতভাঙ্গা জবাব

 

দোযখ থেকে পরিত্রাণপ্রাপ্তদেরকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের দাঁতভাঙ্গা জবাব

নাস্তিকদের আপত্তি : কাদের জন্যে রয়েছে দোজখ থেকে পরিত্রান? - যেকোন ধর্মপ্রাণ আস্তিকের জন্যে (Quran 5:69, 2:62) নাকি শুধুই মুসলিমদের জন্যে (Quran 3:85, 3:19)!

খণ্ডণ : মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- 

اِنَّ الدّيْنَ عِنْدَ اللهِ الْاِسْلَامُ ۗ

অর্থ : “নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৯)

এই পরিপ্রেক্ষিতে মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন- 

وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الْاِسْلَامِ دِيْنًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْاٰخِرَةِ مِنَ الْـخَاسِرِيْنَ ◌

অর্থ : “যে লোক সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৫)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো স্পষ্ট করে ইরশাদ মুবারক করেন-

هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْـهُدٰى وَدِيْنِ الْـحَقّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدّيْنِ كُلّهِ ۚ وَكَفٰى بِاللهِ شَهِيْدًا ◌

অর্থ : “তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হিদায়েত এবং সত্য দ্বীন সহকারে পাঠিয়েছেন সকল দ্বীন উনার উপর প্রাধান্য দিয়ে (সমস্ত দ্বীনকে বাতিল ঘোষণা করে তা ওহী দ্বারা নাযিলকৃত হোক অথবা মানব রচিত হোক আর তা পূর্বে হোক অথবা পরে হোক) এবং এ বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার স্বাক্ষ্যই যথেষ্ট।” (পবিত্র সূরা ফাতহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮)

উক্ত আয়াত শরীফত্রয় উনাদের ব্যাখ্যায় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-

عن حضرت جابر رضى الله تعالى عنه ان عمر بن الـخطاب عليه السلام اتى رسول الله صلى الله عليه وسلم بنسخة من التورة فقال يا رسول الله صلى الله عليه وسلم هذه نسخة من التورة فسكت فجعل يقرأ ووجه رسول الله صلى الله عليه وسلم يتغير فقال حضرت ابو بكر الصديق عليه السلام ثكلتك الثواكل ما ترى ما بوجه رسول الله صلى الله عليه وسلم فنظر حضرت عمر عليه السلام الى وجه رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال اعوذ بالله من غضب الله وغضب رسوله رضينا بالله ربا وبالاسلام دينا وبـمحمد صلى الله عليه وسلم نبيا فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم والذى نفس مـحمد صلى الله عليه وسلم بيده لو بدا لكم موسى عليه السلام فاتبعتموه وتركتمونى لضللتم عن سواء السبيل ولو كان حيا وادرك نبوتى لا تبعنى.

অর্থ : “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, একদিন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট পবিত্র তাওরাত শরীফ উনার একটি অংশ এনে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এটি পবিত্র তাওরাত শরীফ উনার একটি অংশ। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি চুপ রইলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি তা পড়তে আরম্ভ করলেন। আর এদিকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চেহারা মুবারক লাল হতে লাগলো। অর্থাৎ অসন্তুষ্টির ভাব ফুটে উঠলো। এটা দেখে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হে হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম! আপনার জন্য আফসুস! আপনি কি দেখছেন না যে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চেহারা মুবারক কি রূপ ধারণ করছে। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চেহারা মুবারক উনার দিকে তাকালেন এবং অসন্তুষ্টির ভাব লক্ষ্য করে বললেন, আমি মহান আল্লাহ পাক উনার অসন্তুষ্টি থেকে এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অসন্তুষ্টি থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পানাহ চাচ্ছি। এবং আমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে রব হিসেবে, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাকে দ্বীন হিসেবে ও মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নবী হিসেবে পেয়ে খুশী হয়েছি। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সেই মহান আল্লাহ পাক উনার কছম! যার অধিকারে আমার প্রাণ মুবারক রয়েছে, এ সময় যদি আপনাদের নিকট হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম (যাঁর উপর তাওরাত কিতাব নাযিল হয়েছে) জাহির বা প্রকাশ হতেন আর আপনারা আমাকে ছেড়ে উনার অনুসরণ করতেন তবুও আপনারা সরল পথ থেকে অবশ্যই বিচ্যুত অর্থাৎ গুমরাহ হয়ে যেতেন। এমনকি তিনি যদি এখন হায়াত মুবারকে থাকতেন আর আমাকে পেতেন তাহলে তিনিও নিশ্চয়ই আমার অনুসরণ করতেন।” (দারিমী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

উপরের আলোচনা হতে যে বিষয়টি সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত হলো, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার নুবুওওয়াতী শান মুবারক প্রকাশ করার পর পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব দ্বারা নাযিলকৃত সমস্ত বিধান রহিত হয়ে গিয়েছে। যে কেউ পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব অনুসরণ করে আমল করবে সেই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।

কিন্তু পূর্ববর্তীতে যাঁরা উনাদের সময়ের কোন নবী আলাইহিস সালাম উনাকে বা সে সময়ের জন্য নাযিলকৃত কোন আসমানী কিতাব উনার প্রকৃত অনুসরণ করেছেন উনারা হক্বপন্থী হিসেবেই গণ্য হবেন। আর তাই মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন-

اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَالَّذِيْنَ هَادُوا وَالنَّصَارٰى وَالصَّابِئِيْنَ مَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَعَمِلَ صَالِـحًا فَلَهُمْ اَجْرُهُمْ عِندَ رَبّـهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَـحْزَنُونَ ◌

অর্থ : “নিঃসন্দেহে যারা মুসলমান হয়েছেন এবং যারা ইয়াহুদী, নাছারা ও ছাবিঈন, (তাদের মধ্য থেকে) যারা ঈমান এনেছেন মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি ও কিয়ামত দিবসের প্রতি এবং সৎকাজ করেছেন। তাদের জন্য রয়েছে তার সওয়াব তাদের রব তায়ালা উনার কাছে। আর তাদের কোনই ভয়-ভীতি নেই, তারা দুঃখিতও হবে না ।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬২)

এ ব্যাপারে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوا وَالَّذِيْنَ هَادُوا وَالصَّابِئُوْنَ وَالنَّصَارٰى مَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَعَمِلَ صَالِـحًا فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَـحْزَنُوْنَ ◌

অর্থ : “নিশ্চয়ই যারা মুসলমান, যারা ইহুদী, ছাবেয়ী ও খ্রিষ্টান, তাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি, কিয়ামতের প্রতি এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না ।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৯)

সুতরাং প্রত্যেক নবী আলাইহিস সালাম উনার সময়ের উম্মতের মধ্যে যারা সে সময়ের নবী আলাইহিস সালাম উনাকে প্রকৃত অনুসরণ করেছে তারাই নাজাতপ্রাপ্ত। আর এ কারণেই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ উনার পবিত্র ১৯ নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন- 

اِنَّ الدّيْنَ عِنْدَ اللهِ الْاِسْلَامُ ۗ وَمَا اخْتَلَفَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ اِلَّا مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْعِلْمُ بَغْيًا بَيْنَهُمْ ۗ وَمَن يَكْفُرْ بِاٰيَاتِ اللهِ فَاِنَّ اللهَ سَرِيْعُ الْـحِسَابِ ◌

অর্থ : “নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম। আর যাদের প্রতি কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের নিকট প্রকৃত জ্ঞান আসার পরও শুধুমাত্র পরস্পর বিদ্বেষবশতঃ ওরা মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছে। যারা মহান আল্লাহ পাক উনার নিদর্শনসমূহের প্রতি কুফরী করে তাদের জানা উচিত যে, নিশ্চিতরূপে মহান আল্লাহ পাক হিসাব গ্রহণে অত্যন্ত দ্রুত।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৯)

সুতরাং সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব উনাদের যারা প্রকৃত অনুসারী এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নুবুওওয়াতী শান মুবারক প্রকাশিত হওয়ার পর যারা উনার প্রকৃত অনুসরণ করেছেন উনারা সবাই নাজাতপ্রাপ্ত।


0 Comments: