মহাসম্মানিত আরবী বাইয়াত মুবারক সম্পর্কে এক চরম জাহিল, গ-মূর্খ,  মিথ্যাবাদী, মুনাফিক্ব, উলামায়ে সূ’, ধোঁকাবাজ এবং প্রতারকের জিহালতী, মূর্খতা, মিথ্যাচার, ধোঁকা, প্রতারণা ও অপব্যাখ্যার দলীলভিত্তিক দাঁতভাঙ্গা জবাব-১
মহাসম্মানিত আরবী বাইয়াত মুবারক সম্পর্কে এক চরম জাহিল, গ-মূর্খ,  মিথ্যাবাদী, মুনাফিক্ব, উলামায়ে সূ’, ধোঁকাবাজ এবং প্রতারকের জিহালতী, মূর্খতা, মিথ্যাচার, ধোঁকা, প্রতারণা ও অপব্যাখ্যার দলীলভিত্তিক দাঁতভাঙ্গা জবাব-১

পিডিএফ লিংক- https://drive.google.com/open?id=1uz112vwrxdz3J288aRPSueGuRbLrXAna

আহমকের ময়লা লাগে তিন জাগায়। আর প্রতিবন্ধী মার্কা এক চরম জাহিল ও গ-মূর্খের ময়লা লাগলো সর্বজাগায়!
অবশেষে প্রতিবন্ধী মার্কা চরম জাহিল ও গ-মূর্খ লোকটা প্রমাণ করলো- সে নিজেও জানে না যে, সে কতটা চরম জাহিল ও গ-মূর্খ। না‘ঊযুবিল্লাহ! শুধু তাই নয়; তার সামান্যতম বিবেক-বুদ্ধিও যে নেই, সেটাও সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো। আরো প্রমাণিত হলো যে- আসলেই সে জন্মগত টেরা বা প্রতিবন্ধী। যদি তা না হতো, তাহলে সে শুধু মহাসম্মানিত আরবী বাইয়াত মুবারক সম্বলিত ইবারত মুবারকখানা না পড়ে, আগে পরে কি আছে তা পড়তো। আর ফিকির করতো যে, অন্যান্য ইবারতগুলোতে তো এরূপ ই’রাব দেয়া হয়নি! যিনি তার একটি মাত্র ভিডিওতে এতোগুলো ভুল ধরেছেন এবং বিশেষ করে মাত্র ৭ লাইনে এক ডজন তথা ১২টি ভুলসহ আরো অন্যান্য ভুল ধরেছেন, তিনি মহাসম্মানিত আরবী বাইয়াত মুবারক সম্বলিত ইবারত মুবারক উনার মধ্যে যেভাবে ই’রাব দিয়েছেন, অবশ্যই এখানে ব্যাকরণগত কোনো না কোনো নিয়ম-কানুন রয়েছে। কিন্তু এই প্রতিবন্ধী মার্কা চরম জাহিল ও গ-মূর্খ লোকটা তা ফিকির না করে নির্লজ্জ ও বেহায়ার মতো পুনরায় জনগণের সামনে এসে আবারও তার চরম জিহালতী এবং মূর্খতা নিজেই প্রকাশ করলো। সে যে কতোটা চরম জাহিল এবং গ-মূর্খ তা জিন-ইনসানের চিন্তা ও কল্পনার উর্ধ্বে। মূলত সে হচ্ছে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার ভাষায়-
اُولٰـئِكَ كَالْاَنْعَامِ بَلْ هُمْ اَضَلُّ
 অর্থ: “তারা চুতষ্পদ জন্তুর (কুকুর, শূকর, শৃগালের) ন্যায়; বরং তাদের চেয়েও বেশি গুমরাহ ও  নির্বোধ। না‘ঊযুবিল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১৭৯) যার কারণে এই প্রতিবন্ধী মার্কা চরম জাহিল ও গ-মূর্খ লোকটা পুনরায় তার চরম জিহালতী এবং মূর্খতা প্রকাশ করেছে। না‘ঊযুবিল্লাহ!
মূলত হক্বের বিরোধিতা করলে, আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদের বিরোধিতা করলে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিরোধীতা করলে যে ঈমান, আমল, আক্বীদা, আক্বল-সমঝ, বিবেক-বুদ্ধি সবকিছু নষ্ট হয়ে যায়, তার বাস্তব উদাহরণ হচ্ছে এই প্রতিবন্ধী মার্কা চরম জাহিল ও গ-মূর্খ লোকটা। না‘ঊযুবিল্লাহ!
শুরুতে সে হাস্যকর যে ভুলটা করেছে, সেটা হচ্ছে- সে লিখেছে এক্সলেমেটরী! অথচ শুদ্ধ হবে- ঊীপষধসধঃড়ৎু (এক্সক্ল্যাম্যাটরি)।
তার মতো প্রতিবন্ধী মার্কা চরম জাহিল ও গ-মূর্খদের ব্যাপারে বাংলাভাষায় একটি প্রবাদ বাক্য রয়েছে- ‘দেশী কুত্তার বিলাতী ডাক।’ অর্থাৎ বাংলা পারে না, ইংরেজী নিয়ে টানাটানি করে।
কাক যতোই ময়ূর সাজার চেষ্টা করুক না কেন, কাক কখনোই ময়ূর হতে পারে না। তদ্রুপ এই চরম জাহিল ও গ-মূর্খ লোকটা যতোই জ্ঞানী সাজার চেষ্টা করুক না কেন; সবসময় তার থেকে জিহালতী এবং মূর্খতাই প্রকাশ পাবে এটাই স্বাভাবিক। এখানেও তাই হয়েছে।
দেখুন, সে কত বড় চরম জাহিল ও গ-মূর্খ! সে লিখেছে, “নিম্নের আরবি এবারত খানা রাজারবাগী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার। (!) এক্সলেমেটরী বা (?) প্রশ্নবোধক চিহ্ন গুলো আমার দেয়া। তাদের পত্রিকায় এভাবেই হরকত দিয়ে এটি ছাপিয়েছে। এর মধ্যে হরকতের স্থলে জজম, কোন ক্ষেত্রে হামযা অছলের উপর হরকত দেয়া, কোথাও জমার শব্দ ইচ্ছেমত ব্যবহার করা, কোথাও শব্দ বিকৃত করা, আবার তরিকার নামটিও ইচ্ছামত ব্যবহার করা ইত্যাদি দূষে দূষিত।” লা’নাতুল্লাহি আলাইকা ইয়া আয়্যুহাল জাহিল! 
এর জবাবে বলতে হয় যে, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, আছ ছমাদ, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট সারা পৃথিবী থেকে বিভিন্ন দেশের, বিভিন্ন ভাষার এবং বিভিন্ন শ্রেণীর শত শত, হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ লোক (জিন-ইনসান) বাইয়াত গ্রহণ করে থাকে। সকলে যেন সহজে এবং সুন্দরভাবে মহাসম্মানিত আরবী বাইয়াত মুবারক উচ্চারণ করতে পারেন, সে কারণে মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অল্প অল্প করে, সহজ করে, ঘন ঘন ওয়াক্ফ করে বাইয়াত মুবারক করিয়ে থাকেন। এটা অবশ্যই জায়েয রয়েছে। এর দৃষ্টান্ত কিতাবাদিতে অনেক রয়েছে। এটা তো আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ না, যে নির্দিষ্ট জায়গায় ওয়াক্বফ করতে হবে।
আর মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেভাবে মহাসম্মানিত বাইয়াত মুবারক করিয়ে থাকেন, আমি হেকায়াতান এখানে সেভাবে ই’রাব দিয়েছি। এটা আরবী ব্যাকরণেরই একটি নিয়ম। জায়েয তো অবশ্যই, সেটা আর বলার অপেক্ষাই রাখে না। যারা চরম জাহিল ও গ-মূর্খ তাদের এই নিয়মটি জানা নেই। 
এই প্রতিবন্ধী মার্কা চরম জাহিল ও গ-মূর্খ লোকটা মহাসম্মানিত আরবী বাইয়াত মুবারক সম্বলিত ইবারতখানা বুঝতে না পারার মূল কারণ হচ্ছে- প্রথমত সে কঠিন লা’নতগ্রস্ত। আর দ্বিতীয়ত সে একটা চরম জাহিল ও গ-মূর্খ। মূলত মহাসম্মানিত আরবী বাইয়াত মুবারক সম্বলিত ইবারতে আমি ই’রাবে হিকায়ী অনুযায়ী ই’রাব দিয়েছি এবং লফ্য বা শব্দ মুবারকগুলোও হিকায়ী হিসেবে গ্রহণ করেছি। এরকম হিকায়ী ই’রাব প্রদান করা এবং হিকায়ী লফ্য গ্রহণ করার অনেক উদাহরণ কিতাবাদিতে রয়েছে। ইলমুল আরূযের কারণে যেমন ই’রাব এবং লফ্য পরিবর্তন হয়ে যায়, তেমনি হিকায়ী ই’রাব এবং লফ্য উল্লেখ করার কারণেও ই’রাব এবং লফ্য পরিবর্তন হয়ে যায়।
ই’রাবে হিকায়ী-এর উদাহরণ হচ্ছেন, সম্মানিত ও পবিত্র সূরা মু’মিনূন শরীফ (سُوْرَةُ الْـمُؤْمِنُوْنَ), সম্মানিত ও পবিত্র সূরা মুনাফিকূন শরীফ (سُوْرَةُ الْـمُنٰفِقُوْنَ) এবং সম্মানিত ও পবিত্র সূরা কাফিরূন শরীফ (سُوْرَةُ الْكٰفِرُوْنَ)। এখানে سُوْرَةُ (সূরাতু) লফ্য মুবারকখানা মুদ্বাফ, আরاَلْمُؤْمِنُوْنَ  (আল মু’মিনূনা), اَلْـمُنٰفِقُوْنَ (আল মুনাফিকূনা) এবং اَلْكٰفِرُوْنَ (আল কাফিরূনা) লফ্য মুবারক তিনখানা মুদ্বাফ ইলাইহি। মুদ্বাফ ইলাইহি হিসেবে লফ্য মুবারক তিনখানা মাজরূর হওয়ার কারণেاَلْمُؤْمِنِيْـنَ  (আল মু’মিনীনা), اَلْـمُنٰفِقِيْـنَ (আল মুনাফিক্বীনা) এবং اَلْكٰفِرِيْنَ (আল কাফিরীনা) হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু তা না হয়েاَلْمُؤْمِنُوْنَ  (আল মু’মিনূনা), اَلْـمُنٰفِقُوْنَ (আল মুনাফিকূনা) এবং اَلْكٰفِرُوْنَ (আল কাফিরূনা) হয়েছে। কারণ হচ্ছে- এই সম্মানিত ও পবিত্র সূরা শরীফ তিনখানা উনাদের নামকরণ করার ক্ষেত্রে উক্ত সম্মানিত ও পবিত্র সূরা শরীফ তিনখানা উনাদের মধ্য থেকে হুবহু লফ্য মুবারক নিয়ে উক্ত সম্মানিত ও পবিত্র সূরা শরীফ তিনখানা উনাদের নামকরণ করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
এই প্রতিবন্ধী মার্কা চরম জাহিল ও গ-মূর্খ লোকটা এবং তার সমমনা জাহিলগুলো জীবনে কখনও হয়তো হিকায়ী ই’রাবের নামও শুনেনি। যদি শুনতো, তাহলে সে বলতো না- ‘প্রায় ২৮টি ছোট বড় ভুল রয়েছে এখানে। আরবি ভাষায় পারদর্শী বন্ধুরা  ইনবক্সে আসনু।’ অতঃপর এই প্রতিবন্ধী মার্কা চরম জাহিল ও গ-মূর্খ লোকটা এবং তার সমমনা জাহিলগুলো সমস্বরে ভুল পেয়েছি বলে শিয়ালের ন্যায় হুক্কা হুয়া স্বরে চিৎকার, চেঁচামেচি শুরু করে দিতো না। আসলে জাহিলের বন্ধু যে জাহিলরাই হয়ে থাকে, তার প্রমাণ হচ্ছে সদরুশ শয়তান লা’নাতুল্লাহি আলাইহি এবং তার সমমনা ও সমগোত্রীয় লা’নাতুল্লাহি আলাইহিম আজমা‘ঈনগুলো। না‘ঊযুবিল্লাহ! 
এই প্রতিবন্ধী মার্কা চরম জাহিল ও গ-মূর্খ লোকটার আরবী পারদর্শী বন্ধুদের যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে সে যে কত বড় চরম জাহিল ও গ-মূর্খ তা ভাষায় প্রকাশ করা কখনও সম্ভব নয়। না‘ঊযুবিল্লাহ!
    সে লিখেছে, ‘কোথাও জমা শব্দের ইচ্ছামত ব্যবহার’। তারপর সে মহাসম্মানিত আরবী বাইয়াত মুবারক সম্বলিত ইবারত মুবারক উনার طَرِيْــقَاتٍ (ত্বরীক্বা̄তিন) এই শব্দ মুবারকখানা চিহ্নিত করেছে। না‘ঊযুবিল্লাহ!
এর জবাবে বলতে হয় যে, অবশ্যই সে একটা চরম জাহিল ও গ-মূর্খ এবং তার সমমনা যারা আছে তারাও চরম জাহিল ও গ-মূর্খ তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। তারা কয়েকটা অভিধান দেখেছে, যেখানে طَرِيْقَةٌ (ত্বরীক্বতুন) শব্দের জমা’ বা বহুবচন طَرِيْــقَاتٌٌ (ত্বরীক্বা̄তুন) উল্লেখ করা হয়নি। যার কারণে এই প্রতিবন্ধী মার্কা চরম জাহিল ও গ-মূর্খ লোকটা এবং তার সমমনা চরম জাহিল ও গ-মূর্খগুলো শিয়ালের মতো হুক্কা হুয়া ডাক দিয়ে চিৎকার, চেঁচামেচি শুরু করে দিয়েছে যে, ‘কোথাও জমা শব্দের ইচ্ছামত ব্যবহার’। এ কথা দ্বারা সে এবং তার সমমনা চরম জাহিল ও গ-মূর্খগুলো বুঝাতে চেয়েছে যে, طَرِيْــقَاتٍ (ত্বরীক্বা̄তিন) লেখাটা ভুল হয়েছে। না‘ঊযুবিল্লাহ! কুয়ার ব্যাঙ কুয়াকেই মহাসমুদ্র মনে করে থাকে। এসব চরম জাহিল ও গ-মূর্খদের অবস্থাও ঠিক তাই হয়েছে। ফলে তাদের জানা নেই যে, طَرِيْقَةٌ (ত্বরীক্বতুন) শব্দের জমা’ বা বহুবচন طَرِيْــقَاتٌٌ (ত্বরীক্বা̄তুন) ব্যবহার করা অবশ্যই জায়েয রয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
যাঁদের নাম শুনলে এই প্রতিবন্ধী মার্কা চরম জাহিল ও গ-মূর্খ লোকটা এবং তার সমগোত্রীয় যারা রয়েছে, তারা দিনে হাজার বার নমো নমো করবে এবং গুরু গুরু বলতে বলতে মুখের ছাল-বাকলা তুলে ফেলবে, সেই জগৎবিখ্যাত হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারাই উনাদের স্বীয় কিতাবে طَرِيْقَةٌ (ত্বরীক্বতুন) শব্দের জমা’ বা বহুবচন طَرِيْــقَاتٌٌ (ত্বরীক্বা̄তুন) ব্যবহার করা জায়েয বলেছেন এবং ব্যবহারও করেছেন। সুবহানাল্লাহ! যেমন-
(১) জগৎবিখ্যাত ইমাম ও মুজতাহিদ আল্লামা হযরত ইমাম আবূ হাইয়্যান মুহম্মদ ইবনে ইঊসুফ ইবনে ‘আলী ইবনে ইঊসুফ ইবনে হাইয়্যান আছীরুদ্দীন আন্দালুসী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ : ৭৪৫ হিজরী শরীফ) তিনি উনার সর্বজনমান্য ও বিশ্বখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ ‘তাফসীরুল বাহ্রিল মুহীত্ব’ (দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ্- বইরূত লেবানন থেকে প্রকাশিত) উনার ২য় খ-ের ৩১৬-৩১৭ পৃষ্ঠায় বলেন, 
قَوْلُهٗ تَعَالـٰى {سَبْعَ طَرَآاِقَ} وَ{سَبْعَ لَيَالٍ} وَلَـمْ يَقُلْ طَرِيقَاتٌ وَلَا لَيْلَاتٌ وَإِنْ كَانَ جَائِزًا فِـىْ جَمْعِ طَرِيْقَةٍ وَلَيْلَةٍ.
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কালাম মুবারক- ‘ سَبْعَ   طَرَائِقَ (সাব্‘আ ত্বরাইক্বা) সাত রাস্তা’ এবং ‘ سَبْعَ لَيَالٍ (সাব্‘আ লায়ালিন) সাত রাত্রি’। মহান আল্লাহ পাক তিনি طَرِيْقَاتٌ (ত্বরীক্বা̄তুন) এবং لَيْلَاتٌ  (লাইলা̄তুন) বলেননি। যদিও طَرِيْقَةٌ (ত্বরীক্বতুন) এবং لَيْلَةٌ (লাইলাতুন) শব্দের জমা’ বা বহুবচনطَرِيْــقَاتٌ  (ত্বরীক্বা̄তুন) এবংلَيْلَاتٌ  (লাইলা̄তুন) ব্যবহার জায়েয রয়েছে। সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরুল বাহরিল মুহীত্ব ২/৩১৬-৩১৭)
সুতরাং জগৎবিখ্যাত ইমাম ও মুজতাহিদ আল্লামা হযরত ইমাম আবূ হাইয়্যান মুহম্মদ ইবনে ইঊসুফ ইবনে ‘আলী ইবনে ইঊসুফ ইবনে হাইয়্যান আছীরুদ্দীন আন্দালুসী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এই বক্তব্য দ্বারা অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, طَرِيْقَةٌ (ত্বরীক্বতুন) শব্দের জমা’ বা বহুবচনطَرِيْــقَاتٌ  (ত্বরীক্বা̄তুন) ব্যবহার করা অবশ্যই জায়েয রয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
শুধু তাই নয়; আরো অন্যান্য জগৎবিখ্যাত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারাও উনাদের কিতাবসমূহে অনুরূপ বলেছেন।
(২) জগৎবিখ্যাত ইমাম ও মুজতাহিদ আল্লামা হযরত ইমাম আবূ ত্বালিব মুহম্মদ ইবনে আলী ইবনে ‘আত্বীয়্যাহ্ হারিছী মাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ ৩৮৬ হিজরী শরীফ) তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘কূতুল কুলূব ফী মু‘আমিলাতিল মাহ্বূব’ (দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ্- বইরূত লেবানন থেকে প্রকাশিত) উনার ২য় খ-ের ৮৭ পৃষ্ঠায় طَرِيْقَةٌ (ত্বরীক্বতুন) শব্দের জমা’ বা বহুবচনطَرِيْــقَاتٌ  (ত্বরীক্বা̄তুন) ব্যবহার করেছেন। যেমন তিনি উল্লেখ করেছেন-
فَهٰذِهٖ طَرِيْقَاتُ الْـمُحِبِّيْنَ له عن كشوف اطلاعه لهم من عين اليقين.
(৩) জগৎবিখ্যাত ইমাম ও মুজতাহিদ আল্লামা হযরত ইমাম ত্বীবী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ : ৭৪৩ হিজরী শরীফ) তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘ফুতূহুল গইব ফিল কাশফি ‘আন ক্বিনাইর রইব’ উনার ১৬তম খ-ের ৫৪২ পৃষ্ঠায় طَرِيْقَةٌ (ত্বরীক্বতুন) শব্দের জমা’ বা বহুবচনطَرِيْــقَاتٌ  (ত্বরীক্বা̄তুন) ব্যবহার করেছেন। যেমন তিনি উল্লেখ করেছেন-
قوله (خُذا بطن هَرشى) البيت هَرشى عقبة في طريق مكة قريبة من الجُحفة لَـهَا طَرِيْقَاتٌ يخاطب صاحبيه. 
(৪) জগৎবিখ্যাত ইমাম ও মুজতাহিদ আল্লামা হযরত ইমাম শিহাবুদ্দীন আবুল আব্বাস আহমদ ইবনে আহমদ ইবনে মুহম্মদ ইবনে ‘ঈসা আল বারনাসী আল ফাসী আল মা’রূফ বির্যারূক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ : ৮৯৯ হিজরী শরীফ) তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘শারহু র্যারূক্ব ‘আলা মাত্নির রিসালাহ্’ (দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ্- বইরূত লেবানন থেকে প্রকাশিত) উনার ১ম খ-ের ১১ পৃষ্ঠায় طَرِيْقَةٌ (ত্বরীক্বতুন) শব্দের জমা’ বা বহুবচনطَرِيْــقَاتٌ      (ত্বরীক্বা̄তুন) ব্যবহার করেছেন। যেমন তিনি উল্লেখ করেছেন-
وَرُبَـمَا ذُكِرَتْ طَرِيْقَاتٌ مِنْ اختصار الشيخ الصالح أبي محمد الشبيبي لشرح الشيخ تاج الدين بن الفاكهاني وذلك في الأوائل.
(৫) জগৎবিখ্যাত ইমাম ও মুজতাহিদ আল্লামা হযরত ইমাম আবূ আব্দিল্লাহ মুহম্মদ ইবনে মুহম্মদ ইবনে ‘আরাফাহ্ আল ওয়ারগ¦মী আত্ তূনুসী মালিকী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ : ৮০৩ হিজরী শরীফ) তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘আল মুখতাছারুল ফিক্বহী’ উনার ৩য় খ-ের ২৩ পৃষ্ঠায় طَرِيْقَةٌ (ত্বরীক্বতুন) শব্দের জমা’ বা বহুবচনطَرِيْــقَاتٌٌ  (ত্বরীক্বা̄তুন) ব্যবহার করেছেন। যেমন তিনি উল্লেখ করেছেন-
ابن رُشْد لا بأس أن يستعار منهم السلاح ولو استعين بهم ففي الإسهام لَـهُمْ طَرِيْقَاتٌ
এছাড়া বিশ্বখ্যাত আরো অনেক কিতাবে طَرِيْقَةٌ (ত্বরীক্বতুন) শব্দের জমা’ বা বহুবচনطَرِيْــقَاتٌٌ  (ত্বরীক্বা̄তুন) ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু এই প্রতিবন্ধী মার্কা চরম জাহিল ও গ-মূর্খ লোকটা এবং তার সমমনা চরম জাহিল ও গ-মূর্খ লা’নাতুল্লাহি আলাইহিম আজমা‘ঈনগুলো তাহ্ক্বীক্ব না করে, কয়েকটা বই পড়ে শিয়ালের মতো হুক্কা হুয়ার ডাক দিয়ে নিজেদের চরম জিহালতী ও মূর্খতা নিজেরই প্রকাশ করেছে। না‘ঊযুবিল্লাহ!
আর আমি যে আমার আলোচনায় এই প্রতিবন্ধী মার্কা চরম জাহিল ও গ-মূর্খ লোকটার ভুল ধরেছিলাম, এ বিষয়ে সে লিখেছে, সে নাকি ঘুম চোখে (অচেতন অবস্থায়) ভিডিও করেছে, সেজন্য তার ভুল হয়েছে। আরো লিখেছে যে, ভিডিও তো সেজন্য সে এডিট করতে পারেনি। এক মিথ্যাকে ঢাকার জন্য হাজার মিথ্যার আশ্রয় নিলেও মিথ্যাটা মিথ্যাই থাকবে, মিথ্যাটা কখনোই সত্য হবে না। আচ্ছা, যা হোক; এখন তো চোখ খোলার কথা। তাহলে এখন কোন চোখে লিখেছে? এখন ভুল হলো কেন? এখন কি টেরা চোখে লিখেছে? না কি আবারোও ঘুম চোখে (মাতাল অবস্থায়) লিখেছে?  আচ্ছা; ধরে নিলাম যে, সে এবারও ঘুম চোখে (মাতাল অবস্থায়) বা টেরা চোখে এ্যাবরো-থ্যাবরো দেখে লিখেছে, যার কারণ তার আবারও ভুল হয়েছে। কিন্তু এবার তো তার এডিট করার সুযোগ ছিলো। এবার তো আর ভিডিও না। তাহলে ভুল করলো কেন? তাহলে স্পষ্টভাবেই বুঝা যাচ্ছে যে, এই প্রতিবন্ধী মার্কা চরম জাহিল ও গ-মূর্খ লোকটা সবসময়ই ঘুম চোখে অচেতন (মাতাল)  অবস্থায় থাকে। যার কারণে সবসময় সে ভুল করে। যারা এরূপ সবসময়ই ঘুম চোখে অচেতন (মাতাল) অবস্থায় থাকে, তাদের ফতওয়া মহাসম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে আদৌ গ্রহণযোগ্য না। অবশ্য দাজ্জালের টেরা চোখের মাতলামী ফতওয়া, দাজ্জালের অনুসারীদের নিকট গ্রহণযোগ্য হতে পারে। তাহলে এই প্রতিবন্ধী মার্কা চরম জাহিল ও গ-মূর্খ লোকটা কি নিজেকে প্রমাণ করলো যে, সে একটা টেরা চোখা, প্রতিবন্ধী মার্কা মাতাল দাজ্জাল এবং তার সাথে যারা শিয়ালের ন্যায় হুক্কা হুয়া বলে চিৎকার, চেঁচামেচি করে উঠেছে, তারা হচ্ছে একটা টেরা চোখা, প্রতিবন্ধী মার্কা মাতাল দাজ্জালের চেলা? না‘ঊযুবিল্লাহ!
তার মতো নির্লজ্জ ও বেহায়াদের ব্যাপারে বাংলা ভাষায় একটি আঞ্চলিক প্রবাদ বাক্য রয়েছে, ‘বেহায়ারে মারে পিছা, বেহায়া কয় হাছা মিছা।’
তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঐ নির্লজ্জ ও বেহায়ার মতো- যাকে গাছের সাথে বেঁধে শত শত লোকের সামনে অসংখ্য জুতা পিটা করা হয়েছে। তারপরেও সে বলে, সমস্যা কি আমার তো মান-ইজ্জত যায়নি। গাছের সাথে বেঁধে সবার সামনে জুতা দিয়ে মাত্র কয়েকটি পিটা দিয়েছে। তাতে কি হয়েছে? আসলে এই প্রতিবন্ধী মার্কা চরম জাহিল ও গ-মূর্খ লোকটার মান-ইজ্জতই নেই। মান-ইজ্জত থাকলে তো যাবে। না থাকলে যাবে কি?
মহান আল্লাহ পাক তিনি এই শ্রেণীর চরম জাহিল ও গ-মূর্খ দাজ্জালে কায্যাবদের থেকে সবাইকে হিফাযত করুন। আমীন!
তারপর এই প্রতিবন্ধী মার্কা চরম জাহিল ও গ-মূর্খ লোকটা লিখেছে, ‘কোথাও শব্দ বিকৃত করা’। এ কথা দ্বারা সে কি বুঝিয়েছে, তা অস্পষ্ট। কিন্তু আমি যখন তার ভুল ধরেছিলাম, তখন আমি স্পষ্টভাবেই উল্লেখ করেছিলাম যে, কোন্টি ভুল হয়েছে, কি কারণে ভুল হয়েছে এবং এর শুদ্ধ কোন্টি। কিন্তু সে এরূপ করেনি। এর মাধ্যমেও অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, সে এবং তার সমগোত্রীয়রা চরম জাহিল ও গ-মূর্খ। যদি এই প্রতিবন্ধী মার্কা চরম জাহিল ও গ-মূর্খ লোকটার ইলমের জোর থাকতো, তাহলে সে অবশ্যই আমার মতো প্রত্যেকটি বিষয় স্পষ্ট করে বলতো। কিন্তু সে এটা করেনি। তার যদি হিম্মত থাকে, তাহলে সে প্রত্যেকটি বিষয় স্পষ্ট করুক। আমি তার প্রত্যেকটি বিষয়ের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিবো। ইনশাআল্লাহ!
তারপর এই চরম জাহিল ও গ-মূর্খ লোকটা লিখেছে, ‘তরিকার নামটিও ইচ্ছামতো ব্যবহার করা’। আর সে মহাসম্মানিত আরবী বাইয়াত মুবারক সম্বলিত ইবারত মুবারক উনার وَالْچِشْتِيَّةْ (ওয়াল চিশতিয়্যাহ্) উনার মধ্যে ‘چِ (চে)’ অক্ষরে চিহ্ন দিয়েছে। এর মাধ্যমে সে আবারো প্রমাণ করেছে যে, আসলেই সে একটা চরম জাহিল ও গ-মূর্খ। ‘چِ (চে)’ অক্ষরে চিহ্ন দিয়ে প্রথমত সে বুঝিয়েছে যে, মহাসম্মানিত আরবী বাইয়াত মুবারক উনার মধ্যে ‘چِ (চে)’ অক্ষর ব্যবহার করে وَالْچِشْتِيَّةْ (ওয়াল চিশতিয়্যাহ্) লেখা শুদ্ধ হয়নি। আর দ্বিতীয়ত সে আরো একটি বিষয় বুঝাতে চেয়েছে যে, আরবী বাক্যে ‘উর্দূ ও ফার্সী’ অক্ষরের ব্যবহার করা শুদ্ধ হয়নি। না‘ঊযুবিল্লাহ! অথচ আরবীতেও যে وَالْچِشْتِيَّةْ (ওয়াল চিশতিয়াহ্) লেখা বা বলা এবং আরবী বাক্যে ‘উর্দূ ও ফার্সী’ অক্ষর ব্যবহার করা অবশ্যই ছহীহ্-শুদ্ধ এ ধারণাটাই তার নেই। কতো বড় চরম জাহিল ও গ-মূর্খ সে!
আরবীতেও যে وَالْچِشْتِيَّةْ (ওয়াল চিশতিয়াহ্) লেখা বা বলা এবং আরবী বাক্যে ‘উদূ ও ফার্সী’ শব্দের ব্যবহার অবশ্যই ছহীহ্-শুদ্ধ এ বিষয়ে কিছু উদাহরণ পেশ করা হলো। যেমন-
(১) নক্বশাবন্দিয়া তরীক্বাহ্ উনার বিশিষ্ট বুযূর্গ (জাহিলটার বক্তব্য অনুযায়ী নক্বশাবন্দী তরীক্বার একজন ইমাম) আল্লামা হযরত কাজী ছানাউল্লাহ পানিপথী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত এবং সর্বজনমান্য তাফসীরগ্রন্থ ‘তাফসীরে মাযহারী শরীফ’ উনার ৩য় খ-ের ৩৬২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন, 
وَلَعَلَّ الصُّوْفِيَّةَ الْچِشْتِيَّةَ قَدَّسَ اللهُ تَعَالـٰى اَسْرَارَهُمْ
 (২) সাইয়্যিদ ‘আলী মীলানী উনার বিশ্বখ্যাত আরবী কিতাব ‘নাফ্হাতুল আয্হার’ উনার ১৯তম খ-ের ৩৯৮ নং পৃষ্ঠায় الچشتية (আল চিশতিয়্যাহ) শব্দটি উল্লেখ রয়েছে। যেমন- 
مِنَ الْچِشْتِيَّةِ بشعبها.
(৩) শু‘আইব আফেন্দী বিন ইদরীস আল বাক্কানী (ইন্তিকাল ১৩৩০ হিজরী শরীফ) তিনি উনার বিশ্বখ্যাত আরবী কিতাব ‘ত্ববাক্বাতুল খ¦ওয়াজাকানিন নাক্বশাবান্দিয়্যাহ্ ওয়া সাদাতিল মাশাইখিল খ¦ালিদিয়্যাতিল মাহ্মূদিয়্যাহ্’ উনার মধ্যে ১০ স্থানে الچشتية (আল চিশতিয়্যাহ) শব্দটি উল্লেখ করেছেন এবং ১ স্থানে الچشتي (আল চিশতী) শব্দটি উল্লেখ করেছেন । 
(৪) খ¦াতিমাতুল মুরশিদীনাল কামিলীন, ইমামুল ‘উলামাইল ‘আমিলীন, ক্বুদওয়াতুল আউলিয়াইল ওয়াছিলীন, শায়েখ মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ নাক্বশাবান্দী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ ১২৭৯ হিজরী শরীফ) তিনি উনার বিশ্বখ্যাত আরবী কিতাব ‘কিতাবুল বাহ্জাতিস সুন্নিয়্যাহ্’ উনার ৪ স্থানে الچشتية (আল চিশতিয়্যাহ্) শব্দটি উল্লেখ করেছেন এবং ১ স্থানে الچشتي (আল চিশতী) শব্দটি উল্লেখ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
(৫) ‘নুয্হাতুল খ¦ওয়াত্বির ওয়া বাহ্জাতুল মাসামি’ ওয়ান নাওয়াযির’ কিতাবের ৪র্থ খ-ের ২৭০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে,
كَانَ مِنَ الْـمَشَايِخِ الْـمَشْهُوْرِيْنَ فِـى الطَّرِيْقَةِ الْچِشْتِيَّةِ.
(৬) ‘নুয্হাতুল খ¦ওয়াত্বির ওয়া বাহ্জাতুল মাসামি’ ওয়ান নাওয়াযির’ কিতাবের ৩য় খ-ের ১২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে,
اَلشَّيْخُ الصَّالِحُ الْفَقِيْهُ اَحْمَدُ بْنُ مَـحْمُوْد اَلْـحُسَيْنِـىُّ الْعَرِيْضِىُّ النَّهْرَوَالِـىُّ الْگُجْرَاتِىُّ اَحَدُ الْـمَشَايِخِ الْچِشْتِيَّةِ وُلِدَ وَنَشَاَ بِاَرْضِ گُجْرَات وَقَرَاَ الْعِلْمَ عَلـٰى عَمِّهِ الشَّيْخِ حُسَيْنِ بْنِ عُمَرَ الْعَرِيْضِىِّ الْغِيَاثْبُوْرِىِّ ثُـمَّ الْگُجْرَاتِـىِّ
বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় যে, উপরোক্ত আরবী ইবারতে الچشتية (আল চিশতিয়্যাহ্) শব্দটি একবার উল্লেখ করাসহ দুই বার الگجراتى (আল গুজরাতী) এবং একবার گجرات (গুজরাত) শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে।
(৭) হিন্দুস্তানের প্রখ্যাত ঐতিহাসিক এবং ১৪শত হিজরী শতকের বিশ্বখ্যাত লেখক আল্লামা সাইয়্যিদ আব্দুল হাই ইবনে ফখরুদ্দীন ইবনে আলী হাসানী তিনি উনার আরবী ভাষায় লিখিত বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘আছ ছাক্বাফাতুল ইসলামিয়্যাহ্ ফিল হিন্দ’ নামক কিতাবে الچشتية (আল চিশতিয়্যাহ্) শব্দটি ২৪ বার লিখেছেন, الچشتي (আল চিশতী) শব্দটি ১৭ বার লিখেছেন। এছাড়াও তিনি উনার উক্ত আরবী কিতাবে উর্দূ ও ফার্সী ভাষায় ব্যবহৃত پ (পে) অক্ষরটি প্রায় ৬৮৫ বার, چ (চে) অক্ষরটি প্রায় ১৬৯ বার এবং گ (গাফ) অক্ষরটি প্রায় ৭৬৮ বার ব্যবহার করেছেন। নি¤েœ কয়েকটি নমুনা দেয়া হলো-
پ (পে) অক্ষরের ব্যবহার: 
عيسى بن القاسم السندي البرهانپوري - عبد الله الغازيپوري - صادق محمد خان البهاولپوري - الزيدپوري - سكندر علي خان الخالصپوري - أبي الحسن بن القاضي عبد العزيز البيجاپوري - وسفينة البلاغة للشيخ محمد زمان الشاهجهانپوري 
گ (গাফ) অক্ষরের ব্যবহার:  
الشيخ وجيه الدين العلوي الگجراتي (১)
 (২)وشرح الإرشاد لأبي الخير بن المبارك الناگوري 
এছাড়াও বিশ্বখ্যাত আরবী কিতাব ‘ত্ববাক্বাতুল খ¦ওয়াজাকানিন নাক্বশাবান্দিয়্যাহ্ ওয়া সাদাতিল মাশাইখিল খ¦ালিদিয়্যাতিল মাহ্মূদিয়্যাহ্’ উনার মধ্যে উর্দূ ও ফার্সী ভাষায় ব্যবহৃত پ (পে) অক্ষরটি ৫৬ বার উল্লেখ রয়েছে। নি¤েœ উদাহরণ স্বরূপ কয়েকটি উল্লেখ করা হলো, 
پارسا - پير -كاسپان -الشيخ الكاسپاني - لما جئت إلى رمپور - الشيخ خليل پاشا - أقول جئت بثناء االله الپاني پتي.
এছাড়া আরবী ভাষায় লিখিত বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘কিতাবুল বাহ্জাতিস সুন্নিয়্যাহ্ এবং আস সা‘আদাতুল আবাদিয়্যাহ্’ এই দুখানা কিতাবসহ আরো বহু কিতাবে আরবীতে ‘ফার্সী ও উর্দূ’ ভাষায় ব্যবহৃত گ (গাফ), پ (পে) ও چ (চে) অক্ষরগুলো অসংখ্য বার ব্যবহার করা হয়েছে। আবার কোনো কোনো কিতাবে ٹ (টে) অক্ষরও ব্যবহার করা হয়েছে। কলেবর বৃদ্ধির আশঙ্কায় এখানেই শেষ করলাম।
সুতরাং মহাসম্মানিত আরবী বাইয়াত মুবারক সম্বলিত ইবারতে যে, وَالْچِشْتِيَّةْ (ওয়াল চিশতিয়্যাহ্) লেখা হয়েছে, এটা অবশ্যই জায়েয রয়েছে। আরবীতে এরূপ ব্যবহার হয়ে থাকে। কিতাবাদিতে এরূপ অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। অনুরূপভাবে মহাসম্মানিত আরবী বায়াত মুবারক উনার মধ্যে وَالْمُجَدِّدِ الْعَالِيَةْ (ওয়াল মুজাদ্দিদিল ‘আলিয়াহ্) সহ আরো যা কিছু উল্লেখ রয়েছে, প্রত্যেকটিই লেখা অবশ্যই জায়েয ও শুদ্ধ। সুবহানাল্লাহ! কলেবর বৃদ্ধির আশঙ্কায় এখানেই ইতি টানলাম। জ্ঞানীদের জন্য ইশারা-ইঙ্গিতই যথেষ্ট।
সুতরাং এখান থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, এই প্রতিবন্ধী মার্কা লোকটা একটা চরম জাহিল ও গ-মূর্খ। যার আরবী ভাষা সম্পর্কে নূন্যতম জ্ঞানও নেই। সারা জীবন চাপাবাজী করে এবং ফাঁকিঝুকি দিয়ে সময় কাটিয়েছে। না‘ঊযুবিল্লাহ!
 সে লিখেছিলো, “নিম্নের আরবি এবারত খানা রাজারবাগী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার। (!) এক্সলেমেটরী বা (?) প্রশ্নবোধক চিহ্ন গুলো আমার দেয়া। তাদের পত্রিকায় এভাবেই হরকত দিয়ে এটি ছাপিয়েছে। এর মধ্যে হরকতের স্থলে জজম, কোন ক্ষেত্রে হামযা অছলের উপর হরকত দেয়া, কোথাও জমার শব্দ ইচ্ছেমত ব্যবহার করা, কোথাও শব্দ বিকৃত করা, আবার তরিকার নামটিও ইচ্ছামত ব্যবহার করা ইত্যাদি দূষে দূষিত।” লা’নাতুল্লাহি আলাইকা ইয়া আয়্যুহাল জাহিল!
এর জবাবে বলতে হয় যে, এই প্রতারকটা তো কল্পনাতীত চরম জাহিল ও গ-মূর্খ। আরবী ক্বাওয়াইদ সম্পর্কে তো তার ইলমই নেই। আরবী ক্বাওয়াইদ বললে, এই প্রতিবন্ধী মার্কা চরম জাহিল ও গ-মূর্খ লোকটার ও তার সমগোত্রীয় বালহুম আদ্বল্লগুলোর ধারণ করার যোগ্যতাও নেই। তাই তার উপরোক্ত জিহালতীর জবাবে তুরস্কের ইস্তাম্বুল থেকে ছাপানো একটি আরবী কিতাব থেকে নি¤েœাক্ত আরবী ইবারতখানা অবিকল তুলে ধরলাম। আশা করি- তার ও তার সমমনা টেরা চোখা, মাতাল দাজ্জালদের শিয়ালের ন্যায় হুক্কা হুয়া চিৎকার, চেঁচামেচি বন্ধ হবে- 
اِمَامِنَا وَ اِمَامِ الطَّرِيقَةِ وَ غَوْثِ الْخَلِيقَةِ وَ شَمْسِ فَلَكِ الْحَقِيقَةِ ذِي الْفَيْضِ ن الْجَارِي وَ النُّورِ السَّارِي اَلشَّيْخْ بَهَاءِ الْحَقِّ وَ الْحَقِيقَةِ وَ الدِّينِ اَلشَّيْخْ مُحَمَّدِ اْلاُوَيْسِيِّ الْبُخَارِي اَلْمَعْرُوفِ بِشَاهِ نَقْشِبَنْدْ قَدَّسَ اللهْ تَعَالَى اَسْرَارَهُ الْعَزِيزْ وَ اِلَى رُوحِ سُلْطَانِ اْلاَوْلِيَاءِ بُرْهَانِ اْلاَصْفِيَاءِ نَجْلِ الْحَسَنَيْنِ نُورِ الْخَافِقَيْنِ اَبِي مُحَمَّدٍ مُحْييِ الدِّينِ اَلْغَوْثِ اْلاَعْظَمْ اَلشَّيْخْ عَبْدِ اْلقَادِرِ الْجَيْلاَنِي قَدَّسَ اللهْ تَعَالَى اَسْرَارَهُ الْعَزيِزْ وَ اِلَى رُوحِ مَنْبَعِ الْمَعَارِفِ وَ الْكَمَالْ سَيِّدِ السَّادَاتِ اَلشَّيْخْ اَلسَّيِّدْ اَمِيرْ كُلاَلْ قُدِّسَ سِرُّهُ وَ اِلَى رُوحِ الْمُقْبِلِ عَلَيْكَ وَ لِمَا سِوَاكَ النَّاسِي اَلشَّيْخْ مُحَمَّدْ بَابَا السَّمَّاسِي قُدِّسَ سِرُّهُ وَ اِلَى رُوحِ الْوَالِهِ فِي مَحَبَّةِ مَوْلاَهُ الْغَنِي اَلْمَعْرُوفِ بِحَضْرَتِ عَزِيزَانْ اَلشَّيْخْ خَواجَه عَلِيٍّ الرَّامِيتَنِي قُدِّسَ سِرُّهُ وَ اِلَى رُوحِ الْمُعْرِضِ عَنِ الْمُرَادِ الدُّنْيَوِيِّ وَ اْلاُخْرَوِيِّ اَلشَّيْخْ مَحْمُودٍ اْلاِنْجِيرْ فَغْنَوِي قُدِّسَ سِرُّهُ وَ اِلَى رُوحِ الْمُتَسَلِّقِ عَنِ الْحِجَابِ الْبَشَرِي اَلشَّيْخْ عَارِفِ الرِّيوَگَرِي قُدِّسَ سِرُّهُ وَ اِلَى رُوحِ الْمَحْبُوبِ السُّبْحَانِي شَيْخِ الْمَشَايِخِ اَلشَّيْخْ عَبْدِ الْخَالِقِ الْغُجْدَوَانِي قُدِّسَ سِرُّهُ وَ اِلَى رُوحِ الْقُطْبِ الرَّبَّانِي اَلْغَوْثِ الصَّمَدَانِي اَلْهَيْكَلِ النُّورَانِي اَلشَّيْخْ اَحْمَدَ الْفَارُوقِي السَّرْهَنْدِي اَلْمَعْرُوفِ بِاْلاِمَامِ الرَّبَّانِي مُجَدِّدِ اْلاَلْفِ الثَّانِي قَدَّسَ اللهْ تَعَالَى اَسْرَارَهُ الْعَزِيزْ وَ اِلَى رُوحِ قُطْبِ دَائِرَةِ اْلاِرْشَادِ غَوْثِ الثَّقَلَيْنِ عَلَى السَّدَادِ اَلسَّائِرِ فِي االلهِ الرَّاكِعِ السَّاجِدِ الْمُجَاهِدِ ذِي الْجَنَاحَيْنِ حَضْرَتِ ضِيَاءِ الدِّينِ مَوْلاَنَا اَلشَّيْخْ خَالِدْ قَدَّس اللهْ تَعَالَى اَسْرَارَهُ الْعَزِيزْ وَ اِلَى رُوحِ مَنْبَعِ الْحِلْمِ وَ نُورِ الظَّلاَمِ اَلْهَادِي بَيْنَ الْعَشَائِرِ وَ اْلاَقْوَامِ حَضْرَتِ سِرَاجِ الدِّينِ مِنْ خَلَفِ سَيِّدِ اْلاَنَامِ اَلشَّيْخْ اَلسَّيِّدْ عَبْدِ االلهْ قَدَّسَ اللهْ تَعَالَى اَسْرَارَهُ الْعَزِيزْ وَ اِلَى رُوحِ شَيْخِنَا الْغَيُّورِ الَّذِي بِهِ نَتَبَاهَى مَوْلاَناَ الْوَقُورْ قُطْبِ اْلاِرْشَادِ وَ الْمَدَارْ حَضْرَةِ شِهَابِ الدِّينْ اَلشَّيْخْ اَلسَّيِّدْ طَهَ قَدَّسَ اللهْ تَعَالَى اَسْرَارَهُ الْعَزِيزْ وَ اِلَى رُوحِ كَهْفِ الْمُرِيدِينَ شَمْسِ الْوَاصِلِينَ مَلاَذِ الْغُرَبَاءِ وَ مَلْجَإِ الْمَسَاكِينِ ذِي الْفَيْضِ الطَّافِحْ وَ النُّورِ اللاَئِحْ اَلنَّاجِي الْفَائِزِ الْفَالِحْ مَوْلاَنَا اَلشَّيْخْ اَلسَّيِّدْ مُحَمَّدْ صَالِحْ قَدَّسَ اللهْ تَعَالَى اَسْرَارَهُ الْعَزِيزْ وَ اِلَى رُوحِ شَيْخِنَا الْوَلِيِّ الْحَلِيمْ مَصْدَرِ الْحُضُورِ وَ النَّسْبَةِ وَ الْفَيْضِ الْعَمِيمِ مِثْلِ الصَّحَابَةِ فِي زَمَنِ جَدِّهِ النَّبِيِّ الرَّسُولِ الْكَرِيمِ مَوْلاَنَا اَلشَّيْخْ اَلسَّيِّدْ فَهِيمْ قَدَّسَ اللهْ تَعَالَى اَسْرَارَهُ الْعَزِيزْ وَ اِلَى رُوحِ شَيْخِنَا الْمُهَاجِرِ الْغَرِيبْ اَلْمَظْلُومِ الشَّهِيدِ سُلْطَانِ الْعَاشِقِينَ دَلِيلِ الْوَاصِلِينَ مَلاَذِ الطَّالِبِينَ مَلْجَإِ السَّالِكِينَ خَاتِمَةِ سِلْسِلَةِ الْعَلِيَّةِ النَّقْشِبَنْدِيَّةِ اَلنَّاشِرِ لِلاَحْكَامِ اْلاِسْلاَمِيَةِ عِنْدَ شِدَّةِ اْلكُفْرِ وَ الضَّلاَلِ وَ اْلاِرْتِدَادْ كَأَنَّهُ بُنْيَانٌ مَرْصُوصٌ مَنْظُورِ نَظَرِ پِيرَانِ كِرَامْ مَوْلاَنَا وَ دَلِيلِنَا اِلَى االلهِ اَلطَّبِيبِ الشَّافِي لِلْقَلْبِ الْقَاسِي اَلشَّيْخْ اَلسَّيِّدْ عَبْدِ اْلحَكِيمِ اْلآرْوَاسِي قَدَّسَ اللهْ تَعَالَى اَسْرَارَهُ الْعَزيِزْ وَ اِلَى اَرْوَاحِ كُلٍّ مِنَ السَّادَاتِ وَ الْخُلَفَاءِ وَ الْمُرِيدِينَ وَ الْمَحْسُوبِينَ وَ الْمَنْسُوبِينَ مِنْ هَذِهِ الطَّرِيقَةِ الْعَلِيَّةِ وَسَائِرِ الطُّرُقْ.
উপরোক্ত ইবরাতখানা আরবী ভাষায় লিখিত নক্বশাবন্দিয়া ত্বরীক্বার একটি বিশ্বখ্যাত কিতাব থেকে নেয়া। যা ছাপানো হয়েছে- তুরস্কের ইস্তাম্বুল থেকে। এখানে উক্ত কিতাবের ২৪৮ এবং ২৪৯ এই দুই পৃষ্ঠার ইবারত হুবহু উল্লেখ করা হয়েছে। ঐ কিতাবে যেভাবে ই’রাব প্রদান করা হয়েছে, আমি সেভাবেই উল্লেখ করেছি। এর মধ্যে আমি কোনরূপ পরিবর্তন করিনি। আমি পাঠকদের সুবিধার্থে- উক্ত কিতাবের পিডিএফ লিংক উল্লেখ করলাম-
যঃঃঢ়ং://িি.িয়ঁৎধহরপঃযড়ঁমযঃ.পড়স/ঢ়ি-পড়হঃবহঃ/ঁঢ়ষড়ধফং/ঢ়ড়ংঃথধঃঃধপযসবহঃং/৫ফ৯০৯২৪ভ৮২ভ০৪.ঢ়ফভ
উপরোক্ত মাত্র ২ পৃষ্ঠায়-
(১) শব্দের শেষে ৫৫ স্থানে ই’রাব যাহির না করে সাকিন দিয়ে লেখা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
(২) ইয়ায়ে নিসবতীর স্থলে ই’রাব যাহির না করে প্রায় ১৬ স্থানে উহ্য সাকিন ব্যবহার করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
(৩) ৩৪ স্থানে হামযায়ে ওয়াছলের মধ্যে হরকত উল্লেখ রয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
(৪) ২ স্থানে নামের সাথে ব্যবহৃত ‘মুহম্মদ’ শব্দের শেষে সাকিন উল্লেখ রয়েছে। সুবহানাল্লাহ!  
(৫) ৬ স্থানে নামের শেষে সাকিন উল্লেখ রয়েছে। সুবহানাল্লাহ
(৬) ৩ স্থানে একাধারা ৩টি শব্দে সাকিন দেয়া হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
(৭) ২ স্থানে একাধারা ৪টি শব্দে সাকিন দেয়া হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
(৮) ৩ স্থানেحضرت  (হাদ্ব্রাত) শব্দটি ت (লম্বা তা) দ্বারা লিখা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
রহমত শব্দটি সাধারণত ة (গোল তা) দিয়ে লিখা হয়। কিন্তু মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যেই স্পষ্টভাবে ৬ স্থানে ‘ رحمة(রহমত)’ শব্দ মুবারকখানা ة (গোল তা) এর পরিবর্তে ت (লম্বা তা) উল্লেখ করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! 
(১) সম্মানিত ও পবিত্র সূরা বাক্বারাহ্ শরীফ উনার ২১৮ নং সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ-
يَرْجُونَ رَحْمَتَ اللهِ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ
(২) সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ উনার ৫৬ নং সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ-
إِنَّ رَحْمَتَ اللَّهِ قَرِيبٌ مِنَ الْمُحْسِنِينَ
(৩) সম্মানিত ও পবিত্র সূরা হূদ শরীফ উনার ৭৩ নং সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ-
قَالُوا أَتَعْجَبِينَ مِنْ أَمْرِ اللَّهِ رَحْمَتُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الْبَيْتِ 
(৪) সম্মানিত ও পবিত্র সূরা মারইয়াম শরীফ উনার ২ নং সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ-
ذِكْرُ رَحْمَتِ رَبِّكَ عَبْدَهُ زَكَرِيَّا
(৫) সম্মানিত ও পবিত্র সূরা রূম শরীফ উনার ৫০ নং সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ-
فَانْظُرْ إِلَى آثَارِ رَحْمَتِ اللَّهِ
(৬) সম্মানিত ও পবিত্র সূরা যুখরুফ শরীফ উনার ৩২ নং সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ-
أَهُمْ يَقْسِمُونَ رَحْمَتَ رَبِّكَ نَحْنُ قَسَمْنَا بَيْنَهُمْ مَعِيشَتَهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا 
এরপরেও যদি এই প্রতিবন্ধী মার্কা চরম জাহিল ও গ-মূর্খ লোকটা এবং তার সমমনাদের শিয়ালের ন্যায় হুক্কা হুয়া ডাকের চিৎকার, চেঁচামেচি বন্ধ না হয়, তাহলে তাদের কি করা উচিত? বিজ্ঞ পাঠক মহল! আপনারাই বলুন।
মহান আল্লাহ পাক তিনি সবাইকে এই প্রকার চরম জাহিল, গ-মূর্খ, মিথ্যাবাদী, মুনাফিক্ব, উলামায়ে সূ’, ধোঁকাবাজ এবং প্রতারকদের জিহালতী, মূর্খতা, মিথ্যাচার, ধোঁকা এবং প্রতারণা থেকে হিফাযত করুন। আমীন!

-মুফতী মুহাদ্দিছ মুহম্মদ আল আমীন।

হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ১২৮০-১৪০৩) (ট)

মুনাফিক সরদার উবাই বিন সুলূল ৩০০ সহচর নিয়ে পলায়ন: 
  হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
 حَتّى إذَا كَانُوا بِالشّوْطِ بَيْنَ الْمَدِينَةِ وَأُحُدٍ ، انْخَزَلَ عَنْهُ أُبَيّ بْنُ سَلُولَ بِثُلُثِ النّاسِ وَقَالَ أَطَاعَهُمْ وَعَصَانِي.
  অর্থ: “যখন সম্মানিত মুসলিম বাহিনী তথা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পবিত্র মদীনা শরীফ ও সম্মানিত উহুদের মধ্যবর্তী শাওত্ব নামক স্থানে পৌঁছলেন, তখন কাট্টা মুনাফিক উবাই বিন সুলূল সে এক-তৃতীয়াংশ লোক নিয়ে পবিত্র মদীনা শরীফে প্রত্যাবর্তন করলো এবং সে রটাতে লাগলো যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের কথা মুবারক শুনলেন কিন্তু আমাদের কথা শুনলেন না।” নাউযূবিল্লাহ!  নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ!
 এই কাট্টা মিথ্যুক মুনাফিক ও মুরতাদ  সে মানুষকে ওয়াসওয়াসা দিতে লাগলো, হে লোকসকল! আমার বুঝে আসছে না, এখানে নিজের পরাজয় টেনে নিয়ে আসার অর্থ কি। নাউযূবিল্লাহ! মোটকথা সে কাট্টা মুনাফিক হওয়ার কারণে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পুতঃপবিত্র শান মুবারক নিয়ে এলোমেলো কথা বলতে থাকলো। নাউযূবিল্লাহ! তার দলের যে সব মুনাফিক তথা যাদের অন্তরে কপটতা, চূ-চেরা ও সংশয় ছিল তাদেরকে নিয়ে সে মুসলামানদের দল থেকে পলায়ন করলো। নাউযূবিল্লাহ! (সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, তারীখে উমাম ওয়াল মুলুক,  জাওয়ামিউল কালাম)
 অর্থাৎ যাদের অন্তরে নিফাক্বী রয়েছে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শান-মান নিয়ে চূ-চেরা করা তাদের মজ্জাগত অভ্যাস। নাউযূবিল্লাহ! আর উবাই বিন সুলূল ছিলো তৎকালীন সমস্ত মুনাফিকদের নেতা। তার উপর অনন্তকালব্যাপী মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার লা’নত এবং সমস্ত মাখলুকাতের পক্ষ থেকে লা’নত।
 মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
 وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيرًا مِّنَ الْجِنِّ وَالْإِنسِ ۖ لَهُمْ قُلُوبٌ لَّا يَفْقَهُونَ بِهَا وَلَهُمْ أَعْيُنٌ لَّا يُبْصِرُونَ بِهَا وَلَهُمْ آذَانٌ لَّا يَسْمَعُونَ بِهَا ۚ أُولَـٰئِكَ كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ ۚ أُولَـٰئِكَ هُمُ الْغَافِلُونَ.
 অর্থ: “আর আমি অনেক জ্বীন মানবকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি। তাদের অন্তর আছে তার দ্বারা উপলদ্ধি করে না, তাদের চোখ আছে তার দ্বারা দেখে না এবং তাদের কান আছে তার দ্বারা শোনে না, তারা পশুর ন্যায়; বরং তার চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই হলো গাফিল।” (পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ- ১৭৯)
 অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি মানুষ ও জ্বিনজাতিকে সৃষ্টি করেছেন মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদেশ নির্দেশ মুবারক পালনের মাধ্যমে উনাদের মতে মত পথে পথ হওয়ার জন্য। সর্বপরি উনাদের রেজামন্দী ও সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করা। কিন্তু যারা জাহান্নামী তারা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদেশ নির্দেশ মুবারক অস্বীকার করে থাকে এবং উনাদের অবমাননা করে থাকে। নাউযূবিল্লাহ! আর এই সমস্ত লোকেরাই হলো জাহান্নামী। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জানেন কে জাহান্নামী। এরপরও বলা হয়েছে যারা জাহান্নামী তাদের অন্তর আছে কিন্তু তা দ্বারা উপলদ্ধি করবে না, তাদের চক্ষু আছে কিন্তু তার দ্বারা দেখবে না এবং তাদের কান আছে কিন্তু তা দ্বারা শ্রবণ করবে না। তারাই পশুর মতো বা পশু অপেক্ষা অধম। অর্থাৎ যারা মুনাফিক তথা জাহান্নামী হবে তাদের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। তাদের জ্ঞানবুদ্ধি আহরণের সকল সূত্র রুদ্ধ। তাদের অন্তর আছে বটে কিন্তু তারা তার দ্বারা বুঝতে অসমর্থ। তাদের চোখও রয়েছে কিন্তু সে চোখ দিয়ে হক্ব বিষয়গুলো দেখতে অপারগ। তারা শ্রবণও করে কিন্তু আল্লাহ পাক উনার এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ ও ইমাম, ইমামুল উমাম সাইয়্যিদুনা হযরত মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার আহবান মুবারক শুনতে অক্ষম। নাউযূবিল্লাহ!
 যারা মুনাফিক তারা পশুর মতো। তারা কেবল আহার, বিহার ও কর্মসর্বস্ব জীবন যাপনে অভ্যস্ত। পশু অপেক্ষাও তারা নিকৃষ্ট। কারণ পশুরা উপকার ও ক্ষতির প্রভেদ বোঝে। বেঁচে থাকতে চেষ্টা করে, ক্ষতিকর বিষয় থেকে। কিন্তু মুনাফিকরা জাহান্নামের পথে চলছে এ কথা বুঝাতে পেরেও নির্বিকার। তারা তাদের আপন সন্তানের থেকেও বেশি চিনে থাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাম আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং উনার পুতঃপবিত্র মহাসম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে। কিন্তু তারা অস্বীকার করে জুলুম ও আহমিকার কারণে। মুনাফিকরা বোধহীন, প্রকৃত দৃষ্টি ও শ্রুতিহীন। আর তারাই প্রকৃত অর্থে গাফিল বা উদাসীন। সৃষ্টিকুলের কেউই মুনাফিকদের মতো গাফিল বা উদাসীন নয়। (তাফসীরে মাযহারী)
  উল্লেখ্য যে, মুনাফিক সরদার উবাই বিন সুলূল! সে বানূ সালামার লোক ছিলো। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে হারাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এই মুনাফিকদের পিছু পিছু গিয়ে বললেন, হে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা! আমি তোমাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার কথা স্মরণ করে দিচ্ছি। তোমরা তোমাদের নিজ সম্প্রদায় ও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রেখে এভাবে যেওনা। জবাবে তারা বলল, যদি জানতাম, আপনারা জিহাদের সম্মুখীন হবেন, তবে আপনাদেরকে শত্রুর হাতে সমর্পণ করতাম না। কিন্তু আমাদের ধারণায় জিহাদ ঘটবে না। যখন মুনাফিকরা  হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে হারাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কথা মুবারক মানল না এবং ফিরে যেতেই চাইলো, তখন তিনি তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, হে মহান আল্লাহ পাক উনার দুশমনেরা! মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদেরকে উনার রহমত থেকে দূরে রাখুন। অচিরেই মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে তোমাদের থেকে অমুখাপেক্ষী করে দেবেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
 হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন,
 أَنّ الْأَنْصَارَ يَوْمَ أُحُدٍ ، قَالُوا لِرَسُولِ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يَا رَسُولَ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ! أَلَا نَسْتَعِينُ بِحُلَفَائِنَا مِنْ يَهُودَ ؟ فَقَالَ لَا حَاجَةَ لَنَا فِيهِمْ.
 অর্থ: “সম্মানিত উহুদ জিহাদের দিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনহুম উনারা বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা আমাদের ইহুদী মিত্রদের সাহায্য নিবো কি? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আমাদের জন্য তাদের খিদমতের কোন প্রয়োজন নেই।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, সীরাতুল হালাবিয়্যা, উয়ূনুল আছার, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
 হযরত যিয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত মুহম্মদ ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আমার কাছে করেছেন যে, “যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অগ্রসর হয়ে বানূ হারিছার হাররা নামক স্থানে পৌঁছলেন, তখন একটি ঘটনা ঘটল যে, জনৈক ব্যক্তি ঘোড়া মাছি তাড়ানোর জন্য সজোরে লেজ নাড়ল, আর তা যেয়ে তার তরবারির কব্জির উপর পড়লো, ফলে তরবারি খাপ থেকে বেরিয়ে আসলো।”
হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন,
 قَالَ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ لِأَصْحَابِهِ مَنْ رَجُلٌ يَخْرُجُ بِنَا عَلَى الْقَوْمِ مِنْ كَثَبٍ أَيْ مِنْ قُرْبٍ مِنْ طَرِيقٍ لَا يَمُرّ بِنَا عَلَيْهِمْ ؟ فَقَالَ أَبُو خَيْثَمَةَ أَخُو بَنِي حَارِثَةَ بْنِ الْحَارِثِ أَنَا يَا رَسُولَ اللّهِ فَنَفَذَ بِهِ حَرّةَ بَنِي حَارِثَةَ.
 অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের লক্ষ্য করে বললেন, কে আছেন যে, শত্রুর কাছে এমন পথ ধরে আমাদের নিয়ে যাবেন, যা শত্রুর সামনে দিয়ে অতিক্রম হবে না। আবূ খাইছাম বানূ হারিছা ইবনে হারিছের এক (ভাই) লোক বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি নিয়ে যাবো। এই কথা বলে তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বানূ হারিছার হাররায় নিয়ে চললেন।”
 “পথে লোকদের বাগান ইত্যাদির কথাও আলোচনা করলেন। এক সময় তারা মিরবা’ ইবনে ফায়যা- এর বাগানের কাছ দিয়ে অতিক্রম করলেন। সে মুনাফিক ছিল এবং অন্ধ ছিল। সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের আগমনের কথা অনুভব করে উনাদের চেহারা মুবারক লক্ষ্য করে মুঠ ভরে ভরে মাটি ছুড়তে লাগল এবং বলতে লাগল, আপনি যদি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হয়ে থাকেন তবে আপনার জন্য আমার বাগানে আসার অনুমতি নেই। নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ! (সীরাতুর নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি,  মুখতাছারু সীরাতুর রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উয়ূনুল আছার ফি ফুয়ূনিল মাগাযী, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
 আরো বর্ণিত রয়েছে যে, এই কাট্টা কাফির মুনাফিক সে হাতে মাটি নিয়ে বলতে লাগল, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! যদি আমি জানতে সক্ষম হতাম যে, এই মাটি আপনি ছাড়া আর অন্য কারো চেহারা মুবারকে লাগবে না তবে অবশ্যই আমি তা আপনার নূরুর রহমত বা চেহারা মুবারক উনার উপর ছুড়ে মারতাম। নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ! এ কথা শুনে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সকলেই তাকে হত্যা করার জন্য অগ্রসর হলেন। কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন,
 لَا تَقْتُلُوهُ فَهَذَا الْأَعْمَى أَعْمَى الْقَلْبِ، أَعْمَى الْبَصَرِ.
  অর্থ: ‘আপনারা তাকে হত্যা করবেন না। কেননা সে একই সাথে চক্ষু ও অন্তরের অন্ধ।’
 (সীরাতুর নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি,  রওদ্বুল উনূফ, সুবুলুল হুদা ওয়া রাশাদ)
  উল্লেখ্য যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বেশি কষ্ট দিয়েছিল কাফির মুশরিক বেদ্বীন-বদদ্বীন, ইহুদী নাছারারা। কিন্তু ইহুদী-নাছারা, কাফির, মুশরিকদের থেকেও বেশি কষ্ট দিয়েছিল মুনাফিকরা। নাউযূবিল্লাহ! কারণ কাফির মুশরিকরা যে মুসলমান উনাদের শত্রু এটা স্পষ্ট কিন্তু মুনাফিকরা মুসলমান উনাদের মধ্যে অবস্থান করে চূ-চেরা করা, ওয়াসওয়াসা দেয়া ও চুপেচুপে ষড়যন্ত্র করা ইত্যাদি আরো বেশি কষ্টদায়ক। এজন্য এদেরকে পশুর মতো এবং পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট বলা হয়েছে।
 হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের কিভাবে খিদমত মুবারকে আঞ্জাম দেয়া যায় এই চিন্তু ফিকিরে মশগুল থাকতেন। বিপরীতে যারা মুনাফিক ছিলো তারা ভাবতো কি করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং উনার মহাসম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে কষ্ট দেয়া যায়। নাউযূবিল্লাহ! কাট্টা মুনাফিক সরদার উবাই বিন সুলূল সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সবসময় কষ্ট দেয়ার চেষ্টা করতো। মাঝে মাঝে তার মুনাফিকি প্রকাশ পেতো। সম্মানিত উহুদ জিহাদে সেটাই প্রকাশ পেয়েছে যে সে আসলেই মুনাফিক তথা মুনাফিকদের সরদার। সম্মানিত উহুদ জিহাদের সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং মহান আল্লাহ পাক উনার ফায়সালা মুবারক তার নাকি মনঃপুত হয়নি। নাউযূবিল্লাহ! এই সম্মানিত ওহী মুবারক উনার মাধ্যমে নাযিলকৃত ফায়সালা মুবারক মানতে সে নারাজ। নাউযূবিল্লাহ! তার ভিতরে নিফাক্বে পূর্ণ থাকায় সে বিরোধিতা করেছে। নাউযূবিল্লাহ!
 আর সম্মানিত মুসলমান উনারা যেন সম্মানিত জিহাদ মুবারক না যান বা জিহাদের ময়দান থেকে ফিরে আসেন বা মুসলমান উনাদের মধ্যে ফাটল ধরুক এটাই মুনাফিকরা সবসময় চাইতো। যখন মুসলমান উনারা জিহাদ মুবারকের প্রস্তুতি নিতেন বা সম্মানিত জিহাদের জন্য রওয়ানা দিতেন বা সম্মানিত জিহাদের ময়দানে পৌঁছে যেতেন তখন মুনাফিকরা মুসলমান উনাদেরকে ওয়াসওয়াসা দিতো এবং উনাদেরকে ভয়-ভীতিও দেখাতো যাতে উনাদের মন অস্থির হয়ে পড়ে। নাউযূবিল্লাহ! আর সেই কাজটিই মূলহোতা ছিলো উবাই বিন সুলূল। নাউযূবিল্লাহ!
 উল্লেখ্য যে, মুনাফিকদের বদস্বভাব হলো জিহাদ থেকে পিছে থাকা ও পলায়ন করা। মুনাফিকদের অন্তরে নিফাক্বী থাকায় তারা সম্মনিত জিহাদ মুবারকে অংশগ্রহণে আগ্রহ বোধ করে না বরং জিহাদে অংশগ্রহণ না করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। নাউযূবিল্লাহ!
 এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
  فَرِحَ الْمُخَلَّفُونَ بِمَقْعَدِهِمْ خِلَافَ رَسُولِ اللَّـهِ وَكَرِهُوا أَن يُجَاهِدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّـهِ وَقَالُوا لَا تَنفِرُوا فِي الْحَرِّ ۗ قُلْ نَارُ جَهَنَّمَ أَشَدُّ حَرًّا ۚ لَّوْ كَانُوا يَفْقَهُونَ.
 ت
অর্থ: “যারা পশ্চাতে থেকে গেল তারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধচারণ করে বসে থাকাতেই তারা আনন্দ লাভ করল এবং তাদের ধন-সম্পদ ও তাদের জীবন দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় জিহাদ করা পছন্দ করে নাই এবং তার বলেছিল, গরমের মধ্যে জিহাদে বের হওনা। আপনি বলে দিন উত্তাপে জাহান্নামের আগুন প্রচন্ডতম। যদি তারা বুঝতে পারতো। (পবিত্র সূরা তাওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-৯)
 অর্থাৎ মুনাফিকরা জিহাদের সময় সমগত হলে বিভিন্নরকম অজুহাত পেশ করে জিহাদ থেকে বিরত থাকতো। তারা বাইরে বাইরে ঈমানদার বলে নিজেদেরকে প্রকাশ করলেও অন্তরে অন্তরে তারা ছিলো হক্ব বা সত্য প্রত্যাখ্যানকারী।
 জিহাদ না করতে উদ্ধুদ্ধ করা এবং ভীতিকর গুজব ছাড়ানো হচ্ছে মুনাফিকদের একটি বদস্বভাব। সম্মানিত জিহাদের আদেশ মুবারক আসলে মুসলমান উনারা যাতে জিহাদে না যেতে পারেন এজন্য তারা বিভিন্ন রকম ওয়াসওয়াসা দিত। নাউযূবিল্লাহ!

 এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
 وَمِنْهُم مَّن يَقُولُ ائْذَن لِّي وَلَا تَفْتِنِّي ۚ أَلَا فِي الْفِتْنَةِ سَقَطُوا ۗ وَإِنَّ جَهَنَّمَ لَمُحِيطَةٌ بِالْكَافِرِينَ.
 অর্থ: “তাদের মধ্যে এমন লোক আছে যে, তারা বলে আমাকে আব্যাহতি দিন এবং আমাকে ফিতনায় ফেলবেন না। সবাধান! তারাতো পূর্ব থেকেই ফিৎনাগ্রস্ত বা পথভ্রষ্ট। আর নিশ্চয়ই জাহান্নাম কাফিরদের চারিদিকে ঘিরে রয়েছে।” (পবিত্র সূরা তাওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-৪৯)
 মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মুনাফিকদের কতিপয় বদস্বভাব উল্লেখ করে জ্বীন-ইনসানকে সাবধান করে দিয়েছেন যাতে জ্বীন-ইনসান সতর্ক থাকে। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কিছু মুনাফিক আপনাকে বলবে আমাদেরকে বাড়িতে বসে থাকার অনুমতি দান করুন। আপনাদের সাথে জিহাদে গিয়ে কোন ফিৎনায় পড়ে যাই কি না। নাউযূবিল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন যারা এ ধরণের কথা বলে তারা মূলত; ফিৎনায় পড়েই রয়েছে। অর্থাৎ তারা জিহাদে না যাওয়ার জন্য তাদের যতপ্রকার তালবাহানা প্রকাশ করে থাকে। নাউযূবিল্লাহ!
 এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
 وَإِذْ قَالَت طَّائِفَةٌ مِّنْهُمْ يَا أَهْلَ يَثْرِبَ لَا مُقَامَ لَكُمْ فَارْجِعُوا ۚ وَيَسْتَأْذِنُ فَرِيقٌ مِّنْهُمُ النَّبِيَّ يَقُولُونَ إِنَّ بُيُوتَنَا عَوْرَةٌ وَمَا هِيَ بِعَوْرَةٍ ۖ إِن يُرِيدُونَ إِلَّا فِرَارًا.
 অর্থ: “এবং তোমাদের মধ্যে একদল যখন বলেছিল, হে পবিত্র মদীনাবাসী! এখানে আপনাদের কোন স্থান নেই, অতএব আপনারা ফিরে চলুন  এবং তাদের মধ্যে একদল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট অব্যাহতি প্রার্থনা করে বলছিল, আমাদের বাড়িঘর অরক্ষিত। অথচ উহা অরক্ষিত ছিল না, আসলে পলায়ন করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য।” নাউযূবিল্লাহ! (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-১২)
 মুনাফিকরা কাল্পনিক ও মনগড়া কারণ উপস্থাপন করে জিহাদে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকে। এজন্য মিথ্যা কৈফিয়াতের সম্মুখীন হলে তাদের মিথ্যা অজুহাত পেশের অন্ত থাকে না। মহান আল্লাহ পাক তিনি মুনাফিকদের সে কথা তুলে ধরেছেন। আর সম্মানিত মুসলমান উনারা কোন প্রকার বিন্দু থেকে বিন্দু মাত্র কারণ তালাশ করেন না এবং উনারা সন্দেহ পোষনও করেন না। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলুল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
 এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
 يَعْتَذِرُونَ إِلَيْكُمْ إِذَا رَجَعْتُمْ إِلَيْهِمْ ۚ قُل لَّا تَعْتَذِرُوا لَن نُّؤْمِنَ لَكُمْ قَدْ نَبَّأَنَا اللَّـهُ مِنْ أَخْبَارِكُمْ ۚ وَسَيَرَى اللَّـهُ عَمَلَكُمْ وَرَسُولُهُ ثُمَّ تُرَدُّونَ إِلَىٰ عَالِمِ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ فَيُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ.
 অর্থ: “আপনারা তাদের কাছে যখন ফিরে আসবেন তখন তারা আপনাদের কাছে ওযর পেশ করবে।  আপনি বলে দিন কোন ওযর-আপত্তি উপস্থাপন করো না। আমরা আর কখনও তোমাদেরকে বিশ্বাস করবো না। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইতিমধ্যেই তোমাদের অবস্থা আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অবশ্যই তোমাদের কার্যকলাপ দেখছেন। অতঃপর অদৃশ্য ও দৃশ্যের  পরিজ্ঞাতা উনার নিকট তোমাদের প্রত্যাবর্তিত করা হবে এবং তোমরা যা করতে চাও তা তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দিবেন। (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-৯৪)
 আলোচ্য পবিত্র আয়াত শরীফে ওই সকল মুনাফিকদের কথা বিবৃত হয়েছে, যারা বিভিন্ন টালবাহানা করতো সম্মানিত জিহাদ থেকে বিরত থাকার জন্য। আর মুসলমানগণ জিহাদ মুবারক থেকে ফিরে মুনাফিকদের সাথে কি আচরণ করবেন সেটাও বলে দেয়া হয়েছে। আপনারা তাদের নিকট ফিরে এলে তারা আপনাদের নিকট অজুহাত পেশ করবে। কিন্তু আপনারা বলবেন আমরা তোমাদেরকে কখনও বিশ্বাস করবো না। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তোমাদের কর্ম সম্পর্কে জানিয়ে দিয়েছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদের সকল অপকথন ও অপকর্ম সম্পর্কে সম্মানিত ওহী মুবারক উনার মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলুল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!


হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ১২৮০-১৪০৩) (ঞ)

সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত তা’লীম-তালক্বীন মুবারক:
 সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি যখন সম্মানিত মদীনা শরীফ সম্মানিত হিজরত মুবারক করেন, তখন দুনিয়াবী দৃষ্টিতে উনার সম্মানিত বয়স মুবারক প্রায় ১৮ বছর। পবিত্র মক্কা শরীফ অবস্থান মুবারক করা অবস্থাতেই তিনি হযরত মহিলা ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুন্না উনাদেরকে সম্মানিত তা’লীম-তালক্বীন মুবারক দিয়ে আসছিলেন। অতঃপর তিনি যখন সম্মানিত মদীনা শরীফ সম্মানিত তাশরীফ মুবারক রাখেন, তখন আরো ব্যাপকভাবে সমস্ত মহিলা ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুন্না উনাদেরকে সম্মানিত তা’লীম-তালক্বীন মুবারক দিতে থাকেন। উনার সম্মানিত তা’লীম-তালক্বীন মুবারক ও সম্মানিত ছোহবত মুবারক উনাদের মাধ্যমে হযরত মহিলা ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুন্নাগণ বেমেছাল নি‘য়ামত মুবারক লাভে ধন্য হন। সুবহানাল্লাহ!
 বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি সম্মানিত মক্কা শরীফ বিজয় ও হুনাইন বিজয় প্রত্যেকটিই অবলোকন করেন। একে একে কাফিররা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। উনার সামনে উনার মহাসম্মানিত আব্বাজান নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনীত সম্মানিত দ্বীন ইসলাম পৃথিবীর বুকে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। যেই কুরাইশরা উনার মহাসম্মানিত আব্বাজান নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চরম বিরোধিতা করতো। উনারা এখন ছাহাবী হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি উনার মহাসম্মানিত আব্বাজান নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এই চূড়ান্ত বিজয়ী শান মুবারক দেখে বেমেছাল খুশি মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ:
 সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পূর্বে কিছু দিন সম্মানিত মারিদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করেন। অতঃপর এই সম্মানিত মারিদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় তিনি ৯ম হিজরী সনের ৬ রমাদ্বান শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ বা’দ ফজর মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি ২৬ বছর ৩ মাস ২৫ দিন দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত অবস্থান মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ!
 নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত দিক-নির্দেশনা মুবারক অনুযায়ী সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত গোসল মুবারক ও সম্মানিত কাফন মুবারক সম্পন করা হয়। সুবহানাল্লাহ! ‘আবূ দাঊদ শরীফ’ উনার মধ্যে এসেছে,
 اَنَّ حَضْرَتْ لَيْلـٰى بِنْتَ قَانِفِۣ الثَّقَفِيَّةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهَا قَالَتْ كُنْتُ فِـيْمَنْ غَسَّلَ حَضْرَتْ اُمَّ كُلْثُوْمٍ عَلَيْهَا السَّلَامُ بِنْتَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِنْدَ وَفَاتـِهَا فَكَانَ اَوَّلُ مَا اَعْطَانَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْـحِقَاءَ ثُـمَّ الـدِّرْعَ ثُـمَّ الْـخِمَارَ ثُـمَّ الْمِلْحَفَةَ ثُـمَّ اُدْرِجَتْ بَعْدُ فِـى الثَّوْبِ الْاٰخَرِ قَالَتْ وَرَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسٌ عِنْدَ الْبَابِ مَعَهٗ كَفَنُهَا يُنَاوِلُنَاهَا ثَوْبًا ثَوْبًا.
 অর্থ: “হযরত লায়লাহ বিনতে ক্বানিফ ছাকাফিয়্যাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বলেন, বিনতু রসূলিল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর যারা উনার সম্মানিত গোসল মুবারক করান, আমি উনাদের মধ্যে ছিলাম। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রথমে আমাদেরকে ইযার মুবারক দিয়েছিলেন। অতঃপর ক্বমীছ বা কোর্তা মুবারক, ওড়না বা সেরবন্দ মুবারক এবং লেফাফা বা চাদর মুবারক দিয়েছিলেন। পরে উনাকে একটি কাপড় মুবারক বা ছিনাবন্দ মুবারক দ্বারা জড়ানো হয়েছিলো। যখন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনাকে গোসল মুবারক করানো হচ্ছিলো, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত দরজা মুবারক-এ সম্মানিত কাফন মুবারক উনার কাপড় মুবারকসহ বসা ছিলেন এবং একটি একটি করে সম্মানিত কাপড় মুবারক সরবরাহ করে যাচ্ছিলেন।” সুবহানাল্লাহ! (আবূ দাঊদ শরীফ, মুসনাদে আহমদ, আল আহাদ ওয়াল মাছানী, আস সুনানুল কুবরা লিলবাইহাক্বী, মা’রিফাতুস সুনান ওয়াল আছার ইত্যাদি)
 স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত ইমামতী মুবারক করে সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত জানাযা উনার নামায মুবারক পড়ান। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নির্দেশ মুবারক অনুযায়ী সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনাকে সম্মানিত রওযা শরীফ উনার মধ্যে রাখা হয়। সুবহানাল্লাহ!
 সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি যখন মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন, তখন উনার সম্মানিত মুহব্বত মুবারক-এ, উনার সম্মানিত জুদায়ী মুবারক উনার কারণে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিত নূরুল মুনাওওয়ার বা দু’চোখ মুবারক দিয়ে অজস্র ধারায় সম্মানিত নূরুল মুহব্বত মুবারক প্রবাহিত করেন। এই সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
 عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ شَهِدْنَا بِنْتَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَرَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسٌ عَلَى القَبْرِ فَرَاَيْتُ عَيْنَيْهِ تَدْمَعَانِ.
 অর্থ: “হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনাকে যখন সম্মানিত রওযা শরীফ উনার মধ্যে রাখা হয়, তখন আমরা উপস্থিত ছিলাম। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত রওযা শরীফ উনার নিকট বসা ছিলেন। আর আমি দেখেছি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত দু’চোখ মুবারক দিয়ে অজস্র ধারায় সম্মানিত নূরুল মুহব্বত মুবারক প্রবাহিত হচ্ছেন।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ)
 উল্লেখ্য যে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার কোনো আওলাদ ছিলেন না। সুবহানাল্লাহ!
ঐতিহাসিক সম্মানিত উহুদ জিহাদ:
 সম্মানিত উহুদ জিহাদ মুসলমানদের জন্যে এক ঐতিহাসিক জিহাদ মুবারক। যে সম্মানিত জিহাদ ৩য় হিজরী সনের পবিত্র শাওওয়াল মাসে অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মানিত জিহাদে স্বয়ং আখিরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন। সুবহানাল্লাহ! এই সম্মানিত জিহাদে মুসলমান তথা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সৈন্য সংখ্যা ছিলেন ৭০০ জন। বিপরীতে কাফির মুশরিকদের সংখ্যা ছিলো ৩০০০। পবিত্র মক্কা শরীফ উনার কুরাইশ কাফির মুশরিকরা হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নেতৃত্বে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার পাঁচ কিলোমিটার উত্তরে সম্মানিত উহুদ পাহাড়ের পাদদেশে ঘাঁটি সন্নিবেশ করে। এই জিহাদে মুসলমানগণ বিজয় লাভ করেন। অপরদিকে কাফির মুশরিকরা জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করে পবিত্র মক্কা শরীফে গিয়ে পৌঁছে। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের নিয়ে সম্মানিত জিহাদ মুবারক শেষে আরও তিনদিন সম্মানিত উহুদ প্রান্তরে অবস্থান মুবারক করেন। অতঃপর তিনদিন পর পবিত্র মদীনা শরীফে প্রত্যাবর্তন করেন। সুবহানাল্লাহ! উক্ত সম্মানিত জিহাদ ছিলো সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার অন্যতম ঐতিহাসিক জিহাদ মুবারক। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত উহুদ উনার পরিচয়:
পবিত্র মদীনা শরীফ উনার সুপরিচিত উহুদ পাহাড়ের নামে সম্মানিত উহুদ জিহাদের নামকরণ করা হয়। পাহাড়টি অন্য পাহাড়ের সাথে যুক্ত না থেকে একক হওয়ায় এর নাম উহুদ হয়েছে। এই পাহাড়ের পর ত্বায়েফের পাহাড় শুরু হয়েছে। এই সম্মানিত পাহাড়ের কতগুলো চূড়া রয়েছে। এর সরাসরি দক্ষিণে ছোট পাহাড়টির নাম আয়নায়েন। যা পরবর্তীতে জাবালুর রুমাত বা তীরন্দাযদের পাহাড় বলে পরিচিত হয়। এ দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী বৃহৎ উপত্যকার নাম ওয়াদে কুনাত। যেখানে সম্মানিত উহুদ জিহাদ সংঘটিত হয়।
 পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
 قَالَ النَّبِي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُحُدٌ جَبَلٌ يُحِبُّنَا وَنُحِبُّهُ.
 অর্থ: “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, উহুদ এমন এক পাহাড় যেই সম্মানিত পাহাড়টি আমাদেরকে মুহব্বত করে এবং আমরাও উনাকে মুহব্বত করি।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ: পবিত্র হাদীছ শরীফ নং-১৪৮২, মুসলিম শরীফ: পবিত্র হাদীছ শরীফ নং- ৩৪৭০)
 কোন কোন ঐতিহাসিক উনারা অত্র পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার অর্থ  করেছেন এভাবে, “আমরা সম্মানিত উহুদ পাহাড়ের আশে-পাশের অধিবাসী উনাদেরকে মুহব্বত করি আর উনারাও আমাদেরকে মুহব্বত করেন।” সুবহানাল্লাহ!
 আরো উল্লেখ রয়েছে, সফর থেকে ফেরার পথে সম্মানিত উহুদ পাহাড়  দৃষ্টিগোচর হলে বুঝা যায় যে, বাড়ীর কাছে এসে পেীঁছেছে। সম্মানিত উহুদ পাহাড় যেন সম্মানিত মুসলমান মুসাফির উনাদেরকে উনাদের বাড়ী-ঘরের নিকটবর্তী পেীঁছার সুসংবাদ দেন যেমন প্রিয়জন তার প্রিয়জনকে সুসংবাদ প্রদান করে।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
  قَالَ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ أُحُدٌ يُحِبّنَا وَنُحِبّهُ وَهُوَ عَلَى بَابِ الْجَنّةِ.
 অর্থ: “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন, নুরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সম্মানিত উহুদ পাহাড় আমাদেরকে মুহব্বত করেন। আর আমরাও উনাকে মুহব্বত করি। সেটি জান্নাতের দরজায় অবস্থিত।” সুবহানাল্লাহ! (উমদাতুল ক্বরী, রওদ্বূল উনূফ, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
পবিত্র মক্কা শরীফের কাফির মুশরিকদের সংঘবদ্ধ ও যুদ্ধের প্রস্তুতি:
সম্মানিত বদর জিহাদে যখন কুরাইশ কাফির মুশরিকরা চরম ভাবে লাঞ্চিত ও পরাজিত হলো এবং তাদের পরাজিত দল পবিত্র মক্কা শরীফে ফিরে এলো, আর এদিকে হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি (তখনও সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেননি) ও উনার বানিজ্যিক কাফিলা নিয়ে পবিত্র মক্কা শরীফে এলেন, তখন আব্দুল্লাহ ইবনে রবীয়া, হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (তিনি তখনও উনার ঈমান প্রকাশ করেননি), সাফওয়ান ইবনে উমাইয়া প্রমূখ কুরাইশ কাফির মুশরিকদের আরও কিছু ব্যক্তি যাদের পিতা-পুত্র কিংবা ভাই সম্মানিত বদর জিহাদে নিহত হয়েছিল। তারা হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে ও কুরাইশ কাফির মুশরিকদের মধ্যে সেই কাফিলায় যাদের বাণিজ্যিক পণ্য ছিল, তাদেরকে লক্ষ্য করে বলল; হে কুরাইশ কাফির মুশরিক সম্প্রদায়রা! যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাসম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তোমাদের শিকড় উৎপাটন করে দিয়েছেন। তোমাদের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদেরকে হত্যা করেছেন। সুতরাং তোমরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য ধন-সম্পদ দ্বারা আমাদের সাহায্য কর, যাতে আমরা উনাদের থেকে আমাদের মধ্যে যারা নিহত হয়েছে, তাদের প্রতিশোধ নিতে পারি। তখন তাদের কথা মত কুরাইশ কাফির মুশরিকরা তাই করলো। সেই বানিজ্যক কাফিলায় যত ধন-সম্পদ, অস্ত্র ছিলো সবগুলো সম্মানিত উহুদ যুদ্ধে তথা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে ব্যায় হবে বলে সবাই ওয়াদাবদ্ধ হলো। নাউযূবিল্লাহ!
 হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, কতক আলিম আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, তাদের সম্পর্কেই নিম্নোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হয়।
 মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
 إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ لِيَصُدُّوا عَن سَبِيلِ اللَّـهِ ۚ فَسَيُنفِقُونَهَا ثُمَّ تَكُونُ عَلَيْهِمْ حَسْرَةً ثُمَّ يُغْلَبُونَ ۗ وَالَّذِينَ كَفَرُوا إِلَىٰ جَهَنَّمَ يُحْشَرُونَ.
 অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার পথ থেকে লোকদেরকে নিবৃত্ত করার জন্য কাফিররা তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তারা তাদের ধন-স¤পদ ব্যয় করতেই থাকবে; এরপর তা তাদের মনকষ্টের কারণ হবে, তারপর তারা পরাভূত হবে এবং যারা কুফরী করে তাদেরকে জাহান্নামে একত্র করা হবে।” (পবিত্র সূরা আনফাল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ- ৩৬)
 দেখা গেল কুরাইশ কাফির মুশরিকরা সকলে মিলে এবং বানিজ্যিক কাফিলার উসকানিতে গোটা কুরাইশ সম্প্রদায় ও তাদের মিত্ররা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে কেবল ঐক্যবদ্ধই হলো না বরং কিনানার গোত্রগুলো এবং তিহামার লোকেরা, যারা তাদের অনুগত ছিল, তারাও তাদের সহযোগিতার জন্য তৈরী হল। নাউযূবিল্লাহ!
 আবূ উয্যা আমর ইবনে আব্দুল্লাহ জুমাহী নামে এক ব্যক্তি ছিল, সম্মানিত বদর জিহদের সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যার উপর দয়া-ইহসান মুবারক করেছিলেন। তার অনেক সন্তান সন্ততি ছিল এবং সে অভাবী ছিলো। সে সম্মানিত বদর জিহাদে বন্দী হয়েছিল। সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে আর্জি পেশ করলো, আপনিতো জানেন, আমার অনেক সন্তান-সন্ততি এবং আমি একজন অভাবী মানুষ। আপনি আমার উপর দয়া-ইহসান মুবারক করুন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তার উপর দয়া পরবশ হয়ে তাকে ছেড়ে দেন।
 এরপর সম্মানিত উহুদ যুদ্ধের সময় সাফওয়ান ইবনে উমাইয়া আবূ উয্যা আমর ইবনে আব্দুল্লাহ জুমাহীকে বলল, হে আবূ উয্যা! তুমিতো কবি। তুমি তোমার কবিতা ও বাকশক্তি দিয়ে আমাদের সাহায্য কর এবং আমাদের সাথে যুদ্ধে চলো। সে জবাব দিলো সম্মানিত বদর জিহাদে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার উপর বেমেছাল দয়া-ইহসান মুবারক করে আমাকে ছেড়ে দিয়েছেন। তাই আমি উনার বিরুদ্ধে কোন কিছু করতে প্রস্তুত নই।
 তখন সাফওয়ান বলল, আচ্ছা, সে কথা থাক। তুমিতো নিজের জীবন দিয়ে আমাদের সাহায্য করতে পার। আমি অঙ্গীকার করছি, যদি তুমি যুদ্ধ থেকে নিরাপদে ফিরে আসতে পার, তবে আমি তোমাকে প্রচুর সম্পদ দিয়ে ধনী করে দিব। আর যদি তুমি যুদ্ধে মারা যাও, তবে আমি এ দায়িত্ব নিচ্ছি যে, তোমার মেয়েরা আমার মেয়েদের সাথে জীবন যাপন করবে এবং সুখে-দু:খে তারা আমার মেয়েদের মতই থাকবে।
 আবূ উয্যা এতে সম্মত হয়ে গেল এবং তিহামার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেল। সেখানে পৌঁছে সে বানূ কিনানাকে যুদ্ধের জন্য আহবান জানিয়ে এই কবিতা বলল,
إيهًا بَنِي عَبْدِ مَنَاةَ الرّزّام ... أَنْتُمْ حُمَاةٌ وَأَبُوكُمْ حَامْ
لَا تَعِدُونِي نَصْرَكُمْ بَعْدَ الْعَامِ ... لَا تُسَلّمُونِي لَا يَحِلّ إسْلَامْ
 অর্থ: “হে অবিচল যোদ্ধা বানূ আব্দে মানাফ! তোমরা হলে গোত্র মর্যাদা সংরক্ষণকারী, যেমন ছিল তোমাদের পিতৃপুরুষেরা গোত্র মর্যাদা রক্ষাকারী (সুতরাং এ কঠিন পরিস্থিতিতে তোমরা আমাদের সাহায্য কর)।
 এ বছরের পর আর আমাদের সাহায্য করার প্রতিশ্রুতির কোন প্রয়োজন নেই। আমাদের শত্রুর হাতে ছেড়ে দিও না; কেননা, এরূপ করা আদৌ উচিত নয়।” (সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, মাগাযী আল ওয়াক্বিদী রহমতুল্লাহি আলাইহি, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
 মুসাফি’ ইবনে আবদ মানাফ ইবনে ওয়াহাব ইবনে হুযাফা ইবনে জুমাহ সে বানূ মালিক ইবনে কিনানার কাছে পৌঁছে তাদেরকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার প্রতি প্ররোচিত করে এই কবিতা আবৃত্তি করলেন,
يَا مَالِ مَالِ الْحَسَبِ الْمُقَدّمِ ... أَنْشُدُ ذَا الْقُرْبَى وَذَا التّذَمّمِ
مِنْ كَانَ ذَا رُحْمٍ وَمَنْ لَمْ يَرْحَمْ ... الْحِلْفَ وَسْطَ الْبَلَدِ الْمُحَرّمِ
عِنْدَ حَطِيمِ الْكَعْبَةِ الْمُعَظّمِ
 অর্থ: “আমি এখন সেই আত্মীয়-স্বজনকে, প্রতিশ্রুতি ও নিরাপত্তাদানকারীদের তালাশ করে বেড়াচ্ছি?
 তোমরা বল তো, দয়ালু রহম দিলের অধিকারী কারা ছিলো? সম্মানিত শহরের মাঝে, পবিত্র কা’বা শরীফ উনার ঘরের হাতীমের পাশে, কে মিত্রদের প্রতি অনুগ্রহ করেনি? (অর্থাৎ তোমরাই এরূপ করেছিলে, এখন তোমাদের কি হলো?)।” (সীরাতুন নববী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, তারিখে উমাম ওয়াল মুলূক, রওদ্বুল উনূফ)
 এরপর জুবাইর ইবনে মুতঈমের হযরত ওয়াহশী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নামে একজন হাবশী পরাধীন ছিলেন (তখনও তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেননি)। হাবশীদের মধ্যে তিনি বর্শা নিক্ষেপে পারদর্শী ছিলেন। উনার লক্ষ খুব কমই ভ্রষ্ট হতো। জুবাইর সে তার পরাধীনকে বলল, আপনি সকলের সাথে যুদ্ধে চলুন। যদি আপনি আমার চাচা তু’মা ইবনে ‘আদীর হত্যার প্রতিশোধে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত চাচাজান সাইয়্যিদুশ শুহাদা’ সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করতে পারেন তবে আপনি আমার পক্ষ হতে পরাধীন থেকে স্বাধীন হয়ে যাবেন। নাউযূবিল্লাহ!
 কুরাইশ কাফির মুশরিকরা তাদের অনুসারী ও তাদের সাথে যোগদানকারী বানূ কিনানা ও তিহামার লোকদের নিয়ে অস্ত্রসহ পূর্ণ সাজ-সজ্জায় যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে রণাঙ্গনের দিকে বেরিয়ে পড়ল। আর কেউ যাতে পলায়ন না করে, সেই সাথে নিজেদের মধ্যে যেন আত্মমর্যাদাবোধ সৃষ্টি হয়, সে জন্য তারা নিজেদের সাথে মহিলাদেরকে হাওদায় বসিয়ে নিয়ে নিল।
 কুরাইশ কাফির মুশরিকদের সেনাপতি হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিও হযরত হিন্দা বিনতে উতবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে সাথে নিলেন। (হযরত হিন্দা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি পরবর্তীতে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন।) অনুরূপ ভাবে হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, উম্মু হাকীম বিনতে হারিছ ইবনে হিশাম ইবনে মুগীরাকে সাথে নেন। (হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিও পরবর্তীতে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন)। হারিছ ইবনে হিশাম ইবনে মুগীরা সে ফাতিমা বিনতে উয়ালীদ ইবনে মুগীরাকে ও সাফওয়ান ইবনে উমাইয়া সে বুরযা বিনতে মাসউদ ইবনে উমর ইবনে উমায়ের সাকাফীকে সাথে নিয়ে নিল। বুরযা ছিল আব্দুল্লাহ ইবনে সাফওয়ান ইবনে উমাইয়ার মা।
 হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, মতান্তরে তার নাম রুকাইয়া।
 ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আর আমর ইবনে আস সে বারীত্বাহ বিনতে মুনাব্বিহ ইবনে হাজ্জাজকে। বারীত্বাহ ছিল আব্দুল্লাহ ইবনে আমরের মা। অনুরূপভাবে ত্বালহা ইবনে আবূ ত্বালহা সে সুলাফাহ বিনতে সা’দ ইবনে শুহাইদ আল আনসারীকে সাথে নিল।
 এছাড়া কুরাইশ কাফির মুশরিকদের থেকে আবূ ত্বলহা হল আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল উয্যা ইবনে উছমান ইবনে আব্দুদদার এর কুনিয়াত আর সুলাফা হল ত্বলহার ছেলে মুসাফি’, জুল্লাস ও কিলাবের মা। তাদের পিতাসহ তারা সকলে উহুদ যুদ্ধে নিহত হয়। বানূ মালিক ইবনে হিসল গোত্রের খুন্নাস বিনতে মালিক ইবনে মাযরাব নামক জনৈক মহিলা তার ছেলে আবূ আযীয ইবনে উমায়েরসহ যুদ্ধে বেরিয়েছিল। সে হযরত মাসয়াব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মা ছিল। অনুরূপভাবে আমরাহ বিনতে আলক্বামাহ এ অভিযানে অংশগ্রহণ করে। সে ছিল বানূ হারিছ ইবনে আব্দে মানাত ইবনে কিনানার একজন মহিলা।
 হযরত হিন্দ বিনতে উতবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা (পরবর্তীতে তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন) তিনি যখনই হযরত ওয়াহশী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাছ দিয়ে অতিক্রম করতেন, কিংবা হযরত ওয়াহশী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যখন উনার পাশে আসতেন, তখন হযরত হিন্দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাকে বলতেন, হে আবূ দাসমা! আমার কলিজা শীতল করুন। আবূ দাসমা ছিল হযরত ওয়াহশী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কুনিয়াত। অতঃপর তারা যুদ্ধের জন্য রওয়ানা হয়ে সেখানে পৌঁছে আয়নায়ন পর্বতে আস্তানা গাড়ল, যা পবিত্র মদীনা শরীফ উনার বিপরীত দিকে কানাত উপত্যকার পাশে বাতনে সাবখার নি¤œভূমিতে অবস্থিত ছিল।
 মোট কথা, পবিত্র মক্কা শরীফের কাফির মুশরিকরা যখন যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করল এবং স্বীয় আহলিয়াদেরও সঙ্গে নিল যাতে তারা ছড়া ও কবিতা আবৃত্তি করে যোদ্ধাদের মনোবল বৃদ্ধি করতে পারে এবং পলাতকদের ধিক্কার দিতে পারে। যেন অধিকন্তু যোদ্ধারা নারীদের কাছে অপদস্ত হওয়ার ভয়ে সর্বান্তকরণে প্রাণপণ যুদ্ধ করে পিছনে বসে থাকার চিন্তাও না করে। পবিত্র মক্কা শরীফের কুরাইশ কাফির মুশরিকরা বিভিন্ন গোত্রের প্রতি দূতও প্রেরণ করে যাতে তারা এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে তাদের শক্তি বৃদ্ধি করে। এভাবে তারা ৩০০০ সৈন্য জমা করতে সক্ষম হয়। নাউযূবিল্লাহ! যাদের মধ্যে ৭০০ শত ছিলো বর্ম পরিহিত। অধিকন্তু দু’শত ঘোড়া, তিনহাজার উট, পনেরজন আহলিয়া তথা নারী সহযাত্রী ছিলো। এই ৩০০০ সুসজ্জিত যোদ্ধা হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নেতৃত্বে খুবই জাকজমকের সাথে তৃতীয় হিজরী সনের ৫ ই শাওওয়াল শরীফ পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে যাত্রা করে। (সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, তাবাকাতে ইবনে সা’দ, যারকানী, তারীখে তাবারী, সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আল বিদায়া

সাইয়্যিদুনা হযরত খতিমুল মুহাজিরীন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম উনার কর্তৃক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কুরাইশ কাফির মুশরিকদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবহিতকরণ:

 যখন পবিত্র মক্কা শরীফের কাফির মুশরিকরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করলো তখন খ¦তিমুল মুহাজিরীন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম তিনি কাল বিলম্ব না করে দ্রুত একটি পত্র লিখে একজন দূতের মাধ্যমে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে প্রেরণ করেন। খ¦তিমুল মুহাজিরীন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম তিনি তখনও পবিত্র মক্কা শরীফে অবস্থান মুবারক করছিলেন। তিনি দুতকে নির্দেশ দিলেন যেভাবেই হোক খুব দ্রুত তিন দিনের মধ্যে এই পত্র পবিত্র মদীনা শরীফে পৌঁছানোর জন্য। খ¦তিমুল মুহাজিরীন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম তিনি সেই পত্রে কাফির মুশরিকদের সৈন্য সংখ্যা, তাদের অস্ত্র-শস্ত্র এবং রষদসম্ভারের পূর্ণ বিবরণ উল্লেখ্য করেন। (যারকানী, মাদারেজুন নুবুওওয়াহ, সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
 এ খবর পাওয়া মাত্রই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত মুনিস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদেরকে কাফির মুশরিকদের বর্তমান অবস্থা ও অবস্থান জানার জন্য পাঠালেন। তারা এসে জানালেন যে, কুরাইশ কাফির মুশরিকদের সৈন্যদল পবিত্র মদীনা শরীফ উনার কাছাকাছি চলে এসেছে। এরপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কাফির মুশরিকদের কতজন সৈন্য রয়েছে তা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে জানানোর জন্য হযরত হুবাব ইবনে মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে পাঠালেন। হযরত হুবাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কুরাইশ কাফির মুশরিকদের সৈন্যসংখ্যা, তাদের উট ও ঘোড়ার পরিমান ও যুদ্ধাস্ত্র ইত্যাদি সম্পর্কে পূর্ণ তথ্যাদি এসে পেশ করলেন। এ সংবাদ শুনে হযরত সা’দ ইবনে মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উসাইদ ইবনে হুযাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত সা’দ ইবনে উবাদাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা রাতভর পবিত্র হুজরা শরীফ তথা পবিত্র মসজিদে নববী শরীফ পাহারা দিলেন, পবিত্র মদীনা শরীফ উনার চারিদিকে পাহারার ব্যবস্থা করা হলো। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (তাবাকাতে ইবনে সা’দ, সীরাতে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

সম্মানিত ওহী মুবারক অবতীর্ণ ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সাথে পরামর্শ:

 মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
 وَمَا يَنطِقُ عَنِ الْهَوَىٰ. إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَىٰ.
 অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজ থেকে কোন কথা মুবারক বলেন না বা কোন কাজ মুবারক করেন না, যে পর্যন্ত উনার প্রতি সম্মানিত ওহী মুবারক প্রেরন করা হয়।” (পবিত্র সূরা নজম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩-৪)
 অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রত্যেকটি কথা কাজ ও মৌন স্বীকৃতি মুবারকই হচ্ছে সম্মানিত ওহী মুবারক উনার অন্তর্ভূক্ত। সুবহানাল্লাহ! তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে সম্মানিত ওহী মুবারক ছাড়া কোন কথা-বার্তা, কাজ-কর্ম, আদেশ-নিষেধ ইত্যাদি করেন না। অর্থাৎ তিনি সম্মানিত ওহী মুবারক দ্বারা নিয়ন্ত্রীত। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
 হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন,
 قَالَ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ وَلِلْمُسْلِمِينَ إنّي قَدْ رَأَيْت وَاَللّهِ خَيْرًا ، رَأَيْت بَقَرًا ، وَرَأَيْت فِي ذُبَابِ سَيْفِي ثُلْمًا ، وَرَأَيْت أَنّي أَدْخَلْت يَدِي فِي دِرْعٍ حَصِينَةٍ فَأَوّلْتهَا الْمَدِينَةَ.
 অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মুসলমান তথা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে লক্ষ্য করে ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি খুবই উত্তম একখানা স্বপ্ন মুবারক দেখেছি। তা হচ্ছে আমি একটি গাভী দেখলাম, আরও  দেখলাম আমার তরবারির মাথায় দয়ালুতা রয়েছে, আরোও দেখলাম আমার নূরুল মাগফিরাহ বা সম্মানিত হাত মুবারক একটি মজবুত লৌহবর্মে ঢুকিয়ে দিয়েছি। নিশ্চয়ই এর দ্বারা পবিত্র মদীনা শরীফ উনার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।” সুবহানাল্লাহ! (ফতুহুল বারী, উমদাতুল ক্বরী, তোহফাতুল আহওয়াযী, আর রহীক্বুল মাখতূম, আস সীরাতুন নুবুওওয়াহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি)
 প্রসিদ্ধ তারিখ ও সীরত গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে,
 حَدّثَنِي بَعْضُ أَهْلِ الْعِلْمِ أَنّ رَسُولَ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ قَالَ رَأَيْت بَقَرًا لِي تُذْبَحُ ، قَالَ فَأَمّا الْبَقَرُ فَهِيَ نَاسٌ مِنْ أَصْحَابِي يُقْتَلُونَ وَأَمّا الثّلْمُ الّذِي رَأَيْت فِي ذُبَابِ سَيْفِي ، فَهُوَ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ بَيْتِي يُقْتَلُ.
 অর্থ: “(হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,) আমার কাছে বর্ণনা করেছেন, কতক আলিম ব্যক্তিগণ। উনারা একথা শুনিয়েছেন যে, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি দেখলাম, আমার কিছু গাভী যবাই করা হচ্ছে। তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, গাভী দ্বারা উদ্দেশ্য আমার কিছু হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করবেন। আর তরবারি করাতের দাঁত দ্বারা উদ্দেশ্য আমার বংশ মুবারকের এক ব্যক্তি তিনি শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করবেন।” অর্থাৎ সেই ব্যক্তি হচ্ছে, সাইয়্যিদুশ শুহাদা সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! (সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি)
 স্মরণীয় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মক্কার কাফির মুশরিকদের আগমনের সংবাদ শুনে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে আহ্বান করলেন পরামর্শ করার জন্য। কারণ পরামর্শ করা হচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক উনার অন্তর্ভূক্ত। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা হযরত মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
 মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ
 অর্থ: “(হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি কাজে কর্মে পরামর্শ গ্রহণ করুন।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র  আয়াত শরীফ- ১৮৯)
 অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সমস্ত কাজে কর্মে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সাথে পরামর্শ মুবারক করতেন। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ তিনি উম্মতকে প্রতিটি কাজে কর্মে পরামর্শ মুবারক করার তা’লীম দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা হযরত মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
 হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
 فَإِنْ رَأَيْتُمْ أَنْ تُقِيمُوا بِالْمَدِينَةِ وَتَدْعُوهُمْ حَيْثُ نَزَلُوا، فَإِنْ أَقَامُوا أَقَامُوا بِشَرّ مَقَامٍ وَإِنْ هُمْ دَخَلُوا عَلَيْنَا قَاتَلْنَاهُمْ فِيهَا.
 অর্থ: “যদি আপনারা মনে করেন যে, আপনারা পবিত্র মদীনা শরীফে অবস্থান মুবারক করবেন, আর কুরাইশ কাফির মুশরিকরা যেখানে ছাউনি গেড়েছে তারা সেখানেই থাকবে। তবে তারা যদি সেখানে অবস্থান করে তাহলে তাদের জন্য সেটা খুবই নিকৃষ্টতম অবস্থান হবে। আর যদি তারা পবিত্র মদীনা শরীফে প্রবেশ করে আমাদের উপর আক্রমণ করে তবে আমরা সকলে মিলে তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবো। অর্থাৎ তাদেরকে পরাজিত করবো।” (দালায়িলুন নবুওওয়াহ, আস সীরাতুন নুবুওওয়াহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, আল ক্বওলুল মুবীন ফি সীরাতে সাইয়্যিদুল মুরসালীন ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
 অর্থাৎ শুরুতে মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত ওহী মুবারক উনার মাধ্যমে এই নির্দেশ মুবারক দিয়েছিলেন যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেন পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে থেকেই সম্মানিত জিহাদ মুবারক পরিচালনা করেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা হযরত মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
 উল্লেখ্য যে, কাট্টা মুনাফিক সরদান উবাই বিন সুলূল সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলল, পবিত্র মদীনা শরীফে থেকেই আমাদের জিহাদ করাই হবে উত্তম। এই কাট্টা মুনাফিক সরদার উবাই বিন সুলূল সে জোরালোভাবে পবিত্র মদীনা শরীফে অবস্থান মুবারক করা ও পবিত্র মদীনা শরীফ উনার বাইরে বেরিয়ে জিহাদ না করার প্রতি জোর দিতে থাকে। নাউযূবিল্লাহ!
 কিন্তু পরবর্তীতে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার বাইরে গিয়ে সম্মানিত জিহাদ মুবারক করার অনুমতি হাদিয়া করেন। সুবহানাল্লাহ! এতে কাট্টা মুরতাদ মুনাফিক সরদার উবাই বিন সুলূল সে অসন্তুষ্ট ও সম্মানিত জিহাদে না যাওয়ার বিষয়ে চূ-চেরা কিল কাল করতে থাকলো। নাউযূবিল্লাহ! মূলত সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধীতা করাই ছিলো এই মুনাফিক সরদার উবাই বিন সুলূলের খাছলত তথা স্বাভাব। নাউযূবিল্লাহ!
 আর এই কাট্টা মুনাফিক সবসময় ভিতরে ভিতরে সম্মানিত বদর জিহাদ উনার মতো এই সম্মানিত জিহাদের সময়ও পবিত্র মক্কা শরীফের কাফির মুশরিকদের সাথে ও ইহুদী গোত্রগুলোর সাথেও যোগাযোগ ও গভীর যড়যন্ত্র করে যাচ্ছিল। তার উদ্দেশ্য ছিলো, কি করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদেরকে বিপাকে ফেলা যায় এবং উনাদেরকে কষ্ট দেয়া যায়। নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ! এবং সে এক পর্যায় সম্মানিত উহুদ জিহাদে না যাওয়ার জন্য বিভিন্নরকম আপত্তি পেশ করতে থাকে। কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিতো ওহী মুবারক ব্যাতীত নিজ থেকে কোন কথা মুবারক বলেন না ও কোন কাজ মুবারক করেন না। সুবহানাল্লাহ!
 নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের নিকট পরামর্শ চাইলেন তখন কিছু সংখ্যক হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে যারা সম্মানিত বদর জিহাদে অংশগ্রহণ করতে পারেননি আর যারা যুবক ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! পবিত্র মদীনা শরীফ উনার বাইরে বেরিয়ে কাফির মুশরিকদের সাথে জিহাদ করার সুযোগ আমাদেরকে দিন, যাতে তারা এ ধারণাও করতে পারে যে, আমাদের মধ্যে কোন প্রকার দূর্বলতা নেই। সুবহানাল্লাহ!
 কিন্তু দেখা গেলো মুনাফিক সরদার উবাই বিন সুলুল সেও লজ্জাহীন ভাবে বলে উঠল, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! পবিত্র মদীনা শরীফেই অবস্থান করুন, তাদের অবস্থানের দিকে বের হবেন না। সে বলল, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যখনই আমরা পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে কোন শত্রুকে লক্ষ্য করে বের হয়েছি, তখনই আমরা পরাভূত হয়েছি। আর যখনই পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে তারা আমাদের উপর চড়াও হয়েছে, তখন তারা পরাস্ত হয়েছে। সুতরাং ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কুরাইশ কাফির মুশরিকদেরকে তাদের অবস্থায় ছেড়ে দিন। যদি তারা স্বস্থানেই ছাউনি গেড়ে বসে থাকে তবে সে স্থান হবে তাদের জন্য নিকৃষ্ট জেলখানা। আর যদি তারা পবিত্র মদীনা শরীফে প্রবেশ করে, তবে পুরুষেরা তাদের সাথে শক্ত মুকাবিলা করবেন, আর মহিলা ও শিশুরা ছাদের উপর থেকে তাদের উপর প্রস্তর নিক্ষেপ করবেন। আর যদি তারা ফিরে যায় তবে যেমন এসেছিল তেমনি বিফল হয়ে ফিরে যাবে।
 যখন কাট্টা মুনাফিক উবাই বিন সুলূল সে এভাবে ভিরুতার পরিচয় দিচ্ছিল এবং নিজের অন্তরে থাকা হিংসা বিদ্বেষ চাপিয়ে রেখে বাহ্যিক ভাবে বকবক করছিল। কিন্তু হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা কাট্টা মুনাফিক উবাই বিন সুলূলের নিফাক্বীপূর্ণ কথা বুঝতে পেরে সতর্ক হলেন। এই কাট্টা মুনাফিক উবাই বিন সুলূল যা বলছিল তা সত্য নয় বরং তার অন্তরে মুনাফিকী সেই বিষয়টি পথিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছিল।
 প্রসিদ্ধ তারিখ ও সীরত গ্রন্থসমূহে আরো উল্লেখ রয়েছে, ‘হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্য থেকে কতক বয়স্ক ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা এবং হযরত যুবক ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পবিত্র মদীনা শরীফ উনার বাইরে গিয়ে সম্মানিত জিহাদ মুবারক করার ব্যাপারে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে আর্জি পেশ করছিলেন। উনারা বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা বহুদিন ধরে এমন দিনের অপেক্ষায় রয়েছি এবং আমরা এমন দিনের আকাংখা করছি।
 মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট এমন দিনের জন্য দোয়াও করছি। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সম্মুখে সেই দিন এনে দিয়েছেন, আর সম্মানিত জিহাদের পথও বেশি নয়। সাইয়্যিদুশ শুহাদা সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম, হযরত সা’দ ইবনে উবাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত নু’মান ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা উনারা বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা যদি পবিত্র মদীনা শরীফে অবস্থান করে শত্রুর মোকাবিলা করি তাহলে শত্রুরা আমাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় জিহাদ করার বিষয় ভীতু ও দুর্বল মনে করবে। এক পর্যায়ে সাইয়্যিদুশ শুহাদা সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন,
 وَاَلّذِي أَنْزَلَ عَلَيْك الْكِتَابَ لَا أَطْعَمُ الْيَوْمَ طَعَامًا حَتّى أُجَالِدَهُمْ بِسَيْفِي خَارِجًا مِنْ الْمَدِينَةِ.
 অর্থ: “আপনার প্রতি যিনি সম্মানিত কিতাব নাযিল করেছেন উনার ক্বসম! যে পর্যন্ত পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বের হয়ে শত্রুদের সাথে তরবারি দিয়ে মোকাবেলা না করবো ততক্ষন পর্যন্ত খাওয়া-দাওয়াও করব না। (মাগাযিউল ওয়াক্বিদী, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, যুরকানী, সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ )
 হযরত নু’মান ইবনে মালিক আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন,
 يَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، لاَ تَحْرِمْنِا الْجَنَّةَ، فَوَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ لأَدْخُلَنَّ الْجَنَّةَ. فَقَالَ لَهُ: بِمَ؟ قَالَ بِأَنِّي أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَأَنَّكَ رَسُولُ اللَّهِ، وَأَنِّي لاَ أَفِرُّ مِنَ الزَّحْفِ.
 অর্থ: “ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাদের জন্য সম্মানিত জান্নাতকে হারাম করবেন না। যিনি আপনাকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হায়াতুন নবী, শাহিদুন নবী, মুত্বালা’ আলাল গইব, মালিকুল জান্নাহ হিসেবে প্রেরণ করেছেন উনার ক্বসম! আমরা অবশ্যই জান্নাতে যাবো। সুবহানাল্লাহ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত নু’মান ইবনে মালিক আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বললেন, কিসের ভিত্তিতে আপনি এমন কথা বললেন? তখন হযরত নু’মান ইবনে মালেক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, কেননা আমরা এ কালিমা শরীফ উনার উপর সাক্ষ্য প্রদান করি যে, ‘মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত কোন ইলাই নেই এবং আপনি উনার রসূল তথা হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।’ আর আমরা কখনও সম্মানিত জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করি না।” (তাফসীরে ত্ববারী, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলূক, উস্দুল গবা, সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
অপর এক বর্ণনায় এসেছে যে, হযরত নু’মান ইবনে মালেক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আরো বলেন,
  لِأنِّي أُحِبُّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. فَقَالَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَدَقْتَ.
 অর্থ: “এজন্য যে, কেননা আমি মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মুহব্বত করি। সুবহানাল্লাহ! তা শুনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনি সত্যিই বলেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (তারিখুল উমাম ওয়াল মুলূক, সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ)
এ কথা মুবারক শুনে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে জজবা পয়দা হলো। সকলেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য কুরবান হতে প্রস্তুত হলেন। সেই সম্মানিত জিহাদ মুবারকে আপনার জন্য আমাদের মাল-জান কুরবান হোক।
 এদিকে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সম্মানিত ওহী মুবারক নাযিল করেলেন যেন তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার বাইরে গিয়ে কাফির মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ! ফলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হুযরা শরীফে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করলেন এবং সম্মানিত জিহাদের জন্য লৌহবর্ম পরিধান মুবারক করে বেরিয়ে আসলেন। সুবহানাল্লাহ! এ ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল ইয়াওমুল জুমুয়া’ পবিত্র জুমুয়ার নামায আদায়ের পর। সুবহানাল্লাহ! আর ঐ দিনে বানূ নাজ্জারের আনছার ছাহাবী হযরত মালিক ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার জানাযার নামায পড়ান।
 আরো বর্ণিত রয়েছে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র জুমুয়া মুবারক উনারা খুতবা মুবারকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের লক্ষ্য করে অনেক নছীহত মুবারক করলেন। সমস্ত কাজ মনোযোগ সহকারে সম্পাদন করার তা’লীম মুবারক দিলেন এবং উনাদেরকে বলা হয়েছিল, যদি আপনারা সংকল্পে দৃঢ়তা, সহিষ্ণুতা অবলম্বন করেন এবং সর্বক্ষেত্রে অটল অবিচল থাকেন তবে বিজয় আপনাদের সুনিশ্চিত। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
 এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
 فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّـهِ ۚ إِنَّ اللَّـهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِينَ.
 অর্থ: “আপনি যখন কোন কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলেন তখন মহান আল্লাহ পাক উনার উপর তায়াক্কুল বা ভরসা মুবারক করুন। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি তায়াক্কুলকারীকে মুহব্বত করেন।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫৯)
 সুতারাং মহান আল্লাহ পাক উনার উপর এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর তায়াক্কুল বা ভরসা করা সমস্ত জীন-ইনসানের জন্য আবশ্যক। আর উনাদের উপর তায়াক্কুল করার মধ্যেই রয়েছে পরিপূর্ণ কামিয়াবী ও পূর্ণ বিজয়। সুবহনাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
 তারপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে একত্রিত হওয়ার নির্দেশ মুবারক প্রদান করলেন। এতে করে পবিত্র মদীনা শরীফের বাইরে গিয়ে জিহাদ করায় আগ্রহী ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম তথা সমস্ত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সকলেনই খুবই খুশি ও আনন্দিত হলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র আছর নামায বাদ সম্মানিত হুজরা শরীফ উনার মধ্যে প্রবেশ করলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম ও সাইয়্যিদুনা হযরত ফরূকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনারাও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে পবিত্র হুজরা শরীফের মধ্যে হাযির হলেন। উনারা উভয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরূল হুদা তথা সম্মানিত মাথা মুবারকে গাগড়ী মুবারক বেঁধে দিলেন, সম্মানিত বর্ম মুবারক পরিধান করালেন এবং প্রয়োজনীয় অস্ত্র-শস্ত্র নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে পেশ করে তা সাথে নিয়ে নিলেন।
সম্মানিত হুজরা শরীফ উনার বাইরে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা কাতারবন্দী হয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তাশরীফ মুবারকের অপেক্ষায় ছিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাম তিনি অস্ত্র-সজ্জায় সজ্জিত হয়ে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনহুম উনাদের সম্মুখ্যে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করলেন। সুবহনাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! তারপর কাফির মুশরিকদের উপযুক্ত শিক্ষা দেয়ার লক্ষ্যে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বের হওয়ার ইচ্ছা মুবারক প্রকাশ করলেন। তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুদ দারাজাত (তথা ক্বদম মুবারকে) ক্ষমাভিক্ষা চাইলেন এবং আর্জি মুবারক করলেন। আমাদের সর্বপ্রকার ভুল বেয়াদবী ক্ষমা করে দিন। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা পূনরায় বিনীত ভাবে আর্জি মুবারক জানালেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি ইচ্ছা মুবারক করলে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে অবস্থান মুবারক করতে পারেন অথবা আপনি মদীনা শরীফ উনার বাইরে গিয়ে সম্মানিত জিহাদ মুবারক করতে পারেন। তবে আপনি যেভাবে আমাদেরকে নির্দেশ মুবারক দিবেন সেভাবেই আপনার আদেশ মুবারক আমরা পালন করতে প্রস্তুত। উনারা আরো বললেন, সর্ববিষয় মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা সবচেয়ে বেশি ভালো জানেন।
  নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হুজরা মুবারক থেকে বাইরে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করে ইরশাদ মুবারক করলেন,
  مَا يَنْبَغِي لِنَبِيّ إذَا لَبِسَ لَأْمَتَهُ أَنْ يَضَعَهَا حَتّى يُقَاتِلَ.
 অর্থ: “কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পক্ষে শোভনীয় নয় একবার লৌহবর্ম মুবারক পরিধান করার পর জিহাদ মুবারক না করে তা খুলে ফেলা।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি, দালায়িলুন নুবুওওয়াহ, ফতহুল বারী, বদরুল মুনীর, জামিউল আহাদীছ, আল জামিউছ ছগীর, ¦ছায়িছূল কুবরা, সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি)
অর্থাৎ নুরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে পবিত্র উহুদ প্রান্তরে গিয়ে সম্মানিত জিহাদ মুবারক করার নির্দেশ মুবারক দান করেন।
  মোটকথা হলো, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সম্মানিত ওহী মুবারক নাযিল উনার মাধ্যমে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে সম্মানিত উহুদ প্রান্তরে গিয়ে সম্মানিত জিহাদ মুবারক করার বিষয়টি ফায়সালা মুবারক করলেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ১০০০ জনের একটি দল সঙ্গে নিয়ে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বেরিয়ে পড়লেন। কিন্তু পথিমধ্য থেকে মুনাফিক সরদার উবাই বিন সুলূল সে বিভিন্নরকম চূ-চেরা ও অজুহাত দেখিয়ে তার ৩০০ অনুচর নিয়ে পিছন দিকে পলায়ন করে। নাউযূবিল্লাহ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বাকি ৭০০ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে সম্মানিত উহুদ প্রান্তরের দিকে রওয়ানা দেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
 ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এই সম্মানিত উহুদ জিহাদ মুবারকে গমনের সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ইবনে উম্মে মাকতূম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে মসজিদুন নববী শরীফ উনার পবিত্র নামায আদায়ের জন্য নির্দেশ মুবারক দান করেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)