ثُمّ أَقْبَلَ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ قَافِلًا إلَى الْمَدِينَةِ
، وَمَعَهُ الْأُسَارَى مِنْ الْمُشْرِكِينَ وَفِيهِمْ عُقْبَةُ بْنُ أَبِي مُعَيْطٍ ، وَالنّضْرُ بْنُ الْحَارِثِ وَاحْتَمَلَ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ مَعَهُ النّفَلُ الّذِي أُصِيبَ مِنْ الْمُشْرِكِينَ وَجَعَلَ عَلَى النّفَلِ حضرت عَبْدِ اللّهِ بْنُ كَعْبِ بْنِ عَمْرِو بْنِ عَوْفِ بْنِ مَبْذُولِ بْنِ عَمْرِو بْنِ غَنْمِ بْنِ مَازِنِ بْنِ النّجّارِ رضى الله تعالى عنه، فَقَالَ رَاجِزٌ مِنْ الْمُسْلِمِينَ - قَالَ حضرت ابْنُ هِشَامٍ رحمة الله عليه: يُقَالُ إنّهُ حصرت عَدِيّ بْنُ أَبِي الزّغْبَاءِ
رضى الله تعالى عنه،
أَقِمْ لَهَا صُدُورَهَا
يَا بَسْبَسُ ... أَلَيْسَ بِذِي الطّلْحِ لَهَا مُعَرّسُ
وَلَا بِصَحْرَاءِ
غُمَيْرٍ مَحْبَسُ ... إنّ مَطَايَا الْقَوْمِ لَا تُخَيّسُ
فَحَمَلَهَا
عَلَى الطّرِيقِ أَكْيَسُ ... قَدْ نَصَرَ اللّهُ وَفَرّ الْأَخْنَسُ
অর্থ: (হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি
তিনি বলেন) “এরপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি উনার কাফিলা নিয়ে পবিত্র মদীনা শরীফের দিকে রওয়ানা হলেন এবং উনাদের
সাথে ছিলো, যে সমস্ত কাফির মুশরিকরা বন্দী হয়েছিলো
তারাও। বন্দীদের মধ্যে উকবা ইবনে আবূ মুয়ীত্ব ও নযর ইবনে হারিছও ছিলো। কাফির
মুশরিকদের সাথে জিহাদ করে যে সমস্ত গনীমতের সম্পদ লাভ হয়েছে সে সমস্ত সম্পদের
দায়িত্বে ছিলেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে কা’ব ইবনে আমর ইবনে আওফ ইবনে মাবযূল ইবনে আমর
ইবনে গনাম ইবনে মাযিন ইবনে নাজ্জার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি। এ সময় হযরত
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্য থেকে একজন নবোদ্দীপনা মূলক
কবিতা মুবারক আবৃতি করেন।
হযরত ইবনে হিশাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
তিনি বলেন, কবিতা
আবৃতিকারী ছিলেন হযরত আদী ইবনে আবী যাগবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।
(কবি বলেন,) ‘হে বাসবাস!
কাফিলার বহনগুলোকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া অব্যাহত রাখুন। যুল-ত্বলিহ নামক
উপত্যকায় কাফিলা নিয়ে রাত্রি যাপন করা যাবে না এবং উমাইর প্রান্তরে উক্ত কাফিলাকে
আটকানো যাবে না। কেননা, বিজয়ী কাফিলার বহনকে প্রতিরোধ করা
যায় না। সুতরাং রাস্তা দিয়ে সোজাসুজি অতিক্রম করে যাওয়ার সুযোগ দেয়াই বুদ্ধিমানের
পরিচয়। নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহ পাক তিনি সাহায্য করেছেন এবং শয়তান পালিয়ে গেছে।”
ثُمّ أَقْبَلَ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ - حَتّى إذَا خَرَجَ مِنْ مَضِيقِ الصّفْرَاءِ
نَزَلَ عَلَى كَثِيبٍ بَيْنَ الْمَضِيقِ وَبَيْنَ النّازِيَةِ - يُقَالُ لَهُ سَيْرٌ - إلَى سَرْحَةٍ بِهِ . فَقَسَمَ هُنَالِكَ النّفَلَ الّذِي أَفَاءَ اللّهُ عَلَى الْمُسْلِمِينَ مِنْ الْمُشْرِكِينَ عَلَى السّوَاءِ ثُمّ ارْتَحَلَ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ حَتّى إذَا كَانَ بِالرّوْحَاءِ لَقِيَهُ الْمُسْلِمُونَ يُهَنّئُونَهُ بِمَا فَتَحَ اللّهُ عَلَيْهِ وَمَنْ مَعَهُ مِنْ الْمُسْلِمِينَ فَقَالَ لَهُمْ حضرت سَلَمَةُ بْنُ سَلَامَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْه– مَا الّذِي لَقِينَا إلّا عَجَائِزَ صُلْعًا كَالْبُدْنِ الْمُعَقّلَةِ فَنَحَرْنَاهَا ، فَتَبَسّمَ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ ثُمّ قَالَ أَيْ ابْنَ أَخِي ، أُولَئِكَ الْمَلَأُ قَالَ حَضْرَتْ ابْنُ هِشَامٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، الْمَلَأُ الْأَشْرَافُ وَالرّؤَسَاءُ-
অর্থ: (বর্ণনাকারীগণ উনারা বলেন,) “এরপর
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মুখে
অগ্রসর হন এবং সাফরা গিরিপথ পার হয়ে উক্ত গিরিপথ ও নাযিয়ার মধ্যবর্তী সায়ার নামক
বালুর টিলার একটি বড় বৃক্ষের নিকট অবতরণ করেন। সেখানে বসে তিনি কাফির মুশরিকদের
থেকে প্রাপ্ত গনীমতের মাল হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের
মধ্যে সমভাবে বন্টন করে দেন। সুবহানাল্লাহ! এরপর সেখান থেকে যাত্রা করে যখন
রাওয়াহা নামক স্থানে পৌঁছেন তখন পবিত্র মদীনা শরীফ উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অগ্রসর হয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং উনার সাথে সম্মানিত বদরী ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে মুবারকবাদ জানান। এবং উনারা বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং উনার যারা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুম উনাদেরকে কামিয়াবী দান করেছেন। সুবহানাল্লাহ! তখন হযরত সালামা ইবনে সালামা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, মহান
আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমরাতো কতিপয় টাকওয়ালা বৃদ্ধের সাথে জিহাদ করেছি- যারা
ছিলো বাঁধা উটের মত, আমরা তাদেরকে কতল করে দিয়েছি মাত্র।
একথা শুনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি তাবাস্সুমি শা’ন মুবারক প্রকাশ করে ইরশাদ মুবারক করলেন, হে ভাতিজা! এই সমস্ত কাফির মুশরিক তারাইতো একসময় সমাজের নেতা ছিলো। হযরত
ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এই কাফির
মুশরিকরাই তাদের গোত্রের মধ্যে সম্মান- মর্যাদা ও নেতা বলে দাবী করতো।
নাউযূবিল্লাহ!” (সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, মা’রিফাতুছ ছাহাবা, আর রাহীকুল মাখতুম, তারিখুল উমামে উয়াল মুলূক্ব)
প্রসিদ্ধ তারিখ ও
ইতিহাস গ্রন্থ সমূহে উল্লেখ রয়েছে,
حَتّى إذَا كَانَ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ بِالصّفْرَاءِ
قُتِلَ النّضْرُ بْنُ الْحَارِثِ قَتَلَهُ حضرت عَلِيّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ عليه السلام، كَمَا أَخْبَرَنِي بَعْضُ أَهْلِ الْعِلْمِ مِنْ أَهْلِ مَكّةَ . قَالَ حضرت ابْنُ إسْحَاقَ رحمة الله تعالى عنه، ثُمّ خَرَجَ حَتّى إذَا كَانَ بِعِرْقِ الظّبْيَةِ قُتِلَ عُقْبَةُ بْنُ أَبِي مُعَيْطٍ فَقَالَ عُقْبَةُ حِينَ أَمَرَ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ بِقَتْلِهِ
فَمَنْ لِلصّبِيّةِ يَا حضرت مُحَمّدُ صلى الله عليه و سلم؟ قَالَ النّارُ فَقَتَلَهُ حضرت عَاصِمُ بْنُ ثَابِتِ بْنِ أَبِي الْأَقْلَحِ الْأَنْصَارِيّ رضى الله تعالى عنه أَخُو بَنِي عَمْرِو بْنِ عَوْفٍ،
অর্থ: (হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি
তিনি বলেন,) “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন সাফরা নামক স্থানে পৌঁছেন, তখন কাট্টা কাফির নযর ইবনে হারিছকে হত্যা করা হয়। পবিত্র মক্কা শরীফের
কয়েকজন আলিম উনাদের ভাষ্য অনুযায়ী সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু
আলাইহিস সালাম তিনি তাকে কতল (বা হত্যা) করেন। এরপর সেখান থেকে অগ্রসর হয়ে ইরকুয
যাবিইয়া নামক স্থানে পৌঁছে উকবা ইবনে আবূ মুয়ীত্বকে হত্যা করা হয়। নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন উকবাকে হত্যা করার
নির্দেশ মুবারক দেন সে তখন উনাকে বললো, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া
হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার ছোট ছেলে মেয়েদের দেখার জন্য কে
রইল? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, ‘আগুন’। অতপর
বণী আমর ইবনে আওফ গোত্রের হযরত আছিম ইবনে ছাবিত ইবনে আবূল আফলাহ আনছারী
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উকবাকে কতল করেন।” (সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া,
আর রওদ্বুল উনুফ)
প্রসিদ্ধ তারিখ ও
ইতিহাস গ্রন্থ সমূহে উল্লেখ রয়েছে,
وَلَمَّا أقْبَلَ إلَيْهِ حَضْرَتْ عَاصِمٌ بْنِ ثَابِت رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ. قَالَ: يَا مَعْشَرَ قُرَيْشِ عَلَّامَ أقْتُلُ مِنْ بَيْنِ مِنْ هَهُنَا ؟ قَالَ عَلَى عَدَاوَتِكَ
اللهَ وَرَسُوْلَهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ.
عن حضرت الشعبي رحمة الله عليه قال لما أمر النبي صلى الله عليه وسلم بقتل عقبة قال: أتقتلني يا حضرت محمد صلى الله عليه و سلم من بين قريش ؟ قال: " نعم ! أتدرون ما صنع هذا بي ؟ جاء وأنا ساجد خلف المقام فوضع رجله على عنقي وغمزها فما رفعها حتى ظننت أن عيني ستندران، وجاء مرة أخرى بسلا شاة فألقاه على رأسي وأنا ساجد فجاءت حضرت فاطمة عليها السلام فغسلته عن رأسي"
كان هذان الرجلان من شر عباد الله وأكثرهم كفرا وعنادا وبغيا وحسدا وهجاء للاسلام وأهله لعنهما الله وقد فعل.
অর্থ: (বর্ণনাকরীগণ আরো বলেছেন,) হযরত
আছিম ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ মুবারকে উকবাকে হত্যা করার
জন্য অগ্রসর হলেন, তখন কাট্টা কাফির উকবা বলেছিল, হে সম্মানিত কুরাইশগণ! এখানে যতগুলো লোক আছে তাদের মধ্যে আমাকে কেন হত্যা
করা হচ্ছে? হযরত আছিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন,
মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে শত্রুতা করার কারণে। হযরত শা’বী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন উকবাকে হত্যা করার নির্দেশ মুবারক
দেন, তখন সে বলেছিল ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি একজন কুরাইশ হওয়া সত্বেও আমাকে হত্যা করা
হচ্ছে? নাউযূবিল্লাহ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হ্যাঁ।
এরপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুম উনাদের লক্ষ্য করে বললেন, আপনারা কি জানেন এ লোক আমার
সাথে কি আচরণ করেছে? এক দিনের ঘটনা, আমি
সম্মানিত মাক্বামে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার পাশে ছলাত আদায়ে সিজদারত ছিলাম। এ
সময় সে আমার ঘাড় মুবারকে পা রেখে সজোরে চাপ দিতে থাকে। নাউযূবিল্লাহ! অব্যাহত চাপে
মনে হচ্ছিল এখনই আমার চক্ষু মুবারক দু’টি ফেটে বেরিয়ে যাবে। আর একদিন আমি সিজদারত
অবস্থায় ছিলাম সে ছাগলের নাড়িভূঁড়ি এনে আমার মাথা মুবারকের উপর রেখে দেয়।
নাউযূবিল্লাহ! পরে আমার মেয়ে সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুর রবীয়া হযরত যাহরা আলাইহাস
সালাম তিনি এসে সেগুলো ফেলে দিয়ে আমার মাথা মুবারক পরিস্কার ও ধুয়ে দেন।
সুবহানাল্লাহ!
বস্তুত, এই দুই ব্যক্তি
ছিলো অত্যন্ত জঘন্য প্রকৃতির। অন্যদের তুলনায় কুফরী কাজে হিংসা-বিদ্বেষ, শত্রুতা, বাড়াবাড়ি, দ্বীন
ইসলাম ও মুসলামান উনাদের কুৎসা রচনায় সবচাইতে অগ্রগামী। নাউযূবিল্লাহ! এই নিকৃষ্ট
আমলের জন্য তাদের উপর মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে লা’নত। নাউযূবিল্লাহ!
(সুনানুছ ছুগরা লিল বাইহাক্বী, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
প্রসিদ্ধ তারিখ ও
ইতিহাস গ্রন্থ সমূহে উল্লেখ রয়েছে,
ثُمّ مَضَى رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ حَتّى قَدِمَ الْمَدِينَةَ
قَبْلَ الْأُسَارَى بِيَوْمِ.
قَالَ حَضْرَتْ ابْنُ إسْحَاقَ رَحْمَةُ اللّهُ عَلَيْهِ،
وَحَدّثَنِي حَضْرَتْ نُبَيْهُ بْنُ وَهْبٍ رَضى الله تعالى عنه أَخُو بَنِي عَبْدِ الدّارِ . أَنّ رَسُولَ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ حِينَ أَقْبَلَ بِالْأُسَارَى فَرّقَهُمْ بَيْنَ أَصْحَابِهِ وَقَالَ اسْتَوْصُوا بِالْأُسَارَى خَيْرًا قَالَ وَكَانَ أَبُو عَزِيزِ بْنُ عُمَيْرِ بْنِ هَاشِمٍ ، أَخُو حضرت مُصْعَبِ بْنِ عُمَيْرٍ رضى الله تعالى عنه ... فِي الْأُسَارَى . قَالَ أَبُو عَزِيزٍ مَرّ بِي أَخِي حضرت مُصْعَبُ بْنُ عُمَيْرٍ رضى الله تعالى عنه وَرَجُلٌ مِنْ الْأَنْصَارِ يَأْسِرُنِي ، فَقَالَ شُدّ يَدَك بِهِ فَإِنّ أُمّهُ ذَاتُ مَتَاعٍ لَعَلّهَا تَفْدِيهِ مِنْك ، قَالَ وَكُنْت فِي رَهْطٍ مِنْ الْأَنْصَارِ حِينَ أَقْبَلُوا بِي مِنْ بَدْرٍ ، فَكَانُوا إذَا قَدّمُوا غَدَاءَهُمْ وَعَشَاءَهُمْ خَصّونِي بِالْخُبْزِ وَأَكَلُوا التّمْرَ لِوَصِيّةِ رَسُولِ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ إيّاهُمْ بِنَا ، مَا تَقَعُ فِي يَدِ رَجُلٍ مِنْهُمْ كِسْرَةُ خُبْزٍ إلّا نَفَحَنِي بِهَا . قَالَ فَأَسْتَحْيِي فَأَرُدّهَا عَلَى أَحَدِهِمْ فَيَرُدّهَا عَلَى مَا يَمَسّهَا.
অর্থ: (হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি
তিনি বলেন,) “এরপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছফর মুবারক শুরু করেন এবং যুদ্ধবন্দীদের
পৌঁছার একদিন আগেই তিনি পবিত্র মদীনা শরীফে সেখানে পৌঁছেন।
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি আরো বলেন, বণী আব্দুদ দার গোত্রের হযরত নাবীইয়াহ
ইবনে ওয়াহহাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমাকে বলেছেন, যে,
যুদ্ধবন্দীদেরা পবিত্র মদীনা শরীফে পৌঁছে গেলে নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বন্দীদেরকে হযরত
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মাঝে বন্টন করে দেন এবং বলে দেন
তাদের সাথে আপনারা উত্তম আচরণ করবেন। বর্ণনাকারী বলেন, হযরত
মুসআব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সহোদর ভাই আবূ আযীয ইবনে উমাইর
ইবনে হাশিম বন্দীদের মধ্যে ছিল। আবূ আযীয বলে, আমার ভাই হযরত
মুসআব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময়
একজন হযরত আনসার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমাকে বন্দী করে
রেখেছিলেন। তখন হযরত মুসয়াব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উক্ত হযরত ছাহাবী
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বললেন, তাকে শক্ত করে বেঁধে
আপনার কাছে রেখে দিন। তার মা একজন সম্পদশালী মহিলা। নিশ্চয়ই মুক্তিপণ দিয়ে আপনার
কাছ থেকে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাবে। আবূ আযীয আরো বলে, সম্মানিত
বদর জিহাদ থেকে প্রত্যাবর্তন কালে আমি একদল হযরত আনসার ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সাথে বন্দী অবস্থায় ছিলাম। আমাদের সাথে উত্তম
ব্যবহার করার জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার নির্দেশ মুবারক থাকায় উনারা সকাল-বিকাল আহার করার সময় আমাকে রুটি
দিতেন এবং উনারা নিজেরা খেজুর খেতেন। সুবহানাল্লাহ! উনাদের মধ্যে যার কাছে রুটি
থাকতো তা আমাকে দিয়ে দিত। এতে আমি লজ্জিত হয়ে উনাদেরকে রুটি ফিরিয়ে দিতাম। কিন্তু
উনারা তা স্পর্শ না করেই আমাকে পুনরায় দিয়ে দিতেন।
উল্লেখ্য যে, এ
সময় পবিত্র মদীনা শরীফে খেজুর ছিলো সাধারন খাবার এবং রুটি ছিলো মূল্যবান খাদ্য।
অথচ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সেই মূল্যবান খাদ্য রুটি
বন্দীদেরকে খেতে দিতেন। আর নিজেরা খেজুর খেতেন। সুবহানাল্লাহ!
قَالَ حضرت ابْنُ هِشَامٍ رحمة الله عليه، وَكَانَ أَبُو عَزِيزٍ صَاحِبَ لِوَاءِ الْمُشْرِكِينَ
بِبَدْر ِ بَعْدَ النّضْرِ بْنِ الْحَارِثِ فَلَمّا قَالَ أَخُوهُ مُصْعَبُ بْنُ عُمَيْرٍ لِأَبِي الْيَسَرِ رضى الله تعالى عنه وَهُوَ الّذِي أَسَرَهُ مَا قَالَ قَالَ لَهُ أَبُو عَزِيزٍ يَا أَخِي ، هَذِهِ وَصَاتُك بِي ، فَقَالَ لَهُ حضرت مُصْعَبٌ رضى الله تعالى عنه إنّهُ أَخِي دُونَك . فَسَأَلْت أُمّهُ عَنْ أَغْلَى مَا فُدِيَ بِهِ قُرَشِيّ ، فَقِيلَ لَهَا، أَرْبَعَةُ آلَافِ دِرْهَمٍ فَبِعْت بِأَرْبَعَةِ آلَافِ دِرْهَمٍ فَفَدَتْهُ بِهَا-
অর্থ: হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি
বলেন, এই আবূ আযীয ছিল নযর ইবনে হারিছের পরে মুশরিকদের পতাকাবাহী
সেনাপ্রধান। হযরত মুছয়াব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যখন তার ভাই
আবূ আযীযকে বন্দীকারী ছাহাবী হযরত আবূ ইয়াসার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে
শক্ত করে বাঁধার জন্যে বলেছিলেন তখন আবূ আযীয ইবনে উমাইর বলেছিল, ভাই! আমার সাথে এরূপ করার জন্যে কি আপনি আদিষ্ট? হযরত
মুসয়াব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আপনি আমার ভাই
নন বরং তিনিই আমার ভাই। যখন আবূ আযীযের মার কাছে খবর পৌঁছল যে তার ছেলে সম্মানিত
বদর জিহাদে বন্দী হয়েছে তখন সে জিজ্ঞেস করল, সর্বোচ্চ কত
মুক্তিপণ নিয়ে কুরাইশরা বন্দীদের ছাড়া হচ্ছে? বলা হলো,
চার হাজার দিরহামের বিনিময়। সে মতে তার মা চার হাজার দিরহাম পাঠিয়ে
দিয়ে তাকে মুক্ত করে নিল। (রওদ্বুল উনুফ, সীরাতুন নবী
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম, উয়ূনুল আছার ফি
ফুনূনিল মাগাযী, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি
সম্মানিত বদর জিহাদে বন্দী ও মুক্তিপণ আদায় :
সম্মানিত ঐতিহাসিক বদর জিহাদ মুসলমান ও কাফিরদের
মধ্যে ছিলো সর্বপ্রথম সম্মুখ যুদ্ধ। এই সম্মানিত জিহাদ ছিলো হক্ব নাহক্বের মধ্যে
পার্থক্যকারী। সুবহানাল্লাহ! সম্মানিত বদর জিহাদে মুসলমান তথা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সংখ্যা ছিলো ৩১৩ জন। বিপরীতে পবিত্র মক্কার
কাফিরদের সংখ্যা ছিলো ১,০০০ জন। পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে আসা
সৈন্য বাহিনীদের মধ্যে সম্মানিত বনী হাশিম গোত্র ও কুরাইশদের অনেকেই ছিলেন যারা
পবিত্র মক্কা শরীফে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারকের আঞ্জাম দিয়েছিলেন। উনাদের মধ্যে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি
ছিলেন অন্যতম। সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার নাম
মুবারক, হযরত আবুল আছ আলাইহিস সালাম। তিনি সাইয়্যিদাতু
নিসায়ী আহলিল জান্নাহ, সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুল উলা আলাইহাস
সালাম উনার সম্মানিত আহাল তথা যাওজুম মুকাররাম। সুবহনাল্লাহ!
স্মরণীয় যে, সাইয়্যিদুনা
হযরত যূন নূর আলাইহিস সালাম তিনি উনার অনিচ্ছা সত্ত্বেও কুরাইশদের পিড়াপিড়ির কারণে
সম্মানিত বদর জিহাদে উপস্থিত হয়েছিলেন। তিনি কস্মিনকালেও নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে বা সম্মানিত
মুসলমান উনাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার জন্য সেখানে উপস্থিত হননি। কারণ তিনি
ইতিপূর্বেই চুপেচুপে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু তখনও
আনুষ্ঠানিকভাবে উনার দ্বীন ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি প্রকাশ করেননি। যা হোক, সম্মানিত বদর জিহাদে বন্দিদের মধ্যে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস
সালাম তিনিও ছিলেন। বন্দিদেরকে যখন সম্মানিত মদীনা শরীফে নিয়ে যাওয়া হলো তখন নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নির্দেশ মুবারক দিলেন,
اِسْتَوْصُوْا
بِالْاُسَارٰى خَيْرًا.
অর্থ: “আপনারা
বন্দিদের সাথে ভালো ব্যবহার করুন।” সুবহানাল্লাহ!
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম
উনারাতো নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদেশ-নির্দেশ মুবারক যথাযথভাবে পালন করতেন। তাই দেখা গেলো,
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নিজেরা খেজুর
খেতেন আর বন্দিদেরকে রুটি খেতে দিতেন। সম্মানিত মদীনা শরীফে অগণিত খেজুর গাছ ছিল,
যার কারণে খেজুরের মূল্য ছিল সস্তা। অপর দিকে গম ও যবের মতো খাদ্য
শস্য অধিক মূল্যে খরিদ করতে হতো। তা সত্ত্বেও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নির্দেশ মুবারক পালনার্থে হযরত
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নিজে কষ্ট করে বন্দীদেরকে রুটি
খেতে দিয়ে অপরের জন্য ত্যাগের উদাহরণ প্রদর্শন করেন। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র মক্কা শরীফে
কুরাইশরা পরিবারের সদস্যদের মুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ অর্থ সম্পদ দ্রুত
সংগ্রহ করলো। সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি সম্পদশালী ছিলেন। তাই
তিনি উনার সম্মানিত যাওযাতুম মুকাররামাহ উম্মু আবীহা, খইরু
বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল
ঊলা আলাইহাস সালাম উনার নিকট মুক্তিপণের ব্যবস্থা করার জন্য সংবাদ মুবারক পাঠালেন।
তখন উম্মু আবীহা, খইরু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি সম্মানিত নিসবতে
আযীম শরীফ উনার সময় উনার মাতা উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা
আলাইহাস সালাম উনার থেকে হাদিয়া মুবারক স¦রূপ যে সমস্ত অলংকার মুবারকসমূহ
পেয়েছিলেন সেখান থেকে একখানা সম্মানিত হার মুবারক মুক্তিপণ হিসেবে দেয়ার সিদ্ধান্ত
মুবারক গ্রহণ করেন। মক্কাবাসীরা মুক্তিপণের অর্থ প্রদানের জন্য যখন সম্মানিত মদীনা
শরীফ গমন করলো। তখন তাদের মাঝে উম্মু আবীহা, খইরু বানাতি
রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা
আলাইহাস সালাম উনার দূত আমর ইবনে রবী’ও ছিলেন। যিনি সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর
আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত আপন ভাই।
উল্লেখ্য যে, যুদ্ধবন্দিদের
হত্যা করা সে সময়ের রীতি ছিলো। এই জন্য সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস
সালাম তিনি সম্মানিত বদর জিহাদ মুবারক উনার যুদ্ধবন্দিদের হত্যা করার প্রস্তাবনা
দিয়েছিলেন। কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি সম্মানিত ওহী মুবারক অনুযায়ী বন্দিদের মুক্তির বিনিময়ে তাদের নিকট
থেকে মুক্তিপণ গ্রহণের সিদ্ধান্ত মুবারক গ্রহণ করেন। এক হাজার থেকে তিন বা চার
হাজার দিরহাম প্রত্যেক বন্দি থেকে মুক্তিপণ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছিলো। যখন
মক্কাবাসী ও কাফির মুশকিরা অবগত হলো বন্দিদের মুক্তিপণের মাধ্যমে মুক্ত করে নেয়ার
সুযোগ রয়েছে তখন মক্কার কাফির মুশরিকরা অতিসত্বর সে সুযোগ গ্রহণ করলো।
এই সম্পর্কে
সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ اُمّ الْمُؤْمِنِيْنَ
الثالثة سَيِّدَتُنَا حَضْرَتْ عَائِشَةَ الصديقة عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ لَمَّا بَعَثَ اَهْلُ مَكَّةَ فِـىْ فِدَاءِ اَسْرَاهُمْ
بَعَثَتْ حَضْرَتْ زَيْنَبُ عَلَيْهَا السَّلَامُ فِـىْ فِدَاءِ اَبِـى الْعَاصِ عَلَيْهِ السَّلَامُ
بِـمَالٍ وَّبَعَثَتْ فِيْهِ بِقِلَادَةٍ لَّـهَا كَانَتْ عِنْدَ خَدِيْـجَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ اَدْخَلَـتْهَا بِـهَا عَلـٰى حَضْرَتْ اَبِـى الْعَاصِ عَلَيْهِ السَّلَامُ. قَالَتْ فَلَمَّا رَاٰهَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَقَّ لَـهَا رِقَّةً شَدِيْدَةً وَّقَالَ اِنْ رَاَيْتُمْ اَنْ تُطْلِقُوْا لَـهَا اَسِيْرَهَا وَتَرُدُّوْا عَلَيْهَا الَّذِىْ لَـهَا. فَقَالُوْا نَعَمْ. وَكَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَخَذَ عَلَيْهِ اَنْ يُّـخَلِّىَ سَبِيْلَ حَضْرَتْ زَيْنَبَ عَلَيْهَا السَّلَامُ اِلَيْهِ وَبَعَثَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زَيْدَ بْنَ حَارِثَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ وَرَجُلًا مِّنَ الْاَنْصَارِ فَقَالَ كُوْنَا بِبَطْنِ يَأْجِجَ حَتّٰى تَـمُرَّ بِكُمَا حَضْرَتْ زَيْنَبُ عَلَيْهَا السَّلَامُ فَتَصْحَبَاهَا حَتّٰى تَاْتِيَا بِـهَا.
অর্থ: “উম্মুল
মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন মক্কাবাসীরা মুক্তিপণের অর্থ প্রদানের
জন্য সম্মানিত মদীনা শরীফ গমন করলো। তখন উম্মু আবীহা, খইরু
বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল
ঊলা আলাইহাস সালাম তিনিও সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার মুক্তিপণ
পাঠালেন আর মুক্তিপণ হিসেবে উম্মু আবীহা, খইরু বানাতি
রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা
আলাইহাস সালাম তিনি উনার দূতকে কিছু মালসহ সেই সম্মানিত হার মুবারকখানাও দিয়ে
পাঠালেন, যেই সম্মানিত হার মুবারকখানা ছিলো উম্মুল মু’মিনীন
আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার। সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর
আলাইহিস সালাম উনার সাথে উম্মু আবীহা, খইরু বানাতি
রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা
আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ হওয়ার সময় উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা
সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি উক্ত সম্মানিত হার মুবারকখানা উম্মু
আবীহা, খইরু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনাকে হাদিয়া মুবারক
করেছিলেন। আমর ইবনে রবী’ সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূর আলাইহিস সালাম উনার মুক্তিপণের
জন্য উক্ত হার মুবারক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার নিকট পেশ করলেন। তখন তিনি উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত
কুবরা আলাইহাস সালাম উনার সেই সম্মানিত স্মৃতিবাহী হার মুবারকখানা দেখে অত্যন্ত
ভারাক্রান্ত হলেন এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে
বললেন, যদি আপনারা মনে না করেন তাহলে উম্মু আবীহা, খাইরু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার বন্দি তথা
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনাকে মুক্ত করে দিন এবং উনার সম্মানিত
হার মুবারকখানাও ফেরত দিন।’ তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম
উনারা বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া
হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি যা ইরশাদ মুবারক করেছেন,
তাই হবে। অর্থাৎ উনারা সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম
উনাকেও মুক্ত করে দিলেন এবং সেই সম্মানিত হার মুবারকখানাও ফেরত দিলেন।
সুবহানাল্লাহ!
অবশ্য নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা
হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনাকে সম্মানিত শর্ত মুবারক দিয়েছিলেন যে, তিনি
সম্মানিত মক্কা শরীফে প্রত্যাবর্তন করার পর উম্মু আবীহা, খইরু
বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল
ঊলা আলাইহাস সালাম উনাকে সম্মানিত মদীনা শরীফে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করবেন। আর
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত
যায়িদ ইবনে হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে এবং একজন হযরত আনছার ছাহাবী
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে অর্থাৎ উনাদেরকে পাঠালেন এবং উনাদেরকে বলে দিলেন,
আপনারা দু’জন সম্মানিত মক্কা শরীফ উনার অনতিদূরে ‘বাত্বনে ইয়া’জিজে’
অবস্থান করবেন। যখন উম্মু আবীহা, খইরু বানাতি রসূলিল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম
তিনি সেখানে উপস্থিত হবেন, তখন সেখান থেকে আপনারা উনার
সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিয়ে উনাকে সম্মানিত মদীনা শরীফ নিয়ে
আসবেন।” সুবহানাল্লাহ! (আবূ দাঊদ শরীফ, মুসনাদে আহমদ শরীফ,
আস সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, আল মু’জামুুল
কাবীর, হাকিম, বাইহাক্বী শরীফ, মিশকাত শরীফ ইত্যাদি)
সাইয়্যিদুনা হযরত
যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত মদীনা শরীফ থেকে সম্মানিত মক্কা শরীফ-এ এসে
উম্মু আবীহা, খইরু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত
মুবারক-এ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি উম্মু আবীহা, খইরু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত
হিজরত মুবারক সম্পর্কে যা বলেছিলেন সেই সংবাদ মুবারক পৌঁছে দেন। তখন উম্মু আবীহা,
খইরু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি সম্মানিত মক্কা শরীফ থেকে
সম্মানিত মদীনা শরীফ হিজরত মুবারক করার জন্য প্রস্তুতি মুবারক নিতে থাকেন। হযরত
হিন্দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা যিনি হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
উনার আহলিয়াহ, তিনি উনাকে সম্মানিত হিজরত মুবারক করার বিষয়ে
সহযোগীতা করেছিলেন, সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক
দিয়েছিলেন। সম্মানিত বদর জিহাদ উনার পর মাত্র একমাস অতিবাহিত হয়েছে। মক্কাবাসীরা
যুদ্ধে তাদের অতিরিক্ত ক্ষয়ক্ষতির কারণে তখনও দুঃখ-ভারাক্রান্ত। তাদের
ক্ববিলাগুলো (গোত্রসমূহ) মৃতদের জন্য শোক
প্রকাশ করছিল এবং গোত্রের প্রতি অনুগত মৃতদের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ডাক দিয়ে
যাচ্ছিলো। এ অবস্থায় সম্মানিত মদীনা শরীফ উনার কোনো মুসলমান উনাদের পক্ষে সম্মানিত
মক্কা শরীফ প্রবেশ করা যেমন অসম্ভব ছিলো তেমনিভাবে একজন মুসলমান উনার জন্য অক্ষত
অবস্থায় সম্মানিত মক্কা শরীফ ত্যাগ করাও কঠিন ছিলো। এ কারণে নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত যায়িদ ইবনে
হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে এবং একজন হযরত আনছার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনাদেরকে উম্মু আবীহা, খইরু বানাতি রসূলিল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম
উনার জন্য ‘বাত্বনে ইয়া’জিজে’ অপেক্ষা করার সম্মানিত নির্দেশ মুবারক দিয়েছিলেন।
স্থানটি ছিলো সম্মানিত মক্কা শরীফ থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে। উম্মু আবীহা,
খইরু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা
হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি যখন সম্মানিত হিজরত মুবারক উনার প্রস্তুতি
মুবারক সম্পন্ন করলেন তখন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি উনার
সম্মানিত ভাই হযরত কিনানাহ ইবনে রবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে উনার সাথে
‘বত্বনে ইয়া’জিজে’ নিয়ে যেতে বললেন, যেখানে হযরত যায়িদ ইবনে
হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার জন্য অপেক্ষা করছেন।
0 Comments:
Post a Comment