বদর কুয়ায় মক্কার কাফির মুশরিক সরদারদের লাশ নিক্ষেপ:
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক
হয়েছে,
عن حضرت أنس بن مالك رضى الله تعالى عنه قال سمع أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم رسول الله صلى الله عليه وسلم من جوف الليل وهو يقول يأهل القليب يا عتبة بن ربيعة ويا شيبة بن ربيعة ويا أمية بن خلف ويا أبا جهل بن هشام فعدد من كان منهم في القليب هل وجدتم ما وعد ربكم حقا فإني قد وجدت ما وعدني ربي حقا فقال المسلمون يا رسول الله صلى الله عليه و سلم أتنادي قوما قد جيفوا قال ماأنتم بأسمع لما اقول منهم ولكنهم لا يستطيعون أن يجيبوني.
অর্থ: “হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা মধ্যরাতে এরূপ শুনতে পান যে (স্বয়ং আখীরি নবী,
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছিলেন,) হে কূপবাসীরা! হে উতবা ইবনে রবীয়া! হে শায়বা ইবনে রবীয়া! হে উমাইয়া ইবনে
খালফ! হে আবূ জাহিল ইবনে হিশাম! এভাবে তিনি কূপের মধ্যকার সকলের নাম উল্লেখ করে
বললেন, তোমাদের রব তোমাদের কাছে যে ওয়াদা করেছিলেন তা কি
সত্য পেয়েছ? নিশ্চয়ই আমার রব মহান আল্লাহ পাক আমার সাথে যে
ওয়াদা মুবারক দিয়েছেন তা আমি পরিপূর্ণ ভাবে পেয়েছি। সুবহানাল্লাহ! তখন হযরত
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি
এমন এক সম্প্রদায়ের সাথে কথা বলছেন যারা পঁচে গলে দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে গেছে। নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক
করলেন, আমি যা বলছি তা আপনারা তাদের থেকে বেশি শুনছেন না।
তবে তারা আমার কথার জবাব দিতে সক্ষম নয়”। (ফিকহুস সীরাহ, সীরাতুন
নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম, আল বিদায়া
ওয়ান নিহায়া)
প্রসিদ্ধ তারিখ ও সীরাত গ্রন্থ সমূহে উল্লেখ
রয়েছে, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি বদর জিহাদে নিহিত কাফির মুশরিকদেরকে লক্ষ করে বলেছিলেন, হে কূয়ার অধিবাসীরা! তোমারা তোমাদের নবী যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
যিনি ইমামুল মুরসালীন, যিনি খতামুল নাবীয়্যিন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে আত্মীয় হিসাবেও জঘন্যতম বেয়াদবী মূলক আচার ব্যবহার করেছিলে। তোমরা
আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলে কিন্তু হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুম উনারা আমার উপর ঈমান এনেছিলেন। তোমরা আমার সম্মানিত বিলাদতী শা’ন মুবারক
গ্রহণ করার স্থানে ফেতনা সৃষ্টি করেছিলে যার কারণে আমি সম্মানিত মদীনা শরীফ হিজরত
করেছি আর পবিত্র মদীনা শরীফ উনার হযরত ছাহাবয়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম
উনারা আমার উপর ঈমান এনে খিদমত মুবারকের আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন। তোমরা আমার বিরুদ্ধে
যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছ কিন্তু হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা
আমার সাথে জিহাদ করে তোমাদেরকে পরাজিত ও লাঞ্চিত করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (সীরাতুন
নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
পবিত্র হাদীছ শরীফ
উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن حضرت عائشة عليها السلام قالت لما امر رسول الله صلى الله عليه وسلم بالقتلى أن يطرحوا في القليب طرحوا فيه إلا ما كان من امية بن خلف فإنه انتفخ في درعه فملأها فذهبوا ليحركوه فتزابل لحمه فأقروه وألقوا عليه ما غيبه من التراب واللحجارة
فلما ألقاهم في القليب وقف عليهم رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال يا أهل القليب هل وجدتم ما وعدكم ربكم حقا فإني قد وجدت ما وعدني ربي حقا قالت فقال له اصحابه يا رسول الله اتكلم قوما موتى فقال لهم لقد علموا أن ما وعدهم ربهم حقا
অর্থ: “সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ
ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ মুবারক অনুযায়ী নিহত কাফির মুশরিকদের লাশ বদর কূপে
নিক্ষেপ করা হয়েছিল। কিন্তু উমাইয়া ইবনে খালফের লাশ কূপে নিক্ষেপ করা হয়নি। কেননা
তার লাশ তার বর্মের মধ্যে ফুলে ফেঁপে আটকে গিয়েছিলো। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা তার লাশ সরাবার জন্য চেষ্টা করলে দেখা গেলো তার
গোশত ছিন্নভিন্ন হয়ে যেতে লাগলো। এ অবস্থা দেখে উনারা তাকে যেমন ছিলো তেমনভাবে
রেখে মাটি ও পাথর চাপা দিলেন। কূপের মধ্যে
লাশগুলো নিক্ষেপ করার পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি দাঁড়িয়ে তাদের লক্ষ করে ইরশাদ মুবারক করলেন, হে কূপের অধিবাসীরা! তোমাদের রব তোমাদের কাছে যে ওয়াদা করেছিলেন তা কি
সত্য পেয়েছ? নিশ্চয়ই আমার রব মহান আল্লাহ পাক আমার সাথে যে
ওয়াদা মুবারক দিয়েছেন তা আমি পরিপূর্ণ ভাবে পেয়েছি। রাবী বলেন, তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন ইয়া
রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি কি এমন
সম্প্রদায়ের সাথে কথা বলছেন যারা মরে গেছে? তখন নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক
করলেন, তারা (কূপবাসী) এখন ভালভাবে জেনেছে যে, তাদের রব মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের সাথে যে ওয়াদা করেছিলেন তা সত্য।”
(মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল, সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম, সীরাতুল হালাবিয়্যাহ, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলূক্ব)
প্রসিদ্ধ তারিখ ও
সীরত গ্রন্থ সমূহে উল্লেখ রয়েছে,
لما أمر رسول الله صلى الله عليه وسلم أن يلقوا في القليب أخذ عتبة بن ربيعة فسحب الى القليب فنظر رسول الله صلى الله عليه وسلم فيما بلغني في وجه حضرت أبي حذيفة بن عتبة رضى الله تعالى عنه فإذا هو كئيب قد تغر لونه فقال يا أبا حذيفة لعلك قد دخلك من شأن أبيك شيء أو كما قال صلى الله عليه وسلم فقال لا والله يا رسول الله ما شككت في أبي ولا في مصرعه ولكني كنت أعرف من ابي رأيا وحلما وفضلا فكنت أرجوا أن يهديه ذلك الى الإسلام فلما رأيت ما اصابه وذكرت ما مات عليه من الكفر بعد الذي كنت ارجو له أحزنني ذلك فدعا له رسول الله صلى الله عليه وسلم بخير وقال له خيرا الفتية
অর্থ: “(হযরত ইবনে
ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন।) সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খতামুন নবীয়্যিন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি যখন মুশরিকদের লাশ কূপের মধ্যে নিক্ষেপ করার নির্দেশ দেন তখন উতবা
ইবনে রবীয়ার লাশ টেনে কূপের কাছে আনা হলো। এ সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তার ছেলে হযরত আবূ হুযাইফা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু (যিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার ছাহাবী হয়ে সম্মানিত বদর
জিহাদে অংশ গ্রহণ করেছিলেন) উনার চেহারা মুবারকের দিকে তাকিয়ে দেখলেন যে, তিনি মর্মাহত এবং উনার চেহারার রং পরিবর্তন হয়ে গেছে। তখন নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ
মুবারক করলেন, হে হযরত আবূ হুযাইফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু! আপনার পিতার এ অবস্থা দেখে আপনি কি অন্তরে ব্যথা পাচ্ছেন? তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি আমার পিতার
কুফরী ও হত্যার ব্যাপারে কখনো সন্দেহ করিনি। তবে আমি আমার পিতাকে যথেষ্ট জ্ঞানী,
বুদ্ধিমান, সহিঞ্চু এবং উন্নত গুণের অধিকারী
বলে জানতাম। সে জন্য আমি আশা করেছিলাম যে তার সেসব গুণ দ্বীন ইসলাম গ্রহণে পথ
দেখাবে। কিন্তু আমার পিতা শেষ পর্যন্ত কুফরী নিয়েই মারা গেলো। এখন আমার মনের আশা
পূর্ণ না হওয়ায় আমি মর্মাহত হয়েছি। এ কথা শুনে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত হযরত আবূ
হুযাইফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জন্য বরকত তথা কল্যাণের দোয়া মুবারক করলেন
এবং উনার প্রশংসা মুবারক করলেন।” সুবহানাল্লাহ! (সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম)
প্রসিদ্ধ তারিখ ও
সীরাত গ্রন্থ সমূহে আরো উল্লেখ রয়েছে, “নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ
অবস্থান মুবারক করার সময় কতিপয় যুবক তারা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করে। কিন্তু
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন
পবিত্র মদীনা শরীফ হিজরত মুবারক করলেন তখন ঐ সমস্ত যুবকদেরকে তাদের বাপ-দাদা ও
বংশের লোকেরা বন্দী করে রাখে এবং দ্বীন ইসলাম পরিত্যাগের জন্য তাদের উপর নির্যাতন
চালায়। ফলে তারা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ত্যাগ করে। নাউযূবিল্লাহ! পরে তারা তাদের
গোত্রের লোকদের সাথে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এবং তারা মারা যায়।” তাদের সম্পর্কে
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
إِنَّ الَّذِينَ
تَوَفَّاهُمُ الْمَلَائِكَةُ ظَالِمِي أَنفُسِهِمْ قَالُوا فِيمَ كُنتُمْ ۖ قَالُوا كُنَّا مُسْتَضْعَفِينَ فِي الْأَرْضِ ۚ قَالُوا أَلَمْ تَكُنْ أَرْضُ اللَّـهِ وَاسِعَةً فَتُهَاجِرُوا فِيهَا ۚ فَأُولَـٰئِكَ مَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ ۖ وَسَاءَتْ مَصِيرًا-
অর্থ: “নিশ্চয়ই যারা নিজেদের উপর যুলুম করে, তাদের
প্রাণ গ্রহণের সময় হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা বললেন, তোমরা কি অবস্থায় ছিলে? তারা বলে দুনিয়ায় আমরা অসহায়
ছিলাম। তখন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা বলেন, দুনিয়া
কি এমন প্রশস্ত ছিল না, যেখানে তোমরা হিজরত করতে পারতে?
অবশ্যই তাদের আবাসস্থল জাহান্নাম আর তা খুবই মন্দ আবাস।” (পবিত্র
সূরা নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ- ৯৭)
উল্লেখ্য যে, এসব
যুবকের পরিচয় হচ্ছে, বনূ আসাদ ইবনে আব্দুল উয্যা ইবনে কুসাই
এর হারিস ইবনে যাময়া ইবনে আসওয়াদ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব ইবনে আসাদ, বনূ মাখযূম গোত্রের আবূ কায়স ইবনে ফাকিহ ইবনে মুগিরা ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে
উমর উবনে মাখযূম, আবূ কায়স ইবনে ওয়ালীদ ইবনে মুগীরা ইবনে
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর ইবনে মাখযূম, বনূ যুমাহ আলী ইবনে উমাইয়া
ইবনে খালফ ইবনে ওয়াহব হুযাফা ইবনে যুমা’ এবং বনূ সাহম আস ইবনে মুনাব্বিহ ইবনে
হাজ্জাজ ইবনে আমির ইবনে হুযাইফা ইবনে সা’দ ইবনে সাহম। (সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তারিখুল উমামে ওয়াল মলূক্ব)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক
হয়েছে,
عَنْ حضرت أَبِي طَلْحَةَ رضى الله تعالى عنه أَنَّ نَبِيَّ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَمَرَ يَوْمَ بَدْرٍ بِأَرْبَعَةٍ
وَعِشْرِينَ رَجُلاً مِنْ صَنَادِيدِ قُرَيْشٍ فَقُذِفُوا فِي طَوِيٍّ مِنْ أَطْوَاءِ بَدْرٍ خَبِيثٍ مُخْبِثٍ ، وَكَانَ إِذَا ظَهَرَ عَلَى قَوْمٍ أَقَامَ بِالْعَرْصَةِ ثَلاَثَ لَيَالٍ فَلَمَّا كَانَ بِبَدْرٍ الْيَوْمَ الثَّالِثَ أَمَرَ بِرَاحِلَتِهِ فَشُدَّ عَلَيْهَا رَحْلُهَا ثُمَّ مَشَى وَاتَّبَعَهُ أَصْحَابُهُ وَقَالُوا مَا نُرَى يَنْطَلِقُ إِلاَّ لِبَعْضِ حَاجَتِهِ حَتَّى قَامَ عَلَى شَفَةِ الرَّكِيِّ فَجَعَلَ يُنَادِيهِمْ بِأَسْمَائِهِمْ وَأَسْمَاءِ آبَائِهِمْ يَا فُلاَنُ بْنَ فُلاَنٍ وَيَا فُلاَنُ بْنَ فُلاَنٍ أَيَسُرُّكُمْ أَنَّكُمْ أَطَعْتُمُ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَإِنَّا قَدْ وَجَدْنَا مَا وَعَدَنَا رَبُّنَا حَقًّا فَهَلْ وَجَدْتُمْ مَا وَعَدَ رَبُّكُمْ حَقًّا قَالَ فَقَالَ حضرت عُمَرُ عليه السلام يَا رَسُولَ اللهِ مَا تُكَلِّمُ مِنْ أَجْسَادٍ لاَ أَرْوَاحَ لَهَا ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَالَّذِي نَفْسُ حضرت مُحَمَّدٍ صلى الله عليه و سلم بِيَدِهِ مَا أَنْتُمْ بِأَسْمَعَ لِمَا أَقُولُ مِنْهُمْ
অর্থ: “হযরত আবূ ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন সম্মানিত বদর জিহাদ উনার দিন নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ মুবারকে
চব্বিশজন কুরাইশ কাফির সরদারের লাশ বদর প্রান্তরের নোংরা আবর্জনাপূর্ণ কূপে
নিক্ষেপ করা হলো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার আদত মুবারক ছিলেন, যখন কোন সম্প্রদায়ের উপর
জয়লাভ করতেন তখন সেখানে তিনি তিন রাত্রি অবস্থান মুবারক করতেন। অনুরূপ ভাবে যখন
বদর প্রন্তরে অবস্থানের তৃতীয় দিন হলো তখন নুরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার
সাওয়ারী মুবারক প্রস্তুত করার আদেশ দিলেন, সাওয়ারীর জিন শক্ত
করে বাঁধা হলো। এরপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি অগ্রসর হলেন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাও
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুসরণ
করে চলতে লাগলেন। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বলেন,
আমরা মনে করলাম কোন প্রয়োজনে তিনি কোথাও যাচ্ছেন। অতপর নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঐ কূপের
কিনারে গিয়ে দাঁড়ালেন এবং কূপে নিক্ষিপ্ত ঐ নিহত কাফির মুশরিকদের নাম ও তাদের
পিতার নাম ধরে ডাকতে শুরু করলেন। হে অমুকের পুত্র অমুক, হে
অমুকের পুত্র অমুক! তোমরা কি এখন অনুভব করতে পারছ যে, মহান
আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুগত্য তোমাদের জন্য পরম খুশীর বিষয় ছিল? আমাদের রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে যে ওয়াদা দিয়েছেন আমরা তো তা
সত্য পেয়েছি। তোমাদের প্রতিপালক তোমাদেরকে যে ওয়াদা দিয়েছিলেন তোমরাও তা সত্য
পেয়েছ কি? বর্ণনাকারী বলেন, সাইয়্যিদুনা
হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি তিনি বললেন, ইয়া
রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আত্মাহীন
দেহগুলোর সঙ্গে কি কথা বলছেন? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন,
মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! যার কুদরতী হাত মুবারকে আমার প্রাণ
মুবারক রয়েছে আমি যা বলছি তা তাদের চেয়ে আপনারা অধিক শুনতে পাচ্ছেন না। (বুখারী
শরীফ: হাদীছ শরীফ নং- ৩৯৭৬, মুসনাদে আহমদ )
এ প্রসঙ্গে হযরত হাসান বিন ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু যিনি পবিত্র মদীনা শরীফ বিলাদতী শা’ন মুবারক প্রকাশ করেছিলেন। তিনি
ছিলেন সম্মানিত হযরত আনসার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের
অন্তর্ভূক্ত। তিনি উনার কবিতার মধ্যে বলেন,
قومي الذين هم آووا نبيهم * وصدقوه وأهل الارض كفار إلا خصائص أقوام هم سلف * للصالحين من الانصار أنصار مستبشرين بقسم الله قولهم * لما أتاهم كريم الاصل مختار أهلا وسهلا ففي أمن وفي سعة * نعم النبي ونعم القسم والجار وقاسموهم بها الاموال إذ قدموا * مهاجرين وقسم الجاهل النار-
অর্থ: “আমার ক্বওম যারা উনারা, হযরত
নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম
উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আঞ্জাম
দিয়েছিলেন এবং গোটা বিশ্ববাসী যখন কুফরী ও শিরকীর মধ্যে নিমজ্জিত ছিলো তখন নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হক্ব বা
সত্য বলে বিশ্বাস করে নিয়েছিলেন। উনারা ছিলেন উনাদের পূর্ব-পুরুষ উনাদের উত্তম
খুছূছিয়াত বা বৈশিষ্ট্যাবলীর সঠিক উত্তরসূরী। আর উনারা নেককার ও পরহেযগার হযরত
আনসার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অন্তর্ভূক্ত। মহান আল্লাহ
পাক উনার (এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার) বন্টন মুবারকে উনারা সন্তুষ্ট। বংশীয় মর্যাদা ও সবদিক দিয়ে
সর্বশ্রেষ্ট নবী ও রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন হযরত
আনসার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মাঝে তাশরিফ মুবারক গ্রহণ
করলেন, তখন উনারা সর্বোত্তম ভাবে আহলান-সাহলান ও মুবারকবাদ
জানিয়ে উনাকে বরণ করে নিয়েছিলেন। এবং উনারা বলেছিলেন, আপনি
আমাদের মাঝে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেছেন কাজেই আপনি এখন নিরাপদ এবং আমরা আপনার
সর্বপ্রকার খিদমত মুবারকের আঞ্জাম দিতে প্রস্তুত এবং স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে আমাদের
নিকট অবস্থান মুবারক গ্রহণ করুন। সুবহানাল্লাহ! আপনি সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রসূল তথা
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবীয়্যিন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আর আমরা আপনার
সর্বোত্তম প্রতিবেশী। সুবহানাল্লাহ! আমরা বড়ই বরকতময় ও সৌভাগ্যবান। হযরত আনসার
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য দায়িমী
অবস্থান মুবারক করার সর্বপ্রকার ব্যবস্থা করলেন এক সম্মানিত বাড়ি মুবারক তৈরী
করলেন। সুবহানাল্লাহ! হযরত মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম
উনারা যখন হিজরত মুবারক করে পবিত্র মদীনা শরীফ আগমন করলেন তখন হযরত আনসার ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নিজেদের ধন-সম্পদ ভাগ করে মুহাজির
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের দিলেন। সুবহানাল্লাহ! বিপরীতে
যারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
এবং উনার সম্মানিত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের
বিরোধীতা করে থাকে তাদের জন্য জাহান্নাম অবধারিত। (সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক
হয়েছে, “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, সম্মানিত বদর জিহাদ শেষ হলে নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত
মুবারকে প্রস্তাব পেশ করা হলো যে, এখন হযরত আবূ সূফিয়ান
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাফিলাকে ফিরানো যায় কি না? যেহেতু
তাদেরকে সাহায্য সহযোগীতা করার মতো আর কেউ সামনে নেই। তখন খতিমুল মুহাজিরীন
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম তিনি বন্দী অবস্থা থেকে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! দয়া করে
তাদেরকে আক্রমন থেকে বিরত থাকুন। (খতিমুল মুহাজিরীন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস
আলাইহিস সালাম তখনও তিনি আনুষ্ঠানিক ভাবে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ উনার বিষয়টি
তখনও প্রকাশ করেননি।) তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হে চাচাজি কেন বিরত
থাকার জন্য বলছেন? খতিমুল মুহাজিরীন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস
আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনিতো আপনাকে
দু’টি দলের মধ্যে একটির উপর বিজয়ী করে দেয়ার ওয়াদা মুবারক দিয়েছিলেন এবং সেই ওয়াদা
মুবারক তিনি পূর্ণ করেছেন।” সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক
তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
فَإِذَا لَقِيتُمُ
الَّذِينَ كَفَرُوا فَضَرْبَ الرِّقَابِ حَتَّىٰ إِذَا أَثْخَنتُمُوهُمْ فَشُدُّوا الْوَثَاقَ فَإِمَّا مَنًّا بَعْدُ وَإِمَّا فِدَاءً حَتَّىٰ تَضَعَ الْحَرْبُ أَوْزَارَهَا ۚ ذَٰلِكَ وَلَوْ يَشَاءُ اللَّـهُ لَانتَصَرَ مِنْهُمْ وَلَـٰكِن لِّيَبْلُوَ بَعْضَكُم بِبَعْضٍ
অর্থ: “অতএব যখন আপনারা কাফিরদের সাথে জিহাদে
মুকাবিলা করবেন, তখন
তাদের গর্দানে আঘাত করুন, পরিশেষে যখন আপনারা তাদেরকে
সম্পূর্ণরূপে পরাভূত করবেন, তখন তাদেরকে কষে বাঁধবেন এরপর হয়
অনুকম্প, নয় মুক্তিপণ। আপনারা জিহাদ চালিয়ে যাবেন যতক্ষণ না
তারা অস্ত্র নামিয়ে ফেলে। ইহাই বিধান। ইহাই
এ জন্যে যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি যদি চাইতেন তাহলে তাদেরকে শাস্তি দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি চান
আপনাদেরকে একজনের দ্বারা অপরকে পরীক্ষা করতে।”। (সূরা মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ- ৪)
মহান আল্লাহ পাক
তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন,
قَاتِلُوهُمْ
يُعَذِّبْهُمُ اللَّـهُ بِأَيْدِيكُمْ وَيُخْزِهِمْ وَيَنصُرْكُمْ عَلَيْهِمْ وَيَشْفِ صُدُورَ قَوْمٍ مُّؤْمِنِينَ - وَيُذْهِبْ غَيْظَ قُلُوبِهِمْ ۗ وَيَتُوبُ اللَّـهُ عَلَىٰ مَن يَشَاءُ
অর্থ: “আপনারা তাদের সাথে জিহাদ করবেন। আপনাদের
হাতে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদেরকে শাস্তি দিবেন, তাদেরকে
লাঞ্চিত করবেন এবং তাদের বিরুদ্ধে আপনাদেরকে বিজয়ী করবেন, মুসলমান
উনাদের অন্তর সমূহ তিনি শান্ত করবেন। আর উনাদের মনের কষ্ট দূর করবেন। মহান আল্লাহ
পাক তিনি যাকে ইচ্ছা উনাদের প্রতি ক্ষমাশীল হন।” (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ: পবিত্র
আয়াত শরীফ- ১৪-১৫)
মক্কা শরীফ উনার
ঘরে ঘরে পরাজয়ের সংবাদ ও তাদের আর্তনাদ :
প্রসিদ্ধ তারিখ ও ইতিহাস গ্রন্থ সমূহে উল্লেখ
রয়েছে,
وَكَانَ أَوّلَ مَنْ قَدِمَ مَكّةَ بِمُصَابِ
قُرَيْشٍ الْحَيْسُمَانُ بْنُ عَبْدِ اللّهِ الْخُزَاعِيّ ، فَقَالُوا : مَا وَرَاءَك ؟ قَالَ قُتِلَ عُتْبَةُ بْنُ رَبِيعَةَ ، وَشَيْبَةُ بْنُ رَبِيعَةَ ، وَأَبُو الْحَكَمِ بْنُ هِشَامٍ ، وَأُمَيّةُ بْنُ خَلَفٍ ، وَزَمَعَةُ بْنُ الْأَسْوَدِ ، وَنُبَيْهٌ وَمُنَبّهٌ ابْنَا الْحَجّاجِ ، وَأَبُو الْبَخْتَرِيّ بْنُ هِشَامٍ فَلَمّا جَعَلَ يُعَدّدُ أَشْرَافَ قُرَيْشٍ . قَالَ صَفْوَانُ بْنُ أُمَيّةَ ، وَهُوَ قَاعِدٌ فِي الْحِجْرِ : وَاَللّهِ إنْ يَعْقِلْ هَذَا فَاسْأَلُوهُ عَنّي ؛ فَقَالُوا : مَا فَعَلَ صَفْوَانُ بْنُ أُمَيّةَ ؟ قَالَ هَا هُوَ ذَاكَ جَالِسًا فِي الْحِجْرِ ، وَقَدْ وَاَللّهِ رَأَيْت أَبَاهُ وَأَخَاهُ حِينَ قُتِلَا
অর্থ“ (হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি
তিনি বর্ণনা করেন।) হাইসুমান ইবনে আব্দুল্লাহ খুযায়ী কুরাইশ কাফির মুশরিকদের
শোচনীয় পরাজয়ের দু:সংবাদ নিয়ে সর্বপ্রথম পবিত্র মক্কা শরীফে উপস্থিত হয়। অতপর
লোকেরা জিজ্ঞেস করলো, বদর যুদ্ধের খবর কি? সে বললো, উতবা ইবনে রবীয়া, শায়বা
ইবনে রবীয়া, আবুল হাকাম ইবনে হিশাম, উমাইয়া
ইবনে খালফ, যাময়া ইবনে আসওয়াদ, নবীয়্যাহ
ও মুনাব্বাহ ইবনে হাজ্জাজ, আবুল বুখতারী ইবনে হিশাম এরা সবাই
নিহিত হয়েছে। হাইসুমান যখন নিহিত কুরাইশ কাফির মুশরিকদের নেতাদের নাম এক এক করে
বলছিল তখন পবিত্র কা’বা শরীফ উনার হাতীমে বসে থাকা সাফওয়ান ইবনে উমাইয়া বললো,
মহান আল্লাহ পাক উনার
ক্বসম! যদি তার জ্ঞানবুদ্ধি ঠিক থেকে থাকে তবে তোমরা একে আমার সম্পর্কে
জিজ্ঞেস কর। তখন তারা তাকে জিজ্ঞেস করল সাফওয়ান ইবনে উমাইয়া কি করে? সে বলল, সে তো হাতীমের মধ্যে বসে আছে। মহান আল্লাহ
পাক উনার ক্বসম! আমি তার বাপ ও ভাইকে স্বচক্ষে নিহত হতে দেখেছি। (সীরাতুন নবী
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম জিলদ- ২ পৃষ্ঠা নং- ৩১৫, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, আল কামিলু ফিত্ তারীখ,
আর রওদ্বুল উনূফ, সীরাতুল হালাবিয়্যাহ)
প্রসিদ্ধ তারিখ ও ইতিহাস গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে, “হযরত
ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার গোলাম হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আযাদকৃত গোলাম হযরত
আবূ রাফি’ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন আমি এক সময় খতিমুল মুহাজিরীন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে
আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার গোলাম ছিলাম। এই পরিবার উনারা সম্মানিত দ্বীন
ইসলাম উনার মধ্যে প্রবেশ করেছিলেন। খতিমুল মুহাজিরীন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস
আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিতা আহলিয়া হযরত উম্মুল ফযল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ও
আমি দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছিলাম। খতিমুল মুহাজিরীন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস
আলাইহিস সালাম উনাকে কুরাইশরা সকলে ভয় পেতো এবং তিনি কুরাইশ কাফির মুশরিকদের
অপছন্দ করতেন এবং তিনি নিজের মুসলমান হওয়ার ব্যপারটি গোপন রাখতেন। খতিমুল
মুহাজিরীন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম উনার অনেক সম্পদ ছিলো এবং বহু
লোককে তিনি দান-খয়রাত ও আর্থিক সাহায্য করতেন। আবূ লাহাব সে বদর যুদ্ধে নিজে
সরাসরি অংশগ্রহণ না করে তার পরিবর্তে আসী ইবনে হিশাম ইবনে মুগীরাকে পাঠিয়েছিল। অন্য
লোকেরাও অনেকেই এরূপ করেছিল যে নিজে যায়নি সে তার পরিবর্তে অন্য একজনকে পাঠিয়েছিল।
আবূ লাহাব যখন বদর যুদ্ধের পরাজয়ের কথা জানলো তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে কঠিন
লাঞ্চিত ও অপমানিত করলেন। কিন্তু আমরা নিজেকে সম্মানিত ও অনুপ্রাণিত বোধ করেছিলাম।
আমি সবার কাছে প্রিয় ছিলাম। তীর বানাবার কাজ করতাম। যমযমের কূপে অবস্থিত তাঁবুতে
বসে সেগুলো ঠিক করতাম। একদিন আমি ঐ কক্ষে বসে কাজ করছিলাম, তখন
খতিমুল মুহাজিরীন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত আহলিয়া
হযরত উম্মুল ফযল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি আমার কাছেই বসা ছিলেন। আমরা
কুরাইশদের পরাজয়ের খবরে আনন্দিত হয়েছিলাম। এ সময় আবূ লাহাব শোচনীয় অবস্থায় পা
হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে এসে তাঁবুর এক কোণে আমার দিকে পিঠ দিয়ে বসল। হঠাৎ হযরত আবূ
সুফিয়ান ইবনে হারিছ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সেখানে
আগমন করলেন (তিনি তখনও উনার সম্মানিত ঈমান আনুষ্ঠানিত ভাবে প্রকাশ করেননি, উনার পবিত্র দ্বীন ইসলাম প্রকাশ পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় পর্যন্ত বিলম্বীত
হয়েছিল, তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চাচাতো ভাই ছিলেন।) তখন আবূ লাহাব উনাকে বলল,
আমার কাছে আসুন। আপনিতো সব খবর জানেন। ফলে তিনি সেখানে তার সাথে বসে
পড়লেন এবং অন্য লোকেরা তার পাশে দাঁড়ায়ে ছিলো। আবূ লাহাব জিজ্ঞেস করল বাবা! আপনি
তাদের খবর আমাকে বলুন। তিনি বললেন মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমরা শত্রুদের কাছে
নিজেদের সোপর্দ করেছি। উনারা যেমন খুশি আমাদের নিহত করেছেন ও বন্দী করেছেন। আমি
কুরাইশদের তিস্কার করব না। কারণ আমরা আকাশ ও পৃথিবীর মাঝখানে ধূসর বর্ণের ঘোড়ার
উপর অসংখ্য সাদা রঙ্গের সৈন্য দেখেছি। যারা কাউকে রেহাই দেননি এবং কেউ উনাদের
সামনে টিকে থাকতে পারেনি। হযরত আবূ রাফি’ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন,
নিশ্চয়ই উনারা হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম হবেন। এ কথা শুনেই আবূ
লাহাব আমার মুখ মুবারকে প্রচন্ড এক থাপ্পর দিলো এবং আমার শরীরের উপর বসে আমাকে
মারতে লাগলো। আর আমি ছিলাম সহজ সরল ও হালকা পাতলা ব্যক্তি। এ সময় হযরত উম্মুল ফযল
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি তাঁবুর একটি খুটি নিয়ে আবূ লাহাবের দিকে এগিয়ে
গেলেন এবং খুটি দিয়ে আঘাত করে তার মাথা ফাটিয়ে দিলেন। তিনি বলেন, হযরত আবূ রাফি’ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মুনিব এখানে নেই বলে উনাকে
দূর্বল ভেবেছ? এরপর আবূ লাহাব সেখান থেকে উঠে লাঞ্চিত ও অপমানিত
হয়ে চলে গেল। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! তারপর তার শরীরে বড় বড় ফোসকা দেখা দিলো
এবং তাতেই সে সাত দিনের মধ্যে মারা গেলে।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে মাযহারী,
তাফসীরে খাযিন মুসতাদরিকে হাকিম, আস সীরাতুন
নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম)
প্রসিদ্ধ তারিখ ও
ইতিহাস গ্রন্থ সমূহে উল্লেখ রয়েছে, “হযরত ইবনে ইসহাক্ব
রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমার কাছে বর্ণনা করেছেন
ইয়াহইয়া ইবনে ইবাদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আজজুবাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। তিনি
উনার পিতা হযরত আবাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, কুরাইশ গোত্র তাদের নিহতদের জন্য খুবই বিলাপ করেছিল। কিন্তু অচিরেই সংযত
হয়ে বলাবলি করতে লাগল বেশি বিলাপ করো না। নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনারা এ খবর পেলে আনন্দিত হবেন। আর বন্দীদের মুক্তির জন্য কাউকে
পাঠাবো না; কিছু দিন বিলম্বের পর তাদের মুক্তির জন্য যাওয়া
যাবে। অন্যথায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি এবং উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা খুবই
শক্ত ভাবে ফিদইয়া বা মুক্তিপণ আদায় করবেন। আসওয়াদ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব তার দু’ই
ছেলে যাময়া ইবনে আসওয়াদ এবং আক্বীল ইবনে আসওয়াদ এবং এক নাতি হারিস ইবনে যাম’য়াকে
হারিয়েছিল। সে তার সন্তানদের বিয়োগ ব্যথায় কাঁদতে চাচ্ছিল। এ সময় গভীর রাতে সে এক
শোকাহত নারীর কান্নার শব্দ শুনল। অন্ধ আসওয়াদ তার এক গোলামকে বলল, দেখতো এখন উচ্চস্বরে বিলাপ করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে কিনা? তুমি দেখে আসো কুরাইশরা তাদের নিহতদের জন্য কাঁদছে কিনা? তাহলে আমিও যাময়ার জন্য কাঁদব। কেননা আমার কলিজা জ্বলে যাচ্ছে। তার গোলাম
ফিরে এসে বলল, এক মহিলা তার উট হারিয়ে কাঁদছে। এ কথা শুনে
আসওয়াদ একটি কবিতা আবৃত্তি করে বিলাপ করলো।
أَتَبْكِي
أَنْ يَضِلّ لَهَا بَعِيرٌ ... وَيَمْنَعَهَا مِنْ النّوْمِ السّهُودُ
فَلَا تَبْكِي عَلَى بَكْرٍ وَلَكِنْ ... عَلَى بَدْرٍ تَقَاصَرَتْ
الْجُدُودُ
عَلَى بَدْرٍ سَرَاةِ بَنِي هُصَيْصٍ ... وَمَخْزُومٍ
وَرَهْطِ أَبِي الْوَلِيدِ
وَبَكّي إنْ بَكَيْت عَلَى عُقَيْلٍ ... وَبَكّي حَارِثًا أَسَدَ الْأُسُودِ
وَبَكّيهِمْ
وَلَا تَسِمِي جَمِيعًا ... وَمَا لِأَبِي حَكِيمَةَ مِنْ نَدِيدِ
أَلَا قَدْ سَادَ بَعْدَهُمْ
رِجَالٌ ... وَلَوْلَا يَوْمَ بَدْرٍ لَمْ يَسُودُوا
অর্থ: “ঐ মহিলা একটি উটের জন্য এমন করে রাত জেগে
বিলাপ করছে, এ কেমন কথা? হে
মহিলা! তুমি জাওয়ান উট হারানোর জন্য কেঁদো না বরং বদরের মর্মান্তিক ঘটনা স্মরণ করে
কাঁদো, যেদিন আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে। তুমি কাঁদো বদর
যুদ্ধে নিহত নেতাদের স্মরণে বনূ হুসাইন, বনূ মাখযূম এবং আবুল
ওয়ালীদের লোকদের জন্য। যদি তুমি কাঁদতেই চাও তবে আকীল এবং বীর কেশরী হারিসের জন্য
কাঁদো। তাদের জন্য কাঁদতেই থাক, কাঁদায় বিরতি দিও না। আবূ
হাকীমার তো কোন সমকক্ষই ছিলো না। জেনে রাখ! তাদের মৃত্যুর পর এমন সব লোক দায়িত্ব পেয়েছেন
যদি বদর যুদ্ধ সংঘটিত না হত তবে কখনো উনারা দায়িত্ব পেতেন না”। নাউযূবিল্লাহ! (সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম জিলদ- ২ পৃষ্ঠা নং- ৩১৮-৩১৮, সুবুলুল
হুদা ওয়ার রাশাদ, আর রওদ্বুল উনূফ, আল
বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
0 Comments:
Post a Comment