হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি
তিনি বলেন,
حَتّى إذَا كَانُوا بِالشّوْطِ بَيْنَ الْمَدِينَةِ وَأُحُدٍ ،
انْخَزَلَ عَنْهُ أُبَيّ بْنُ سَلُولَ بِثُلُثِ النّاسِ وَقَالَ أَطَاعَهُمْ
وَعَصَانِي.
অর্থ: “যখন সম্মানিত মুসলিম বাহিনী তথা
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পবিত্র মদীনা শরীফ ও সম্মানিত
উহুদের মধ্যবর্তী শাওত্ব নামক স্থানে পৌঁছলেন, তখন কাট্টা মুনাফিক উবাই বিন সুলূল সে এক-তৃতীয়াংশ লোক নিয়ে পবিত্র
মদীনা শরীফে প্রত্যাবর্তন করলো এবং সে রটাতে লাগলো যে, নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনাদের কথা মুবারক শুনলেন কিন্তু আমাদের কথা শুনলেন না।” নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ!
এই কাট্টা মিথ্যুক মুনাফিক ও মুরতাদ সে মানুষকে ওয়াসওয়াসা দিতে লাগলো, হে লোকসকল! আমার বুঝে আসছে না, এখানে নিজের
পরাজয় টেনে নিয়ে আসার অর্থ কি। নাউযূবিল্লাহ! মোটকথা সে কাট্টা মুনাফিক হওয়ার কারণে
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পুতঃপবিত্র
শান মুবারক নিয়ে এলোমেলো কথা বলতে থাকলো। নাউযূবিল্লাহ! তার দলের যে সব মুনাফিক তথা
যাদের অন্তরে কপটতা, চূ-চেরা ও সংশয় ছিল তাদেরকে নিয়ে সে মুসলামানদের
দল থেকে পলায়ন করলো। নাউযূবিল্লাহ! (সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে
হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, তারীখে উমাম ওয়াল মুলুক, জাওয়ামিউল কালাম)
অর্থাৎ যাদের অন্তরে নিফাক্বী রয়েছে নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শান-মান
নিয়ে চূ-চেরা করা তাদের মজ্জাগত অভ্যাস। নাউযূবিল্লাহ! আর উবাই বিন সুলূল ছিলো তৎকালীন
সমস্ত মুনাফিকদের নেতা। তার উপর অনন্তকালব্যাপী মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার লা’নত এবং সমস্ত মাখলুকাতের পক্ষ থেকে লা’নত।
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ
শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيرًا مِّنَ الْجِنِّ
وَالْإِنسِ ۖ لَهُمْ قُلُوبٌ لَّا يَفْقَهُونَ بِهَا وَلَهُمْ أَعْيُنٌ لَّا
يُبْصِرُونَ بِهَا وَلَهُمْ آذَانٌ لَّا يَسْمَعُونَ بِهَا ۚ أُولَـٰئِكَ
كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ ۚ أُولَـٰئِكَ هُمُ الْغَافِلُونَ.
অর্থ: “আর আমি অনেক জ্বীন মানবকে জাহান্নামের
জন্য সৃষ্টি করেছি। তাদের অন্তর আছে তার দ্বারা উপলদ্ধি করে না, তাদের চোখ আছে তার দ্বারা দেখে না এবং তাদের কান আছে তার দ্বারা
শোনে না, তারা পশুর ন্যায়; বরং তার চেয়েও
নিকৃষ্টতর। তারাই হলো গাফিল।” (পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ- ১৭৯)
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি মানুষ ও জ্বিনজাতিকে
সৃষ্টি করেছেন মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদেশ নির্দেশ মুবারক পালনের মাধ্যমে উনাদের
মতে মত পথে পথ হওয়ার জন্য। সর্বপরি উনাদের রেজামন্দী ও সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করা।
কিন্তু যারা জাহান্নামী তারা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদেশ নির্দেশ মুবারক অস্বীকার করে থাকে এবং উনাদের অবমাননা
করে থাকে। নাউযূবিল্লাহ! আর এই সমস্ত লোকেরাই হলো জাহান্নামী। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি
এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জানেন কে জাহান্নামী।
এরপরও বলা হয়েছে যারা জাহান্নামী তাদের অন্তর আছে কিন্তু তা দ্বারা উপলদ্ধি করবে না, তাদের চক্ষু আছে কিন্তু তার দ্বারা দেখবে না এবং তাদের কান আছে
কিন্তু তা দ্বারা শ্রবণ করবে না। তারাই পশুর মতো বা পশু অপেক্ষা অধম। অর্থাৎ যারা মুনাফিক
তথা জাহান্নামী হবে তাদের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। তাদের জ্ঞানবুদ্ধি আহরণের সকল সূত্র
রুদ্ধ। তাদের অন্তর আছে বটে কিন্তু তারা তার দ্বারা বুঝতে অসমর্থ। তাদের চোখও রয়েছে
কিন্তু সে চোখ দিয়ে হক্ব বিষয়গুলো দেখতে অপারগ। তারা শ্রবণও করে কিন্তু আল্লাহ পাক
উনার এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ ও ইমাম, ইমামুল উমাম সাইয়্যিদুনা
হযরত মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার আহবান মুবারক শুনতে অক্ষম। নাউযূবিল্লাহ!
যারা মুনাফিক তারা পশুর মতো। তারা কেবল
আহার, বিহার ও কর্মসর্বস্ব জীবন যাপনে অভ্যস্ত। পশু
অপেক্ষাও তারা নিকৃষ্ট। কারণ পশুরা উপকার ও ক্ষতির প্রভেদ বোঝে। বেঁচে থাকতে চেষ্টা
করে, ক্ষতিকর বিষয় থেকে। কিন্তু মুনাফিকরা জাহান্নামের পথে চলছে
এ কথা বুঝাতে পেরেও নির্বিকার। তারা তাদের আপন সন্তানের থেকেও বেশি চিনে থাকে নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাম আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং উনার পুতঃপবিত্র
মহাসম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে। কিন্তু তারা অস্বীকার করে জুলুম
ও আহমিকার কারণে। মুনাফিকরা বোধহীন, প্রকৃত দৃষ্টি ও শ্রুতিহীন।
আর তারাই প্রকৃত অর্থে গাফিল বা উদাসীন। সৃষ্টিকুলের কেউই মুনাফিকদের মতো গাফিল বা
উদাসীন নয়। (তাফসীরে মাযহারী)
উল্লেখ্য যে, মুনাফিক সরদার উবাই বিন সুলূল! সে বানূ সালামার লোক ছিলো। হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে হারাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এই মুনাফিকদের পিছু
পিছু গিয়ে বললেন, হে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা! আমি তোমাদেরকে
মহান আল্লাহ পাক উনার কথা স্মরণ করে দিচ্ছি। তোমরা তোমাদের নিজ সম্প্রদায় ও নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রেখে এভাবে যেওনা। জবাবে
তারা বলল, যদি জানতাম, আপনারা জিহাদের সম্মুখীন
হবেন, তবে আপনাদেরকে শত্রুর হাতে সমর্পণ করতাম না। কিন্তু আমাদের
ধারণায় জিহাদ ঘটবে না। যখন মুনাফিকরা হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে হারাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কথা মুবারক মানল না
এবং ফিরে যেতেই চাইলো, তখন তিনি তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন,
হে মহান আল্লাহ পাক উনার দুশমনেরা! মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদেরকে উনার
রহমত থেকে দূরে রাখুন। অচিরেই মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনাকে তোমাদের থেকে অমুখাপেক্ষী করে দেবেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি
বর্ণনা করেন,
أَنّ الْأَنْصَارَ يَوْمَ أُحُدٍ ، قَالُوا لِرَسُولِ اللّهِ صَلّى
اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يَا رَسُولَ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ!
أَلَا نَسْتَعِينُ بِحُلَفَائِنَا مِنْ يَهُودَ ؟ فَقَالَ لَا حَاجَةَ لَنَا
فِيهِمْ.
অর্থ: “সম্মানিত উহুদ জিহাদের দিন নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হযরত আনছার ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনহুম উনারা বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!
আমরা আমাদের ইহুদী মিত্রদের সাহায্য নিবো কি? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আমাদের জন্য তাদের খিদমতের কোন প্রয়োজন নেই।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
(সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি,
সীরাতুল হালাবিয়্যা, উয়ূনুল আছার, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
হযরত যিয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত মুহম্মদ ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আমার কাছে
করেছেন যে, “যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অগ্রসর হয়ে বানূ হারিছার হাররা নামক স্থানে পৌঁছলেন,
তখন একটি ঘটনা ঘটল যে, জনৈক ব্যক্তি ঘোড়া মাছি
তাড়ানোর জন্য সজোরে লেজ নাড়ল, আর তা যেয়ে তার তরবারির কব্জির
উপর পড়লো, ফলে তরবারি খাপ থেকে বেরিয়ে আসলো।”
হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন,
قَالَ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ
لِأَصْحَابِهِ مَنْ رَجُلٌ يَخْرُجُ بِنَا عَلَى الْقَوْمِ مِنْ كَثَبٍ أَيْ مِنْ
قُرْبٍ مِنْ طَرِيقٍ لَا يَمُرّ بِنَا عَلَيْهِمْ ؟ فَقَالَ أَبُو خَيْثَمَةَ
أَخُو بَنِي حَارِثَةَ بْنِ الْحَارِثِ أَنَا يَا رَسُولَ اللّهِ فَنَفَذَ بِهِ
حَرّةَ بَنِي حَارِثَةَ.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুম উনাদের লক্ষ্য করে বললেন, কে আছেন যে,
শত্রুর কাছে এমন পথ ধরে আমাদের নিয়ে যাবেন, যা
শত্রুর সামনে দিয়ে অতিক্রম হবে না। আবূ খাইছাম বানূ হারিছা ইবনে হারিছের এক (ভাই) লোক
বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম! আমি নিয়ে যাবো। এই কথা বলে তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বানূ হারিছার হাররায় নিয়ে চললেন।”
“পথে লোকদের বাগান ইত্যাদির কথাও আলোচনা
করলেন। এক সময় তারা মিরবা’ ইবনে ফায়যা- এর বাগানের কাছ দিয়ে অতিক্রম করলেন। সে মুনাফিক
ছিল এবং অন্ধ ছিল। সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের আগমনের কথা
অনুভব করে উনাদের চেহারা মুবারক লক্ষ্য করে মুঠ ভরে ভরে মাটি ছুড়তে লাগল এবং বলতে লাগল, আপনি যদি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি হয়ে থাকেন তবে আপনার জন্য আমার বাগানে আসার অনুমতি নেই। নাউযূবিল্লাহ!
নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ! (সীরাতুর নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম
রহমতুল্লাহি আলাইহি, মুখতাছারু সীরাতুর রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উয়ূনুল আছার ফি ফুয়ূনিল মাগাযী, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
আরো বর্ণিত রয়েছে যে, এই কাট্টা কাফির মুনাফিক সে হাতে মাটি নিয়ে বলতে লাগল,
ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান
আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! যদি আমি জানতে সক্ষম হতাম যে, এই মাটি
আপনি ছাড়া আর অন্য কারো চেহারা মুবারকে লাগবে না তবে অবশ্যই আমি তা আপনার নূরুর রহমত
বা চেহারা মুবারক উনার উপর ছুড়ে মারতাম। নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ!
এ কথা শুনে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সকলেই তাকে হত্যা
করার জন্য অগ্রসর হলেন। কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন,
لَا تَقْتُلُوهُ فَهَذَا الْأَعْمَى أَعْمَى الْقَلْبِ، أَعْمَى
الْبَصَرِ.
অর্থ: ‘আপনারা তাকে হত্যা করবেন না। কেননা
সে একই সাথে চক্ষু ও অন্তরের অন্ধ।’
(সীরাতুর নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-
ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি,
রওদ্বুল উনূফ, সুবুলুল হুদা ওয়া রাশাদ)
উল্লেখ্য যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাকে বেশি কষ্ট দিয়েছিল কাফির মুশরিক বেদ্বীন-বদদ্বীন, ইহুদী
নাছারারা। কিন্তু ইহুদী-নাছারা, কাফির, মুশরিকদের থেকেও বেশি কষ্ট দিয়েছিল মুনাফিকরা। নাউযূবিল্লাহ! কারণ কাফির মুশরিকরা
যে মুসলমান উনাদের শত্রু এটা স্পষ্ট কিন্তু মুনাফিকরা মুসলমান উনাদের মধ্যে অবস্থান
করে চূ-চেরা করা, ওয়াসওয়াসা দেয়া ও চুপেচুপে ষড়যন্ত্র করা ইত্যাদি
আরো বেশি কষ্টদায়ক। এজন্য এদেরকে পশুর মতো এবং পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট বলা হয়েছে।
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
এবং উনার মহাসম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের কিভাবে খিদমত মুবারকে
আঞ্জাম দেয়া যায় এই চিন্তু ফিকিরে মশগুল থাকতেন। বিপরীতে যারা মুনাফিক ছিলো তারা ভাবতো
কি করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে
এবং উনার মহাসম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে কষ্ট দেয়া যায়। নাউযূবিল্লাহ!
কাট্টা মুনাফিক সরদার উবাই বিন সুলূল সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সবসময় কষ্ট দেয়ার চেষ্টা করতো। মাঝে মাঝে তার মুনাফিকি প্রকাশ
পেতো। সম্মানিত উহুদ জিহাদে সেটাই প্রকাশ পেয়েছে যে সে আসলেই মুনাফিক তথা মুনাফিকদের
সরদার। সম্মানিত উহুদ জিহাদের সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার এবং মহান আল্লাহ পাক উনার ফায়সালা মুবারক তার নাকি মনঃপুত হয়নি। নাউযূবিল্লাহ!
এই সম্মানিত ওহী মুবারক উনার মাধ্যমে নাযিলকৃত ফায়সালা মুবারক মানতে সে নারাজ। নাউযূবিল্লাহ!
তার ভিতরে নিফাক্বে পূর্ণ থাকায় সে বিরোধিতা করেছে। নাউযূবিল্লাহ!
আর সম্মানিত মুসলমান উনারা যেন সম্মানিত
জিহাদ মুবারক না যান বা জিহাদের ময়দান থেকে ফিরে আসেন বা মুসলমান উনাদের মধ্যে ফাটল
ধরুক এটাই মুনাফিকরা সবসময় চাইতো। যখন মুসলমান উনারা জিহাদ মুবারকের প্রস্তুতি নিতেন
বা সম্মানিত জিহাদের জন্য রওয়ানা দিতেন বা সম্মানিত জিহাদের ময়দানে পৌঁছে যেতেন তখন
মুনাফিকরা মুসলমান উনাদেরকে ওয়াসওয়াসা দিতো এবং উনাদেরকে ভয়-ভীতিও দেখাতো যাতে উনাদের
মন অস্থির হয়ে পড়ে। নাউযূবিল্লাহ! আর সেই কাজটিই মূলহোতা ছিলো উবাই বিন সুলূল। নাউযূবিল্লাহ!
উল্লেখ্য যে, মুনাফিকদের বদস্বভাব হলো জিহাদ থেকে পিছে থাকা ও পলায়ন করা। মুনাফিকদের
অন্তরে নিফাক্বী থাকায় তারা সম্মনিত জিহাদ মুবারকে অংশগ্রহণে আগ্রহ বোধ করে না বরং
জিহাদে অংশগ্রহণ না করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। নাউযূবিল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র
কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
فَرِحَ الْمُخَلَّفُونَ بِمَقْعَدِهِمْ خِلَافَ رَسُولِ اللَّـهِ
وَكَرِهُوا أَن يُجَاهِدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّـهِ
وَقَالُوا لَا تَنفِرُوا فِي الْحَرِّ ۗ قُلْ نَارُ جَهَنَّمَ أَشَدُّ حَرًّا ۚ
لَّوْ كَانُوا يَفْقَهُونَ.
ت
অর্থ: “যারা পশ্চাতে থেকে গেল তারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধচারণ করে বসে থাকাতেই তারা আনন্দ লাভ করল এবং তাদের
ধন-সম্পদ ও তাদের জীবন দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় জিহাদ করা পছন্দ করে নাই
এবং তার বলেছিল, গরমের মধ্যে জিহাদে
বের হওনা। আপনি বলে দিন উত্তাপে জাহান্নামের আগুন প্রচন্ডতম। যদি তারা বুঝতে পারতো।
(পবিত্র সূরা তাওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-৯)
অর্থাৎ মুনাফিকরা জিহাদের সময় সমগত হলে
বিভিন্নরকম অজুহাত পেশ করে জিহাদ থেকে বিরত থাকতো। তারা বাইরে বাইরে ঈমানদার বলে নিজেদেরকে
প্রকাশ করলেও অন্তরে অন্তরে তারা ছিলো হক্ব বা সত্য প্রত্যাখ্যানকারী।
জিহাদ না করতে উদ্ধুদ্ধ করা এবং ভীতিকর
গুজব ছাড়ানো হচ্ছে মুনাফিকদের একটি বদস্বভাব। সম্মানিত জিহাদের আদেশ মুবারক আসলে মুসলমান
উনারা যাতে জিহাদে না যেতে পারেন এজন্য তারা বিভিন্ন রকম ওয়াসওয়াসা দিত। নাউযূবিল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র
কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
وَمِنْهُم مَّن يَقُولُ ائْذَن لِّي وَلَا تَفْتِنِّي ۚ أَلَا فِي
الْفِتْنَةِ سَقَطُوا ۗ وَإِنَّ جَهَنَّمَ لَمُحِيطَةٌ بِالْكَافِرِينَ.
অর্থ: “তাদের মধ্যে এমন লোক আছে যে, তারা বলে আমাকে আব্যাহতি দিন এবং আমাকে ফিতনায় ফেলবেন না। সবাধান!
তারাতো পূর্ব থেকেই ফিৎনাগ্রস্ত বা পথভ্রষ্ট। আর নিশ্চয়ই জাহান্নাম কাফিরদের চারিদিকে
ঘিরে রয়েছে।” (পবিত্র সূরা তাওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-৪৯)
মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত পবিত্র আয়াত
শরীফ উনার মধ্যে মুনাফিকদের কতিপয় বদস্বভাব উল্লেখ করে জ্বীন-ইনসানকে সাবধান করে দিয়েছেন
যাতে জ্বীন-ইনসান সতর্ক থাকে। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কিছু মুনাফিক আপনাকে
বলবে আমাদেরকে বাড়িতে বসে থাকার অনুমতি দান করুন। আপনাদের সাথে জিহাদে গিয়ে কোন ফিৎনায়
পড়ে যাই কি না। নাউযূবিল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন যারা এ ধরণের
কথা বলে তারা মূলত; ফিৎনায় পড়েই রয়েছে। অর্থাৎ তারা জিহাদে না
যাওয়ার জন্য তাদের যতপ্রকার তালবাহানা প্রকাশ করে থাকে। নাউযূবিল্লাহ!
এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র
কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
وَإِذْ قَالَت طَّائِفَةٌ مِّنْهُمْ يَا أَهْلَ يَثْرِبَ لَا
مُقَامَ لَكُمْ فَارْجِعُوا ۚ وَيَسْتَأْذِنُ فَرِيقٌ مِّنْهُمُ النَّبِيَّ
يَقُولُونَ إِنَّ بُيُوتَنَا عَوْرَةٌ وَمَا هِيَ بِعَوْرَةٍ ۖ إِن يُرِيدُونَ
إِلَّا فِرَارًا.
অর্থ: “এবং তোমাদের মধ্যে একদল যখন বলেছিল, হে পবিত্র মদীনাবাসী! এখানে আপনাদের কোন স্থান নেই, অতএব আপনারা ফিরে চলুন এবং তাদের মধ্যে
একদল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট
অব্যাহতি প্রার্থনা করে বলছিল, আমাদের বাড়িঘর অরক্ষিত। অথচ উহা
অরক্ষিত ছিল না, আসলে পলায়ন করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য।” নাউযূবিল্লাহ!
(পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-১২)
মুনাফিকরা কাল্পনিক ও মনগড়া কারণ উপস্থাপন
করে জিহাদে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকে। এজন্য মিথ্যা কৈফিয়াতের সম্মুখীন হলে তাদের মিথ্যা
অজুহাত পেশের অন্ত থাকে না। মহান আল্লাহ পাক তিনি মুনাফিকদের সে কথা তুলে ধরেছেন। আর
সম্মানিত মুসলমান উনারা কোন প্রকার বিন্দু থেকে বিন্দু মাত্র কারণ তালাশ করেন না এবং
উনারা সন্দেহ পোষনও করেন না। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলুল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ
মুবারক করেন,
يَعْتَذِرُونَ إِلَيْكُمْ إِذَا رَجَعْتُمْ إِلَيْهِمْ ۚ قُل لَّا
تَعْتَذِرُوا لَن نُّؤْمِنَ لَكُمْ قَدْ نَبَّأَنَا اللَّـهُ مِنْ أَخْبَارِكُمْ ۚ
وَسَيَرَى اللَّـهُ عَمَلَكُمْ وَرَسُولُهُ ثُمَّ تُرَدُّونَ إِلَىٰ عَالِمِ
الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ فَيُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ.
অর্থ: “আপনারা তাদের কাছে যখন ফিরে আসবেন
তখন তারা আপনাদের কাছে ওযর পেশ করবে। আপনি
বলে দিন কোন ওযর-আপত্তি উপস্থাপন করো না। আমরা আর কখনও তোমাদেরকে বিশ্বাস করবো না।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইতিমধ্যেই তোমাদের অবস্থা আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন। মহান আল্লাহ
পাক তিনি ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি অবশ্যই তোমাদের কার্যকলাপ দেখছেন। অতঃপর অদৃশ্য ও দৃশ্যের পরিজ্ঞাতা উনার নিকট তোমাদের প্রত্যাবর্তিত করা
হবে এবং তোমরা যা করতে চাও তা তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দিবেন। (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ:
পবিত্র আয়াত শরীফ-৯৪)
আলোচ্য পবিত্র আয়াত শরীফে ওই সকল মুনাফিকদের
কথা বিবৃত হয়েছে, যারা বিভিন্ন টালবাহানা
করতো সম্মানিত জিহাদ থেকে বিরত থাকার জন্য। আর মুসলমানগণ জিহাদ মুবারক থেকে ফিরে মুনাফিকদের
সাথে কি আচরণ করবেন সেটাও বলে দেয়া হয়েছে। আপনারা তাদের নিকট ফিরে এলে তারা আপনাদের
নিকট অজুহাত পেশ করবে। কিন্তু আপনারা বলবেন আমরা তোমাদেরকে কখনও বিশ্বাস করবো না। মহান
আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তোমাদের কর্ম সম্পর্কে জানিয়ে দিয়েছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি
তোমাদের সকল অপকথন ও অপকর্ম সম্পর্কে সম্মানিত ওহী মুবারক উনার মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন।
সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলুল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ
হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
0 Comments:
Post a Comment