সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনাকে কষ্ট
দেয়ায় উতাইবার কঠিন পরিণতি:
‘উসদুল গাবাহ’ গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে,
فَلَمَّا اَنْزَلَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ تَبَّتْ يَدَا اَبِـىْ
لَـهَبٍ قَالَ اَبُوْ لَـهَبٍ لِّابْـنَـيْـهِ رَاْسِىْ مِنْ رُءُوْسِكُمَا
حَرَامٌ اِنْ لَّـمْ تُطْلِقَا ابْنَتَىْ سَيِّدِنَا نَـبِـيِّـنَا حَبِيْبِنَا
شَفِيْعِنَا مَوْلَانَا مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
অর্থ: “অতপর যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি
নাযিল করলেন, ‘আবূ লাহাবের দু’হাত
ধ্বংস হোক’।
অর্থাৎ সম্মানিত সূরা লাহাব শরীফ নাযিল
মুবারক করলেন, তখন আবূ লাহাব সে তার
দুই পুত্রকে বললো, আমি পুনরায় তোমাদের চেহারা দেখবো না,
যদি না তোমরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা দুই বানাত (মেয়ে) আলাইহিমাস সালাম উনাদের সম্মানিত খিদমত
মুবারক থেকে মাহরূম হয়ে না যাও।” নাঊযুবিল্লাহ! (উসদুল গাবাহ)
আর তাদের মা উম্মে জামীল বলেছিলো,
فَطَـلِّـقَـاهُـمَا فَفَعَلَا فَطَلَّقَاهُـمَا قَبْلَ
الدُّخُوْلِ بِـهِمَا.
অর্থ: “তোমরা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ
ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম
উনার অর্থাৎ উনাদের থেকে জুদা হয়ে যাও। তারা তাদের মায়ের কথা অনুযায়ী কাজ করলো। ফলশ্রুতিতে
উতবাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক
থেকে মাহরূম হয়ে গেলো এবং উতাইবাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম
উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক থেকে মাহরূম হয়ে গেলো। উনারা তখনও তাদের ঘরে সম্মানিত তাশরীফ
মুবারক রাখেননি।” (উসদুল গাবাহ)
কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে,
وَكَانَتْ قَدْ تَزَوَّجَهَا عُتَيْبَةُ بْنُ اَبِـىْ لَـهَبٍ
اَخُوْ عُتْبَةَ الَّذِىْ تَزَوَّجَ اُخْتَهَا حَضْرَتْ رُقَيَّةَ عَلَيْهَا
السَّلَامُ وَلَـمْ يَدْخُلَا بِـهِمَا فَاَمَرَهٗ اَبُوْهُ وَاُمُّهٗ اَنْ
يُّفَارِقَهَا كَمَا اَمَرَا اَخَاهُ اَنْ يُّفَارِقَ اُخْتَهَا وَجَاءَ اِلَى
النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ لَهٗ كَفَرْتُ بِدِيْنِكَ
وَفَارَقْتُ ابْنَتَكَ لَا تُـحِبُّنِـىْ وَلَا اُحِبُّكَ ثُـمَّ سَطَا عَلَيْهِ
فَشَقَّ قَمِيْصَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
অর্থ: “সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ
আলাইহাস সালাম উনার সাথে উতাইবার এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস
সালাম উনার সাথে উতাইবার ভাই উতবার সম্মানিত আক্বদ শরীফ হয়েছিলো। কিন্তু উনারা তখনও
তাদের গৃহে তাশরীফ মুবারক রাখেননি। এর পূর্বেই উতাইবার বাবা-মা তাকে সাইয়্যিদাতুনা
হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক থেকে মাহরূম হয়ে যাওয়ার
নির্দেশ দিয়েছিলো, যেমনিভাবে তারা উতবাকে
নির্দেশ দিয়েছিলো সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত
খিদমত মুবারক থেকে মাহরূম হয়ে যাওয়ার জন্য। উতাইবাহ তার বাবা-মার নির্দেশ পেয়ে নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট উপস্থিত
হয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললো,
كَفَرْتُ بِدِيْــنِكَ وَفَارَقْتُ ابْنَتَكَ لَا تُـحِبُّنِـىْ
وَلَا اُحِبُّكَ ثُـمَّ سَطَا عَلَيْهِ فَشَقَّ قَمِيْصَ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
অর্থ:“আমি আপনার সম্মানিত দ্বীন উনাকে
অস্বীকার করলাম এবং আপনার মহাসম্মানিতা আওলাদ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ
আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক থেকে মাহরূম হয়ে গেলাম। নাঊযুবিল্লাহ! আপনি
আমাকে মুহব্বত করেন না, আমিও আপনাকে মুহব্বত
করি না। নাঊযুবিল্লাহ! অর্থাৎ আপনার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। নাঊযুবিল্লাহ! অতঃপর
সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর ঝাঁপিয়ে
পড়ে এবং উনার সম্মানিত ক্বমীস বা কোর্তা মুবারক ছিঁড়ে ফেলে।” নাঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ!
না‘ঊযুবিল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উতাইবার এই আচরণে চরম অসন্তুষ্ট হন এবং তার বিরুদ্ধে বদদোয়া
মুবারক করেন,
اَمَا اِنِّـىْ اَسْاَلُ اللهَ اَنْ يُّـسَـلِّـطَ عَلَيْكَ
كَلْبًا مِّنْ كِلَابِهٖ
.
অর্থ: “সাবধান! নিশ্চয়ই আমি মহান আল্লাহ
পাক উনার নিকট দোয়া মুবারক করছি, তিনি যেন উনার কুকুরসমূহ
থেকে একটি কুকুরকে তোমার উপর প্রবল বা গালিব করে দেন।” সুবহানাল্লাহ!
অপর বর্ণনায় এসেছে,
فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
اَللّٰهُمَّ سَـلِّـطْ عَلَيْهِ كَلْبًا مِّـنْ كِلَابِكَ.
অর্থ: “অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহু
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, আয় আল্লাহ পাক! আপনি আপনার কুকুরসমূহ থেকে একটি কুকুরকে তার উপর
প্রবল বা গালিব করে দিন।” সুবহানাল্লাহ! (দালাইলুন নুবুওওয়াহ লিল বাইহাক্বী,
যাখায়েরুল ‘উক্ববাহ)
অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
اَللّٰهُمَّ سَـلِّـطْ عَلَيْهِ اَسَدًا.
অর্থ: “আয় আল্লাহ পাক! আপনি একটি সিংহকে
তার উপর প্রবল বা গালিব করে দিন।” সুবহানাল্লাহ!
অপর বর্ণনায় এসেছে,
اِنَّ عُتْبَةَ ابْنَ اَبِـىْ لَـهَبٍ كَانَ يَسُبُّ الرَّسُوْلَ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَيُؤْذِيْهِ وَيَسْخَرُ مِنَ الرَّسُوْلِ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمِنَ الْقُرْاٰنِ فَدَعَا عَلَيْهِ الرَّسُوْلُ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالَ اللّٰهُمَّ سَـلِّـطْ عَلَيْهِ كَلْـبًا مِّـنْ
كِلَابِكَ.
অর্থ: “উতবাহ ইবনে আবূ লাহাব সে নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে গালি দিয়েছিলো, উনাকে কষ্ট দিয়েছিলো এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ও সম্মানিত কুরআন শরীফ উনাকে নিয়ে উপহাস করেছিলো,
ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করেছিলো। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ!
নাঊযুবিল্লাহ! ফলশ্রুতিতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি উতবার বিরুদ্ধে বদদোয়া মুবারক করেছিলেন।
তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন,
اَللّٰهُمَّ سَـلِّـطْ عَلَيْهِ كَلْـبًا مِّـنْ كِلَابِكَ.
অর্থ: “আয় আল্লাহ পাক! আপনি আপনার কুকুরসমূহ
থেকে একটি কুকুরকে তার উপর প্রবল বা গালিব করে দিন।” সুবহানাল্লাহ!
অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
اَللّٰهُمَّ سَـلِّـطْ عَلَيْهِ اَسَدًا.
অর্থ: “আয় আল্লাহ পাক! আপনি একটি সিংহকে
তার উপর প্রবল বা গালিব করে দিন।” সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূত-পবিত্র
যবান মুবারক নিঃসৃত উপরোক্ত বদদোয়া মুবারক শুনে উতবাহ ও উতাইবার মনে ভীষণ ত্রাসের সঞ্চার
হলো। এমনকি তাদের পিতা আবূ লাহাবের মনেও সেদিন থেকে একটি প্রবল ভীতির সৃষ্টি হলো। সেদিন
থেকে উতবাহ, উতাইবাহ এবং আবূ লাহাবের চেহারায় সেই ত্রাস ও ভীতির
নিদর্শন এমনভাবে ফুটে উঠলো যে, যেকোনো লোক তাদেরকে দেখেই মনে
করতো যে, নিশ্চয়ই আবূ লাহাব ও তার দুই পুত্র উতবাহ ও উতাইবাহ
কোনো অশুভ চিন্তায় আক্রান্ত হয়েছে।
এভাবে কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর আবূ লাহাব তার দুই পুত্রকে নিয়ে সিরিয়ায় বাণিজ্য
সফরের জন্য প্রস্তুত হলো। কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের বিরুদ্ধে বদদোয়া মুবারক করার পর তারা যে ত্রাস ও ভীতির
শিকার হয়েছিলো, তা তখনও তাদের মধ্যে
পূর্ণরূপে বিরাজমান ছিলো। সিরিয়ায় বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে তারা পথিমধ্যে একস্থানে
রাত যাপনের জন্য তাঁবু খাটালো। কেউ কেউ উক্ত স্থানের নাম যারক্বা’ বলে উল্লেখ করেছেন।
কিন্তু এ সময় তাদের সেই ভীতি ও ত্রাস আরো প্রবল আকার ধারণ করলো। যার কারণে তারা নিরাপত্তার
জন্য তাঁবুর চারদিকে তাদের ব্যবসায়িক পণ্যসমূহ উঁচু করে স্তূপাকারে রাখলো এবং তার মাঝখানে
উতবাহ ও উতাইবার জন্য শোয়ার ব্যবস্থা করলো। যাতে করে কোনো জীবজন্তু তা অতিক্রম করে
উতবাহ ও উতাইবার উপর হঠাৎ করে হামলা করতে না পারে। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি যদি
কাউকে নিশ্চিহ্ন করতে চান, ধ্বংস করতে চান, তাহলে কায়িনাতের বুকে দ্বিতীয় কেউ নেই তাকে রক্ষা করে। গভীর রাতে সবাই যখন
ঘুমে অচেতন, তখন অত্যন্ত ভয়ঙ্কর গর্জন করে দুইটি সিংহ লাফ দিয়ে
পণ্যের উঁচু স্তূপ ডিঙ্গিয়ে উতবাহ ও উতাইবাহর ঘাড়ের উপর যেয়ে পড়লো এবং চোখের পলকে তাদের
ঘাড় মটকিয়ে তাদেরকে পিঠে নিয়ে উধাও হয়ে গেলো। সুবহানাল্লাহ! কাফিলার যেসব লোক তাঁবু
পাহারায় নিযুক্ত ছিলো তারা সবাই ভীত চকিত নয়নে এই ভয়ানক দৃশ্য দেখলো; কিন্তু তাদের কিছুই করার ছিলো না। মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে যখন গযব
আসে, তখন এভাবেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে হয়। মুহূর্তের মধ্যে কাফিলার
লোকজনের মাঝে হুলুস্থ’ুল পড়ে গেলো। কান্নার রোল উঠলো। কিন্তু করার কিছুই অবশিষ্ট থাকলো
না। আবূ লাহাবের এ সফরে আর সিরিয়া গমন করা হলো না। সে সেখান থেকেই বিষাদ ভারাক্রান্ত
চিত্তে সম্মানিত মক্কা শরীফ ফিরে এলো।
মূলত, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে এবং
সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনাকে অর্থাৎ উনাদেরকে কষ্ট দেয়ার
কারণেই তাদের এই ভয়াবহ কঠিন পরিণতি হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি খাছ
গযব নাযিল করে তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস
সালাম উনাদেরকে কষ্ট দেয়ার পরিণতি এরূপ ভয়ঙ্করই হয়ে থাকে। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস
সালাম উনাকে তথা মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে যারা কষ্ট
দেয় তারা কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী। অনুরূপভাবে যে যারা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম
উনাকে এবং মহাসম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে কষ্ট দিবে তাদেরও উতাইবার
মতই কঠিন পরিনতির হবে। তাদের জন্য ইহকাল ও পরকাল তথা অনন্তকাল ব্যাপী মহান আল্লাহ পাক
উনার পক্ষ থেকে লা’নত রয়েছে ।
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ
শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
اِنَّ الَّذِيْنَ يُؤْذُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ لَعَنَهُمُ اللهُ
فِـى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ وَاَعَدَّ لَـهُمْ عَذَابًا مُّهِيْنًا.
অর্থ: “নিশ্চয়ই যারা মহান আল্লাহ পাক উনাকে
এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অর্থাৎ
উনাদেরকে কষ্ট দেয়, তাদের উপর মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত দুনিয়া
ও আখিরাতে এবং মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন।”
সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৭)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক
হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ عَلِـىٍّ كَرَّمَ اللهُ وَجْهَهٗ عَلَيْهِ
السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ
اٰذَانِـىْ فِـىْ عِتْـرَتِـىْ فَقَدْ اٰذَى اللهَ عَزَّ وَجَلَّ.
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু
ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি আমার
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ব্যাপারে আমাকে
কষ্ট দিলো, সে মূলত যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনাকেই কষ্ট দিলো।” নাঊযুবিল্লাহ! (দায়লামী, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ)
অর্থাৎ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ
আলাইহাস সালাম উনাকে তথা মহাসম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে কষ্ট
দেয় তারা মূলত মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম উনাকে কষ্ট দিল। নাউযূবিল্লাহ! আর মহান আল্লাহ পাক উনাকে
এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাকে কষ্ট দেয় তাদের কত কঠিন পরিনতি হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ
মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ عَلِـىٍّ كَرَّمَ اللهُ وَجْهَهٗ عَلَيْهِ
السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ
اٰذَانِـىْ وَعِتْرَتِـىْ فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ.
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু
ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি আমাকে
এবং আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে কষ্ট
দিবে, তার উপর মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত। অর্থাৎ সে মহান আল্লাহ
পাক উনার পক্ষ থেকে লা’নতগ্রস্থ।” নাঊযুবিল্লাহ! (সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ)
মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক
করেন-
وَالَّذِيْنَ يُؤْذُوْنَ رَسُوْلَ اللهِ لَـهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ.
অর্থ: “আর যারা মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট দেয়, তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক
শাস্তি।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা তাওবা শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত
শরীফ ৬১)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক
হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ عَلِـىٍّ كَرَّمَ اللهُ وَجْهَهٗ عَلَيْهِ
السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ
سَبَّ نَبِيًّا فَاقْتُلُوْهُ وَمَنْ سَبَّ اَصْحَابِـىْ فَاضْرِبُوْهُ.
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু
ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি কোনো
নবী-রসূল আলাইহিস সালাম উনাকে গাল-মন্দ করবে, মানহানী করবে,
আপনারা তাকে ক্বতল করুন, মৃত্যুদ- দিন। আর যে ব্যক্তি
আমার হযরত ছাহাবায়ে রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদেরকে গাল-মন্দ করবে, মানহানী করবে, আপনারা তাকে প্রহার করুন।” সুবহানাল্লাহ!
(আশ শিফা, ফাতাওয়ায়ে বায্যাযিয়্যাহ, আল
মু’জামুছ ছগীর লিত ত্ববারনী)
অপর বর্ণনায় এসেছে,
عَنْ حَضْرَتْ عَلِـىٍّ كَرَّمَ اللهُ وَجْهَهٗ عَلَيْهِ
السَّلَامُ عَنِ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ سَبَّ
نَبِيًّا مِّنَ الْاَنْۢبِيَاءِ فَاقْتُلُوْهُ وَمَنْ سَبَّ وَاحِدًا مِّنْ
اَصْحَابِـىْ فَاجْلِدُوْهُ.
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু
ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ
মুবারক করেন, যে ব্যক্তি হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের
মধ্য থেকে যে কোনো একজন নবী-রসূল আলাইহিস সালাম উনাকে গাল-মন্দ করবে, মানহানী করবে, আপনারা তাকে ক্বতল করুন, মৃত্যুদ- দিন। আর যে ব্যক্তি আমার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা
আনহুম উনাদের মধ্য থেকে যে কোনো একজন হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে
গাল-মন্দ করবে, মানহানী করবে, আপনারা তাকে
প্রহার করুন।” সুবহানাল্লাহ! (আল ফাওয়াইদ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক
হয়েছে,
عَنِ الْاِمَامِ الثَّالِثِ سَيِّدِنَا حَضْرَتْ اَلْـحُسَيْنِ
بْنِ عَلِىٍّ كَرَّمَ اللهُ وَجْهَهٗ عَلَيْهِمَا السَّلَامُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ سَبَّ اَهْلَ الْبَيْتِ فَاِنَّـمَا
يَسُبُّ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ
মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম
উনাদেরকে গাল-মন্দ করলো, মানহানী করলো, সে মূলত মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং উনার হাবীব, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাকে অর্থাৎ উনাদেরকেই গাল-মন্দ করলো, মানহানী করলো।” না‘ঊযুবিল্লাহ!
না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! (সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ফী সীরাতি খইরিল ইবাদ)
অতএব, পবিত্র কুরআন শরীফ এবং
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের আলোকে সম্মানিত ফতওয়া মুবারক হচ্ছেন- নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের যারা মানহানী
করবে তাদের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদ-।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক
হয়েছে,
عَنِ الْاِمَامِ الثَّالِثِ سَيِّدِنَا حَضْرَتْ اَلْـحُسَيْنِ
بْنِ عَلِىٍّ كَرَّمَ اللهُ وَجْهَهٗ عَلَيْهِمَا السَّلَامُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ سَبَّ اَهْلَ الْبَيْتِ فَاِنَّـمَا
يَسُبُّ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ
মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম
উনাদেরকে গাল-মন্দ করলো, মানহানী করলো, সে মূলত মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং উনার হাবীব, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাকে অর্থাৎ উনাদেরকেই গাল-মন্দ করলো, মানহানী করলো।” না‘ঊযুবিল্লাহ!
(সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ফী সীরাতি খইরিল ইবাদ)
অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত
হযরত আব্বা আম্মা আলাইহিমাস সালাম উনাদেরকে, হযরত উম্মাহাতুল
মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে এবং মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস
সালাম উনাদেরকে গাল-মন্দ করা বা মানহানী করার অর্থই হচ্ছে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে গাল-মন্দ করা,
মানহানী করা। নাঊযুবিল্লাহ!
অতএব যারা আহলে বাইত শরীফ আলাইহিস সালাম, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ ও ইমাম মুত্বাহহার এবং মুত্বাহহির
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম মামদূহ সাইয়্যিদুনা হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম
উনাকে এবং উনার মহাসম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে গাল-মন্দ করবে,
উনাদের মানহানী করবে এবং উনাদেরকে কষ্ট দিবে তাদেরও একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদন্ড।
কাট্টা কাফির উতাইবার মতই এদের কঠিন পরিনতি
হবে। নাউযূবিল্লাহ!
খ¦লিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত জীন-ইনসানকে মহাসম্মানিত আহলু বাইত শরীফ
আলাইহিমুস সালাম উনাদের সর্বপ্রকার অসন্তুষ্টি ও নাফরমানী থেকে হিফাযত থাকার তাওফীক
দান করুন এবং উনাদের দায়িমী সন্তুষ্টি মুবারক লাভে ধন্য করুন। আমীন!
0 Comments:
Post a Comment