পবিত্র মদীনা শরীফ উনার সংখ্যাগরিষ্ঠ আউস
ও খাযরাজ গোত্রের যারা মূল ছিলেন উনারা সম্মানিত হিজরত মুবারকের পূর্বে এবং পরে সম্মানিত
দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন। আউস ও খাযরাজ এই দু’গোত্রের সকলেই দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করায়
উনাদের সাথে সন্ধিচুক্তির কোন প্রশ্নই ছিলো না। তবে খাযরাজ গোত্রের মধ্যে কাট্টা মুনাফিক
উবাই বিন সুলূল নেতৃত্বে সামনে থাকলেও গোত্রের অধিকাংশই মুসলমান হওয়ায় উনাদের বিরুদ্ধে
গিয়ে প্রকাশ্যে কিছু করার ক্ষমতা তার ছিলো না। সম্মানিত বদর জিহাদের পর সে এবং তার
অনুসারীরা প্রকাশ্যে দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করে। তবে সেসময় পবিত্র মদীনা শরীফ উনার সংখ্যালঘু
ইহুদী সম্প্রদায় মুসলমান উনাদের নবতর জীবনধারার প্রতি এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি বিদ্বেষ থাকলেও অতি ধূর্ত হওয়ার
কারণে প্রকাশ্যে বিরোধিতায় লিপ্ত হয়নি। তবে সবচেয়ে বিরোধীতায় সামনে ছিলো পবিত্র মক্কা
শরীফের কুরাইশ কাফির মুুশরিকরা। তারা পত্র প্রেরণ ও অন্যান্য অপতৎপরতার মাধ্যমে মুনাফিক
ও ইহুদীদের সাথে ষড়যন্ত্র করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি এবং উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যেন
পবিত্র মদীনা শরীফ এ অবস্থান করতে না পারেন সে ব্যপারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে থাকে।
নাউযূবিল্লাহ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি যখন তাদের এমন অবস্থা দেখলেন তখন তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ মুবারক
গ্রহণ করার পর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে পাশ্ববর্তী
এলাকার লোকদের সাথে চুক্তি সম্পাদন করার পরামর্শ করলেন। সুবহানাল্লাহ! পরবর্তীতে তিনি
পবিত্র মদীনা শরীফ উনার পার্শ্ববর্তী নিকট ও দূরের এলাকা সমূহের বিভিন্ন গোত্রের সাথে
শান্তিচুক্তি সম্পাদন করেন। সুবহানাল্লাহ! যাদের সাথে তিনি চুক্তি সম্পাদন করেছিলেন
তারা হলো। ১. ২য় হিজরী ছফর মাসে পবিত্র মদীনা শরীফ হতে ২৯ মাইল দূরবর্তী ওয়াদ্দান এলাকায়
এক অভিযানে গেলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি সেখানকার বানূ যামরাহ গোত্রের সঙ্গে সন্ধিচুক্তি সম্পাদন করেন। ২. অতঃপর ২য় হিজরীর
পবিত্র শাহরুল আ’যম শরীফে বুওয়াত্ব এলাকায় এক অভিযানে গিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের সাথেও সন্ধিচুক্তি করেন। ৩. একই
বছরের জুমাদাল উখরা মাসের ইয়ামবু’ ও পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যবর্তী যুল-উশাইরা এলাকায়
গিয়ে তিনি বানূ মুদলিজ গোত্রের সঙ্গে সন্ধিচুক্তি করেন।
এভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
পবিত্র মদীনাবাসী, আরব জাহান তথা সমস্ত
কায়িনাতে যেন মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার প্রেরিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের অনুসরণ ও অনুকরণের মাধ্যমে উনাদের সমস্ত বান্দা
ও উম্মত হাক্বীক্বি নৈকট্য ও সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করতে পারে সেই ব্যবস্থা মুবারক
করেন। সুবহানাল্লাহ! কিন্তু ইহুদীরা চির লা’নত প্রাপ্ত হওয়ায় বিভিন্ন রকম চক্রান্তের
রূপ ধারণ করলো। যার নেতৃত্বে ছিল তাদের নেতা ও ব্যঙ্গ কবি কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফ।
সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র
শা’ন মুবারকে, উনার পুতঃপবিত্রতম ও মহাসম্মানিত পবিত্রতা দানকারী
সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের শা’ন মুবারকে ও সম্মানিত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকেও নিয়ে কটুক্তি করাই ছিলো তার বদস্বভাব।
নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ! (সীরাতুর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
উল্লেখ্য যে, যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফের মধ্যে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন তখন এখানে মিশ্রিত
বাসিন্দা ছিলেন। অধিকাংশই ছিলেন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা।
এখানে মুশরিক, মূর্তিপূজক এবং ইহুদীরাও ছিলো। যারা ইহুদী ছিলো
তারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ও
উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে বিভিন্ন ভাবে কষ্ট দিতে
লাগলো। নাউযূবিল্লাহ! এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনাদেরকে সান্তনা দেয়ার লক্ষ্যে পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করেন।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
لَتُبْلَوُنَّ فِي أَمْوَالِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ وَلَتَسْمَعُنَّ
مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِن قَبْلِكُمْ وَمِنَ الَّذِينَ أَشْرَكُوا
أَذًى كَثِيرًا ۚ وَإِن تَصْبِرُوا وَتَتَّقُوا فَإِنَّ ذَٰلِكَ مِنْ عَزْمِ
الْأُمُورِ
অর্থ: “অবশ্যই আপনারা পরীক্ষায় পতিত হবেন, আপনাদের ধন-সম্পদে ও আপনাদের জীবনে। আর আপনারা অবশ্যই শুনবেন আপনাদের
পূর্ববর্তী আহলে কিতাব ও মুশরিকদের কাছ থেকে অনেক কষ্টদায়ক কথা। যদি আপনারা তাতে ধৈর্য
ধারণ করেন এবং খোদাভীতি অবলম্বন করেন, তবে অবশ্যই সেটাই হবে দৃঢ়
সংকল্পের কাজ।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ- ১৮৬)
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার শানে নযূল
সম্পর্কে হযরত আব্দুর রাজ্জার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত জুহুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি
উনার থেকে বর্ণনা করেন। এখানে কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফ সম্পর্কে বলা হয়েছে। এই
কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফ তার কবিতার মাধ্যমে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু উনাদের সম্পর্কে অবমাননাকর কথা-বার্তা বলতো। কবিতার মাধ্যমে সে মুশরিকদেরকে উত্তেজিত
করে তুলতো। নাউযূবিল্লাহ! অন্য দিকে হযরত হাস্সান বিন ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
তিনি কবিতার মাধ্যমে কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফের কবিতার উপযুক্ত জবাব দিতেন। সুবহানাল্লাহ!
(তাফসীরে মাযহারী
পরিশেষে কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফকে
হযরত মুহম্মদ ইবনে মাসলামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হত্যা করলেন। যা আমরা পূর্বেই
আলোচনা করেছি। যখন এই কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফ হত্যা হলো পরের দিন ইহুদীরা নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকটে এসে বলল, রাতের বেলায় কা’ব ইবনে আশরাফকে কে যেন হত্যা করেছে। তখন নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তার ব্যঙ্গ ও বিদ্রুপের
কথা তুলে ধরলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে বললেন, আপনারা একটা চুক্তি সম্পাদন করুন যাতে তারা যেসব গালি-গালাজ করে ও কষ্ট দেয়
তা থেকে তারা যেন বিরত থাকে। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মুসলমান তথা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম
উনাদের ও তাদের মাঝে একটা চুক্তিনামা লিখার নির্দেশ মুবারক দান করেন। সুবহানাল্লাহ!
(আবূ দাউদ শরীফ)
উল্লেখ্য যে, পবিত্র হিজরত মুবারকের ৩য় বছর পবিত্র শাহরুল আ’যম শরীফ কাট্টা
কাফির কা’ব ইবনে আশরাফের হত্যার পর চুক্তিনামা ২য় বার সংস্কার করা হয় ‘যাদুল মা’য়াদে’
উল্লেখ রয়েছে।
وَادَعَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلّمَ مَنْ
بِالْمَدِيْنَةِ مِنَ الْيَهُوْدِ، وَ كَتَبَ بَيْنَهُ وَ بَيْنَهُمْ كِتَاباً-
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফে অবস্থানকারী ইহুদীদের
সাথে চুক্তি মুবারক সম্পাদন করেন এবং তিনি উনার এবং তাদের মাঝে একটি দলীল লিপিবদ্ধ
করেন।” (মুখতাসারু সীরাতু রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আল ফুসূলু ফি সীরাতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা মতে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সাথে যে ইহুদীদের ও অন্যান্যদের
মধ্যে চুক্তিনামা লিপিবদ্ধ হয় সেটাই পবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ নামে পরিচিত। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র মদীনার সনদের চুক্তিনামা নিম্নে
উপাস্থাপন করা হলো।
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
১ - هَذَا كِتَابٌ مِنْ مُحَمَّدٍ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ
سَلّمَ بَيْنَ الْمُسْلِمِينَ وَالْمُؤْمِنِينَ مِنْ قُرَيْشٍ وَيَثْرِبَ وَمَنْ
تَبِعَهُمْ فَلَحِقَ بِهِمْ وَجَاهَدَ مَعَهُمْ
খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি বিতাড়িত শয়তান
থেকে। পবিত্র সনদের শর্তগুলো হচ্ছে,
১. ইহা লিখিত হচ্ছে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে পত্র। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের
মধ্যে যারা কুরাইশ ও পবিত্র মদীনা শরীফবাসী হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুম, মুসলমান উনাদের মধ্যে এবং যারা উনাদের অনুগামী,
যারা উনাদের সাথে মিলিত হবে বা উনাদের সাথে সম্মানিত জিহাদে অংশগ্রহন
করে মিলেমিশে কাজ করবেন। (আল ইদারাতু ফি আসরির রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম, পৃষ্ঠা ২৪৯)
২ - أَنَّهُمْ أُمَّةٌ وَاحِدَةٌ مِنْ دُونِ النَّاسِ.
২. হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনারা অন্যদের থেকে স্বতন্ত্র এক সুমহান জাতি হিসাবে গণ্য হবেন। সুবহানাল্লাহ!
৩ - الْمُهَاجِرُونَ مِنْ قُرَيْشٍ عَلَى رِبْعَتِهِمْ يَتَعَاقَلُونَ
بَيْنَهُمْ وَهُمْ يَفْدُونَ عَانِيهمْ بِالْمَعْرُوفِ وَالْقِسْطِ بَيْنَ
الْمُؤْمِنِينَ.
৩. সম্মানিত মুহাজির কুরাইশ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নিজ
অবস্থান মুবারকে থেকে রক্তপণ আদায় করবেন এবং উনাদের বন্দীদের মুক্তিপণ পরিশোধ করে তাদেরকে
মুক্ত করবেন। যাতে করে মু’মিন উনাদের মধ্যকার পারস্পারিক সম্পর্ক ইনসাফপূর্ণ হয় ও সঠিক
হয়।
৪ - وَبَنُو عَوْفٍ عَلَى رَبْعَتِهِمْ يَتَعَاقَلُونَ مَعَاقِلَهُمُ
الأُولَى وَكُلُّ طَائِفَةٍ تَفْدِى عَانِيَهَا بِالْمَعْرُوفِ وَالْقِسْطِ بَيْنَ
الْمُؤْمِنِينَ.
৪. ‘বানূ আওফের’ যারা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পূর্ব নিয়ম অনুযায়ি উনাদের রক্তপণ পরিশোধ করবেন এবং
প্রত্যেক পক্ষ্য উনাদের মুক্তিপণ বন্দীপন পরিশোধ করে বন্দীদের মুক্ত করবেন যাতে মু’মিন
উনাদের মধ্যকার পরস্পারিক সম্পর্ক ইনসাফপূর্ণ হয় ও সঠিক হয়।
৫ - وبنو الحارث (بن الخزرج) عَلَى رَبْعَتِهِمْ يَتَعَاقَلُونَ
مَعَاقِلَهُمُ الأُولَى وَكُلُّ طَائِفَةٍ تَفْدِى عَانِيَهَا بِالْمَعْرُوفِ
وَالْقِسْطِ بَيْنَ الْمُؤْمِنِينَ
.
৫. ‘বানূ হারিছ ইবনে খাযরাজের’ যারা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুম উনারা পূর্ব নিয়ম অনুযায়ি উনাদের রক্তপণ পরিশোধ করবেন এবং প্রত্যেক পক্ষ্য উনাদের
মুক্তিপণ বন্দীপন পরিশোধ করে বন্দীদের মুক্ত করবেন যাতে মু’মিন উনাদের মধ্যকার পরস্পারিক
সম্পর্ক ইনসাফপূর্ণ হয় ও সঠিক হয়।
৬ - وبنو ساعدة على ربعتهم يتعاقلون معاقلهم الأولى ، وَكُلُّ
طَائِفَةٍ تَفْدِى عَانِيَهَا بِالْمَعْرُوفِ وَالْقِسْطِ بَيْنَ الْمُؤْمِنِينَ .
৬. ‘বানূ সাওদায়ের’ যারা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা
পূর্ব নিয়ম অনুযায়ি উনাদের রক্তপণ পরিশোধ করবেন এবং প্রত্যেক পক্ষ উনাদের মুক্তিপণ
বন্দীপন পরিশোধ করে বন্দীদের মুক্ত করবেন যাতে মু’মিন উনাদের মধ্যকার পরস্পারিক সম্পর্ক
ইনসাফপূর্ণ হয় ও সঠিক হয়।
৭ - وَبَنُو جُشَمٍ عَلَى رِبْعَتِهِمْ يَتَعَاقَلُونَ مَعَاقِلَهُمْ
الْأُولَى ، وَكُلُّ طَائِفَةٍ تَفْدِى عَانِيَهَا بِالْمَعْرُوفِ وَالْقِسْطِ
بَيْنَ الْمُؤْمِنِينَ
.
৭. ‘বানূ জুশামের’ যারা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা
পূর্ব নিয়ম অনুযায়ি উনাদের রক্তপণ পরিশোধ করবেন এবং প্রত্যেক পক্ষ্য উনাদের মুক্তিপণ
বন্দীপন পরিশোধ করে বন্দীদের মুক্ত করবেন যাতে মু’মিন উনাদের মধ্যকার পরস্পারিক সম্পর্ক
ইনসাফপূর্ণ হয় ও সঠিক হয়।
৮ - وَبَنُو النّجّارِ عَلَى رِبْعَتِهِمْ يَتَعَاقَلُونَ
مَعَاقِلَهُمْ الْأُولَى ، وَكُلُّ طَائِفَةٍ تَفْدِى عَانِيَهَا بِالْمَعْرُوفِ
وَالْقِسْطِ بَيْنَ الْمُؤْمِنِينَ
.
৮. ‘বানূ নাজ্জারের’ যারা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা
পূর্ব নিয়ম অনুযায়ি উনাদের রক্তপণ পরিশোধ করবেন এবং প্রত্যেক পক্ষ্য উনাদের মুক্তিপণ
বন্দীপন পরিশোধ করে বন্দীদের মুক্ত করবেন যাতে মু’মিন উনাদের মধ্যকার পরস্পারিক সম্পর্ক
ইনসাফপূর্ণ হয় ও সঠিক হয়।
৯ - وَبَنُو عَمْرِو بْنِ عَوْفٍ عَلَى رِبْعَتِهِمْ يَتَعَاقَلُونَ
مَعَاقِلَهُمْ الْأُولَى ، وَكُلُّ
طَائِفَةٍ تَفْدِى عَانِيَهَا بِالْمَعْرُوفِ وَالْقِسْطِ بَيْنَ الْمُؤْمِنِينَ .
৯. ‘বানূ আমর বিন আওফের’, যারা হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পূর্ব নিয়ম অনুযায়ি উনাদের রক্তপণ পরিশোধ করবেন
এবং প্রত্যেক পক্ষ্য উনাদের মুক্তিপণ বন্দীপন পরিশোধ করে বন্দীদের মুক্ত করবেন যাতে
মু’মিন উনাদের মধ্যকার পরস্পারিক সম্পর্ক ইনসাফপূর্ণ হয় ও সঠিক হয়।
১০ - وَبَنُو النّبِيتِ عَلَى رِبْعَتِهِمْ يَتَعَاقَلُونَ
مَعَاقِلَهُمْ الْأُولَى ، وَكُلُّ طَائِفَةٍ تَفْدِى عَانِيَهَا بِالْمَعْرُوفِ
وَالْقِسْطِ بَيْنَ الْمُؤْمِنِينَ
.
১০. ‘বানূ নাবীতের’ যারা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা
পূর্ব নিয়ম অনুযায়ি উনাদের রক্তপণ পরিশোধ করবেন এবং প্রত্যেক পক্ষ উনাদের মুক্তিপণ
বন্দীপন পরিশোধ করে বন্দীদের মুক্ত করবেন যাতে মু’মিন উনাদের মধ্যকার পরস্পারিক সম্পর্ক
ইনসাফপূর্ণ হয় ও সঠিক হয়।
১১ - وَبَنُو الْأَوْسِ عَلَى رِبْعَتِهِمْ يَتَعَاقَلُونَ
مَعَاقِلَهُمْ الْأُولَى ، وَكُلُّ طَائِفَةٍ تَفْدِى عَانِيَهَا بِالْمَعْرُوفِ
وَالْقِسْطِ بَيْنَ الْمُؤْمِنِينَ.
১১. ‘বানূ আউসের’ যারা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পূর্ব
নিয়ম অনুযায়ি উনাদের রক্তপণ পরিশোধ করবেন এবং প্রত্যেক পক্ষ্য উনাদের মুক্তিপণ বন্দীপন
পরিশোধ করে বন্দীদের মুক্ত করবেন যাতে মু’মিন উনাদের মধ্যকার পরস্পারিক সম্পর্ক ইনসাফপূর্ণ
হয় ও সঠিক হয়।
১২ - وإن المؤمنين لا يتركون مفرحا بينهم أن يعطوه بالمعروف من فداء أو
عقل. وَأَنْ لَا يُحَالِفَ مُؤْمِنٌ مَوْلَى مُؤْمِنٍ دُونَهُ.
১২. হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা উনাদের মধ্যকার কোন
ঋণগ্রস্ত বা অভাবগ্রস্ত পরিবারকে ছেড়ে যাবেন না, সম্মানিত শরীয়ত সম্মতভাবে উনাদেরকে ফিদইয়া বা রক্তমূল্য না দেয়া
পর্যন্ত। কোন ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অন্য কোন ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের গোলামের সাথে কোনরূপ চুক্তি করবেন না।
১৩ - وَأَنّ الْمُؤْمِنِينَ الْمُتّقِينَ عَلَى مَنْ بَغَى مِنْهُمْ
أَوْ ابْتَغَى دَسِيعَةَ ظُلْمٍ أَوْ إثْمٍ أَوْ عُدْوَانٍ ، أَوْ فَسَادٍ بَيْنَ
الْمُؤْمِنِينَ وَأَنّ أَيْدِيَهُمْ عَلَيْهِ جَمِيعًا ، وَأَنّ أَيْدِيَهُمْ
عَلَيْهِ جَمِيعًا.
১৩.মু’মিন-মুত্তাক্বী উনাদের মধ্যে কেউ বিদ্রোহ করলে বা বড় ধরনের যুলুম করলে, পাপ করলে, শত্রুতা করলে কিংবা মু’মিনদের
মধ্যে বিশৃংখলা সৃষ্টি করলে তার বিরোধিতা সকলে করবেন এবং সকলে তার বিরুদ্ধে একত্রিত
হবেন। যদিও ঐ ব্যক্তি উনাদের কোন একজনের সন্তান হয়।
১৪ - وَلَا يَقْتُلُ مُؤْمِنٌ مُؤْمِنًا فِي كَافِرٍ ، وَلاَ يَنْصُرُ
كَافِرًا عَلَى مُؤْمِنٍ.
১৪. কোন মু’মিন কাফিরের বিনিময়ে কোন মু’মিনকে হত্যা করবেন না এবং মু’মিনদের বিরুদ্ধে
কোন কাফিরকে সাহায্য করবেন না।
১৫ - وَإِنّ ذِمّةَ اللّهِ وَاحِدَةٌ يُجِيرُ عَلَيْهِمْ أَدْنَاهُمْ ،
وَإِنّ الْمُؤْمِنِينَ بَعْضُهُمْ مَوَالِي بَعْضٍ دُونَ النّاسِ.
১৫. মহান আল্লাহ পাক উনার যিম্মা এক। উনারা উনাদের অধীনস্তদের আশ্রয় দিবেন। আর
মু’মিন উনারা একে অপরের বন্ধু, অন্যদের থেকে।
وَإِنّهُ مَنْ تَبِعَنَا مِنْ يَهُودَ فَإِنّ لَهُ النّصْرَ
وَالْأُسْوَةَ غَيْرَ مَظْلُومِينَ وَلَا مُتَنَاصِرِينَ عَلَيْهِمْ
১৬. আর ইহুদীদের মধ্যে যারা আমাদের আনুগত্য করবে, তারা আমাদের পক্ষ থেকে সাহায্য ও উত্তম আচরণ পাবে। তাদের উপর যুলুম করা হবে না আর
তাদের উপর কেউ প্রতিশোধ নিতে পারবে না।
وَإِنّ سِلْمَ الْمُؤْمِنِينَ وَاحِدَةٌ لَا يُسَالَمُ مُؤْمِنٌ
دُونَ مُؤْمِنٍ فِي قِتَالٍ . فِي سَبِيلِ اللّهِ تَعَالَى إلّا عَلَى سَوَاءٍ
وَعَدْلٍ بَيْنَهُمْ
১৭. আর মুসলমান তথা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সন্ধি অভিন্ন সন্ধি। মহান আল্লাহ পাক উনার পথে সম্মানিত
জিহাদে কোন মু’মিন ব্যক্তি অপর কোন মু’মিন ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে শত্রুর সাথে সন্ধি করতে
পারবেন না, যাবৎ না এ সন্ধি সকলের
জন্যে সমান ও ন্যায়ানুগ হবে।
وَإِنّ كُلّ غَازِيَةٍ غَزَتْ مَعَنَا يَعْقُبُ بَعْضُهَا بَعْضًا
،
১৮. এবং আমাদের পক্ষের শক্তিরূপে যারা আমাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জিহাদ করবে, তাদের একে অপরের পিছনে থাকবে।
وَإِنّ الْمُؤْمِنِينَ يُبِيءُ بَعْضُهُمْ عَلَى بَعْضٍ بِمَا
نَالَ دِمَاءَهُمْ فِي سَبِيلِ اللّهِ
১৯. নিশ্চয়ই মু’মিন তথা হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা একে অপরকে হিফাযত করবেন, যখন মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তার উনাদের রক্ত মুবারক প্রবাহিত
হবে। সুবহানাল্লাহ!
وَإِنّ الْمُؤْمِنِينَ الْمُتّقِينَ عَلَى أَحْسَنِ هَدْيٍ
وَأَقْوَمِهِ
২০. আর এতে কোন সন্দেহ নেই যে, মু’মিন মুত্তাকী তথা
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা সব চাইতে সহজ-সরল ও সঠিক পথে
রয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
وَإِنّهُ لَا يُجِيرُ مُشْرِكٌ مَالًا لِقُرَيْشِ وَلَا نَفْسًا ،
وَلَا يَحُولُ دُونَهُ عَلَى مُؤْمِنٍ
২১. আর কোন মুশরিক কোন কুরাইশদের সম্পদ বা প্রাণের আশ্রয়দাতা হবে না এবং কোন মু’মিন
তথা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে এ ব্যাপারে বাধা দিতে
পারবে না।
وَإِنّهُ مَنْ اعْتَبَطَ مُؤْمِنًا قَتْلًا عَنْ بَيّنَةٍ فَإِنّهُ
قُوّدَ بِهِ إلّا أَنْ يَرْضَى وَلِيّ الْمَقْتُولِ وَإِنّ الْمُؤْمِنِينَ
عَلَيْهِ كَافّةً وَلَا يَحِلّ لَهُمْ إلّا قِيَامٌ عَلَيْهِ
২২. আর যে ব্যক্তি কোন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে বিনা দোষে শহীদ করে ও তার সাক্ষ্য-প্রমাণে তা
প্রমাণিতও হয়, তবে তার উপর থেকে ক্বিছাছ
গ্রহণ করা হবে, হত্যার বদলে তাকে হত্যা করা হবে। হ্যাঁ,
যদি শাহাদতী শান মুবারক গ্রহণককারী ব্যক্তির উত্তরাধিকারী রক্তপণ নিয়ে
তাকে ছেড়ে দিতে রাযী হয়। আর সমস্ত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম
উনাদের তাতে সায় থাকলে তাহলে স্বতন্ত্র কথা। এ ছাড়া আর কোন বিকল্প ব্যবস্থা নেই অর্থাৎ
এটা অবশ্যই করতে হবে।
وَإِنّهُ لَا يَحِلّ لِمُؤْمِنِ أَقَرّ بِمَا فِي هَذِهِ
الصّحِيفَةِ وَآمَنَ بِاَللّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أَنْ يَنْصُرَ مُحْدِثًا ،
وَلَا يُؤْوِيهِ وَأَنّهُ مَنْ نَصَرَهُ أَوْ آوَاهُ فَإِنّ عَلَيْهِ لَعْنَةَ
اللّهِ وَغَضَبَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُؤْخَذُ مِنْهُ صَرْفٌ وَلَا عَدْلٌ
২৩. আর হযরত ছাহবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা এই লিপি বা সন্ধির
বক্তব্য স্বীকার করে নিয়েছেন। আর যারা মহান আল্লাহ পাক উনার উপর ও শেষ দিবসের প্রতি
ঈমান এনেছেন, উনাদের জন্যে কোন বিদয়াতীকে
সাহায্য করা বা তাকে আশ্রয় দান বৈধ হবে না। যে ব্যক্তি তাকে সাহায্য করবে বা আশ্রয়
দিবে তার প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত ও তার উপর গযব পতিত হবে ক্বিয়ামতের দিনে
এবং তার থেকে কোন মুক্তিপণ বা বদলা গহণ করা হবে না।
0 Comments:
Post a Comment