قال حضرت ابن إسحاق رحمة الله عليه، حدثني حضرت محمد بن يحيى بن حبان رحمة الله عليه حتى وقف على شيخ من العرب فسأله عن قريش وعن حضرت محمد صلى الله عليه و سلم وأصحابه وما بلغه عنهم فقال الشيخ لا أخبركما حتى تخبراني ممن أنتما فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا أخبرتنا أخبرناك قال أذاك بذاك قال نعم- قال الشيخ فإنه بلغني أن حضرت محمدا صلى الله عليه و سلم وأصحابه خرجوا يوم كذا وكذا فإن كان صدق الذي أخبرني فهم اليوم بمكان كذا وكذا للمكان الذي به رسول الله صلى الله عليه وسلم وبلغني ان قريشا خرجوا يوم كذا وكذا فإن كان الذي أخبرني صدقني فهم اليوم بمكان كذا وكذا للمكان الذي فيه قريش فلما فرغ من خبره قال ممن أنتما فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم نحن من ماء (أي من ماء دافق) ثم انصرف عنه
قال حضرت ابن هشام رحمة الله عليه يقال ذلك الشيخ سفيان الضمري.
অর্থ: হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি
তিনি বলেন। আমার কাছে হযরত মুহম্মদ ইবনে ইয়াহইয়া ইবনে হাব্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি
তিনি বর্ণনা করেছেন। উনারা কিছুদূর গিয়ে আরবের জৈনক ব্যক্তির সাক্ষাৎ পেলেন। উনারা
ঐ বৃদ্ধকে জিজ্ঞেস করলেন সে মক্কার কুরাইশদের কোন তৎপরতার কথা জানে কি না? কিংবা
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের
কোন খবর জানা আছে কি না? বৃদ্ধ লোকটি বললো আপনারা কারা?
আপনারা আগে বলুন অন্যথায় আমি বলবো না। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক
করলেন আমরা যা জানতে চেয়েছি তা আগে বলো তারপর আমরা আমাদের পরিচয় দিব। বৃদ্ধ লোকটি
বলল খবরের বিনিময় পরিচয়। তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন বৃদ্ধ লোকটি
বলল শুনেছি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম
উনাদের নিয়ে অমুক দিন ছফর মুবারক শুরু করেছেন। তা সত্যে হলে, উনাদের এখন অমুক স্থানে থাকার কথা। আর আমি এটাও সংবাদ পেয়েছি যে, কুরাইশ কাফির মুশরিকরা অমুক দিন বের হয়েছে। এ সংবাদ যদি সত্যি হয় তাহলে
তারা আজ অমুক স্থানে রয়েছে। বস্তুত কুরাইশ কাফির মুশরিকরা তখন সেখানেই ছিলো,
বৃদ্ধ লোকটি যে স্থানের নাম বলেছিলো। বৃদ্ধ লোকটি তার খবর দেওয়া শেষ
করে জিজ্ঞেস করলো, আপনারা কোথা থেকে এসেছেন? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন আমরা পানি থেকে এসেছি। (অর্থাৎ
স্ববেগে নিসৃত সম্মানিত পানি থেকে আমরা সৃষ্টি। সুবহানাল্লাহ! ) এ কথা বলে নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি বৃদ্ধ লোকটির কাছ থেকে চলে গেলেন। সুবহানাল্লাহ! ইবনে হিশাম
রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ঐ বৃদ্ধ লোকটির নাম ছিলো
সুফিয়ান জামরী। (সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম, জিলদ ২য়, পৃষ্ঠা নং- ২৭৩, সীরাতুল
হালাবিয়্যাহ, শরহুস সুনানে আবী দাউদ শরীফ, আর রহীকুল মাখতুম, উয়ূনুল আছার ফি ফুনূনুল মাগাযী,
মাগাযিল ওয়াকিদী, আস সীরাতু লিইবনে হাব্বান,
আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, তারিখল উমাম ওয়াল
মুলূক্ব)
প্রসিদ্ধ সীরত ও
তারিখ গ্রন্থ সমূহে উল্লেখ রয়েছে,
قال حضرت ابن إسحاق رحمة الله عليه ثم رجع رسول الله صلى الله عليه وسلم الى أصحابه فلما أمسى بعث حضرت علي بن أبي طالب عليه السلام و حضرت الزبير بن العوام رضى الله تعالى عنه و حضرت سعد بن أبي وقاص رضى الله تعالى عنه في نفر من أصحابه الى ماء بدر يلتمسون الخبر له عليه كما حدثني يزيد بن رومان عن عروة بن الزبير فأصابوا رواية لقريش فيها أسلم غلام بني الحجاج وعريض أبو يسار غلام بني العاص بن سعيد فأتوا بهما فسألوهما و رسول الله صلى الله عليه وسلم قائم يصلي فقالا نحن سقاة قريش بعثونا نسقيهم من الماء .... والله إنما لقريش أخبراني عن قريش قالا هم والله وراء هذا الكثيب الذي ترى بالعدوة القصوى والكثيب العقنقل
فقال لهما رسول الله صلى الله عليه وسلم كم القوم قالا كثيرا قال ما عدتهم قالا لا ندري قال كم ينحرون كل يوم قال يوما تسعا ويوما عشرا فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم القوم فيما بين التسع مئة والألف ثم قال لهما فمن فيهم من أشراف قريش قالا عتبة ابن ربيعة وشيبة بن ربيعة وأبو البختري بن هشام وحكيم بن حزام ونوفل بن خويلد والحارث بن عامر بن نوفل وطعيمة بن عدي ابن نوفل والنضر بن الحارث زمعة بن الأسود وأبو جهل بن هشام وأمية بن خلف ونبيه ومنبه ابنا الحجاج وسهيل بن عمرو وعمرو ابن عبد ود فأقبل رسول الله صلى الله عليه وسلم على الناس فقال هذه مكة قد ألقت إليكم أفلاذ كبدها.
অর্থ: হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি
তিনি বলেন, এরপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের নিকট
ফিরে গেলেন। যখন সন্ধা ঘনিয়ে আসলো তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু
ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম, হযরত যুবাইর ইবনে আওওয়াম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত সা’দ
ইবনে আবী ওয়াক্কাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদেরকে একদল হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সাথে দিয়ে বদরের কূপের দিকে তথ্য অনুসন্ধানের
জন্য পাঠালেন। হযরত ইয়াযীদ ইবনে রূমান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত উরওয়া ইবনে
যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে এ কথা আমার নিকট বর্ণনা করেছেন। উনারা
সেখানে গিয়ে কুরাইশদের পানি বহনকারী একপাল উট দেখতে পেলেন এবং তার মধ্যে হাজ্জাজ
গোত্রের গোলাম আসলাম এবং বনূ আস ইবনে সাঈদের গোলাম আবূ ইয়াসারকে দেখতে পেলেন।
উনারা ঐ লোক দু’টিকে সাথে নিয়ে এলেন এবং জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলেন। তখন নূরে
মুজাসসাম.হাবীবুল্লাহ হুযূও পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দাঁড়িয়ে ছলাত
বা নামায মুবারক আদায় করছিলেন। অতপর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুম উনারা গোলাম দু’টিকে জিজ্ঞেস করছিলেন তোমরা কারা? তারা
বলল, আমরা কুরাইশ গোত্রের পানি সরবরাহকারী। তারা আমাদের
খাবার পানি নিতে এখানে পাঠিয়েছে।...... নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদেরকে দেখে বললেন মহান আল্লাহ
পাক উনার ক্বসম! নিশ্চয়ই এরা কুরাইশদের লোক। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজে তাদেরকে
জিজ্ঞেস করলেন, হে যুবকদ্বয়! তোমরা আমাকে কুরাইশ বাহিনীর খবর
বল। তখন তারা জবাব দিলো, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! ঐ যে
দূরে বালুর টিলাটি দেখতে পাচ্ছেন এর পিছনেই কুরাইশ তথা শত্রুদের অবস্থান। ঐ টিলার
নাম ছিলো আকানকাল। পরে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, ওরা
সংখ্যায় কত? আসলাম ও আরীদ বলল, তারা
সংখ্যায় অনেক। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদেরকে আবার জিজ্ঞাসা করলেন, তাদের সমরপ্রস্তুতি কিরূপ? তারা বলল আমরা জানি না।
তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন ওরা প্রতিদিন কয়টি উট যবেহ করে? তারা
বলল কোন দিন নয়টি আবার কোন দিন দশটি। তখন
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, তাহলে ওদের সংখ্যা
নয়শত থেকে এক হাজারের মধ্যে হবে। তারপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, কুরাইশদের মধ্যে কে কে এসেছে? তারা বলল, উতবা ইবনে রবীয়া, শায়বা ইবনে রবীয়া, আবুল বুখতারী ইবনে হিশাম, হাকীম ইবনে হিযাম, নাওফিল ইবনে খুয়াইলিদ, হারিস ইবনে আমির ইবনে নাওফাল,
তুআয়মা ইবনে আদী ইবনে নাওফাল, নজর ইবনে হারিছ,
যাময়া ইবনে আসওয়াদ, আবূ জাহিল ইবনে হিশাম,
উমাইয়া ইবনে খালফ, হাজ্জাজের দু’পুত্র নাবীহ ও
মুনাব্বিহ, সুহাইল ইবনে আমর, উমর ইবনে
আব্দে উদ। এরপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুরøাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ্আলাইহি ওায়া
সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিায়াল্লাহু তায়ালা উনাদেরকে লক্ষ করে বললেন, পবিত্র
মক্কা শরীফ উনার কলিজার টুকরাগুলো তোমাদের মোকাবিলায় পাঠিয়েছে।
প্রসিদ্ধ সীরত ও
তারিখ গ্রন্থসমূহে উল্লেখ রয়েছ,
قال حضرت ابن إسحاق رحمة الله عليه وكان حضرت بسبس بن عمرو حضرت و حضرت عدي بن ابي الزغباء رضى الله تعالى عنه قد مضيا حتى نزلا بدرا فأنااخا الى تل قريب من الماء ثم أخذا شنا لهما يسقيان فيه و مجدي بن عمرو الجهني على الماء فسمع حضرت عدي رضى الله تعالى عنه و حضرت بسبس رضى الله تعالى عنه جاريتن من جواري الحاضر وهما يتلازمان على الماء والملزومة
تقول لصاحبتها إنما تأتي العير غدا أو بعد غد فأعمل لهم ثم أقضيك الذي لك قال مجدي صدقت ثم خلص بينهما وسمع ذلك حضرت عدي رضى الله تعالى عنه و حضرت بسبس رضى الله تعالى عنه فجلسا على بعيرهما ثم انطلقا حتى أتيا رسول الله صلى الله عليه وسلم فأخبراه بما سمعا
অর্থ: হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি
তিনি বলেন, ইতিপূর্বে হযরত বাসবাস ইবনে আমর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আদী ইবনে আবূ যুগবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
উনারা টহল দিতে দিতে বদর প্রান্তরে এসে উনারা থামলেন। অতপর উনারা পানির কূপের নিকটবর্তী
একটি টিলার কাছে গিয়ে উট থামিয়ে নিচে অবতরণ করে একটি মশকে পানি ভর্তি করে নিলেন।
তখন মাজদী ইবনে আমর জুহানী সে পানির পাশেই ছিলো। পানির কূপের নিকটেই অজ্ঞাত লোকদের
দুটো বাঁদীও ছিলো। তাদের একজন অপরজনকে তার পাওনা পরিশোধ করতে বলল। তখন ঋণগ্রস্ত
বাঁদীটি বলল, কাফিলা কালকে কিংবা পরশুই আসবে। তখন আমি তাদের
কাজ করে তোমার পাওনা দিয়ে দিব। তখন মাজদী বললো, তুমি ঠিকই
বলেছ। তারপর সে উভয়ের বিবাদ মিটিয়ে দিলো। হযরত আদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও
হযরত বাসবাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এ কথোপকথন শুনে উনাদের উটে চড়ে নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট
ফিরে গেলেন এবং যা উনারা শুনেছেন তা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অবহিত করলেন। সুবহানাল্লাহ!
(সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম, জিলদ
২য়, পৃষ্ঠা নং- ২৭৪-২৭৫, শরহুস সুনানে
আবী দাউদ শরীফ, আর রহীকুল মাখতুম, সীরাতুল
হালাবিয়্যাহ, উয়ূনুল আছার ফি ফুনূনুল মাগাযী, মাগাযিল ওয়াকিদী, আস সীরাতু লিইবনে হাব্বান, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, তারিখল উমাম ওয়াল মুলূক্ব)
অপরদিকে কুরাইশরা ‘জুহফা’ নামক স্থানে তাদের
যাত্রা বিরতি করলো। তখন তাদের দলের একজন জুহাইম ইবনে সাল্ত তিনি স্বপ্নে দেখলেন যে, একটি
লোক ঘোড়ার পিঠে চড়ে এসে থামল। আর তার সাথে একটা উটও ছিল। তারপর সে বলল, উতবা ইবনে রবী’আ, শায়বা ইবনে রবী’আ, আবুল হাকাম ইবনে হিশাম (আবুজাহিল), উমাইয়া ইবনে খালফ
এবং অমুক অমুক নিহত হয়েছে। এভাবে বদর জিহাদে যে সব কুরাইশ কাফির মুশরিক নেতা নিহত
হয়েছিল তাদের নাম সে উল্লেখ করল। এরপর আমি দেখলাম, সে
ব্যক্তি তার উটটিকে রক্তাক্ত করে কুরাইশ বাহিনির মধ্যে ছেড়ে দিল। বাহিনীর কোন একটি
শিবিরও অবশিষ্ট থাকল না, যাকে সে নিজের রক্তে রঞ্জিত করল না।
জুহাইম ইবনে সালত তার এই স্বপ্নের বিষয় আবূ জাহিলের কাছে বর্ণনা করলে সে বলল,
এ দেখি আব্দুল মুত্তালিব গোষ্ঠির আর এক নবী! নাউযূবিল্লাহ! যদি
মুকাবিলা হয় তাহলে সামনেই জানা হবে কে নিহত হয়। (সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম, ২য় খন্ড পৃষ্ঠা নং- ২৭৬, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, তারিখে উমাম ওয়া মুলূক ও
মাগাযিউল ওয়াক্বিদী)
সম্মানিত জিহাদ উনার প্রস্তুতি মুবারক: নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে
নিয়ে পবিত্র বদরে তাশরীফ মুবারক নিলেন এবং আউস গোত্রের সাইয়্যিদ (সরদার) হযরত সা’দ
ইবনে মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার প্রস্তাবনায় সম্মানিত জিহাদের ময়দানের
উত্তর পূর্ব পাশ্বে একটি টিলার উপরে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য সর্বপ্রথম তাঁবু মুবারক তৈরীর
সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সেটাই ‘সীরতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম- ইবনে হিশাম, সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম- ইবনে কাছীর, সীরাতু লিইবনে হাব্বান, তাফসীরে মাযহারী ও আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ ইত্যাদি কিতাব সমূহে উল্লেখ
রয়েছে,
قَالَ حضرت ابْنُ إسْحَاقَ رحمة الله عليه فَحَدّثَنِي
حضرت عَبْدُ اللّهِ بْنُ أَبِي بَكْرٍ رحمة الله عليه أَنّهُ حَدّثَ أَنّ حضرت سَعْدَ بْنَ مُعَاذٍ رضى الله تعالى عله قَالَ يَا نَبِيّ اللّهِ صلى الله عليه و سلم أَلَا نَبْنِي لَك عَرِيشًا تَكُونُ فِيهِ نُعِدّ عِنْدَك رَكَائِبَك ، ثُمّ نَلْقَى عَدُوّنَا ، فَإِنْ أَعَزّنَا اللّهُ وَأَظْهَرَنَا عَلَى عَدُوّنَا ، كَانَ ذَلِكَ مَا أَحْبَبْنَا ، وَإِنْ كَانَتْ الْأُخْرَى ، جَلَسَتْ عَلَى رَكَائِبِك ، فَلَحِقَتْ بِمَنْ وَرَاءَنَا ، فَقَدْ تَخَلّفَ عَنْك أَقْوَامٌ يَا نَبِيّ اللّهِ صلى الله عليه و سلم مَا نَحْنُ بِأَشَدّ لَك حُبّا مِنْهُمْ وَلَوْ ظَنّوا أَنّك تَلْقَى حَرْبًا مَا تَخَلّفُوا عَنْك ، يَمْنَعُك اللّهُ بِهِمْ يُنَاصِحُونَكَ وَيُجَاهِدُونَ مَعَك ، فَأَثْنَى عَلَيْهِ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ خَيْرًا ، وَدَعَا لَهُ بِخَيْرِ . ثُمّ بُنِيَ لِرَسُولِ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ عَرِيشٌ فَكَانَ فِيهِ .
অর্থ: “হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি
তিনি বলেন। আমার কাছে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবূ বকর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি
বর্ণনা করেছেন। নিশ্চয়ই উনার কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত সা’দ ইবনে মুয়ায
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি। হযরত সা’দ ইবনে মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
তিনি বলেন, হে মহান আল্লাহ পাক উনার নবী-রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবীইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! দয়া করে আপনি
আমাদের অনুমতি দিন, আমরা আপনার জন্য একটি সুরক্ষিত তাঁবু
মুবারক বানাতে চাই। আপনি সেই তাঁবু মুবারকে তাশরীফ মুবারক নিয়ে অবস্থান মুবারক
করবেন। সুবহানাল্লাহ! আর এই তাঁবু মুবারকের কাছেই আপনার সম্মানিত বাহন মুবারক
প্রস্তুত করে রাখবো। তারপর আমরা শত্রুর মোকাবিলায় জিহাদ করবো। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ
পাক তিনি এই জিহাদ মুবারকে আমাদেরকে বিজয় দান করবেন আর আমাদের আশাও পূরণ হবে।
সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি না করুন আর যদি তা না হয় তাহলে আপনি এই
সাওয়ারী মুবারকে আরোহণ করে আমাদের সেই সব মুসলমান উনাদের কাছে চলে যাবেন যারা
আমাদের সাথে জিহাদে আসতে পারেননি। যারা আমাদের চেয়ে আপনাকে বেশি মুহব্বত করে
থাকেন। ঐ সমস্ত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা আমাদের সাথে
এ জন্য আসতে পারেননি যে, আপনি জিহাদে যাবেন তা উনারা জানতেন
না। আর যদি উনারা জানতেন আপনি কোন জিহাদে যাচ্ছেন বা শত্রুর মুখোমুখি হতে হবে
তাহলে উনারা কিছুতেই পিছনে থাকতেন না। অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদের মাধ্যমে
আপনার সম্মানিত খিদমত মুবারকের আঞ্জাম নিতেন। সুবহানাল্লাহ! আর অবশ্যই উনারা আপনার
পক্ষে খুবই নিষ্ঠার সাথে জিহাদে অংশগ্রহণ করতেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত সা’দ
ইবনে মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কথা মুবারক শুনে খুবই খুশি হলেন এবং
উনার জন্য খাইর বা কল্যাণের দোয়া মুবারকও করলেন। সুবহানাল্লাহ! তারপর নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার জন্য একটি সুরক্ষিত তাঁবু মুবারক তৈরী করা হলো এবং তিনি সেই তাঁবু
মুবারক উনার মধ্যে অবস্থান মুবারক গ্রহণ করলেন”। সুবহানাল্লাহ!
উক্ত ইতিহাস
গ্রন্থসমূহে আরো উল্লেখ রয়েছে, “হযরত ইবনে ইসহাক্ব
রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বলেন, বনূ সালামা গোত্রের অনেক
লোকের সাথে আমার আলোচনা হয়েছে। উনারা বলেছেন, ঐ সময় হযরত
হুবাব ইবনে মুনযির ইবনে জামূহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি প্রস্তাব মুবারক
দিলেন ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দয়া করে! এখন যে স্থানে আপনি অবস্থান মুবারক
নিয়েছেন তা থেকে একটু সামনে পানির কূপের নিকটবর্তী অবস্থান মুবারক গ্রহণ করুন।
আপনি সেখানে তাশরীফ মুবারক নিলে আমরা আশেপাশের যত কূপ আছে তা বন্ধ করে দিবো। এরপর
একটা জায়গায় পানির কূপ তৈরি করে তাতে আমরা পানি ভর্তি করে রখবো। কুরাইশরা টিলার
উচ্চভূমিতে অবস্থান করছে। জিহাদের সময় আমরা পানি পান করবো কিন্তু তারা পানি পাবে
না। তখন একমাত্র পানির সঞ্চয়টি থাকবে আমাদের দখলে। সুবহানাল্লাহ! নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন-
আপনি খুব সুন্দর একটা পরামর্শ দিয়েছেন। এরপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একটু সামনে গিয়ে পানির কূপগুলো দখলে নিলেন।
তারপর জিহাদের অন্যান্য সব ব্যবস্থা শেষ করলেন”। সুবহানাল্লাহ!
প্রসিদ্ধ তারিখ
গ্রন্থসমূহে হযরত উমাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে,
عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال بينا رسول الله صلى الله عليه وسلم يجمع الاقماص و حضرت جبريل عليه السلام عن يمينه إذا أتاه ملك من الملائكة فقال يا محمد صلى الله عليه و سلم إن الله يقرأ عليك السلام فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم " هو السلام ومنه السلام وإليه السلام " فقال الملك إن الله يقول لك أن الامر الذي أمرك به حضرت الحباب بن المنذر رضى الله تعالى عنه، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم يا جبريل هل تعرف هذا ؟ فقال ما كل أهل السماء أعرف وأنه لصادق وما هو بشيطان فنهض رسول الله صلى الله عليه وسلم ومن معه من الناس فسار حتى أتى أدنى ماء من القوم نزل عليه ثم أمر بالقلب فعورت، وبنى حوضا على القليب الذي نزل عليه فملئ ماء ثم قذفوا فيه الآنية.
অর্থ: হযরত ইবনে
আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে জিহাদের জন্য প্রস্তুত
করছিলেন, তখন হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি উনার ডান পার্শ
মুবারকে ছিলেন। এমন সময় একজন হযরত ফেরেস্তা আলাইহিস সালাম! তিনি উপস্থিত হয়ে বললেন,
ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে সালাম জানিয়েছেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, ‘মহান আল্লাহ পাক তিনিতো নিজেই সালাম। আর উনার থেকে সালাম আসে এবং উনার
কাছে সালাম প্রত্যাবর্তন করে।’ উক্ত হযরত ফেরেস্তা আলাইহিস সালাম তিনি বললেন,
মহান আল্লাহ তিনি আপনাকে জানিয়েছেন যে, হযরত
হুবাব ইবনে মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যে প্রস্তাব বা পরামর্শ দিয়েছেন
তা আপনি গ্রহণ করুন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে বললেন, আপনি
কি এই ফেরেস্তা উনাকে চিনেন? হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি
বললেন আসমানে সমস্ত হযরত ফেরেস্তা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে আমি চিনি না। তবে
নিশ্চয়ই তিনি ফেরেস্তা। এরপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে
নিয়ে সেখান থেকে সামনে অগ্রসর হলেন এবং শত্রুদের নিকটবর্তী কূপের নিকট অবস্থান
গ্রহণ করলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার নির্দেশ মুবারকেই আশপাশের সমস্ত কুপ নষ্ট করে দেয়া হলো। অতপর যেখানে উনারা
অবতরণ করেছিলেন সেখানে আরেকটি নতুন কূপ তৈরি করে তাতে পানি ভর্তি করে রাখলেন এবং
পানি উঠার পাত্রও রেখে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! (যার ফলে কাফির-মুশরিকদের কোনো পান
করার মতো পানি অবশিষ্ট থাকলো না।) (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া জিলদ-৩, পৃষ্ঠা নং-৩২৭,
সীরাতুন নবুওওয়াহ- ইবনে কাছীর জিলদ-২ পৃষ্ঠা নং- ৪০২, আল ফছূলু ফি সীরাতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
0 Comments:
Post a Comment