সম্মানিত হিজরীর তৃতীয় বৎসর সংঘটিত হয়
সম্মানিত গাতফানের জিহাদ। এই সম্মানিত জিহাদকে আনমারের জিহাদ বা যী আমরের জিহাদও বলা
হয়। স্থানটি ছিলো নজদের অন্তর্ভূক্ত। পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’দাদ (তথা পবিত্র
১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ) এ জিহাদ সংঘটিত হয়েছিল। অন্য বর্ণনায় ৩য় হিজরী পবিত্র মুহররামুল
হারাম শরীফে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
গাতফান গোত্রকে তা’লীম দেয়ার উদ্দেশ্যে নজদের পথে বের হন। এই সম্মানিত জিহাদ উনার কারণ
ছিলো, সংবাদ প্রচারিত হয়ে গেলো যে, বানী ছা’লাবা এবং বানী মুহারিবের লোকজন নজদের সীমামা নামক স্থানে এসে সমবেত
হয়েছে। তারা পবিত্র মদীনা শরীফ উনার পাশ্ববর্তী এলাকায় লুটতারাজ চালাতে চায়। নাউযূবিল্লাহ!
তাদের একত্রিত করেছেন দাছুর ইবনে হারিছ মাহারেবী নামক এক ব্যক্তি। খতীবে বাগদাদী বলেছে,
তার নাম ছিলো নাওয়াছ। সে ছিলো এক বেপরোওয়া যুদ্ধবাজ।
স্মরণীয় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি মুসলমান তথা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে একত্রিত
হতে বললেন। তারপর তিনি চারশ’ পঞ্চাশজন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম
উনাদের নিয়ে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বেরিয়ে পড়লেন। সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস
সালাম উনাকে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার প্রতিনিধি নিযুক্ত করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন সেখানে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করলেন
তখন তারা সেস্থান থেকে পালিয়ে বিভিন্ন পাহাড়ের মধ্যে আত্মগোপন করলো। হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বানী ছা’লাবার এক লোককে সামনে পেয়ে তাকে ধরে
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে আনলেন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাকে সম্মানিত
দ্বীন ইসলাম উনার দাওয়াত দিলেন। সেই ব্যক্তি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করলেন। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এই নতুন
ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে সাইয়্যিদুনা হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু উনার সঙ্গী করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! এই ব্যক্তি ছাড়া তাদের আর কাউকে খুঁজে পাওয়া
গেলো না। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
সেখানে ছফর মাস অবস্থান মুবারক করলেন। কিন্তু কেউই উনাদের মুকাবিলা করার জন্য আসলো
না। ফলে পবিত্র শাহরুল আ’যম (পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস) কোন জিহাদ ছাড়াই নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফে ফিরে
আসেন। সুবহানাল্লাহ!
এ ছফর মুবারকে পথিমধ্যে হঠাৎ বৃষ্টি শুরু
হলো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং
উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সকলেই বৃষ্টির পানিতে ভিজে
যান। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একটি
গাছের নিচে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করলেন। তিনি সেখানে বিশ্রাম মুবারক গ্রহণ করছিলেন।
সুবহানাল্লাহ! সেই এলাকায় এক যুদ্ধবাজ ব্যক্তি ছিলো, শত্রুরা গিয়ে তাকে সংবাদ দিলো যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একাকি একটি গাছের নিচে অবস্থান মুবারক করছেন।
সুবহানাল্লাহ! ওই ব্যক্তি দ্রুত আসলো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে। সেই ব্যক্তির নাম ছিলো দাছুর। মহান আল্লাহ পাক উনার
হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একাই গাছের নিচে বিশ্রাম মুবারক
গ্রহণ করছেন। উনার কাছাকাছি আর কেউ ছিলেন না। লোকজন দাছুরকে বলল, অবশ্যই তুমি উনাকে কাবু করতে পারবে। নাউযূবিল্লাহ! দাছুর নামক লোকটি তরবারি
উঠিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শিয়র
মুবারকের সামনে দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এখন আপনাকে কে হিফাযত করবেন? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
ইরশাদ মুবারক করলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে হিফাযত মুবারক
করবেন! সুবহানাল্লাহ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার কথা মুবারক শেষ না হতেই সেখানে উপস্থিত হলেন খাদিম হযরত জিবরীল আলাইহিস
সালাম তিনি।
হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি দাছূরের বুকে আঘাত করলেন। সঙ্গে সঙ্গে সে মাটিতে
পড়ে গেল। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
তার হাত থেকে তরবারী নিয়ে বললেন, এখন কে তোমাকে হিফাযত
করবে? সে বলল, আমাকে হিফাযতকারী আর কেউ
নেই। তবে আমি স্বাক্ষ্যি দিচ্ছি,
أَشْهَدُ أَلا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَ أَنَّكَ رَسُولُ اللَّهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ-
অর্থ: “আমি স্বাক্ষ্যি দিচ্ছি মহান আল্লাহ
পাক তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, নিশ্চয়ই আপনি মহান আল্লাহ
পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।”
সুবহানাল্লাহ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি এই নতুন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হাতে তরবারি তুলে দিলেন। এই ছাহাবী
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আপন ক্বওমের লোকদের কাছে ফিরে গেলেন। তারা বললো,
আপনার কি হয়েছিল? আপনিতো তরবারি তাক করে উনার কাছে পৌঁছে গেলেন। কিন্তু কিছুইতো করতে পারলেন
না। নাউযূবিল্লাহ! তিনি বললেন, আমি সেখানে একজন সাদা পোশাকধারী
ব্যক্তিকে দেখেছি। তিনি আমার বুকের উপর এমনভাবে আঘাত করলেন যে, আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না। চিৎ হয়ে মাটিতে পড়ে গেলাম। একথা বলার পর দাছুর
স্বীয় ক্বওমের লোকদেরকে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দাওয়াত দিলেন। তখন অবতীর্ণ হলো এই
পবিত্র আয়াত শরীফ,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّـهِ
عَلَيْكُمْ إِذْ هَمَّ قَوْمٌ أَن يَبْسُطُوا إِلَيْكُمْ أَيْدِيَهُمْ فَكَفَّ
أَيْدِيَهُمْ عَنكُمْ-
অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! মহান আল্লাহ পাক
উনার অনুগ্রহকে স্মরণ কর, যখন এক সম্প্রদায় আপনাদের
বিরুদ্ধে হস্ত উত্তোলন করতে চেয়েছিল, তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি
তাদের হাত থেকে আপনাদেরকে হিফাযত করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ:
পবিত্র আয়াত শরীফ- ১১)
উপরোক্ত ওয়াক্বীয়া মুবারক ‘বুখারী শরীফে ও মুসলিম শরীফ উনার মধ্যে’ বর্ণিত রয়েছে।
عَنْ حَضْرَتْ جَابِرِ
بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَخْبَرَهُ أَنَّهُ غَزَا مَعَ
رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ قِبَلَ نَجْدٍ فَلَمَّا قَفَلَ
رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ قَفَلَ مَعَهُ فَأَدْرَكَتْهُمُ
الْقَائِلَةُ فِي وَادٍ كَثِيرِ الْعِضَاهِ فَنَزَلَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ وَتَفَرَّقَ النَّاسُ فِي الْعِضَاهِ يَسْتَظِلُّونَ
بِالشَّجَرِ وَنَزَلَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ تَحْتَ
سَمُرَةٍ فَعَلَّقَ بِهَا سَيْفَهُ قَالَ حَضْرَتْ جَابِرٌ رَضِيَ اللَّهُ
عَنْهُمَا فَنِمْنَا نَوْمَةً ثُمَّ إِذَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم
يَدْعُونَا فَجِئْنَاهُ فَإِذَا عِنْدَهُ أَعْرَابِيٌّ جَالِسٌ، فَقَالَ رَسُولُ
اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ إِنَّ هَذَا اخْتَرَطَ سَيْفِي وَأَنَا
نَائِمٌ فَاسْتَيْقَظْتُ وَهْوَ فِي يَدِهِ صَلْتًا فَقَالَ لِي مَنْ يَمْنَعُكَ
مِنِّي قُلْتُ اللَّهُ فَهَا هُوَ ذَا جَالِسٌ ثُمَّ لَمْ يُعَاقِبْهُ رَسُولُ
اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ.
অর্থ: “হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি নজদ এলাকায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে সম্মানিত জিহাদ মুবারকে অংশগ্রহণ করেন।
সম্মানিত জিহাদ শেষে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি পবিত্র মদীনা শরীফে প্রত্যাবর্তন মুবারক করলে তিনিও উনার সাথেই প্রত্যাবর্তন করেন।
পথিমধ্যে এক উপত্যকায় একটি কাঁটা ভরা গাছের নিকটবর্তী হন, তখন ছিলো মধ্যাহ্নের সময়। উনাদের সকলের ভীষণ গরম অনুভূত হচ্ছিল।
স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেই
গাছের নিচে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম
উনারা ছায়াদার বৃক্ষের খোঁজে কাঁটাবনের মাঝে ছড়িয়ে পড়লেন। এদিকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একটি বাবলা গাছের নিচে অবস্থান মুবারক
করে স্বীয় তরবারি মুবারক খানা গাছের মধ্যে ঝুলিয়ে রাখলেন। হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু তিনি বলেন, সবেমাত্র আমরা বিশ্রামে গিয়েছি। এমন সময়
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদেরকে
ডাকলেন। আমরা উনার কাছে খুব দ্রুত হাযির হলাম। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এক বেদুঈন বসা ছিলো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আমি নিদ্রিত শান মুবারকে ছিলাম, সে আমার তরবারি মুবারক
হস্তগত করে কোষমুক্ত অবস্থায় তা আমার উপর উঁচিয়ে ধরলে আমি নিদ্রিত শান মুবারক থেকে
উঠি। তখন সে আমাকে বলল, এখন আপনাকে আমার হাত থেকে কে হিফাযত করবেন?
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন। আমি বললাম, মহান খ¦লিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে হিফাযত করবেন। সুবহানাল্লাহ! আপনারা দেখুন, এই সে ব্যক্তি বসে আছে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাকে কোন প্রকার শাস্তি দিলেন না।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী
শরীফ: পবিত্র হাদীছ শরীফ নং- ৪১৩৫, ৪১৩৬, মুসলিম শরীফ, নাসায়ী শরীফ, ইবনে
হাব্বান)
নাজরান অভিযান:
সম্মানিত হিজরী তৃতীয় বৎসরের অন্যতম উল্লেখ
যোগ্য ঘটনা হচ্ছে, নাজরানদের বিরুদ্ধে
অভিযান পরিচালনা। একে বানী সুলাইমের অভিযানও বলা হয়। ওই অভিযানের কারণ ছিলো এরকম- নুরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সংবাদ জানানো
হলো যে, সেখানে বানী সুলাইম গোত্রের লোকেরা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের বিরুদ্ধে একত্রিত হচ্ছে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ৩০০ জন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনাদের নিয়ে সেখানে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করলেন। দেখলেন, বিভিন্ন পানির কূপ ও অন্যান্য পানির নালাগুলোতে তারা বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে আছে।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সামনে অগ্রসর
হলেন। মোকাবেলা করার জন্য কেউ এগিয়ে এলো না। পরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে ফিরে এলেন। ঐ সময়
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা
শরীফ উনার প্রতিনিধি বানিয়েছিলেন সাইয়্যিদুনা হযরত ইবনে কুলছুম আলাইহিস সালাম উনাকে।
এই অভিযানে সময় ব্যায় হয়েছিল ১০ দিন। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত ৩য় হিজরীতেই কারওহ নামক স্থানের
দিকে অভিযান পরিচালিত হয়। নজদের কূপসমূহের মধ্যে এটি একটি কূপের নাম। ওই কূপের নামানুসারেই
সে জায়গাটির নামকরণ করা হয় কারওহ। ওই অভিযানের পটভূমি ছিলো এ রকম- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে সংবাদ জানানো হলো যে, কুরাইশ কাফির মুশরিকরা হিজাজের রাস্তা দিয়ে সিরিয়ায় যেতো। কিন্তু
সম্মানিত বদর জিহাদের পর থেকে তারা ও পথ মাড়াতো না। বাণিজ্যে যেতো ইরাকের পথ ধরে। কথিত
কাফিলা একটি বিরাট বাণিজ্য বহরের সঙ্গী হয়ে যাত্রা করেছিলো। উক্ত কাফিলায় ছিলেন হযরত
আবু সুফিয়ান ইবনে হারব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (তিনি তখনও উনার ঈমান আনার বিষয়টি
প্রকাশ করেননি) এবং সাফওয়ান ইবনে উমাইয়া। তাদের সঙ্গে অনেক ধন- দৌলত এবং রৌপ্যের তৈজসপত্র
ছিলো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত
যায়িদ ইবনে হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে হিজরত মুবারক উনার আটাশতম মাস জুমাদাল
উখরা শরীফ উনার প্রথম তারিখে একশ’ আরোহীর সঙ্গে রওয়ানা হওয়ার নির্দেশ মুবারক দিলেন।
তিনি উনার বাহিনী সহকারে উক্ত কাফিলার মুখোমুখি হয়ে গেলেন। বাহিনী দেখে কাফিলার নেতৃস্থানীয়রা
পালিয়ে গেলো। অবশিষ্টদেরকে বন্দী করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে নিয়ে আসলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের থেকে প্রাপ্ত মালের এক পঞ্চমাংশ বের করার নির্দেশ মুবারক
দান করলেন। অপর এক বর্ণনানুসারে এই কাফিলায় সম্পদের পরিমাণ ছিলো, ২৫ হাজার দিরহাম। বাকি সম্পদ অভিযানে অংশগ্রহণকারী হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনাদের মাঝে বন্টন করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! এই অভিযানটি কাট্টা কাফির
কা’ব ইবনে আশরাফকে হত্যা করার পূর্বে সংঘটিত হয়েছিলো বলে হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি
আলাইহি তিনি বর্ণনা করেছেন। (মাদারেজুন নবুওওয়াত)
কাট্টা কাফির আবূ রাফি’কে হত্যা:
৩য় হিজরীতেই সংঘটিত হয়েছিল কাট্টা কাফির
কা’ব ইবনে আশরাফের হত্যার ঘটনা। তারপর হেজাজের ব্যবসায়ী কাট্টা কাফির আবূ রাফি’-এর
হত্যার ঘটনা ঘটে। তার হত্যা কান্ড কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফের হত্যা কান্ডের চেয়েও
বিস্ময়কর ছিলো। ‘রওজাতুল আহবার’ গ্রন্থ’কার বলেছেন, তার হত্যা কান্ড হয়েছিল ৪র্থ হিজরীতে। এছাড়া আরো অনেকে অনেক ভাবে
মত পেশ করেছেন।
যা হোক, এই কাট্টা কাফির আবূ রাফি’-এর নাম কেউ কেউ বলেছেন, আব্দুল্লাহ। আবার কেউ কেউ বলেছেন, সালাম বা সাল্লাম।
সে ছিলো উবাই আল হাকীকের পুত্র। আর সে ছিলো কানানা ইবনে উবাই আল হাকীকের ভাই। এই কাট্টা
কাফির আবূ রাফি’ হেজাজের মাটিতে এক কেল্লার ভিতরে অবস্থান করতো। সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সর্বদাই কষ্ট ও যন্ত্রনা দিতে সদা
তৎপর থাকতো। নাউযূবিল্লাহ! হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে
বিভিন্ন ভাবে কষ্ট দেয়াই ছিলো তার জঘন্যতম কাজ। নাউযূবিল্লাহ! এই কাট্টা কাফির নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে পরিচালিত
জিহাদগুলোতে মুশরিকদেরকে নানাভাবে সাহায্য করতো।
আর এই কাট্টা কাফির হত্যার সূত্রপাত ঘটে
এভাবে যে, আউস গোত্রের মুহম্মদ
ইবনে হযরত মাসলামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এবং অন্যান্য হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা মিলিতভাবে যখন কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফকে হত্যা
করলেন। তখন খাযরাজ গোত্রের হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের
মনেও এমন বাসনা জাগলো যে, উনারা কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফের
মতো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কোন
শত্রুকে হত্যা করবেন। সুবহানাল্লাহ! খাযরাজ গোত্র উনাদের মধ্যে পারস্পরিক পরামর্শের
পর সাব্যস্ত হলো যে, কাট্টা কাফির আবূ রাফি’কে তাহলে হত্যা করা
হোক। কারণ সেও কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফের মতোই দুরাচার ও কঠিন লা’নত প্রাপ্ত।
নাউযূবিল্লাহ! সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাকে বিভিন্ন ভাবে কষ্ট দিতো এবং অবমাননাকর কথা-বার্তা বলতো। নাউযূবিল্লাহ! হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের উপর যুলুম নির্যাতনের চেষ্টা করতো। নাউযূবিল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যারা শত্রু
তাদেরকে সে বিভিন্নভাবে অর্থ সম্পদ দিয়ে সহযোগিতা করতো। নাউযূবিল্লাহ! সম্মানিত মুসলমান
উনাদের বিরুদ্ধে সব সময় ষড়যন্ত্র করতো। নাউযূবিল্লাহ!
স্মরণীয় যে, মহান আল্লাহ পাক উনার
হাবীব নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রথমে তাকে হত্যা
করার ব্যাপারে কিছু বলেননি। বরং খাযরাজ গোত্রের হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনারা নিজেরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে তাকে কতল করার অনুমতি মুবারক চেয়েছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
পরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদেরকে
অনুমতি দান করেন। সুবহানাল্লাহ! খাযরাজ গোত্রের হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনারা কাট্টা কাফির আবূ রাফি’কে হত্যা করার জন্য একটি গ্রুপ তৈরী করলেন।
আর এই গ্রুপের প্রধান ছিলেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আতীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
তিনি। তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
অনুমতি মুবারক লাভ করার পর উনারা খায়বারে কাট্টা কাফির আবূ রাফি’র কেল্লার দিকে রওয়ানা
হয়ে গেলেন। উনারা তার কেল্লায় পৌঁছেন সূর্যাস্তের সময়। কাট্টা কাফির আবূ রাফি’র পশুগুলো
তখন কেল্লার ভিতরে প্রবেশ করছিল।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক
হয়েছে,
عَنِ حَضْرَتْ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا،
قَالَ بَعَثَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ رَهْطًا إِلَى أَبِي
رَافِعٍ- فَدَخَلَ عَلَيْهِ حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ بْنُ عَتِيكٍ رَضِيَ اللَّهُ
عَنْهُ بَيْتَهُ لَيْلاً وَهْوَ نَائِمٌ فَقَتَلَهُ.
অর্থ: হযরত বারায়া ইবনে আযিব রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দশ জনের কমসংখ্যক হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের একটি দলকে কাট্টা কাফির আবূ রাফি’-এর উদ্দেশ্যে
প্রেরণ করেন। তাদের মধ্যে একজন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আতীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।
তিনি তার ঘরে রাত্রিবেলা প্রবেশ করেন এবং এ অবস্থায় (কাট্টা কাফির আবূ রাফি’) শুয়ে
ছিলো, অতপর (হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আতীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু তিনি তাকে হত্যা করেন। (বুখারী শরীফ, উমদাতুল ক্বারী)
এ সম্পর্কে ‘বুখারী শরীফের ৪০৩৯ নম্বর
হাদীছ’ শরীফের মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
عَنِ حَضْرَتْ الْبَرَاءِ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ
بَعَثَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ إِلَى أَبِي رَافِعٍ
الْيَهُودِيِّ رِجَالاً. مِنَ الأَنْصَارِ فَأَمَّرَ عَلَيْهِمْ حَضْرَتْ عَبْدَ
اللهِ بْنَ عَتِيكٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ، وَكَانَ أَبُو رَافِعٍ يُؤْذِي
رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ وَيُعِينُ عَلَيْهِ، وَكَانَ فِي
حِصْنٍ لَهُ بِأَرْضِ الْحِجَازِ فَلَمَّا دَنَوْا مِنْهُ وَقَدْ غَرَبَتِ
الشَّمْسُ وَرَاحَ النَّاسُ بِسَرْحِهِمْ فَقَالَ حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ رَضِىَ اللهُ
تَعَالَى عَنْهُ لأَصْحَابِهِ اجْلِسُوا مَكَانَكُمْ فَإِنِّي مُنْطَلِقٌ
وَمُتَلَطِّفٌ لِلْبَوَّابِ لَعَلِّي أَنْ أَدْخُلَ فَأَقْبَلَ حَتَّى دَنَا مِنَ
الْبَابِ ثُمَّ تَقَنَّعَ بِثَوْبِهِ كَأَنَّهُ يَقْضِي حَاجَةً وَقَدْ دَخَلَ
النَّاسُ فَهَتَفَ بِهِ الْبَوَّابُ يَا عَبْدَ اللهِ إِنْ كُنْتَ تُرِيدُ أَنْ
تَدْخُلَ فَادْخُلْ فَإِنِّي أُرِيدُ أَنْ أُغْلِقَ الْبَابَ فَدَخَلْتُ
فَكَمَنْتُ فَلَمَّا دَخَلَ النَّاسُ أَغْلَقَ الْبَابَ ثُمَّ عَلَّقَ
الأَغَالِيقَ عَلَى وَتَدٍ قَالَ فَقُمْتُ إِلَى الأَقَالِيدِ فَأَخَذْتُهَا
فَفَتَحْتُ الْبَابَ، وَكَانَ أَبُو رَافِعٍ يُسْمَرُ عِنْدَهُ، وَكَانَ فِي
عَلاَلِيَّ لَهُ فَلَمَّا ذَهَبَ عَنْهُ أَهْلُ سَمَرِهِ صَعِدْتُ إِلَيْهِ
فَجَعَلْتُ كُلَّمَا فَتَحْتُ بَابًا أَغْلَقْتُ عَلَيَّ مِنْ دَاخِلٍ قُلْتُ إِنِ
الْقَوْمُ نَذِرُوا بِي لَمْ يَخْلُصُوا إِلَيَّ حَتَّى أَقْتُلَهُ فَانْتَهَيْتُ
إِلَيْهِ فَإِذَا هُوَ فِي بَيْتٍ مُظْلِمٍ وَسْطَ عِيَالِهِ لاَ أَدْرِي أَيْنَ
هُوَ مِنَ الْبَيْتِ فَقُلْتُ يَا أَبَا رَافِعٍ قَالَ مَنْ هَذَا فَأَهْوَيْتُ
نَحْوَ الصَّوْتِ فَأَضْرِبُهُ ضَرْبَةً بِالسَّيْفِ وَأَنَا دَهِشٌ فَمَا
أَغْنَيْتُ شَيْئًا وَصَاحَ فَخَرَجْتُ مِنَ الْبَيْتِ فَأَمْكُثُ غَيْرَ بَعِيدٍ
ثُمَّ دَخَلْتُ إِلَيْهِ فَقُلْتُ مَا هَذَا الصَّوْتُ يَا أَبَا رَافِعٍ فَقَالَ
لأُمِّكَ الْوَيْلُ إِنَّ رَجُلاً فِي الْبَيْتِ ضَرَبَنِي قَبْلُ بِالسَّيْفِ
قَالَ فَأَضْرِبُهُ ضَرْبَةً أَثْخَنَتْهُ وَلَمْ أَقْتُلْهُ ثُمَّ وَضَعْتُ
ظُبَةَ السَّيْفِ فِي بَطْنِهِ حَتَّى أَخَذَ فِي ظَهْرِهِ فَعَرَفْتُ أَنِّي
قَتَلْتُهُ فَجَعَلْتُ أَفْتَحُ الأَبْوَابَ بَابًا بَابًا حَتَّى انْتَهَيْتُ
إِلَى دَرَجَةٍ لَهُ فَوَضَعْتُ رِجْلِي وَأَنَا أُرَى أَنِّي قَدِ انْتَهَيْتُ
إِلَى الأَرْضِ فَوَقَعْتُ فِي لَيْلَةٍ مُقْمِرَةٍ فَانْكَسَرَتْ سَاقِي
فَعَصَبْتُهَا بِعِمَامَةٍ ثُمَّ انْطَلَقْتُ حَتَّى جَلَسْتُ عَلَى الْبَابِ
فَقُلْتُ لاَ أَخْرُجُ اللَّيْلَةَ حَتَّى أَعْلَمَ أَقَتَلْتُهُ فَلَمَّا صَاحَ
الدِّيكُ قَامَ النَّاعِي عَلَى السُّورِ فَقَالَ
أَنْعَى أَبَا رَافِعٍ تَاجِرَ أَهْلِ الْحِجَازِ فَانْطَلَقْتُ إِلَى
أَصْحَابِي فَقُلْتُ النَّجَاءَ فَقَدْ قَتَلَ اللَّهُ أَبَا رَافِعٍ فَانْتَهَيْتُ
إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَحَدَّثْتُهُ فَقَالَ ابْسُطْ رِجْلَكَ
فَبَسَطْتُ رِجْلِي فَمَسَحَهَا فَكَأَنَّهَا لَمْ أَشْتَكِهَا قَطّ.
অর্থ: হযরত বারায়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আতীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে আমীর
বানিয়ে উনার নেতৃত্বে হযরত আনসার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের
কয়েকজন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে কাট্টা কাফির ইহুদী
আবূ রাফি’কে হত্যার উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কাট্টা কাফির ইহুদী আবূ রাফি’ কষ্ট দিতো এবং এ (কষ্ট দেয়ার)
জন্যে লোকদেরকে তথা মুশরিকদেরকে সাহায্য করতো। নাউযূবিল্লাহ! হিজাজ ভূমিতে তার একটি
দূর্গ ছিলো (সেখানে সে বাস করতো)। খাযরাজ গোত্রের হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনারা যখন তার দূর্গের কাছে গিয়ে পৌঁছলেন তখন সূর্য ডুবে গেছে এবং লোকজন
নিজেদের পশু পাল নিয়ে রওয়ানা হয়েছে (নিজ নিজ গৃহে)। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আতীক রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু তিনি উনার সাথীদেরকে বললেন, আপনারা আপনাদের স্থানে
বসে থাকুন। অবশ্যই আমি দ্বার রক্ষীর সঙ্গে হিকমত পূর্ণ আচরণের মাধ্যমে ভিতরে প্রবেশ
করবো। এরপর তিনি দূর্গের সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে তার দরজার কাছে পৌঁছলেন এবং কাপড়
দ্বারা নিজেকে এমনভাবে ঢাকলেন যেন তিনি প্রাকৃতিক প্রয়োজনে রত আছেন। তখন সবাই ভিতরে
প্রবেশ করছিলো, দারোয়ান উনাকে ডেকে বললো, হে আব্দুল্লাহ! ভিতরে ঢুকতে চাইলে ঢুকে পড়–ন। আমি এখনই দরজা বন্ধ করে দিব।
আমি তখন ভিতরে প্রবেশ করলাম এবং আত্মগোপন করে থাকলাম। সকলে ভিতরে প্রবেশ করার পর দারোয়ান
দরজা বন্ধ করে দিল এবং একটি পেরেকের সঙ্গে চাবিটা লটকিয়ে রাখলো। (হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে
আতীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন,) এরপর আমি চাবিটার
দিকে এগিয়ে গেলাম এবং চাবিটি নিয়ে দরজা খুললাম। কাট্টা কাফির আবূ রাফি’র নিকট রাতের
বেলা গল্পের আসর বসত, এ সময় সে তার উপর তলার কামরায় অবস্থান করছিল।
গল্পের আসরে আগত লোকজন চলে গেলে, আমি সিঁড়ি বেয়ে তার কাছে গিয়ে
পৌঁছলাম। এ সময় আমি একটি করে দরজা খুলছিলাম এবং ভিতর দিক থেকে তা আবার বন্ধ করে দিয়ে
যচ্ছিলাম, যাতে লোকজন আমার ব্যাপারে জানতে পারলেও হত্যা না করা
পর্যন্ত আমার নিকট পৌঁছতে না পারে। আমি তার কাছে পৌঁছলাম। সে সময় সে একটি অন্ধকার
কক্ষে ছেলেমেয়েদের মাঝে শুয়েছিল। কক্ষের কোন অংশে সে শুয়ে আছে আমি তা বুঝতে পারছিলাম
না। তাই আবূ রাফি’ বলে ডাক দিলাম। সে বলল, কে আমাকে ডাকছেন?
আমি তখন আওয়াজটি লক্ষ্য করে এগিয়ে গিয়ে তরবারি দ্বারা প্রচন্ড জোরে আঘাত
করলাম। আমি তখন বিস্ময়াভিভূত হলাম যে, এ আঘাতে আমি তার কোন কিছুই
করতে পারলাম না। সে চীৎকার করে উঠলে আমি কিছুক্ষণের জন্য কক্ষের বাইরে চলে আসলাম। এরপর
পুনরায় ঘরে প্রবেশ করে (কন্ঠস্বর পরিবর্তন করত: তার আপন লোকের ন্যায়) জিজ্ঞেস করলাম,
আবূ রাফি’ এ আওয়াজ হল কিসের? সে বলল, আপনার মায়ের সর্বনাশ হোক! নিশ্চয়ই একটু আগে ঘরের ভিতর কে যেন আমাকে তরবারি
দ্বারা আঘাত করেছেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আতীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন,
তখন আমি আবার তাকে তারবারি দিয়ে খুব জোরে আঘাত করলাম এবং তাকে মারাত্মক
ভাবে ক্ষত বিক্ষত করে ফেললাম। কিন্তু তাকে হত্যা করতে পারিনি। তাই তরবারির ধারাল দিকটি
তার পেটের উপর চেপে ধরলাম এবং পিঠ পার করে দিলাম। এবার আমি নিশ্চিতরূপে বুঝলাম যে,
এখন আমি তাকে হত্যা করতে পেরেছি। এরপর আমি এক এক করে দরজা খুলে নীচে
নামতে শুরু করলাম। নামতে নামতে সিঁড়ির শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছলাম। তখন জোছনার রাত ছিলো।
(চাঁদের আলোতে তাড়াহুড়ার মধ্যে সঠিকভাবে অনুধাবন করতে না পেরে) আমি মনে করলাম,
(সিঁড়ির সকল ধাপ অতিক্রম করে) আমি মাটির নিকটে এসে পড়েছি। (কিন্তু তখনও
একটি ধাপ অবশিষ্ট ছিলো) তাই নিচে আমার পা রাখতেই আমি পড়ে গেলাম। অমনিই আমার পায়ের গোছার
হাড় ভেঙ্গে গেলো। আমি আমার মাথার পাগড়ি দিয়ে পায়ের গোড়া বেঁধে নিলাম এবং একটু হেঁটে
গিয়ে দরজার সামনে বসে রইলাম। মনে মনে স্থির করলাম, তার নিহত হওয়া
সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে আজ রাতে আমি এখান থেকে যাব না। ভোর রাতে মোরগের ডাক আরম্ভ
হলে মৃত্যু ঘোষণাকরী প্রাচীরের উপরে উঠে ঘোষণা দিতে লাগলো, হিজায
অধিবাসীদের অন্যতম ব্যবসায়ী আবূ রাফি’র মৃত্যু সংবাদ শুনুন। তখন আমি আমার সাথীদেরকে
বললাম, তাড়াতাড়ি চলুন মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার দুশমন কাট্টা
কাফির আবূ রাফি’কে হত্যা করেছেন। এরপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে হাযির হলাম এবং সমস্ত ঘটনা খুলে বললাম। তিনি
ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনার পা লম্বা করুন। আমি আমার পা লম্বা
করে দিলে, তিনি তাতে স্বীয় নূরুল মাগফিরাহ্ বা পবিত্র হাত মুবারক
বুলিয়ে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! এতে এমন সুস্থ হলাম যেন আমি কোন আঘাতই পাইনি। সুবহানাল্লাহ!
(বুখারী শরীফ, দালায়িলুন নবুওয়াহ, উমদাতুল
ক্বারী, আল মুসনাদুল জামি’, আর রহিকুল মাখতুম,
আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া মাউসূয়াতুত তাখরীয, সীরাতুল
হালাবিয়্যাহ, তারিখুল ইসলাম লি-ইমামিয যাহাবী)
বুখারী শরীফ অপর ৪০৪০ নম্বার পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ
বর্ণিত রয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ الْبَرَاءَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، قَالَ بَعَثَ
رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ إِلَى أَبِي رَافِعٍ حَضْرَتْ
عَبْدَ اللهِ بْنَ عَتِيكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ وَ حَضْرَتْ عَبْدَ اللهِ بْنَ
عُتْبَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فِي نَاسٍ مَعَهُمْ فَانْطَلَقُوا حَتَّى دَنَوْا
مِنَ الْحِصْنِ فَقَالَ لَهُمْ حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ بْنُ عَتِيكٍ رَضِيَ اللَّهُ
عَنْهُ امْكُثُوا أَنْتُمْ حَتَّى أَنْطَلِقَ أَنَا فَأَنْظُرَ قَالَ
فَتَلَطَّفْتُ أَنْ أَدَخُلَ الْحِصْنَ فَفَقَدُوا حِمَارًا لَهُمْ قَالَ فَخَرَجُوا بِقَبَسٍ يَطْلُبُونَهُ قَالَ
فَخَشِيتُ أَنْ أُعْرَفَ قَالَ
فَغَطَّيْتُ رَأْسِي كَأَنِّي أَقْضِي حَاجَةً ثمَّ نَادَى صَاحِبُ
الْبَابِ مَنْ أَرَادَ أَنْ يَدْخُلَ فَلْيَدْخُلْ قَبْلَ أَنْ أُغْلِقَهُ
فَدَخَلْتُ ثُمَّ اخْتَبَأْتُ فِي مَرْبِطِ حِمَارٍ عِنْدَ بَابِ الْحِصْنِ
فَتَعَشَّوْا عِنْدَ أَبِي رَافِعٍ وَتَحَدَّثُوا حَتَّى ذَهَبَتْ سَاعَةٌ مِنَ
اللَّيْلِ ثُمَّ رَجَعُوا إِلَى بُيُوتِهِمْ فَلَمَّا هَدَأَتِ الأَصْوَاتُ ،
وَلاَ أَسْمَعُ حَرَكَةً خَرَجْتُ قَالَ وَرَأَيْتُ صَاحِبَ الْبَابِ حَيْثُ وَضَعَ
مِفْتَاحَ الْحِصْنِ فِي كَوَّةٍ فَأَخَذْتُهُ فَفَتَحْتُ بِهِ بَابَ الْحِصْنِ ،
قَالَ قُلْتُ إِنْ نَذِرَ بِي الْقَوْمُ
انْطَلَقْتُ عَلَى مَهَلٍ ثُمَّ عَمَدْتُ إِلَى أَبْوَابِ بُيُوتِهِمْ
فَغَلَّقْتُهَا عَلَيْهِمْ مِنْ ظَاهِرٍ ثُمَّ صَعِدْتُ إِلَى أَبِي رَافِعٍ فِي
سُلَّمٍ فَإِذَا الْبَيْتُ مُظْلِمٌ قَدْ طَفِئَ سِرَاجُهُ فَلَمْ أَدْرِ أَيْنَ
الرَّجُلُ فَقُلْتُ يَا أَبَا رَافِعٍ قَالَ مَنْ هَذَا قَالَ فَعَمَدْتُ نَحْوَ
الصَّوْتِ فَأَضْرِبُهُ وَصَاحَ فَلَمْ تُغْنِ شَيْئًا قَالَ ثُمَّ جِئْتُ
كَأَنِّي أُغِيثُهُ فَقُلْتُ مَا لَكَ يَا أَبَا رَافِعٍ وَغَيَّرْتُ صَوْتِي
فَقَالَ أَلاَ أُعْجِبُكَ لأُمِّكَ الْوَيْلُ دَخَلَ عَلَيَّ رَجُلٌ فَضَرَبَنِي
بِالسَّيْفِ قَالَ فَعَمَدْتُ لَهُ أَيْضًا فَأَضْرِبُهُ أُخْرَى فَلَمْ تُغْنِ
شَيْئًا فَصَاحَ وَقَامَ أَهْلُهُ قَالَ ثُمَّ جِئْتُ وَغَيَّرْتُ صَوْتِي
كَهَيْئَةِ الْمُغِيثِ فَإِذَا هُوَ مُسْتَلْقٍ عَلَى ظَهْرِهِ فَأَضَعُ السَّيْفَ
فِي بَطْنِهِ ثُمَّ أَنْكَفِئُ عَلَيْهِ حَتَّى سَمِعْتُ صَوْتَ الْعَظْمِ ثُمَّ
خَرَجْتُ دَهِشًا حَتَّى أَتَيْتُ السُّلَّمَ أُرِيدُ أَنْ أَنْزِلَ فَأَسْقُطُ
مِنْهُ فَانْخَلَعَتْ رِجْلِي فَعَصَبْتُهَا ثُمَّ أَتَيْتُ أَصْحَابِي أَحْجُلُ
فَقُلْتُ انْطَلِقُوا فَبَشِّرُوا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَإِنِّي لاَ
أَبْرَحُ حَتَّى أَسْمَعَ النَّاعِيَةَ فَلَمَّا كَانَ فِي وَجْهِ الصُّبْحِ
صَعِدَ النَّاعِيَةُ فَقَالَ أَنْعَى أَبَا رَافِعٍ قَالَ فَقُمْتُ أَمْشِي مَا
بِي قَلَبَةٌ فَأَدْرَكْتُ أَصْحَابِي قَبْلَ أَنْ يَأْتُوا النَّبِيَّ صلى الله
عليه وسلم فَبَشَّرْتُهُ.
অর্থ: হযরত বারায়া ইবনে আযিব রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আবূ রাফি’কে হত্যার উদ্দেশ্যে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আতীক রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু ও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উতবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদেরকে একদল
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদেরসহ প্রেরণ করেন। যেতে যেতে উনারা
কাট্টা কাফির আবূ রাফি’-এর দূর্গের কাছে গিয়ে পৌঁছলে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আতীক রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু তিনি সাথীদেরকে বললেন, আপনারা এখানে অবস্থান
মুবারক করুন। তিনি বলেন, অতপর আমি দূর্গের ভিতরে প্রবেশ করার
জন্য হিকমত অবলম্বন করতে থাকলাম। ইতোমধ্যে তারা একটি গাধা হারিয়ে ফেলল এবং একটি আলো
নিয়ে এর খোঁজে বের হল। তিনি বলেন, আমাকে চিনে ফেলবে আমি এ আশংকা
করছিলাম। তাই আমি আমার মাথা ও পা ঢেকে ফেললাম এবং এমনভাবে বসে পড়লাম যেন আমি প্রাকৃতিক
প্রয়োজনে বসেছি। এরপর দারোয়ান ডাক দিয়ে বলল, কেউ ভিতরে প্রবেশ
করতে চাইলে এখনই দরজা বন্ধ করার পূর্বে ভিতরে ঢুকে পড়–ন। আমি প্রবেশ করলাম এবং দূর্গের
দরজার পার্শ্বে গাধা বাঁধার জায়গায় আত্মগোপন করে থাকলাম। কাট্টা কাফির আবূ রাফি’র নিকট
সবাই বসে রাতের খানা খেয়ে গল্প গুজব করল। এভাবে রাতের কিছু অংশ কেটে যাওয়ার পর সকলেই
নিজ নিজ বাড়িতে চলে গেল। যখন হৈ চৈ থেমে গেল
এবং লোকজনের নড়াচড়া শুনতে পাচ্ছিলাম না তখন আমি বের হলাম। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে
আতীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, দূর্গের চাবি যে ছিদ্রপথে
রাখা হয়েছিল তা আমি পূর্বেই দেখেছিলাম। তাই রক্ষিত স্থান থেকে চাবিটি নিয়ে দূর্গের
দরজা খুললাম। তিনি বলেন, আমি মনে মনে ভাবলাম, তার ক্বাওমের লোকেরা যদি আমাকে দেখে ফেলে তাহলে সহজেই আমি এখান থেকে কেটে যেতে
পারব। এরপর দূর্গের ভিতরে তাদের যত ঘর ছিল সবগুলোর দরজা আমি বাইরে থেকে বন্ধ করে দিলাম।
এরপর সিঁড়ি বেয়ে কাট্টা কাফির আবূ রাফি’র কক্ষে উঠলাম। বাতি নিভিয়ে দেয়া হয়েছিল বলে
ঘরটি ছিল খুবই অন্ধকার। কাট্টা কাফির ইহুদী আবূ রাফি’ কোথায়, কিছুতেই আমি তা বুঝতে পারছিলাম না। সুতরাং আমি তাকে ডাকলাম, হে আবূ রাফি’। সে বলল, কে ডাকছেন? তিনি বললেন আওয়াজটি লক্ষ্য করে আমি একটু এগিয়ে গিয়ে তাকে আঘাত করলাম। সে চীৎকার
দিয়ে উঠল। এ আঘাতে কোন কাজই হয়নি। অতঃপর আবার আমি তার কাছে গেলাম, যেন আমি তাকে সাহায্য করব। আমি এবার কন্ঠস্বর বদল করে বললাম, হে আবূ রাফি’! তোমার কি হয়েছে? সে বলল, কি আশ্চার্য ব্যাপার, আপনার মায়ের সর্বনাশ হোক,
এই তো এক ব্যক্তি আমার ঘরে ঢুকে আমাকে তরবারি দ্বারা আঘাত করেছে। হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে আতীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, তাকে
লক্ষ্য করে আবার আমি আঘাত করলাম, এবারও কোন কাজ হল না। সে চীৎকার
করলে তার পরিবারের সবাই জেগে উঠল। তারপর আবার আমি সাহায্যকারীর ভান করে আওয়াজ বদল করে
তার দিকে এগিয়ে গেলাম। এ সময় সে পিঠের উপর চিৎ হয়ে শুয়েছিল। আমি তরবারির অগ্রভাগ তার
পেটের উপর রেখে এমন জোরে চাপ দিলাম যে, আমি তার হাড়ের আওয়াজ শুনতে
পেলাম। এরপর আমি বিস্বায়িভূত হয়ে সিঁড়ির নিকট এসে পৌঁছলাম। ইচ্ছা ছিল নেমে যাব। কিন্তু
আছাড় খেয়ে পড়ে গেলাম এবং এতে আমার পা খানা ভেঙ্গে গেল। সঙ্গে সঙ্গে আমার পাগড়ি দিয়ে
পা বেঁধে ফেললাম এবং আস্তে আস্তে হেঁটে সাথীদের নিকট চলে এলাম। এরপর আমি বললাম,
আপনারা যান এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনাকে সুসংবাদ দিন। আমি তার মৃত্যুর সংবাদ না শুনে এখান থেকে যাবো না।
সকাল বেলা মৃত্যু ঘোষণাকরী প্রাচীরে উঠে বলল, আমি আবূ রাফি’র
মৃত্যুর সংবাদ ঘোষণা করছি। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আতীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি
বললেন, এরপর আমি উঠে চলতে লাগলাম। এ সময় আমার কোন ব্যথাই ছিল
না। আমার সাথী হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট পৌঁছার পূর্বেই আমি
উনাদেরকে পেয়ে গেলাম এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনাকে কাট্টা কাফির আবূ রাফি’ ইহুদী নিহত হওয়ার সুসংবাদ জানালাম। সুবহানাল্লাহ!
(বুখারী শরীফ, দালায়িলুন নবুওওয়াহ, উমদাতুল
ক্বারী, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, মাউসূয়াতুত
তাখরীয)
0 Comments:
Post a Comment