হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ১০৬০-১২৭৯) (ঠ)


সম্মানিত বদর জিহাদ শুরু ও  দ্বন্দ্ব জিহাদের জন্য আহবান:
 ২রা হিজরী ১৭ রমাদ্বান শরীফ ইয়ামুল জুমুয়াহ সকাল বেলা সম্মানিত বদর জিহাদ সংঘটিত হয়। (হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি)
 প্রসিদ্ধ তারিখ ও সীরাত গ্রন্থসমূহে উল্লেখ রয়েছে,
  ثُمّ خَرَجَ بَعْدَ عُتْبَةَ بْنِ رَبِيعَةَ ، بَيْنَ أَخِيهِ شَيْبَةَ بْنِ رَبِيعَةَ وَابْنِهِ الْوَلِيدِ بْنِ عُتْبَةَ ، حَتّى إذَا فَصَلَ مِنْ الصّفّ دَعَا إلَى الْمُبَارَزَةِ فَخَرَجَ إلَيْهِ فِتْيَةٌ مِنْ الْأَنْصَارِ ثَلَاثَةٌ وَهُمْ حضرت عَوْفٌ رضى الله تعالى عنه وَ حضرت مُعَوّذٌ رضى الله تعالى عنه ابْنَا حضرت الْحَارِثِ رضى الله تعالى عنه - وَأُمّهُمَا حضرت عَفْرَاءُ رضى الله تعالى عنها - وَرَجُلٌ آخَرُ يُقَالُ هُوَ حضرت عَبْدُ اللّهِ بْنُ رَوَاحَةَ رضى الله تعالى عنه ، فَقَالُوا : مَنْ أَنْتُمْ ؟ فَقَالُوا : رَهْطٌ مِنْ الْأَنْصَارِ ، قَالُوا : مَا لَنَا بِكُمْ مِنْ حَاجَةٍ ثُمّ نَادَى مُنَادِيهِمْ يَا حضرت مُحَمّدُ صلى الله عليه و سلم أَخْرِجْ إلَيْنَا أَكْفَاءَنَا مِنْ قَوْمِنَا ، فَقَالَ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ قُمْ يَا حضرت عُبَيْدَةُ بْنَ الْحَارِثِ رضى الله تعالى عنه ، وَقُمْ يَا حضرت حَمْزَةُ عليه السلام وَقُمْ يَا حضرت عَلِيّ عليه السلام فَلَمّا قَامُوا دَنَوْا مِنْهُمْ قَالُوا مَنْ أَنْتُمْ ؟ قَالَ حضرت عُبَيْدَةُ رضى الله تعالى عنه : أَنَا حضرت عُبَيْدَةُ بْنُ الْحَارِثِ رضى الله تعالى عنه. وَ قَالَ حضرت حَمْزَةُ عليه السلام : أَنَا حضرت حَمْزَةُ بْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ عليه السلام وَقَالَ حضرت عَلِىٌّ عليه السلام : أَنَا حضرت عَلِىُّ بْنُ أَبِى طَالِبٍ عليه السلام. قَالُوا : نَعَمْ أَكْفَاءٌ كِرَامٌ . فَبَارَزَ حضرت عُبَيْدَةُ رضى الله تعالى عنه وَكَانَ أَسَنّ الْقَوْمِ عُتْبَةَ بْنَ رَبِيعَةَ ، وَبَارَزَ حضرت حَمْزَةُ عليه السلام شَيْبَةَ بْنَ رَبِيعَةَ ، وَبَارَزَ حضرت عَلِيّ عليه السلام الْوَلِيدَ بْنَ عُتْبَةَ . فَأَمّا حضرت حَمْزَةُ عليه السلام فَلَمْ يُمْهِلْ شَيْبَةَ أَنْ قَتَلَهُ ؟ وَأَمّا حضرت عَلِيّ عليه السلام فَلَمْ يُمْهِلْ الْوَلِيدَ أَنْ قَتَلَهُ وَاخْتَلَفَ حضرت عُبَيْدَةُ رضى الله تعالى عنه وَعُتْبَةُ بَيْنَهُمَا ضَرْبَتَيْنِ كِلَاهُمَا أَثْبَتَ صَاحِبَهُ وَكَرّ حضرت حَمْزَةُ عليه السلام وَ حضرت عَلِيّ عليه السلام بِأَسْيَافِهِمَا عَلَى حضرت عُتْبَةَ رضى الله تعالى عنه فَذَفّفَا عَلَيْهِ وَاحْتَمَلَا صَاحِبَهُمَا فَحَازَاهُ إلَى أَصْحَابِهِ .
 অর্থ: “অতপর শুরুতেই জিহাদের ময়দানে নামলো উতবা ইবনে রবীয়াহ, তার ভাই শায়বা ইবনে রবীয়াহ ও তার ছেলে ওয়ালীদ ইবনে উতবা তার সঙ্গে এলো। এরা কুরাইশ কাফির বাহিনীর দল ছেড়ে যখন সামনে এগিয়ে এসে হুংকার ছেড়ে দ্বন্দ্ব যুদ্ধের আহবান জানালে হযরত আনসার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্য থেকে তিনজন যুবক ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা কাফিরদের মুকাবিলায় এগিয়ে গেলেন।  উনারা হলেন, হযরত আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত মুয়াব্বিয রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। উনারা হলেন হযরত হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার দুই ছেলে সন্তান। আর উনাদের উভয়ের সম্মানিত মা উনার নাম হযরত আফরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা। আর তৃতীয় ব্যক্তি হচ্ছেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা কাফির-মুশরিকদের মুকাবিলায় এগিয়ে গেলেন। অতপর কুরাইশ কাফির-মুশরিক তারা জিজ্ঞাস করলো আপনারা কারা? উনারা বললেন, আমরা হযরত আনসার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অন্তর্ভূক্ত। সুবহনাল্লাহ! তারা বললো, আপনাদের দিয়ে আমাদের কোনো প্রয়োজন নেই। তারপর তাদের একজন বিকট চিৎকার দিয়ে বললো ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাদের মধ্য থেকে যারা আমাদের সমকক্ষ আমাদের গোত্রের উনাদেরকে পাঠান। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন- হে মুহাজির কুরাইশ গোত্রের হযরত উবায়দা ইবনে হারিস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম ও হযরত সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম! আপনারা দাঁড়ান। অতপর উনারা দাঁড়ালেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদেরকে তাদের মুকাবিলা করার জন্য নির্দেশ মুবারক দিলেন। উনারা তাদের নিকটবর্তী হলেন। তখন কুরাইশ-কাফিররা বললো আপনারা কারা? হযরত উবাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন- আমি হযরত উবাইদা ইবনে হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। সাইয়্যিদুশ শুহাদা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম তিনি বললেন আমি সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম। অতপর সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন- আমি সাইয়্যিদুনা হযরত আলী ইবনে আবি ত্বলিব আলাইহিস সালাম। যখন উনারা নিজ নিজ পরিচয় মুবারক দিলেন তখন প্রতিপক্ষ কাফিররা খুশি হয়ে বললো, ঠিক আছে। এবার মর্যাদাসম্পন্ন প্রতিপক্ষ মিলে গেছে। হযরত উবায়দা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কাট্টা কাফির উতবা ইবনে রবীয়ার বিরুদ্ধে, সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা রদ্বিয়ল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কাট্টা কাফির শায়বা ইবনে রবীয়ার বিরুদ্ধে এবং সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি ওয়ালীদ ইবনে উতবার বিরুদ্ধে জিহাদ শুরু করে দিলেন। অতপর সাইয়্যিদুশ শুহাদা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম তিনি শায়বাকে এবং সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি ওয়ালীদকে পাল্টা আঘাত হানার সুযোগই দিলেন না। প্রথম আঘাতেই তাদের হত্যা করে জাহান্নামে প্রেরণ করলেন। সুবহানাল্লাহ! হযরত উবাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এবং বিপরীতে কাট্টা কাফির উতবা একে অপরকে একটি করে আঘাত বিনিময় করেন এবং একে অপরকে আহত করলেন। সাইয়্যিদুশ শুহাদা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম এবং সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনারা দ্রুত ছুটে গিয়ে নিজ নিজ তরবারির আঘাতে উতবাকে হত্যা করলেন। এরপর উনারা হযরত উবায়দা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা উনাকে কাঁধে তুলে নিয়ে মুসলিম বাহিনীর মধ্যে পৌঁছে দিলেন”। সুবহানাল্লাহ! (আস সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্বী জিলদ- ৯, পৃষ্ঠা- ১৩১, আস সীরাতুল হালাবিয়্যাহ, সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম) 


সম্মানিত বদর জিহাদ চলাকালীন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দোয়া মুবারক: ‘সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম’ গ্রন্থে আরো উল্লেখ রয়েছে, “এরপর উভয় পক্ষের সৈন্যদের ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হলো এবং একদল অপর দলের নিকটবর্তী হলো। ইতঃপূর্বে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নির্দেশ মুবারক দিয়েছিলেন যে, উনার নির্দেশ মুবারক না আসা পর্যন্ত আপনারা যেন আক্রমণ না করেন। তিনি আরো বলে দিয়েছিলেন কুরাইশ কাফির-মুশরিকরা আপনাদেরকে ঘিরে ফেললে তীর নিক্ষেপ করে তাদেরকে হটিয়ে দিবেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এ সময় মুসলিম বাহিনীকে সারিবদ্ধ করে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনাকে সাথে নিয়ে তাঁবু মুবারকে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন।” সুবহানাল্লাহ!
প্রসিদ্ধ তারিখ ও গ্রন্থসমূহে উল্লেখ রয়েছে,
 قَالَ حضرت ابْنُ إسْحَاقَ رحمة الله عليه، ثُمّ عَدّلَ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ الصّفُوفَ وَرَجَعَ إلَى الْعَرِيشِ فَدَخَلَهُ وَمَعَهُ فِيهِ حضرت أَبُو بَكْرٍ الصّدّيقُ عليه السلام، لَيْسَ مَعَهُ فِيهِ غَيْرُهُ وَرَسُولُ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يُنَاشِدُ رَبّهُ مَا وَعَدَهُ مِنْ النّصْرِ وَيَقُولُ فِيمَا يَقُولُ اللّهُمّ إنْ تَهْلِكْ هَذِهِ الْعِصَابَةُ الْيَوْمَ لَا تُعْبَدْ وَ حضرت أَبُو بَكْرٍ عليه السلام يَقُولُ يَا نَبِيّ اللّهِ صلى الله عليه و سلم كَفَاك مُنَاشَدَتُك رَبّك ، فَإِنّ اللّهَ مُنَجّزٌ لَك مَا وَعَدَك . صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ خَفْقَةً وَهُوَ فِي الْعَرِيشِ ثُمّ انْتَبَهَ فَقَالَ " أَبْشِرْ يَا حضرت أَبَا بَكْرٍ عليه السلام أَتَاك نَصْرُ اللّهِ هَذَا حضرت جِبْرِيلُ عليه السلام آخِذٌ بِعَنَانِ فَرَسٍ يَقُودُهُ عَلَى ثَنَايَاهُ النّقْعُ،
 অর্থ: “হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, অতপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত জিহাদ উনার জন্য কাতার সারিবদ্ধ করে তাঁবু মুবারকে ফিরে গেলেন। এ মুহূর্তে উনার সঙ্গে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম তিনি ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। তাঁবু মুবারকে গিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট প্রতিশ্রুতি সাহায্যপ্রাপ্তির জন্য দুয়া মুবারক করছিলেন। তিনি বললেন ইয়া বারী ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! আজ যদি আপনি এই দল বা মুসলান উনাদেরকে ধ্বংস করে দেন, তাহলে আপনার ইবাদত করার মতো পৃথিবীতে কেউ অবশিষ্ট থাকবেন না। এ সময় সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম তিনি অত্যান্ত বিনয়ের সাথে আরজু করলেন ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার দোয়া মুবারক যথেষ্ট হয়েছে। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি যে আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা তিনি অবশ্যই অতিশিঘ্রীই পূরণ করবেন। সুবহানাল্লাহ! এ সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। এরপর তিনি জাগ্রত হয়ে ইরশাদ মুবারক করলেন, হে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম! সুুসংবাদ গ্রহণ করুন। মহান আল্লাহ পাক উনার সাহায্য এসে গেছে। এইতো হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি ঘোড়ার লাগাম ধরে আছেন। আর উনার ঘোড়া মুবারকের সামনের দাঁতগুলো ধুলা-বালিযুক্ত।” সুবহানাল্লাহ! (সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম, জিলদ- ২ পৃষ্ঠা ২৮৭-২৮৮, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, সীরাতে হালাবিয়্যাহ)
  স্মরণীয় যে, সম্মানিত বদর জিহাদের দিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট এমন বিনীতভাবে দোয়া মুবারক করছিলেন যে, উনার কাঁধ মুবারক থেকে উনার সম্মানিত চাদর মুবারক পড়ে গিয়েছিল। সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি উনার সম্মানিত চাদর মুবারক উঠিয়ে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! অতপর সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম তিনি বললেন,
 فأَخَذَ حضرت أَبُو بَكْرٍ عليه السلام بِيَدِهِ فَقَالَ حَسْبُكَ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه و سلم فَقَدْ أَلْحَحْتَ عَلَى رَبِّكَ،
 অর্থ: অতপর সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হাত মুবারক ধরে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যথেষ্ট হয়েছে। আপনার রব মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আপনি চূড়ান্ত দোয়া মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ) 

মুসলমান বাহিনী উনাদের মধ্যে প্রথম শহীদ:
  ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’সহ অসংখ্য তারিখ ও গ্রন্থসমূহে উল্লেখ রয়েছে, “সম্মানিত জিহাদ মুবারক উনার শুরুতেই কাফিরদের পক্ষ থেকে একটি তীর এসে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার গোলাম হযরত মিহজা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার শরীর মুবারকে বিদ্ধ হয়ফলে তিনি শাহাদতী শা’ন মুবারক প্রকাশ করেন। তিনি হলেন সম্মানিত বদর জিহাদের প্রথম শহীদ। এরপর আদী ইবনে নাজ্জার গোত্রের হযরত হারিসা ইবনে সূরাকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নামক ছাহাবী উনার প্রতি তীর নিক্ষিপ্ত হয়। এ সময় তিনি হাওয মুবারক থেকে পানি পান করছিলেন। নিক্ষিপ্ত তীর উনার গলা মুবারকে বিদ্ধ হলে তিনিও শাহাদতী শা’ন মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
 এরপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মুসলিম বাহিনী তথা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের দিকে এগিয়ে গেলেন এবং উনাদেরকে সম্মানিত জিহাদ মুবারক উনার প্রতি অনুপ্রাণিত করে বললেন,
  وَاَلّذِي نَفْسُ حضرت مُحَمّدٍ صلى الله عليه و سلم بِيَدِهِ لَا يُقَاتِلُهُمْ الْيَوْمَ رَجُلٌ فَيُقْتَلُ صَابِرًا مُحْتَسِبًا، مُقْبِلًا غَيْرَ مُدْبِرٍ إلّا أَدْخَلَهُ اللّهُ الْجَنّةَ،
অর্থ: “ওই মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! যার কুদরতী হাত মুবারকে আমার মুবারক জীবন! আজ যে ব্যক্তি কাফির-মুশরিকদের বিরুদ্ধে সবর বা ধৈর্যের সাথে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারকের উদ্দেশ্যে জিহাদ করবেন এবং সামনে অগ্রসর হবেন, কোন অবস্থাতেই পিছু হটবেন না। এমতাবস্থায় যদি তিনি শাহাদতী শা’ন মুবারক প্রকাশ করেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে সর্বচ্চ জান্নাত মুবারক দান করবেন।” সুবহানাল্লাহ!
 এ সময় সালামা গোত্রের হযরত উমর ইবনে হুমাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কয়েকটি খোরমা হাতে নিয়ে খাচ্ছিলেন। তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কথা মুবারক শুনে বললেন, বাহ! বাহ! আমি দেখছি আমার এবং জান্নাতের মাঝে এতটুকু ব্যবধান রয়েছে যে আমি কাফিরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করে শহীদ হয়ে যাই। এই বলে তিনি উনার হাত মুবারক থেকে খোরমাগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে তরবারি নিয়ে কাফির-মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদে লিপ্ত হলেন এবং তিনি শহীদ না হওয়া পর্যন্ত জিহাদ করতে লাগলেন। সুবহানাল্লাহ!
 হযরত ইবনে ইসহক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, জিহাদের ময়দানে এক পর্যায় হযরত আওফ ইবনে হারিসা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার বান্দার উপর কোন কাজে বেশি খুশি হন? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন,
غَمْسُه يده في العَدُوّ حاسرًا
 অর্থ: “যখন বান্দা বর্মহীন হয়ে শত্রুদের উপর সর্বাত্মকভাবে আক্রমণ করে।” এ কথা শুনে তিনি নিজের বর্ম খুলে ফেলে দিলেন এরপর উনার তরবারি নিয়ে কাফিরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে করতে শহীদ হয়ে গেলেন। সুবহানাল্লাহ! (সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম, মুছান্নিফ ইবনে আবি শায়বাহ, মা’রিফাতুছ ছাহাবা, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া) 
সম্মানিত বদর জিহাদে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের উপস্থিতি:
 প্রসিদ্ধ তারিখ ও সীরত গ্রন্থসমূহে  হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বরাতে উল্লেখ রয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নবীইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিত বদর জিহাদের দিন তাঁবু মুবারক উনার মধ্যে অবস্থান মুবারক করছিলেন। হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারকে নিয়োজিত ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! এ সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া মুবারক করছিলেন। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
  إِذْ تَسْتَغِيثُونَ رَبَّكُمْ فَاسْتَجابَ لَكُمْ أَنِّي مُمِدُّكُمْ بِأَلْفٍ مِنَ الْمَلائِكَةِ مُرْدِفِينَ- وَ ما جَعَلَهُ اللَّهُ إِلاَّ بُشْرى وَ لِتَطْمَئِنَّ بِهِ قُلُوبُكُمْ وَ مَا النَّصْرُ إِلاَّ مِنْ عِنْدِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
 অর্থ: স্মরণ করুন! আপনারা যখন আপনাদের রব মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করেছিলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি তা কবুল করেছিলেন। আমি আপনাদের সাহায্য করবো এক হাজার হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাধ্যমে, যারা একের পর এক আগমন করবেন। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে নাযিল করেছেন কেবল আপনাদের জন্য সুসংবাদ দেয়ার জন্যে এবং এ উদ্দেশ্যে যাতে  আপনাদের অন্তরে প্রশান্তি আসে। বস্তুতঃ সাহায্য কেবলমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতেই এসে থাকেন। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাপরাক্রান্ত ও প্রজ্ঞাময়।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আনফাল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-৯-১০)
 সম্মানিত বদর জিহাদের দিন মহান আল্লাহ পাক তিনি পর্যায়ক্রমে একহাজার, তিন হাজার অতপর পাঁচ হাজার হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে নাযিল করেন। সুবহনাল্লাহ!
প্রসিদ্ধ তারিখ ও সীরত গ্রন্থসমূহে উল্লেখ রয়েছে,
قَالَ حضرت ابْنُ إسْحَاقَ رحمة الله عليه : وَحَدّثَنِي حضرت عَبْدُ اللّهِ بْنُ أَبِي بَكْرٍ رضى الله تعالى عنه أَنّهُ حَدّثَ عَنْ حضرت ابْنِ عَبّاسٍ رضى الله تعالى عنه قَالَ حَدّثَنِي رَجُلٌ مِنْ بَنِي غِفَارٍ ، قَالَ أَقْبَلْت أَنَا وَابْنُ عَمّ لِي حَتّى أَصْعَدْنَا فِي جَبَلٍ يُشْرِفُ بِنَا عَلَى بَدْرٍ وَنَحْنُ مُشْرِكَانِ نَنْتَظِرُ الْوَقْعَةَ عَلَى مَنْ تَكُونُ الدّبْرَةُ . فَنَنْتَهِبُ مَعَ مَنْ يَنْتَهِبُ . قَالَ فَبَيْنَا نَحْنُ فِي الْجَبَلِ إذْ دَنَتْ مِنّا سَحَابَةٌ فَسَمِعْنَا فِيهَا حَمْحَمَةَ الْخَيْلِ فَسَمِعْت قَائِلًا يَقُولُ اُقْدُمْ حَيْزُومُ فَأَمّا ابْنُ عَمّي فَانْكَشَفَ قِنَاعُ قَلْبِهِ فَمَاتَ مَكَانَهُ وَأَمّا أَنَا فَكِدْت أَهْلَكَ ثُمّ تَمَاسَكْت
 অর্থ: “হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমার কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি। নিশ্চয়ই তিনি বর্ণনা করেন হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে। তিনি বলেন, বনূ গিফারের এক ব্যক্তি আমার নিকট বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, সম্মানিত বদর জিহাদের দিন আমি ও আমার এক চাচাতো ভাই বদরের পার্শ্ববর্তী একটি পাহাড়ে উঠে সম্মানিত বদর জিহাদের দৃশ্য দেখছিলাম যে, কারা পরজিত হয় ও কারা বিজয় হন। তখনো আমরা ছিলাম মুশরিক। আমরা লুটেরাদের সাথী হয়ে লুটতারাজ করার অপেক্ষায় ছিলাম। তিনি বলেন, আমরা পাহাড়ে থাকা অবস্থায় এক টুকরা মেঘ আমাদের কাছে এলো। আমরা সেই মেঘের মধ্যে ঘোড়ার ডাক শুনতে পেলাম। আর জনৈক ব্যক্তিকে বলতে শুনলা হায়যুম! সামনে এগিয়ে যাও। এ সময় আমার চাচাতো ভাইয়ের প্রাণরূহ ওই স্থানেই বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সে মারা যায়। আমি মরার উপক্রম হয়ে কোনো রকমে বেঁচে যাই।”
প্রসিদ্ধ তারিখ ও সীরত গ্রন্থসমূহে উল্লেখ রয়েছে,
 قَالَ حضرت ابْنُ إسْحَاقَ رحمة الله عليه وَحَدّثَنِي حضرت عَبْدُ اللّهِ بْنُ أَبِي بَكْرٍ رضى الله تعالى عنه، عَنْ بَعْضِ بَنِي سَاعِدَةَ عَنْ أَبِي أُسَيْدٍ مَالِكِ بْنِ رَبِيعَةَ ، وَكَانَ شَهِدَ بَدْرًا ، قَالَ بَعْدَ أَنْ ذَهَبَ بَصَرُهُ لَوْ كُنْت الْيَوْمَ بِبَدْرِ وَمَعِي بَصَرِي لَأَرَيْتُكُمْ الشّعْبَ الّذِي خَرَجَتْ مِنْهُ الْمَلَائِكَةُ لَا أَشُكّ فِيهِ وَلَا أَتَمَارَى
 অর্থ: “হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বনূ সাঈদার জনৈক ব্যক্তি সূত্রে আমার কাছে হযরত আবূ উসাইদ মালিক ইবনে রবীয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেছেন, যিনি সম্মানিত বদর জিহাদে অংশগ্রহণ করেছিলেন। বৃদ্ধ বয়সে অন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তিনি বলতেন আজ যদি আমার দৃষ্টিশক্তি থাকত এবং সম্মানিত বদর প্রান্তরে থাকতাম, তাহলে আমি অবশ্যই আপনাদেরকে সেই গিরিপথটি দেখাতাম, যেখান থেকে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা বেরিয়ে এসেছিলেন। এ ব্যাপারে আমার কোনো সংশয় ও সন্দেহ নেই।” সুবহানাল্লাহ!
 প্রসিদ্ধ তারিখ ও সীরত গ্রন্থসমূহে উল্লেখ রয়েছে,
 عَنْ حضرت أَبِي دَاوُدَ الْمَازِنِيّ رضى الله تعالى عنه  وَكَانَ شَهِدَ بَدْرًا ، قَالَ إنّي لَأَتّبِعُ رَجُلًا مِنْ الْمُشْرِكِينَ يَوْمَ بَدْرٍ لِأَضْرِبَهُ إذْ وَقَعَ رَأْسُهُ قَبْلَ أَنْ يَصِلَ إلَيْهِ سَيْفِي ، فَعَرَفْت أَنّهُ قَدْ قَتَلَهُ غَيْرِي
 অর্থ: “হযরত আবূ দাউদ মাযিনী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। যিনি সম্মানিত বদর জিহাদে শরীক ছিলেন। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আমি সম্মানিত বদর জিহাদ উনার দিন এক মুশরিককে হত্যা করার জন্য তাকে ধাওয়া করলাম। হঠাৎ দেখলাম যে, আমার তরবারির আঘাত তার শরীরে লাগার আগেই তার মাথা দেহ থেকে আলাদা হয়ে গেল। ফলে আমি স্পষ্টই বুঝতে পারলাম যে, আমি ছাড়া অন্য কেউ তাকে হত্যা করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (সীরাতুন নবী- ইবনে হিশাম,  আর রওদ্বুল উনাফ, উয়ূনুল আছার ফি ফয়ূনিল মাগাযী)
 পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
  بَلَىٰ ۚ إِن تَصْبِرُوا وَتَتَّقُوا وَيَأْتُوكُم مِّن فَوْرِهِمْ هَـٰذَا يُمْدِدْكُمْ رَبُّكُم بِخَمْسَةِ آلَافٍ مِّنَ الْمَلَائِكَةِ مُسَوِّمِينَ
 অর্থ: “অবশ্যই আপনারা যদি ছবব বা ধৈর্য ধারণ করেন এবং তাকওয়া বা খোদ-ভীতি অর্জন করেন আর যদি তারা আপনাদের উপর চড়াও হয়, তাহলে আপনাদের রব যিনি মহান আল্লাহ পাক তিনি চিহ্নিত ঘোড়ার উপর পাঁচ হাজার হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে আপনাদের সাহায্যে পাঠাবেন।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ- ১২৫)
 উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মাধ্যমে বুঝা যায় যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত বদর জিহাদের দিন পাঁচ হাজার হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে প্রেরণ করেন। সুবহানাল্লাহ! আর হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাথা মুবারকে পাগড়ী ছিলো। এবং পাগড়ীর রং ছিলো সাদা। সুবহানাল্লাহ!
 পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
 عن حضرت علي بن أبي طالب عليه السلام و حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه وغيرهما أن الملائكة أعتمت بعمائم بي قد أرسلوها بين أكتافهم،
 অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার এবং হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ও অন্যান্য হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের থেকে বর্ণিত আছে, নিশ্চয়ই হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা সাদা পাগড়ী পরিধান করেছিলেন যার শামলা ছিলো উনাদের দু’কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীরে মুনীর)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال وأيد الله نبيه والمؤمنين بألف من الملائكة. فكان حضرت جبريل عليه السلام في خمسمائة من الملائكة مجنبة، و حضرت ميكائيل عليه السلام في خمسمائة من الملائكة مجنبة. و هذا هو المشهور-
অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং উনার উম্মতগণকে একহাজার হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের দ্বারা সাহায্য করেন। উনাদের মধ্যে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনার নেতৃত্বে পাঁচশত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম  একপার্শ্বে ছিলেন এবং হযরত মীকায়ীল আলাইহিস সালাম উনার নেতৃত্বে পাঁচশত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা ছিলেন অন্য পার্শ্বে। এটাই প্রসিদ্ধ বর্ণনা।” (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, জিলদ-৩য়, পৃষ্ঠা- ২৭৫ সীরাতুন নবী- ইবনে কাছীর)
 অন্য বর্ণনায় রয়েছে, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি এক হাজার হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ডান পার্শ্ব মুবারকে অবতরণ করেন। হযরত মীকায়ীল আলাইহিস সালাম তিনি এক হাজার হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম উনাদেরকে নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম উনার বাম পার্শ্ব মুবারকে অবতরণ করেন। আর উনাদের উভয়ের মাঝখানে ছিলেন সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম তিনি। আপরদিকে হযরত  ইসরাফীল আলাইহিস সালাম তিনিও এক হাজার হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে নিয়ে অবতীর্ণ হন এবং বর্শা দ্বারা সম্মানিত জিহাদ করেন। ফলে উনার বগল রক্তে রঞ্জিত হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ! এ বর্ণনা থেকে প্রতিমান হয় যে, সম্মানিত বদর জিহাদের দিন মহান আল্লাহ পাক তিনি তিন হাজার হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে অবতীর্ণ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
 পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
 عَنْ حضرت عَلِيٍّ عليه السلام ، قَالَ : لَمَّا كَانَ يَوْمُ بَدْرٍ قَاتَلْتُ شَيْئًا مِنْ قِتَالٍ ، ثُمَّ جِئْتُ مُسْرِعًا لأَنْظُرَ مَا فَعَلَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، فَجِئْتُ فَإِذَا هُوَ سَاجِدٌ ، يَقُولُ : يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ لاَ يَزِيدُ عَلَيْهِمَا ، ثُمَّ رَجَعْتُ إِلَى الْقِتَالِ ، ثُمَّ جِئْتُ وَهُوَ سَاجِدٌ يَقُولُ ذَلِكَ ، ثُمَّ ذَهَبْتُ إِلَى الْقِتَالِ ، ثُمَّ رَجَعْتُ، وَهُوَ يَقُولُ ذَلِكَ فَفَتَحَ اللَّهُ عَلَيْهِ.
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সম্মানিত বদর জিহাদের দিন আমি অল্প কিছুক্ষণ জিহাদ করার পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কি করছেন তা দেখার জন্য দ্রুত উনার তাঁবু মুবারকে ছুটে যাই। গিয়ে দেখি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সিজদা মুবারকে রয়েছেন এবং তিনি বলছেন,
يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ
অর্থ: ‘হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী! খলিক্ব মালিক মহান আল্লাহ পাক। এই বাক্য মুবারক উনার থেকে চেয়ে বেশি কিছু আমি বলতে শুনিনি। আমি আবার দ্রুত জিহাদক্ষেত্রে ফিরে গেলাম। কিছুক্ষণ পর পুনরায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট চলে আসলাম, দেখলাম তিনি পূর্বের ন্যায় সিজদা মুবারকে রত আছেন এবং সেই একই তাসবীহ মুবারক অনবরত পড়ে যাচ্ছেন। সুবহানাল্লাহ! আমি আবার জিহাদের ময়দানে চলে গেলাম। তারপর কিছুক্ষণ পর আবারো ফিরে আসলাম। দেখলাম তিনি তখনো সিজদা মুবারকে রত আছেন এবং সেই তাসবীহ মুবারকই পাঠ করছেন। সুবহানাল্লাহ! অবশেষে এ অবস্থার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে সম্মানিত বিজয় মুবারক দান করলেন। সুবহানাল্লাহ! (মুসনাদুল বাযযার, মাযমাউয যাওয়ায়িদ ওয়া মানবাউল ফাওয়ায়িদ, গাযওয়াতুর রসূলি সিরাইয়াহ, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
প্রসিদ্ধ তারিখ ও সীরত গ্রন্থসমূহে উল্লেখ রয়েছে,
 عن حضرت عبد الله بن مسعود رضى الله تعالى عنه قال ما سمعت مناشدا ينشد حقا له أشد من مناشدة محمد صلى الله عليه وسلم يوم بدر، جعل يقول: " اللهم إني أنشدك عهدك ووعدك، اللهم إن تهلك هذه العصابة لا تعبد " ثم التفت وكأن شق وجهه القمر. وقال " كأني أنظر إلى مصارع القوم عشية "
 অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার দুয়া মুবারক প্রসঙ্গে ইরশাদ মুবারক করেছেন, সম্মানিত বদর জিহাদ মুবারকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্যে যেরূপ বিনয় মুবারক প্রকাশ করেছিলেন অন্য কোনো দোয়াকারীকে সেরূপ বিনয়ী হতে আমি কখনো দেখিনি। (মূলত; নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সমস্ত জিন-ইনসান তথা গোটা কায়িনাতবাসীর জন্য আদর্শ মুবারক। সুবহানাল্লাহ! এখানে উম্মত কিভাবে কতটুকু একাগ্রচিত্তে বিনীতভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া তথা মুনাজাত মুবারক করবেন, সেই বিষয়টি তা’লীম বা শিক্ষা মুবারক দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি দোয়া তথা মুনাজাত মুবারক করেছিলেন, হে বারী ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! আমি আপনার থেকে প্রতিশ্রুতি ও ওয়াদা মুবারকের বাস্তবায়ন কামনা করি। হে বারী ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! এই ক্ষুদ্র দলটি যদি ধ্বংস হয়ে যান তাহলে আপনার ইবাদত-বন্দেগী করার কেউ অবশিষ্ট থাকবে না। এই দোয়া মুবারক করে তিনি যখন ফিরে তাকালেন এবং তখন উনার সম্মানিত চেহারা মুবারকে জ্যাৎস্নার চাঁদ অপেক্ষা বেশি নূর মুবারক উদ্ভাসিত হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি বলেন, আমি যেন শত্রুদের নিহত হয়ে পড়ে থাকার স্থানগুলো দেখতে পাচ্ছি। (দালায়িলুন নবুওয়াহ, আল খাছায়িছুল কুবরা, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, তারিখুল ইসলাম- ইমাম যাহাবী)
সম্মানিত বদর জিহাদ উনার দিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অনেক দোয়া মুবারক করার পর লৌহ বর্ম মুবারক পরা অবস্থায় তাঁবু মুবারক থেকে বেরিয়ে আসলেন তখন তিনি এই পবিত্র আয়াত শরীফ মুবারক তিলওয়াত মুবারক করতে লাগলেন:
  سَيُهْزَمُ الْجَمْعُ وَيُوَلُّونَ الدُّبُرَ -بَلِ السَّاعَةُ مَوْعِدُهُمْ وَالسَّاعَةُ أَدْهَىٰ وَأَمَرُّ- إِنَّ الْمُجْرِمِينَ فِي ضَلَالٍ وَسُعُرٍ
অর্থ: “এ দলতো শীঘ্রই পরাজিত হবে এবং পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে। অধিকন্তু ক্বিয়ামত তাদের শাস্তির নির্ধারিত কাল এবং ক্বিয়ামত হবে কঠিনতর ও তিক্ততর। নিশ্চয়ই অপরাধীরা বিভ্রান্ত ও বিকারগ্রস্ত।” (পবিত্র সূরা ক্বমার শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ- ৪৫-৪৭)
 উক্ত আয়াত শরীফদ্বয় নাযিল হয় পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে আর উনার বাস্তবায়ন দৃষ্টিগোচর হয় সম্মানিত বদর জিহাদের দিন। সুবহানাল্লাহ! যখন পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছিল, তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বলেছিলেন ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কোন দল পরাজিত হবে আর কোন দল বিজয় লাভ করবেন? এরপর যখন সম্মানিত বদর জিহাদ উনার দিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি লৌহ বর্ম পরিধান মুবারক করে অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ তিলওয়াত মুবারক করতে লাগলেন তখন তিনি উনার সঠিক মর্ম উপলব্ধি করতে পারলেন। সুবহানাল্লাহ!  পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে শেষে যে বিষয়টি বলা হয়েছে তা হলো জিহাদে পরাস্ত বা নিহত হওয়াতো কাফির-মুশরিকদের আসল শাস্তি নয়। তাদের আসল শাস্তি শুরু হবে ক্বিয়ামতের সময় থেকে। আখিরাতের শাস্তিই হচ্ছে প্রকৃত শাস্তি। ওই শাস্তি পৃথিবীর শাস্তির তুলনায় অনেক কঠিন ও অতীব তিক্ত বিস্বাদযুক্ত। বরং আখিরাতের শাস্তির তুলনায় দুনিয়ার শাস্তি যেনো কোনো শাস্তিই নয়। আর এখানে বিশেষ করে কুরাইশ কাফির-মুশরিক তথা সমস্ত ইহুদী, নাছারা, হিন্দু, বৌদ্ধ বা সমস্ত বিধর্মীরাই এসব শাস্তির উপযুক্ত। এরা সবাই মূলত যমীনে পথভ্রষ্ট এবং পরকালে শাস্তিগ্রস্ত। (তাফসীরে মাযহারী)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
 عَنْ حضرت ابْنِ عَبّاسٍ رضى الله تعالى عنه، قَالَ كَانَ الْمَلَكُ يَتَصَوّرُ فِي صُورَةِ مَنْ يَعْرِفُونَ مِنْ النّاسِ يُثَبّتُونَهُمْ فَيَقُولُ إنّي قَدْ دَنَوْت مِنْهُمْ فَسَمِعْتهمْ يَقُولُونَ لَوْ حَمَلُوا عَلَيْنَا مَا ثَبَتْنَا، لَيْسُوا بِشَيْءٍ.
 অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সম্মানিত বদর জিহাদ উনার দিন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা কোন পরিচিত ব্যক্তির আকৃতি ধারণ করে কারও সামনে হাযির হতেন এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে ইস্তেকামাত বা অবিচল থাকার সাহস যোগাতেন। আর হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম উনারা মুসলমান উনাদের নিকটবর্তী হতেন তখন উনারা বলতেন আমরা কাফির-মুশরিকদের কাছে গিয়েছিলাম, শুনলাম তারা বলাবলি করছে মুসলমান উনারা যদি আমাদের উপড় আক্রমণ করেন তা হলে আমরা টিকতে পারবো না। আর কাফির-মুশরিকরা আপনাদের কিছুই করতে পারবে না। এ জাতীয় আরো উৎসাহ ব্যাঞ্জক কথা হযরত ফেশেতা আলাইহিমুস সালাম উনারা শুনাতেন।” (দালায়িলুন নবুওয়াহ, খাছায়িছুল কুবরা, মাগাযিউল ওয়াক্বীদি, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, তারিখুল ইসলাম-ইমাম যাহাবী)
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
 إِذْ يُوحِي رَبُّكَ إِلَى الْمَلَائِكَةِ أَنِّي مَعَكُمْ فَثَبِّتُوا الَّذِينَ آمَنُوا ۚ سَأُلْقِي فِي قُلُوبِ الَّذِينَ كَفَرُوا الرُّعْبَ فَاضْرِبُوا فَوْقَ الْأَعْنَاقِ وَاضْرِبُوا مِنْهُمْ كُلَّ بَنَانٍ
 অর্থ: “স্মরণ করুন! যখন আপনার রব মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি অহী মুবারক করেন, নিশ্চয়ই আমি আপনাদের সাথে আছি সুতরাং মু’মিন উনাদের অবিচল রাখুন। অচিরেই আমি কাফিরদের অন্তরে ভীতির সঞ্চার করে দিবেন। কাজেই তাদের গর্দানের উপর আঘাত করুন এবং তাদের সমস্ত অঙ্গ-প্রতঙ্গেও আঘাত করুন।” (পবিত্র সূরা আনফাল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-১২)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن حضرت أبي واقد الليثي رضى الله تعالى عنه قال إني لاتبع رجلا من المشركين لاضربه فوقع رأسه قبل أن يصل إليه سيفي فعرفت أن غيري قد قتله.
অর্থ: “হযরত আবূ ওয়াকিদ আল লায়ছী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সম্মানিত বদর জিহাদ উনার দিন আমি এক মুশরিককে পিছন থেকে মারার জন্য ধাওয়া করি। কিন্তু আমার তরবারি তার শরীরে লাগার আগেই তার মাথা  দেহচ্যুত হয়ে পড়ে যায়  এতে বুঝলাম যে, অন্য কেউ তাকে হত্যা করেছে।” সুবহানাল্লাহ! (দালায়িলুন নবুওয়াহ, খছায়িছুল কুবরা, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
:
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে,
  عن حضرت الربيع بن أنس رضى الله تعالى عنه. قال كان الناس يوم بدر يعرفون قتلى الملائكة ممن قتلوهم بضرب فوق الاعناق وعلى البنان مثل سمة النار وقد أحرق به.
 অর্থ: “হযরত রবী’ ইবনে আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সম্মানিত বদর জিহাদ উনার দিন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের হাতে যে সমস্ত কাফির-মুশরিকরা নিহত হয়েছিলো লোকজন তাদেরকে চিনতে পারতো। কেননা সেই সমস্ত মৃত দেহের কাঁধের উপরে ও জোড়ায় জোড়ায় আগুন পোড়ান দাগ থাকতো।” (দালায়িলুন নবুওয়াহ, ফতহুল বারী, খছায়িছুল কুবরা, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
 পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
 عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه. قال كانت سيماء الملائكة يوم بدر عمائم بيض قد أرخوها على ظهورهم إلا جبريل فإنه كانت عليه عمامة صفراء.
 অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সম্মানিত বদর জিহাদ উনার দিন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতীক চিহ্ন ছিলো সাদা পাগড়ী আর সেই পাগড়ীর শামলা দু’কাঁধের মধ্যবর্তীস্থলে তথা পিঠের উপর ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। তবে হযরত জিবরীল আলাইহিসসালাম তিনি ছিলেন ব্যতিক্রম। তিনি পরিধান করেছিলেন ঘিয়া বর্ণের পাগড়ী।” (দালয়িলুন নবুওয়াহ, উমদাতুল ক্বরী শরহে ছহীহিল বুখারী, মাউসুয়াতুত্ তাখরিজ, খছায়িছুল কুবরা, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن حضرت سهيل بن عمرو رضى الله تعالى عنه يقول لقد رأيت يوم بدر رجالا بيضا على خيل بلق بين السماء والارض معلمين يقتلون ويأسرون.
 অর্থ: “হযরত সুহাইল ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই সম্মানিত বদর জিহাদ উনার দিন আমি কিছু সংখ্যক গৌরবর্ণের লোককে সাদা-কালো বর্ণের ঘোড়ার উপরে আসমান ও যমীনের মাঝখানে দেখেছি। উনারা ছিলেন বিশেষ প্রতীক চিহ্নধারী, উনারা শত্রুদের হত্যা করেছিলেন এবং বন্দিও করেছিলেন”। সুবহানাল্লাহ! (দালায়িলুন নবুওয়াহ, জামিউল আহাদীছ, খাছায়িছুল কুবরা, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, মুখতাছারু তারিখে দামেশক)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن حضرت حمزة بن صهيب رحمة الله عليه عن أبيه قال فما ادري كم يد مقطوعة وضربة جائفة لم يدم كلمها وقد رأيتها يوم بدر.
অর্থ: “হযরত হামযা ইবনে হযরত সুহাইল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি উনার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, সম্মানিত বদর উনার জিহাদের দিন কাফির-মুশরিকদের কত যে কর্তিত হাত ও গভীর যখম দেখেছি অথচ সে সব যখম ও ক্ষতস্থানে রক্তের কোন চিহ্ন ছিলো না।” (সীরাতুন নবী- ইবনে কাছীর, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার অন্যত্র ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
 عَنْ حضرت أَبِي بُرْدَةَ بْنِ نِيَارٍ رضى الله تعالى عنه قال جئت يَوْمَ بَدْرٍ بِثَلَاثَةِ رُءُوسٍ فَوَضَعْتهَا بَيْنَ يَدَيْ رَسُولِ اللّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْت يَا رَسُولَ اللّهِ أَمّا رَأْسَانِ فَقَتَلْتهمَا، وَأَمّا الثّالِثُ فَإِنّي رَأَيْت رَجُلًا أَبْيَضَ طَوِيلًا ضَرَبَهُ فَتَدَهْدَى أَمَامَهُ فَأَخَذْت رَأْسَهُ. فَقَالَ رَسُولُ اللّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاكَ فُلَانٌ مِنْ الْمَلَائِكَةِ.
অর্থ: “হযরত আবূ বুরদা ইবনে নাইয়ার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সম্মানিত বদর জিহাদের দিন আমি তিনটি ছিন্ন মস্তক এনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মুখে রেখে বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এই দু’জনকে আমি হত্যা করেছি। কিন্তু তৃতীয় জনকে দেখলাম, নিশ্চয়ই একজন দীর্ঘকায় সাদা পাগড়ী পরিধান করা লোক এসে আঘাত করেছে। ফলে আমার সামনে তার মস্তক পড়ে গেছে। তার মস্তক আমি উঠিয়ে আনি। তা শুনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তিনি হচ্ছেন উমুক হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম তিনি।” সুবহানাল্লাহ!  (খাছায়িছুল কুবরা, সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, মাগাযিউল ওয়াক্বিদী, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
 প্রসিদ্ধ তারিখ ও ইতিহাস গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে,
 عن حضرت موسى بن محمد بن إبراهيم رحمة الله عليه عن أبيه. قال كان حضرت السائب بن أبي حبيش  رضى الله تعالى عنه يحدث في زمن حضرت عمر عليه السلام يقول والله ما أسرني أحد من الناس، فيقال فمن ؟ يقول: لما انهزمت قريش انهزمت معها فأدركني رجل أشعر طويل على فرس أبيض فأوثقني رباطا وجاءحضرت عبد الرحمن بن عوف رضى الله تعالى عنه فوجدني مربوطا فنادى في العسكر من أسر هذا ؟ حتى انتهى بي إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال من أسرك ؟ قلت لا أعرفه وكرهت أن أخبره بالذي رأيت فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: " أسرك ملك من الملائكة " اذهب يا حضرت ابن عوف رضى الله تعالى عنه بأسيرك.
 অর্থ: “হযরত মূসা ইবনে মুহম্মদ ইবনে ইবরাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি  উনার থেকে বর্ণিত। তিনি উনার সম্মানিত পিতা উনার থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন হযরত সাইব ইবনে আবূ হুবাইশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত খিলাফতকালে বলতেন- মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! সম্মানিত বদর জিহাদ উনার দিন আমাকে কোনো মানুষ বন্দি করেনি। উনাকে জিজ্ঞেস করা হতো তাহলে কে আপনাকে বন্দি করেছিলেন? তিনি বলতেন- কুরাইশ বাহিনী যখন পরাজিত হয়ে পলায়ান করছিল, তখন আমিও তাদের সাথে পলায়ন করছিলাম। এ সময় সাদা ঘোড়ায় আরোহী লম্বা চুলধারী তথা সুন্নতী বাবরি চুলওয়ালা এক ব্যক্তি আমাকে ধরে বেঁধে ফেলে। কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আসেন। অতপর তিনি আমাকে বাঁধা অবস্থায় দেখে মুসলিম সৈন্যবাহিনী উনাদের মধ্যে ঘোষণা করেন- উনাকে কে বন্দি করেছেন? ঘোষণা দিতে দিতে তিনি আমাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এনে হাযির করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন- আপনাকে কে বন্দি করেছেন? আমি বললাম উনাকে আমি চিনি না। তবে যাকে দেখেছি উনার বর্ণনা দিতে পারছি না। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনাকে বন্দি করেছেন জনৈক ফেরেশতা আলাইহিস সালাম তিনি। এরপর তিনি হযরত ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনাহু উনাকে বললেন, আপনার বন্দিকে আপনি নিয়ে যান।” (দালায়িলুন নবুওয়াহ, সীরাতুন নবী- ইবনে কাছীর, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)

0 Comments: