হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ১০৬০-১২৭৯) (গ)


নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের উপস্থিতিতে ‘সম্মানিত মসজিদে নববী শরীফ’-এ সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ পড়ান। এই সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে লক্ষ্য করে ইরশাদ মুবারক করেন, হে হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনি যান, সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাঈন আলাইহিস সালাম উনাকে, সাইয়্যিদুনা হযরত ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে, সাইয়্যিদুনা হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে এবং হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে ডেকে আনুন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নির্দেশ মুবারক-এ সকল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা উপস্থিত হন। তারপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ পড়ান। সুবহানাল্লাহ!
 বিভিন্ন কিতাবের বর্ণনা অনুযায়ী নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুর রবি’য়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ-এ নিম্নোক্ত খুতবাহ মুবারক পাঠ করেন,
" الحمد لله المحمود بنعمته، المعبود بقدرته، المطاع بسلطانه، المرهوب من عذابه، المرغوب إليه فيما عنده، النافذ أمره في سمائه وأرضه، الذي خلق الخلق بقدرته، وميزهم بأحكامه، وأعزهم بدينه، كرمهم بنبيه محمد صلى الله عليه وسلم. ثم إن الله جعل المصاهرة نسباً لا حقاً، وأمراً مفترضاً، وشج به الأرحام، وألزمها الأنام ، فقال تبارك وتعالى: " وهو الذي خلق من الماء بشراً فجعله نسباً وصهراً وكان ربك قديراً  فأمر الله يجري إلى قضائه، وقضاؤه يجري إلى قدره، ولكل قضاء قدر، ولكل قدر أجل، ولكل أجل كتاب؛ " يمحو الله ما يشاء ويثبت وعنده أم الكتاب " ثم إن ربي أمرني أن أزوج فاطمة من علي بن أبي طالب، فأشهدكم أني قد زوجته إياها على أربع مئة مثقال فضة، إن رضي بذلك علي " - وكان النبي صلى الله عليه وسلم قد بعثه في حاجة - ثم إن رسول الله صلى الله عليه وسلم دعا بطبق فيه بسر، فوعه بين أيدينا، وقال: " انتهبوا " فبينا نحن ننتهب إذ أقبل علي، فتبسم النبي صلى الله عليه وسلم إليه وقال: " يا علي عليه السلام، إن الله أمرني أن أزوجك فاطمة، وقد زوجتكها على أربع مئة مثقال فضة، إن رضيت " فقال علي: رضيت يا رسول الله. ثم خر لله ساجداً. فلما رفع رأسه، قال له النبي صلى الله عليه وسلم: " بارك الله فيكما، وبارك عليكما، وأخرج منكما الكثير الطيب " . قال حضرت أنس رضى الله تعالى عنه فوالله لقد أخرج منهما الكثير الطيب.
অর্থ: “ মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য সমস্ত প্রশংসা যিনি উনার সম্মানিত নিয়ামত প্রকাশ উনার মাধ্যমে প্রশংসিত, তিনি উনার সম্মানিত কুদরত বা ক্ষমতা উনার মাধ্যমে ইবাদত পাওয়ার হক্বদার, তিনি এমন বাদশাহ যাঁর সকলেই আনুগত্য করেন, উনার আযাবের ভয়ে সবাই শঙ্কাগ্রস্ত, যেই সত্তাকে ভয় করা হয় উনার শাস্তি ও দাপটের কারণে। উনার নিকট যা কিছু আছে তা পেতে সবাই কাঙ্খিত। যিনি উনার আদেশ মুবারক আসমান ও যমীনে প্রয়োগকারী। তিনি তৈরী করেছেন উনার সৃষ্টিকে স্বীয় কুদরত বা ক্ষমতা উনার মাধ্যমে। তিনি উনার আহকাম বা বিধানকে সাজিয়েছেন তোমাদের জন্য এবং তাদেরকে সম্মানিত করেছেন উনার সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মাধ্যমে, তাদেরকে সম্মানিত করেছেন উনার নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাধ্যমে, অতপর নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি বৈবাহিক সূত্রে আত্মীয়তাকে করেছেন পরবর্তী বংশ জারিকরণ, প্রতিটি আদেশ মুবারক ফরয। তিনি মায়ের রেহেমকে  প্রস্তুত করেছেন তা আবশ্যক করেছেন সমগ্র সৃষ্টির জন্য। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “(মহান আল্লাহ পাক) তিনি সম্মানিত পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন মানব জাতিকে অতঃপর তাদেরকে রক্তগত, বংশগত বৈবাহিক সম্পর্কশীল করেছেন। তোমাদের রব মহান আল্লাহ পাক তিনি সব কিছু করতে সক্ষম।’ (পবিত্র সূরা ফুরক্বান: পবিত্র আয়াত শরীফ-৫৪) মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক উনার ফায়সালার উপর আর (প্রত্যেকটি ফয়সালা নির্ধারিত তাকদীর অনুযায়ী) আর প্রত্যেকটি ফায়সালা নির্ধারিত। আর প্রত্যেকটি নির্ধারিত বিষয় নিদৃষ্ট সময় পর্যন্ত। আর প্রত্যেকটি নিদৃষ্ট সময় লিপিবদ্ধ রয়েছে। “মহান আল্লাহ পাক তিনি যা ইচ্ছা মিটিয়ে দেন এবং যা ইচ্ছা বহাল রাখেন এবং মূল কিতাব উনার কাছেই রয়েছে।” (পবিত্র সূরা রা’দ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৯) অতঃপর আমার রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুর রবি’য়াহ হযরত আলাইহাস সালাম উনাকে যেন সাইয়্যিদুনা  হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার সাথে নিসবতুল আযীমা শরীফ সুসম্পন্ন করি। আমি আপনাদেরকে সাক্ষী রেখে সম্মানিত নিসবতুল আযীমা শরীফ সুসম্পন্ন করলাম। মহর মুবারক নির্দিষ্ট করেছি চারশত মিছকাল বা ৫০০ দিরহাম তথা ১৩১.২৫ তোলা রুপা বা তার সমপরিমাণ অর্থ। যদি সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি তাতে রাজি থাকেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে কোনো প্রয়োজনে পাঠালেন এবং অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে ডাকলেন এক পাত্র তাজা খেজুর নিয়ে। অতঃপর তিনি আমাদের মাঝে তা ছিটিয়ে দেয়ার জন্য বললেন এবং তিনি বললেন, আপনারা খেজুর সংগ্রহ করুন অতঃপর আমরা তা নিতে লাগলাম। সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি অগ্রসর হলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে, তিনি উনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলেন। সুবহানাল্লাহ! এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হে হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন যে আমি যেন সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুর রবি’য়াহ আলাইহাস সালাম উনার সাথে সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার নিসবতুল আযীমা শরীফ সুসম্পন্ন করি। আর চারশত মিছকাল বা ৫০০ দিরহাম দেনমহর ধার্য করে আপনার জাওজিয়াতে দিচ্ছি যদি আপনি রাজি থাকেন। সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমি রাজি। অতঃপর তিনি উনার সম্মানিত মাথা মুবারক নত করলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য সিজদা মুবারক করলেন। অতঃপর যখন তিনি উনার মাথা মুবারক উঠালেন তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাদের মাধ্যমে যাঁরা আসবেন উনাদেরকে বরকত দান করুন। আপনাদের উপর বরকত দান করুন। এবং আপনাদের উভয়ের থেকে যারা আসবেন উনাদেরকে বেমেছাল পবিত্রতা দান করুন।
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! যাঁরা উনাদের থেকে আসবেন উনারা বেমেছাল পবিত্রতা উনার অধিকারী।” সুবহানাল্লাহ! (মুুখতাছারু তারিখে দামেশক, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
 আযীমুশ শান মহাসম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ অনুষ্ঠানে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিজ হাত মুবারক-এ সকলের উদ্দেশ্যে খেজুর মুবারক ছিটানো প্রসঙ্গে  শায়েখ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘মাদারেজুন নুবুওওয়াহ’ উনার মধ্যেও উল্লেখ করেছেন। মূলত, বিবাহ অনুষ্ঠানে খেজুর ছিটানো খাছ সুন্নতে রসূলুল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!
স্মরণীয় যে এই লুপ্তপ্রায় সুন্নত মুবারক উনাকে পুনঃজীবিত করলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ইমাম ও মুজাদ্দিদ আ’যম, আখাছছুল খাছ আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুহইউস সুন্নাহ, জামিউল আলক্বাব ওয়ান নিসবত সম্মানিত রাজারবাগ শরীফ উনার সাইয়্যিদুনা হযরত মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! এছাড়া তিনি অসংখ্য অগণিত সুন্নত মুবারক উনাদেরকে জিন্দা মুবারক করছেন যা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। সুবহানাল্লাহ!
‘হিসনে হাসীন’ কিতাবের লেখক আল্লামা হযরত ইমাম জাজরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুর রবি’য়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম এবং সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাদের মাঝে আযীমুশ শান মহাসম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ অনুষ্ঠান মুবারক উনার পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হুজরা শরীফ উনার মধ্যে প্রবেশ করলেন। সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে পানি আনতে বললেন। সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুর রবি’য়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি কাঠের পেয়ালায় পানি নিয়ে এলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওই পানি মুবারকে মিশিয়ে দিলেন উনার পূত-পবিত্র মুখ মুবারক উনার আন নূরুল বারাকাত মুবারক। সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদাতুন নিসা আন নূরুর রবি’য়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে বললেন কাছে আসুন। তিনি কাছে এলেন ওই পানি মুবারক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার ছদর মুবারক ও মাথা মুবারকে ছিটিয়ে দিয়ে দোয়া মুবারক করলেন, হে বারী ইলাহী! আমি সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুর রবি’য়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে এবং উনার আল আওলাদ সন্তান-সন্ততি উনাদেরকে বিতারিত শয়তানের আক্রমণ থেকে আপনার আশ্রয়ে সোপর্দ করলাম। তারপর তিনি সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ  আন নূরুর রবি’য়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে লক্ষ্য করে ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনি আমার দিকে পিঠ মুবারক দিয়ে দাঁড়ান। তারপর তিনি উনার পিঠ মুবারক দিয়ে দাঁড়ালেন। অতপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পুনরায় সেই সম্মানিত পানি মুবারক ছিটিয়ে দিলেন উনার দু’ কাঁধ মুবারক উনার মধ্যে এবং সম্মানিত দোয়া মুবারক করলেন, হে বারী ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! আমি উনাকে এবং উনার সম্মানিত আল আওলাদ সন্তান-সন্ততি উনাদেরকে বিতাড়িত শয়তানের আক্রমণ থেকে আপনার আশ্রয়ে সোপর্দ করলাম।
অতপর আবার পানি আনতে বললেন। সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আমি বুঝলাম যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কি করবেন। আমি উঠে দাঁড়ালাম এবং পানি নিয়ে এলাম। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওই পানিতে উনার সম্মানিত পবিত্র মুখ মুবারক উনার আন নূরুল বারাকাত মুবারক দিলেন।
 তারপর বললেন সামনে আসুন। আমি উনার সামনে দাঁড়ালাম। তিনি আমার মাথায় ও মুখে মুবারক পানি ছিটিয়ে দিলেন। দোয়া মুবারক করলেন,
اللهم انى اعوذبك  و ذريته من الشيطان الرجيم
  হে বারী ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে এবং উনার যারা আল আওলাদ আলাইহিমুস সালাম (যমীনে) আসবেন উনাদেরকে বিতারীত শয়তান থেকে হিফাযত করুন।
 অতপর বললেন-
بسم الله و على بركته
 কোনো কোনো বর্ণনায় আছে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত নিসবতে আ’যীম শরীফ উনার মুবারক রাত্রিতে পবিত্র ইশার নামাযের পর সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুর রবি’য়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে নিয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত হুজরা শরীফ মুবারকে তাশরীফ গ্রহণ করলেন। তারপর পানির পাত্র হাতে নিয়ে উহাতে উনার পবিত্র মুখ মুবারকের আন নূরুল বারাকাত মুবারক মিশাইয়া পবিত্র সূরা নাস ও পবিত্র সূরা ফালাক্ব শরীফ এবং অন্যান্য দোয়া পাঠ করলেন। তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজাহাহু আলাইহিস সালাম উনাকে বললেন এই পানি পান করুন অতপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওযূ মুবারক করলেন এবং সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদতুনা আন নূরুর রবি’য়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে বললেন, এই পানি পান করুন। তারপর আবার তিনি ওযূ করলেন এবং বললেন, হে বারী তায়ালা মহান আল্লাহ পাক! উনারা দুজনই আমার আর আমি উনাদের। হে বারী ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! আমি যেমন পুত-পবিত্র থেকে পুত-পবিত্রতম অনুরূপভাবে উনাদেরকে পুত:পবিত্র থেকে পুত:পবিত্রতম হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা মুবারক করুন। অতপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদের দু’জনকে বললেন, আপনারা আপনাদের শয়ন কক্ষ মুবারকে চলে যান। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন হে বারে ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! উনাদের উভয়ের মধ্যে অশেষ মুহব্বত সৃষ্টি করে দিন। উনাদের মধ্যে এবং উনাদের আওলাদ (সন্তানদের) মধ্যে খায়ের বরকত দান করুন। উনাদের সকল প্রকার অভাব অনটন ও অস্থিরতা দূর করে দিন। উনাদের সকলকে হাক্বীক্বী কামিয়াবী দান করুন। উনাদের উপর রহমত বরকত দান করুন। উনাদের থেকে পুত-পবিত্র আল আওলাদ, সন্তান-সন্ততি পয়দা করুনআমীন! সুবহানাল্লাহ!’
সাইয়িদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নুরুর রবি’য়াহ যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত দেনমহর যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নির্ধারণ করেন। সুবহানাল্লাহ!
‘মুছান্নেফে ইবনে আবী শায়বা’ কিতাবে উল্লেখ রয়েছে, মুহম্মদ ইবনে ইবরাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
كَانَ صَدَاقُ بَنَاتِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَصَدَاقُ نِسَائِهِ خَمْسَ مِائَةِ دِرْهَمٍ.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বানাত (মেয়ে) আলাইহিন্নাস সালাম এবং হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মহর মুবারক ছিলো পাঁচশত দিরহাম বা সাড়ে বারো উক্বিয়্যাহ”।
স্বরণীয় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদাতুনা আন নুরুর রবি’য়াহ যাহারা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত মহর মুবারক নির্ধারণ করেছিলেন ৫০০ দিরহাম, যা ১৩১.২৫ তোলা রুপা (বা তার মূল্য)।
 সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদাতুনা আন নুরুর রবি’য়াহ যাহারা আলাইহাস সালাম উনার যে নিসবতে আযীম শরীফ উনার মহর মুবারক নির্ধারণ করা হয়, তাই মহরে ফাতেমী বলে পরিচিত। যা খাছ সুন্নত মুবারকের অন্তর্ভূক্ত। সুবহানাল্লাহ! এই মহরে ফাতিমী বা ১৩১.২৫ তোলা রুপা বা তার সমপরিমাণ মূল্য সকলেই মহর হিসাবে ধার্য করার জন্য কোশেশ করবো। ইনশাআল্লাহ! (সহীহ্ মুসলিম শরীফ, মুছান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ, সুনানে অবূ দাউদ শরীফ ইত্যাদি)
 কিতাবের বর্ণনা অনুযায়ী নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে আযীমুশ শান সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ-এ উম্মু আবীহা সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুর রবি‘য়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে যেই সকল সম্মানিত বিষয় মুবারকগুলো হাদিয়া মুবারক করেছিলেন, তার কিছু নিম্নে উল্লেখ করা হলো,
        ১. একটি মাদুর মুবারক। যা মিশরীয় কাপড় মুবারক দ্বারা তৈরি ছিলো এবং যার ভিতরে দেয়া হয়েছিলো পশম।
২. একটি বিছানা মুবারক,
৩. একটি চকি মুবারক,
৪. চামড়ার তৈরি বালিশ মুবারক যা খেজুরের ছালে পূর্ণ ছিলো,
৫. একটি অথবা দুইট মাটির তৈরি পাত্র,
৬. একটি পানির মশক- যা চামড়ার তৈরি ছিলো,
৭. একটি বাটি মুবারক,
৮. একটি শস্য ভাঙ্গানোর জাঁতা, কোনো বর্ণনায় দুটি জাঁতা,
৯.  একটি নামাযের মাদুর,
১০. একটি খেজুর পাতার তৈরি চাটাই,
১১.  একটি তামার বদনা,
১২.  একটি কম্বল মুবারক,
১৩. দুই টুকরো কাপড় মুবারক,
১৪. রুপার তৈরি দুটি বাহুবন্ধনী,
১৫. ২টি ঘোড়া,
১৬. হাতির দাঁতের তৈরি চিরুনী মুবারক।
১৭. এগুলো ছাড়া আরেকটি চামড়ার পাট্টা দেয়া হয়েছিলো। যেটাতে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার কয়েকটি সম্মানিত সূরা শরীফ লিখা ছিলো। সুবহানাল্লাহ!
বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঘর-সংসারের সকল কাজ-কর্মের দায়িত্ব মুবারক ভাগ করে দিয়েছিলেন এভাবে যে, রুটি মুবারক তৈরি, ঘর ঝাড়– মুবারক দেয়া, আটা মুবারক পিষা ইত্যাদি সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি করবেন আর বাহিরের কাজ যেমন উটের খাবার, পানির ব্যবস্থা, জিনিসপত্র কেনা-কাটা ইত্যাদি কাজ মুবারকের আঞ্জাম দিতেন সাইয়্যিদুনা হযরত হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!

0 Comments: