স্বরণীয় যে, নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেই তাঁবু
মুবারকে অবস্থান মুবারক করলেন সেই তাঁবু মুবারকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর
আলাইহিস সালাম তিনিও খাদিম হিসেবে রইলেন এবং সেই তাঁবু মুবারক উনার পাহারায় রইলেন
হযরত সা’দ ইবনে মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এবং উনার সাথে একদল হযরত
আনছার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা। সুবহানাল্লাহ! হযরত সা’দ ইবনে
মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তাঁবু মুবারকে বিশেষ সাওয়ারী মুবারকও
প্রস্তুত করে রাখলেন। সুবহানাল্লাহ! পর্যায়ক্রমে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জিহাদের কৌশল অনুযায়ী মুসলিম সেনাদলকে
বিন্যাস্ত করলেন এবং সুষ্ঠুভাবে সন্নিবেশ করলেন। সুবহানাল্লাহ!
প্রসিদ্ধ তারিখ গ্রন্থসমূহে উল্লেখ রয়েছে, ‘হযরত
ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, কুরাইশ বাহিনী
উপত্যকার দূর-প্রান্তে আকানকাল টিলার অপর পাশে ছাউনি স্থাপন করে। বদর ও আকানকালের
মধ্যবর্তী মরুময় উপত্যকাটি ছিলো অসমতল, যার পিছনেই অবস্থান
নিয়েছিল কুরাইশ কাফির-মুশরিকরা। উপত্যকার নাম ‘বাতনে ইয়ালীল’। (সীরাতুন নবী
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম, আল বিদায়া ওয়ান
নিহায়া, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলূক্ব)
পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ
পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন,
إِذْ أَنتُم بِالْعُدْوَةِ الدُّنْيَا وَهُم بِالْعُدْوَةِ الْقُصْوَىٰ وَالرَّكْبُ أَسْفَلَ مِنكُمْ ۚ
অর্থ: “স্মরণ করুন!
আপনারা ছিলেন উপত্যকার নিকট প্রান্তে এবং তারা ছিলো দূর প্রান্তে। আর কাফিলা ছিলো
আপনাদের চেয়ে নিম্নভূমিতে”। (পবিত্র সূরা আনফাল: পবিত্র আয়াত শরীফ-৪২)
অত্র পবিত্র আয়াত
শরীফ উনার মধ্যে সম্মানিত বদর প্রান্তরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ও উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনাদের এবং পবিত্র মক্কা শরীফের কাফির-মুশরিক কুরাইশ বাহিনীর
অবস্থানের বিবরণ রয়েছে। সম্মানিত বদরের উপত্যকার নিকটবর্তী সীমানায় অবস্থান
করেছিলেন সম্মানিত হযরত মুজাহিদ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা।
আর দূরবর্তী সীমানায় কাফির-মুশরিক তথা কুরাইশ বাহিনী এবং নিম্নভূমিতে ছিলো
উষ্ট্রারোহী বাহিনী। (তাফসীরে মাযহারী)
উল্লেখ্য যে, নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত বদর
জিহাদের পূর্বরাতে মুসলমান সৈন্যদের
শ্রেণীবিন্যাস করেন। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সবাই
ক্লান্ত-শ্রান্ত। হঠাৎ মৃদু বৃষ্টি এলো। বৃষ্টি থেকে হিফাযত হওয়া জন্য হযরত
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বৃক্ষের নিচে, তাঁবু ও চালের নিচে আশ্রয় নিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা ঘুমিয়ে পড়লেন। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন উনারা। ঘুম
থেকে উঠে মুসলিম বাহিনীর সকল ক্লান্তি দূর হয়ে গেলো এবং জিহাদের জন্য দেহ-মন
প্রস্তুত হয়ে গেলো। বালু-কংকর সব জমে দৃঢ় হয়ে গেলো। ফলে চলাফেরা করা সহজ হয়ে গেল।
সেই সাথে অধিকহারে বৃষ্টির পানি সঞ্চয়ের ব্যবস্থা হয়ে গেলো। সুবহানাল্লাহ!
সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক
তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
إِذْ يُغَشِّيكُمُ
النُّعَاسَ أَمَنَةً مِّنْهُ وَيُنَزِّلُ عَلَيْكُم مِّنَ السَّمَاءِ مَاءً لِّيُطَهِّرَكُم بِهِ وَيُذْهِبَ عَنكُمْ رِجْزَ الشَّيْطَانِ وَلِيَرْبِطَ عَلَىٰ قُلُوبِكُمْ وَيُثَبِّتَ بِهِ الْأَقْدَامَ
অর্থ: “স্মরণ করুন!
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার পক্ষ থেকে স্বস্তির জন্য আপনাদেরকে তন্দ্রায় আচ্ছন্ন
করেন এবং আপনাদের উপর আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করলেন, উহা
দ্বারা আপনাদেকে পবিত্র করার জন্য, আপনাদের থেকে শয়তানের
সর্বপ্রকার ওয়াসওয়াসা দূরীভূত করার জন্য, আপনাদের ক্বলব বা
অন্তরগলো দৃঢ় করার জন্য এবং আপনাদের পাগুলো স্থির রাখার জন্য অর্থাৎ ইস্তিকামত
থাকার জন্য।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আনফাল পবিত্র আয়াত শরীফ-১১)
মহান আল্লাহ পাক
তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
إِذْ يُوحِي رَبُّكَ إِلَى الْمَلَائِكَةِ
أَنِّي مَعَكُمْ فَثَبِّتُوا الَّذِينَ آمَنُوا سَأُلْقِي
فِي قُلُوبِ الَّذِينَ كَفَرُوا الرُّعْبَ فَاضْرِبُوا فَوْقَ الْأَعْنَاقِ وَاضْرِبُوا مِنْهُمْ كُلَّ بَنَانٍ
অর্থ: “স্মরণ করুন! আপনাদের রব মহান আল্লাহ পাক
তিনি হযরত ফেরেস্তা আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি ওহী মুবারক করেন- নিশ্চয়ই আমি
আপনাদের সাথে আছি। সুতরাং মু’মিনগণ উনাদেরকে অবিচল রাখুন। যারা কুফরী করে আমি
তাদের অন্তর বা হৃদয়ে ভীতির সঞ্চার করবো। সুতরাং আপনারা তাদের গর্দানের উপরে এবং
তাদের সর্বাঙ্গে আঘাত করুন।” (পবিত্র সূরা আনফাল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-১২)
মহান আল্লাহ পাক
তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন,
ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ
شَاقُّوا اللَّـهَ وَرَسُولَهُ وَمَن يُشَاقِقِ
اللَّـهَ وَرَسُولَهُ فَإِنَّ اللَّـهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ - ذَٰلِكُمْ فَذُوقُوهُ وَأَنَّ لِلْكَافِرِينَ عَذَابَ النَّارِ -
অর্থ: “ইহা এ কারণে
যে, তারা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধিতা করে, আর যে কেউ মহান
আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধিতা করবে
(তাদের যেনে রাখা উচিত) নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি শাস্তিদানে খুবই কঠোর।
সুতরাং বর্তমানে তোমরা এ শাস্তি আস্বাদন করো এবং জেনে রাখে, কাফিরদের
জন্য রয়েছে অগ্নিশাস্তি।” (পবিত্র সূরা আনফাল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-১৩-১৪)
অর্থাৎ যারা মহান
আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের
বিরোধিতা করে, তারা কাট্টা কাফির এবং চির জাহান্নামী।
সম্মানিত বদর জিহাদে মক্কার কাফির-মুশরিকরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য এসেছিল কিন্তু মহান
আল্লাহ পাক তিনি তা বরদাশত করলেন না এদের শাস্তিস্বরূপ ৭০ জন নিহিত এবং ৭০ জন
বন্দি হলো এবং যারা নিহত হয়েছে তাদের জন্য
জাহান্নামে কঠিন শাস্তিতে মুখামুখি হয়েছে। নাউযূবিল্লাহ! (তাফসীরে মাযহারী)
সাইয়্যিদুনা হযরত
কাররামারল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, সম্মানিত
বদর জিহাদের রাতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে
এমন কেউ নেই যে ঘুমাননি, কেবল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি ব্যতীত। তিনি সারারাত্রি মুবারক পবিত্র ছলাত ও পবিত্র দোয়া মুবারক
উনার মধ্যে রত ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ
আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বারবার এই দোয়া মুবারক করেছিলেন,
اللَّهُمَّ
إِنْ تَهْلِكْ هَذِهِ الْعِصَابَةُ لاَ تُعْبَدُ فِي الأَرْضِ فَلَمَّا طَلَعَ الْفَجْرُ ، قَالَ الصَّلاَةَ
عِبَادَ اللهِ
অর্থ: “ইয়া বারী ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! আপনি
যদি এই দলকে ধ্বংস করে দেন তাহলে যমীনে
আপনার ইবাদত-বন্দেগি করার আর কেউ থাকবে না। অতপর যখন ছলাতুল ফযর উনার সময় হলো, তখন
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ
মুবারক করলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার বান্দারা! ছলাত
(নামায)।” (মুসনাদে আল বায্যার, আস সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী,
দালায়িলুন নবুওওয়াহ, সুনানে তিরমিযী)
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম
উনারা সবাই খুব দ্রুত একত্রিত হলে পবিত্র ফজর উনার নামায জামায়াতে আদায় করা হয়।
পবিত্র নামায মুবারক শেষে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি সবাইকে জিহাদের জন্য উৎসাহিত করলেন। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুনা হযরত
কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন,
لقد رأيتني يوم بدر و نحن نلوذ بالنبي صلى الله عليه و سلم و هو أقربنا إلى العدو و كان من أشد الناس يومئذ بأسا
অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে
দেখিয়েছেন, সম্মানিত বদর উনার জিহাদের দিন আমরা সকলেই
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকটে
আশ্রয় নিয়েছিলাম। তিনি আমাদের মধ্যে শত্রুর সর্বাধিক নিকটবর্তী ছিলেন এবং আমাদের
সকলের চাইতে সর্বাধিক বড় শক্তিশালী সাহসী যোদ্ধা ছিলেন।” সুবহানাল্লাহ! (সীরাতুর
রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আশ শিফা জিলদ-১
পৃষ্ঠা- ৯৪)
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি
বর্ণনা করেন (ঐতিহাসিক বদর জিহাদ উনার দিন) সকালবেলা কুরাইশ বাহিনী তাদের অবস্থা
থেকে বেরিয়ে এলো। তাদের নামতে দেখেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত দোয়া মুবারক করলেন,
اللهم هذه قريش قد أقبلت بخيلائها وفخرها تحادك وتكذب رسولك صلى الله عليه و سلم اللهم فنصرك الذي وعدتني اللهم أحنهم الغداة و قد قال رسول الله صلى الله عليه وسلم و قد رأى عتبة بن ربيعة في القوم على جمل له أحمر إن يكن في أحد القوم خير فعند صاحب الجمل الأحمر إن يطيعوه يرشدوا
অর্থ: “ইয়া বারী ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! এরা সেই
কুরাইশ, যারা অহংকারের সাথে আপনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও আপনার রসূল
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অস্বীকার করে, আজ
যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে। ইয়া বারী ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! আপনি যে সাহায্যের ওয়াদা
বা প্রতিশ্রুতি আমাকে দিয়েছেন, আমি তার প্রার্থী। ইয়া বারী
ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! আজ সকালেই ওদেরকে ধ্বংস করে দিন।”
একটা লাল উটের পিঠে
চড়া উতবা ইবনে রবীয়াকে দেখে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করলেন, গোটা কুরাইশ গোত্রের
কোনো ব্যক্তির মধ্যে যদি কিছুমাত্র শুভবুদ্ধি থেকে, থাকে তবে
এই লোকটার মধ্যে তা আছে। লোকেরা যদি তার কথা শোনে এবং মেনে নেয়, তাহলে তারা সঠিক পথের সন্ধান পাবে”।
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো
বর্ণনা করেন, কুরাইশ বাহিনী ঐতিহাসিক বদরের ময়দানে
যাওয়ার সময় পথিমধ্যে খুফাফ ইবনে আইমা ইবনে রাহাযাহ গিফারী কিংবা তার পিতা আয়মা ইবনে রাহযাহ গিফারী তার ছেলের মাধ্যমে
কায়েকটি উট যাবেহ করে উপহারস্বরূপ কুরাইশদের নিকট প্রেরণ করে এবং তাদেরকে জানিয়ে
দেয় যে, তোমরা যদি চাও আমরা কিছু অস্ত্র ও যোদ্ধা দিয়ে
তোমাদেরকে সাহায্য করতে প্রস্তুত রয়েছি। কুরাইশ নেতারা তার ছেলের মাধ্যমে জবাব
পাঠালো যে, আত্মীয়তার খাতিরে তোমার যা করণীয় ছিলো তা তুমি
করেছ। আমাদের জীবনের ক্বসম! এখন আমরা যে যুদ্ধে যাচ্ছি তা যদি কোনো মানুষের
বিরুদ্ধে হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের শক্তির কোনো কমতি নেই। আর
যদি আমাদের যুদ্ধ মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে হয় যেমনটি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলে থাকেন। তাহলে মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে যুদ্ধ
করার শক্তি কারো নেই।
অতপর সকাল বেলা সবাই যখন ময়দানে নামলো, তখন
কুরাইশদের একটি দল সামনে অগ্রসর হয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তৈরি
হাউজ মুবারক থেকে পানি নিতে আসলো। তাদের মধ্যে হযরত হাকীম ইবনে হিযাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিও ছিলেন। (তখনো
তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেননি।) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনাদেরকে বললেন, তাদেরকে আপনারা বাধা
দিবেন না- বরং পানি পান করতে দিন। পরিশেষে
দেখা গেলো তাদের যতগুলো লোক সেদিন এই হাউজ মুবারক থেকে পানি পান করেছে সেই নিহত
হয়েছে। একমাত্র হযরত হাকীম ইবনে হিযাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছাড়া। তিনি
নিহত হননি। পরে তিনি দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যান। সুবহানাল্লাহ! এ ঘটনা
তিনি আজীবন মনে রেখেছিলেন। হযরত হাকীম ইবনে হিযাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি
যখনই ক্বসম খেতে চাইতেন তখন তিনি বলতেন,
لا والذي نجاني من يوم بدر!
অর্থ: ‘ সেই মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! যিনি
আমাকে সম্মানিত বদর জিহাদের দিন ধ্বংস থেকে হিফাযত করেছেন’। সুবহানাল্লাহ!
(সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-ইবনে হিশাম জিলদ-২ পৃষ্ঠা ২৮০-২৮১, আল
বিদায়া ওয়ান নিহায়া জিলদ-৩, পৃষ্ঠা-৩২৮, মাগাযিউল ওয়াক্বিদী, আল কামিলু ফিত্ তারিখ, তারিখুল ইসলাম- ইমাম যাহাবী)
প্রসিদ্ধ তারিখ ও
সীরাত গ্রন্থসমূহে উল্লেখ আছে,
قال حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه وقد خرج الأسود بن عبد الأسد المخزومي وكان رجلا شربا سيئ الخلق فقال أعاهد الله لأشربن من حوضهم أو لأهدمنه أو لأموتن دونه فلما خرج خرج إليه سيدنا حضرت حمزة بن عبد المطلب عليه السلام فلما التقيا ضربه سيدنا حضرت حمزة عليه السلام فأطن قدمه بنصف ساقه وهو دون الحوض فوقع على ظهره تشخب رجله دما نحو أصحابه ثم حبا الى الحوض حتى اقتحم فيه يريد أن يبر بيمينه وأتبعه سيدنا حضرت حمزة عليه السلام فضربه حتى قتله في الحوض
অর্থ: হযরত ইবনে
ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আসওয়াদ ইবনে আব্দুল আসাদ
মাখযূমী ছিলো কুরাইশ বংশের এক দুশ্চরিত্র ও গু-া স্বাভাবের লোক। সে তাদের কাফিলা
থেকে বের হয়ে বললো, ক্বসম! আমি অবশ্যই মুসলমান উনাদের হাউজ
থেকে পানি পান করবো কিংবা সেই কূপ ভেঙ্গে ফেলবো। নাউযূবিল্লাহ! আর প্রয়োজন হলে এর
জন্য মারাও যাবো। এই বলে সে ময়দানে নামলে সাইয়্যিদুশ শুহাদা সাইয়্যিদুনা হযরত
হামযা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি তার দিকে অগ্রসর হলেন। যখন তিনি
আসওয়াদ ইবনে আব্দুল আসাদ মাখযূমীর মুখোমুখি হলেন তখন সাইয়্যিদুনা হযরত সাইয়্যিদুশ
শুহাদা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম তিনি তার পায়ে তরবারীর আঘাত হানলেন। এতে তার পা
কেটে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। এ সময় সে হাওযের কাছেই ছিল। সে চিৎ হয়ে পড়ে গেল এবং তার
পা থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটলো। এরপর সে হামাগুড়ি দিয়ে হাউজের দিকে এগুলো এবং
নিজের প্রতিজ্ঞা রক্ষা করার জন্য হাওজের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়লো। সাইয়্যিদুনা হযরত
সাইয়িদুশ শুহাদা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম তিনি তার পশ্চাদ্ধাবন করলেন এবং হাউজের
মধ্যেই তাকে তরবারির আঘাতে হত্যা করলেন। সুবহানাল্লাহ! (সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম, জিলদ-২ পৃষ্ঠা- ২৮৪,
সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে কাছীর, দালায়িলুন নবুওওয়াহ, আস সীরাতুল হালাবিয়্যাহ)
হযরত ইবনে ইসহাক্ব
রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমার কাছে আমার পিতা
হযরত ইসহাক্ব ইবনে ইয়াসার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এবং অন্যান্য আলিমগণ উনারা
প্রবীণ হযরত আনসার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের বরাতে বর্ণনা
করেছেন। উনারা বলেছেন,
لما اطمأن القوم بعثوا عمير بن وهب الجمحي فقالوا احرزوا لنا اصحاب محمد قال فاستجال بفرسه حول العسكر ثم رجع إليهم فقال ثلاث مئة رجل يزيدون قليلا أو ينقصون ولكن أمهلوني حتى أنظر اللقوم كمين أو مدد قال فضرب في الوادي حتى أبعد فلم ير شيئا فرجع إليهم فقال ما وجدت شيئا ولكن قد رايت يا معشر قريش البلايا تحمل المنايا نواضح يثرب تحمل الموت الناقع قوم ليس معهم منعة ولا ملجأ إلا سيوفهم والله ما أرى أن يقتل رجل منهم حتى يقتل رجلا منكم فإذا أصابوا منكم اعدادهم فما خير العيش بعد ذلم فرو رأيكم
অর্থ: যখন কুরাইশ বাহিনী তাদের যুদ্ধের স্থান
চিহ্নিত করে শিবিরে অবস্থান গ্রহণ করলো, তখন তারা উমাইর ইবনে
ওয়াহব জুমাহীকে মুসলিম বাহিনীর সংখ্যা নির্ণয় করতে পাঠালো। সে ঘোড়ার উপর চড়ে
মুসলিম বাহিনীর চারপাশ দিয়ে একটা চক্কর দিয়ে ফিরে গিয়ে বললো, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার সৈন্য সংখ্যা তিনশ’র চেয়ে সামান্য কিছু বেশি বা কম হতে পারে। তবে আমাকে আরো
একটু সময় দাও, দেখি উনাদের কোনো গুপ্ত ঘাঁটি বা সাহায্যকারী
আছে কিনা। এবার সে উপত্যকার দূর প্রান্ত পর্যন্ত খোঁজাখুঁজি করলো, সমস্ত প্রান্তর ঘুরে ঘুরে দেখলো কিন্তু কিছুই দেখতে পেলো না। অবশেষে সে
কুরাইশ কাফির-মুশরিকদের কাছে ফিরে গিয়ে বললো কোনো কিছুর সন্ধান পেলাম না। তবে হে
কুরাইশরা! উনাদের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে, উনারা একেবারে
মরণপণ হয়ে অবস্থান করছেন। পবিত্র মদীনা শরীফ উনার উটগুলো সুনিশ্চিত মৃত্যু বহন করে
এনেছেন। উনারা এমন একটি ক্বওম বা সম্প্রদায় যাঁদের একমাত্র আত্মরক্ষা ও আশ্রয়ের
জন্য তরবারী ছাড়া আর কিছুই নেই। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! উনাদের ভাব দেখে মনে
হলো উনাদের একজন শহীদ হলে তার বদলে তোমাদের একজন নিহত হবেই। উনারা কুরাইশ কাফির মুশরিকদের মধ্য থেকে যখন
উনাদের সম-সংখ্যক মানুষকে হত্যা করবেন, তখন তা আর আমাদের
জন্য কল্যাণকর হবে না। কাজেই তোমরা এখনো ভেবে দেখো।
فلما سمع حضرت حكيم بن حزام رضى الله تعالى عنه ذلك مشى في الناس فلقى عتبة بن ربيعة قال يا أبا الوليد إنك كبير قريش وسيدها والمطاع فيها فهل لك إلى أن لا تزال منها بخير إلى آخر الدهر فقال وما ذاك قال ترجع بالناس وتحمل دم حليفك عمرو ابن الحضرمي فقال عتبة قد فعلت فائت ابن الحنظلية يعني أبا جهل بن هشام ثم قام عتبة خطيبا فقال يا معشر قريش إنكم والله ما تصنعون بأن تلقوا حضرت محمدا صلى الله عليه و سلم واصحابه شيئا والله لئن أصبتموه لا يزال الرجل ينظر في وجه رجل يكره النظر إليه قتل ابن عمه وابن خاله أو رجال امن عشريته فارجعوا أو خلوا بين حضرت محمد صلى الله عليه و سلم وبين سائر العرب فإن أصابوا فذاك الذي أردتم وإن كان غير ذلك ألفاكم ولم تعرضوا منه ما تريدون
অর্থ: অতঃপর যখন হযরত হাকীম ইবনে হিযাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এ কথা শুনে কুরাইশ বাহিনীর নেতাদের কাছে গেলেন।
প্রথমে তিনি উতবা ইবনে রাবীয়াকে গিয়ে বললেন, হে ওয়ালীদের পিতা!
তুমি কুরাইশদের একজন প্রবীণ নেতা। তোমাকে সবাই মানে। তুমি কি এমন একটা কাজ করতে
রাযী হবে, যা করলে তুমি চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে? সে বললো হে হযরত হাকীম ইবনে হিযাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আপনি কি বলতে
চাচ্ছেন? হযরত হাকীম ইবনে হিযাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
তিনি বললেন তুমি কুরাইশ বাহিনীকে ফিরিয়ে নিয়ে যাও এবং তোমার মিত্র আমর ইবনে
হাযরামীর হত্যাকা-ের ব্যাপারটা মিটিয়ে দেয়ার দায়িত্ব নাও। উতবা বললো আমি তা করতে
রাযী। সে ব্যাপারে আমি আপনার অনূরোধ রাখতে প্রস্তুত। হাযরামী আমার মিত্র এবং তার
রক্তপণ আদায় করার এবং তার সম্পদের ক্ষতিপূরণ করে দেয়ার দায়িত্ব আমার। আপনি আবূ
জাহিলের কাছে যান। আমি মনে করি কুরাইশদের বিনাযুদ্ধে ফিরিয়ে নেয়ার প্রশ্নে সে ছাড়া
আর কেউ বিরোধিতা করবে না। উতবা বললো হানযালা তার ছেলেকে হারিয়ে ফেলুক অর্থাৎ আবূ
জাহিল ইবনে হিশামের মৃত্যু হোক। এরপর উতবা দাঁড়িয়ে কুরাইশ বাহিনীর উদ্দেশ্যে
নিম্নরূপ ভাষণ দিলো- ক্বসম! হে কুরাইশ জনতা! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনাদের সাথে যুদ্ধ করে তোমাদের কোনো লাভ হবে না। আজ যদি উনাকে তোমরা
শহীদ করতে সক্ষম হও তাহলে তোমাদের ভিতর কোনো সদ্ভাব থাকবে না। একজন আর একজনের মুখ
দেখা পছন্দ করবে না। কেননা তিনি হন তার চাচাতো ভাই কিংবা খালাতো ভাই অথবা অন্য
কোনো না কোনো আত্মীয়ের হত্যাকারী বলে চিহ্নিত হবে। সুতরাং চল আমরা ফিরে যাই এবং
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং
উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পথ মুবারক থেকে সরে
দাঁড়াই। উনাদের ব্যাপারে তোমরা আরব জাতির উপর ছেড়ে দাও। যদি তারা উনাকে শহীদ করে তাহলে
তোমাদের উদ্দেশ্যই সিদ্ধ হবে। আর তা না হলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে আমরা নির্দোষ থাকবো।
قال حضرت حكيم رضى الله تعالى عنه فانطلقت حتى جئت أبا جهل، فوجدته قد نثل درعا فهو يهنئها فقلت له يا أبا الحكم إن عتبة أرسلني إليك بكذا وكذا. فقال انتفخ والله سحره حين رأى حضرت محمداً صلى الله عليه و سلم وأصحابه كلا والله لا نرجع حتى يحكم الله بيننا وبين حضرت محمد صلى الله عليه و سلم وما بعتبة ما قال ولكنه قد رأى أن حضرت محمد صلى الله عليه و سلم وأصحابه أكلة جزور وفيهم ابنه فقد تخوفكم عليه ثم بعث إلى عامر بن الحضرمي فقال هذا يريد ان يرجع بالناس وقد رأيت ثأرك بعينك فقم فأنشد خفرتك ومقتل أخيك فقام عامر بن الحضرمي فاكتشف ثم صرخ وأعمراه وأعمراه فحميت الحرب وحقب الناس واستوسقوا
على ما هم عليه من الشر وأفسد على الناس الرأي الذي دعاهم إليه عتبة. فلما بلغ عبتة قول أبي جهل انتفخ والله سحره قال سيعلم مصفر استه من انتفخ سحره أنا أم هو، ثم التمس عتبة بيضة ليدخلها في رأسه فما وجد في الجيش بيضة تسعه من عظم رأسه فلما رأى ذلك اعتجر على رأسه ببرد له.
অর্থ: হযরত হাকীম ইবনে হিযাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু তিনি বলেন, তারপর আমি কাট্টা কাফির আবূ জাহিলের
কাছে গেলাম এবং দেখলাম সে তার বর্ম সিন্দুক থেকে বের করে পরিষ্কার করছে। তিনি আবূ
জাহিলকে বললেন, হে আবুল হাকাম! (অর্থাৎ আবূ জাহিল!) উতবা
আমাকে তোমার নিকট পাঠিয়েছে। এরপর উতবা আমাকে যা বলেছিলো তা তাকে জানালাম। কাট্টা
কাফির আবূ জাহিল বললো, ক্বসম! উতবার মাথা তখন থেকে খারাপ হয়ে
গেছে যখন সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাকে এবং উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে দেখেছে।
ক্বসম! কখনো এটা হতে পারে না। যতক্ষণ মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের এবং নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের ব্যাপারে
চূড়ান্ত ফয়সালা না করে দেন ততক্ষণ আমরা ফিরে যাব না। উতবা যা বলেছে ওটা তার মনের
কথা নয়। আসল ব্যাপার হলো, যেহেতু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ও উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সংখ্যায় নগণ্য এবং উনাদের ভিতরে তার ছেলেও
রয়েছে। যুদ্ধ হলে তার ছেলের শহীদ হবেন ভেবে সে এ কথা বলেছে। এরপর আবূ জাহিল নিহত
আমর ইবনে হাযরামীর ভাই আমির ইবনে হাযরামীর কাছে খবর পাঠালো যে, তোমার মিত্র উতবা কুরাইশ বাহিনীকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায়। অথচ তোমার ভাইয়ের
হত্যার বদলার ব্যাপারটা তোমার নাগালের মধ্যে রয়েছে। সুতরাং তুমি উঠ এবং ভাইয়ের
হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণের প্রতিশ্রুতির কথা কুরাইশ বাহিনীকে স্মরণ করিয়ে দাও।
সবাইকে উত্তেজিত করো। আমির ইবনে হাযরামী উঠে দাঁড়ালো এবং তার ভাইয়ের হত্যার ঘটনা
বর্ণনা করার পর সে হায় আমর! হায় আমর! বলে চীৎকার করতে লাগলো। সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধের
উত্তেজনা সৃষ্টি হলো, ফিরে যাওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে গেলো এবং
সন্ধির সমস্ত রাস্তাও বন্ধ হয়ে গেল। তারা যে যুদ্ধের অভিপ্রায়ে পবিত্র মক্কা শরীফ
থেকে বের হয়েছিল তার জন্য তারা সবাই প্রস্তুত হয়ে গেল। ফলে উতবা যে শুভ উদ্যোগ
গ্রহণ করেছিল সে তা নস্যাৎ করে দিলো। উতবা যখন আবূ জাহিলের এ উক্তি শুনলো যে,
উতবার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তখন সে বললো অচিরেই সে আমাকে ভীরু জানতে
পারবে আমার মাথা খারাপ হয়েছে না তার মাথা খারাপ হয়েছে। এরপর উতবা তার মাথায়
পরিধানের জন্য লৌহ শিরস্ত্রাণ খোঁজ করে কিন্তু তার মাথায় পরিধানের মতো কোনো লৌহ
শিরস্ত্রাণ পাওয়া গেল না। ফলে সে তার মাথায় চাদর বেঁধে নিলো। (সীরাতুন নবী
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-ইবনে হিশাম
জিলদ-২ পৃষ্ঠা- ২৮২-২৮৩, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া,
তারিখুল উমামে ওয়াল মুলূক, সীরাতুন নবী
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে কাছীর, উয়ূনুল আছার ফি
ফুয়ূনুল মাগাযী)
সম্মানিত জিহাদে মুসলিম বাহিনীর সারিবব্ধ: যখন
সম্মানিত বদর প্রান্তরে শত্রুরা মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে কষ্ট তথা উনাদেরকে শহীদ করার জন্য এবং
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাকে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য উপস্থিত তখন
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
কালবিলম্ব না করে হযরত ছাহাবয়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে
কাফির-মুশরিকদের মুকাবিলা করার জন্য খুবই দ্রুত প্রস্তুত ও উনাদেরকে জিহাদের জন্য
সারিবদ্ধ করে ফেললেন।
বিখ্যাত ঐতিহাসিক হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি
আলাইহি তিনি বলেন, আমার কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত হিব্বান ইবনে
ওয়াসি’ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি, হযরত ইবনে হিব্বান
রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আশইয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি উনার সম্প্রদায় থেকে বর্ণনা করেছেন,
أَنّ رَسُولَ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ عَدّلَ صُفُوفَ أَصْحَابِهِ
يَوْمَ بَدْرٍ وَفِي يَدِهِ قَدَحٌ يُعَدّلُ بِهِ الْقَوْمَ فَمَرّ بِحضرت سَوّادِ بْنِ غَزِيّةَ رضى الله تعالى عنه حَلِيفِ بَنِي عَدِيّ بْنِ النّجّارِ - وَهُوَ مُسْتَنْتِلٌ مِنْ الصّفّ - وَقَالَ اسْتَوِ يَا حضرت سَوّادُ رضى الله تعالى عنه ، فَقَالَ يَا رَسُولَ اللّهِ صلى الله عليه و سلم أَوْجَعْتنِي
وَقَدْ بَعَثَك اللّهُ بِالْحَقّ وَالْعَدْلِ قَالَ فَأَقِدْنِي فَكَشَفَ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ عَنْ بَطْنِهِ وَقَالَ اسْتَقِدْ قَالَ فَاعْتَنَقَهُ فَقَبّلَ بَطْنَهُ فَقَالَ مَا حَمَلَك عَلَى هَذَا يَا حضرت سَوّادُ رضى الله تعالى عنه؟ قَالَ يَا رَسُولَ اللّهِ صلى الله عليه و سلم حَضَرَ مَا تَرَى ، فَأَرَدْت أَنْ يَكُونَ آخِرَ الْعَهْدِ بِك أَنْ يَمَسّ جِلْدِي جِلْدَك فَدَعَا لَهُ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ بِخَيْرِ-
অর্থ: “নিশ্চয়ই বদর জিহাদের দিন নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে কাতার ঠিক করতে বললেন। এ সময় উনার হাত
মুবারকে একটি তীর মুবারক ছিল, যা দিয়ে তিনি কাতার
মুবারক সোজা করছিলেন। যখন তিনি বানী আদী ইবনে নাজ্জার গোত্রের মিত্র হযরত সাওওয়াদ
ইবনে গাযীয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, তখন তিনি উনার কাতার থেকে একটু সামনে অগ্রবর্তী হয়েছিলেন। এ সময় নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তীর মুবারক
দিয়ে উনার পেটে খোচা দিয়ে ইরশাদ মুবারক করলেন, হে সাওওয়াদ!
আপনি কাতার ঠিক করে দাঁড়ান। তখন হযরত সাওওয়াদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি
বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম! আপনি আমাকে কষ্ট দিলেন? অথচ মহান আল্লাহ পাক
তিনি আপনাকে হক্ব বা সত্য ও ন্যায় বিচারক হিসেবে প্রেরণ করেছেন। আপনি আমাকে এ বদলা
নেয়ার সুযোগ দিন। এ সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিত পেট মুবারক উনার কাপড় মুবারক সরিয়ে নিলেন এবং
উনাকে বদলা নিতে বললেন। তখন হযরত সাওওয়াদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জড়িয়ে ধরে
উনার সম্মানিত পেট মুবারকে চুমু (বুছা) মুবারক খেলেন। সুবহানাল্লাহ! তখন নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক
করছেন, হে হযরত সাওওয়াদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনি
এরূপ করলেন কেন? হযরত
সাওওয়াদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, ইয়া
রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সামনে আমাদের কঠিন এক
অবস্থা। তাতো আপনি দেখতে পাচ্ছেন। তাই আমার মনে এরূপ আকাঙ্কা সৃষ্টি হয় যে,
জীবনের এ শেষ মুহূর্তে আমার পবিত্র দেহ আপনার সম্মানিত জিসম মুবারক
উনার স্পর্শে ধন্য হোক। এ কথা শুনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার জন্য দোয়া মুবারক করলেন।” সুবহানাল্লাহ!
(সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম, জিলদ-
২য়, পৃষ্ঠা নং- ২৮৬,২৮৭, সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে কাছীর, মা’রিফাতুছ ছাহাবা, উয়ূনুল আছার ফি ফুনূনুল মাগাযী,
আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, তারিখুল উমাম ওয়াল
মুলূক)
অতপর নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের উদ্দেশ্যে ইরশাদ মুবারক করলেন, “চূড়ান্ত
নির্দেশ না আসা পর্যন্ত কেউ জিহাদ শুরু করবেন না। ব্যাপকভাবে তীরবিদ্ধ না হওয়া
পর্যন্ত আপনারা কেউ তীর ছূঁড়বেন না এবং আপনাদের উপর তরবারি ছেয়ে না যাওয়া পর্যন্ত
আপনারা তরবারি চালাবেন না।” নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করলেন, “বনী হাশিম
উনাদেরকে জোর করে যুদ্ধে আনা হয়েছে। উনাদের সাথে আমাদের কোনো জিহাদ নয়। অতএব,
উনাদের মধ্যে কেউ আপনাদের সামনে পড়ে গেলে উনাদেরকে যেন কেউ আঘাত না
করেন। খতিমুল মুহাজিরীন, সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস
সালাম উনাকে দেখলে কেউ উনাকে শহীদ করবেন না। অনুরুপভাবে আবুল বুখতারী বিন হিশামকেও
আঘাত থেকে বিরত থাকবেন। কেননা উনারা আমাদেরকে পবিত্র মক্কা শরীফে কষ্ট দিতেন না,
বরং উনারা আমাদেরকে সব দিক থেকে সাহায্য সহযোগিতা করতেন, আমাদের খিদমত, মুবারকের আঞ্জাম দিতেন। সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য যে, বনী
হাশিমের বিরুদ্ধে কুরাইশ কাফির-মুশরিকদের বয়কটনামা যারা ছিঁড়ে ফেলেছিল তাদের একজন
ছিলেন আবুল বুখতারী। কিন্তু আবুল বুখতারী সে সম্মানিত বদর জিহাদে নিহত হয়েছিলো তার
হঠকারিতার কারণে। সে তার বন্ধু কাফিরকে ছাড়তে চায়নি। ফলে জিহাদে তারা উভয়ে নিহত
হয়। অতপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি ও সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনারা টিলার উপরে উঠে
তাঁবুর ভিতর নিজ স্থানে চলে যান। (সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও
সীরাতুর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
0 Comments:
Post a Comment