
হযরত আবূ সূফিয়ান
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সে অবস্থা কৌশলে নিয়ন্ত্রণ করলেন এবং হযরত কিনানাহ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে প্রতিশ্রুতি দিলেন যে, কিছুদিন
পর যখন লোকেরা স¦াভাবিক
হবে, তখন উম্মু আবীহা, খইরু বানাতি
রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা
আলাইহাস সালাম তিনি সম্মানিত মক্কা শরীফ থেকে হিজরত মুবারক করে সম্মানিত মদীনা
শরীফ-এ তাশরীফ মুবারক রাখতে পারবেন। তিনি বললেন, নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা
বানাত, উম্মু আবীহা, খইরু বানাতি
রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা
আলাইহাস সালাম উনার ক্ষতি করা মক্কাবাসীদের উদ্দেশ্য ছিলো না। আপনি প্রকাশ্যে দিনে
দুপুরে মানুষের সম্মুখ দিয়ে উম্মু আবীহা, খইরু বানাতি রসূলিল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম
উনাকে নিয়ে বের হয়েছেন, আর আমরা বসে বসে তা দেখছি। গোটা
আরববাসী জানে সম্মানিত বদর জিহাদে আমাদের কী করুণ অবস্থা হয়েছিলো এবং উম্মু আবীহা,
খইরু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত পিতা নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদেরকে কী
কঠিনভাবে পরাজিত করেছিলেন। আপনি যদি এভাবে প্রকাশ্যে উনার মহাসম্মানিত বানাত
আলাইহাস সালাম উনাকে আমাদের নাকের উপর দিয়ে নিয়ে যান, তাহলে
সবাই আমাদেরকে কাপুরুষ ভাববে এবং এ কাজটি আমাদের জন্য অপমান বলে বিবেচনা করবে।
আপনি আজ উম্মু আবীহা, খইরু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনাকে নিয়ে বাড়ি
ফিরে যান। উনার সম্মানিত চিকিৎসা মুবারক উনার ব্যবস্থা করুন। কিছু দিন তিনি
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত হুজরা শরীফ-এ অবস্থান
মুবারক করুন। অতঃপর লোকজন যখন বলতে শুরু করবে যে, আমরা উম্মু
আবীহা, খইরু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনাকে সম্মানিত মক্কা শরীফ
থেকে যেতে বাধা দিয়েছি, তখন একদিন আপনি গোপনে উনাকে উনার
মহাসম্মানিত পিতা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার নিকট পৌঁছে দিবেন। হযরত কিনানাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি
ছিলেন খুবই বিচক্ষণ ব্যক্তি। তিনি ফিরে যেতে সম্মত হলেন।
উতবা ইবনে রবিয়ার কন্যা এবং হযরত আবূ সুফিয়ান
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আহলিয়াহ হযরত হিন্দা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা
তিনি উম্মু আবীহা, খইরু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সাথে কুরাইশদের
দুর্ব্যবহারে ক্ষুব্ধ হলেন। যদিও তিনি তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বড় শত্রুদের মধ্যে গণ্য ছিলেন, তা সত্ত্বেও তিনি আক্রমণকারীদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, যারা জিহাদের ময়দানে শত্রুদের মোকাবিলায় ব্যর্থ কিন্তু কোনো মহিলা যিনি
উনার মহাসম্মানিত পিতা উনার সাথে সাক্ষাৎ মুবারক করতে চান, উনাকে
হয়রানী করে, তারা কাপুরুষ। একটি কবিতায় তিনি তাদেরকে বললেন,
اَفِـىالسِّلْـمِاَعْيَارًا جَفَاءً وَّغِلْظَةً
... وَّفِـى الْـحَرْبِ اَشْبَاهَ الـنِّـسَاءِ الْعَوَارِكِ
অর্থ: “তারা ছিল বন্য গাধার ন্যায়, যারা
শান্তির সময় খুবই কঠোর এবং কর্কশ। কিন্তু যুদ্ধের সময় স¦াভাবিক মাজুরতায় রত নারীদের মতো।” (ইবনে
হিশাম, বিদায়া নিহায়া, আর রওদ্বতুল উনফ)
খইরু বানাতি
রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা
আলাইহাস সালাম উনাকে যারা কষ্ট দিয়েছে তাদের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদন্ড। খইরু
বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল
ঊলা আলাইহাস সালাম উনার উপর আক্রমণের পর পরই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ সংবাদ পেশ করা হয়।
সংবাদ পেয়ে তিনি অত্যন্ত কষ্ট পান এবং যারা উম্মু আবীহা, খইরু
বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল
ঊলা আলাইহাস সালাম উনার উপর আক্রমণ করেছিলো তিনি তাদের প্রতি খুবই অসন্তুষ্ট হন।
এমনকি সাথে সাথে তাদের বিরুদ্ধে সারিয়্যাহ প্রেরণ করেন এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে সম্মানিত নির্দেশ মুবারক প্রদান করেন যে,
اِنْ ظَفِرْتُـمْ
بـِهَبَّارِ بْنِ الْاَسْوَدِ وَالرَّجُلِ الَّذِىْ سَبَقَ مَعَهٗ اِلـٰى حَضْرَتْ زَيْنَبَ عَلَيْهَا السَّلَامُ فَحَرِّقُوْهُـمَا بِالنَّارِ
অর্থ: “যদি আপনারা
হাব্বার ইবনে আসওয়াদকে এবং তার সাথে যে লোকটি উম্মু আবীহা, খইরু
বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল
ঊলা আলাইহাস সালাম উনার দিকে এগিয়ে গিয়েছিলো, তাদের উপর
বিজয়ী হন তাহলে তাদেরকে আগুনে পুড়িয়ে ফেলবেন।” সুবহানাল্লাহ!
অপর বর্ণনায় রয়েছে,
اِنْ وَّجَدْتُّـمُوْهُ
فَاجْعَلُوْهُ بَيْنَ حُزْمَتَـىْ حَطَبٍ ثُـمَّ اَشْعِلُوْا فِيْهِ النَّارَ
অর্থ: “আপনারা যদি
তাকে হাতের মুঠোয় পান তাহলে তাকে লাকড়ির দুই আঁটির মাঝে রেখে তাতে আগুন জ্বালিয়ে
দিবেন।” সুবহানাল্লাহ! (সুনানে সা‘ঈদ ইবনে মানছূর)
পরের দিন তিনি আবার
ইরশাদ মুবারক করেন,
اِنّـِــىْ
كُنْتُ اَمَرْتُكُمْ بِتَحْرِيْقِ هٰذَيْنِ الرَّجُلَيْنِ اِنْ اَخَذْتُـمُوْهُـمَا ثُـمَّ رَأَيْتُ اَنَّهٗ لَا يَنْبَغِىْ لِاَحَدٍ اَنْ يُّـعَـذِّبَ بِالنَّارِ اِلَّا اللهُ فَاِنْ ظَفِرْتُـمْ بِـهِمَا فَاقْتُلُوْهُـمَا
অর্থ: ‘আমি
আপনাদেরকে নির্দেশ মুবারক দিয়েছিলাম যে, যদি আপনারা
আক্রমণকারীদেরকে ধরতে পারেন, তাহলে আগুনে পুড়িয়ে মারবেন।
কিন্তু পরে আমি সিদ্ধান্ত মুবারক গ্রহণ করলাম যে, কাউকে আগুন
দিয়ে শাস্তি দেয়া মহান আল্লাহ পাক উনার শান মুবারক। কাজেই, আপনারা
যদি তাদেরকে ধরতে পারেন, তাহলে কতল করবেন।’ সুবহানাল্লাহ!
(বুখারী শরীফ, মুছান্নাফে আবী শায়বা, রওদ্বতুল
উনফ, ইবনে হিশাম, সিয়ারু আ’লামিন
নুবালা ইত্যাদি
অপর বর্ণনায় রয়েছে,
اِنْ وَّجَدْتُّـمُوْهُ
فَاقْطَعُوْا يَدَهٗ ثُـمَّ اقْطَعُوْا رِجْلَهٗ ثُـمَّ اقْطَعُوْا يَدَهٗ ثُـمَّ اقْطَعُوْا رِجْلَهٗ فَلَمْ تُصِبْهُ السَّرِيَّةُ
অর্থ: “যদি আপনারা
তাকে পান, তাহলে প্রথমে তার (ডান) হাত কাটবেন। তারপর
(ডান) পা কাটবেন। অতঃপর (বাম) হাত কাটবেন। তারপর (বাম) পা কাটবেন। কিন্তু
সারিয়্যাহ বাহিনী তাদেরকে পাননি।” সুবহানাল্লাহ! (সুনানে সা‘ঈদ ইবনে মানছূর)
পরবর্তীতে হযরত
হাব্বার ইবনে আসওয়াদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ
করেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
اِنَّالْاِسْلَامَ
مَـحَا ذٰلِكَ .
অর্থ: “নিশ্চয়ই
ইসলাম এই সমস্ত কিছু মিটিয়ে দিয়েছে।” সুবহানাল্লাহ! (ওয়াক্বিদী)
উল্লেখ্য যে, স¦াভাবিকভাবে সম্মানিত শরীয়ত মুবারক উনার
বিধান হচ্ছে, কতলের পরিবর্তে কতল। কিন্তু উম্মু আবীহা,
খইরু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনাকে যারা কষ্ট দিয়েছিলো, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
তাদের বিরুদ্ধে সারিয়্যাহ বাহিনী প্রেরণ করেছেন। শুধু তাই নয়, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে সম্মানিত
নির্দেশ মুবারকও দিয়েছিলেন তাদেরকে পেলেই আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়। সুবহানাল্লাহ!
অবশ্য পরে সম্মানিত নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন কতল করার জন্য। সুবহানাল্লাহ! তবে
এমনভাবে কতল করার জন্য সম্মানিত নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন যে, “প্রথমে ডান হাত কাটবেন। তারপর ডান পা কাটবেন। অতঃপর বাম হাত কাটবেন। তারপর
বাম পা কাটবেন। অর্থাৎ তাদেরকে কঠিন শাস্তি দিয়ে মৃত্যুদ- দেয়ার জন্য সম্মানিত
নির্দেশ মুবারক দিয়েছিলেন।” সুবহানাল্লাহ!
সুতরাং এখান থেকেই
স্পষ্ট হয়ে যায় যে, উম্মু আবীহা, খইরু
বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল
ঊলা আলাইহাস সালাম উনার শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত মুবারক কত
বেমেছাল এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি উনাকে কত বেমেছাল মুহব্বত মুবারক করতেন। যেটা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর চিন্তা ও কল্পনার উর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ!
স্মরণীয় যে, খইরু
বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল
ঊলা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র মক্কা শরীফে প্রত্যাবর্তনের কিছুদিন পর, একদিন মধ্য রাতে উম্মু আবীহা, খইরু বানাতি
রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা
আলাইহাস সালাম উনাকে নিয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত কিনানাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
তিনি সম্মানিত মক্কা শরীফ থেকে বের হলেন। তিনি উম্মু আবীহা, খইরু
বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল
ঊলা আলাইহাস সালাম উনাকে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার নির্দেশ
মুবারক অনুযায়ী ‘বাত্বনে ইয়া’জিজে’ নিয়ে হযরত যায়িদ ইবনে হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার এবং হযরত আনসার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার অর্থাৎ
উনাদের নিকট পৌঁছিয়ে দিলেন। হযরত যায়িদ ইবনে হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
তিনি এবং হযরত আনসার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি অর্থাৎ উনারা উভয়ে
উম্মু আবীহা, খইরু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনাকে নিয়ে সম্মানিত মদীনা
শরীফ উনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। উনারা নিরাপদে সম্মানিত মদীনা শরীফ-এ পৌঁছেন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার
লখতে জিগার, উম্মু আবীহা, খইরু বানাতি
রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা
আলাইহাস সালাম উনাকে কাছে পেয়ে বেমেছাল সম্মানিত খুশি মুবারক প্রকাশ করেন।
সুবহানাল্লাহ! সাথে সাথে সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা এবং
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাও বেমেছাল খুশি প্রকাশ করেন।
সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য যে, পরবর্তীতে
হযরত হাব্বার ইবনে আসওয়াদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ
করেন। এ সম্পর্কে হযরত ইমাম আবূ আব্দিল্লাহ আল ওয়াক্বিদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি
উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘মাগাযী’ উনার মধ্যে উল্লেখ করেন,
فَبَيْنَا
رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسٌ بِالْمَدِيْنَةِ فِـىْ اَصْحَابِهٖ اِذْ طَلَعَ حَضْرَتْ هَبَّارُ بْنُ الْاَسْوَدِ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ وَكَانَ لَسِنًا فَقَالَ يَا مُـحَمَّدُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُبَّ مَنْ سَبَّكَ اِنّـِــىْ قَدْ جِئْتُ مُقِرًّا بِالْاِسْلَامِ اَشْهَدُ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ وَاَنَّ مُـحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
অর্থ: “একদা নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে সম্মানিত মদীনা শরীফ-এ
বসা ছিলেন। হঠাৎ সেখানে হযরত হাব্বার ইবনে আসওয়াদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি
আসলেন। তিনি সুভাষী ছিলেন। তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া
হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনাকে যে আঘাত দিয়েছে অর্থাৎ আপনাকে
যে কষ্ট দিয়েছে. আপনি তাকে হত্যা করুন! নিশ্চয়ই আমি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার স¦ীকৃতি নিয়ে এসেছি।
اَشْهَدُ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ وَاَنَّ مُحَمَّدًا
عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থ: আমি সাক্ষ্য
দিচ্ছি যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই,
তিনি এক, উনার কোনো শরীক নেই। আর নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ
পাক উনার হাবীব এবং উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” সুবহানাল্লাহ!
(মাগাযী, ইমতা’)
কিতাবে বর্ণিত
রয়েছে, অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি কবূল করেন এবং ইরশাদ মুবারক
করেন,
يَا حَضْرَتْ هَبَّارُ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى
عَنْهُ عَفَوْتُ عَنْكَ وَالْاِسْلَامُ يـَجُبُّ مَا كَانَ قَـبْلَهٗ
অর্থ: “হে হযরত
হাব্বার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, আমি আপনার অপরাধ ক্ষমা
করে দিয়েছি। আর সম্মানিত দ্বীন ইসলাম তিনি উনার পূর্বের সমস্ত কিছু বাতিল করে দেন,
মিটিয়ে দেন।” সুবহানাল্লাহ! (নিহায়াতুল ঈজাঝ)
সম্মানিত বদর জিহাদে বন্দীদের থেকে মুক্তিপণ
আদায়:
ঐতিহাসিক বদর জিহাদের বন্দীদেরকে যখন পবিত্র
মদীনা শরীফে নিয়ে আসা হলো তখন তাদের কাছ থেকে মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেয়া হচ্ছিলো।
এসব বন্দীদের মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার সম্মানিত চাচা খতিমুল মুহাজিরীন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস
সালাম তিনিও ছিলেন। যিনি গোপনে গোপনে অনেক পূর্বেই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ
করেছিলেন। সুবাহানাল্লাহ! খতিমুল মুহাজিরীন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম
উনাকে যখন মুক্তিপণ আদায়ের জন্য বলা হলো তখন স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হে
আমার সম্মানিত চাচাজান! সেই সম্পদ কোথায় যা আপনি ও হযরত উম্মুল ফযল রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহা তিনি অর্থাৎ আপনারা উভয়ে মিলে মাটির নিচে রেখে দিয়েছিলেন। আর আমার
সম্মানিতা চাচিজান উনাকে বলেছিলেন, আমি যদি সম্মানিত বদর
জিহাদে বিছালী শা’ন মুবারক গ্রহণ করি তাহলে এ সম্পদ ফযল আব্দুল্লাহ ও কুছামের
সন্তানদেরকে দিবেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার কথা মুবারক শুনে খতিমুল মুহাজিরীন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস
সালাম তিনি প্রকাশ্যে আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোাষনা দিলেন মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম!
নিশ্চয়ই আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন
নাবীয়্যিন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুবহানাল্লাহ! কেননা, এ লুকায়িত সম্পদের কথা আমি ও আপনার চাচি হযরত উম্মুল ফযল রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহা তিনি ব্যতীত আর কেউই জানে না।” সুবহানাল্লাহ! খতিমুল মুহাজিরীন
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম তিনি উনার ঈমান আনার বিষয়টি প্রকাশ্য ভাবে
ঘোষণা দিলেন। সুবহানাল্লাহ!
ঐতিহাসিক হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি
বলেন, সম্মানিত বদর জিহাদে বন্দীদের মধ্যে আবূ ওয়াদ্দায়া ইবনে
যাবীরাতুস সাহমীও ছিলো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, ‘পবিত্র মক্কা শরীফে তার এক ছেলে
আছে। সে ছেলেটি খুব চতুর ব্যবসায়ী ও সম্পদশালী। অবশ্যই সে তার পিতাকে মুক্তিপণ
দিয়ে ছাড়িয়ে নেয়ার জন্যে আপনাদের কাছে আসবে।’ এদিকে কুরাইশ কাফির মুশরিকরা বলাবলি
করছিলো যে, তোমরা বন্দীদের ছাড়াবার জন্যে তাড়াহুড়া করবে না।
তা হলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
ও উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা মুক্তিপণের পরিমান
বৃদ্ধি করে দিবেন, সেখানে মুত্তালিব ইবনে ওয়াদায়া (নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্বকথিত
সেই ছেলেটি ছিলো) সে বলল, তোমরা ঠিকই বলেছ তাড়াহুড়া করা যাবে
না। কিন্তু এ কথা বলে সে নিজেই রাতের আঁধারে পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে বেরিয়ে পবিত্র
মদীনা শরীফে এসে চার হাজার দিরহামের বিনিময়ে তার পিতাকে ছাড়িয়ে নিয়ে চলে গেলো।
এই ওয়াদা হচ্ছে
সম্মানিত বদর জিহাদের বন্দীদের মধ্যে যাকে মুক্তিপণের বিনিময়ে ছাড়ান হয়। এরপর
পর্যায়ক্রমে কুরাইশ কাফির মুশরিকরা তাদের বন্দীদের মুক্ত করার জন্যে মুক্তিপণ
পাঠাতে থাকে। তখন মিকরায ইবনে হাফস ইবনে আখয়াফ সে সুহাইল ইবনে আমরের মুক্তির
ব্যাপারে আসলো। তাকে বনূ সালিম ইবনে আওফ গোত্রের হযরত মালিক ইবনে দাখনাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বন্দী করেছিলেন এবং তিনি আবৃত্তি করেন।
أَسَرْت سُهَيْلًا
فَلَا أَبْتَغِي ... أَسِيرًا بِهِ مِنْ جَمِيعِ الْأُمَمِ
অর্থ: ‘আমিতো সুহাইলকে বন্দি করেছি। তাকে বাদ
দিয়ে দলের অন্য কাউকে বন্দী করতে আমি চাইনি।’
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সুহাইলের
নীচের ঠোঁট কাটা ছিলো। বনূ আমির ইবনে লুয়াই গোত্রের মুহাম্মদ ইবনে আমর ইবনে আতা
রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যে, সাইয়্যিদুনা
হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আরজী করলেন, ইয়া
রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! দয়া করে আমাকে
অনুমতি দিন আমি সুহাইলের সামনের উপর নীচের
দুটো করে চারটি দাঁত উপড়ে ফেলি। এতে তার জিহ্বা ঝুলে থাকবে। ফলে সে আর কখনও কোথাও
দাঁড়িয়ে আপনার বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতে পারবে না।” কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মুখ বিকৃত করার অনুমতি দেননি।
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত সুহাইল
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্পর্কে বলেছেন যে, তিনি
এমন এক সময় ভূমিকা রাখবেন যা কেউ নিন্দা করতে পারবে না। পরবর্তীতে দেখা গেছে, নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বিছালী শা’ন
মুবারক প্রকাশের পর যখন অনেকেই মুরতাদ হয়ে যায় এবং মুনাফিকরা পবিত্র মক্কা শরীফে
ফিতনা সৃষ্টি করে তখন হযরত সুহাইল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পবিত্র মক্কা
শরীফে মুরতাদ ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ও শক্ত বক্তব্য দিয়ে মুসলমান
উনাদেরকে সঠিক পথের উপর অবিচল রাখার ব্যপারে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন।
সুবহানাল্লাহ! (সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
প্রসিদ্ধ তারিখ ও ইতিহাস গ্রন্থ সমূহে উল্লেখ
রয়েছে, “হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আবূ উয্যা আমর ইবনে আব্দুল্লাহ
ইবনে উছমান ইবনে উহাইব ইবনে হুযাফা ইবনে জুমাহ ছিলো দরিদ্র লোক, সে ছিলো অনেক কন্যা সন্তানের পিতা। সেও সম্মানিত বদর জিহাদে বন্দি
হয়েছিলো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার খিদমত মুবারকে সে আবেদন করলো, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া
হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন আমার কোন
সহায়-সম্পদ নেই, আমি দরিদ্র ও অনেক সন্তানের পিতা। তাই আমার
উপর দয়া ইহসান করুন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি তার প্রতি দয়া করলেন এবং এই মর্মে ওয়াদা নিলেন যে, সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্য করবে না।
তখন আবূ উয্যা সে
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এই দয়া
ইহসান মুবারক উনার কথা স্মরণ করে ছানা-ছিফত করে বলল,
مَنْ مُبَلّغٌ عَنّي الرّسُولَ
حضرت مُحَمّدًا صلى الله عليه و سلم ... بِأَنّك حَقّ وَالْمَلِيكُ حَمِيدُ
এমন ব্যক্তি কে আছেন যে, আমার
পক্ষ থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনাকে এই সংবাদ পৌঁছে দিবেন, আপনি হক্ব বা সত্য
এবং আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার সমস্ত হামদ বা প্রশংসা মুবারকের অধিকারী।
সুবহানাল্লাহ!
وَأَنْتَ امْرِئِ وَتَدْعُو
إلَى الْحَقّ وَالْهُدَى ... عَلَيْك مِنْ اللّهِ الْعَظِيمِ شَهِيدُ
আপনি হক্ব বা সত্য ও হিদায়াতের দিকে আহ্বান করে
থাকেন। আপনার সত্যতার উপর মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে সাক্ষী
বিদ্যমান।
وَأَنْتَ امْرِئِ بُوّئْت فِينَا مَبَاءَةً
... لَهَا دَرَجَاتٌ سَهْلَةٌ وَصُعُودُ
আপনি আমাদের মধ্যে
এমন সুউচ্চ মর্যাদা-মর্তবা মুবারক উনার অধিকারী যার স্তরসমূহ অতিক্রম করা কারো
পক্ষে সম্ভব নয়। আপনার বিরুদ্ধে যারা যুদ্ধ করে তারা দুর্ভাগা আর যাদের সাথে আপনার
সন্ধি হয় তারা সৌভাগ্যবান।
وَلَكِنْ إذَا ذُكّرْت بَدْرًا وَأَهْلَهُ
... تَأَوّبَ مَا بِي حَسْرَةٌ وَقُعُودُ
কিন্তু আমি যখন সম্মানিত বদর জিহাদ ও উনার মধ্যে
অংশগ্রহণের কথা স্মরণ করি তখন হতাশা ও অনুশোচনায় আমি মুহ্যমান হয়ে পড়ি।
হযরত ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এই
আবূ উয্যা পরবর্তীতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার সাথে কৃত ওয়াদা ভঙ্গ করে। কাফির মুশরিকরা তার জ্ঞান-বুদ্ধি নিয়ে
উপহাস করতো তাই নাকি সে এরূপ করেছিল। নাউযূবিল্লাহ! ফলে সে পুনরায় তাদের দলে যোগ
দেয়। সে পরবর্তীতে উহুদ জিহাদেও কাফিরদের পক্ষে অংশ গ্রহণ করে পুনরায় বন্দি হয়। এবারেও সে নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে দয়া
ইহসান প্রার্থনা করে। কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, তোমাকে এবার
মাফ করা হবে না। কারণ তুমি দয়া ইহাসানের কথা ভুলে গিয়ে বলবে, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাকে দু’বার ধোঁকা দিয়েছি। নাউযূবিল্লাহ! তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ মুবারকে তাকে হত্যা করা হয়। এ
ওয়াক্বীয়া প্রসঙ্গে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
لاَ يُلْدَغُ الْمُؤْمِنُ
مِنْ جُحْرٍ مَرَّتَيْنِ.
অর্থ: “মু’মিন একই
গর্ত থেকে দু’বার দংশিত হয় না।” (আস সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-
ইবনে হিশাম, সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
প্রসিদ্ধ তারিখ ও
ইতিহাস গ্রন্থ সমূহে উল্লেখ রয়েছে,
“হযরত উরওয়া ইবনে জুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সম্মানিত বদর জিহাদে কুরাইশ কাফির
মুশরিকরা বিপর্যয়ের পর উমাইর ইবনে ওয়াহব জুমাহী এক দিন পবিত্র কা’বা শরীফ উনার
হাতিমের কাছে সাফওয়ান ইবনে উমাইয়ার সাথে বসে ছিলো। উমাইর ইবনে ওয়াহব ছিলো কুরাইশ
কাফির মুশরিকদের মধ্যে এক জঘন্য প্রকৃতির কাফির নেতা। পবিত্র মক্কা শরীফ উনার
মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে
ও উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে যারা
যুলুম-নির্যাতন করতো এবং উনাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করতো, সে
ছিলো তাদের মধ্যে অন্যতম। নাউযূবিল্লাহ! তার ছেলে ওয়াহব ইবনে উমাইর বদর জিহাদে
বন্দী হয়।
হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যুরাইক
গোত্রের হযরত রিফায়া ইবনে রাফি’ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ওয়াহব ইবনে
উমাইরকে বন্দী করেছিলেন।”
অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে,
قَالَ حضرت ابْنُ إسْحَاقَ رحمة الله عليه حَدّثَنِي
حصرت مُحَمّدُ بْنُ جَعْفَرِ بْنِ الزّبَيْرِ رحمة الله عليه ، عَنْ حضرت عُرْوَةَ بْنِ الزّبَيْرِ رضى الله تعالى عنه ، قَالَ فَذَكَرَ أَصْحَابَ الْقَلِيبِ وَمُصَابَهُمْ فَقَالَ صَفْوَانُ وَاَللّهِ إنْ فِي الْعَيْشِ بَعْدَهُمْ خَيْرٌ قَالَ لَهُ عُمَيْرٌ صَدَقْت وَاَللّهِ أَمَا وَاَللّهِ لَوْلَا دَيْنٌ عَلَيّ لَيْسَ لَهُ عِنْدِي قَضَاءٌ وَعِيَالٌ أَخْشَى عَلَيْهِمْ الضّيْعَةَ بَعْدِي ، لَرَكِبْت إلَى حضرت مُحَمّدٍ صلى الله عليه و سلم حَتّى أَقْتُلَهُ فَإِنّ لِي قِبَلَهُمْ عِلّةً ابْنِي أَسِيرٌ فِي أَيْدِيهِمْ قَالَ فَاغْتَنَمَهَا صَفْوَانُ وَقَالَ عَلَيّ دَيْنُك ، أَنَا أَقْضِيهِ عَنْك ، وَعِيَالُك مَعَ عِيَالِي أُوَاسِيهِمْ مَا بَقُوا ، لَا يَسَعُنِي شَيْءٌ وَيَعْجِزُ عَنْهُمْ فَقَالَ لَهُ عُمَيْرٌ فَاكْتُمْ شَأْنِي وَشَأْنَك ، قَالَ أَفْعَلُ .
অর্থ: “হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি
তিনি বলেন, হযরত মুহম্মদ ইবনে জা’ফর রহমতুল্লাহি
আলাইহি তিনি হযরত উরওয়া ইবনে যুবাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে আমার নিকট
বর্ণনা করেন, উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (তিনি তখনও
দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেননি) তিনি বদর কুয়ায় নিক্ষিপ্তদের মর্মান্তিক পরিণতির কথা
আলোচনা করেছিলেন। বর্ণনা শুনে সাফওয়ান সে বললো, মহান আল্লাহ
পাক উনার ক্বসম! এদের নিহত হওয়ার পর আমাদের বেঁচে থাকার কোন সার্থকতা নেই। হযরত
উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, তুমি ঠিকই
বলেছো। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমার উপর যদি এমন ঋণের বোঝা না থাকতো, যা পরিশোধ করার কোন ব্যবস্থা আমার নেই। আর যদি আমার সন্তানাদি না থাকতো,
আমার অবর্তমানে যাদের ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা না থাকতো, তবে আমি গিয়ে অবশ্যই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে শহীদ করতাম। নাউযূবিল্লাহ! আরো কারণ হলো আমার ছেলে
উনাদের হাত মুবারকে বন্দী রয়েছে। সাফওয়ান ইবনে উমাইর সুযোগ বুঝে বলল, তোমার ঋণের দায়িত্ব আমার, তোমার পক্ষ থেকে আমি তা
পরিশোধ করবো। তোমার সন্তানরা আমার সন্তানদের সাথে থাকবে। যতদিন তারা বেঁচে থাকবে
আমি তাদের দেখা-শুনা করবো। আমার থাকবে আর তারা পাবে না। এমনটি কোন কখনও হবে না।
তখন হযরত উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
তিনি সাফওয়ানকে বললেন তা হলে বিষয়টি আমার ও তোমার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাক। সাফওয়ান বলল,
তাই করা হোক।
قَالَ ثُمّ أَمَرَ عُمَيْرٌ بِسَيْفِهِ
فَشَحَذَ لَهُ وَسَمّ ثُمّ انْطَلَقَ حَتّى قَدِمَ الْمَدِينَةَ ؛ فَبَيْنَا حضرت عُمَرُ بْنُ الْخَطّابِ عليه السلام فِي نَفَرٍ مِنْ الْمُسْلِمِينَ يَتَحَدّثُونَ عَنْ يَوْمِ بَدْرٍ وَيَذْكُرُونَ مَا أَكْرَمَهُمْ اللّهُ بِهِ وَمَا أَرَاهُمْ مِنْ عَدُوّهِمْ إذْ نَظَرَ حضرت عُمَرُ عليه السلام إلَى عُمَيْرِ بْنِ وَهْبٍ حِينَ أَنَاخَ عَلَى بَابِ الْمَسْجِدِ مُتَوَشّحًا السّيْفَ فَقَالَ هَذَا الْكَلْبُ عَدُوّ اللّهِ عُمَيْرُ بْنُ وَهْبٍ وَاَللّهِ مَا جَاءَ إلّا لِشَرّ وَهُوَ الّذِي حَرّشَ بَيْنَنَا، وَحَزَرْنَا لِلْقَوْمِ يَوْمَ بَدْرٍ . ثُمّ دَخَلَ حضرت عُمَرُ عليه السلام عَلَى رَسُولِ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ فَقَالَ يَا نَبِيّ اللّهِ صلى الله عليه و سلم هَذَا عَدُوّ اللّهِ عُمَيْرُ بْنُ وَهْبٍ قَدْ جَاءَ مُتَوَشّحًا سَيْفَهُ قَالَ فَأَدْخِلْهُ عَلَيّ
বর্ণনাকারী বলেন, হযরত
উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তার তরবারী ধারাল ও বিষাক্ত করে নিলো। তারপর
পবিত্র মদীনা শরীফে গিয়ে পৌঁছলো। এ সময় সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস
সালাম তিনি কতিপয় হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের নিয়ে সম্মানিত
বদর জিহাদ সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা করছিলেন যে এ সম্মানিত জিহাদে মহান আল্লাহ পাক
তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের বেমেছাল
মর্যাদা-মর্তবা প্রকাশ করেছেন। আর শত্রুদের শোচনীয় অবস্থা দেখিয়েছেন সে বিষয়টি
উনারা স্মরণ করছিলেন। সুবহানাল্লাহ! এমন সময় হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি
দেখতে পেলেন হযরত উমাইর ইবনে ওয়াহব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পবিত্র মসজিদের
সামনে উনার উট মুবারক থামিয়েছেন এবং কাঁধে উনার তরবারী ঝুলছে। সাইয়্যিদুনা হযরত
ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, এই কুকুরটি মহান
আল্লাহ পাক উনার দুশমন উমাইর ইবনে ওয়াহব, সে কোন অসৎ
উদ্দেশ্য ছাড়া এখানে আসেনি। সেই তো আমাদের মাঝে ফিতনা ফাসাদ সৃষ্টি করেছিলো এবং
সম্মানিত বদর জিহাদে আমাদের সৈন্য সংখ্যা সম্পর্কে অনুমান করে শত্রুদেরকে জানিয়ে
দিয়েছিলো। এরপর সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক
উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত
মুবারকে গিয়ে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবিল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এই যে মহান আল্লাহ পাক উনার দুশমন উমাইর ইবনে
ওয়াহব । কাঁধে তরবারি ঝুলিয়ে এখানে এসেছে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, উনাকে নিয়ে আমার
কাছে আসুন।
قَالَ فَأَقْبَلَ
حضرت عُمَرُ عليه السلام حَتّى أَخَذَ بِحِمَالَةِ سَيْفِهِ فِي عُنُقِهِ فَلَبّبَهُ بِهَا، وَقَالَ لِرِجَالِ مِمّنْ كَانُوا مَعَهُ مِنْ الْأَنْصَارِ - اُدْخُلُوا عَلَى رَسُولِ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ فَاجْلِسُوا عِنْدَهُ وَاحْذَرُوا عَلَيْهِ مِنْ هَذَا الْخَبِيثِ فَإِنّهُ غَيْرُ مَأْمُونٍ ثُمّ دُخِلَ بِهِ عَلَى رَسُولِ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ الرّسُولُ فَلَمّا رَاهَ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ وَ حضرت عُمَرُ عليه السلام آخِذٌ بِحِمَالَةِ سَيْفِهِ فِي عُنُقِهِ قَالَ أَرْسِلْهُ يَا حضرت عُمَرُ عليه السلام اُدْنُ يَا حضرت عُمَيْرُ رضى الله تعالى عنه فَدَنَا ثُمّ قَالَ انْعَمُوا صَبَاحًا ، وَكَانَتْ تَحِيّةَ أَهْلِ الْجَاهِلِيّةِ بَيْنَهُمْ فَقَالَ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ قَدْ أَكْرَمَنَا اللّهُ بِتَحِيّةِ خَيْرٍ مِنْ تَحِيّتِك يَا حضرت عُمَيْرُ رضى الله تعالى عنه بِالسّلَامِ تَحِيّةِ أَهْلِ الْجَنّةِ . فَقَالَ أَمَا وَاَللّهِ يَا حضرت مُحَمّدُ صلى الله عليه و سلم إنْ كُنْت بِهَا لَحَدِيثُ عَهْدٍ
বর্ণনাকারী বলেন, সাইয়্যিদুনা
হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি তার ঝুলন্ত তরবারি ঘাড়ের সাথে চেপে রেখে
বুকের কাপড় জড়িয়ে ধরলেন এবং হযরত আনসার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম
উনাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, আপনারা নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকটে গিয়ে বসুন এবং এ
দুরাচারের ব্যপারে সতর্ক থাকুন। কেননা, তাকে বিশ্বাস করা যায়
না। অতপর তিনি তাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার কাছে নিয়ে গেলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন তাকে এ অবস্থায় দেখলেন যে, সাইয়্যিদুনা
হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি তার তরবারি ঘাড়ের মধ্যে লাগিয়ে রেখেছেন,
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হে সাইয়্যিদুনা হযরত
ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম! তাকে ছেড়ে দিন। আর হে হযরত উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু! আমার কাছে আসুন। উমাইর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে গিয়ে বললেন, সুপ্রভাত! এটাই
ছিলো তাদের মধ্যে প্রচলিত জাহিলীয়া যুগের পরস্পরের প্রতি সম্ভাষণ। নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন,
হে উমাইর! তোমার সম্ভাষণ অপেক্ষা উত্তম সম্ভাষণের ব্যবস্থা দিয়ে
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে সম্মানিত করেছেন। আর তা হলো আস সালামু আলাইকুম,
যা হবে জান্নাতীগণ উনাদের সম্ভাষণ। সে বলল, ইয়া
রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ পাক
উনার ক্বসম! আমি এ বিষয়ে এখনই অবগত হলাম।
قَالَ فَمَا جَاءَ بِك يَا حضرت عُمَيْرُ رضى الله تعالى عنه ؟ قَالَ جِئْت لِهَذَا الْأَسِيرِ
الّذِي فِي أَيْدِيكُمْ فَأَحْسِنُوا فِيهِ قَالَ فَمَا بَالُ السّيْفِ فِي عُنُقِك ؟ قَالَ قَبّحَهَا اللّهُ مِنْ سُيُوفٍ وَهَلْ أَغْنَتْ عَنّا شَيْئًا ؟ قَالَ اُصْدُقْنِي ، مَا الّذِي جِئْت لَهُ ؟ قَالَ مَا جِئْت إلّا لِذَلِكَ قَالَ بَلْ قَعَدْت أَنْتَ وَصَفْوَانُ بْنُ أُمَيّةَ فِي الْحِجْرِ ، فَذَكَرْتُمَا أَصْحَابَ الْقَلِيبِ مِنْ قُرَيْشٍ ، ثُمّ قُلْت، لَوْلَا دَيْنٌ عَلَيّ وَعِيَالٌ عِنْدِي لَخَرَجْت حَتّى أَقْتُلَ حضرت مُحَمّدًا صلى الله عليه و سلم ، فَتَحَمّلَ لَك صَفْوَانُ بِدَيْنِك وَعِيَالِك ، عَلَى أَنْ تَقْتُلَنِي لَهُ وَاَللّهُ حَائِلٌ بَيْنَك وَبَيْنَ ذَلِكَ قَالَ حضرت عُمَيْرٌ رضى الله تعالى عنه أَشْهَدُ أَنّك رَسُولُ اللّهِ وَقَدْ كُنّا يَا رَسُولَ اللّهِ صلى الله عليه و سلم نُكَذّبُك بِمَا كُنْت تَأْتِينَا بِهِ مِنْ خَبَرِ السّمَاءِ وَمَا يَنْزِلُ عَلَيْك مِنْ الْوَحْيِ وَهَذَا أَمْرٌ لَمْ يَحْضُرْهُ إلّا أَنَا وَصَفْوَانُ فَوَاَللّهِ إنّي لَأَعْلَمُ مَا أَتَاك بِهِ إلّا اللّهُ فَالْحَمْدُ لِلّهِ الّذِي هَدَانِي لِلْإِسْلَامِ وَسَاقَنِي هَذَا الْمَسَاقَ ثُمّ شَهِدَ شَهَادَةَ الْحَقّ . فَقَالَ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ " فَقّهُوا أَخَاكُمْ فِي دِينِهِ وَأَقْرِئُوهُ الْقُرْآنَ وَأَطْلِقُوا لَهُ أَسِيرًا ، فَفَعَلُوا
নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হে
উমাইর! তুমি কি জন্যে এসেছ? সে বলল, আমি
এসেছি আপনাদের হাতে আটক এই বন্দীর মুক্তির জন্যে। তার ব্যাপারে দয়া করুন। নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক
করলেন তবে তোমার কাঁধে তরবারী কেন? সে বলল, মহান আল্লাহ পাক তিনি এই তরবারিকে অমঙ্গল করুন। কারণ এই তরবারি কি আমাদের
কোন কাজে এসেছে? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, তুমি
কি উদ্দেশ্যে এসেছো? সে বলল, ঐ বিষয়
ছাড়া আমি আর কোন উদ্দেশ্যে আসিনি। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, কিছুতেই
তা নয় বরং তুমি ও সাফওয়ান ইবনে উমাইয়া হাতীমে বসে বদরের কুয়ায় নিক্ষিপ্ত কুরাইশ
কাফির মুশরিকদের সম্পর্কে আলোচনা করছিলে। তুমিতো বলছিলে আমার যদি ঋণের বোঝা এবং
সন্তানদের ভরণ পোষণের দায়িত্ব না থাকতো, তবে আমি অবশ্যই
বেরিয়ে গিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাকে শহীদ করতাম। নাউযূবিল্লাহ! তখন সাফওয়ান ইবনে উমাইয়া তোমার ঋণ ও সন্তানের
দায়িত্ব এই শর্তে গ্রহণ করে যে, তুমি আমাকে শহীদ করবে।
নাউযূবিল্লাহ! অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমার ও তোমার উদ্দেশ্যকে আমার কাছে
প্রকাশ করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! তখন হযরত উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি
বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল
হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুবহানাল্লাহ! ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া
হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আকাশের যে সব সংবাদ আমাদের
শুনাতেন এবং আপনার উপর যে সকল ওহী মুবারক অবতীর্ণ হতো, আমরা
তা সবই অবিশ্বাস করতাম। নাউযূবিল্লাহ! আর এ বিষয়টি আমি ও সাফওয়ান ব্যতীত অন্য কেউ
জানে না। সুতরাং মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি নিঃসন্দেহে বলতে পারি, এ সংবাদ আপনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি ছাড়া আর কেউ জানায়নি। সকল প্রশংসা
সেই মহান আল্লাহ পাক উনার, যিনি আমাকে দ্বীন ইসলাম উনার পথ
দেখালেন ও এই স্থানে এনে দিলেন। এরপর তিনি হক্ব বা সত্যের সাক্ষ্য প্রদান করলেন।
অতপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নির্দেশ মুবারক দিলেন,
আপনারা আপনাদের দ্বীনি ভাইকে দ্বীন ইসলাম উনার ইলম শিক্ষা দিন।
উনাকে পবিত্র কুরআন শরীফ শিক্ষা দিন এবং উনার বন্দীকে ছেড়ে দিন! হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নির্দেশ মুবারক মতে তাই করলেন।
সুবহানাল্লাহ!
ثُمّ قَالَ يَا رَسُولَ اللّهِ صلى الله عليه و سلم إنّي كُنْت جَاهِدًا عَلَى إطْفَاءِ نُورِ اللّهِ شَدِيدٌ لِلْأَذَى
لِمَنْ كَانَ عَلَى دِينِ اللّهِ عَزّ وَجَلّ وَأَنَا أُحِبّ أَنْ تَأْذَنَ لِي ، فَأَقْدَمَ مَكّةَ، فَأَدْعُوهُمْ إلَى اللّهِ تَعَالَى ، صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ وَإِلَى الْإِسْلَامِ لَعَلّ اللّهُ يُهْدِيهِمْ وَإِلّا آذَيْتهمْ فِي دِينِهِمْ كَمَا كُنْت أُوذِيَ أَصْحَابَك فِي دِينِهِمْ؟ قَالَ فَأَذِنَ لَهُ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ فَلَحِقَ بِمَكّةَ. وَكَانَ صَفْوَانُ بْنُ أُمَيّةَ حِينَ خَرَجَ حضرت عُمَيْرُ بْنُ وَهْبٍ رضى الله تعالى عنه يَقُولُ أَبْشِرُوا بِوَقْعَةِ تَأْتِيكُمْ الْآنَ فِي أَيّامٍ تُنْسِيكُمْ وَقْعَةَ بَدْرٍ وَكَانَ صَفْوَانُ يَسْأَلُ عَنْهُ الرّكْبَانَ حَتّى قَدِمَ رَاكِبٌ فَأَخْبَرَهُ عَنْ إسْلَامِهِ فَحَلَفَ أَنْ لَا يُكَلّمَهُ أَبَدًا ، وَلَا يَنْفَعَهُ بِنَفْعِ أَبَدًا.
অতঃপর একদা হযরত উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এতকাল ধরে আমি মহান আল্লাহ পাক উনার নূর মুবারক
নির্বাপিত করার কাজে তৎপর ছিলাম এবং যারা মহান আল্লাহ পাক উনার দ্বীন ইসলাম উনার
উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন উনাদেরকে নির্যাতন করার কাজে তৎপর ছিলাম এবং যারা মহান
আল্লাহ পাক উনার দ্বীন ইসলাম উনার উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন উনাদেরকে নির্যাতন করার
ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর। এখন আমি চাই আমাকে অনুমতি দিন, পবিত্র
মক্কা শরীফে গিয়ে আমি তাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ও সম্মানিত দ্বীন
ইসলাম উনার দিকে আহ্বান জানাই। অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদেরকে হিদায়াত দান
করবেন। আর যদি তারা হিদায়াত না হয় তবে বাতিল ধর্মে থাকার কারণে আমি ঐরূপ শাস্তি
দিবো, যেরূপ শাস্তি দিতাম আপনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে সত্য দ্বীনে থাকার কারণে। নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে অনুমতি দিলেন।
অনুমতি পেয়ে তিনি পবিত্র মক্কা শরীফে চলে যান।
0 Comments:
Post a Comment