মহাসম্মানিত আওলাদ
আলাইহিমুস সালাম এবং আলাইহিন্নাস সালাম মোট ৬ জন। ৩ জন আবনা’ (ছেলে) আলাইহিমুস
সালাম এবং ৩ জন বানাত (মেয়ে) আলাইহিন্নাস সালাম। উনারা হচ্ছেন,
(১) ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম,
(২) ইমামুছ ছালিছ
মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম
হুসাইন আলাইহিস সালাম,
(৩) আহলু বাইতি
রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাইনাব আলাইহাস
সালাম,
(৪) আহলু বাইতি
রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত রুক্বইয়্যাহ
আলাইহাস সালাম, (৫) আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু কুলছূম আলাইহাস সালাম এবং
(৬) আহলু বাইতি
রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম মুহসিন আলাইহিস
সালাম। সুবহানাল্লাহ!
তিনি মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক
প্রকাশ করেন ১১ হিজরী সনের ৩রা রমাদ্বান শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ বা’দ আছর
সম্মানিত মদীনা শরীফে। সুবহানাল্লাহ! দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত অবস্থান মুবারক ২৬
বছর ২ মাস ১৩ দিন। সুবহানাল্লাহ! সম্মানিত রওযা শরীফ জান্নাতুল বাক্বী’ শরীফ।
সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য যে, বিভিন্ন
কিতাবের বিভিন্ন বর্ণনা থেকে বিষয়টি স্পষ্ট যে, সাইয়্যিদাতুনা
আন নূরুর রবি‘য়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত নিসবত মুবারক হাছিল করার
লক্ষ্যে এবং উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়ার জন্য সাইয়্যিদুনা
হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম
আলাইহিস সালাম তিনিসহ আরো অনেক ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট
সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুর রবি‘য়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সাথে সম্মানিত
নিসবতে আযীম শরীফ-এ আবদ্ধ হওয়ার জন্য আরজি মুবারক পেশ করেন। তখন নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
এই বিষয়ে আমি মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত ওহী মুবারক উনার
অপেক্ষায় আছি। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা
আনহুম উনাদের পরামর্শে সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম
তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
নিকট সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুর রবি‘য়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার বিষয়ে
প্রস্তাব নিয়ে যান এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ উপস্থিত হয়ে উনাকে সম্মানিত সালাম
মুবারক দেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি সম্মানিত সালাম মুবারক উনার জবাব দিয়ে বলেন, হে
সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম! আপনি কিছু বলবেন কী?
তখন সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহূ ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি
বলেন, সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুর রবি‘য়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস
সালাম উনার সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ বিষয়ে সম্মানিত প্রস্তাব মুবারক নিয়ে এসেছি।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জবাবে
বললেন, ‘মারহাবান ওয়া আহলান’। সুবহানাল্লাহ! এর অধিক কিছু
বললেন না। সাইয়্যিদুনা হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন,
সে সময় আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ উপস্থিত ছিলাম। দেখলাম যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
সম্মানিত চেহারা মুবারক-এ সম্মানিত ওহী মুবারক নাযিল হওয়ার আলামত প্রকাশ পাচ্ছেন।
সুবহানাল্লাহ!
সেটাই সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত
রয়েছে,
عَن حضرت أنس رضى الله تعالى عنه قَالَ كنت قَاعِدا عِنْد النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فغشيه الْوَحْي فَلَمَّا سري عَنهُ قَالَ لي يَا أنس أَتَدْرِي
مَا جَاءَ بِهِ حضرت جِبْرِيل عليه السلام من عِنْد صَاحب الْعَرْش قلت بِأبي أَنْت وَأمي وَمَا جَاءَ بِهِ حضرت جِبْرِيل عليه السلام من عِنْد صَاحب الْعَرْش قَالَ إِن الله أَمرنِي أَن أزوج فَاطِمَة من عَليّ.
অর্থ: “হযরত আনাস
রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
একদা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ বসা ছিলাম। এমতাবস্থায় উনার নিকট সম্মানিত ওহী মুবারক
আসলেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর তিনি যখন সম্মানিত ওহী মুবারক উনার কারণে আনন্দিত হলেন,
তখন আমাকে বলেন, হে হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু
তা‘য়ালা আনহু! আপনি কি জানেন হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত আরশ উনার
মালিক মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে কি সংবাদ মুবারক নিয়ে এসেছেন? আমি বললাম, আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক!
হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত আরশ উনার মালিক মহান আল্লাহ পাক উনার
পক্ষ থেকে কি সংবাদ মুবারক নিয়ে এসেছেন? নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন,
নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে বলেছেন আমি যেন সাইয়্যিদাতুনা
আন নূরুর রবি‘য়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সাথে সাইয়্যিদুনা হযরত
কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার আযীমুশ শান সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ
সুসম্পন্ন করি।” সুবহানাল্লাহ! (জামিউল আহাদীছ, কানযুল
‘উম্মাল, আল বায়ান ওয়াত তা’রীফ)
সম্মানিত হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن حضرت عبد الله بن مسعود رضى الله تعالى عنه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الله تعالى امرنى ان ازوج حضرت فاطمة عليها السلام من حضرت على عليه السلام.
অর্থ: “হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান
আল্লাহ পাক তিনি আমাকে ওহী মুবারক করেছেন, আমি যেন
সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুর রবি‘য়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সাথে সাইয়্যিদুনা
হযরত কাররমাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার আযীমুশ শান সম্মানিত নিসবতে আযীম
শরীফ সুসম্পন্ন করি।” সুবহানাল্লাহ! (মুজামুল কবির লিত তাবরানী, মাজমাউয যাওয়ায়িদ লিল হায়সামী, কানযুল উম্মাল,
আল বয়ান ওয়াত তা’রীফ ইত্যাদি)
স্বয়ং খলিক্ব মালিক
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার সান্নিধ্যপ্রাপ্ত বিশেষ সম্মানিত ফেরেশতা আলাইহিমুস
সালাম উনাদের উপস্থিতিতে সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুর রবি‘য়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার আযীমুশ শান সম্মানিত নিসবতে আযীম
শরীফ সুসম্পন্ন করেছেন সেই সম্পর্কে,
‘নুযহাতুল মাজালিস’
কিতাবে বর্ণিত রয়েছে যে,
فجاءه حضرت جِبْرِيل عليه السلام في بعض الأيام وقال إن الله تعالى يقرئك السلام ويقول لك اليوم كان عقد حضرت فاطمة عليها السلام في مَوْطِنِهَا
في قَصْرٍ أمها في الجنة الخاطب حضرت إسرافيل عليه السلام، وحضرت جبريل عليه السلام وحضرت ميكائيل عليه السلام الشهود والولي رب العزة والزوج حضرت علي عليه السلام.
অর্থ: “হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি একদা
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ উপস্থিত হয়ে বলেন, নিশ্চয়ই মহান
আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে সালাম জানিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! আর তিনি আপনাকে উদ্দেশ্য
করে ইরশাদ মুবারক করেছেন, আজ সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ
সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুর রবি‘য়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিতা
আম্মাজান উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার
সম্মানিত বালাখানা মুবারক উনার মধ্যে সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুর রবি‘য়াহ হযরত যাহরা
আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত আক্বদ মুবারক সম্পন্ন হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! খতীব
হচ্ছেন হযরত ইসরাফীল আলাইহিস সালাম তিনি। আর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি ও
হযরত মীকাঈল আলাইহিস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারা দু‘জন সাক্ষী, স্বয়ং
খ¦ালিক্ব
মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি হচ্ছেন অলী তথা অভিভাবক এবং সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু
ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন মহাসম্মানিত যাওজুম মুকাররাম।” সুবহানাল্লাহ!
(নুযহাতুল মাজালিস)
সম্মানিত হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে আরো এসেছে,
عن حضرت أنس رضي الله عنه قال بينما رسول الله صلى الله عليه وسلم في المسجد إذ قال صلى الله عليه وسلم لعلي هذا حضرت جبريل عليه السلام يخبرني أن الله عز وجل زوجك حضرت فاطمة عليها السلام وأشهد على تزويجك أربعين ألف ملك وأوحى إلى شجرة طوبى أن انثري عليهم الدر والياقوت فنثرت عليهم الدر والياقوت فابتدرت إليه الحور العين يلتقطن من أطباق الدر والياقوت فهم يتهادونه بينهم إلى يوم القيامة.
অর্থ: “হযরত আনাস
ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। একদা নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত মসজিদে নববী
শরীফ উনার মধ্যে অবস্থান মুবারক করছিলেন। হঠাৎ তিনি সাইয়্যিদানা হযরত কাররামাল্লাহু
ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তিনি
হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম। তিনি আমাকে এই সংবাদ দিচ্ছেন যে, নিশ্চয়ই যিনি খ¦ালিক
মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুর রবি‘য়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস
সালাম উনার সাথে আপনার সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ সুসম্পন্ন করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
আপনাদের সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ-এ চল্লিশ হাজার ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম
উনাদেরকে সাক্ষী হিসেবে আযীমুশ শান নিসবতে আযীম শরীফ উনার অনুষ্ঠানে হাজির করা
হয়েছিলো। আর ‘তুবা’ বৃক্ষকে নির্দেশ মুবারক দেয়া হয়েছিলো যেন উনাদের উপর মুক্তা ও
ইয়াকুত (মূল্যবান পাথর) ছিটায়। অতঃপর চিত্তাকর্ষী নয়না বিশিষ্ট হুরেরা ওই মুক্তা
এবং ইয়াকুত দ্বারা পাত্র পূর্ণ করতে লাগলেন। যেগুলো উনারা ক্বিয়ামত পর্যন্ত পরস্পর
হাদিয়াস্বরূপ বিনিময় করবেন।” (আর রিয়াদুন নাদরাহ ফী মানাকিবি আশারাহ, যখায়িরুল
‘উকবা ফী মানাক্বিবে যাওইল কুরবা)
সম্মানিত হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن حضرت على عليه السلام قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم أتانى ملك فقال يا محمد صلى الله عليه وسلم ان الله تعالى يقرأ عليك السلام ويقول لك انى قد زوجت زوجك حضرت فاطمة عليها السلام ابنتك من حضرت على بن أبى طالب عليه السلام في الملا الاعلى فزوجها منه في الارض.
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা
হযরত কাররমাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক
করেন, আমার নিকট একজন ফেরেশতা আলাইহিস সালাম তিনি এসে বললেন,
ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!
মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে সালাম দিয়েছেন। আর বলেছেন, আমি
(মহান আল্লাহ পাক) আপনার সম্মানিত লখতে জিগার মুবারক সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুর
রবি‘য়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার আযীমুশ শান সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ
সাইয়্যিদুনা হযরত কাররমাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার সাথে হযরত ফেরেশতা
আলাইহিমুস সালাম উনাদের একটি সুউচ্চ মজলিস মুবারক-এ সম্পন মুবারক করেছি। কাজেই,
আপনি দুনিয়ার যমীনে সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুর রবি‘য়াহ হযরত যাহরা
আলাইহাস সালাম উনার সাথে সাইয়্যিদুনা হযরত কাররমাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম
উনার আযীমুশ শান মুবারক নিসবতে আযীম শরীফ সম্পন্ন করুন।” সুবহানাল্লাহ! (যখায়িরুল
‘উকবাহ ফী মানাক্বিবে যাওইল কুরবা ৩২)
কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, মহান
আল্লাহ পাক তিনি হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে সম্মানিত আদেশ মুবারক
দিলেন, উনারা যেন সুন্দর পোশাকে সুসজ্জিত হন। তারপর
জান্নাতের হুরদেরকেও সুন্দরভাবে সুসজ্জিত হওয়ার জন্য সম্মানিত নির্দেশ মুবারক
দিলেন। তুবা বৃক্ষকে হুকুম দিলেন সুন্দরভাবে সুসজ্জিত হওয়ার জন্য। অতঃপর সমস্ত
হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে চতুর্থ আসমানে অবস্থিত সম্মানিত বাইতুল
মামুর শরীফ-এ উপস্থিত হওয়ার সম্মানিত নির্দেশ মুবরক দিলেন। সেই বাইতুল মামুর শরীফ
উনার মিম্বর শরীফ-এ আবুল বাশার সাইয়্যিদুনা হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি
বসে খুতবাহ মুবারক দিলেন। তারপর মহান আল্লাহ পাক উনার ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম
উনাদের মধ্যে মিষ্টভাষী ‘রাহিল’ ফেরেশতা আলাইহিস সালাম উনাকে মিম্বরে এসে মহান
আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা মুবারক করার নির্দেশ মুবারক দিলেন। ‘রাহিল’ ফেরেশতা
আলাইহিস সালাম তিনি যখন খুতবাহ পাঠ করলেন উনার অতি সুমিষ্ট কণ্ঠের সুমধুর আওয়াযে
আসমানের সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা তন্দ্রাচ্ছন্ন হলেন। অতঃপর মহান
আল্লাহ পাক তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে বললেন, আমি
আমার খাছ মাহবুবাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সাথে
আমার আখাচ্ছুল খাছ প্রিয় বা মাহবূব ব্যক্তিত্ব মুবারক সাইয়্যিদুনা হযরত আলী ইবনে
আবি ত্বলিব আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ সুসম্পন্ন করলাম।
সুবহানাল্লাহ! হে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম! আপনি এই সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ
হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের মজলিসে সম্পাদন করে দিন।
মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুম মুতাবিক
সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুর রবি‘য়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার ও সাইয়্যিদুনা হযরত
কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ উনার অর্থাৎ উনাদের আযীমুশ শান সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ
উনার আক্বদ মুবারক হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে সাক্ষী বানিয়ে সম্পন্ন
করা হলো। এই সম্মানিত আক্বদ মুবারক উনার অনুষ্ঠানের সমস্ত কার্যক্রম সম্মানিত
জান্নাতী রেশমী কাপড় মুবারক উনার মধ্যে লিখে রাখা হলো। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম
তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে সম্মানিত ওহী মুবারক নিয়ে নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত
মুবারক-এ উপস্থিত হন। তারপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত ওহী মুবারক অনুযায়ী উনাদের আযীমুশ শান সম্মানিত
নিসবতে আযীম শরীফ বাস্তবায়ন করেন। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদাতুনা আন
নূরুর রবি‘য়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সাথে মাশওয়ারা করা
এই সম্পর্কে
‘যাখায়েরুল ‘উক্ববা শরীফ’ উনার বর্ণিত রয়েছে যে,
لما خطب حضرت على عليه السلام حضرت فاطمة عليها السلام أتاها رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال ان حضرت عليا عليه السلام قد ذكرك فسكتت فخرج فزوجها.
অর্থ: “যখন
সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি উম্মু আবীহা
সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুর রবি‘য়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সাথে সম্মানিত
নিসবতে আযীম শরীফ-এ আবদ্ধ হওয়ার জন্য আরজি মুবারক পেশ করলেন, তখন
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুর রবি‘য়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার নিকট আসলেন। তারপর
তিনি বললেন, নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ
আলাইহিস সালাম তিনি আপনার সাথে সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ-এ আবদ্ধ হওয়ার জন্য আরজি
মুবারক পেশ করেছেন। তখন সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুর রবি‘য়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম
তিনি চুপ থাকলেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি বের হয়ে গেলেন। তারপর উনার সম্মানিত আযীমুশ শান নিসবতে আযীম শরীফ
সম্পন্ন করলেন।” সুবহানাল্লাহ! (যাখায়েরুল ‘উক্ববাহ শরীফ)
এখান থেকে একটি
মাসয়ালা বের করা হয়েছে যে,
السكوت نصف الرجاء.
অর্থ: “চুপ থাকা
হচ্ছে অর্ধ সমর্থন।”
অর্থাৎ সমর্থনের
লক্ষণ। সুতরাং বিবাহ শাদীর বিষয়ে কোনো কুমারী মেয়েকে যদি প্রস্তাব দেয়া হয়, আর
উক্ত মেয়ে যদি প্রস্তাব শুনে চুপ থাকে। তাহলে বুঝতে হবে যে, উক্ত
মেয়ে এই প্রস্তাবে রাজি রয়েছে।
আযীমুশ শান নিসবতে
আযীম শরীফ উনার প্রস্তুতি বিষয় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম
উনাকে বললেন, আপনার কাছে কিছু আছে কি? সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি উনার সমস্ত
আয়-রোজগার অর্থাৎ দিনার ও দিরহাম নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রিজামন্দি ও সন্তুষ্টি হাছিলের লক্ষে খেদমত মুবারক উনার
আনজাম দেয়ার জন্য খরচ করতেন। তাই সেই সময় উনার নিকট অত্যান্ত প্রয়োজনীয় হিসেবে ১টি
ঘোড়া ও ১টি বর্ম ছিলো। সেটাই তখন সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস
সালাম তিনি বললেন, আমার নিকট একটি ঘোড়া ও একটি বর্ম রয়েছে।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন,
ঘোড়াটি আপনার প্রয়োজন রয়েছে। আপনি বর্মটি বিক্রি করে এর হাদিয়া আমার
নিকট নিয়ে আসুন। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি
বর্মটি বিক্রি করার জন্য সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাঈন আলাইহিস সালাম উনার নিকট
নিয়ে যান। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাঈন আলাইহিস সালাম তিনি বর্মটি নিয়ে এর
হাদিয়াস্বরূপ সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার
সম্মানিত হাত মুবারক-এ ৫০০ দিরহাম দেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত যুন
নূরাঈন আলাইহিস সালাম তিনি নিজ হাত মুবারক-এ উক্ত বর্মটি সাইয়্যিদুনা হযরত
কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার শির (মাথা) মুবারক-এ পরিয়ে দিয়ে বললেন,
এই বর্ম মুবারক একমাত্র ‘আসাদুল্লাহ তথা শে’রে খোদা’ উনার মাথা
মুবারকেই শোভা পায়। সুবহানাল্লাহ! এটা বলে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাঈন আলাইহিস
সালাম তিনি উক্ত বর্মটিও সাইয়্যিদুনা হযরত কাররমাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম
উনাকে হাদিয়া মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ
আলাইহিস সালাম তিনি ৫০০ দিরহাম নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ পেশ করেন। আর
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাঈন আলাইহিস সালাম তিনি যে বর্মটির বিনিময়ে ৫০০ দিরহাম
দেয়ার সাথে সাথে বর্মটিও উনাকে হাদিয়া মুবারক করেন সে বিষয়টি সাইয়্যিদুনা হযরত
কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক-এ পেশ করেন। বিষয়টি শুনে নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অত্যন্ত খুশি
হন এবং সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাঈন আলাইহিস সালাম উনার জন্য অনেক দু‘য়া মুবারক
করেন। সুবহানাল্লাহ!
তারপর নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উক্ত অর্থ
থেকে কয়েকটি মুদ্রা হযরত বেলাল রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার হাত মুবারক-এ দিয়ে
আতর ও খুশবু কিনে আনতে বললেন। অবশিষ্ট মুদ্রাগুলো উম্মু সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু
তা‘য়ালা আনহা উনার হাত মুবারক দিয়ে উনাকে বললেন সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ উনার
সাজসজ্জা, সংসারের কিছু প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে আনতে।
‘মাদারেজুন
নুবুওওয়াহ শরীফ’ উনার বর্ণনা অনুযায়ী হযরত উম্মু সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা
আনহা তিনি দুটি চাদর, কাতানের দুটি নেহালী, চার বিঘত কাপড়, পরিধেয় বস্ত্র, রৌপ্যের দুটি বাযুবন্দ, গদী, বালিশ,
একটি পেয়ালা, একটি চৌকি, একটি মশক এবং কিছু পানপাত্র ক্রয় করেন। অতঃপর সেগুলো এনে স্তরে স্তরে
সাজিয়ে রাখেন। সুবহানাল্লাহ! কেনাকাটা করার পর অবশিষ্ট যেই মুদ্রা থাকে, সেগুলো আযীমুশ শান সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হওয়ার পর
সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুর রবি‘য়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে সম্মানিত হাদিয়া
মুবারক করা হয়। সুবহানাল্লাহ!
0 Comments:
Post a Comment