সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস
সালাম তিনি যখন সম্মানিত মদীনা শরীফ সম্মানিত হিজরত মুবারক করেন, তখন দুনিয়াবী দৃষ্টিতে উনার সম্মানিত বয়স মুবারক প্রায় ১৮ বছর।
পবিত্র মক্কা শরীফ অবস্থান মুবারক করা অবস্থাতেই তিনি হযরত মহিলা ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তা‘য়ালা আনহুন্না উনাদেরকে সম্মানিত তা’লীম-তালক্বীন মুবারক দিয়ে আসছিলেন। অতঃপর তিনি
যখন সম্মানিত মদীনা শরীফ সম্মানিত তাশরীফ মুবারক রাখেন, তখন আরো
ব্যাপকভাবে সমস্ত মহিলা ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুন্না উনাদেরকে সম্মানিত
তা’লীম-তালক্বীন মুবারক দিতে থাকেন। উনার সম্মানিত তা’লীম-তালক্বীন মুবারক ও সম্মানিত
ছোহবত মুবারক উনাদের মাধ্যমে হযরত মহিলা ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুন্নাগণ
বেমেছাল নি‘য়ামত মুবারক লাভে ধন্য হন। সুবহানাল্লাহ!
বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি সম্মানিত মক্কা শরীফ
বিজয় ও হুনাইন বিজয় প্রত্যেকটিই অবলোকন করেন। একে একে কাফিররা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। উনার
সামনে উনার মহাসম্মানিত আব্বাজান নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনীত সম্মানিত দ্বীন ইসলাম পৃথিবীর বুকে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।
যেই কুরাইশরা উনার মহাসম্মানিত আব্বাজান নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চরম বিরোধিতা করতো। উনারা এখন ছাহাবী হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি উনার মহাসম্মানিত আব্বাজান
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এই চূড়ান্ত
বিজয়ী শান মুবারক দেখে বেমেছাল খুশি মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত
বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ:
সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, বিনতু
রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস
সালাম তিনি মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পূর্বে কিছু দিন সম্মানিত
মারিদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করেন। অতঃপর এই সম্মানিত মারিদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করা
অবস্থায় তিনি ৯ম হিজরী সনের ৬ রমাদ্বান শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ বা’দ ফজর মহাসম্মানিত
বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি ২৬ বছর ৩ মাস ২৫ দিন দুনিয়ার
যমীনে সম্মানিত অবস্থান মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত দিক-নির্দেশনা মুবারক অনুযায়ী সাইয়্যিদাতুনা হযরত
আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত গোসল মুবারক ও সম্মানিত কাফন মুবারক
সম্পন করা হয়। সুবহানাল্লাহ! ‘আবূ দাঊদ শরীফ’ উনার মধ্যে এসেছে,
اَنَّ حَضْرَتْ لَيْلـٰى بِنْتَ قَانِفِۣ الثَّقَفِيَّةَ رَضِىَ
اللهُ تَعَالـٰى عَنْهَا قَالَتْ كُنْتُ فِـيْمَنْ غَسَّلَ حَضْرَتْ اُمَّ
كُلْثُوْمٍ عَلَيْهَا السَّلَامُ بِنْتَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ عِنْدَ وَفَاتـِهَا فَكَانَ اَوَّلُ مَا اَعْطَانَا رَسُوْلُ اللهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْـحِقَاءَ ثُـمَّ
الـدِّرْعَ ثُـمَّ الْـخِمَارَ ثُـمَّ الْمِلْحَفَةَ ثُـمَّ اُدْرِجَتْ بَعْدُ
فِـى الثَّوْبِ الْاٰخَرِ قَالَتْ وَرَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ جَالِسٌ عِنْدَ الْبَابِ مَعَهٗ كَفَنُهَا يُنَاوِلُنَاهَا ثَوْبًا
ثَوْبًا.
অর্থ: “হযরত লায়লাহ বিনতে ক্বানিফ ছাকাফিয়্যাহ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বলেন, বিনতু রসূলিল্লাহ ছাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত
বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর যারা উনার সম্মানিত গোসল মুবারক করান,
আমি উনাদের মধ্যে ছিলাম। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রথমে আমাদেরকে ইযার মুবারক দিয়েছিলেন। অতঃপর ক্বমীছ বা কোর্তা
মুবারক, ওড়না বা সেরবন্দ মুবারক এবং লেফাফা বা চাদর মুবারক দিয়েছিলেন।
পরে উনাকে একটি কাপড় মুবারক বা ছিনাবন্দ মুবারক দ্বারা জড়ানো হয়েছিলো। যখন সাইয়্যিদাতুনা
হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনাকে গোসল মুবারক করানো হচ্ছিলো, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
সম্মানিত দরজা মুবারক-এ সম্মানিত কাফন মুবারক উনার কাপড় মুবারকসহ বসা ছিলেন এবং একটি
একটি করে সম্মানিত কাপড় মুবারক সরবরাহ করে যাচ্ছিলেন।” সুবহানাল্লাহ! (আবূ দাঊদ শরীফ,
মুসনাদে আহমদ, আল আহাদ ওয়াল মাছানী, আস সুনানুল কুবরা লিলবাইহাক্বী, মা’রিফাতুস সুনান ওয়াল
আছার ইত্যাদি)
স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়্যীন,
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি সম্মানিত ইমামতী মুবারক করে সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম
উনার সম্মানিত জানাযা উনার নামায মুবারক পড়ান। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নির্দেশ মুবারক অনুযায়ী সাইয়্যিদাতুনা
হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনাকে সম্মানিত রওযা শরীফ উনার মধ্যে রাখা হয়।
সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস
সালাম তিনি যখন মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন, তখন উনার সম্মানিত মুহব্বত মুবারক-এ, উনার
সম্মানিত জুদায়ী মুবারক উনার কারণে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিত নূরুল মুনাওওয়ার বা দু’চোখ মুবারক দিয়ে অজস্র
ধারায় সম্মানিত নূরুল মুহব্বত মুবারক প্রবাহিত করেন। এই সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ
উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ
شَهِدْنَا بِنْتَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَرَسُوْلُ
اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسٌ عَلَى القَبْرِ فَرَاَيْتُ
عَيْنَيْهِ تَدْمَعَانِ.
অর্থ: “হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত
আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনাকে যখন সম্মানিত রওযা শরীফ উনার মধ্যে রাখা হয়,
তখন আমরা উপস্থিত ছিলাম। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত
রওযা শরীফ উনার নিকট বসা ছিলেন। আর আমি দেখেছি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত দু’চোখ মুবারক দিয়ে অজস্র ধারায় সম্মানিত
নূরুল মুহব্বত মুবারক প্রবাহিত হচ্ছেন।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ)
উল্লেখ্য যে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার কোনো
আওলাদ ছিলেন না। সুবহানাল্লাহ!
ঐতিহাসিক সম্মানিত উহুদ জিহাদ:
সম্মানিত উহুদ জিহাদ মুসলমানদের জন্যে
এক ঐতিহাসিক জিহাদ মুবারক। যে সম্মানিত জিহাদ ৩য় হিজরী সনের পবিত্র শাওওয়াল মাসে অনুষ্ঠিত
হয়। এই সম্মানিত জিহাদে স্বয়ং আখিরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাশরীফ মুবারক
গ্রহণ করেন। সুবহানাল্লাহ! এই সম্মানিত জিহাদে মুসলমান তথা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনাদের সৈন্য সংখ্যা ছিলেন ৭০০ জন। বিপরীতে কাফির মুশরিকদের সংখ্যা ছিলো
৩০০০। পবিত্র মক্কা শরীফ উনার কুরাইশ কাফির মুশরিকরা হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার নেতৃত্বে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার পাঁচ কিলোমিটার উত্তরে সম্মানিত
উহুদ পাহাড়ের পাদদেশে ঘাঁটি সন্নিবেশ করে। এই জিহাদে মুসলমানগণ বিজয় লাভ করেন। অপরদিকে
কাফির মুশরিকরা জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করে পবিত্র মক্কা শরীফে গিয়ে পৌঁছে। আর নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের নিয়ে সম্মানিত জিহাদ মুবারক শেষে আরও তিনদিন
সম্মানিত উহুদ প্রান্তরে অবস্থান মুবারক করেন। অতঃপর তিনদিন পর পবিত্র মদীনা শরীফে
প্রত্যাবর্তন করেন। সুবহানাল্লাহ! উক্ত সম্মানিত জিহাদ ছিলো সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার
অন্যতম ঐতিহাসিক জিহাদ মুবারক। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত উহুদ উনার পরিচয়:
পবিত্র মদীনা শরীফ উনার সুপরিচিত উহুদ পাহাড়ের নামে সম্মানিত উহুদ জিহাদের নামকরণ
করা হয়। পাহাড়টি অন্য পাহাড়ের সাথে যুক্ত না থেকে একক হওয়ায় এর নাম উহুদ হয়েছে। এই
পাহাড়ের পর ত্বায়েফের পাহাড় শুরু হয়েছে। এই সম্মানিত পাহাড়ের কতগুলো চূড়া রয়েছে। এর
সরাসরি দক্ষিণে ছোট পাহাড়টির নাম আয়নায়েন। যা পরবর্তীতে জাবালুর রুমাত বা তীরন্দাযদের
পাহাড় বলে পরিচিত হয়। এ দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী বৃহৎ উপত্যকার নাম ওয়াদে কুনাত। যেখানে
সম্মানিত উহুদ জিহাদ সংঘটিত হয়।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক
হয়েছে,
قَالَ النَّبِي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُحُدٌ جَبَلٌ
يُحِبُّنَا وَنُحِبُّهُ.
অর্থ: “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, উহুদ এমন এক পাহাড়
যেই সম্মানিত পাহাড়টি আমাদেরকে মুহব্বত করে এবং আমরাও উনাকে মুহব্বত করি।” সুবহানাল্লাহ!
(বুখারী শরীফ: পবিত্র হাদীছ শরীফ নং-১৪৮২, মুসলিম শরীফ: পবিত্র
হাদীছ শরীফ নং- ৩৪৭০)
কোন কোন ঐতিহাসিক উনারা অত্র পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার অর্থ করেছেন এভাবে, “আমরা সম্মানিত উহুদ পাহাড়ের আশে-পাশের অধিবাসী উনাদেরকে মুহব্বত
করি আর উনারাও আমাদেরকে মুহব্বত করেন।” সুবহানাল্লাহ!
আরো উল্লেখ রয়েছে, সফর থেকে ফেরার পথে সম্মানিত উহুদ পাহাড় দৃষ্টিগোচর হলে বুঝা যায় যে, বাড়ীর কাছে এসে পেীঁছেছে। সম্মানিত উহুদ পাহাড় যেন সম্মানিত মুসলমান মুসাফির
উনাদেরকে উনাদের বাড়ী-ঘরের নিকটবর্তী পেীঁছার সুসংবাদ দেন যেমন প্রিয়জন তার প্রিয়জনকে
সুসংবাদ প্রদান করে।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
قَالَ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ أُحُدٌ
يُحِبّنَا وَنُحِبّهُ وَهُوَ عَلَى بَابِ الْجَنّةِ.
অর্থ: “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন,
নুরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সম্মানিত উহুদ পাহাড়
আমাদেরকে মুহব্বত করেন। আর আমরাও উনাকে মুহব্বত করি। সেটি জান্নাতের দরজায় অবস্থিত।”
সুবহানাল্লাহ! (উমদাতুল ক্বরী, রওদ্বূল উনূফ, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
পবিত্র মক্কা শরীফের কাফির মুশরিকদের সংঘবদ্ধ ও যুদ্ধের প্রস্তুতি:
সম্মানিত বদর জিহাদে যখন কুরাইশ কাফির মুশরিকরা চরম ভাবে লাঞ্চিত ও পরাজিত হলো
এবং তাদের পরাজিত দল পবিত্র মক্কা শরীফে ফিরে এলো, আর এদিকে হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি (তখনও
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেননি) ও উনার বানিজ্যিক কাফিলা নিয়ে পবিত্র মক্কা শরীফে
এলেন, তখন আব্দুল্লাহ ইবনে রবীয়া, হযরত
ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (তিনি তখনও উনার ঈমান প্রকাশ করেননি), সাফওয়ান ইবনে উমাইয়া প্রমূখ কুরাইশ কাফির মুশরিকদের আরও কিছু ব্যক্তি যাদের
পিতা-পুত্র কিংবা ভাই সম্মানিত বদর জিহাদে নিহত হয়েছিল। তারা হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনাকে ও কুরাইশ কাফির মুশরিকদের মধ্যে সেই কাফিলায় যাদের বাণিজ্যিক পণ্য
ছিল, তাদেরকে লক্ষ্য করে বলল; হে কুরাইশ
কাফির মুশরিক সম্প্রদায়রা! যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাসম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তোমাদের
শিকড় উৎপাটন করে দিয়েছেন। তোমাদের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদেরকে হত্যা করেছেন। সুতরাং
তোমরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে
যুদ্ধ করার জন্য ধন-সম্পদ দ্বারা আমাদের সাহায্য কর, যাতে আমরা
উনাদের থেকে আমাদের মধ্যে যারা নিহত হয়েছে, তাদের প্রতিশোধ নিতে
পারি। তখন তাদের কথা মত কুরাইশ কাফির মুশরিকরা তাই করলো। সেই বানিজ্যক কাফিলায় যত ধন-সম্পদ,
অস্ত্র ছিলো সবগুলো সম্মানিত উহুদ যুদ্ধে তথা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে ব্যায় হবে বলে সবাই ওয়াদাবদ্ধ
হলো। নাউযূবিল্লাহ!
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি
তিনি বলেন, কতক আলিম আমার কাছে
বর্ণনা করেছেন যে, তাদের সম্পর্কেই নিম্নোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ
নাযিল হয়।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ لِيَصُدُّوا
عَن سَبِيلِ اللَّـهِ ۚ فَسَيُنفِقُونَهَا ثُمَّ تَكُونُ عَلَيْهِمْ حَسْرَةً
ثُمَّ يُغْلَبُونَ ۗ وَالَّذِينَ كَفَرُوا إِلَىٰ جَهَنَّمَ يُحْشَرُونَ.
অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার পথ
থেকে লোকদেরকে নিবৃত্ত করার জন্য কাফিররা তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তারা তাদের ধন-স¤পদ ব্যয় করতেই থাকবে; এরপর তা তাদের মনকষ্টের
কারণ হবে, তারপর তারা পরাভূত হবে এবং যারা কুফরী করে তাদেরকে
জাহান্নামে একত্র করা হবে।” (পবিত্র সূরা আনফাল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ- ৩৬)
দেখা গেল কুরাইশ কাফির মুশরিকরা সকলে মিলে
এবং বানিজ্যিক কাফিলার উসকানিতে গোটা কুরাইশ সম্প্রদায় ও তাদের মিত্ররা নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে কেবল ঐক্যবদ্ধই
হলো না বরং কিনানার গোত্রগুলো এবং তিহামার লোকেরা, যারা তাদের অনুগত ছিল, তারাও তাদের সহযোগিতার
জন্য তৈরী হল। নাউযূবিল্লাহ!
আবূ উয্যা আমর ইবনে আব্দুল্লাহ জুমাহী
নামে এক ব্যক্তি ছিল, সম্মানিত বদর জিহদের
সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যার
উপর দয়া-ইহসান মুবারক করেছিলেন। তার অনেক সন্তান সন্ততি ছিল এবং সে অভাবী ছিলো। সে
সম্মানিত বদর জিহাদে বন্দী হয়েছিল। সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে আর্জি পেশ করলো, আপনিতো জানেন,
আমার অনেক সন্তান-সন্ততি এবং আমি একজন অভাবী মানুষ। আপনি আমার উপর দয়া-ইহসান
মুবারক করুন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি তার উপর দয়া পরবশ হয়ে তাকে ছেড়ে দেন।
এরপর সম্মানিত উহুদ যুদ্ধের সময় সাফওয়ান
ইবনে উমাইয়া আবূ উয্যা আমর ইবনে আব্দুল্লাহ জুমাহীকে বলল, হে আবূ উয্যা! তুমিতো কবি। তুমি তোমার কবিতা ও বাকশক্তি দিয়ে আমাদের
সাহায্য কর এবং আমাদের সাথে যুদ্ধে চলো। সে জবাব দিলো সম্মানিত বদর জিহাদে স্বয়ং নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার উপর বেমেছাল
দয়া-ইহসান মুবারক করে আমাকে ছেড়ে দিয়েছেন। তাই আমি উনার বিরুদ্ধে কোন কিছু করতে প্রস্তুত
নই।
তখন সাফওয়ান বলল, আচ্ছা, সে কথা থাক। তুমিতো নিজের জীবন দিয়ে
আমাদের সাহায্য করতে পার। আমি অঙ্গীকার করছি, যদি তুমি যুদ্ধ
থেকে নিরাপদে ফিরে আসতে পার, তবে আমি তোমাকে প্রচুর সম্পদ দিয়ে
ধনী করে দিব। আর যদি তুমি যুদ্ধে মারা যাও, তবে আমি এ দায়িত্ব
নিচ্ছি যে, তোমার মেয়েরা আমার মেয়েদের সাথে জীবন যাপন করবে এবং
সুখে-দু:খে তারা আমার মেয়েদের মতই থাকবে।
আবূ উয্যা এতে সম্মত হয়ে গেল এবং তিহামার
উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেল। সেখানে পৌঁছে সে বানূ কিনানাকে যুদ্ধের জন্য আহবান জানিয়ে এই
কবিতা বলল,
إيهًا بَنِي عَبْدِ مَنَاةَ الرّزّام ... أَنْتُمْ حُمَاةٌ
وَأَبُوكُمْ حَامْ
لَا تَعِدُونِي نَصْرَكُمْ بَعْدَ الْعَامِ ... لَا تُسَلّمُونِي
لَا يَحِلّ إسْلَامْ
অর্থ: “হে অবিচল যোদ্ধা বানূ আব্দে মানাফ!
তোমরা হলে গোত্র মর্যাদা সংরক্ষণকারী, যেমন ছিল তোমাদের পিতৃপুরুষেরা
গোত্র মর্যাদা রক্ষাকারী (সুতরাং এ কঠিন পরিস্থিতিতে তোমরা আমাদের সাহায্য কর)।
এ বছরের পর আর আমাদের সাহায্য করার প্রতিশ্রুতির
কোন প্রয়োজন নেই। আমাদের শত্রুর হাতে ছেড়ে দিও না; কেননা, এরূপ করা আদৌ উচিত নয়।” (সীরাতুন
নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, মাগাযী আল ওয়াক্বিদী রহমতুল্লাহি আলাইহি, আল বিদায়া ওয়ান
নিহায়া)
মুসাফি’ ইবনে আবদ মানাফ ইবনে ওয়াহাব ইবনে
হুযাফা ইবনে জুমাহ সে বানূ মালিক ইবনে কিনানার কাছে পৌঁছে তাদেরকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার প্রতি প্ররোচিত
করে এই কবিতা আবৃত্তি করলেন,
يَا مَالِ مَالِ الْحَسَبِ الْمُقَدّمِ ... أَنْشُدُ ذَا
الْقُرْبَى وَذَا التّذَمّمِ
مِنْ كَانَ ذَا رُحْمٍ وَمَنْ لَمْ يَرْحَمْ ... الْحِلْفَ وَسْطَ
الْبَلَدِ الْمُحَرّمِ
عِنْدَ حَطِيمِ الْكَعْبَةِ الْمُعَظّمِ
অর্থ: “আমি এখন সেই আত্মীয়-স্বজনকে, প্রতিশ্রুতি ও নিরাপত্তাদানকারীদের তালাশ করে বেড়াচ্ছি?
তোমরা বল তো, দয়ালু রহম দিলের অধিকারী কারা ছিলো? সম্মানিত
শহরের মাঝে, পবিত্র কা’বা শরীফ উনার ঘরের হাতীমের পাশে,
কে মিত্রদের প্রতি অনুগ্রহ করেনি? (অর্থাৎ তোমরাই
এরূপ করেছিলে, এখন তোমাদের কি হলো?)।”
(সীরাতুন নববী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি,
আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, তারিখে উমাম ওয়াল মুলূক,
রওদ্বুল উনূফ)
এরপর জুবাইর ইবনে মুতঈমের হযরত ওয়াহশী
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নামে একজন হাবশী পরাধীন ছিলেন (তখনও তিনি সম্মানিত
দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেননি)। হাবশীদের মধ্যে তিনি বর্শা নিক্ষেপে পারদর্শী ছিলেন। উনার
লক্ষ খুব কমই ভ্রষ্ট হতো। জুবাইর সে তার পরাধীনকে বলল, আপনি সকলের সাথে যুদ্ধে চলুন। যদি আপনি আমার চাচা তু’মা ইবনে
‘আদীর হত্যার প্রতিশোধে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত চাচাজান সাইয়্যিদুশ শুহাদা’ সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা আলাইহিস
সালাম উনাকে শহীদ করতে পারেন তবে আপনি আমার পক্ষ হতে পরাধীন থেকে স্বাধীন হয়ে যাবেন।
নাউযূবিল্লাহ!
কুরাইশ কাফির মুশরিকরা তাদের অনুসারী ও
তাদের সাথে যোগদানকারী বানূ কিনানা ও তিহামার লোকদের নিয়ে অস্ত্রসহ পূর্ণ সাজ-সজ্জায়
যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে রণাঙ্গনের দিকে বেরিয়ে পড়ল। আর কেউ যাতে পলায়ন না করে, সেই সাথে নিজেদের মধ্যে যেন আত্মমর্যাদাবোধ সৃষ্টি হয়,
সে জন্য তারা নিজেদের সাথে মহিলাদেরকে হাওদায় বসিয়ে নিয়ে নিল।
কুরাইশ কাফির মুশরিকদের সেনাপতি হযরত আবূ
সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিও হযরত হিন্দা বিনতে উতবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু উনাকে সাথে নিলেন। (হযরত হিন্দা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি পরবর্তীতে সম্মানিত
দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন।) অনুরূপ ভাবে হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, উম্মু হাকীম বিনতে হারিছ ইবনে হিশাম ইবনে মুগীরাকে সাথে নেন।
(হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিও পরবর্তীতে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ
করেন)। হারিছ ইবনে হিশাম ইবনে মুগীরা সে ফাতিমা বিনতে উয়ালীদ ইবনে মুগীরাকে ও সাফওয়ান
ইবনে উমাইয়া সে বুরযা বিনতে মাসউদ ইবনে উমর ইবনে উমায়ের সাকাফীকে সাথে নিয়ে নিল। বুরযা
ছিল আব্দুল্লাহ ইবনে সাফওয়ান ইবনে উমাইয়ার মা।
হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি
বলেন, মতান্তরে তার নাম রুকাইয়া।
ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি
বলেন, আর আমর ইবনে আস সে বারীত্বাহ বিনতে মুনাব্বিহ
ইবনে হাজ্জাজকে। বারীত্বাহ ছিল আব্দুল্লাহ ইবনে আমরের মা। অনুরূপভাবে ত্বালহা ইবনে
আবূ ত্বালহা সে সুলাফাহ বিনতে সা’দ ইবনে শুহাইদ আল আনসারীকে সাথে নিল।
এছাড়া কুরাইশ কাফির মুশরিকদের থেকে আবূ
ত্বলহা হল আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল উয্যা ইবনে উছমান ইবনে আব্দুদদার
এর কুনিয়াত আর সুলাফা হল ত্বলহার ছেলে মুসাফি’, জুল্লাস ও কিলাবের মা। তাদের পিতাসহ তারা সকলে উহুদ যুদ্ধে নিহত
হয়। বানূ মালিক ইবনে হিসল গোত্রের খুন্নাস বিনতে মালিক ইবনে মাযরাব নামক জনৈক মহিলা
তার ছেলে আবূ আযীয ইবনে উমায়েরসহ যুদ্ধে বেরিয়েছিল। সে হযরত মাসয়াব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার মা ছিল। অনুরূপভাবে আমরাহ বিনতে আলক্বামাহ এ অভিযানে অংশগ্রহণ করে।
সে ছিল বানূ হারিছ ইবনে আব্দে মানাত ইবনে কিনানার একজন মহিলা।
হযরত হিন্দ বিনতে উতবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহা (পরবর্তীতে তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন) তিনি যখনই হযরত ওয়াহশী রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার কাছ দিয়ে অতিক্রম করতেন, কিংবা হযরত ওয়াহশী রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু তিনি যখন উনার পাশে আসতেন, তখন হযরত হিন্দ রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহা উনাকে বলতেন, হে আবূ দাসমা! আমার কলিজা শীতল করুন।
আবূ দাসমা ছিল হযরত ওয়াহশী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কুনিয়াত। অতঃপর তারা যুদ্ধের
জন্য রওয়ানা হয়ে সেখানে পৌঁছে আয়নায়ন পর্বতে আস্তানা গাড়ল, যা
পবিত্র মদীনা শরীফ উনার বিপরীত দিকে কানাত উপত্যকার পাশে বাতনে সাবখার নি¤œভূমিতে অবস্থিত ছিল।
মোট কথা, পবিত্র মক্কা শরীফের কাফির মুশরিকরা যখন যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ
করল এবং স্বীয় আহলিয়াদেরও সঙ্গে নিল যাতে তারা ছড়া ও কবিতা আবৃত্তি করে যোদ্ধাদের মনোবল
বৃদ্ধি করতে পারে এবং পলাতকদের ধিক্কার দিতে পারে। যেন অধিকন্তু যোদ্ধারা নারীদের কাছে
অপদস্ত হওয়ার ভয়ে সর্বান্তকরণে প্রাণপণ যুদ্ধ করে পিছনে বসে থাকার চিন্তাও না করে।
পবিত্র মক্কা শরীফের কুরাইশ কাফির মুশরিকরা বিভিন্ন গোত্রের প্রতি দূতও প্রেরণ করে
যাতে তারা এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে তাদের শক্তি বৃদ্ধি করে। এভাবে তারা ৩০০০ সৈন্য জমা
করতে সক্ষম হয়। নাউযূবিল্লাহ! যাদের মধ্যে ৭০০ শত ছিলো বর্ম পরিহিত। অধিকন্তু দু’শত
ঘোড়া, তিনহাজার উট, পনেরজন আহলিয়া তথা নারী
সহযাত্রী ছিলো। এই ৩০০০ সুসজ্জিত যোদ্ধা হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
উনার নেতৃত্বে খুবই জাকজমকের সাথে তৃতীয় হিজরী সনের ৫ ই শাওওয়াল শরীফ পবিত্র মক্কা
শরীফ থেকে যাত্রা করে। (সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি
আলাইহি, তাবাকাতে ইবনে সা’দ, যারকানী,
তারীখে তাবারী, সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম, আল বিদায়া
সাইয়্যিদুনা হযরত খতিমুল মুহাজিরীন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস
আলাইহিস সালাম উনার কর্তৃক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনাকে কুরাইশ কাফির মুশরিকদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবহিতকরণ:
যখন পবিত্র মক্কা শরীফের কাফির মুশরিকরা
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে
ষড়যন্ত্র এবং যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করলো তখন খ¦তিমুল মুহাজিরীন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম তিনি কাল বিলম্ব না করে
দ্রুত একটি পত্র লিখে একজন দূতের মাধ্যমে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে প্রেরণ করেন। খ¦তিমুল মুহাজিরীন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম তিনি তখনও পবিত্র মক্কা
শরীফে অবস্থান মুবারক করছিলেন। তিনি দুতকে নির্দেশ দিলেন যেভাবেই হোক খুব দ্রুত তিন
দিনের মধ্যে এই পত্র পবিত্র মদীনা শরীফে পৌঁছানোর জন্য। খ¦তিমুল মুহাজিরীন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম তিনি সেই পত্রে কাফির মুশরিকদের
সৈন্য সংখ্যা, তাদের অস্ত্র-শস্ত্র
এবং রষদসম্ভারের পূর্ণ বিবরণ উল্লেখ্য করেন। (যারকানী, মাদারেজুন
নুবুওওয়াহ, সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
এ খবর পাওয়া মাত্রই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
ও হযরত মুনিস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদেরকে কাফির মুশরিকদের বর্তমান অবস্থা ও
অবস্থান জানার জন্য পাঠালেন। তারা এসে জানালেন যে, কুরাইশ কাফির মুশরিকদের সৈন্যদল পবিত্র মদীনা শরীফ উনার কাছাকাছি
চলে এসেছে। এরপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি কাফির মুশরিকদের কতজন সৈন্য রয়েছে তা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুম উনাদেরকে জানানোর জন্য হযরত হুবাব ইবনে মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে
পাঠালেন। হযরত হুবাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কুরাইশ কাফির মুশরিকদের সৈন্যসংখ্যা,
তাদের উট ও ঘোড়ার পরিমান ও যুদ্ধাস্ত্র ইত্যাদি সম্পর্কে পূর্ণ তথ্যাদি
এসে পেশ করলেন। এ সংবাদ শুনে হযরত সা’দ ইবনে মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু,
হযরত উসাইদ ইবনে হুযাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত সা’দ ইবনে
উবাদাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা রাতভর পবিত্র হুজরা শরীফ তথা পবিত্র মসজিদে
নববী শরীফ পাহারা দিলেন, পবিত্র মদীনা শরীফ উনার চারিদিকে পাহারার
ব্যবস্থা করা হলো। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!
সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (তাবাকাতে ইবনে সা’দ, সীরাতে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
সম্মানিত ওহী মুবারক অবতীর্ণ ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনাদের সাথে পরামর্শ:
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وَمَا يَنطِقُ عَنِ الْهَوَىٰ. إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَىٰ.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজ থেকে কোন কথা মুবারক বলেন না বা কোন কাজ
মুবারক করেন না, যে পর্যন্ত উনার প্রতি
সম্মানিত ওহী মুবারক প্রেরন করা হয়।” (পবিত্র সূরা নজম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩-৪)
অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রত্যেকটি কথা কাজ ও মৌন স্বীকৃতি মুবারকই
হচ্ছে সম্মানিত ওহী মুবারক উনার অন্তর্ভূক্ত। সুবহানাল্লাহ! তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার
পক্ষ থেকে সম্মানিত ওহী মুবারক ছাড়া কোন কথা-বার্তা, কাজ-কর্ম, আদেশ-নিষেধ ইত্যাদি করেন না। অর্থাৎ
তিনি সম্মানিত ওহী মুবারক দ্বারা নিয়ন্ত্রীত। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহ
আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি
তিনি বর্ণনা করেন,
قَالَ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ
وَلِلْمُسْلِمِينَ إنّي قَدْ رَأَيْت وَاَللّهِ خَيْرًا ، رَأَيْت بَقَرًا ،
وَرَأَيْت فِي ذُبَابِ سَيْفِي ثُلْمًا ، وَرَأَيْت أَنّي أَدْخَلْت يَدِي فِي
دِرْعٍ حَصِينَةٍ فَأَوّلْتهَا الْمَدِينَةَ.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মুসলমান তথা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনাদেরকে লক্ষ্য করে ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি খুবই উত্তম একখানা স্বপ্ন মুবারক
দেখেছি। তা হচ্ছে আমি একটি গাভী দেখলাম, আরও দেখলাম আমার তরবারির মাথায় দয়ালুতা রয়েছে,
আরোও দেখলাম আমার নূরুল মাগফিরাহ বা সম্মানিত হাত মুবারক একটি মজবুত
লৌহবর্মে ঢুকিয়ে দিয়েছি। নিশ্চয়ই এর দ্বারা পবিত্র মদীনা শরীফ উনার দিকে ইঙ্গিত করা
হয়েছে।” সুবহানাল্লাহ! (ফতুহুল বারী, উমদাতুল ক্বরী, তোহফাতুল আহওয়াযী, আর রহীক্বুল মাখতূম, আস সীরাতুন নুবুওওয়াহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি
আলাইহি)
প্রসিদ্ধ তারিখ ও সীরত গ্রন্থে উল্লেখ
রয়েছে,
حَدّثَنِي بَعْضُ أَهْلِ الْعِلْمِ أَنّ رَسُولَ اللّهِ صَلّى
اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ قَالَ رَأَيْت بَقَرًا لِي تُذْبَحُ ، قَالَ فَأَمّا
الْبَقَرُ فَهِيَ نَاسٌ مِنْ أَصْحَابِي يُقْتَلُونَ وَأَمّا الثّلْمُ الّذِي
رَأَيْت فِي ذُبَابِ سَيْفِي ، فَهُوَ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ بَيْتِي يُقْتَلُ.
অর্থ: “(হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি
তিনি বলেন,) আমার কাছে বর্ণনা করেছেন,
কতক আলিম ব্যক্তিগণ। উনারা একথা শুনিয়েছেন যে, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি দেখলাম, আমার
কিছু গাভী যবাই করা হচ্ছে। তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, গাভী দ্বারা
উদ্দেশ্য আমার কিছু হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা শাহাদতী শান মুবারক
প্রকাশ করবেন। আর তরবারি করাতের দাঁত দ্বারা উদ্দেশ্য আমার বংশ মুবারকের এক ব্যক্তি
তিনি শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করবেন।” অর্থাৎ সেই ব্যক্তি হচ্ছে, সাইয়্যিদুশ শুহাদা সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
(সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি)
স্মরণীয় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি পবিত্র মক্কার কাফির মুশরিকদের আগমনের সংবাদ শুনে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনাদেরকে আহ্বান করলেন পরামর্শ করার জন্য। কারণ পরামর্শ করা হচ্ছে,
মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক উনার অন্তর্ভূক্ত। সুবহানাল্লাহ!
সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা হযরত মামদূহ মুর্শিদ
ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ
অর্থ: “(হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) আপনি কাজে কর্মে পরামর্শ গ্রহণ করুন।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আলে ইমরান
শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ- ১৮৯)
অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সমস্ত কাজে কর্মে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুম উনাদের সাথে পরামর্শ মুবারক করতেন। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ তিনি উম্মতকে প্রতিটি
কাজে কর্মে পরামর্শ মুবারক করার তা’লীম দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা হযরত মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি
তিনি বর্ণনা করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
فَإِنْ رَأَيْتُمْ أَنْ تُقِيمُوا بِالْمَدِينَةِ وَتَدْعُوهُمْ
حَيْثُ نَزَلُوا، فَإِنْ أَقَامُوا أَقَامُوا بِشَرّ مَقَامٍ وَإِنْ هُمْ دَخَلُوا
عَلَيْنَا قَاتَلْنَاهُمْ فِيهَا.
অর্থ: “যদি আপনারা মনে করেন যে, আপনারা পবিত্র মদীনা শরীফে অবস্থান মুবারক করবেন, আর কুরাইশ কাফির মুশরিকরা যেখানে ছাউনি গেড়েছে তারা সেখানেই থাকবে। তবে তারা
যদি সেখানে অবস্থান করে তাহলে তাদের জন্য সেটা খুবই নিকৃষ্টতম অবস্থান হবে। আর যদি
তারা পবিত্র মদীনা শরীফে প্রবেশ করে আমাদের উপর আক্রমণ করে তবে আমরা সকলে মিলে তাদের
বিরুদ্ধে জিহাদ করবো। অর্থাৎ তাদেরকে পরাজিত করবো।” (দালায়িলুন নবুওওয়াহ, আস সীরাতুন নুবুওওয়াহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি
আলাইহি, আল ক্বওলুল মুবীন ফি সীরাতে সাইয়্যিদুল মুরসালীন ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
অর্থাৎ শুরুতে মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত
ওহী মুবারক উনার মাধ্যমে এই নির্দেশ মুবারক দিয়েছিলেন যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেন পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে থেকেই
সম্মানিত জিহাদ মুবারক পরিচালনা করেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা হযরত মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
উল্লেখ্য যে, কাট্টা মুনাফিক সরদান উবাই বিন সুলূল সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলল, পবিত্র
মদীনা শরীফে থেকেই আমাদের জিহাদ করাই হবে উত্তম। এই কাট্টা মুনাফিক সরদার উবাই বিন
সুলূল সে জোরালোভাবে পবিত্র মদীনা শরীফে অবস্থান মুবারক করা ও পবিত্র মদীনা শরীফ উনার
বাইরে বেরিয়ে জিহাদ না করার প্রতি জোর দিতে থাকে। নাউযূবিল্লাহ!
কিন্তু পরবর্তীতে মহান আল্লাহ পাক তিনি
পবিত্র মদীনা শরীফ উনার বাইরে গিয়ে সম্মানিত জিহাদ মুবারক করার অনুমতি হাদিয়া করেন।
সুবহানাল্লাহ! এতে কাট্টা মুরতাদ মুনাফিক সরদার উবাই বিন সুলূল সে অসন্তুষ্ট ও সম্মানিত
জিহাদে না যাওয়ার বিষয়ে চূ-চেরা কিল কাল করতে থাকলো। নাউযূবিল্লাহ! মূলত সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
খতামুন নাবিয়্যীন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধীতা করাই ছিলো এই মুনাফিক সরদার উবাই
বিন সুলূলের খাছলত তথা স্বাভাব। নাউযূবিল্লাহ!
আর এই কাট্টা মুনাফিক সবসময় ভিতরে ভিতরে
সম্মানিত বদর জিহাদ উনার মতো এই সম্মানিত জিহাদের সময়ও পবিত্র মক্কা শরীফের কাফির মুশরিকদের
সাথে ও ইহুদী গোত্রগুলোর সাথেও যোগাযোগ ও গভীর যড়যন্ত্র করে যাচ্ছিল। তার উদ্দেশ্য
ছিলো, কি করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু উনাদেরকে বিপাকে ফেলা যায় এবং উনাদেরকে কষ্ট দেয়া যায়। নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ!
নাউযূবিল্লাহ! এবং সে এক পর্যায় সম্মানিত উহুদ জিহাদে না যাওয়ার জন্য বিভিন্নরকম আপত্তি
পেশ করতে থাকে। কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনিতো ওহী মুবারক ব্যাতীত নিজ থেকে কোন কথা মুবারক বলেন না ও কোন কাজ মুবারক
করেন না। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের
নিকট পরামর্শ চাইলেন তখন কিছু সংখ্যক হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম
উনাদের মধ্যে যারা সম্মানিত বদর জিহাদে অংশগ্রহণ করতে পারেননি আর যারা যুবক ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!
পবিত্র মদীনা শরীফ উনার বাইরে বেরিয়ে কাফির মুশরিকদের সাথে জিহাদ করার সুযোগ আমাদেরকে
দিন, যাতে তারা এ ধারণাও করতে পারে যে, আমাদের মধ্যে কোন প্রকার দূর্বলতা নেই। সুবহানাল্লাহ!
কিন্তু দেখা গেলো মুনাফিক সরদার উবাই বিন
সুলুল সেও লজ্জাহীন ভাবে বলে উঠল, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া
হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! পবিত্র মদীনা শরীফেই অবস্থান করুন,
তাদের অবস্থানের দিকে বের হবেন না। সে বলল, ইয়া
রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যখনই আমরা পবিত্র মদীনা
শরীফ থেকে কোন শত্রুকে লক্ষ্য করে বের হয়েছি, তখনই আমরা পরাভূত
হয়েছি। আর যখনই পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে তারা আমাদের উপর চড়াও হয়েছে, তখন তারা পরাস্ত হয়েছে। সুতরাং ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কুরাইশ কাফির মুশরিকদেরকে তাদের অবস্থায় ছেড়ে দিন। যদি তারা স্বস্থানেই
ছাউনি গেড়ে বসে থাকে তবে সে স্থান হবে তাদের জন্য নিকৃষ্ট জেলখানা। আর যদি তারা পবিত্র
মদীনা শরীফে প্রবেশ করে, তবে পুরুষেরা তাদের সাথে শক্ত মুকাবিলা
করবেন, আর মহিলা ও শিশুরা ছাদের উপর থেকে তাদের উপর প্রস্তর নিক্ষেপ
করবেন। আর যদি তারা ফিরে যায় তবে যেমন এসেছিল তেমনি বিফল হয়ে ফিরে যাবে।
যখন কাট্টা মুনাফিক উবাই বিন সুলূল সে
এভাবে ভিরুতার পরিচয় দিচ্ছিল এবং নিজের অন্তরে থাকা হিংসা বিদ্বেষ চাপিয়ে রেখে বাহ্যিক
ভাবে বকবক করছিল। কিন্তু হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা কাট্টা
মুনাফিক উবাই বিন সুলূলের নিফাক্বীপূর্ণ কথা বুঝতে পেরে সতর্ক হলেন। এই কাট্টা মুনাফিক
উবাই বিন সুলূল যা বলছিল তা সত্য নয় বরং তার অন্তরে মুনাফিকী সেই বিষয়টি পথিমধ্যে প্রকাশিত
হয়েছিল।
প্রসিদ্ধ তারিখ ও সীরত গ্রন্থসমূহে আরো
উল্লেখ রয়েছে, ‘হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্য থেকে কতক বয়স্ক ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু উনারা এবং হযরত যুবক ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পবিত্র
মদীনা শরীফ উনার বাইরে গিয়ে সম্মানিত জিহাদ মুবারক করার ব্যাপারে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে আর্জি পেশ করছিলেন। উনারা
বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম! আমরা বহুদিন ধরে এমন দিনের অপেক্ষায় রয়েছি এবং আমরা এমন দিনের আকাংখা করছি।
মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট এমন দিনের জন্য
দোয়াও করছি। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সম্মুখে সেই দিন এনে দিয়েছেন, আর সম্মানিত জিহাদের পথও বেশি নয়। সাইয়্যিদুশ শুহাদা সাইয়্যিদুনা
হযরত হামযা আলাইহিস সালাম, হযরত সা’দ ইবনে উবাদা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু ও হযরত নু’মান ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা উনারা বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা যদি
পবিত্র মদীনা শরীফে অবস্থান করে শত্রুর মোকাবিলা করি তাহলে শত্রুরা আমাদেরকে মহান আল্লাহ
পাক উনার রাস্তায় জিহাদ করার বিষয় ভীতু ও দুর্বল মনে করবে। এক পর্যায়ে সাইয়্যিদুশ শুহাদা
সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন,
وَاَلّذِي أَنْزَلَ عَلَيْك الْكِتَابَ لَا أَطْعَمُ الْيَوْمَ
طَعَامًا حَتّى أُجَالِدَهُمْ بِسَيْفِي خَارِجًا مِنْ الْمَدِينَةِ.
অর্থ: “আপনার প্রতি যিনি সম্মানিত কিতাব
নাযিল করেছেন উনার ক্বসম! যে পর্যন্ত পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বের হয়ে শত্রুদের সাথে
তরবারি দিয়ে মোকাবেলা না করবো ততক্ষন পর্যন্ত খাওয়া-দাওয়াও করব না। (মাগাযিউল ওয়াক্বিদী, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, যুরকানী,
সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ )
হযরত নু’মান ইবনে মালিক আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু তিনি বললেন,
يَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، لاَ
تَحْرِمْنِا الْجَنَّةَ، فَوَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ لأَدْخُلَنَّ
الْجَنَّةَ. فَقَالَ لَهُ: بِمَ؟ قَالَ بِأَنِّي أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ
اللَّهُ، وَأَنَّكَ رَسُولُ اللَّهِ، وَأَنِّي لاَ أَفِرُّ مِنَ الزَّحْفِ.
অর্থ: “ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাদের জন্য সম্মানিত জান্নাতকে হারাম করবেন না। যিনি
আপনাকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
খাতামুন নাবিইয়ীন, হায়াতুন নবী, শাহিদুন নবী, মুত্বালা’ আলাল গইব, মালিকুল জান্নাহ হিসেবে প্রেরণ করেছেন উনার ক্বসম! আমরা অবশ্যই জান্নাতে যাবো।
সুবহানাল্লাহ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি হযরত নু’মান ইবনে মালিক আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বললেন,
কিসের ভিত্তিতে আপনি এমন কথা বললেন? তখন হযরত নু’মান
ইবনে মালেক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, কেননা আমরা
এ কালিমা শরীফ উনার উপর সাক্ষ্য প্রদান করি যে, ‘মহান আল্লাহ
পাক তিনি ব্যতীত কোন ইলাই নেই এবং আপনি উনার রসূল তথা হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম।’ আর আমরা কখনও সম্মানিত জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করি না।” (তাফসীরে ত্ববারী,
তারিখুল উমাম ওয়াল মুলূক, উস্দুল গবা, সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
অপর এক বর্ণনায় এসেছে যে, হযরত নু’মান ইবনে মালেক
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আরো বলেন,
لِأنِّي أُحِبُّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ. فَقَالَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَدَقْتَ.
অর্থ: “এজন্য যে, কেননা আমি মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মুহব্বত করি। সুবহানাল্লাহ! তা শুনে
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক
করলেন, আপনি সত্যিই বলেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (তারিখুল উমাম ওয়াল
মুলূক, সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ)
এ কথা মুবারক শুনে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে
জজবা পয়দা হলো। সকলেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার জন্য কুরবান হতে প্রস্তুত হলেন। সেই সম্মানিত জিহাদ মুবারকে আপনার জন্য
আমাদের মাল-জান কুরবান হোক।
এদিকে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সম্মানিত
ওহী মুবারক নাযিল করেলেন যেন তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার বাইরে গিয়ে কাফির মুশরিকদের
বিরুদ্ধে জিহাদ মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ! ফলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হুযরা শরীফে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করলেন এবং সম্মানিত
জিহাদের জন্য লৌহবর্ম পরিধান মুবারক করে বেরিয়ে আসলেন। সুবহানাল্লাহ! এ ঘটনা সংঘটিত
হয়েছিল ইয়াওমুল জুমুয়া’ পবিত্র জুমুয়ার নামায আদায়ের পর। সুবহানাল্লাহ! আর ঐ দিনে বানূ
নাজ্জারের আনছার ছাহাবী হযরত মালিক ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বিছালী
শান মুবারক প্রকাশ করেন। স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি উনার জানাযার নামায পড়ান।
আরো বর্ণিত রয়েছে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র জুমুয়া মুবারক উনারা খুতবা মুবারকে
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের লক্ষ্য করে অনেক নছীহত মুবারক
করলেন। সমস্ত কাজ মনোযোগ সহকারে সম্পাদন করার তা’লীম মুবারক দিলেন এবং উনাদেরকে বলা
হয়েছিল, যদি আপনারা সংকল্পে দৃঢ়তা, সহিষ্ণুতা অবলম্বন করেন এবং সর্বক্ষেত্রে অটল অবিচল থাকেন তবে বিজয় আপনাদের
সুনিশ্চিত। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা
মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ
মুবারক করেন,
فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّـهِ ۚ إِنَّ اللَّـهَ
يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِينَ.
অর্থ: “আপনি যখন কোন কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ
করে ফেলেন তখন মহান আল্লাহ পাক উনার উপর তায়াক্কুল বা ভরসা মুবারক করুন। নিশ্চয়ই মহান
আল্লাহ পাক তিনি তায়াক্কুলকারীকে মুহব্বত করেন।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র
আয়াত শরীফ ১৫৯)
সুতারাং মহান আল্লাহ পাক উনার উপর এবং
উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
উপর তায়াক্কুল বা ভরসা করা সমস্ত জীন-ইনসানের জন্য আবশ্যক। আর উনাদের উপর তায়াক্কুল
করার মধ্যেই রয়েছে পরিপূর্ণ কামিয়াবী ও পূর্ণ বিজয়। সুবহনাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
তারপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুম উনাদেরকে একত্রিত হওয়ার নির্দেশ মুবারক প্রদান করলেন। এতে করে পবিত্র মদীনা শরীফের
বাইরে গিয়ে জিহাদ করায় আগ্রহী ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম তথা সমস্ত
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সকলেনই খুবই খুশি ও আনন্দিত
হলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র
আছর নামায বাদ সম্মানিত হুজরা শরীফ উনার মধ্যে প্রবেশ করলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে
আকবার আলাইহিস সালাম ও সাইয়্যিদুনা হযরত ফরূকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনারাও নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে পবিত্র হুজরা
শরীফের মধ্যে হাযির হলেন। উনারা উভয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরূল হুদা তথা সম্মানিত মাথা মুবারকে গাগড়ী মুবারক বেঁধে
দিলেন, সম্মানিত বর্ম মুবারক পরিধান করালেন এবং প্রয়োজনীয়
অস্ত্র-শস্ত্র নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার খিদমত মুবারকে পেশ করে তা সাথে নিয়ে নিলেন।
সম্মানিত হুজরা শরীফ উনার বাইরে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম
উনারা কাতারবন্দী হয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার তাশরীফ মুবারকের অপেক্ষায় ছিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাম তিনি অস্ত্র-সজ্জায় সজ্জিত হয়ে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল
আনহুম উনাদের সম্মুখ্যে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করলেন। সুবহনাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
তারপর কাফির মুশরিকদের উপযুক্ত শিক্ষা দেয়ার লক্ষ্যে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বের হওয়ার
ইচ্ছা মুবারক প্রকাশ করলেন। তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুদ দারাজাত
(তথা ক্বদম মুবারকে) ক্ষমাভিক্ষা চাইলেন এবং আর্জি মুবারক করলেন। আমাদের সর্বপ্রকার
ভুল বেয়াদবী ক্ষমা করে দিন। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা পূনরায়
বিনীত ভাবে আর্জি মুবারক জানালেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া
হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি ইচ্ছা মুবারক করলে পবিত্র মদীনা
শরীফ উনার মধ্যে অবস্থান মুবারক করতে পারেন অথবা আপনি মদীনা শরীফ উনার বাইরে গিয়ে সম্মানিত
জিহাদ মুবারক করতে পারেন। তবে আপনি যেভাবে আমাদেরকে নির্দেশ মুবারক দিবেন সেভাবেই আপনার
আদেশ মুবারক আমরা পালন করতে প্রস্তুত। উনারা আরো বললেন, সর্ববিষয়
মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা
সবচেয়ে বেশি ভালো জানেন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হুজরা মুবারক থেকে বাইরে তাশরীফ মুবারক
গ্রহণ করে ইরশাদ মুবারক করলেন,
مَا يَنْبَغِي لِنَبِيّ إذَا لَبِسَ لَأْمَتَهُ أَنْ يَضَعَهَا
حَتّى يُقَاتِلَ.
অর্থ: “কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের
পক্ষে শোভনীয় নয় একবার লৌহবর্ম মুবারক পরিধান করার পর জিহাদ মুবারক না করে তা খুলে
ফেলা।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা
মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি
আলাইহি, দালায়িলুন নুবুওওয়াহ, ফতহুল বারী, বদরুল মুনীর, জামিউল
আহাদীছ, আল জামিউছ ছগীর, খ¦ছায়িছূল কুবরা, সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি)
অর্থাৎ নুরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে পবিত্র উহুদ প্রান্তরে গিয়ে
সম্মানিত জিহাদ মুবারক করার নির্দেশ মুবারক দান করেন।
মোটকথা হলো, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি
সম্মানিত ওহী মুবারক নাযিল উনার মাধ্যমে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে সম্মানিত উহুদ প্রান্তরে
গিয়ে সম্মানিত জিহাদ মুবারক করার বিষয়টি ফায়সালা মুবারক করলেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা
রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা
আলাইহিস সালাম! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি ১০০০ জনের একটি দল সঙ্গে নিয়ে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বেরিয়ে পড়লেন। কিন্তু পথিমধ্য
থেকে মুনাফিক সরদার উবাই বিন সুলূল সে বিভিন্নরকম চূ-চেরা ও অজুহাত দেখিয়ে তার ৩০০
অনুচর নিয়ে পিছন দিকে পলায়ন করে। নাউযূবিল্লাহ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বাকি ৭০০ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুম উনাদেরকে নিয়ে সম্মানিত উহুদ প্রান্তরের দিকে রওয়ানা দেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা
রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা
আলাইহিস সালাম!
ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এই সম্মানিত উহুদ জিহাদ মুবারকে গমনের সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ইবনে উম্মে মাকতূম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনাকে মসজিদুন নববী শরীফ উনার পবিত্র নামায আদায়ের জন্য নির্দেশ মুবারক
দান করেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা
মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-
ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
0 Comments:
Post a Comment