হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ১০৬০-১২৭৯) (ঙ)


সম্মানিত দ্বিতীয় হিজরীসনে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার রোযা ফরয প্রসঙ্গে:
  সম্মানিত হিজরত মুবারক উনার দ্বিতীয় হিজরী শা’বান মাসে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার পবিত্র ছাওম বা রোযা ফরয হয়।
 ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ ৩য় জিল্দ: ২৫৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে,
انه فرض فى شعبان
  অর্থ: নিশ্চয়ই পবিত্র শা’বান মাস (দ্বিতীয় হিজরী সনে) পবিত্র ছাওম বা রোযা ফরয হয়।
  قالوا: نزل فرض شهر رمضان بعدما صرفت القبلة إلى الكعبة بشهر في شعبان على رأس ثمانية عشر شهراً من مهاجر رسول اللهّٰ صلى اللهّٰ عليه وسلم-
অর্থ: “(উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দিক্বা আলাইহাস সালাম, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আবু সায়ীদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের থেকে বর্ণিত)। উনারা বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হিজরত মুবারক উনার ১৮ মাসের মাথায় ক্বিবলা পরিবর্তনের এক মাস পর সম্মানিত শা’বান শরীফ মাসে রমাদ্বান শরীফ উনার রোযা ফরয হয়।” (আল মুনতাজিম ফি তারীখিল মুলূকি ওয়াল উমাম- জিল্দ: ৩ পৃষ্ঠা: ৯৫-৯৬, উয়ূনুল আছার) 
 পবিত্র ছাওম বা রোযা উনার পরিচয়:
 সাওম আরবী শব্দ এর সমার্থক শব্দ রোযা। রোযা ফারসী থেকে এসেছে। ছাওম শব্দের শাব্দিক অর্থ বিরত থাকা। পরিভাষিক অর্থ ছুবহি ছাদিক্ব থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নির্জন অবস্থানসহ সর্বপ্রকার পানাহার থেকে বিরত থাকাকে ছাওম বা রোযা বলে। তবে এর সাথে সাথে মিথ্যা, গীবত, চোগলখোরী, ঝগড়া-বিবাদ, মারামারি-কাটাকাটি, গালি-গালাজ, অশ্লীল-অশালীন, ফাসিক্বী ও নাফরমানিমূলক কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
 মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
يَا اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ
 অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর (সম্মানিত রমাদ্বান শরীফ উনার) রোযা ফরয করা হয়েছে; যেরূপ ফরয করা হয়েছিলো তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদের উপর। উনার মাধ্যমে অবশ্যই তোমরা তাক্বওয়া হাছিল করতে পারবে।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮৩)
 অর্থাৎ ‘তাক্বওয়া’ হচ্ছে সমস্ত আমলের মূল। তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি তাক্বওয়া হাছিল করার জন্য বান্দাদের আদেশ মুবারক করেছেন।
 পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
تَزَوَّدُوا فَاِنَّ خَيْرَ الزَّادِ التَّقْوٰى ۚ
 অর্থ: “তোমরা পাথেয় সংগ্রহ কর। নিশ্চয়ই উত্তম পাথেয় হচ্ছে তাক্বওয়া বা পরহেযগারিতা।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৯৭)
‘তাক্বওয়া’ শব্দের অর্থ হলো আল্লাহভীতি। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করে উনার নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ হতে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকার নাম তাক্বওয়া। আর পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসের রোযা উনার দ্বারা সেই তাক্বওয়া হাছিল হয়ে থাকে। সুবহানাল্লাহ!
 পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اللهُ كُلُّ عَمَلِ ابْنِ اٰدَمَ لَهُ اِلَّا الصّيَامَ فَاِنَّهُ لِيْ وَاَنَا اَجْزِيْ بِه‏. وَالصّيَامُ جُنَّةٌ وَاِذَا كَانَ يَوْمُ صَوْمِ اَحَدِكُمْ فَلَا يَرْفُثْ وَلَا يَصْخَبْ فَاِنْ سَابَّهُ اَحَدٌ اَوْ قَاتَلَهُ فَلْيَقُلْ اِنّـي امْرُؤٌ صَائِمٌ‏. وَالَّذِيْ نَفْسُ مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِه لَـخُلُوْفُ فَمِ الصَّائِمِ اَطْيَبُ عِنْدَ اللهِ مِنْ رِيْحِ الْمِسْكِ لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ يَفْرَحُهُمَا اِذَا اَفْطَرَ فَرِحَ وَاِذَا لَقِيَ رَبَّهُ فَرِحَ بِصَوْمِهِ‏.
অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আদম সন্তানের রোযা ব্যতীত প্রত্যেক নেক আমল তার নিজের জন্য। কেননা, রোযা একমাত্র আমারই জন্য রাখা হয় এবং তার প্রতিফল আমি নিজেই (যত ইচ্ছা) দান করব। সম্মানিত রোযা জাহান্নাম হতে বাঁচার ঢালস্বরূপ। যখন তোমাদের কেউ রোযা রাখবে তখন সে অশ্লীলতা ও ঝগড়া করবে না। তাকে যদি কেউ গালী দেয় বা তাকে হত্যা করতে চায়, সে বলবে আমি রোযাদার। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! যে মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরতী হাত মুবারকে আমার অযূদ মুবারক, মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট সম্মানিত রোযাদারের মুখের ঘ্রাণ মিশ্কে আম্বরের সুঘ্রাণের চেয়েও বেশি পছন্দনীয়। রোযাদারের জন্য দুটি খুশি। যখন সে ইফতার করে তখন খুশি প্রকাশ করে আর যখন সে মহান আল্লাহ পাক উনার সাক্ষাৎ মুবারক লাভ করবে তখনও খুশি প্রকাশ করবে।” (তিরমিযী শরীফ)।
 পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার ফযীলত সম্পর্কে পবিত্র পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে।
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِيّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ صَامَ رَمَضَانَ اِيـمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَه مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِه وَمَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ اِيـمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَه مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِه.
অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি সম্মানিত ঈমান ও ইখলাছের সাথে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার রোযা রাখবে তার পূর্বের গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হবে এবং যে ব্যক্তি সম্মানিত ঈমান ও ইখলাছের সাথে পবিত্র ক্বদর রাত্রি ইবাদতে কাটাবে, তারও পূর্বকৃত গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হবে।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, আবূ দাঊদ শরীফ)
এখন এই ফরয রোযা রাখতে হলে অবশ্যই চাঁদ দেখে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার মাস ও রোযা শুরু করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صُوْمُوا لِرُؤْيَـتِه وَأَفْطِرُوْا لِرُؤْيَـتِه فَاِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ فَاَكْمِلُوا عِدَّةَ شَعْبَانَ ثَلَاثِيْنَ‏‏.
অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা চাঁদ দেখে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার রোযা রাখো এবং (পবিত্র শাওওয়াল মাস উনার) চাঁদ দেখেই রোযা শেষ করো তথা ঈদ পালন করো। আর যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় তোমরা চাঁদ দেখতে না পাও, তবে পবিত্র শা’বান শরীফ মাস ৩০ দিনে পূর্ণ করো।” (বুখারী শরীফ)
মূলত, সব মাসের ক্ষেত্রে একই হুকুম। আরবী মাস ২৯ কিংবা ৩০ দিনে পূর্ণ হয়ে থাকে।
সেক্ষেত্রে প্রতি মাসের ২৯ তারিখ শেষে চাঁদ তালাশ করে তারিখ নির্ধারণ করতে হয়। ২৯ তারিখে চাঁদ দেখা না গেলে সেই মাস ৩০ দিনে পূর্ণ হয়ে থাকে। তারপর থেকে পরবর্তী মাস গণনা শুরু করতে হয়। অতএব ইবাদতসমূহ ছহীহ-শুদ্ধভাবে আদায় করার জন্য চাঁদ দেখার বা তালাশ করার গুরুত্ব অপরিসীম। অতএব, প্রত্যেক এলাকা থেকে কিছু লোককে অবশ্যই চাঁদ তালাশ করতে হবে, যা ওয়াজিবে কিফায়া। যদি কেউই তালাশ না করে, তাহলে সকলেই ওয়াজিবে কিফায়া তরক করার কারণে কবীরা গুনাহে গুনাহগার হবে।
পবিত্র রোযা উনার সাহরী ও ইফতারের দুআ এবং সুন্নত আমলসমূহ: পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার শেষ রাতের খাবারকে সাহরী বলে। অর্থাৎ ছুবহি ছাদিক্বের পূর্বে পবিত্র রোযা রাখার নিয়তে পানাহার করাকে সাহরী বলে। রোযা রাখার বিধান যেহেতু পূর্ববর্তী উম্মতদেরও ছিল তাই তাদের সাথে আমাদের রোযার কিছু পার্থক্য রয়েছে। যেমন আমাদের রোযা আর ইহুদী-নাছারাদের রোযার পার্থক্য হচ্ছে সাহরী গ্রহণ করা।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنِهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ فَصْلُ مَا بَيْنَ صِيَامِنَا وَصِيَامِ اَهْلِ الْكِتَابِ اَكْلَةُ السَّحَرِ.
অর্থ: “হযরত আমর ইবনে আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমাদের রোযা এবং আহলে কিতাবদের রোযার মধ্যে পার্থক্য হলো সাহরী খাওয়া (অর্থাৎ আমরা সাহরী খাই আর তারা সাহরী খায় না)”। (মুসলিম শরীফ)।
 সাহরী করা খাছ সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাই ইচ্ছাকৃতভাবে সাহরী ছেড়ে দেয়া যাবে না। সাহরী খাওয়াকে উৎসাহিত করার জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নির্দেশ মুবারক করেছেন।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَسَحَّرُوا فَاِنَّ فِي السُّحُوْرِ بَرَكَةً.
অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা সাহরী খাও, কেননা সাহরী খাওয়ার মধ্যে বরকত রয়েছে।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
সাহরীতে কোনো খাদ্য উত্তম সে বিষয়ে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِيّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ نِعْمَ سَحُوْرُ الْمُؤْمِنِ التَّمْرُ.
অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মু’মিনদের সাহরীতে সর্বোত্তম খাবার হচ্ছে খেজুর।” (আবূ দাউদ শরীফ)
পবিত্র রোযা উনার নিয়ত:
نويت ان اصوم غدا من شهر رمضان الـمبارك فرضا لك يا الله فتقبل منى انك انت السميع العليم.
 অর্থ: “আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনার সন্তুষ্টির জন্য আগামীকালের পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার ফরয রোযা রাখার নিয়ত করছি। আমার তরফ থেকে আপনি তা কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাত।”
  কেউ যদি ছুবহি ছাদিক্বের পূর্বে নিয়ত করতে ভুলে যায় তাহলে তাকে দ্বিপ্রহরের পূর্বে নিয়ত করতে হবে
 ইফতার: ইফতার অর্থ ভঙ্গ করা। সূর্যাস্ত হওয়ার সাথে সাথে তথা মাগরিবের আযানের সাথে সাথে খুরমা-খেজুর, দুধ, শরবত, পানি ইত্যাদি দ্বারা পানাহারের মাধ্যমে রোযা ভঙ্গ করাকে ইফতার বলে।
 ইফতারের দুআ:
اللهم لك صمت و على رزقك افطرت.
 অর্থ: “আয় মহান আল্লাহ পাক! আমি আপনারই সন্তুষ্টির জন্য রোযা রেখেছি এবং আপনারই দেয়া রিযিক্ব দ্বারা ইফতার করছি।”
 পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ سَلْمَانَ بْنِ عَامِرٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنِهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِذَ اَفْطَرَ اَحَدُكُمْ فَلْيُفْطِرْ عَلٰى تَـمْرٍ فَاِنَّه بَرَكَهٌ فَاِنْ لَّـمْ يَـجِدْ فَلْيُفْطِرْ عَلٰى مَاءٍ فَاِنَّه طُهُوْرٌ.
অর্থ: “হযরত সালমান ইবনে আমির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন তোমাদের কেউ ইফতার করে, সে যেন খেজুর দ্বারা ইফতার করে। কেননা, তাতে বরকত (কল্যাণ) রয়েছে। আর যদি খেজুর না পাওয়া যায়, তবে যেন পানি দ্বারা ইফতার করে। কেননা তা পবিত্রকারী।” (তিরমিযী শরীফ,ইবনে মাজাহ শরীফ)
 পবিত্র ছলাতুত তারাবীহ উনার নামায:   তারাবীহ শব্দটি বহুবচন। একবচনে ‘তারবীহাতুন’। এর অর্থ হচ্ছে বিশ্রাম নেয়া বা আরাম করা। পাঁচ তারবীহাতুন মিলে এক তারাবীহ। অর্থাৎ চার রাকাআত পর পর বসে দুআ, দুরূদ ও তাসবীহ পাঠের মাধ্যমে বিশ্রাম নিয়ে বিশ রাকাআত নামায আদায় করা হয় বলে এর নামকরণ করা হয়েছে ‘তারাবীহ’। তারাবীহ্ নামায বিশ রাকাআত। পুরুষ-মহিলা প্রত্যেকের জন্যই এ নামায সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। বিশ রাকাআত থেকে কেউ যদি এক রাকাআতও কম পড়ে তাহলে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ তরক করার কারণে ওয়াজিব তরকের গুনাহে গুনাহগার হবে। তবে পুরুষের জন্য তারাবীহ নামায উনার জামায়াত হচ্ছে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া। অর্থাৎ কিছু লোক জামায়াতে আদায় করলেই সকলের সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ আদায় হয়ে যাবে।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم كان يصلى فى رمضان عشرين ركعة سوى الوتر.
 অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিশ রাকাআত তারাবীহ নামায পড়তেন বিতর নামায ব্যতীত।”
 অর্থাৎ তারাবীহ নামায বিশ রাকাআত এবং বিতর তিন রাকাআত। (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা)
  মহিলাদের তারাবীহসহ যেকোনো নামায জামায়াতের জন্য মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া আম ফতওয়া মতে মাকরূহ তাহরীমী। আর খাছ ফতওয়া মতে হারাম ও কুফরী।

0 Comments: