কুরান অনুসারে, আল্লাহ পৃথিবীর ওপর পর্বতরাজি কে স্থাপন করেছেন বা পেরেকের মত গুজে দিয়েছেন কিন্তু বিজ্ঞান কেন বলে পর্বত তৈরি হয় lithospheric plate এর গতির ফলে
নাস্তিকদের আপত্তি : কুরান অনুসারে, আল্লাহ পৃথিবীর ওপর পর্বতরাজি কে স্থাপন করেছেন বা পেরেকের মত গুজে দিয়েছেন (Quran 16:15, 15:19, 41:10, 50:7, 78:6-7)! কিন্তু বিজ্ঞান কেন বলে পর্বত তৈরি হয় lithospheric plate এর গতির ফলে (either orogenic movement or epeirogenic movement)?
টেকটোনিক প্লেটগুলো চলতে চলতে যখন একটা অন্যটার সাথে ধাক্কা খায় তখনই ভূমিকম্প সৃষ্টি হয় এবং সংলগ্ন স্থানে ভূ-পৃষ্ঠ উপরে উঠে যায় যার ফলে সৃষ্টি হয় পাহাড়-পর্বত ।
খণ্ডণ: এখানে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের সাথে বিজ্ঞানের অসঙ্গতি কোথায়? খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক তিনি পানি উপরে যমীন সৃষ্টি করার পর, সেই যমীনকে পানির উপর বিস্তৃত করে দিলেন। যা বিভিন্ন আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-
وَالْأَرْضَ مَدَدْنَاهَا
অর্থ : “আমি ভূমিকে বিস্তৃত করেছি।” (পবিত্র সূরা হিজর শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৯; পবিত্র সূরা ক্বাফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)
এই বিস্তৃত করার মাধ্যমেই মূলত ভূপৃষ্ঠের সৃষ্টি হয়েছে যা একধরনের পাতলা প্লেট। এদেরকে বলা হয় টেকটোনিক প্লেট। টেকটোনিক প্লেটগুলো পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারণে পানির উপর টলমল করতে থাকে, সদা নড়াচড়া করতে থাকে। এই নড়াচড়া করার কারণে দুই বা ততোধিক প্লেট যখন একটির উপর আরেকটি উঠে যায় বা একটি সাথে আরেকটি ধাক্কা খায়, তখন এদের মিলনস্থলে পাহাড়ের সৃষ্টি হয়।
উদহারণস্বরূপ আমরা যদি কোন একটি বোতল বা কৌটা বা কোন গোলক বস্তুর উপরে কোন মোড়ল চড়াতে যাই তাহলে দেখা যাবে মোড়কের শেষ প্রান্তটি প্রথম প্রান্তের উপরে উঠে যায়। মোড়কটির এই মিলিত প্রান্তদ্বয়কে পরে আঠা দিয়ে উক্ত বোতল বা কৌটা বা গোলক বস্তুর উপরে জোড়া লাগিয়ে দিতে হয়।
আর এই বিষয়টিকেই পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে এভাবে-
وَاَلْقَىٰ فِي الْاَرْضِ رَوَاسِيَ اَن تَـمِيْدَ بِكُمْ وَأَنْـهَارًا
অর্থ : “এবং তিনি পৃথিবীর উপর পর্বতমালা স্থাপন করেছেন যে, কখনো যেন তা তোমাদেরকে নিয়ে হেলে-দুলে না পড়ে।” (পবিত্র সূরা নাহল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫)
وَاَلْقَيْنَا فِيهَا رَوَاسِيَ وَاَنبَتْنَا فِيهَا
অর্থ : “এবং তার উপর পর্বতমালা স্থাপন করেছি।” (পবিত্র সূরা হিজর শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৯)
وَجَعَلَ فِيهَا رَوَاسِيَ مِن فَوْقِهَا
অর্থ : “তিনি পৃথিবীর উপরিভাগে অটল পর্বতমালা স্থাপন করেছেন।” (পবিত্র সূরা হা-মীম সিজদাহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০)
وَأَلْقَيْنَا فِيهَا رَوَاسِيَ وَأَنبَتْنَا فِيهَا
অর্থ : “তাতে পর্বতমালার ভার স্থাপন করেছি।” (পবিত্র সূরা ক্বাফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)
এই পাহাড় ভূমির উপরে যতদূর উপরে উঠে, পরের অংশে অনেকগুণ পরিমানে ভূমির নিচে ডেবে যায়। অনেকটা ভাঁজ সৃষ্টির মত। এর ফলে টেকটোনিক প্লেটগুলোর নড়াচড়া কমে যায়। অর্থাৎ এই প্লেটগুলোর সংযোগ স্থলে পাহাড় বা পর্বত অনেকটা পেরেক বা গোঁজ বা খিলের মতো কাজ করে। যেমন এভারেষ্ট পর্বতমালার সবচেয়ে উঁচু মাথা ভূমির প্রায় ১৫ কি. মি. উপরে উঠেছে। ঠিক একই জায়গায় এর ভিত্তিমূল মাটির নিচে পৌঁছে গেছে ১২৫ কি. মি. পর্যন্ত। শুধু যদি এই অংশটিকে বিবেচনা করলে একে দেখতে মনে হবে দৈত্যাকার এক পেরেক বা গোঁজ বা খিলের মতো!
আর এই জন্যই মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اَلَـمْ نَـجْعَلِ الْاَرْضَ مِهَادًا ﴿٦﴾ وَالْـجِبَالَ اَوْتَادًا ﴿٧﴾
অর্থ : “আমি কি যমীনকে বিস্তৃত করিনি এবং পাহাড়কে গোঁজ বানাইনি?” (পবিত্র সূরা নাবা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬-৭)
পেরেক বা গোঁজ বা খিলের কাজ হলো দুই বা ততোধিক কাষ্ঠখ-কে এমনভাবে জোড়া লাগানো, যাতে সংযুক্ত বস্তুটিকে নাড়াচড়া করে হলেও খুলে না যায়। পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগ ভীষণ উত্তপ্ত গলিত তরল পদার্থে পূর্ণ। পেরেক বা গোঁজ বা খিল আকৃতির এই পাহাড়গুলো না থাকলে, পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারণে হয়তো কোন একদিকের প্লেট সরে গিয়ে ওই অঞ্চলের গলিত তরলকে বাইরে বের হয়ে আসার সুযোগ করে দিতো। ফলে ভয়ানক বিপর্যয় ঘটতো।
0 Comments:
Post a Comment