যুলকারনাইন সূর্যের অস্তগমন (অর্থাৎ সর্বপশ্চিম) স্থলে পৌছান যেখানে সুর্য এক পঙ্কিল জলাশয়ে অস্ত যায় এরপর তিনি অন্য এক পথ ধরেন এবং সূর্যের উদয় (অর্থাৎ সর্বপূর্ব) স্থলে পৌছান যা এমন এক সম্প্রদায়ের ওপর উদিত হয় যারা সূর্যের কাছাকাছি হওয়ায় তাপ থেকে কোন আড়াল পায়না এর থেকেই কি বোঝা যায় না যে পৃথিবি সমতল, যার দুই সর্বশেষ প্রান্ত রয়েছে?
নাস্তিকদের আপত্তি : যুলকারনাইন সূর্যের অস্তগমন (অর্থাৎ সর্বপশ্চিম) স্থলে পৌছান যেখানে সুর্য এক পঙ্কিল জলাশয়ে অস্ত যায় (Quran 18:86), এরপর তিনি অন্য এক পথ ধরেন এবং সূর্যের উদয় (অর্থাৎ সর্বপূর্ব) স্থলে পৌছান যা এমন এক সম্প্রদায়ের ওপর উদিত হয় যারা সূর্যের কাছাকাছি হওয়ায় তাপ থেকে কোন আড়াল পায়না (Quran 18:89-90)! এর থেকেই কি বোঝা যায় না যে পৃথিবি সমতল, যার দুই সর্বশেষ প্রান্ত রয়েছে?
খণ্ডণ : সূর্যের অস্তগমন স্থল মানেই যেমন সর্বপশ্চিম নয় ঠিক তেমনি সূর্যের উদয় স্থল মানেই সর্বপূর্ব নয়। পৃথিবীর প্রত্যেকটি স্থানই আপেক্ষিকভাবে পশ্চিমে বা পূর্বে। পূর্বের দেশের তুলনায় পশ্চিমের দেশগুলো যেমন পশ্চিমে, কেননা সূর্য ধীরে ধীরে পশ্চিম দিকে অস্ত যায়। আবার পূর্বের দেশটিতে যখন সূর্য অস্ত যায় তখন তার পূর্বের দেশের তুলনায় সে দেশটি পশ্চিমে পড়ে।
তাই এর মাধ্যমে কখনোই প্রমাণিত হয় না যে, পৃথিবী সমতল। কেননা পৃথিবী সমতল হলে সব দেশে একসাথেই সূর্যোদয় হতো এবং একসাথেই সূর্যাস্ত হতো। তা না হয়ে বরং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত হয়।
কোন পরিব্রাজক যদি কোন স্থান থেকে রওয়ানা দিয়ে এমন স্থানে পৌঁছে যখন সূর্য অস্ত যাচ্ছে। এর মাধ্যমে কেউই বলে না যে, উক্ত স্থানটি পৃথিবীর সর্বপশ্চিম। কিংবা কোন স্থান থেকে রওয়ানা দিয়ে এমন স্থানে পৌঁছে যখন সূর্য উদয় হচ্ছে। এর মাধ্যমেও কেউই বলে না যে, উক্ত স্থানটি পৃথিবীর সর্বপূর্ব। একমাত্র যারা মূর্খ-জাহিল বরং যারা আশাদ্দুর দরজার জাহিল (চরম মূর্খ) তারাই এক্ষেত্রে সর্বপশ্চিম বা সর্বপূর্ব শব্দ ব্যবহার করে থাকে। কারণ তাদের মোটেও ভৌগলিক জ্ঞান নেই।
যখন জাপানকে সূর্যোদয়ের দেশ বলা হয়, তখন স্বাভাবিকভাবে বুঝা যায় যে দেশটি সর্বপূর্ব। এই প্রেক্ষিতে আশাদ্দুর দরজার জাহিলগুলো বলে না যে, পৃথিবী সমতল। যদিও সূর্যোদয়ের দেশ বলে আলাদা কোন দেশ নেই, বরং প্রত্যেক দেশেই সূর্যোদয় হয়।
আবার কানাডাকে সূর্যাস্তের দেশ বলা হয় এবং কানাডার ওন্টারিও শহরকে সূর্যাস্তের শহর বলা হয়ে থাকে। তাহলে কি সূর্য জাপানে উদিত হয়ে কানাডায় অস্ত যায়? সূর্য যদি জাপানে উদিত হয়ে কানাডায় অস্ত যায়। তাহলে কোন দিন সূর্য কানাডায় অস্ত যাওয়ার পরে সেদিন কানাডা থেকে জাপান পর্যন্ত রৈখিকভাবে ৮,০৭৮ কিলোমিটার এলাকায় রাত দিন হয় কিভাবে?
জাপানে সূর্য উদিত হওয়ার পর ওই দিনই যদি জাপানে অস্ত যায় কিংবা কানাডায় যেদিন সূর্য অস্ত যায় সেদিনের সকালেই কানাডায় যদি সূর্যোদয় হয়। তাহলে হযরত যুলকারনাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সূর্যের অস্তগমন স্থলে কিংবা সূর্যের উদয় স্থলে পৌঁছালে কেন উক্ত স্থানদ্বয়কে যথাক্রমে পৃথিবীর সর্বপশ্চিম ও সর্বপূর্ব বলা হবে? কেন উক্ত দু’টি স্থানকে দুই সর্বশেষ প্রান্ত হিসেবে উল্লেখ করা হবে?
মূলত পৃথিবীতে পরিভ্রমণকালে যে কোন স্থানেই সূর্যাস্ত কিংবা সূর্যোদয় হতে পারে। যেমনটি হযরত যুলকারনাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি দেখতে পেয়েছিলেন।
যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
حَتَّىٰ إِذَا بَلَغَ مَغْرِبَ الشَّمْسِ وَجَدَهَا تَغْرُبُ فِي عَيْنٍ حَمِئَةٍ وَوَجَدَ عِندَهَا قَوْمًا ۗ قُلْنَا يَا ذَا الْقَرْنَيْنِ إِمَّا أَن تُعَذِّبَ وَإِمَّا أَن تَتَّخِذَ فِيهِمْ حُسْنًا
অর্থ : “অবশেষে হযরত যুলকারনাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যখন সূর্যের অস্তাচলে পৌঁছালেন; তখন তিনি সূর্যকে এক পঙ্কিল আধারে অস্ত যেতে দেখলেন এবং তিনি সেখানে এক সম্প্রদায়কে দেখতে পেলেন। আমি (মহান আল্লাহ পাক) বললাম, হে হযরত যুলকারনাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি! আপনি তাদেরকে শাস্তি দিতে পারেন অথবা তাদেরকে সদয়ভাবে গ্রহণ করতে পারেন।” (পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৬)
এই আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে বর্ণিত রয়েছে-
قال البيضاوي لعله بلغ ساحل لمحيط فراها كذلك إذا لم يكن في مطمح نظره غير الماء والطين ولذلك قال اللّه سبحانه وجدها تغرب ولم يقل كانت تغرب كذا قال القيتبى وَوَجَدَ عِنْدَها أى عند العين قَوْماً قال البيضاوي قيل كان لباسهم جلود الوحش وطعامهم ما لفظه البحر وكانوا كفارا قُلْنا يا ذَا الْقَرْنَيْنِ إِمَّا أَنْ تُعَذِّبَ ذلك القوم بالقتل على كفرهم ان أصروا على كفرهم بعد ما دعوتهم إلى الإسلام وَإِمَّا أَنْ تَتَّخِذَ فِيهِمْ فعلة حُسْناً
অর্থ : “হযরত বায়যাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেন, সম্ভবত হযরত যুলকারনাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন কোন মহাসাগরের পাড়ে এবং সূর্যকে অস্তমিত হতে দেখেছিলেন মহাসাগরের অগাধ পানিরাশির মধ্যে। উনার এই দৃষ্টিকোণকেই উল্লেখ করা হয়েছে আলোচ্য আয়াত শরীফ উনার মধ্যে এভাবে- وَجَدَهَا تَغْرُبُ فِي عَيْنٍ حَمِئَةٍ তিনি সূর্যকে এক পঙ্কিল আধারে অস্ত যেতে দেখলেন।” (তাফসীরে মাযহারী : পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৬)
বাস্তবিক অর্থেই হযরত যুলকারনাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পরিভ্রমণকালে এমন একটি মহাসাগরের পাড়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন যার অগাধ পানিরাশির রং ছিলো কালো। কেননা এখানে حَمِئَةٍ ‘হামিয়াতিন’ শব্দ মুবারক ব্যবহৃত হয়েছে, যার অর্থ পঙ্কিল বা কালো।
আবার আটলান্টিকের লাগোয়া কৃষ্ণ সাগরের পানিতে খুব উঁচুমাত্রায় হাইড্রোজেন সালফাইড দ্রবীভূত রয়েছে। তাই প্রায় ২০০ মিটার গভীরতারও নিচে এই সাগরের প্রতিটি স্তরে হাইড্রোজেন সালফাইড দেখা যায় ফলে এ সাগরে জীবের অস্তিত্বও উপরের স্তরে তেমন দেখা যায় না। এ কারণেই এই সাগরের পানির রঙটাও কালো দেখায়।
সুতরাং হযরত যুলকারনাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পরিভ্রমণকালে কৃষ্ণ সাগরের পাড়ে পৌঁছেছিলেন যার কালো রঙের অগাধ পানিরাশির মধ্যে সূর্যকে অস্তমিত হতে দেখেছিলেন।
কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـيْ ذَرٍّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ كُنْتُ رَدِيْفَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ عَلٰى حِمَارٍ وَالشَّمْسُ عِنْدَ غُرُوْبِـهَا فَقَالَ هَلْ تَدْرِيْ اَيْنَ تَغْرُبُ هَذِهِ قُلْتُ اللهُ وَرَسُوْلُهُ اَعْلَمُ قَالَ فَاِنَّـهَا تَغْرُبُ فِي عَيْنِ حَامِيَةٍ.
অর্থ : “হযরত আবূ যর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক ছোহবতে আমি একটি গাধার পেছনে সওয়ার ছিলাম। এ সময় সূর্য অস্ত যাচ্ছিল। তখন তিনি আমাকে সুওয়াল মুবারক করেন, আপনি কি জানেন, সূর্য কোথায় অস্তমিত হয়? আমি বললাম, মহান আল্লাহ্ পাক তিনি এবং উনার রসূল ও হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই এ ব্যাপারে অধিক অবহিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, এটি গরম প্রসবণের মধ্যে অস্ত যায়।” (আবূ দাঊদ শরীফ : কিতাবুল হুরূফ ওয়াল ক্বিরাত : হাদীছ শরীফ নং ৪০০২)
আরব উপদ্বীপের পাশেই লোহিত সাগর অবস্থিত আর আশপাশের মরুভূমির প্রচ- উত্তপ্ত বালুর উত্তাপ এই সাগরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার কারণে এই সাগরের পানি উত্তপ্ত থাকে বিধায় এখানে عَيْنِ حَامِيَةٍ শব্দ মুবারক ব্যবহৃত হয়েছে।
এছাড়াও বর্ণিত রয়েছে-
سال معاوية كعبا كيف تـجد في التوراة اين تغرب الشمس قال نـجدها تغرب في ماء وطين
অর্থ : “হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে সুওয়াল করলেন, সূর্য কিভাবে অস্তমিত হয়? পবিত্র তাওরাত শরীফ উনার মধ্যে আপনারা এ সম্পর্কে কোন কিছু দেখেছেন কি? হযরত কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, পবিত্র তাওরাত শরীফ উনার মধ্যে লিখিত রয়েছে, সূর্য অস্তমিত হয় পানি ও কাদার মধ্যে।” (তাফসীরে মাযহারী : পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ উনা পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৬)
সুতরাং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেমন গরম প্রসবণের মধ্যে সূর্য অস্ত যাওয়ার বর্ণনা মুবারক দ্বারা লোহিত সাগরে সূর্য অস্ত যাওয়া বুঝিয়েছেন। তেমনি হযরত যুলকারনাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এক পঙ্কিল আধারে সূর্যকে অস্ত যেতে দেখলেন বলার মাধ্যমে কৃষ্ণ সাগরে সূর্য অস্ত যাওয়া বুঝানো হয়েছে। আর পবিত্র তাওরাত শরীফ উনার মধ্যে পানি ও কাদার মধ্যে সূর্য অস্তমিত হওয়ার বর্ণনা দ্বারা আম বা সাধারণভাবে পানিতে সূর্য অস্ত যাওয়া বুঝানো হয়েছে।
যেহেতু সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় তার থেকে বিচ্ছুরিত আলোক রশ্মিগুলো পানিতে প্রতিফলিত হয় ফলে অনেক সময় যাবৎ সূর্যাস্ত পর্যবক্ষেণ করা যায়। তাই সূর্য অস্ত যাওয়ার বিষয়টি স্থলভাগে পর্যবেক্ষণের চেয়ে পানিতে পর্যবেক্ষণে বুঝতে বেশি সুবিধাজনক বিধায় এরূপ বর্ণনা করা হয়েছে।
“সাধারণত যখন কেউ সমুদ্র তীরে দাঁড়িয়ে সূর্য অস্ত যাওয়া প্রত্যক্ষ করবে, তখনই উক্ত ব্যক্তির কাছে এটা মনে হবে, অথচ সূর্য কখনো তার কক্ষপথ ত্যাগ করে না।” (তাফসীরে ইবনে কাছীর : পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৬)
এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُئِلَ هٰذِهِ الْـمَغَارِبُ مِنْ اَيْنَ تَغْرِبُ؟ وَهٰذِهِ الْـمَطَالِعُ مِنْ اَيْنَ تَطُلعُ؟ فَقَالَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هي عَلٰى رَسِلهَا لَا تَبْرَحُ وَلَا تَزُوْل تَغْرُبُ عَنْ قَوْمٍ وَتَطْلُعُ عَلٰى قَوْمٍ وَتَغْرُبُ عَنْ قَوْمٍ وتَطْلُعُ فَقَوْمٌ يَقُوْلُوْنَ غَرْبَتَ وَقَوْمٌ يَقُوْلُوْنَ طَلْعَتٌ.
অর্থ : “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সুওয়াল মুবারক করা হলো- সূর্য কোথায় অস্ত যায় এবং সূর্য কোথা থেকে উদিত হয়? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রত্যুত্তরে ইরশাদ মুবারক করেন, এটি নিয়মিত চলতে থাকে, ক্ষান্তও হয়না আর অদৃশ্যও যায় না। এটি এক স্থানে অস্তমিত হয় অন্য স্থানে উদিত হয়। আবার অন্য এক স্থানে অস্তমিত হয় আরেক স্থানে উদিত হয়, এভাবে চলতে থাকে। তাই কেউ বলে সূর্য অস্ত গিয়েছে (একই সময়ে) অন্যরা বলে সূর্য উদিত হচ্ছে।” (মুসনাদে ইমাম আবূ ইসহাক্ব হামাদানী)
সুতরাং হযরত যুলকারনাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পরিভ্রমণকালে কৃষ্ণ সাগরের পাড়ে পৌঁছে কালো রঙের অগাধ পানিরাশির মধ্যে সূর্যকে অস্তমিত হতে দেখেছিলেন। এর মাধ্যমে অত্র স্থানটি সর্বপশ্চিম প্রমাণিত হয় না। যেমন লোহিত সাগরে সূর্য অস্ত যাওয়ার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় না যে, লোহিত সাগর পৃথিবীর সর্বপশ্চিম স্থান।
আবার মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
ثُـمَّ اَتْبَعَ سَبَبًا. حَتّٰى اِذَا بَلَغَ مَطْلِعَ الشَّمْسِ وَجَدَهَا تَطْلُعُ عَلٰى قَوْمٍ لَّـمْ نَـجْعَل لَّـهُم مِّنْ دُوْنِـهَا سِتْرًا.
অর্থ : “অতঃপর তিনি এক পথ অবলম্বন করলেন। অবশেষে তিনি যখন সূর্যের উদয়াচলে পৌঁছলেন, তখন তিনি তাকে এমন এক সম্প্রদায়ের উপর উদয় হতে দেখলেন, যাদের জন্যে সূর্যতাপ থেকে আত্মরক্ষার কোন আড়াল আমি সৃষ্টি করিনি।” (পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৯-৯০)
অত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- وَجَدَهَا تَطْلُعُ عَلٰى قَوْمٍ لَّـمْ نَـجْعَل لَّـهُم مِّنْ دُوْنِـهَا سِتْرًا অর্থাৎ হযরত যুলকারনাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যখন সূর্যের উদয়াচলে পৌঁছালেন সেখানে এমন এক সম্প্রদায়কে দেখতে পেলেন, যাদের জন্যে সূর্যতাপ থেকে আত্মরক্ষার কোন আড়াল নেই।
এই আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে উল্লেখ করা হয়েছে-
حَتَّى إِذا بَلَغَ مَطْلِعَ الشَّمْسِ يعنى الـموضع الّذي تطلع الشمس عليه اولا من معمورة الأرض وَجَدَها تَطْلُعُ عَلى قَوْمٍ لَـمْ نَـجْعَلْ لَـهُمْ مِنْ دُونِـها سِتْراً (৯০) من اللباس أو البناء فان ارضهم لا تـحمل بناء وانـهم اتـخذوا الأسراب بدل الابنية.كَذلِكَ أى امر ذى القرنين كما وصفناه في رفعة الـمكان وبسطة الـملك أو أمره في أهل الـمشرق كامره في أهل الـمغرب من التخير والاختيار أو هو صفة لـمصدر مـحذوف لوجدها أى وجدها تطلع كما وجدها تغرب أو لـمصدر لـم نـجعل أى لـم نـجعل لـهم من دونـها سترا كما لـم نـجعل لاهل الـمغرب أو صفة لقوم يعنى وجدها تطلع على قوم مثل ذلك القوم الذين كانت تغرب عليهم الشمس في الكفر والـحكم وَقَدْ أَحَطْنا بِـما لَدَيْهِ من الـجنود والآلات والعدد والأسباب خُبْراً
অর্থ: “এ কথার অর্থ হযরত যুলকারনাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এবার পথ চলতে শুরু করলেন পূর্ব দিকে। চলতে চলতে পৃথিবীর পূর্বপ্রান্তে পৌঁছে তিনি দেখতে পেলেন এক জনপদ। বিস্ময়ের সঙ্গে আরো দেখলেন জনপদবাসীদের শরীর ও সূর্যের মধ্যে কোন আড়াল নেই। অর্থাৎ তাদের ঘরবাড়ী যেমন নেই, তেমনি নেই কোন পোশাক-আশাক। সভ্য সমাজের সাথে তারা সম্পূর্ণরূপে সম্পর্কচ্যুত।” (তাফসীরে মাযহারী : পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ ৯০)
এই আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে অন্যত্র উল্লেখ করা হয়েছে-
سـمعت الـحسن وسئل عن قوله تعالى: {لَمْ نَجْعَلْ لَهُمْ مِنْ دُونِهَا سِتْرًا} قال: إن أرضهم لا تـحمل البناء فإذا طلعت الشمس تغوروا في الـمياه، فإذا غربت خرجوا يتراعون كما ترعى البهائم. قال الـحسن: هذا حديث سـمرة.
وقال قتادة: ذكر لنا أنـهم بأرض لا تنبت لـهم شيئًا، فهم إذا طلعت الشمس دخلوا في أسراب، حتى إذا زالت الشمس خرجوا إلى حروثهم ومعايشهم.
অর্থ : “সূর্য উদিত হওয়ার স্থানে যখন তিনি পৌঁছেন তখন সেখানে দেখতে পান যে, একটি জনবসতি। কিন্তু সেখানকার লোকেরা প্রায় চতুষ্পদ জন্তুর মতো ছিল। না তারা ঘরবাড়ী তৈরী করে, না তথায় কোন গাছপালা রয়েছে, না রৌদ্র থেকে রক্ষা পাওয়ার কোন কিছু সেখানে বিদ্যমান রয়েছে। তাদের দেহের রঙ ছিল লাল এবং তারা বেঁটে আকৃতির লোক ছিল। তাদের সাধারণ খাদ্য ছিল মাছ। সূর্য উদিত হওয়ার সময় তারা পানিতে নেমে যেতো এবং সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর তারা চতুষ্পদ জন্তুর মতো এদিক ওদিক ছড়িয়ে পড়তো। এটা হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অভিমত। হযরত কাতাদাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অভিমত এই যে, সেখানে কিছুই উৎপন্ন হতো না। সূর্য উদিত হবার সময়ে তারা পানিতে চলে যেতো, সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়ার পর তারা তাদের দূরবর্তী ক্ষেত-খামারে ছড়িয়ে পড়তো।” (তাফসীরে ইবনে কাছীর : পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ ৯০)
সুতরাং ৯০ নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে জনপদবাসীদের শরীর ও সূর্যের মধ্যে কোন আড়াল নেই। অর্থাৎ তাদের ঘরবাড়ী যেমন নেই, তেমনি নেই কোন পোশাক-আশাক। আর ৮৬ নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- وَوَجَدَ عِنْدَهَا قَوْمًا অর্থাৎ হযরত যুলকারনাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যখন সূর্যের অস্তাচলে পৌঁছালেন সেখানে এক সম্প্রদায়কে দেখতে পেলেন।
এই সম্প্রদায় সম্পর্কে তাফসীরে বর্ণিত রয়েছে-
وَوَجَدَ عِنْدَها أى عند العين قَوْماً قال البيضاوي قيل كان لباسهم جلود الوحش وطعامهم ما لفظه البحر وكانوا كفارا
অর্থ : “তিনি সেখানে এক সম্প্রদায়কে দেখতে পেলেন- এ সম্পর্কে হযরত বায়যাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেন, ওই মহাসমুদ্রের পাড়ে বাস করতো চামড়ার পোশাক পরিহিত একদল সত্যপ্রত্যাখ্যানকারী। জোয়ারের সময় সমুদ্র থেকে যেসব মৃত মাছ ও সামুদ্রিক প্রাণী তটভূমিতে এসে আটকে যেতো, সেগুলোই তারা ভক্ষণ করতো।” (তাফসীরে মাযহারী : পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ উনা পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৬)
অর্থাৎ পূর্ব এবং পশ্চিম উভয় স্থানেই যে সম্প্রদায়কে দেখতে পান তারা উভয়ই মৎস শিকারী ছিল। সম্প্রদায় দু’টির মধ্যে শুধু পার্থক্য এই যে, পশ্চিমে বসবাসকারী সম্প্রদায় চামড়ার পোশাক পরিহিত ছিল কিন্তু পূর্বে বসবাসকারী সম্প্রদায়ের কোন পোশাক-আশাক ছিল না। এমনকি সেখানে কোন ঘরবাড়ী, গাছপালা বা রৌদ্র থেকে রক্ষা পাওয়ার কোন কিছুই ছিল না। আর তাই তাদের জন্যে সূর্যতাপ থেকে আত্মরক্ষার কোন আড়াল নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু অত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে “সূর্যের কাছাকাছি হওয়ায়” এ ধরণের কোন ব্যাখ্যার অবকাশ নেই। এই বাড়তি কথা যোগ করে নাস্তিকরা মিথ্যাচারীতার পরিচয় দিয়েছে।
সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, সূর্যের অস্তগমন স্থল দ্বারা সর্বপশ্চিম অর্থ নেয়া যেমন মিথ্যাচারীতা ঠিক তেমনি সূর্যের উদয় স্থল বলতে সর্বপূর্ব বোঝানোও মিথ্যাচারীতার প্রমাণ বহন করে। তাই পৃথিবীর দু’টি স্থানকে জোরপূর্বক সর্বপশ্চিম বা সর্বপূর্ব অর্থাৎ পৃথিবীর দুই সর্বশেষ প্রান্ত বানিয়ে নিয়ে পৃথিবীকে কখনোই সমতল প্রমাণ করা সম্ভবপর নয়।
আবার “সূর্যের কাছাকাছি হওয়ায়” এই বাড়তি কথা জুড়ে দেয়াও নাস্তিকদের একটি অপকৌশল, যা তাদের মিথ্যাচারীতার পরিচয় বহন করে।
0 Comments:
Post a Comment